বিষাক্ত ছোঁয়া🍁,পর্ব:০২
মাহিয়া মেরিন
সারাদিন ধরে সেবা যত্নের পর আহত বিড়ালটা কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। জাইমার কাছে বিড়ালটা বেশ অদ্ভুত লাগছে কেননা বিড়ালটা যেমন অন্য বিড়ালের থেকে আকারে বড়,,,ঠিক তেমনই অদ্ভুত তার চোখ দুটো। আগুনের শিখার মতো টকটকে লাল রঙের হলেও অনেকটা ঘোলাটে দেখতে বিড়ালটার চোখ জোড়া।।
অনেকদিন পর একজন সঙ্গী পাওয়ায় জাইমা আপনমনে বিড়ালটার সাথে বকবক করে যাচ্ছে আর বিড়ালটা তার অদ্ভুত চোখ দুটো দিয়ে ড্যাবড্যাব করে জাইমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই ধবধবে সাদা তুলতুলে বিশাল আকৃতির বিড়ালটার নাম দেওয়া হয়েছে মেঘ!!!
সকাল গড়িয়ে ধীরে ধীরে রাত হয়ে আসছে। রাত!!শব্দটা শুনলেও জাইমার মনে একটা অজানা ভয় কাজ করে। কেননা বেশ কয়েকদিন যাবৎ রাত হলেই তার সাথে অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। জাইমা নিশ্চিত আজ রাতেও সে কিছু ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে।
রাতের খাবারের পর নিজের রুমে এসে বই নিয়ে বসে জাইমা। পাশে শুয়ে থাকা মেঘের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বইয়ের দিকে মনোযোগ দেয়।।।
বই পড়ার সময় আশেপাশের সব খবর ভুলে যায় সে,,,,,আজও তাই হলো।। হঠাত খুবই শীতল কণ্ঠে কেউ একজন জাইমাকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করে। জাইমা প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে সেটা বুঝতে পারে।। কণ্ঠটা কেমন যেন পরিচিত মনে হচ্ছে,,,,শীতল কণ্ঠে কেউ একজন বলছে….
–জা..ই..মা!!!!!
কণ্ঠটা কেমন যেন আকর্ষণ করছে জাইমাকে। ধীরে ধীরে পড়ার টেবিল থেকে উঠে শব্দটার পিছু নিয়ে রুমের বড় আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো সে। শব্দটা তো আয়নার ভেতর থেকেই আসছে!!
–((আয়নার উপর একহাত রেখে ভয়ে ভয়ে)) কে ডাকছে আমাকে???
–((আয়নার ভেতর থেকে শীতল কণ্ঠে))সময় এসে গেছে জাইমা।।। তোমাকে চিরতরে আমাদের কাছে নিয়ে আসার।।
–ক..কে বলছে???(জাইমা)
আয়নায় থাকা জাইমার প্রতিবিম্বটা ধীরে ধীরে তার রূপ পাল্টাতে শুরু করে।। কালচে রঙের রক্ত জাইমার প্রতিবিম্বের সারা গায়ে লেগে আছে,,,ঠোঁটের কোণে ভয়ংকর বিশ্রী এক হাসি। জাইমা চোখ বড় বড় করে আয়নার তার প্রতিবিম্বের দিকেই তাকিয়ে আছে। প্রতিবিম্বটা আস্তে আস্তে করে আয়না থেকে বেরিয়ে জাইমার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। জাইমা এখনও আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে,,,যেন পাথর হয়ে গেছে।। হাজার চেষ্টা করেও জাইমা যেমন চিৎকার করতে পারছে না তেমনি সেখান থেকে একপা পিছিয়ে যেতেও পারছে না। প্রতিবিম্বটা জাইমার খুব কাছে চলে আসে,,,,খুব বাজে একটা গন্ধ আসছে তার শরীর থেকে। জাইমা এই গন্ধ একদমই সহ্য করতে পারছে না,,,দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। প্রতিবিম্বটা একহাত উচু করে জাইমার গলায় স্পর্শ করে।
–তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।কেউ আটকাতে পারবে না।।।((কর্কশ কণ্ঠে))
🍁🍁
–এতো রাতে তুমি ছাদে বসে কি করছো????
শারমিন বেগম(জাইমার সৎ মা) অবাক হয়ে প্রশ্নটা করলেন। হঠাত করেই কারো কণ্ঠ শুনে চমকে উঠে শারমিন বেগমের দিকে ফিরে তাকায় জাইমা। তারপর আশেপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে সে ছাদের উপর,,দোলনায় বসে আছে।এটা কিভাবে হলো??? সে তো….!!!
জাইমাকে এমন চিন্তিত দেখে শারমিন বেগম আবার জিজ্ঞেস করেন…
–কি হলো?? বলো,,,এতো রাতে ছাদে কি করছো তুমি??
–((জাইমা কি উত্তর দিবে? সে তো নিজেই জানে না সে ছাদে কিভাবে এলো!!))আ..আসলে রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না। তাই একটু ছাদে ঘুরতে আসলাম।।।
–তাই বলে রাত তিনটার সময়…??((ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে))
–((জাইমা অবাক হয়ে শারমিন বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।। রাত তিনটা বাজে!!!)) হ…হ্যা।। তো কি হয়েছে??আর তুমি এতো রাতে ছাদে কি করছো??
–তোমার রুমের লাইট অন দেখে ভাবলাম এখনও ঘুমাওনি,,,তাই রুমে গিয়ে দেখি তুমি রুমে নেই। তোমাকে খুঁজতেই তো এখানে এসেছি।।।। যাই হোক,,,,,রুমে চলো।। আর কখনো এভাবে এতো রাতে ছাদে আসবে না।
–হুম!! ((বলেই নিচে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যায়))
–দাঁড়াও জাইমা…..!!!!
–((বিরক্তি নিয়ে শারমিন বেগমের দিকে তাকিয়ে)) আবার কি হলো??
–তোমার বিড়ালটাকে রেখে যাচ্ছো কেনো??
জাইমা অবাক হয়ে দোলনার দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘ সেখানে বসে আছে।। মেঘ এখানে কিভাবে আসলো??? আর কিছু না ভেবে সে মেঘেকে কোলে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। শারমিন বেগম জাইমার যাওয়ার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো তারপর ছাদের আশেপাশে একবার তাকিয়ে নিচে নেমে আসে।।
জাইমা রুমে এসে খাটের উপর বসে সবকিছু ভাবতে থাকে।।। কি হয়েছিলো তার সাথে??? একদম প্রথম থেকে সব মনে করার চেষ্টা করছে সে…।।
সে টেবিলে বসে বই পড়ছিলো।। তারপর অদ্ভুত কণ্ঠে কেউ একজন তাকে ডাকে। সে ধীরে ধীরে আয়নার সামনে যায়,,,,সেখানে তার প্রতিবিম্ব অদ্ভুত রূপ ধারণ করে তার কাছে আসে। তারপর তাকে কিছু কথা বলে……তারপর??? তারপর আর কিছুই তো মনে নেই জাইমার।।।
অনেকগুলো প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।।
–আমি সম্ভবত রাত এগারোটার দিকে সেই অদ্ভুত প্রতিবিম্বটা দেখেছে,,,,আর রাত তিনটার সময় আমাকে ছাদে পাওয়া গেছে।। মাঝখানের সময়টায় কি হয়েছিলো আমার সাথে???
আবারও রাত তিনটা!! এই রাত তিনটার রহস্যটা আসলে কি??
সেই প্রতিবিম্বটা বলেছে,,,আমাকে তার সাথে নিয়ে যাবে।। কিন্তু কোথায় নিয়ে যাবে?? কেনো সে আমার পিছু লেগে আছে??
আমি কিভাবে ছাদে গিয়েছি?? আমার সেটা মনে নেই।। তাহলে মেঘ সেখানে কিভাবে গেলো?? একটা অসুস্থ বিড়াল তো আর একা একা আমার পিছু পিছু ছাদে যাবে না। তার মানে মেঘেকে ছাদে আমিই নিয়ে গিয়েছি। তাহলে কি সেই প্রতিবিম্বটা শুধু মাত্র আমার মনের ভুল ছিল??(জাইমা)
আর কিছু ভাবতে পারছে না সে। ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখে পানি দিতে গিয়ে দেখে তার গলায় কয়েকটা আঙুলের ছাপ হালকা লাল রঙ ধারণ করে আছে। এখানে তো ওই প্রতিবিম্বটা স্পর্শ করেছিলো!!! তবে কি….সবটা সত্যি!!!!!
–চলবে🍁