স্কুল জীবনের প্রেম,পর্ব_২

স্কুল জীবনের প্রেম,পর্ব_২
লেখা_জান্নাতুল নাঈমা

“অপরিণত বয়সে প্রেম, ভালোবাসা অভিশাপ বয়ে আনে এটা যেমন সত্যি তেমনি অপরিণত বয়সের প্রেম, ভালোবাসায় মিশ্রিত থাকে অজস্র আবেগ,অনুভূতি”

“ম্যাচিওর হওয়ার পরের প্রেম, ভালোবাসা যতোটা না খাঁটি হয় ইমম্যাচিওর বয়সের প্রেম,ভালোবাসা তাঁর থেকেও দ্বিগুন খাঁটি হয়” কেনো জানেন??
.
কারন আপনার মাঝে যখন ম্যাচিওরিটি এসে যাবে তখন আপনি কারো সাথে প্রেম,ভালোবাসায় জরানোর আগে হাজার বার পরখ করে দেখবেন সামনের মানুষ টার ভালোবাসা আপনার জন্য কতোটা তীব্র,সামনের মানুষ টার সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জরালে আপনি তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন কিনা। সামনের মানুষ টা দেখতে কেমন,তাঁর যোগ্যতা কি,তাঁর পারিবারিক পরিচয় কি,বর্তমান চিন্তা না করে ভবিষ্যত কে দেখতে থাকবেন। বহু যোজন,বিয়োজন করে সম্পর্কে জরাবেন।যেটায় মনের টানের থেকেও মস্তিষ্কের টান বেশী থাকবে। মনের ভালোবাসা আর বুদ্ধির ভালোবাসায় ফারাক অনেক।
.
কিন্তু ইমম্যাচিওর বয়সে আপনি এসব কথা মাথায়ই আনতে পারবেন না। আপনি শুধু মানুষ টা কে দেখবেন, মনুষটার কথা আপনার কানে বাজতে থাকবে,মানুষ টার মুখ আপনার চোখে ভাসতে থাকবে। মানুষ টার আশে, পাশে আপনি খেয়ালই করবেন না। আপনার ভবিষ্যত কি হবে কি হতে পারে এসবে আপনার কোন মাথা ব্যাথা থাকবে না। আপনি শুধু পাগলের মতো মানুষ টাকে ভালোবাসবেন। আপনার সমস্ত আবেগ,ভালোবাসা উজার করে দিবেন। বুদ্ধি শূন্য হয়ে যাবেন আপনি। কি ঠিক কি ভুল আপনার বিবেক সেটা বুঝবে না বুঝবে শুধু আপনার ভালোবাসা টা। অবুঝ প্রেম, অবুঝ ভালোবাসা।
.
আমার আর তাসমিয়ার অবুঝ প্রেমটা তিনমাসেই বেশ গভীর হয়ে যায়। আর এই গভীরত্ব আসে যখন তাসমিয়ার বাবা তাঁকে একটা ফোন কিনে দেয়।
ওর বাবা কোম্পানি তে জব করতো, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলো তাসমিয়া। বাবা ঢাকা শহড় থাকায় ছেলে, মেয়ে দের দেখার ইচ্ছে করতো।
কিন্তু ছুটি পেতো না তেমন। তাই এন্ড্রয়েডফোন কিনে দেয় এবং সপ্তাহে একদিন ভিডিও কলে কথা বলে।
আমাকে তাসমিয়া সবটা জানাতো। ওর পার্সোনাল ফোন হওয়াতে আমার বেশ সুবিধা হয়ে গেলো।
যখন, তখন খোঁজ, খবড় নিতে পারতাম। সারাদিন ও আমাকে কম সময় দিলেও রাত নয়টা থেকে বারোটা অবদি টানা সময় দিতো। ইমোতে মেসেজে কথা বলতাম আমরা। ও তখনো ফেসবুক আইডি খুলেনি আমিও বলিনি কারন আমি চাইতাম ও শুধু আমার সাথেই কথা বলুক আমাকেই সময় দিক।
.
এভাবে চলতে থাকলো আমাদের সময় গুলো। তাঁর বিষয়ে আমি সবটা জেনে,বুঝে গেছিলাম। সেও আমার বিষয়ে সবটা জেনে বুঝে গেছিলো। সে খুব ভীতু ছিলো এই যেমন কেউ অল্প বকাবকি করলে বা অল্প ধমক দিলেই সে ভয় পেতো কান্নাকাটি করতো।
তাঁর সবথেকে বেশী ভয় ছিলো রাতের অন্ধকারে। সারারাত তাঁর রুমে লাইট অন থাকতো কারেন্ট চলে গেলেই সে কি ভয়৷ আমি তাঁর জীবনে আসার আগে সে ভয় পেলে মায়ের কাছে পাশের রুমে চলে যেতো।
কিন্তু আমি তাঁর জীবনে প্রবেশ করার পর থেকে সে ভয় পেলে ফোন নিয়েই মেসেজ করতো “বিজয় তুমি কোথায়, ফ্রি আছো??আমার খুব ভয় লাগছে”
এরকম মেসেজ দেখলে আমি যেখানে যে অবস্থা তেই থাকিনা কেনো তাঁকে মেসেজ করতাম। ওটা সেটা বলে তাঁর মন আমারদিকে নিয়ে আসতাম যাতে ভয় জিনিসটার কথা সে ভুলে যায়। ভালোবাসাময় কথা বলতাম যাতে তাঁর অনুভূতি তখন ভালোবাসাময় বিজয়ময় হয়ে ওঠে। সত্যি তাই হতো,,,আর যেদিন বেশী ভয় লাগতো ওর সেদিন আমার এসব কথায়ও ও শান্ত হতো না। মায়ের কাছেও যেতো না ওর মা আসলেও নাকি বলতো ভয় লাগেনা৷ কিন্তু আমাকে ঠিকি বলতো ভয় লাগছে।
যতোই সে আমার সমবয়সী হোক না কেনো সে যে মেয়ে ছিলো। মেয়েরা বাবা,মায়ের পর আর একজনের সাথেই বেশী আল্হাদপনা করে সে হচ্ছে তাঁর ভালোবাসার মানুষ। তাসমিয়াও করতো আমি বুঝতাম সে আমার থেকে ভালোবাসা চাচ্ছে, কেয়ার চাচ্ছে। আমারো বেশ ভালো লাগতো মনের ভীতর অনুভূতিরা শিউরে ওঠতো।
.
আমি তখন সব কাজ অফ রেখে ওকে ফোন দিতাম।
আর ও রিসিভ না করে কেটে বলতো “ফোন করছো কেনো মা, ভাই আছে তো পাশের রুমে” তখন আমি ওকে মেসেজ পাঠাতাম “তুমি রিসিভ করে রাখো কথা বলতে হবে না আমি বলবো তুমি শুধু শুনবে”
সে তাই করতো আর আমি অনেক অনেক কথা বলতাম কথার ফাঁকে তাকে বলে ওঠতাম “তাসমিয়া,,, লাভ ইউ” তখনো ও নিরব থাকতো আমার খুব শুনতে ইচ্ছে করতো খুব করে চাইতাম তখন ও কিছু বলুক কিন্তু ও তো নিরুপায় তাই আমি বলতাম”তাসমিয়া একটু করে হুম বলো আমি আমার উত্তর বুঝে নিবো”

আর ও হুম বলতো না ও বলতো হুমহ,, যেখানে ওর নিঃশ্বাসের ভারী শব্দ টা আমি শুনতে পেতাম। যেখানে থাকতো অজস্র আবেগ,অজস্র অনুভূতি।
.
সামনে এস এস সি পরীক্ষা তাই সে পড়াশোনায় তীব্র মনোযোগ দিলো। আমাকেও বেশ শাসন করলো।
“বিজয় তুমি কিন্তু একদম ফাঁকি দিবে না। বিজয় এখনি পড়তে বসো। বিজয় আসো একসাথে পড়তে বসি। একসাথে পড়া শেষ করে একসাথে খেয়ে একসাথেই শুয়ে পড়বো। আর ঘুমানোর আগে অনেকক্ষন কথা বলে ঘুমাবো”
আমিও তাঁর সব কথা শুনতাম, সে যেমন আমার কথা শুনতো আমিও। আমি অনেকটাই বদলে যাই তাঁর জন্য। দুষ্টামি,ফাজলামি বেশ কমে যায়। বন্ধু দের সাথে ঘুরাফেরা কমিয়ে দেই। মনোযোগ দেই পড়াশোনায় আর তাসমিয়াতে,,,
.
বাড়িতে আব্বা,আম্মা,বড় ভাই বেশ খুশি হয় আমাকে পাল্টে যেতে দেখে। আম্মাকে আমি খুব ভালোবাসি তাসমিয়ার কথা আম্মাকে আমি বলে দিয়েছিলাম যে আম্মা ওরে আমি পছন্দ করি। আম্মা কিছু বলে নাই শুধু বলেছিলো “পছন্দ করো ভালো কথা এমন কিছু করোনা যে বাড়িতে রিপোর্ট আসে”
ছেলে আমি,পুরুষ মানুষ আমি তাই আম্মাকে জানাতে আমার সমস্যা হয়নি কিন্তু তাসমিয়া মেয়ে তাই সে আমার কথা কারো সাথে শেয়ার করতে পারতো না। কারন ছেলের বেলায় আমাদের সমাজ এ বিষয়টা যতো স্বাভাবিক নেয় মেয়ের বেলায় ততোটাই অস্বাভাবিক নেয়।
.
দুজনের সময় বেশ ভালোই যাচ্ছিলো। আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালো বুঝতাম। আমি কখনো তাঁকে কোন বিষয় নিয়ে ফোর্স করিনি সেও না। যার কারনে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়নি। সম্পর্কের একবছর কেটে যায়। আমাদের অল্প অভিমান হতো কিন্তু সেরকম ঝগরা হতো না। হবে কি করে তাঁর মতো শান্ত মেয়ের সাথে কি ঝগরা করা যায়। আমি কখনো কোন বিষয় নিয়ে রেগে গেলে সে খুব মিষ্টি ভাবে মেসেজ দিতো বা ফোন করতো “বিজয় সরি,,, তুমি রেগে যেওনা আমার ভয় লাগে” ব্যাস আমার রাগ ঝড়ে যেতো। তাছাড়া সম্পর্কের শুরুতেই তো সে বলে দিয়েছিলো “বিজয় আমি খুব ভিতু, আমি অল্পতে ভয় পেয়ে যাই,জানো বিজয় আমার হার্ট খুব দূর্বল আম্মু একটু ধমক দিলেই আমি কেঁপে ওঠি। আর জোরে ধমক দিলে জ্ঞান হারাই তাই তো আমাকে কেউ জোরে ধমক দেয় না ”
.
তাঁর সবেতেই শুধু ভয় আর ভয় ছিলো। এস এস সি পরীক্ষার সময় তাঁর সিট পড়েছিলো এক হলে আমার ছিলো অন্য হলে। কিন্তু এক্সাম শুরুর আগেও আমি তাঁর সাথে থাকতাম। এক্সাম শুরুর পরেও আমি তাঁর সাথেই থাকতাম। তাঁর বাবা, মা এলে তাঁদের সাথে চলে যেতো আর যেদিন আসতো না সেদিন আমিই পৌঁছে দিতাম। কিন্তু হলের সময়টুকু সে আমার চোখের সামনে থাকতো না। তাঁর সাথেই কবির নামের এক ছেলের সিট পড়ে। পরীক্ষা চলাকালীন ছেলেটা তাসমিয়ার কাছে নাম্বার চায়।
সে নাম্বার দেয় নি ঠিকি কিন্তু তাঁর হাত পা তখন থেকেই কাঁপতে শুরু করেছিলো। পরীক্ষা শেষে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাঁর চোখ, মুখ লাল হয়ে ছিলো হাত কাঁপছে দেখে উত্তেজিত হয়ে বললাম-“কি হয়েছে এক্সাম খারাপ হয়েছে?? সমস্যা নাই একটা একটু হতেই পারে।

সে মাথা নাড়িয়ে না করলো। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম -“তাহলে”??

সে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো- “বিজয় তুমি আমাকে বকবানা তো”??
আমি হেসে বললাম “আরে পাগলী বকবো না তুমি বলো”
সে তখন জানালো বিষয় টা। সত্যি বলতে আমার একটু রাগ হয়েছে ছেলেটার ওপর কিন্তু আমার তাসমিয়া নাম্বার না দেওয়ায় খুশি হলাম। ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমিও বাসায় চলে আসি। কিন্তু মাথায় কেমন চিন্তা ঢুকে গেলো। এস এস সির পর তাসমিয়া অন্য কলেজ যাবে, সেখানে এমন অনেক কিছু হবে তখন যদি ও আমার না থাকে??
তাসিময়া কে হারানোর ভয় আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো আমায়। আমি মেসেজ করে জানালাম দুজন একি কলেজে ভর্তি হবো। দুজন আলাদা কলেজ পড়া সম্ভব না। সে তখন খুব খুশি হয়েছিলো তা তাঁর মেসেজ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমি খুশি হতে পারিনি আমার মনের ভিতর কেমন মেঘ জমে রইলো। কিন্তু তাঁকে বুঝতে দিলাম না।
আমি তাঁর মতো শান্ত স্বভাবের মোটেই ছিলাম না।
আমি প্রচন্ড রাগি আর ঘাড়ত্যাড়া স্বভাবের। মাথায় কোন বিষয় একবার ঢুকলে সেটা আমার সহজে বের হয় না।
সে মূহুর্তে আমার মাথায় ঢুকে গেছিলো তাসমিয়া যদি আমার থেকে দূরে সরে যায়?? তাসমিয়া যদি পাল্টে যায়?? নানারকম দুশ্চিন্তা করে করে ঘুমিয়ে পড়লাম। একবছরের রিলেশনে সেদিনই প্রথম তাসমিয়াকে না জানিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। আর ঐ দিকে পাগলীটা খেয়ে দেয়ে আমাকে সমানে মেসেজ কল করে যায়। আমি ফোন সাইলেন্ট রেখেছিলাম। যার কারনে তাঁর মেসেজ, কল কোনটাই বুঝতে পারিনি। ঘুমটা আমার বেশ অদ্ভুত ভাবেই ভাঙলো।
ফজরের আযান দিয়েছে তখন স্বপ্নে দেখছি তাসমিয়া এসে আমাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে,,, সাথে সাথে আমি লাফিয়ে ওঠি ঘুম থেকে।
ওহ বুকের ভিতর কি অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল তখন। গলা সহ বুকের ভিতর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিলো।
তারাতাড়ি ওঠে পানি খেয়ে তারাতারি ফোনটা হাতে নিলাম। আশ্চর্য জনক হলেও সত্যি তখনও আমার ফোনে তাসমিয়ার কল ভেসে এলো।
তারমানে তাসমিয়া ঘুমায়নি সারারাতই এভাবে ট্রাই করেছে। আমার হাত কাঁপতে শুরু করলো।
কাঁপা হাতেই রিসিভ করলাম। আল্লাহ,,,সাথে সাথে সেই স্বপ্নের মতো কান্না কানে ভেসে এলো। মাথাটা আমার এক চক্কর দিয়ে ওঠলো। তাঁর কান্নায় বুকের ভিতর বেশ যন্ত্রণা দিতে লাগলো। আমি নির্বাক রইলাম কোন কথা বলতে পারছিনা। সে কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে ভাঙ্গা গলায় বললো-
“বিজয় তুমি এতো খারাপ কেনো? তুমি আমার এতোগুলো মেসেজের একটা উত্তর কেনো দিলেনা। তুমি জানো আমি সারারাত কাঁদতে কাঁদতে ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলেছি। নাক দিয়ে পানি পড়ছে আমার গলা ভেঙে গেছে,আমার বুকের ভিতর কতো কষ্ট হচ্ছে জানো তুমি। আমি যদি হার্টফেল করে মরে যেতাম তখন কি হতো বিজয়, জানো আমি শ্বাস নিতে পারছিনা দম বন্ধ লাগছে ”
.
সে একটু থেমে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। কি বলবো আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কি থেকে কি হয়ে গেলো। যে দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম তা আমার মূহুর্তেই কেটে গেলো। আমি যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলাম।আমি একদম শিওর হয়ে গেলাম এই মানুষ টা আমার এই মানুষ টা আমাকে ছাড়া কখনো যেতে পারবেনা। মানুষ টা একদমই আমার হয়ে গেছে। সব চিন্তা দূরে ঠেলে কাঁপা গলায় বললাম-” সরি তাসমিয়া আমি ফোন সাইলেন্ট রেখে ঘুমিয়ে গেছিলাম।সরি জান তোমাকে আমি খুব কষ্ট দিয়েছি। আই লাভ ইউ জান ”

তাসমিয়া ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলতে তুলতে আমাকে আই লাভ ইউ টু বললো। আমি ফোনের এপাশ থেকে একটা কিস করলাম। তাসমিয়াও শান্ত হলো। শান্ত গলায় জিগ্যাস করলো-
“রাতে খেয়েছো”??
” হুম তুমি”??
সে অভিমানী সুরে বললো-“তা না জেনেইতো ঘুমিয়ে গেছিলে না জানলেও চলবে। বলবো না আমি”
আমি লজ্জিত হয়ে বললাম-“সরি সোনা মাফ চাইছি। ক্ষমা করা মহৎ গুন এবার বলো”
সে একটু করে হুম বললো। আমিও তৃপ্তিময় হাসি দিলাম।
বেশ কয়েকমিনিট কথার পর তাসমিয়া বললো-” বিজয় সারারাত ঘুমাইনি নামাজ পড়ে একটু ঘুমাবো তাহলে রাখি আটটায় মেসেজ করো”
আমি তাঁকে বেশ আদরমাখা কথায় বিদায় জানালাম।
.
দেখতে দেখতে এস এস সি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো।
পরীক্ষার দুদিন বাদে আব্বা বাইক কিনে দিলো। সে বাইক নিয়ে তাসমিয়ার বাড়ির সামনে ঘুরে আসলাম
দেখেও আসলাম তাসমিয়াকে। পরেরদিন আমি আম্মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই সে সময় তাসমিয়া মেসেজ করে “বিজয় আমি আম্মুর সাথে নানু বাড়ি যাচ্ছি। তুমি যেনো ভুলেও ফোন করো না। নানু বাড়ি অনেক মানুষ তুমি শুধু আমাকে মেসেজই করবা”
মেসেজটা আমি বাসায় এসে দেখি তখনই একটা মেসেজ দেই। কিন্তু রিপালই করে না দিন পেরিয়ে রাত নেমে আসে কোন রিপলাই দেয় না। এদিকে টেনশনে আমি পাগল প্রায়। মনটা ভীষণ ছটফট করছিলো। বার বার মনকে বোঝাচ্ছিলাম কিন্তু মন মানছিলোনা। রাত আটটা পেরোতেই মেজাজ চরম বিগরে গেলো। আম্মা ভাত খেতে ডাকলো গেলাম কিন্তু গলা দিয়ে খাবার যেনো নামে না। কেমন যেনো কান্না পাচ্ছিলো খুব সে সময়ই মহারানী আমাকে সোজা ফোন করলেন। ফোন বামহাতে নিয়ে তাঁর নাম্বার দেখেই চট করে রিসিভ করে প্রচুর ধমকালাম। যেমন – সারাদিন কি করলি, সারাদিনে তোর একটা মেসেজ করার সময় হয় নাই??নানী বাড়ি যাইয়া আনন্দ করতাছোস আমারে চিন্তায় রাইখা। এখন আসছোস আমাকে ফোন দিতে ফোন রাখ একদম ফোন দিবিনা আমাকে, সারাদিন যা করলি তাই কর।
.
তাঁকে কিছু বলবার সুযোগই দিলাম না। ফোন কেটে খেতে শুরু করলাম। এদিকে আমার কান্ড দেখে আম্মা যে অবাক হয়ে চেয়ে আছে সেদিকে আমার খেয়াল নেই। খেয়ে দেয়ে নিজের রুমে এসে ফোন নিয়ে দেখি মেসেজ “বিজয় আমাকে তুমি ধমক দিলা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমার খুব কান্না পাচ্ছে, কিন্তু সবার সামনে তো কাঁদতে পারছিনা। তুমি এমন,,, আমি একটু পর শুয়ে পড়বো তখন খুব কাঁদবো। আমি কি ইচ্ছে করে ফোন মেসেজ দেইনি নাকি। আমিতো সুযোগ পাইনি তাই দেইনি এখন একটু সুযোগ পেয়ে ফোন দিছি আর তুমি আমাকে এতোগুলা ধমক দিলা”
.
তাঁর মেসেজ দেখে আরো রেগে গেলাম। ফোন বন্ধ করে চোখ বুজে শুয়ে রইলাম।মনে আমার কেমন রাগ, জেদ এসে ভর করেছিলো।অভিমানের পাল্লা বেশ ভারী হয়ে গেছিলো। যতো যাই হোক আমিও তো তখন অবুঝই ছিলাম।

কিন্তু সব রাগ, জেদ,অভিমান দু’ঘন্টা পরই শেষ হয়ে গেলো।যখন বিদ্যুৎ চমকানি দিয়ে ঝড়,বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। লাফিয়ে ওঠে বসলাম। “তাসমিয়া ভয় পাচ্ছে” বির বির করতে করতে ফোন অন করলাম।

কারন আমার তাসমিয়া খুব ভিতু সে বিদ্যুৎ চমকানিতও খুব ভয় পায়। একদিন স্কুলে ছিলাম আমরা দুপুর টাইমে এমন ঝড়,বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। ভয়ে ক্লাসে তাঁর সে কি কান্না সকলের সামনে তাঁর কাছে যেতে পারছিলাম না। সে ভয়ে যেমন কাঁপছিলো তেমন কাঁদছিলো।
বাংলা মেডাম এসে ওকে জরিয়ে ধরেছিলো তখন ও একটু শান্ত হয়েছিলো। তারপর থেকে রাতে ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে আমি যতোই গভীর ঘুমে থাকিনা কেনো ঘুম ছেড়ে যায়। মন মস্তিষ্ক শুধু বলে বিজয় তাসমিয়া ভয় পাচ্ছে ওকে ফোন দে ওকে শান্ত কর ওকে বল কিছু হবে না ভয় পেওনা আমি আছিতো,,,দিন হলে এতো টেনশন হয় না কারন ওর মা থাকে কাছে।

তখনও আমার সব রাগ জেদ সরে গিয়ে মন,মস্তিষ্ক এসবই বলতে লাগলো। ফোন অন করতেই তাসমিয়ার অনেক মেসেজ আসতে লাগলো। সেগুলো না দেখে দ্রুত ওর নাম্বারে ডায়াল করলাম। একবার রিং হলো কিন্তু রিসিভ হলো না। আবার দিলাম এভাবে প্রায় দশ,বারোবারেও রিসিভ হলো না। আমি তখন পাগলের মতো ছটফট করতে লাগলাম। কতোটা যে ভয় লাগছিলো আমার বার বার বুক কেপে ওঠছিলো কারন আমার তাসমিয়া যে খুবই দূর্বল প্রকৃতির মানুষ। নিজের ওপর রাগ হতে লাগলো “কেনো আমি নিজের রাগকে একটু কন্ট্রলে আনলাম না” তারাতারি মেসেজ অপশনে গেলাম,

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here