বিষাক্ত ছোঁয়া🍁,পর্ব:০১

বিষাক্ত ছোঁয়া🍁,পর্ব:০১
মাহিয়া মেরিন

গভীর রাতে হঠাত করেই ঘুম ভেঙে যায় জাইমার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ঠিক তিনটা বাজে। বেশ কয়েকদিন ধরেই এমন হচ্ছে তার সাথে। যেই মেয়ের রাতে ঘুমালে সকালের আগে একবারও ঘুম ভাঙে না,,,এখন সেই মেয়ের বিনা কারণে রাত ঠিক তিনটার দিকে ঘুম ভেঙে যায়!!!! অদ্ভুত এক ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়ায় শরীর বারবার শিউরে উঠছে তার।

ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে রুমের জানালা খোলা।আর সেই জানালা দিয়েই তীব্র বাতাস ঘরে প্রবেশ করছে। জাইমা ধীরে ধীরে খাট থেকে নেমে জানালার দিকে এগিয়ে গিয়ে থ মেরে যায়। বাহিরে তো বাতাস হওয়ার কোন লক্ষনই নেই,,,আশেপাশের একটা গাছের পাতাও নড়ছে না। কিন্তু অজানা গন্তব্য থেকে তীব্র বাতাস জানালা দিয়ে তার রুমে প্রবেশ করছে। বাতাসের বেগ এতোটাই বেশি যে জানালার পর্দাগুলো শূন্যে উড়ছে। হঠাত জাইমা কাধের উপর কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছে,,,মনে হচ্ছে কেউ একজন জাইমার কাধের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো একপাশে সরিয়ে দিয়ে গভীর ভাবে তার ঘ্রান নিচ্ছে। জাইমা ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে দেখে কেউ নেই। মনে অজানা এক ভয় কাজ করছে। কোনমতে জানালা বন্ধ করে দৌড়ে এসে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। মনে মনে একনাগাড়ে সব দোয়া পড়ে যাচ্ছে জাইমা।
হঠাত রুমের পরিবেশটা একদম থম মেরে,,,নিরব হয়ে যায়। জাইমার কাছে কেমন যেন রুমটা ভারি ভারি মনে হচ্ছে। অল্প অল্প করে মুখ থেকে চাদরটা সরিয়ে,,যা দেখে তার জন্য জাইমা একদম প্রস্তুত ছিল না।

জাইমার রুমের সিলিং ফ্যানে কেউ একজন গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে। জাইমা চোখ বড় বড় করে সেদিন তাকিয়ে আছে। লাশটা ধীরে ধীরে জাইমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে খুব বিশ্রী ভাবে একটা হাসি দেয়। লাশটার চেহারা দেখার পর জাইমার বুকটা ধক করে উঠে,,,হৃৎস্পন্দন অসম্ভব ভাবে ওঠা নামা করছে তার।। কারণ লাশটা আর কারো না,,,জাইমার মায়ের। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব??? জাইমার মা তো আরো ১৫ বছর আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাহলে এখন সে কাকে দেখছে?? লাশটা দেখতে খুব ভয়াবহ লাগছে,,,চোখগুলো যেন কোটর থেকে বেরিয়ে জাইমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ থেকে একহাত লম্বা জিহ্বা বের হয়ে আছে আর খুব বিশ্রীভাবে হেসে যাচ্ছে। জাইমা অনেক চেষ্টা করছে চিৎকার করার,,,কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছে না তার।। মনে হচ্ছে কেউ একজন তাকে খাটের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।

হঠাত আজানের শব্দ ভেসে আসায় লাশটা জাইমার দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করে আরবীতে কিছু কথা বলে অদৃশ্য হয়ে যায়। সাথে সাথে জাইমা স্ব জোরে চিৎকার করতে শুরু করে। জাইমার চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে তার বাবা আশরাফ হোসেন আর সৎ মা শারমিন বেগম দৌড়ে আসে। জাইমা ভয়ে গুটিসুটি মেরে খাটের এককোণে বসে আছে।
–((জাইমার পাশে বসে)) কি হয়েছে মা?? কি হয়েছে?? বাবাকে বলো।।((বাবা))
–((ফ্যানের দিকে আঙুল তুলে)) বাবা,,,এখানে মা ঝুলে ছিল। মা ছিলো এখানে। ভয়ংকর ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। পরে আরবী ভাষায় কিছু বলেছে।
আশরাফ আর শারমিন অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
–আচ্ছা।। আচ্ছা,,,শান্ত হও মামুনি। দেখো এখন কিছুই নেই। হয়তো তুমি খারাপ স্বপ্ন দেখেছো।(বাবা)
–((এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে))শান্ত হও জাইমা। আমরা আছি তো।।(মা)
–বাবা!! আমি স্বপ্ন দেখিনি। এটা সত্যি ছিলো। তোমারা আমার কথা বিশ্বাস করো,,,প্লিজ!!!((উত্তেজিত হয়ে))
–((জাইমাকে জড়িয়ে ধরে)) বিশ্বাস করেছি তো মা। এখন তুমি ঘুমাও,,,বাবা তোমার পাশেই বসে আছে।(বাবা)

জাইমা ভয়ে ভয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
–জাইমার আব্বু,,,,কিছুদিন ধরেই মেয়েটা এসব আবোল তাবোল দেখে যাচ্ছে। আমার মনে হয় কি…..!!((মা)
–কিছুই মনে করতে হবে না তোমার। আমার মেয়ের কিছুই হয়নি। বুঝেছো??? তুমি যাও তোমার ছেলের কাছে,,,জাইমার চিৎকার শুনে ছেলেটা হয়তো ভয় পেয়ে উঠে পড়েছে।(বাবা)
শারমিন বেগম জাইমার দিকে একবার তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

🍁পরদিন,,,,,,

জাইমা কলেজ থেকে ফেরার পথে রাস্তায় একটা ফুটফুটে সাদা বিড়ালকে মারাত্মক আহত অবস্থায় দেখতে পায়। বিড়াল জাইমার কাছে খুব প্রিয় একটা প্রাণী। তাই বিড়ালটাকে এভাবে আহত অবস্থায় দেখে জাইমা ছুটে আসে….
–আল্লাহ!! এটা কিভাবে হলো?? বিড়ালটা না জানি কতো কষ্ট পাচ্ছে।।।
জাইমা আস্তে আস্তে করে বিড়ালটাকে কোলে তুলে বাসায় নিয়ে আসে।

জাইমাকে একটা বিড়াল কোলে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করতে দেখে শারমিন বেগম তার পথ আটকে দাঁড়ায়…
–জাইমা!!! তোমাকে কতোবার বলেছি,,,রাস্তা থেকে এভাবে পশু পাখি ধরে বাসায় নিয়ে আসবে না। আমার কথা কেনো শোনো না তুমি??(মা)
–কারন,,,,আমি আপনার কোন কথা শুনতে বাধ্য না। আর আমার বাসায় আমি যাকে ইচ্ছা নিয়ে আসবো।(জাইমা)
–মায়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?? আমি এই শিক্ষা দিয়ে বড় করেছি তোমাকে??
–কে মা?? আপনি কখনোই আমার মা না। আপনি শুধু মাত্র আমার বাবার স্ত্রী আর ছোট ভাই জিহানের মা।
–জাইমা!! আমি….((বলার সুযোগ না দিয়ে জাইমা তার রুমে চলে যায়))

রুমে প্রবেশ করতেই জাইমার চোখ সিলিং ফ্যানের দিকে যায়,,,,গতকাল রাতের কথা মনে হতেই শিউরে ওঠে সে। সত্যিই কি কাল রাতের ঘটনাটা শুধু মাত্র একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো?? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোলের বিড়ালটাকে টেবিলের উপর রেখে তার প্রাথমিক চিকিৎসা করতে শুরু করে জাইমা।

বিড়ালটা দেখতে কেমন যেন অদ্ভুত!! সাদা ধবধবে বিড়াল,,,অন্য বিড়াল থেকে আকারে বেশ বড়। দেখতেও বেশ পরিপাটি,,,,হয়তো কারো পালিত বিড়াল।। এমন অদ্ভুত আকৃতির বিড়াল আগে কখনো দেখিনি সে।।।

–চলবে💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here