স্কুল জীবনের প্রেম,পর্ব_৫

স্কুল জীবনের প্রেম,পর্ব_৫
লেখা :জান্নাতুল নাঈমা

বেশ কিছু দিন যাবৎ আমার মধ্যে অদ্ভুত সব আচরন লক্ষ করা যায়৷ তাসমিয়ার প্রতি আমার ভালোবাসা বাড়তে বাড়তে তীব্র মাএায় বেড়ে গিয়েছিলো।
ওর প্রতি ধীরে ধীরে আমি কর্তৃত্ব ফলাতে শুরু করি।
বেশ কবছরের রিলেশন থাকায় আমাদের রিলেশনশিপ টা বেশ জোরালো হয়ে যায়। বলা যেতে পারে বিয়ে বিহীন সংসারের মতো৷ যে সংসারের রাজা ছিলাম আমি আর রানী ছিলো তাসমিয়া।
বিয়েটা শরীয়ত মোতাবেক হয়নি তবুও মন থেকে একে অপরকে স্বামী-স্ত্রীর মতোই মানতাম। তাসমিয়া আমার প্রতি প্রচন্ড পরিমানে দূর্বল ছিলো। ওর দূর্বলতাগুলো আমার মনে এবং মাথায় গেঁথে গিয়েছিলো।নিজের মধ্যে একটা কনফিডেন্স কাজ করতো সব সময়। যতো যাই হয়ে যাক না কেনো তাসমিয়া আমার থেকে দূরে সরে যাবে না। তাসমিয়া আমার ভালোবাসা আর আমি ওর৷ আমরা একে অপরের। মায়ের পর ওকে আমি সব থেকে বেশী আপন ভাবি। রাগ হলে রাগ খাটাতে পারি। যে রাগ আমি আমার মায়ের সাথে খাটাতে না পারি সেটাও আমি ওর সাথে খাটাই৷ ও কষ্ট পেতো কান্না করতো আবার ঠিক হয়েও যেতো। কারন ও জানতো ওর বিজয়ের রাগ পড়ে গেলে ঠিক ওর কাছে সরি বলবে। কথা বলার জন্য ছটফট করবে।

ভালোবাসতো যে খুব কোনভাবেই আমাকে একটু ইগনোরও করতে পারতো না। যা আমি করতে পারলেও ও করতো না কখনোই। এদিক থেকে বলতে গেলে ভালোবাসার পরিমাণ আমার থেকে ওর বেশীই ছিলো। প্রচন্ড সহনশীল একটা মেয়ে ছিলো।
আমাদের পাঁচ বছরের সম্পর্কে আমার মতো মানুষ কে যেভাবে সহ্য করেছে যেভাবে মান্য করেছে। বর্তমান সময়ের কোন মেয়েই এভাবে কোন রিলেশনশীপে থাকতো চাইতো না৷ রিলেশনশীপ কেনো বিয়ের সম্পর্কেও জরিয়ে থাকতে চাইতো না৷ অথচ পাগলীটা আমাকে পাঁচ টা বছর সহ্য করেছে।
.
আমার রাগের ধরন গুলো ছিলো খুবই বাজে।
বন্ধু দের সাথে বা পরিবারের কারো সাথে রাগারাগি হয়েছে??তাসমিয়া কে ফোন করতাম৷ এটা সেটা জিগ্যেস করতাম। সামান্য ভুল পেলেই বকা দিতাম, ধমকানো শুরু করতাম। এক জনের রাগ আরেকজনের ওপর খাটানো যাকে বলে। ঐ মানুষটার ওপরই এমন করতে পারতাম। দুনিয়াতে আর কারো ওপর এমন রাগ, ত্যাজ দেখাতে পারতামনা আজো পারিনি ভবিষ্যতেও পারবো না।
নিজের মা, বাবার সাথে অমন আচরন করলে বাবা,মা অবশ্যই শাসন করতো। বন্ধু দের সাথে করতে গেলে বিরক্ত হয়ে আমার সঙ্গ ত্যাগ করে দিতো। অথচ তাসমিয়া সবটা সহ্য করতো। সবটা মেনে নিতো আর আমাকে মানাতে চেষ্টা করতো।
.
আমি আমার সব ইচ্ছে ওর ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলাম। কোনদিন কোন অভিযোগ করেনি তাসমিয়া। ওর প্রতিদিনের সকল কাজ আমার রুটিন মাফিক হতো। এর নড়চড় হলেই আমি রাগারাগি শুরু করতাম। আর ও হাজার বার সরি বলে আমাকে মানাতো। কাঠের পুতুলের মতো করেই যেনো চালনা করতাম ওকে। ঠিক সময় খাওয়া,ঠিক সময় গোসল করা, ঠিক সময় আমার সাথে নিয়ম করে কথা বলাটা খুবই জরুরি ছিলো আমার জন্য। কারন আমি যেমন ওর সুস্থতা চাইতাম তেমনি চাইতাম ও আমাকে মেনে চলুক আমাকে গুরুত্ব দিক।
গুরুত্ব ও ঠিকই দিতো মেনেও চলতো মন থেকে শুধু আমিই বেশী বেশী করে ফেলতাম। কখনো যদি কোন সমস্যার কারনে আমার নিয়মের বেঠিক হতো তাহলে শুরু করতাম ঝগরা৷ একবারো বোঝার চেষ্টা করতাম না ওর একটা পরিবার আছে। বাবা,মা ভাই বোন আছে। পরিবারে টুকটাক কাজ থাকতে পারে আমার নিয়ম ভঙ্গ হতেই পারে এতে এতো বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই।
.
সেকেন্ড ইয়ারে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাসমিয়া ফোন করে বললো,”বিজয় এবার কিন্তু সব পাগলামি বাদ দিতে হবে। আমার পিছন লাগা বন্ধ করে এবার একটা কাজে ঢুকে পড়ো ছোটখাটো জব নাও। এমন জব যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারো। এবার ছোট মানুষী বাদ দিতে হবে বুঝেছো।
এবার আমাদের জীবন নিয়ে সিরিয়াস ভাবে ভাবার সময় এসে গেছে। প্লিজ তুমি একটা জব নাও।
আর আমার সাথে ঝগরাটা কমিয়ে দিয়ে আবল তাবোল ভাবনা মাথায় না এনে সিরিয়াস হও।

আমি বললাম,” কেনো জবের জন্য এতো পাগল হলে কেনো?? যাতে আমি জবে গিয়ে বিজি হয়ে পড়ি আর তুমি একা একা ভার্সিটিতে যাও। নানারকম ছেলে বন্ধু বানাও। এখন তো আমার জন্য ওসবে জরাতো পারো না। আমি কাজে বিজি হয়ে গেলে তোমার বেশ সুবিধা হয় তাইনা”।

যতো দিন যাচ্ছিলো ততো চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাচ্ছিলাম তাসমিয়াকে নিয়ে। সারাক্ষণ যেসব ভেবে চিন্তা করতাম তাসমিয়ার জবের বিষয় টা তোলার পর রাগের মাথায় সেসবই বলে দিলাম। কারন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমার চিন্তা হচ্ছিল যদি এক ভার্সিটিতে না এডমিট হই তাহলে তাসমিয়া আমার থেকে দূরে চলে যাবে না তো?? যেমনটা এসএসসির পর ভাবতাম।

তাসমিয়া আমার কথাগুলো শুনে প্রায় কেঁদেই দিলো। আর বললো,”এতো সন্দেহ মনের ভিতর কবে থেকে এলো বিজয়?? সম্পর্কের মাঝে তুমি সন্দেহও ঢুকিয়ে ফেলেছো?? একটা মেয়ে তাঁর ভালোবাসার মানুষ কে কখন জবের জন্য জোর করে বুঝোনা তুমি?? এতোটা অবুঝ হলে কি করে চলবে বিজয়।
কবে বুঝবে তুমি কেনো এতো অবুঝতা করো বলবে প্লিজ।

ওর কথা শুনে আমি কিছুটা স্বান্ত হলাম আর বললাম সরি আর সন্দেহ করবো না। তখন তাসমিয়া বললো বিজয় একটা কথা বলি??

আমি বললাম হুম বলো।

ভালোবাসায় শুধু ভালোবাসাটাই জরুরী নয়।
একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গেলে শুধু ভালোবাসা দিয়েই টিকিয়ে রাখা যায় না। যেমন তরকারি রাঁধতে গেলে শুধু পাএ আর সবজি হলেই তরকারি হয়ে যায় না। তরকারি সুস্বাদু করার জন্য তেল,মরিচ,লবণ, নানারকম মশলা দিয়ে সুস্বাদু করতে হয়। এবং তবেই সেটা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়। শুধু সবজি আর পানি দিয়ে জাল করে একদিন খেয়ে দেখো। সেটা গিলতে যেমন কষ্ট হবে তেমন হজম করতেও কষ্ট হবে। দু তিনদিন হয়তো জোর করে হজম করা যাবে পরে ঠিকই বিরক্ত হয়ে এমন অনীহা এসে যাবে যে সেটা জোর করে মুখে দিলেও উগ্রে দিবে।
ঠিক তেমনি একটা সম্পর্কে ভালোবাসার পাশাপাশি বিশ্বাস, ভরসা, সম্মান,শ্রদ্ধা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ভালোবাসা থাকলেই একটা সম্পর্ক টিকে যায় না৷ সেখানে থাকতে হবে অগাধ বিশ্বাস, ভরসা, দুজন দুজনের প্রতি প্রচুর সম্মানবোধ, শ্রদ্ধাবোধ, একে অপরকে প্রচুর পরিমাণে সেক্রিফাইস করতে হবে।
কোন কিছুই যেনো একপাক্ষিক না হয়। কারণ সম্পর্ক কিন্তু একপাক্ষিক ভাবে তৈরী হয় না।
যেটার তৈরীই হয় দুপক্ষের তরফ থেকে সেখানে একজন কেনো দিয়ে যাবে বা একজন কেনো নিয়ে যাবে। দিতেও হবে দুজন কে নিতেও হবে দুজন কে।
মোট কথা দুজনকেই দুজনের প্রতি সমান গুরুত্ব,সমান ভালোবাসা দিতে হবে।সমান রেসপেক্ট সমান সেক্রিফাইস করতে হবে।
.
আমি ওর কথাগুলো যখন মনোযোগ দিয়ে শুনতাম মনে হতো ঐ ঠিক। তাই ওকে প্রমিস করতাম যে আর কখনো সন্দেহ করবো না রাগারাগি করবো না। আমি জব নিবো সে অনুযায়ী জবের চেষ্টা করতে থাকি। আমার আব্বা বলেন,অনার্স শেষ করো তারপর জব এর কথা ভাববে। আর তাসমিয়া বলতো ছোটখাটো জব নাও পাশাপাশি অনার্স করো। আমি পড়ে যেতাম দোটানায় আর হতো আমার মাথা গরম। মেজাজ বিগরে যেতো আর ঝগরা শুরু করতাম তাসমিয়ার সাথে৷ নানা রকম ভাবে বকাবকি করতাম। কখনো বা বাবা, মা তুলে গালি দিতাম।
.
একদিন কিছু একটা বিষয়ে দুজনের তুমুল বেগে ঝগরা চলছিলো। ঝগরার সময় স্বভাবতই আমি ওকে বকছিলাম খুব। রেগে বলেছিলাম তুই আমাকে ফোন দিবি না। তখন তাসমিয়া কান্নাজরিত কন্ঠে বলেছিলো “হ্যাঁ দিবো না ফোন তোমায় সত্যি দিবো না বিজয়। কেনো জানো তুমি আমাকে হাজার বকো, হাজার কথা শোনাও আমার জায় আসেনা৷ কিন্তু তুমি আমাদের ঝগরার মাঝে কেনো আমার বাবা,মা কে টেনে আনো বলতে পারো। আমি তোমায় খুব ভালোবাসি তুমি আমায় খুব ভালোবাসো। আমরা একটা রিলেশনশীপে আছি। আমার প্রতি তোমার অধিকার আছে আমাকে ভালোবাসো,শাসন করো বকো ইটস ওকে নো প্রবলেম। তাই বলে ঝগরার মাঝে বাবা,মা তুলে কেনো গালি দাও বিজয়৷ একদিন,দুদিন তিনদিন আর না আমার জন্য কেউ আমার বাবা,মা কে তুলে গালি দিবে সেটা আমি সহ্য করবো না। আমাকে তুমি রেসপেক্ট নাই করতে পারো আমাকে তুমি খুব ভালোবাসো সেই ভালোবাসার টানেই তোমায় আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছি। তাই বলে আমার বাবা, মাকে তুমি রেসপেক্ট করবে না??
বিয়েই হয়নি এখনি এমন করছো এখনি আমার বাবা মা কে সম্মান করছো না বিয়ের পর কি করবে বিজয়?? দিবো না ফোন তোমায় তুমি তোমার রাগ নিয়েই থাকো। আর পারছিনা আমি অনেক হয়েছে। তোমাকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত আমি।

ফোন রেখে দেয় তাসমিয়া।

কিছু নারী আছে যারা ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে জীবিত লাশ হয়ে দুনিয়াতে টিকে থাকবে। তবুও নিজের আত্মসম্মান বর্জন করবে না। যাদের কাছে ভালোবাসার থেকেও আত্মমর্যাদা বেশী জরুরী।

তাসমিয়া ছিলো সেই নারীদের মধ্যে একজন। যার কাছে ভালোবাসার গুরুত্ব কতোটা ছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। শুধু অনুভব করা যাবে আর সেই অনুভব টা বিজয় ছাড়া আর কারো করার সাধ্য হবে না৷ কারন ভালোবাসা টা পেয়েছে শুধুই বিজয়। আর আত্মমর্যাদার গুরুত্ব ছিলো ওর কাছে ওর জীবনের থেকেও বেশী।
.
আমিও নির্বোধ হয়ে থাকি।একটা বার ফোন করে সরিটাও বলিনা। ইগো দেখিয়ে আর ফোনই করিনা। অথচ ফোন করে জাষ্ট একটা সরি বললেই পাগলীটার সকল রাগ,অভিমান দূর হয়ে যেতো। দুদিন কেটে গেলেও আমি ওকে ফোন দেই না আর না ও আমাকে ফোন দেয়।
ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকি খুব হাতের কাছে ফোন রাখি এই বুঝি তাসমিয়া ফোন দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। যখন দেখি ও সত্যি ফোন দিচ্ছে না তখন ওর নাম্বার ডায়াল করেও কেটে দেই আমার মাঝে যে বোকা বোকা জেদ ছিলো সেই জেদ গুলো ওকে ফোন করতে দিতো না।

তাসমিয়া ফোন দেয় তিনদিনের দিন। আর জানায় সে খুবই অসুস্থ।সেদিন ফোন কাটার পর পরই নাকি সে জ্ঞান হারিয়েছিলো।ডক্টর বলেছে অতিরিক্ত মানসিক টেনশন থেকে এমনটা হয়েছে। মানসিক চাপ না কমলে বড় রকমের সমস্যা হতে পারে।
ওর পরিবারের লোক বেশ সন্দেহ করছে এটুকু বয়সে কিসের এতো মানুসিক চাপ??
কথাটা শোনা মাএই বুকের ভিতর তীব্র ব্যাথা অনুভব হতে থাকে। ভালোবাসি যে খুব প্রিয় মানুষের অসুস্থতার খবড় শুনে কি করে ঠিক থাকি। সব রাগ অভিমান দূরে ঠেলে সরি বলি দুদিন কেমন ছিলাম কিভাবে ছিলাম জানাতে থাকি। কাঁদতে থাকি তাসমিয়ার ও কান্নার শব্দ ভেসে আসে আমার কানে। তাসমিয়া আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে সব ঠিক করে নেয়। মলিন গলায় কথা বলতে থাকে।
সেদিন না বুঝলেও আজ বুঝি ও সব ঠিক করতে চায়নি আবার আমার থেকে দূরে সরে যেতেও পারেনি। কথা না বলে থাকতে পারেনি তাই সব ঠিক করে নিয়েছে কিন্তু বুকের ভিতর একটা ব্যাথা ওর থেকেই গেছে। না পারছিলো আমার সাথে মানিয়ে নিতে না পারছিলো আমাকে ছেড়ে চলে যেতে।
আমি আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক টাকে বিষাক্ত সম্পর্ক বানিয়ে ফেলেছিলাম৷ যেই বিষে একটু একটু করে নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছিলো তাসমিয়া। গলায় কাঁটা আটকে গেলে সেটা গিলে ফেলাও যায় না উগ্রে ফেলাও যায় না।ভালোবাসার নাম করে ওর জীবনে কাটা হয়ে বিঁধে ছিলাম আমি। না পারছিলো ছাড়তে না পারছিলো ধরতে।

“মানুসিক অসুখের থেকে ভয়াবহ অসুখ দুনিয়াতে আর দুটি নেই। এই অসুখ একজন মানুষ কে শান্তি তে বাঁচতে দিবে না আবার মরতেও দিবে না৷ শুধু তীলে তীলে ধ্বংস করে দিবে”

একদিন আমার আচরনে বিরক্ত হয়ে তাসমিয়া বললো,”বিজয় প্লিজ তুমি আমাকে বিয়ে করে নাও।
এইভাবে আর হয় না বিজয়৷ এইভাবে আর চলে না।
এক কাজ করো তোমার বাবাকে আমার বাবার কাছে পাঠাও বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে বলো। নয়তো এভাবে আমি পাগল হয়ে যাবো। তোমার এসব আচরনে ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে দুদিন জ্ঞান হারিয়েছি।আর কতো চাপ দিবে বলো। তোমার সব নিষেধ মেনে চলেছি তবুও তোমার মন ভরে না।
আজ ভাইবোন রা মিলে একটু পিকনিক করবে বাসায়ই এটাতেও তোমার সমস্যা। বাবা কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে চাইলে তোমাকে জানাই আর তুমি ঝগরা শুরু করো। আরে কি হবে হ্যাঁ কেমন মানুষ তুমি যে তোমার জন্য নিজের বাবার সাথে বেড়াতে যেতে পারবো না৷ এতো টেনশন এতো চিন্তা তাহলে বিয়ে করে নাও আর পারছিনা৷ বাবা,মা কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইলে আমি ডিপ্রেশনে চলে যাই আমার মতো অসহায় মানুষ দুনিয়াতে আর একটাও বোধহয় নেই৷ যার কিনা বাবা,মায়ের সাথেও বেড়াতে যাওয়ার অধিকার নেই। ভাই বোনরা পিকনিক করবে আর আমি রুমে বসে তোমার সাথে চ্যাটিং করবো৷ বাবা যদি জিগ্যেস করে কেনো এমন করছি কি বলবো,আমার প্রেমিক আমাকে নিষেধ করেছে নিজের কাজিন, নিজের আপন ভাইদের সাথেও পিকনিক করা যাবে না আনন্দ উৎসব করা যাবে না। অনেক হয়েছে আর না এবার বিয়ে করো আমায়।

তাসমিয়ার কথা শুনে আমি চুপসে গেলাম। সত্যি তো এ মূহুর্তে আমি ওর বাবার সামনে কি নিয়ে দাঁড়াবো।
আমার তো একটা জব নেই অথচ তাসমিয়া কতো আগে থেকে জব জব করছে। তাসমিয়াকে সেদিনও সরি বলি৷ প্রমিস করি আর কখনো সন্দেহ করবো না। জব নিবো খুব তারাতারি কারন এভাবে সত্যি আর থাকা যায় না৷ ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়ে সম্পর্কে ফাটল ধরাচ্ছি আমি নিজেই। তাসমিয়াকে যদি হারিয়ে ফেলি তখন আমার আফসোস ছাড়া কিছু থাকবে না৷ নিজের দোষে এভাবে এতো দিনের সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারিনা৷ আমার কৈশোরের প্রেম সে আমার স্কুল জীবনের প্রেম সে৷ তাকে হারালে আমার সবটাই হারিয়ে যাবে। সেদিন তাসমিয়ার থেকে ফেসবুক পাসওয়ার্ড নিয়ে নিজেকে অনেকটাই শান্ত করে ফেলি। আর কোন সন্দেহ মনের ভিতর পুষে রাখিনা।
জব খুঁজতে থাকি কোম্পানি তে ছোট পোস্টে জব পেলেও সেটা করিনা৷ কারন তাসমিয়ার থেকে দূরে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার ছিলো। দূরে গেলেও ওর সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না৷ হয়তো দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো৷ তাছাড়া তাসমিয়া আমার আয়ত্তের বাইরে থাকুক তা আমি কখনোই চাইনি। এমন একটা জব খোঁজতাম যে জবটায় ডিউটি থাকবে রাতের বেলা৷ তাসমিয়া ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ডিউটি করবো। সারাদিন তাসমিয়ার সাথে সময় কাটাবো ও কি করে না করে খোঁজ রাখবো। রাতে ও ঘুমিয়ে গেলে আমি কাজ করবো। এতে আমার আর কোন চিন্তা থাকবে না।

কি অদ্ভুত আমারো যে রাতের ঘুম প্রয়োজন হবে সেটা একবারো তখন মাথায় আসে নি হাহাহা।

তাসমিয়া যখন আমার এমন অদ্ভুত ইচ্ছের কথা শুনলো খুব রেগে গেলো আর বললো,”দেখো বিজয় পাগলামি বন্ধ করো। এমন ছেলেমানুষির কোন মানে হয় না। যে তোমার সে তোমারি থাকবে৷ এভাবে নাওয়া,খাওয়া ছেড়ে নিজের ক্যারিয়ার জলে ভাসিয়ে দিয়ে আমাকে গার্ড করার কোন দরকার নেই।আল্লাহ তায়ালা যার ভাগ্য যার সাথে জুরে দিয়েছে তাঁর সাথে তার মিলন হবেই। ভাগ্যের লিখন খন্ডানো যায় না৷ তাই এসব ফালতু ভাবনা বন্ধ করে কাজে মন দাও৷ আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হবে দেখো। আমি আছি তোমার পাশে সবসময়।

তাসমিয়া সহজ ভাবে আমাকে চিরন্তন সত্য কথাগুলো বললেও আমি সেসব সহজ ভাবে নিলাম না। মনের ভিতর ভয় চলে এলো চিন্তা চেপে বসলো৷
তাসমিয়া আমার ভাগ্যে আছে তো?? ওর আমার মিল হবে তো?? কোন ভাবে আমরা আলাদা হয়ে যাবো না তো??
.
দিনের পর দিন অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম তাসমিয়ার প্রতি। ভালোবাসা টা হয়ে গিয়েছিলো অতিরিক্ত। সেই অতিরিক্ত ভালোবাসাই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো।

অতিরিক্ত ওয়ার্ড টা আমার কাছে মারাত্মক ভয়ংকর লাগে। দুনিয়াতে বসবাসরত মানুষ দের জীবনে যতো প্রকার অঘটন ঘটেছে তা এই অতিরিক্ত বিষয়গুলোর জন্যই। কোন কিছুতে অতিরিক্ত অবহেলা বা অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে মানুষ নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই ডেকে এনেছে। আর এই অতিরিক্ত ওয়ার্ড টা তাঁদের জীবন নিঃশ্ব করে দিয়েছে যারা ভালোবাসায় অতিরিক্ত কিছু করে ফেলেছে।

“দুজন মানুষের সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসা টা যখন অতিরিক্ত হয়ে যায় তখন সে সম্পর্কের হয় বিচ্ছেদ ঘটবে না হয় পূর্নতা পাবে” কিন্তু আমাদের এ কি হয়ে গেলো??বুকটা যে আজো ভীষণভাবে কেঁপে ওঠে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here