রহস্যময় মেয়ে,পর্ব:-৩
লেখক- কাব্য আহমেদ
কাব্য চলে যাওয়ার পর আমি নিশি কে ফোন দিলাম।
:-হ্যালো নিশি?
:-হুম যারিন বলো।
:-নিশি তোমার দেয়া আইডিয়া টা কাজে লাগলেও কাব্য এখনো আমার সাথে ততোটা মিশে উঠতে পারে নি। কিন্তু আজ কথা বলে বুঝতে পারলাম ও নিশ্চই কাউকে ভালোবাসতো। কিন্তু নিজে থেকে আমায় কিছুই বলে নি। আমি বন্ধু হতে চাইলে সে উঠে চলে যায়।
:-কাব্য নিজেকে খুব একা মনে করে,সে ভাবে তার জীবনের সাথে যেই জড়াবে সেই তাকে ধোকা দেবে। তাই এমন করলো। কিন্তু আমি জানি তুমি ওর ভালো বন্ধু হতে পারবে। একটু সময় কাটাও ওর সাথে। দেখবে সে আস্তে আস্তে তোমাকে সব বলবে।
:-তা বুঝলাম,কিন্তু তুমি এতো কিছু কিভাবে জানো? তুমি কি কাব্য কে আগে থেকেই চিনতে?
:-ইয়ে,না মানে তুমার কথা শুনে আমার মনে হলো। হয়তো কাব্য এমন স্বভাবের।
:-অহ,আচ্ছা আমি তাই করবো।
আস্তে আস্তে আমি কাব্যের সাথে মিশতে লাগলাম। কখনো পড়ার ছলে, কখনো বিভিন্ন প্রবলেমের কথা শেয়ার করতাম। এক সময় কাব্য আমার সাথে একদম ফ্রি হয়ে গেল। যদিও খুব কষ্ট করতে হয়েছে। এর পরও আমাকে ওর লাইফ সম্পর্কে কিচ্ছু বলল না।
আজ ঠিক করলাম কাব্য কে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবো। তাই রেডি হয়ে ক্যাম্পাসে চলে গেলাম। বসে আছি,কাব্য এলো।
:-কাব্য চল।
:-কোথায় যাবো?
:-তোমাকে একটা জায়গায় আজ নিয়ে যাবো।
:-আমি কোথাও যাবো না।
:-আজ যেতেই হবে। আমি কোন কথা শুনবো না। বল যাবে…বলো..বলো…প্লিজ।(অনেক্ষন জোর করলাম)
:-আচ্ছা যাবো। চলো!
আমি কাব্য কে নিয়ে আমাদের বাসায় গেলাম। সেখানে আম্মুর আর হাসানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আব্বু চাকরি করে অন্য একটা শহরে, তাই বাড়িতে আমি আর মা আর আমার ছোট ভাই হাসান ই থাকি।।দেখলাম বেশ ভালোই মিলেছে হাসান আর কাব্য
। বুঝলাম কাব্য বাচ্চা খুব ভালোবাসে। কিন্তু ভাবিনি এতোটা।
আমি যেন আমার সামনে এক অন্য কাব্য কে দেখতে পেলাম। এই প্রথম আমি কাব্যের মুখে হাসি দেখলাম। যে কখনো হাসতো না সে হাসছে, শুধু তাই নয় হাসানের সাথে খেলা করছে, দেখে মনেহচ্ছে কাব্য তার কৈশর জীবনে ফিরে গেছে। ওদের একা থাকতে দিয়ে আমি আমার রুমের বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষন পর কাব্য এলো।
:-যারিন!
:-হুম?
:-আজ আমি তোমার সাথে আমার জীবনের ঘটে যাওয়া কিছু কথা শেয়ার করতে চাই।
:-মনে মনে অবাক হলাম,যা জানার জন্য আমি এতো কিছু করলাম কোন কাজ হলো না তাতে। অথচ আজ কাব্য নিজেই আমাকে বলতে এলো?
:-কি ভাবছো জারিন?
:-কিছু না। কি বলতে চাও বলো।
:-যারিন আমি একজনকে ভালোবাসতাম। কিন্তু একদিন সে আমাকে আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যায়।
:-কেন?
:-জানি না,হয়তো আমার ভালোবাসাতেই কোন খামতি ছিল।
:-কি হয়েছিল?
:-তাহলে শুনো,
আমি তখন সবে মাত্র এসএসসি পাশ করেছি। কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে একটা মেয়ে কে দেখে খুব ভালো লাগলো। ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমি তাকে দেখতাম। কিন্তু কখনো তাকে আমার মনের কথা বলতে পারতাম না। আমার বন্ধু ছিলো রনি ওকে সব বলতাম। অনেক বার ওকে দিয়ে ও বলতে চেয়েছি কিন্তু পারি নি।
একদিন ক্লাসের সামনে দিয়ে সে যাচ্ছিল,আমি সেখানে রনির সাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাবলাম আজ বলবই। সে কাছে আসতেই তাকে বললাম “”সিবালোভা কেমাতো মিআ””(উল্টো করে-আমি তোমাকে ভালোবাসি)ভেবেছিলাম কিছু বুঝবে না। কিন্তু জানতাম না মেডাম এতো বুঝে। চরকির মতো ঘুরে এলো। আমি তো ভয়ে ঘেমে প্রায় শেষ। কিন্তু ভাবি নি আমার জন্য এমন কিছু অপেক্ষা করবে।
সে এসেই আমায় বললো “”বুদ্ধু কোথাকার,ইডিয়েট,কিভাবে প্রপোজ করে জানো না?বলেই হাটু গেড়ে আমার সামনে বসে পরলো। ব্যাগ থেকে একটা গোলাপ বের করে বলল”কাব্য আমি তোমাকে ভালোবাসি”” তখন যে কি আনন্দ হচ্ছিল। হঠাৎ একটা বাজ পরার মতো আওয়াজ হলো। ভালো করে তাকিয়ে দেখি সে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তাকালাম,শালার রনি ও নেই। সুযোগ পেয়ে ভেগে গেছে। আমি কিছুক্ষন চেয়ে থেকে অনুভব করতে পারলাম গালে ব্যথা পাচ্ছি। এর মানে নিশ্চই বোঝাতে হবে না?
:-হাহাহাহা,থাপ্পর টা কি খুব জোড়ে মেরেছিল?
:-তা আর বলতে? আমি শুধু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এর পর আমাকে রেখে চলে গেল। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে। গালে ধরে আমি বাড়িতে চলে এলাম। সেদিন বিকেলে কেউ আমার জানালা দিয়ে একটা কাগজ ফেলে গেল। আমি কাগজ খুলে দেখি সে আমাকে পুকুরপাড়ে দেখা করতে বলেছে। আমি সেখানে যাই। একটা শিউলি গাছের নিচে সে দাড়িয়ে ছিল। আমি যেতেই জিগ্যেস করলো””ভালোবাসো আমায়?””আমি শুধু “”হু””বলেছিলাম। তাকে জিজ্ঞেস করতেই সে আমায় জড়িয়ে ধরলো।আমার চোখ দিয়ে তখন জল পরছিল। যাকে চেয়েছিলাম তাকে পাওয়ার আনন্দে মনে হচ্ছিল পাগল হয়ে যাবো। তাকে বুকে জড়িয়ে আমার মনে হয়েছিল সারাটা জীবন এভাবেই কাটাতে পারবো।(কাব্য চোখের জল মুছে আবার বলা শুরু করলো)
এভাবে আমাদের সম্পর্ক চলতে থাকে। প্রায় দেড় বছর পর একদিন আমার চাচা আমাদের দেখে নেয়। বাবার কানে খবর যায়। তিনি আগের যুগের মানুষ। আমি ভিষন ভয় পেয়ে যাই। কি হয় সেটা ভেবে সারা দিন সেদিন বাড়িতে যাই নি। রাতে বাড়ি ফিরতেই বাবা আমাকে ডেকে নিলেন। আমাকে বললেন,””তুমি অনেক ছোট আগে বড় হও সামনে পরিক্ষা। পরিক্ষা শেষ হোক তার পর যা করার করো। ততোদিন তুমি আর অই মেয়ের মধ্যে কোন যোগাযোগ থাকবে না। আমি বাবার মুখে এসব শুনে খুশি হই।
আমি আর ও দুজনেই এই কথা মেনে নিই। সেদিন থেকে আমাদের দুজনের দেখা করা বন্ধ হয়ে যায়। সামনে পরিক্ষা থাকায় কলেজে ও যাওয়া হতো না। অনেক কষ্টে থেকে ও ভাবতাম পরিক্ষার পর তো সব ঠিক হয়ে যাবে তাই আর ওর খোঁজ নেয়া হতো না। এর পর পরিক্ষা শেষ হয়।
সেদিন আমি তাদের বাড়ি যাই কিন্তু সেখানে গিয়ে কাউকে খুজে পেলাম না। সারা গ্রামে জিজ্ঞেস করি। কিন্তু কেউ বলতে পারে না ওরা কোথায় গেছে আর কখন ই বা গেছে। রাতারাতি গায়েব হয়ে যায়। সেদিন রনি এসে আমায় একটা চিঠি দিল। আমি চিঠি খুলে দেখলাম সেখানে লিখা..
“”কাব্য,আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,অনেক বড় পরিবারের ছেলের সাথে। ওরা আমাকে সহ আমার পরিবার কে ও সাথে নিয়ে যাবে। তাই আমার পক্ষে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব না। আমাকে ভুলে যাও,ভালো থেকো।””
আমি বিশ্বসার করি নি এই চিঠির কথাগুলো। রনি বলল ৫ দিন আগে এটা ওকে দিয়ে নাকি সে চলে যায়।
তার পর থেকে দিন রাত না খেয়ে না পড়ে ওকে খুঁজে গেছি। কিন্তু কোন লাভ হলো না। বাবা ও অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু পান নি। সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।আমাকে ধোকা দিয়েছে। লোভী একটা মেয়ে। তার পরও আমি তাকে না পেয়ে পাগলামি করতে লাগলাম। কি করবো খুব ভালোবাসতাম যে। আমার বাবা এসব সহ্য করতে না পেরে আমাকে এখনে পড়তে পাঠিয়ে দেয়। কি ভুল ছিল আমার? এমন ভাবে আমাকে সে কষ্ট দিতে পারলো। কিভাবে পারলো..কিভাবে?(কাব্য কাঁদতে থাকে)
:-কাব্য শান্ত হও।
:-যারিন জানো? আমি সেখান থেকে আসার পর নাকি গ্রামে একটা লাশ খুজে পাওয়া গেছিল। মুখ থেতলানো কিন্তু অনেকে বলেছিল এটা নাকি ওর ভাই এর লাশ। কিন্তু কেউ নিশ্চিত ছিল না। তাই আমিও আর যাই নি। সেখানে গেলেই অই লোভী মেয়ে টার কথা মনে পড়ে। কত ভূলে যেতে চেষ্টা করি কিন্তু প্রতি টা রাত ওর কথা মনে পড়ে। খুব কষ্ট হয়। খুব…..(কাব্য দৌড়ে আমাদের বাড়ি থেকে চলে যায়)
কাব্যের কথা গুলো শুনে খারাপ লাগলে ও কেন জানি না মনে হলো কোথায় যেন ঠিক মিলছে না। বড় ঘরে বিয়ে হওয়ার কথা আর সেই মেয়েটি চলে গেল অথচ গ্রামের কাউকে বলল না কেন তারা চলে যাচ্ছে, আর সবচেয়ে বড় কথা গ্রামের কেউ তাদের যেতে ও দেখে নি। তারা তো আর চুরি করছিল না। তাহলে কি হতে পারে। আর সেই লাশ টা যদি সেই মেয়ে টার ভাই এর হয় তবে নিশ্চই ওরা বিপদে পড়েছে? কিছু একটা গড়বর আছে। আমাকে জানতেই হবে।
আমি নিশি কে ফোন দিয়ে সব জানালাম। নিশি আমাকে বলল কাব্য দের গ্রামে যেতে। সেখানে গিয়েই সবটা পরিষ্কার হবে। আমারও সেটাই মনে হচ্ছিল। তাই আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম আমি সেই মেয়ে কে খুঁজে বের করবই।
ফোন রেখে ভাবছি কিভাবে জানা যায় সেই মেয়েটা আর তার পরিবারের সাথে কি ঘটেছিল? তখনি আমার মাথায় একটা আইডিয়া এলো। আমি সাথে সাথে আমার কয়েকজন বন্ধু কে ফোন দিয়ে একটা কফিসপ এ ডাকলাম।
অনেক্ষণ ধরে বসে আছি,ওফফ এদের স্বভাবই এমন। সব কাজে লেইট। তখনি পেছন থেকে কেউ এসে আমার চুল ধরে টান দিল।
:-আআআআ….ইশান…..(রেগে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। এটাই ওর স্বভাব।)
:-হয়েছে নাটক করতে হবে না এখানে হঠাৎ ডাকলি কেন সেটা বল।
:-বলবো আগে বাকিরা আসুক।
:-বাকিরা মানে,কে আসবে?
:-আসলেই দেখতে পাবি।
তখনি দিপু আর অনা এলো।
:-এতো লেইট করলি কেন।আচ্ছা শোন একটা রহস্যের সন্ধান পেয়েছি।
সবাই মিলে বলে উঠলো,”কি রহস্যে?””
:-একটা পরিবার কে খুঁজতে হবে।
দিপু:-কার পরিবার?
:-তাহলে শোন….সবাই কে সবটা বললাম।
ইশান:-হুম এখানে বেশ বড় একটা রহস্য আছে।
কিন্তু মেয়ে টা মেয়ে টা যে করছিস। মেয়ে টার নাম টা কি?
:-ইশশশ ভুলে গেছি। কাব্যের কাছে সেটা তো জানা হয়নি।
ইশান:-তুই যে কি করিস না! আচ্ছা কবে যাবি?
:-আগে কাব্যের সাথে কথা বলি। কোনো ভাবে ওকে বুঝিয়ে ই আমারা সেখানে যাবো। আর ঘটনা টার রহস্য বের করবই।
অনামি:-আচ্ছা কাব্যকে এখন ফোন করে জিজ্ঞেস করে নে মেয়ে টার নাম কি।
অনামির সাথে সবাই সম্মতি জানালো।
আমি কাব্য কে ফোন দিলাম।
:-কাব্য,তুমি ঠিক আছো তো?
:-হ্যাঁ যারিন আমি ঠিক আছি।
:-কাব্য একটা কথা জিজ্ঞেস করবো যদি কিছু মনে না করো।
:-হ্যাঁ বলো!
:-অই মেয়েটার নাম কি যাকে তুমি ভালোবাসতে?
:-ওর নাম নীলাদ্রি।
:-অহ আচ্ছা।
ফোন কেটে সবাই কে জানালাম মেয়েটার নাম নীলাদ্রি। এখন আমাদের লক্ষ্য এর পেছনের রহস্য বের করা।কাল ই আমি কাব্যের সাথে কথা বলবো আর সেই গ্রামে যাবো যেখানে গেলে সব রহস্যের সমাধান পাবো।
.
.
চলবে…………