স্কুল জীবনের প্রেম,পর্ব_৩

স্কুল জীবনের প্রেম,পর্ব_৩
লেখা_জান্নাতুল নাঈমা

দেখি সে অনেক মেসেজ করে রাখছে। সেখানে সরি শব্দ টা যে কতোবার ছিলো হিসেবের বাইরে। আর শেষ যে মেসেজগুলো ছিলো সেগুলো হলো-বিজয় প্লিজ রেগে থেকো না। বাইরে বাতাস বইছে সেই বাতাস এতোটাই তীব্র যে রুমে অবস্থান করেও ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে শরীরে। তারপরের মেসেজটা হলো -বিজয় আমার খুব ভয় করছে দেখো বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির শব্দে কান ফেটে যাচ্ছে, বুকের ভিতর ধকধক করছে।ও বিজয় একটা মেসেজ করো না, তুমি একটা মেসেজ করলেই আমার সব ভয় কেটে যাবে। তাঁর দুমিনিট বাদের মেসেজ-বিজয় আমার খুব কান্না পাচ্ছে একদিকে তোমার রাগ কমছে না অন্যদিকে বাইরের ঝড় আমার বুকের ভিতর কাঁপুনি তুলে দিচ্ছে। কেনো এমন করো আমার নিঃশ্বাস যে আটকে যাচ্ছে। বুকের একপাশে কেমন ব্যাথা হচ্ছে একটা মেসেজ দাও না। ফোনটা একটা বার অন করো না। কেনো এভাবে কষ্ট দিচ্ছো আমায় তোমার তাসমিয়া যে খুব দূর্বল প্রকৃতির মানুষ। আমি খুব কাঁদছি এই বুঝি আম্মু আমার কান্না টের পেয়ে যায়।
.
আর কোন মেসেজ আসেনি। সারারাত পাগলের মতো ছটফট করেছি, ফোনের পর ফোন দিয়েছি। মেসেজে বহুবার সরি বলেছি তবুও তাঁকে আমি পাইনি,অবশেষে না পেরে কান্না করেছি ফজরের আজানের সময় অজু করে নামাজ আদায় করে মোনাজাতে হাউমাউ করে কান্না করেছি। বয়স কম থাকায় আবেগটা ছিলো খুব বেশী তাই আবেগটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। খুব কেঁদেছি। চোখ,মুখ ফুলিয়ে একাকার অবস্থা। চোখের সামনে ফোন ধরে বসেই আছি তাঁর একটা ফোন বা মেসেজ পাওয়ার জন্য। আর সে ফোন করলো সকাল আটটায়,,,
ফোব রিসিভ করে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলাম। তাঁর ফুঁপানির আওয়াজও শুনতে পেলাম। দুমিনিট দুজনেই আবেগে ভেসে গিয়েছিলাম। তাঁর খানিক সময় পর আমিই ভাঙা আওয়াজে বললাম, এমনটা কেনো করলে তাসমিয়া??এতোটা কষ্ট কেউ দেয়??
সে অভিমানী কন্ঠে বললো- সরি বিজয় কাঁদতে কাঁদতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঝড় ছিলো ভয়ে আম্মুকে জরিয়ে ঘুমিয়েছিলাম ফোন সাইলেন্ট ছিলো। তাঁর কথা শুনে আমি আবারও অভিমান করলাম কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে আবার আদর করে কথা বলললাম। এতে তাঁর মন ও হালকা হলো আর আমারো। সেদিন আমি বুঝে গেছিলাম তাসমিয়া আমার কাছে ঠিক কি?? ঐ বয়সে তাসমিয়ার শূন্যতায় মোনাজাতে হাউমাউ করে কান্নাটা নিছক আবেগ হতে পারেনা। তাঁকে আমি প্রচন্ড আবেগি হয়েই ভালোবাসতাম আজো বাসি। শুধু পার্থক্য এটাই ঐ বয়সে বিবেক কে বিসর্জন দিয়ে তাঁকে আমি ভালোবেসেছি।
.
সময় চলছিলো সময়ের গতিতে। আমি আর তাসমিয়াও সময়ের সাথে বেড়ে ওঠছিলাম।
দুজন একি কলেজে ভর্তি হই,একসাথে কলেজ যাওয়া আসা করি। তাঁর আমি আমার সে দুজনই এর বাইরে আর কিছু বুঝতাম না। আমার অনেক বন্ধু হলেও তাঁর তেমন বান্ধবী ছিলো না। হাতে গোনা কয়েকজন। প্রয়োজন, অপ্রোয়জন সবটা আমিই দেখতাম। চ্যায়ারম্যানের ছেলে হওয়াতে বেশ জোর নিয়ে চলা, ফেরা করতে পারতাম সব জায়গায়।
তাসমিয়া যথেষ্ট সুন্দরী একটা মেয়ে সদ্য কলেজে পা দিয়েছে ষোল বছরের কিশোরী। সমবয়সী হলেও তাঁর থেকে আমি সাতমাসের বড় ছিলাম। যতোটা না বয়সে বড় তার থেকে হাজারগুন বেশী হাভভাবে বড় লাগতো আমাকে। আমাদের দুজনকে একসাথে দেখলে যে কেউ বলবে আমি কলেজ পড়ুয়া আর সে স্কুল পড়ুয়া এই সেভেন, এইট। আমাদের রিলেশন টা ধীরে ধীরে বেশ স্ট্রং হতে থাকে। কলেজে প্রথম দিকে অনেকেই তাসমিয়াকে প্রপোজ করেছে সবগুলোকে আমি এবং আমার বন্ধু রা বেশ বুঝ দিয়েছি।আর যারা বোঝ নেয় নি তাদের ইচ্ছে রকম পিটিয়েছি।
তাসমিয়া এতোটাই সুন্দরী ছিলো, দেখতে এতোটাই মিষ্টি ছিলো, তার আচরন এতোটাই মুগ্ধকর ছিলো যে তাঁর রিলেশনশিপ থাকা সত্তেও অনেকে ট্রাই করতো। আর তখন আমি হয়ে যেতাম একদম বাঘ।
এমনও সময় যেতো একদিনে দুজন করে পিটাতাম।
কয়েকমাস পর থেকে এসব ঝামেলা দূর হয় এসব বিষয় তাসমিয়া একটুআধটু জানলেও পুরোটা জানতো না। আমি জানতে দিতাম না। আমি যখন দেখলাম তাসমিয়ার প্রতি অনেক ছেলেই আকর্ষিত হচ্ছে তখন থেকে আমি তাসমিয়াকে একটু বেশীই কেয়ার নিতাম। তাঁর প্রতি আরো বেশী আকর্ষিত হয়ে গেলাম। তাঁর যে টুকু আমি আগে খেয়াল করতাম না সেটুকুও খেয়াল করা শুরু করে দিলাম। আমার এতো কেয়ার পেয়ে তাসমিয়াও বেশ আনন্দিত হয়। তাঁর চোখ,মুখের উজ্জ্বলতা দেখেই তাঁর খুশি গুলো উপলব্ধি করতে পারতাম।
.
আগের থেকে অনেকটা বেশী ভালোবাসা, কেয়ার দিতাম তাঁকে। আমার ভালোবাসার মাএা এতো বেশীই হয়ে গেছিলো যে বাথরুম অবদি আমার অনুমতি নিয়ে যেতো। কারন না বলে কিছু করতে গেলেই ঐ সময়টুকু আমি অস্থির হয়ে পড়তাম। রেগে যেতাম বকাবকি শুরু করে দিতাম। তাসমিয়া এসবে বিরক্ত হচ্ছিল নাকি খুশি হচ্ছিল এটা আমি অনুভব করতে পারিনি। তবে আজ পারি আসলে আমার সেই মানুষ টা আমার সেসবে কখনোই বিরক্ত হয়নি।
আমি তাঁকে যা বলতাম সব টা সে মেনে নিতো। কখনোই বলেনি এটা করবো না ওটা করবো না। বরং সবেতেই সম্মতি দিয়েছে। একটা সময় আমাদের দুজনের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে চলে গেলো যে দুজন দুজনের খুব আপন হয়ে গেলাম। কলেজে কোন ছেলে তাঁর জাষ্ট নাম জানতে এলেও আমি সামনে গিয়ে হাজির হতাম। নাম সে বলার আগেই আমি বলো দিতাম। এতে তাসমিয়া খুশি হতো, মজা পেতো খুব। কেউ প্রপোজ করলে ও বলতো ও বিবাহিত। আমার সামনে কেউ ওকে কিছু বলতে এলে বলতাম সে আমার বউ। কেউ হাসতো কেউ চুপ করে চলে যেতো এতে আমাদের কিছু জায় আসতো না। আমরা সব সময় দুজন দুজনাতে বিভোর থাকতাম।
কলেজের প্রত্যেকটা লোক, টিচাররা সহ আমাদের রিলেশনের বিষয়ে জানতো। অনেকে তাঁকে চ্যায়ারম্যানের ছেলের বউ হিসেবেই সম্মান দিতো।
সে খুব লজ্জা পেতো তাঁর লজ্জামাখা লাল বর্ন মুখটা আমি অপলকভাবে চেয়ে দেখতাম। কখনো ক্লাস রুমে সে আর আমি একা থাকলে সে মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতো, তাঁর হাত পা কাঁপতে থাকতো আর আমি মিটিমিটি হাসতাম টেবিলের ওপর বসে। ওটা সেটা বলতাম সে শুধু হুম হুম করতো।
.
চলে যায় আরো একটি বছর। কলেজের এক বন্ধু তাঁর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। সেকেন্ড ইয়ারে পড়া অবস্থায় এমন কান্ড ঘটায়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। তাই ছেলে মেয়ে পালিয়ে গেছে। খুব অবাক হই আর ভাবি আমার আর তাসমিয়ার সম্পর্ক ওদের থেকে হাজারগুন বেশী গভীর অথচ ওরা আমাদের আগেই এমন কাজ করে ফেললো??
মাথায় ভূত চেপে যায় আমার। মনের ভীতর ইচ্ছে জাগে তাসমিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। স্বপ্ন দেখতে শুরু করি তাঁকে আমার বউ রূপে। যে বয়সে পড়াশোনা করা উচিত, ভবিষ্যত নিয়ে ভাবা উচিত সে বয়সে আমার মাথায় বিয়ের চিন্তা ঢুকে গেলো।
একবারো ভাবলাম না আমার বয়স কতো??একজন এ বয়সে বিয়ে করেছে বলে সবার নিয়তি এক হবে তা তো নয়। আঠারো বছর বয়স দুঃসাহসিকতার বয়স।
যে সাহসটা আমার সে সময় আপনাআপনি চলে এসেছিলো। বয়সটা এমন ছিলো যে অমন ভাবনা ভাবতে একটুও দ্বীধা হতো না। ভুল কে সঠিক সঠিক কেই ভুল মনে হতো।
ছেলেদের থেকে মেয়েদের মাঝে ম্যাচিওরিটি টা আগে এসে যায়। তাসমিয়া যতোই নরম প্রকৃতির মেয়ে হোক না কেনো সে ছিলো ভারী বুদ্ধি সম্পন্ন একজন মেয়ে। যার জ্ঞান আমাকে মুগ্ধ করে তুলে এখন। যার জ্ঞানীবানীগুলো আজো আমি খুব মিস করি।
.
রাত এগারোটার দিকে তাসমিয়ার আম্মু ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তাসমিয়া আমাকে ফোন দেয়। স্বভাবতই সে খুব ধীরে কথা বলে তাঁর রুমে ফুলস্পিডে ফ্যান চলায় বাতাসের শব্দে পাশের রুম অবদি তাঁর কন্ঠ পৌঁছাতে পারেনা। যার ফলে গতো কয়েকবছর সে আর আমি এগারোটার পর এক,দুঘন্টা ফোনে কথা বলে তারপর ঘুমাই।
রোজকার নিয়মেই সেদিনও ফোন দেয়। কারন নিয়মের ব্যাতিক্রম ঘটলেই তাঁর বিজয় প্রচন্ড ক্ষেপে যায়। এতোটাই যে তাঁকে প্রচুর ধমকিয়ে কান্না করতে বাঁধ্য করায়। তাই সে অনিয়ম ভুলেও করে না।
আমি সেদিন তাঁকে জানাই তাঁকে আমি বিয়ে করবো।কথাটা শুনে তাঁর নিঃশ্বাসের বেগ বেড়ে যায়।
প্রতিটা শব্দ আমি শুনতে পাই। মুখে হাসি টেনে বলি, তাসমিয়া খুব ভালোবাসি তোমায় পারছিনা এভাবে দূরে থাকতে চলো না আমরা পালিয়ে যাই।
সে কিছুক্ষণ চুপ থাকে তারপর বলে,বিজয় আমিও পারছিনা আমারও খুব ইচ্ছে করে সবসময় তোমার কাছাকাছি থাকতে।আমার খুব ইচ্ছে করে তোমার সাথে একসাথে একি বিছানায় ঘুমাতে। তোমার এতো ভালোবাসা, আদর, কেয়ার খুব কাছ থেকে পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এভাবে বিয়ে করাটা তো ঠিক না।
আমি বললাম, কেনো ঠিক না ভালোবাসি আমরা দুজন দুজনকে। আমরা যদি একে অপরকে বিয়ে না করি এতেই আমাদের পাপ হবে। বিয়ে না করলে ঠকানো হবে। তাই যতো তারাতারি আমাদের বিয়ে করা উচিত।
তাসমিয়া বললো,হুম বিয়ে করা উচিত কিন্তু এখনি না। আমি আর তুমি পড়াশোনা করছি দুজনেই পড়াশোনা শেষ করে তারপর বিয়ে করবো। সে অবদি তুমি একটা জবও পেয়ে যাবে। এতে আমাদের পরিবার থেকেও বাঁধা থাকবে না।

তাসমিয়ার কথাটা আমার পছন্দ হলো না। তাই বললাম,পরিবার থেকে বাঁধা আসবে বলেই পালাতে চাইছি। আর তুমি যেটা বললে এটা হবে না কারন এর আগেই তোমার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে যেতে পারে। তাই আমার কথা তুমি মেনে নিতে বাঁধ্য আর কোন কথা শুনতে চাইনা। আমার জাষ্ট তোমাকে চাই।

তাসমিয়া কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো,বিজয় আমি জানি তুমি ভয় পাচ্ছো।ভয় যে আমি পাই না তা কিন্তু না। তাই বলে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনোই ঠিক হবে না।

ওর কথা শুনে প্রচন্ড রেগে গেলাম। আর বললাম,
তুই আমার কথা শুনবি মানে শুনবি। আর একটা কথাও বলবি না বিয়ে করবো তোকে আমি। কবে,কিভাবে আমার কাছে আসবি সেই খবড় জানা।

তাসমিয়া শান্ত গলায় বললো,এমন পাগলামো কেনো করছো? রাগ করোনা প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো।
আমি চিৎকার করে বললাম,কি বুঝবো এই কি বুঝাবি তুই আমাকে। তোর ভালোবাসা বোঝা শেষ। বিয়ে করতে বলছি বলে যে ভালোবাসা পালিয়ে যায় ঐ ভালোবাসা আমার দরকার নেই বলেই ফোন কেটে দিলাম। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে আবার কল দিয়ে বললাম, তুই আমার সাথে এতোদিন ভালোবাসার অভিনয় করেছিস তোর কোনদিন ভালো হবে না। বেঈমান,স্বার্থপর কোন দিন ফোন দিবি না আমাকে বলেই তাঁকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার ফোন কেটে দিলাম। কয়েক সেকেন্ড পর আবার ফোন দিলাম চিৎকার করে বললাম,এই ছিলো তোর মনে ছিঃ তুই এতো জঘন্য বিয়ের কথা বলায় আমি রাগ করে ফোন কেটে দিলাম আর তুই একবারো ফোন দিলি না বাহ রে বাহ।

এবার তাসমিয়াও রেগে গেলো বেশ জোর গলায় বললো, একটু থামবে প্লিজ। আমাকে তুমি না কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছো আর না ফোন করার সুযোগ দিচ্ছো। নিজেই চিল্লাচ্ছো আর নিজেই ফোন কেটে আবার সাথে সাথে ফোন দিচ্ছো। আরে রেগে গেছো রাগ ভাঙানোর সুযোগ টা তো দেবে। এমন পাগলামো কেনো করছো বিজয় প্লিজ এমন করো না। ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুনো।

আমি আরো চটে গেলাম চিৎকার করে বললাম,ওও এখন তো আমার কথা, আমার কাজ পাগলামোই মনে হবে। উচিত কথা বললেই এখন আমি পাগল।
আমার চিৎকারে তাসমিয়া রাগ করে ফোন কেটে দিলো।এতে আমার রাগ হাজারগুন বেড়ে গেলো।
আমি কল দিলাম রিসিভ হতেই চিৎকার করে বললাম,তোর সাহস তো কম না তুই আমার ফোন কেটে দেস সামনে পাইলে আছাড় দিবো আয় আমার সামনে।
তাসমিয়া কেঁদে দিলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো,বিজয় তুমি এমন করছো কেনো?? আমার খুব ভয় করছে হঠাৎ তোমার কি হলো বলোতো?? তুমি আমার বিজয় তো??
.
আমি থমকে গেলাম ওর সেই মিষ্টি, কান্নামিশ্রিত ভয়েস আমাকে বাধ্য করলো রাগ কমাতে। চোখ বন্ধ করে বললাম,তাসমিয়া আমাদের সাথে যে রবিন পড়তো ও ওর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে পালিয়ে গেছে।
কারন ওর গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছিলো।
তাই তাঁকে হারানোর আগেই নিজের করে নিয়েছে।
ওরা যদি পারে আমরা কেনো পারবো না বলো।
আমি তোমাকে হারাতে চাই না এতোটা ভালোবাসা দেওয়ার পর, এতোটা ভালোবাসা পাওয়ার পর তোমাকে হারানোর শক্তি আমার নেই। তাই তুমি না করাতে আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে প্লিজ সোনা একটু বুঝো।

তাসমিয়া বেশ শান্ত গলায় বললো,প্লিজ বিজয় তুমি বোঝার চেষ্টা করো। যদি এমন পরিস্থিতি আসে যে আমার পরিবার আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছে তাহলে আমি তাদের বলবো যে আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। অনেক বছরের রিলেশন তোমায় ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করা সম্ভব না।
আর আমার বিশ্বাস কেউ আমাকে বিয়ে নিয়ে জোর করবে না। কারন বিয়েটা আর যাই হোক জোর করে হয় না।
আমি বললাম, যদি জোর করে বাঁধ্য করে বিয়ের পীড়িতে বসায় তাহলে??
তাসমিয়া বললো,তাহলে সেখানেই বলবো আমি বিজয় কে ভালোবাসি। আমার মুখ থেকে অন্যকারো জন্য কবুল ওয়ার্ড টা বের হবে না।
আমি রেগে বললাম,যতো সহজে বললি ততো সহজ নয়।
তাসমিয়াও রেগে বললো,তুমি কাপুরষ কেনো বিজয়। কেনো পালানোটাই একমাএ অপশন করছো। এছাড়াও অনেক অপশন আছে। এসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে বের করে মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
নিজেকে সেভাবে তৈরী করো যেভাবে তৈরী করলে আমাকে পাবে। এছাড়া তুমি ভালো ফ্যামিলির ছেলে তোমাকে না মেনে নেওয়ার মতো কোন কারন নেই। আমরা সেইম এইজ আর এটা বর্তমান সময় তেমন কোন আহামরী সমস্যা না। শুধু তুমি একটু চেষ্টা করলেই সব সম্ভব। আর আমার ফ্যামিলি এখনি আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওঠে পড়ে লাগবে না। নো টেনশন আর আমিও তোমায় ছেড়ে যাবোনা। তুমি ছাড়া দ্বিতীয় পুরুষ আমার জীবনে আসবে না।
বিশ্বাস রাখো ভরসা রাখো প্লিজ। আল্লাহর রহমতে আমরা এক হবোই নামাজ পড়ে দূয়া করো যাতে আমরা একে অপরকে পাই।
.
ওর কথা গুলো আমার বিষের মতো লাগলো।
আমার মনে হলো ও আমাকে হয়তো মন থেকে ভালোবাসে না তাই বিয়েতে আপত্তি করছে। কই রবিনের গার্লফ্রেন্ড তো আপত্তি করেনি তাহলে তাসমিয়া কেনো করছে। ওর মনে অন্য কিছু নেই তো??ধোঁকা দিবে না তো। মনের কথা চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,তোমার আসল সমস্যা টা কি তাসমিয়া বলবে?? আমরা পালিয়ে বিয়ে করলে পরিবার ঠিক এক সময় মেনে নেবে। আচ্ছা পালিয়ে না চলো গোপনে বিয়ে করি।কেউ জানবে না শুধু তুমি আর আমি। এবার তাসমিয়া বললো,
বিজয় আমি কিছু কথা বলবো মনোযোগ দিয়ে শুনবে??আমি যা বুঝি আমাদের আশে,পাশের পরিস্থিতি থেকে যতোটুকু শিক্ষা নিয়েছি, যতোটুকু বুঝেছি, এ অবদি পড়াশোনা করে যতোটা শিক্ষা অর্জন করেছি। তাঁর ভিত্তিতেই কিছু কথা বলতে চাই।

আমি শান্ত হয়ে বললাম আচ্ছা বলো।

একজন মা দশমাস তাঁর সন্তান কে গর্ভে ধারন করে।
কতো ব্যাথা,বেদনা সহ্য করে নিজের শারীরিক অবস্থার অবক্ষয় ঘটিয়ে এই পৃথিবীর আলো দেখায়। জন্মের পর প্রতিটি সন্তান কে তাঁর বাবা,মা সবচেয়ে বেশী মায়া,মমতা,স্নেহ,ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তোলে।
আকাশ চেনায়, মাটি চেনায়,পথ চেনায়,ঘাট চেনায়।
দুনিয়াতে সঠিক ভাবে বাঁচতে শেখায়। মা না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ায়, বাবা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সন্তান এর দায়িত্ব বহন করে। পড়াশোনা করায় সন্তানের প্রতি যেমন তাঁদের ভালোবাসা থাকে সীমাহীন তেমনি আশা, ভরসাও থাকে সীমাহীন।
তাঁদের এতো মায়া,মমতা,ভালোবাসা কে সামান্যতম সম্মান না করে তাঁদের এতো ভালোবাসা, দুঃখ, কষ্ট উপলব্ধি না করে সবকিছু উপেক্ষা করে সব মায়া ত্যাগ করে যেসব ছেলেমেয়েরা কয়েকবছরের ভালোবাসার টানে ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে চলে যায় সেসব ছেলেমেয়েরা কি আদেও মানুষের তালিকায় পড়ে?আদেও তাঁদের মাঝে ভালোবাসা,মনুষ্যত্ব কি বিরাজ করে??
যে বাবা -মায়ের সাথে তাঁদের এতো বছরের সম্পর্ক।
যে বাবা-মায়ের ভালোবাসায় তাঁরা জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠেছে। যে সম্পর্ক দুনিয়াতে আসার পর তৈরী হয়নি দুনিয়াতে আসার বহু আগেই তৈরী হয়েছে। যে বাবা-মা তাঁদের কথা বলতে শিখিয়েছে, হাঁটতে শিখিয়েছে, পড়তে শিখিয়েছে।
ভালোবাসতে শিখিয়েছে তাঁদের ছেড়ে স্বার্থপরের মতো দু,তিন বছরের সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়ে অন্যকারো হাত ধরে যে মানুষ বেরিয়ে যেতে পারে। সে মানুষ কি সত্যিকারের অর্থে ভালোবাসার গুরুত্ব,ভালোবাসার মর্ম বোঝে?? যে এতো বছরের ভালোবাসা, মায়া, ত্যাগ করতে পারে কি গ্যারান্টি আছে যে এই সামান্য কয়েকবছরের সম্পর্ক কোনদিন ত্যাগ করবে না??
যার কাছে নিজের বাবা-মায়ের ভালোবাসা মূল্যহীন থাকে। যার কাছে নিজের বাবা-মায়ের সম্মান ঠুনকো থাকে। সে কোনদিন অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না। অন্যকারো সম্মান রক্ষা করতে পারে না।
হয়তো ক্ষনিকের জন্য একটা সম্পর্ক তৈরী করে ফেলে কিন্তু সে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এর কারন হলো- ভালোবাসার অভাব থাকে,বোঝা,পড়ার অভাব থাকে। নিজের পরিবারকে যে বুজতে পারে না সে অন্যকাউকে কি করে বুঝবে৷ জন্মলগ্ন থেকে যেখানে বসবাস করছে যাদের ভালোবাসা পাচ্ছে তাঁদের প্রতি যার বিন্দুমাএ দূর্বলতা নেই তাঁর অন্যকারো প্রতি কিভাবে দূর্বলতা থাকবে৷ যদি থেকেও থাকে তাহলে সেটা স্থায়ী নয় ক্ষনস্থায়ী।

চলবে….
ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here