গল্পঃ রহস্যময় মেয়ে,পর্ব :- ০৮
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”কেউ মুখে পানি ছুড়তেই আমার জ্ঞান ফিরে এলো। সামনে তাকিয়ে দেখি রনি দাঁড়িয়ে আছে। আমার হাত পা বাঁধা। মাথায় আঘাত লাগায় ব্যথা পাচ্ছি। অনেক টা রক্তও ঝড়েছে। এদিকে রনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত গুলো বের করে হাসতে লাগলো। সাথে আরো একজন দাঁড়িয়ে আছে। তাকে অবশ্য আমি কখনও দেখি নি।
রনি জোড়ে জোড়ে বলতে লাগলো..
রনি:-এখানে এসে মস্ত বড় ভুল করেছো যারিন। এসেছিলে ভালো কথা কিন্তু আমাদের বিষয়ে না ঢুকলে হয়তো এভাবে তোমাকে মরতে হতো না।
আমি:-রনি,তুমি যা করেছো তার জন্য লজ্জা হওয়া উচিত। তা না করে তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?
রনি:-ভয় না রে পাগলি আমি তোকে মারবো। আর ঠিক সেভাবেই মারবো যেভাবে নিশি কে মেরেছিলাম।
আমি:-কিভাবে মেরেছো তুমি নিশিকে?
রনি:-আহা রে,বেচারি নিশি! খুব কষ্ট হয়েছিল ওর মরার সময়। হাহাহা। কিভাবে মেরেছি জানিস? ওকে অনেক বার বলেছিলাম। আমি তোমাকে খুব সুখে রাখবো। রানীর মতো রাখবো। কিন্তু আমার কোন কথাই শুনলো না। নিজের জেদের কারনে নৃশংসভাবে হত্যা করেছি ওকে।
আমি:-কি করেছো তুমি নিশির সাথে বলো।
রনি:-ওর হাতের আঙুল কেটেছি, পায়ের আঙুল কেটেছি। জিহ্বা কেটেছি। সারা শরীর টুকরো টুকরো করে। এর পর গলা কেটে কাব্য দের পুকুরপাড় এর শিউলি গাছের নিচে পুঁতে রেখে দিয়েছি।
আমি:-ছিঃ এতো নৃশংস তুমি? তুমি না কাব্যর বন্ধু ছিলে? তাহলে কিভাবে এসব করলে?
রনি:-ছিলাম তবে যেদিন থেকে নিশি কাব্যের সাথে সম্পর্কে জড়ায় আমি ঠিক থাকতে পারি নি। ভালোবেসেছিলাম নিশিকে। কিন্তু ও শুনলো না।
আমি:-আর কে কে ছিল তোমার সাথে?
রনি:-আমি,আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে দেখছো সেও ছিল। ও আবির আমরা আর কাব্য এক সাথেই পড়ি।
আমি:-আরো যে দুজন ছিল তারা কে?
রনি:-বাহ! আরো দুজন ছিল সেটা ও বুঝে গেলে। কি ব্রেইন তোমার। সত্যি মানতে হবে বুদ্ধিমতি। তবে আমাদের চার জনের পেছনে মাস্টার মাইন্ড একজন আছে।
আমি:-বলো আরকে ছিলো? আর মাস্টারমাইন্ড কে?
রনি বলতে বলতে আর বললো না।
রনি:-না না সেটা বলা যাবে না,সিক্রেট। অবশ্য মরার পর তো জানবেই সব শুনেছি আত্মারা নাকি সব দেখে। সব জেনে যায়। তোমার তো জানার সখ। চলো পুরন করে দিই।
বলেই একটা বড় ছুরি নিয়ে আমার সামনে এলো।আমার হাতের কাছে ছুরি টা ধরলো। হঠাৎ চারদিক থেকে প্রবল হাওয়া আসতে শুরু করলো। একটা বন্ধ ঘরে এতো হাওয়া আসাটা অস্বাভাবিক। কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পেরেছি এখানে নিশি এসেছে। কারণ হাওয়ার সাথে সাথে শিউলি ফুলের গন্ধ স্পষ্ট আমার নাকে আসছে।
আমি রনি কে সাবধান করলাম। ‘””রনি এখনো সময় আছে। সব স্বীকার করে নাও নইলে নিশির আত্মা তোমাকে বাঁচতে দেবে না।”” কিন্তু রনি হেসে উঠলো আর কিছুতেই আমার কথা বিশ্বাস করছিল না।
হঠাৎ চারপাশ থেকে তীব্র ধোয়ার কুন্ডলী আমাদের চারপাশে ঘুরতে শুরু করলো। এটা দেখে রনি আর আবির নামের ছেলেটি ভয় পেয়ে গেল।
আবির ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল কিন্তু রনি যেতে পারলো না। রনির চারপাশে ধোয়া ঘুরছে। এক সময় রনিকে ধোয়া টা হাওয়ায় ভাসিয়ে নিল। রনি ধোয়ার সাথে সাথে শূন্যে ঘুরতে লাগলো। কিছুক্ষন পর রনি ছিটকে গিয়ে ঘরের এক পাশের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে গেল। সাথে সাথে হাওয়া টাও মিলিয়ে গেলো।
চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। আমি আবারো রনিকে বললাম সব স্বীকার করে নাও। কিন্তু রনি কিছুতেই তা করলো না। বরং আবার পালিয়ে যেতে চাইতেই ঘরের দরজা টা বন্ধ হয়ে গেল। রনি দরজায় ক্রমশ ধাক্কাচ্ছে কিন্তু কোন লাভ হলো না।
আমার হাতের বাঁধন টা নিজে নিজেই খুলে গেলো। আমি ছাড়া পেয়ে গেলাম। দেখলাম পাশের একটা টেবিলে ডায়েরিটা রাখা। আমি গিয়ে ডায়েরিটা হাতে নিলাম। কাব্যকে প্রমাণ দেখাতেই হবে। তখনি নিশির কন্ঠ ভেসে এলো।
নিশি:-যারিন চলে যাও এখান থেকে। একে এবার শাস্তি দেয়ার সময় চলে এসেছে।
আমি:-না নিশি। ওকে কিছু করো না। এভাবে শাস্তি দিয়ে কি পাবে তুমি?
নিশি:-শান্তুি। আমি যে অসহ্য যন্ত্রণায় ভোগ করছি তা থেকে শান্তি পাবো। এর রক্তে স্নান করবো আমি। চলে যাও যারিন।
আমি:-না নিশি ছেড়ে দাও ওকে।
তখনি নিশি আমার দিকে তাকালো। আমি এক নিমিশে কিভাবে সেই বাড়ির বাইরে চলে এলাম নিজেই জানি না। জায়গা টা আমি আগেও দেখেছি। কাব্য আমাদের এই জায়গা টা ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল। রাজবাড়ীর কাছাকাছিই। ভেতর থেকে রনির আত্মচিৎকার ভেসে আসছে। আমাকে কিছু করতেই হবে। আমি দৌড়ে রাজাবাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। হাতে নিশির ডায়েরি।
যেভাবেই হোক রনি কে বাঁচাতে হবে। প্রায় ১০ মিনিটের রাস্তা পেরিয়ে আমি রাজবাড়ি পৌছালাম। আমি ভেতরে ঢুকেই কাব্যকে খুঁজতে ওর ঘরে গেলাম সেখানে কেউ নেই। দৌড়ে বসার ঘরে যেতেই দেখতে পেলাম কাব্য,ইশান,দিপু,অনা সহ কাব্যের বাড়ির সকলে বসে গল্প করছে।
আমি ভেতরে যেতেই কাব্য আমার দিকে তাকালো। আমার মাথা ফেঁটে রক্ত বেরিয়েছে ফলে জামাকাপড় এ রক্ত লেগে আছে। আমাকে দেখে কাব্য দৌড়ে এলো। আর সকলেই আমাকে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে।
আমি সবাইকে সবটা খুলে বললাম। আর ডায়েরি টা কাব্যের হাতে দিলাম। কাব্য ডায়েরি পড়ার পর আমি রনির কথা বললাম। কিন্তু কাব্য রনিকে বাঁচাতে চায় না। আমি বুঝালাম রনিকে বাঁচালে বাকি খুনিদের নাম হয়তো জানা যাবে।
কাব্য বুঝতে পারলো। আমি,কাব্য,দিপু,ইশান,অনা রনি কে বাঁচাতে চললাম। কিন্তু আমরা যেতে যেতে খুব দেরি হয়ে গেছে।
ভেতরে গিয়ে দেখি রনির টুকরোটুকরো করা লাশ টা নিচে একপাশে পড়েআছে আর মাথা টা আলাদা হয়ে অন্যপাশে। আর ঠিক সামনেই রনির রক্ত দিয়ে লিখা,””আজ রনি তার পাপের শাস্তি পেয়েছে এবার পাবে আবির”””
আমি কাব্যকে জলদি আবিরের কাছে যেতে বললাম
নইলে আবির কেও নিশি মেরে ফেলবে। এভাবে মরলে চলবে না ওদের আইন সাজা দেবে। কাব্য দৌড়াচ্ছে আমি,অনা,দিপু,ইশান সবাই কাব্যের পেছন পেছন যাচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর আমরা আবিরের বাড়িতে চলে আসি। দেখি আবির ব্যাগ গোছাচ্ছে। কাব্য গিয়েই আবির কে ঘুষি দিতে শুরু করলো। ইশান আর দিপু কোন ভাবে কাব্য কে শান্ত করলো। আমি আবির কে জিজ্ঞেস করলাম “” কে কে ছিল তোমাদের সাথে বলো”” আবির বললো না। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম তাও বলল না। এর পর আমি রনির কথা বললাম…
আমি:-আবির,রনি কে নিশি মেরে ফেলেছে। এবার তোমার পালা। তুমি কি মরতে চাও,চাও না তো! তাহলে বলো আমাদের তোমাদের সাথে আর কে কে ছিল?
আবির বললো “”আমি,রনি,লিমন….””” কাব্য নাম গুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। আবির ৪র্থ জনের নাম বলতে যাবে তখনি কাব্য উঠে ঘরে থাকা একটা গ্লাস হাতে নিয়ে ভঙলো আর। আবিরের দিকে ক্রোধ এ এগিয়ে আসছিল। আমরা সবাই মিলে কাব্য কে আটকে রাখার চেষ্টা করছি। আবির ভয়ে কি করবে বুঝতে পারছে না। কাব্য আমাদের ঠেলে ফেলে দিলো আর আবিরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আবির দৌড়ে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কোনো ভাবে কারেন্টের তারের সাথে আটকে যায়। গলায় কারেন্টের তার টা আটকে আবির কে উপরে উঠিয়ে নেয়। দেখেই বুঝা যাচ্ছিল এটা স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়।
ইশান কেথা থেকে একটা শুকনো কাঠের লাঠি এনে আবির কে মুক্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু কোন কাজ হয় না। মনে হচ্ছিল আবিরের শরীরে তার টা আঠার মতো লেগে গেছে। কিছুক্ষণ পর আর আবিরের কোন সাড়াশব্দ আসছে না। তার টা থেকে আবিরের দেহ নিচে পরে গেলো। শরীরে কারেন্ট লাগায় সেখানেই ওর মৃত্যু হয় তার।
চারদিকে শিউলি ফুলের গন্ধ বয়ে আসছে। কানের কাছে শুনতে পেলাম। নিশি বলছে…
“””পারবে না যারিন,কাউকে বাঁচাতে পারবে না। সবাই তার পাপের সাজা ভোগ করবে। এবার আমি লিমন কে মারতে যাবো। পারলে আটকে দেখাও।””””
বলেই চলে গেল। আমি কাব্যকে বললাম এবার লিমনের পালা। কাব্য চলো আমাদের যেতে হবে। তখন কাব্য বলল “”কি হবে গিয়ে? আমার কাছের বন্ধু যাদের সাথে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি। এক সাথে খেলেছি,লেখাপড়া করেছি। সুখেদুঃখে সব সময় আমি যাদের পাশে ছিলাম তারা আমার জীবন টাকে এভাবে নষ্ট করে দিলল। আমার ভালোবাসা কে এভাবে খুন করলো? ছিঃ লজ্জা হচ্ছে আমার,সব আমার দোষ। আজ যদি আমি নীলাদ্রিকে ভালো না বাসতাম তাহলে এতকিছু কখনোই ঘটতো না। সব দোষ আমার।””
আমার কাব্য কে শান্তনা দেবার ভাষা ছিল না। সত্যি এ কেমন বন্ধু নিজের বন্ধু এতো বড় ক্ষতি করলো। রনি নাহয় নিশি কে পাবার জন্য এমন করেছে কিন্তু সেই মাস্টার মাইন্ড টা কে? তার কি স্বার্থ ছিল এর পেছনে?
এটা নিশ্চই বড় একটা চক্রান্ত কিন্তু সে কে আমাকে বের করতেই হবে। আর তা জানতে হলে লিমন কে বাঁচাতেই হবে।
কিন্তু এখন কাব্যের অবস্থা খুব খারাপ ছেলে টা ভেঙে পরেছে। আমি বললাম..
“””আজ আর কোথাও যেতে হবে না। এখন কাব্যের একা থাকা প্রয়োজন।””””
তাই সবাই মিলে কাব্য কে রাজাবাড়িতে নিয়ে গেলাম। কাব্য কে তার ঘরে দিয়ে আমি আমার ঘরে চলে এলাম। ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতেই শুনলাম কাব্যকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এটা কিভাবে হয়? নিশি তো কাব্যকে কখনও নিয়ে যাবে না। তাহলে কাব্য কোথায় চলে গেলো? নাকি কেউ কাব্য কে কিডন্যাপ করেছে?
আমি নিশি কে ডাকতে লাগলাম।তখনি বাতাসে শিউলির গন্ধ ভেসে এলো……….
.
.
চলবে………