হৃদপিন্ড_২,পার্ট_৯

হৃদপিন্ড_২,পার্ট_৯
জান্নাতুল নাঈমা

বেশ অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পরও মুসকান থামলো না। ইমনের এবার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। কোনোরকমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো সে। মিলি নিঃশব্দে কেটে পড়লো বাড়ি থেকে। সে বেশ বুঝতে পারছে মুসকানের আগের স্বভাব বদলায়নি। মেয়েটা এখনো এতো বেশী বেশী করে কেনো বুঝে পায় না সে। চোখে,মুখে বিরক্তি ফুটিয়েই চলে গেলো সে।
.
নিলুফা বেগম পুরো রুম গোছাচ্ছে। ইমনের দিকে কেমন চোখেও যেনো তাকাচ্ছে বারবার। হুটহাট বাড়িতে ইমনের আসা,যাওয়াটা ভালো চোখে দেখেনা সে। বাড়িতে দুটা মেয়ে রয়েছে। বিশেষ করে তাঁর যুবতী মেয়ে ঘরে। মুসকানেরও বাড়ন্ত বয়স।
দিহান আসে সে নয় কাজের খাতিরে আসে। তাছাড়া দিহান বিবাহিত তাঁকে নিয়ে তাঁর সমস্যা নেই। কিন্তু ইমনকে নিয়ে সে বেশ বিরক্তই হচ্ছে। মুরাদের মা আসলে এ বিষয়ে কথা বলবে এও ভাবলো। ভাঙা কাচের টুকরো গুলো পরিষ্কার করে নিয়ে ময়লা ফেলতে বাইরে চলে গেলেন নিলুফা বেগম। যাওয়ার আগে রিমিকে বলে গেলেন ‘ওকে নিয়ে আমাদের ঘরে আয়’।

মায়ের কথা মেনে রিমি মুসকানকে ওঠানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু মুসকান ওঠছে না৷ তাঁর মধ্যে কি পরিমাণ জেদ যে চেপেছে কেউ না দেখলে বিশ্বাসই করবেনা যে এই মেয়ে কতোটা জেদখোর। ইমনও সিদ্ধান্ত নিলো আজ এর শেষ দেখে ছাড়বে। আসল সমস্যা টা ঠিক কোথায় সেটাই বের করবে আজ সে। রাগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে বারবার । আর যাইহোক মুসকানের কান্না টা কেনো জানি সহ্যই করতে পারেনা সে। অথচ এই মেয়ে তাঁর সামনেই শুধু কাঁদবে।
—- রিমি একটু বাইরে যা। আমি ওর সাথে কিছু কথা বলতে চাই। দরজার পাশেই দাঁড়া। কাকি এদিকটায় বোধ হয় আসবে না আর যদি আসে তুই দ্রুত ঢুকে পড়বি রুমে।

ইমনের কথা শুনে রিমি বিস্ময় চোখে তাকালো। ইমন ইশারা করলো বাইরে যেতে। রিমি মুসকানের দিকে একবার চেয়ে ভাবলো ‘তাঁর মানে কি দুজনই সামথিং সামথিং’
—- কি হলো?
—- হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি।
রিমি চলে যাওয়ার সাথে সাথে মুসকান ও দাঁড়িয়ে পড়লো। রুম ত্যাগ করতে নিতেই ইমন খুব শক্ত করে তাঁর হাত চেপে ধরলো। তবুও মুসকান তাঁর দিকে ফিরে তাকালো না৷ ইমন চোখে মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে কঠিন গলায় বললো,
—- একদম জেদ খাটাবিনা মুসু। কি হয়েছে বল এমন কেনো করছিস? আমাকে কেনো এড়িয়ে চলছিস? আমাকে কেনো একটা বার কথা বলার সুযোগ দিচ্ছিস না?
মুসকান হাত মোচড়াতে শুরু করলো। যা দেখে ইমন রাগান্বিত গলায় বললো,
—- দেখ এক মোচড়ে এই হাত আমি দুখন্ড করে দিতে পারবো৷ একদম গায়ের জোর দেখাবিনা৷ এতো ত্যাজ কিসের তোর? এই বয়সে এতো ত্যাজ কে শেখালো তোকে? বেয়াদবি করবি না বলে দিলাম। কথার উত্তর দে?
ইমনের ধমকে কেঁপে ওঠলো মুসকান৷ তবুও হাত মোচড়ানো থামালো না।
—- তোর মতো ঘাড়ত্যাড়া মেয়ের জন্য আমার মতো ইমন এক পিসই যথেষ্ট বলেই একটানে নিজের সামনে নিয়ে এলো।
—- ছাড়ো আমাকে আমি দাদাভাই কে ডাকবো কিন্তু। আমাকে ধরেছো কেনো? যাও তোমার মিলির কাছে যাও মিলির আদর নাও গিয়ে যাও।
তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো ইমন একহাতে হাত শক্ত করে চেপে ধরে আরেকহাতে ঘাড়ে চেপে ধরলো। কান্নামিশ্রিত চোখে তাকালো মুসকান। ইমন তীক্ষ্ণভাবে চেয়েই প্রশ্ন করলো,
—- তোর কি সমস্যা হয়?
মুসকান উত্তর না দিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো৷ ইমন আরো শক্ত করে ঘাড়ে চেপে বেশ অনেকটা ঝুঁকে রইলো তাঁর দিকে। দুজনের মাঝে এক ইঞ্চি দূরত্বও নেই৷ দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ পুরো রুমে অন্যরকম এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। যে শব্দ দুজনের বুকের ভিতরই তোলপাড় করে চলেছে।
হাতে ব্যাথায় আবারো কেঁদে ফেললো মুসকান। ইমন ধমকে বললো,
—- আবার কাঁদছিস তুই তোকে মেরে বস্তায় বেঁধে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসবো এবার দাঁড়া। অনেক জ্বালিয়েছিস আর না৷ দেখি ওড়না দে এটা দিয়েই বাঁধবো৷
হাত ছেড়ে ওড়না নিতে যেতেই মুসকান চমকে সড়ে যেতে নেয়৷ ইমন ঘাড় থেকে হাত সড়িয়ে একহাতে দুহাত ধরে রাখে। আরেকহাতে ওড়না খুলে নেয়৷ লজ্জায় কুঁকড়ে যায় মুসকান। কান্না থেমে বুকের ভিতর কেমন অস্থিরতা শুরু হয়ে গেলো তাঁর। ইমন ওড়না দিয়ে হাত বাঁধায় ব্যাস্ত৷ হাত বেঁধে বিছানায় বসিয়ে দিলো। যখন মুসকানের দিকে তাকালো তখন বুকের ভিতর ধক করে ওঠলো তাঁর। মুসকানের চোখে, মুখে অস্বাভাবিক লজ্জার চিন্হ। নিজেকে লুকানোর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করছে সে। যতো যাই হোক মেয়েটা তো আর সেই ছোটটি নেই৷ চৌদ্দ বছরের কিশোরী সে। এ বয়সে তাদের লজ্জার পরিমাণ অনেকটাই বেশী থাকে। এভাবে ওড়না বিহীন ভাইয়ের বন্ধুর সামনে বসে থাকার মতো বেহায়া সে নয়।

থতমত খেয়ে গেলো ইমন৷ ইশ কি বিশ্রি পরিস্থিতিই না তৈরী করলো সে। মাথা নিচু করে হাত খুলে ওড়নাটা অন্যদিক চেয়ে গায়ে পড়িয়ে দিলো।মুসকান মাথা নিচু করে ওঠে যেতে নিবে তখনি ইমন আবারো তাঁর হাত চেপে ধরে। শীতল দৃষ্টিতে তাকায় তাঁর মুখপানে। নরম কন্ঠে বলে,
—- এতো কেনো কাঁদিস? এমন ভাঙচুর কেনো করলি সত্যিটা বল?
—- আমাকে তুমি ছাড়ো এভাবে কেনো ধরো ব্যাথা লাগে আমার।
হাত নরম করে দিলো ইমন। মৃদু হেসে বললো,
—- আচ্ছা হালকা করে ধরেছি এবার বল কেনো আমার সাথে কথা বলছিস না? আর কেনো এমন করলি? এখনো এতো জেলাস কেনো হোস? এখন তো ছোট না তুই আমাকে নিয়ে তোর মনে কি আছে বল প্লিজ?
—- দেখো নানাভাই তুমি শুধু আমার নানাভাই আর কারো না৷ ঐ মিলি আপু তোমাকে কেনো আদর করলো? ঐ মিলির জন্য তুমি আমায় সেদিন বকেছিলে। ওর জন্য কেনো আমাকে বকবে? কেনো তুমি ওর হাত ধরবে? আমি এসব সহ্য করতে পারিনা।
তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে দাঁত কিড়মিড় করে ইমন বললো,
—- তোর এই নানাভাই ডাক টা বদলা মুসু মাথা গরম হয়ে যায়৷
ইমন কথাটা বলে কি মহাপাপ করলো কে জানে? মুসকান আবারো হাত মোচড়াতে শুরু করলো। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলতে থাকলো,
—- ওওও এখন নানাভাইও বলতে দেবেনা? ঐ মিলিকে দেখে আবারো আমাকে তুমি অবহেলা করছো। বিবাহিত মহিলা এক বাচ্চার মা তাঁর প্রতি এখনো এতো টান তোমার?
বড় বড় করে তাকালো ইমন এই মেয়ে তাঁর মান ইজ্জত একদম ধূলোয় মিশিয়ে দিলো ছিঃ। এগুলা কোন কথা? সারাজীবন সিঙ্গেল থেকে এখন তাঁকে এসব শুনতে হচ্ছে? শেষমেশ এক বাচ্চাওয়ালার সাথে তাঁকে জরিয়ে কথা বলছে? তাঁর পিছনে যেসব মেয়েরা ঘুরে বেড়ায় তাঁরা এসব শুনলে নিশ্চিত গলায় দরি দিতো।
—- ছাড়ো আমাকে আমি তোমার সামনেই আসবোনা থাকো তুমি তোমার মিলিকে নিয়ে।
—- চুপপপ৷ আর একটা কথা বললে থাপড়িয়ে কান গরম করে ফেলবো। বলেই মুসকানকে পাশে বসিয়ে দিলো। হাতটা তখনো ইমনের হাতের মুঠোয়।
—- দাদাভাই দেখো নানাভাই আমাকে বকছে। চেঁচিয়ে বললো মুসকান।
ইমন চোখ গরম করে হাত ছেড়ে মুখ চেপে ধরলো।
—- দেখ বাড়াবাড়ি করিস না। তুই জাষ্ট শান্ত হয়ে আমাকে বল তুই কি চাস আই প্রমিস ইউ যা বলবি তাই হবে। একটু চুপ করে বসে থাক বাবা প্লিজ।
মুসকান শান্ত হলো। তাঁর শান্ত হওয়া দেখে ইমন বললো,
—- চুপ থাকবিতো?
মাথা নাড়ালো মুসকান ছেড়ে দিলো ইমন৷ কিন্তু একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে রইলো। কেনো জানি এই মেয়ে কে বিশ্বাস পাচ্ছে না।
—- এবার বল তুই কি চাস?
মুসকান ইতস্ততবোধ করলো। ইমন পরপর তিনবার জিগ্যেস করারপরও মুসকান মুখটা কাচুমাচু করেই বসে রইলো বাধ্য হয়ে ইমন বললো,
—- তুই যদি আমার শান্ত আচরণ দেখে সাপের পাঁচ পা দেখে থাকিস তাহলে শুনে রাখ আমার শান্ত আচরণ অশান্ত করলে এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ভয় যদি কেউ পায় তাহলে সেটা পাবি তুই। তাই আমাকে শান্ত থাকতে দে। আমি যেভাবে থাকতে চাইছি সেভাবেই থাকতে দে। আমার আমি কে বেশী ঘাটিস না তাহলে দেখবি আমার অস্তিত্ব ছাড়া তোর চারপাশে আর কিছুই নেই।
এক ঢোক গিললো মুসকান। মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে কিন্তু বলতে পারলোনা৷ গলার আওয়াজ বের হলোনা তাঁর। ইমন শান্তভাবে যে হুমকি দিলো তাতেই তাঁর অবস্থা মরি মরি। কাঁপতে থাকলো সে। ইমন তাঁর হাত ছেড়ে দিলো। মেঝেতে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো,
—- বল মনের কথা বলে দে জানতে চাই আমি।
—- তুমি মিলি আপুর সাথে কথা বলবেনা। কাঁপা গলায় বললো মুসকান৷
—- কেনো বললে তোর কি হয়?
—- হিংসে হয় আমার।
—- কেনো হিংসে হয় মুসু? আচমকাই দুহাতে দুগাল স্পর্শ করে ঘোর লাগা গলায় বললো ইমন।
এক ঢোক গিললো মুসকান৷ চোখের দৃষ্টি তাঁর এলোমেলো।
—- বল?
ইমনের মুখের গরম শ্বাস মুসকানের মুখে পড়তেই কেমন মিইয়ে গেলো সে। চোখ নামিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকলো। ইমন দুগালে আলতো চাপ দিলো। মুসকানের ভেজা নরম ঠোঁট গুলোও যেনো জড়সড় হয়ে গেলো। কি সাংঘাতিক দৃশ্য। এক ঢোক গিললো ইমন চোখ ফিরিয়ে হাত সড়িয়ে নিয়ে কয়েকদফা শ্বাস নিলো আর ছাড়লো। মুসকান জড়সড় হয়েই বসে আছে। ইমন অন্যদিক তাকিয়েই বললো,
—- উত্তর দিলিনা?
—- আমি জানিনা মিলি আপুর ধারেকাছে যেনো তোমাকে না দেখি। বলেই চট করে ওঠে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো মুসকান।
.
মুসকান রিমিদের ঘরে থম মেরে বসে আছে। নিলুফা বেগম মনে করলো হয়তো রাগ কমেনি এখনো তাই কোন প্রশ্ন করলো না৷ তিনি রান্নাঘরে চলে গেলেন। মুরাদ আর মুসকানের জন্যও রাঁধতে হবে। মুরাদের মা ফোনে জানিয়েছে তাঁর আসতে বিকাল হবে। রিমি মুসকানের পাশে বসে ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে ইমন তাঁকে কি বললো? তাঁদের কি কথা হলো? কিন্তু মুসকান মুখ দিয়ে টু শব্দটিও করলো না। বিরক্তির চরম পর্যায়ে গিয়ে রিমি রাগে গটগট করতে করতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
______________________
কোর্ট থেকে দুপুর তিনটায় বেরিয়ে পড়লো ইমন। তাঁর বাবার এক বন্ধুর সাথে মিট করতে হবে তাঁকে। তাই রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে গাড়ি ঘোরালো। রেস্টুরেন্টে পৌঁছেই দেখতে পেলো শুধু বাবার বন্ধু নয় সাথে বেশ রংঢং মেখে বসে আছে এক যুবতী। তাঁর আর বুঝতে বাকি নেই ঘটনাটা আসলে কি? চাপা এক শ্বাস ছেড়ে এগিয়ে গেলো সে। বললো,
—- আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
—- ওয়ালাইকুমুস সালাম।
—- ভালো আছেন?
—- অফকোর্স ভালো আছি। এবার তোমাদের ভালো রাখার দায়িত্ব পড়েছে ঘাড়ে। দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো।
মৃদু হেসে বসলো ইমন৷ সামনে বাবার বন্ধু ইলিয়াস খান। খুব যদি ভুল না করে পাশের মেয়েটাই তাঁর মেয়ে। এক পলক চেয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। ইলিয়াস খান পরিচয় করিয়ে দিলো তাঁর মেয়ে আতিয়া খান ইতুর সাথে৷ দুজনই দুজনকে হ্যালো জানালো। এক পর্যায়ে ইলিয়াস খান তাঁর জরুরি কল এসেছে বলেই ওঠে গেলো। সে যে গেলো আর আসার নাম নেই৷ বিরক্তি তে কপাল ঘামতে শুরু করলো ইমনের। পকেট থেকে টিস্যু বের করে ঘাম মুছে ফোন বের করলো। ইতু ড্যাব ড্যাব করে যে তাকিয়ে আছে চোখ সড়ানোর নাম নেই। তাঁর দেখার পালা শেষ করে বললো,
—- আপনার কথা অনেক শুনেছি। শুনে আপনাকে যেমন আইডিয়া করেছিলাম তাঁর থেকেও অনেক বেশী সুদর্শন আপনি।
ইমন জোর পূর্বক হাসি দিলো ফোন থেকে চোখ সড়িয়ে কফির মগে এক চুমুক দিলো। তাঁর দেখাদেখি ইতুও নিজের কফির মগে চুমুক দিলো।
—- আপনি বোধ হয় জানতেন না পাপার সাথে আমিও আসবো তাইনা?
—- হ্যাঁ জানলে আমার মূল্যবান সময় আমি নষ্ট করতামনা৷ কফির মগে চুমুক দিয়ে ফোনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বললো ইমন।
ইতুর মুখটা ছোট হয়ে গেলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
—- আপনি বোধহয় একটু বেশীই এটিটিওট দেখাচ্ছেন। আমার পাপা আপনার পাপার বন্ধু আমাদের বিষয় সবটাই জানে আকরাম আংকেল। তাছাড়া আমি লন্ডনে পড়াশোনা করেছি। আপনার থেকে কোন অংশে কম নই আমি। প্রেজেন্ট পাপার বিজনেসও সামলাচ্ছি।
—- সো হোয়াট? আপনার ব্যাপারে আমি একটুও ইন্টারেস্টেড নই। আপনার পাপাকে বলে দিয়েন বিলটা আমি পেমেন্ট করে দিয়েছি। বলেই ওঠে চলে গেলো ইমন৷
ইতু অবাক হয়ে চেয়ে রইলো ইমনের যাওয়ার দিকে। এ প্রথম কেউ তাঁকে এভাবে ইগনোর করলো। একটাবার তাকালো না অবদি। তাঁর মতো এতো রূপবতী, বড়লোক বাবার মেয়েকে এভাবে কোন ছেলে ইগনোর করতে পারে বিলিভই করতে পারছে না সে। হাউ দিজ পসিবল? কফির মগটা বেশ শব্দ করে টেবিলে রেখে রাগে গজগজ করতে করতে সেও বেরিয়ে গেলো৷
.
সেদিন ইমন বাড়ি ফিরে এমন রিয়্যাক্ট করেছে যে ইরাবতী বা আকরাম চৌধুরী কেউ আর তাঁর বিয়ের কথা তোলার সাহস পায়নি। ইলিয়াস খান কেও বলে দিয়েছে তাঁর ছেলে বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই আপাতত এ বিষয় নিয়ে আগাতে চায় না।

এর মধ্যে দিহান আর সায়রীকে ইমন মুসকানের জেলাসির কথাটা জানিয়েছে। সব শুনে দিহান পজেটিভ ভাবলেও সায়রী মানতে নারাজ। সে ইমনকে সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছে মুসকানের ফিলিং ভালোবাসার হতেই পারেনা৷ ভালোবাসার কিছু বুঝেইনা মুসকান৷ ইমনও বলে দিয়েছে ভালোবাসা হোক বা না হোক মুসকান তাঁরই হবে। তা শুনে সায়রীও বলে দিয়েছে আর কিছু হোক না হোক মুরাদের সাথে তোর বন্ধুত্বের ভাঙন যে ধরবে এটা সিওর থাক। সায়রীর সাথে প্রতিবাদ করলেও মনে মনে ঠিক এ বিষয় নিয়ে অশান্তি ভুগছে ইমন।
________________
মুসকানের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। দুদিন পর ইংলিশ প্রথম পএ পরীক্ষা তাঁর। তাই রুমে বসে পড়ছে । পড়ায় একদমই মন বসে না তাঁর। চারদিন হয়ে গেলো ইমন তাঁদের বাড়ি আসেনি। তাই মন ভালো লাগছেনা। দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। আবার মনে মনে নানান কুকথাও ভাবছে ‘নানাভাই আবার অন্য কোন মেয়ের পাল্লায় পড়লো না তো? বা মিলি আপুর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করেনা তো? মিলি আপু কি শশুড়বাড়ি চলে গেছে না আছে? নাহ পড়ায় মন বসাতে পারলো না। বই খাতা গুছিয়ে রেখে চলে গেলো রিমির কাছে। রিমিকে জিগ্যেস করে জানতে পারলো মিলি দুদিন আগেই শশুড়বাড়ি চলে গেছে। সে খবর শুনে একটু নিশ্চিন্ত হলো। কিন্তু ইমন কেনো তাঁদের বাড়ি আসছে না? তাঁর কি একবারো মুসুকে মনে পড়েনা? অভিমানে বুকটা ভার হয়ে গেলো।
.
রাত দশটা বাজে মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে আসতেই দেখতে পেলো রিমি ফোন কানে দিয়ে বসে আছে। তাঁকে দেখেই ফোনে থাকা ব্যাক্তিকে বললো,
—- এই তো ভাইয়া মুসু এসেছে।
মুসকানের বুকটা ধক করে ওঠলো। হাত,পায়ে মৃদু কম্পন অনুভব করলো সে৷ চোখের পলক ফেলতে ফেলতে আগাতে থাকলো রিমিও এক পা এগিয়ে তাঁর হাতে ফোন দিয়ে বললো,
—- কথা শেষ করে ফোন দিয়ে আসবি। যাই আমার অনেক পড়া আছে।
রিমি চলে যাওয়ার পর ফোন কানে দিলো মুসকান। তাঁর নিঃশ্বাসের শব্দ পেতেই ইমন বললো,
—- এই পাগলী তুই নাকি পড়াশোনা করছিস না? আর কিসব আবল তাবল চিন্তা করে বেড়াচ্ছিস? শোন পাগলী এই ইমন চৌধুরী, তোর ভাষায় তোর নানাভাই শুধুই তোর।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here