হৃদপিন্ড_২,পার্ট_১৪,১৫

হৃদপিন্ড_২,পার্ট_১৪,১৫
জান্নাতুল নাঈমা
পার্ট_১৪

ইমনের জ্বর যতটা কমেছিলো সায়রীর উপস্থিতি তে তাঁর থেকেও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো যেনো। মুসকানের থেকে সরে গিয়ে পাশেই পুরো শরীর ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। মুসকান মুখটা কাচুমাচু করে ওঠে বসলো৷ ইমন বিরবির করে বললো,

—- আগে যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেতাম তুই এতোটা নিচে নামবি তাহলে দিহানের সাথে তোর বিয়ে কেনো প্রেমের সম্পর্কও ঘটতে দিতাম না।

—- ঐ ঐ কি বললি? মনে হয় তোর দয়ায় আমি দিহানকে পেয়েছি? বলেই তেড়ে এলো সায়রী।

—- নিজের বাড়ি কি ভিটেতে কি পানি ওঠেছে? ওখানে মরার জায়গা পাসনি এখানে মরতে এসেছিস কেনো?

—- শয়তান ছেলে! সেধে এসেছিলাম বাঁচাতে গায়ে লাগলো না। আমার কি একটু পরেই বোনের খোঁজে ভাই হাজির হবেইনি। বলেই সায়রী বেরিয়ে যেতে নিলো।

মুসকান আপু বলেই বিছানা থেকে ওঠতে যাবে তখনি ইমন হাত টেনে ধরলো। মায়াভরা চোখ,মুখে চেয়ে বললো,

—- আরেকটু বোস না?

ইমনের অমন আবদারে কান্না চলে এলো মুসকানের। ইমন চোখ টেনে টেনে চেয়ে আছে। জ্বরে পুরো চোখ,মুখ লালচে হয়ে গেছে তাঁর। সায়রী ওদের অবস্থা দেখে কাছে এসে বললো,

—- ইমন আমি মুরাদকে ফোন করে বলেছি স্কুল আগে ছুটি হয়েছে তাই মুসুকে চলে এসেছি বাড়িতে আমিই পৌঁছে দেবো। এখন যদি লেট হয় প্রবলেম হয়ে যাবে।

—- নিয়ে যাবি ওকে? আহত গলায় প্রশ্ন করলো ইমন।

মুসকান প্রায় কেঁদেই দেবে৷ সায়রী বললো,

—- এছাড়া কোন অপশন নেই। মুরাদ আমাকে বিশ্বাস করে ওর সে বিশ্বাস আমি ভাঙতে পারবো না।

ইমন বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। মাথাটা ঝিমঝিম করছে তাঁর। তবুও মুসকানের দিকে এগিয়ে সায়রীর সামনেই কপালে আলতো করে চুমু খেলো। মুখে মলিন হাসির রেখা টেনে গাল টিপে দিয়ে বললো,

—- একদম মন খারাপ করবিনা। খুব তারাতাড়ি দেখা হবে আমাদের৷ ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করবি,পড়াশোনা করবি যাহ বাড়ি যা৷
.
সেদিনের পর প্রায় দুমাস কেটে যায়। এ দুমাসে প্রায় দিনই টিফিন পিরিয়ডে ইমন মুসকানের সাথে দেখা করে যায়। মাঝে মাঝে নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়েও অনেকটা সময় কাটায়। মুরাদ লক্ষ করলো শুরুর দিকে মুসকান কান্নাকাটি করতো। ঠিক ভাবে খাওয়া-দাওয়া করতো না। পড়াশোনা করতো না। কিন্তু এখন সেসবের কিছুই চোখে পড়ছে না৷ তাঁর মানে মুসকানের আবেগটা কেটে গেছে। সে ভুল নয়, মুসকানের অল্প বয়স তাই আবেগে পড়ে এসবে মনোযোগ দিয়েছিলো। ভাই হিসেবে সঠিক কাজটাই তাহলে সে করেছে। এবার ইমনের সাথে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে হবে। ইমনকে বোঝাতে হবে মুসকান ছোট আবেগ ছিলো ওর যা অল্প সময়েই কেটে গেছে। বন্ধু হিসেবে সে যেমন ইমনের ভালো চায় বোন হিসেবে মুসকানেরও ক্ষতি চায় না সে। দু বন্ধুর মধ্যে যে দূরত্ব তৈরী হয়েছে এটাকে দীর্ঘ করা যাবে না। ইমন তাঁর বেষ্ট ফ্রেন্ড কলিজার দোস্ত। ইমনের সাথে কালই দেখা করতে হবে ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মুরাদ৷

রাতের খাবারের পার্ট চুকিয়ে রুমে আসে রিমি। মুরাদ রিমিকে দেখে মৃদু হেসে বলে,

—- ইমনের জন্য একটা ভালো মেয়ে দেখতে হবে রিমি। যতো তারাতাড়ি সম্ভব বিয়ের বন্দবস্ত করবো ওর৷

—- তোমাদের মধ্যে সব ঝামেলা মিটে গেছে?

—- না তবে মিটিয়ে নেবো। মুসুতো ইমনকে ভুলেই গেছে এবার ইমনকেও বুঝতে হবে এটা জাষ্ট আবেগ ছিলো।

রিমি চমকে গেলো। মুসু ইমনকে ভুলে গেছে নাকি ওদের সম্পর্ক আগের থেকেও গভীর হয়েছে তা যদি মুরাদ জানতো তাহলে কি আর এ কথা বলতো? রিমিকে অন্যমনস্ক দেখে কাছে টেনে নিলো মুরাদ। কোমড় জরিয়ে বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে বললো,

—- কি ভাবছো?

—- সত্যি মুসু সব ভুলেছে তো?

—- কেনো ভুলেনি? তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে জিগ্যেস করলো মুরাদ।

রিমি ভয়ে এক ঢোক গিললো৷ আমতা আমতা করে বললো,

—- আমি তো জানিনা, না মানে মুসুতো ঠিক আছে স্বাভাবিক আছে।

মুরাদ তবুও তাঁর দৃষ্টি সরালো না। সন্দেহ চোখে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো রিমিকে। রিমি কথা ঘোরানোর মুরাদের থেকে সরে বিছানা ঠিক করে শুয়ে পড়লো। মুরাদের সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো। প্রচন্ড শক্ত করে হাত চেপে ধরলো রিমির। তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,

—- যদি বুঝতে পারি আমার থেকে কিছু লুকিয়েছিস খুন করে ফেলবো।

—- ভাইয়ের রূপে ফিরে এলে মন্দ লাগেনা বলেই খিলখিল করে হেসে ওঠলো রিমি।

—- আর যখন স্বামীর রূপে থাকি তখন কেমন লাগে? বলেই গা থেকে ওড়না সড়িয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।
__________________
বেলা এগারোটার দিকেই ইমন গাড়ি নিয়ে পৌঁছায় মুসকানের স্কুলের সামনে। সায়রী দ্রুত মুসকানকে গেট থেকে বের করে ইমনের গাড়িতে ওঠিয়ে দিয়ে আবার দ্রুত স্কুলের ভিতর চলে যায়।

আজ ইমনের জন্মদিন৷ তাই ক্লাস মিস দিয়েই মুসকানকে নিজের বাড়ি নিয়ে এলো ইমন। ইরাবতী আর কাজের মেয়ে পারুল মিলে বহুপদের রান্না বসিয়েছে৷ মুসকানকে নিয়ে ইমন বাড়ি আসতেই ইরাবতী ইমনকে বললো তাঁর রুমে বিছানার ওপর লাল রঙের শাড়ি বের করা আছে। মুসকানকে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে শাড়িটা পড়ে ফেলতে বল। পরোক্ষনেই ইরাবতী জ্বিব কেটে বললেন,

—- ওকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বল আমি গিয়ে শাড়ি পড়িয়ে দিব।

ইরাবতীর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো মুসকান। বিছানায় শাড়ির সাথে ব্লাউজ পেটিকোটও রয়েছে। সেই কোন ছোট বেলায় মা,রমা আর রিমি আপু তাঁকে শাড়ি পড়িয়ে দিতো। বড়বেলা আর শাড়ি পড়া হয়নি তাঁর। বান্ধবী দের সাথে কথা হয়েছে এস এস সি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে বিদায় অনুষ্ঠানে শাড়ি পড়বে সবাই মিলে। ভাবতেও পারেনি তাঁর শাড়ি পড়ার সময় এতো দ্রুত চলে আসবে। শাড়ি দেখে লজ্জা পেলো ভীষণ তখনি রুমে এলো ইমন। বললো,

—- কাহিনী কি এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো?

ইমনকে দেখে লজ্জাটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। মুখে কুলু পেতে দাঁড়িয়ে রইলো সে। ইমন ব্লাউজ,পেটিকোট হাতে নিয়ে মুসকানের সামনে ধরলো। বললো এগুলো পড়ার আগেই লজ্জা পাচ্ছিস পড়ার পর কি করবি? নে ধর। মুসকানের হাতে কাপড়গুলো গুজে দিয়ে দরজার দিকে এগুতে লাগলো৷ হাঁটা পা থামিয়ে আড় চোখে চেয়ে ওর লজ্জা দেখে বললো,

—- এতো লজ্জা পেতে হবে না। এগুলো পড়ে ডাকবি আমায় আমি দরজার বাইরেই আছি।

ইমন চলে যেতেই মুসকান দুরুদুরু বুকে ব্লাউজপেটিকোট পড়ে নেয়। কিন্তু পিছনের ফিতা লাগাতে পারেনা। শাড়িটা গায়ে জরিয়ে দরজার দিকে ওকি দিতেই ইমন ভূবন ভুলানো এক হাসি দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। তারপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে শাড়িটা ছিনিয়ে নেওয়ার মতো করে নিজের হাতে নেয়। মুসকান হাত দিয়ে টেনে ধরে বলে,

—- পুরোটা নিও না৷

—- আরে আজব পুরোটা না নিলে শাড়ি পড়াবো কি করে? ভয় নেই তোর ঐ কইঞ্চার মতো শরীরে নজর দেবো না আমি। নজর কাড়া ফিগার আছে নাকি তোর যে এতো ভয় পাচ্ছিস?

মুখটা গোমড়া করে ফেললো মুসকান৷ ইমন নিজের মতো করে শাড়ি পড়াতে শুরু করলো। পুরো শাড়ি পড়িয়ে আঁচল দিতে গিয়ে কি যেনো মনে করে পুরো শাড়িটা আবার খুলে ফেললো। মুসকান চমকে তাকালো ইমনের দিকে। আর ইমন তাঁকে এপাশ-ওপাশ করে ঘোরাতে শুরু করলো৷ কি যেনো খুঁজছে সে। মুসকান অস্থির হয়ে বললো,

—- কি হয়েছে?

—- তিল খুঁজছি।

—- কিসের তিল?

—- দু’টো পেয়েছি আরেকটা কোথায় সেটাই খুঁজছি। বলেই পিছন দিক ঘুরিয়ে পিঠ চেক দিলো। তারপর সামনে ঘুরিয়ে যেই চেক দিতে যাবে মুসকান আঁতকে ওঠে পিছিয়ে যায়। ইমন স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মুসকানের দিকে। তারপর নিজেই লজ্জিত হয়ে যায় ভীষণ। ইদানীং বড্ড বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে সে। মুসকানকে সামনে পেলে মাথা ঠিক থাকেনা তাঁর। হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে সরি বলে আবারো শাড়ি পড়িয়ে দেয়। আঁচল তুলে দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে স্থির হয়ে চেয়ে থাকে সে। কে বলে এই মেয়েটা বাচ্চা? এই তো কতো বড় বড় লাগছে। মুগ্ধ হয়ে অপলক ভাবে চেয়ে শান্ত গলায় বলে ওঠে ‘মুগ্ধময়ী’।

মুসকান লজ্জা পেয়ে চোখ সড়িয়ে নেয়। ইমন তাঁর কপালে শীতল স্পর্শ একে দিয়ে হাত চেপে ধরে ধীরে ধীরে নিয়ে যায় নিচে। সিঁড়ি বেয়ে নামছে মুসকান আর ইমন। ইমনের একহাতে মুসকানের হাত ধরা আরেক হাতে মুসকানের কাঁধ ধরা। নিচ থেকে ইরাবতী এ দৃশ্য দেখে বলেন,

—-‘মাশাল্লাহ খুব সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে’।

শেষ সিঁড়ি তে পা রাখার সাথে সাথে কানে ভেসে এলো,

—– মুসু???

ইমন মুসকান দুজনই চমকে তাকালো সামনের দিকে। মুরাদকে দেখে মুসকান ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো। আর ইমন এক ঢোক গিলে খুব শক্ত করে চেপে ধরলো মুসকানের হাত। ছাড়লেই মুসকানকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে ভাবটা এমন।
.
আজ ইমনের জন্মদিন প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন অথচ মুরাদ তাঁকে উইশ করবে না তা কখনো হয়? স্কুল থেকে টিফিন পিরিয়ডে বেরিয়েছে প্রিয় বন্ধুর সাথে দেখা করবে বলে। কিন্তু এসে এমন কিছুর সম্মুখীন হবে ভাবতেও পারেনি। রাগ যতোটা পড়ে গেছিলো তাঁর থেকেও হাজারগুন বেড়ে গেলো। তাঁর অগোচরে কলিজার বোন, কলিজার বন্ধু এতো বড় কাজ করছে? এভাবে বার বার ঠকাচ্ছে ইমন তাঁকে? বন্ধু দিচ্ছে না বন্ধুত্বের মূল্য, বোন দিচ্ছে না ভাইয়ের মূল্য। ফিকে হয়ে যাচ্ছে ভাইবোনের মধুর সম্পর্ক। ফিকে হয়ে যাচ্ছে এতো বছরের বন্ধুত্ব। আর কিছু ভাবতে পারছে না মুরাদ। দুহাত মুঠ করে বললো,

—- বাড়ি চল।

কথাটা শোনামাএই ইমন আরো শক্ত করে চেপে ধরলো মুসকানের হাত। ইরাবতী দ্রুত মুরাদের কাছে গিয়ে মুরাদের কাঁধে ধরে বললো,

—- বাবা মাথা গরম করো না। শান্ত হয়ে বসো সব বুঝিয়ে বলছি। আজ ইমনের জন্মদিন তাই,,,

—- বাড়ি চল মুসু।

মুসকান ইমনের থেকে হাত সরাতে নিতেই ইমন কঠিন চোখে তাকালো মুসকানের দিকে। মুসকান ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। ইমন বললো,

—- আজ না তুই যাবি না মুসু যাবে একটা বিহিত করেই আজ তোরা ভাই বোন বাড়ি যাবি।

—- আমার কসম মুসু তুই আমার সাথে বাড়ি চল। আজ আমি দেখতে চাই তোর কাছে কে বড় আমি না ইমন? বলেই ইরাবতীর হাত সড়িয়ে দিয়ে মুসকানের দিকে এগিয়ে যায় মুরাদ।

ইমনের হাত থেকে খুব জোর খাটিয়ে মুসকানের হাত সরাতে নেয়৷ কিন্তু পারে না৷ মুসকানের চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তেই থাকে। মুরাদ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় ইমনের দিকে। ইমনও রক্তিম চোখে চেয়ে রয়। ছাড়তে না চাইতেই মুরাদের চেষ্টা দেখে ছেড়ে দেয় ইমন। বন্ধুর চেষ্টা বৃথা যেতে দেয় না। শুধু শান্ত গলায় বলে,

—- মা রান্না করেছে দুজন খেয়ে যা।

মুরাদ তাচ্ছিল্যের চাহনী চেয়ে মুসকানকে হির হির করে টানতে টানতে নিয়ে যায়। দু হাত মুঠ করে রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে দেখে মুসকানের চলে যাওয়া। মুসকানের অবিরত কান্না বিধ্বস্ত মুখ দেখে চোখ বুজে ফেলে সে। মুসকান সদর দরজা অবদি গিয়ে ইমনের দিকে ঘুরে তাকায় একবার। তাঁর সে চাহনী দেখে হাটুগেড়ে বসে পড়ে ইমন৷ দুহাত দুদিকে দিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে,

—- ও কেনো বুঝতে চাইছে না? কেনো বুঝতে পারছেনা ও আমি ওর বোনকে ভালোবাসি, পাগলের মতো ভালোবাসি আমি ওর বোনকে। কেমন ভাই ও? কেমন বন্ধু ও? একসাথে বন্ধু আর বোনকে আঘাত করতে ওর বুক কাঁপে না? আজ যদি ওর জায়গায় অন্য কেউ হতো মেরে পুঁতে দিতাম আমি। বলেই দুহাতে মুখ ঢেকে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

চলবে….

হৃদপিন্ড_২
জান্নাতুল নাঈমা
পার্ট_১৫

সাত দিন যাবৎ দিন রাত এক করে বুঝিয়ে যাচ্ছে মুরাদ মুসকান কে। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না৷ খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা কথা বলা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে মেয়েটা। তাঁর আচরণেই পরিলক্ষিত হচ্ছে তাঁর ম্যাচিওরিটির অভাব। নয়তো এভাবে এতোটা কেউ ভেঙে পড়ে?

মুসকানের শারীরিক, মানসিক দু অবস্থা দেখেই তাঁর মা মরিয়ম আক্তার ক্ষেপে গেলেন। ছেলের জেদের জন্য মেয়েটা দিন দিন এভাবে শেষ হয়ে যাবে আর মা হয়ে সে চুপচাপ নিরব দর্শক হয়ে দেখে যাবে? কখনোই না৷ অল্প ভাত নিয়ে মুসকানের সামনে বসে আছে মরিয়ম আক্তার। মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত মেখে কিছুটা মাংস নিয়ে মেয়ের মুখে দিলেন। অনিহা নিয়ে খাবারটা মুখে পুড়ে নিলো মুসকান। একগাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখ, মুখ দেখে মনে হবে কতো অসহায়, হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান সে। অথচ তাঁর এই করুন অবস্থার জন্য দায়ী দু বন্ধু। তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর ভাই আরেকজন তাঁর ভালোবাসার মানুষ। দু লোকমা ভাত খেতেই গা গুলিয়ে বমি করে দিলো মুসকান। মরিয়ম আক্তারের দুচোখ ভরে এলো৷ এভাবে চলতে থাকলে এই মেয়েকে যে বাঁচানো সম্ভব হবে না৷ মা হয়ে সন্তান কে এভাবে প্রতিনিয়ত নিঃশ্বেষ হতে দেখা যে আর কুলোয় না।
.
মুরাদ স্কুলে চলে গেছে ভাসুরও বাড়িতে নেই। রিমি আর নিলুফা ছাড়া আর কেউ নেই। তাই ভাবলো ইমনকে ফোন করে বাড়ি আসতে বললে কেমন হয়?ভাবা মাএই মেয়ের সামনে ফোন করলো ইমনকে। ভাগ্য ভালো আজ ইমনের অফিস নেই৷ সে নিজের রুমে বসে কিসব কাগজপএ ঘাটাঘাটি করছে। সে সময়ই বেজে ওঠলো ফোন। স্ক্রিনে মরিয়ম আক্তারের নাম্বার দেখেই চমকে গেলো সে। দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। হৃদপিন্ড যেনো ধাপড়া-ধাপড়ি শুরু করে দিয়েছে। কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে ফোন রিসিভ করলো। গলাটা এমনভাবে শুকিয়ে গেছে যে হ্যালোটুকুও বের করতে পারলো না। তাঁর কিছু বলার অপেক্ষায় না থেকেই মরিয়ম আক্তার আদেশের সুরে বললেন,

—– আব্বা তুমি যদি ফ্রি থাকো ব্যাস্ততায় না থাকো এখনি এসে আমার আম্মাকে সামলাবে। আমার আম্মার যদি কিছু হয় আমি কিন্তু কোনদিন তোমাকে ক্ষমা করবো না। আমার ছেলে না হয় পাগল, অবুঝ তুমি তো তেমন না আব্বা তাহলে তুমি কেনো আমার আম্মা কে এতোটা ভোগাচ্ছো?

উত্তেজনায় হাত কাঁপছে ইমনের সেই সাথে বুকের ভিতর শুরু হয়েছে উথাল-পাতাল। “মুসকান কি করছে? কি এমন হয়েছে যে এভাবে সামলাতে বলছে? মারাত্মক কিছু করে বসেনিতো? না তা কি করে করবে তা হলে কি কাকিমা এতোটা স্বাভাবিক হয়ে কথা বলতো”? নানারকম চিন্তার মাঝে ফোন কেটে দিলো ইমন৷ দ্রুত সব কিছু গুছিয়ে রেখে পড়নের কাপড় পাল্টে ঘড়ি,ফোন, ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
.
জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে মুসকান। তাঁর সামনে চেয়ারে বসে আছে ইমন। মরিয়ম আক্তার রান্না বসিয়েছেন এতো দিন পর ইমন এসেছে। তাঁর বাবা এসেছে না খাওয়িয়ে কোন মতেই যেতে দেবে না। রিমিকে দিয়ে কফি পাঠিয়ে দিলেন। এদিকে ইমন চুপ হয়ে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে মুসকানের দিকে৷ ভয়ে ভয়ে একটু করে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেললো মুসকান৷ ইমন একইভাবে চেয়েই আছে। গলা শুকিয়ে গেছে, বুকের ভিতর ধড়ফড় ধড়ফড় করছে মুসকানের৷ যে মানুষ টাকে কাছে পাওয়ার জন্য এতো উতলা ছিলো এ কটা দিন। যাকে এক নজর দেখার জন্য বুকটা খাঁ খাঁ করছিলো সেই মানুষ টার থেকেই এখন পালাতে ইচ্ছে করছে। ইমন চোখ দিয়ে যেনো শত শাসন করছে আর মুসকান ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দুজনের অমন শোচনীয় অবস্থায় রিমি ঢুকলো রুমে৷ ইমনকে কফি দিতেই সে গম্ভীর কন্ঠে বললো খাবেনা। রিমি জোর করতে গিয়েও থমকে গেলো। ইমনের চোখ জোরা দেখে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেলো তাঁর। মুসকানের দিকে এক পলক চেয়ে জোর পূর্বক হেসে দ্রুত রুম ছেড়ে বেড়িয়ে বুকে দুটো ফুঁ দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে গেলো রান্না ঘরে।

রিমির যাওয়ার পরই ইমন বসা থেকে ওঠে দরজাটা ঠাশ করে লাগিয়ে দিলো। দরজার শব্দে কেঁপে ওঠলো মুসকান৷ ভয়ে এবার তাঁর চোখ উপচে পানি বের হতে লাগলো। ইমন বিছানায় গিয়ে বসলো। মুসকান নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নিলো। তা দেখে ইমন আরেকটু সড়লো মুসকানের দিকে। মুসকানও আরেকটু সড়ে গেলো৷ মিনমিন করে বললো,

—– আমি আম্মুর কাছে যাবো।

—– কেনো আমার কাছে আসার জন্য এতো কাহিনী করলি এখন কাছে এসেছি তো এখন আম্মু আম্মু করছিস কেনো?

হুহু করে কেঁদে ওঠলো মুসকান৷ ভাঙা আওয়াজে বললো,

—– বিশ্বাস করো নানাভাই আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি পারিনি। আমার গলা দিয়ে খাবার নামে নি। আমার কোন কিছুতে মন বসেনি। শুধু কান্না পেয়েছে। দাদাভাই যখনি ওসব বলতো তখনি আমার ভয় হতো কান্না পেতো। আমি কিছুতেই মন বসাতে পারিনা। রাতেও দুঃস্বপ্ন দেখি। প্রতিটা স্বপ্নেই হয় তুমি হারিয়ে যাও আমার থেকে নয়তো আমি হারিয়ে যাই তোমার থেকে। আমি পারছিনা আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি এসব আর নিতে পারছিনা। বলেই হেচকি তুলে কাঁদতে শুরু করলো মুসকান।

রাগ অনেকটাই পড়ে গেলো ইমনের। এমন মুখের এমন বানীতে কি করে রেগে থাকবে সে? কিন্তু এ দৃশ্যও তো সহ্য করা যায় না৷ কতোটা রোগা হয়ে গেছে মেয়েটা৷ আবার চোখ ফাটিয়ে কাঁদছেও কান্না দেখে আবারো মেজাজ বিগরে গেলো এক ধমক দিয়ে বললো,

—– চুপপ। একদম কাঁদবি না। প্রেমিকা হয়ে গেছিস মহাপ্রেমিকা? নিজেকে কি মজনুর লায়লি মনে করছিস? কতো বার বলেছি তোকে ছয় দিন আগে গভীর রাতে এতো কষ্ট করে গেট টপকে এসে দেখা করে গেলাম৷ পই পই করে বলে গেলাম নিজের যত্ন নিবি। অন্তত খাবারটা ঠিকভাবে খাবি। আমি ঠিক সময় তোকে আমার কাছে নিয়ে যাবো একটুকু ধৈর্য্য নেই?

মুসকানের কান্না দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। ইমন আরেক ধমক দিয়ে বললো,

—– তুই থামবি নাকি কানের নিচে লাগাবো কয়টা?

মুসকান চুপ হয়ে অবুঝ চোখে তাকালো। ওর অমন চাহনী দেখে রাগ পড়ে গেলো ইমনের মুখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,

—– কানের নিচে তো তোর আকর্ষণীয় একটা তিল আছে যা আমাকে মারাত্মক ভাবে ঘায়েল করছে। ওখানে কি হাত লাগাবো নাকি ঠোঁট লাগাবো বল তো?

মুসকান লজ্জায় নিজেকে গুটিয়ে নিলো। ইমন বললো,

—– দেখ মুসু একদম এমন আচরণ করবি না। সারাদিন কাজের চাপে থাকি। তারওপর তোর হিটলার ভাই তোর সাথে দেখা করার সব সহজ পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তুই ও না খেয়ে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছিস৷ এতো চাপের মাঝেও তোর জন্য প্রতিটা রাত কতোটা ছটফট করি সে আমি আর ওপরওয়ালাই জানি। একদম আমার সাথে অভিমান দেখাবি না৷ সব দোষ তোর ভাইয়ের আমার কোন দোষ নেই।

মুসকান নিশ্চুপ। ইমন মোহময় চোখে চেয়ে মুসকানকের ডান হাত নিজের হাতে মাঝে নিলো। হাতের উল্টোপিঠে কিস করে বললো,

—– এতো অবুঝ কেনো তুই? আমার কথাগুলো মেনে চল সব ঠিক হয়ে যাবে। মুরাদ যাই বোঝাক তুই শুধু শুনবি। এসব নিয়ে কোন প্রকার চিন্তা করবি না। আমি আছি তো আমি থাকতে তোর এতো চিন্তা কিসের? তুই শুধু নিজের যত্ন নে। আমাকেও ভালোবাসতে হবে না মুসু আমাকে ভালোবাসার অনেক সময় পাবি শুধু নিজেকে সময় দে। আমার ভালোবাসা কে আর কষ্ট দিস না।

মুসকান বোকার মতো চেয়েই রইলো। ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওকে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো। কপালে আলতো স্পর্শ ছুঁইয়ে দিয়ে আগাগোড়া ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো,

—– অনেক শুকিয়ে গেছিস মুসু৷ শরীরে এক টুকরো মাংস পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। এটুকু মেয়ে হয়ে আমাকে ভালোবাসার সাহস দেখিয়েছিস। শুধু ভালোবাসার সাহস দেখালেই তো চলবে না মুসু। আরো অনেক সাহসী হতে হবে৷ নিজেকে ইমন চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। সারাজীবন ইমন চৌধুরীকে সামলাতে হবে তোর। কিন্তু তুই যা করছিস এতে তো আমি ভরসা পাচ্ছি না৷

—– কি করেছি আমি? আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো তোমার জন্য কষ্ট পাচ্ছি।

—– না খেয়ে দেয়ে কঙ্কাল হয়ে গেলেই সেটাকে ভালোবাসা বলে না মুসু৷

—– তুমি আমাকে কঙ্কাল বললে? তুমি আমার ভালোবাসা না দেখে আমার শরীর দেখছো? বলেই অভিমানে দূরে সরে যেতে চাইলো মুসকান।

ইমন তাঁকে জোর করে নিজের দিকে ফেরালো। রাগি গলায় বললো,

—– অযথা রাগবি না একদম। আমি শরীর দেখছি না। শরীর দেখলে তোর মতো চুনোপুঁটিকে আমি ভালোবাসতাম?

—– আমি চুনোপুঁটি? ছাড়ো আমাকে আমি থাকবো না তোমার কাছে৷ কেঁদে দিয়ে বললো মুসকান।

ইমন জোর করে বুকে জরিয়ে নিয়ে বললো,

—– আরে আরে শুধু রেগে যায়। পুরো কথাটা তো শোন।

—– শুনবো না আমি, ছাড়ো।

—– মুসু শান্ত হো দেখ দেখ আমার বুকের ভিতর কেমন বাজনা বাজছে তুই চুপ করে শোন আর আমি তোকে বোঝাই।

মুসকান চুপ হয়ে গেলো৷ ইমনের বুকে গভীরভাবে মাথাটা রাখলো সে। ইমন মৃদু হেসে মুসকানের এক হাত নিজের একহাতের মুঠোয় নিয়ে আদুরে গলায় বোঝাতে লাগলো,

—– দেখ আমি কতো বড়সড় মানুষ। আমার হাতও দেখ তোর দুটো হাতের সমান৷ দেখেছিস দেখ এই মাপ দিলাম দেখ প্রমাণ সহ দেখিয়ে দিলাম৷ এই হাত আর বড় হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। তোর হাইটও বাড়ার নিশ্চয়তা নেই। তবে যা আছে আমার চলবে নো প্রবলেম। কিন্তু ধর তুই এমন পাঠকাঠির মতোই রয়ে গেলি৷ বিয়ের পর কোন কিছু নিয়ে আমার মেজাজ খারাপ হলো। রেগে শক্ত করে একটা থাপ্পড় দিলে তোর গালের হাড়গোড় তো ভেঙে যাবে এখানে তো এক টুকরো মাংসও নেই। বলেই গালে স্পর্শ করলো। মুসকান চমকে তাকালো ইমনের দিকে।

ইমন আবার তাঁর হাত চেপে ধরে বলতেই থাকলো।

—– কোনদিন এই হাত শক্ত করে চেপে ধরলেই তো ভেঙে যাবেরে।

মুসকান ফুঁপিয়ে ওঠলো। বললো,

—– তুমি আমাকে বিয়ে করে এতো মারবে নানাভাই?

—– অবশ্যই কেনো নয়? নানাভাই নানাভাই করে প্রতিনিয়ত আমাকে বুড়ো উপাধি দেওয়ার শাস্তি না দিয়ে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো?

ফোঁপানির শব্দ বেড়ে গেলো এবার। ইমন মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

—– আচ্ছা ওসব না হয় বাদ। একটু আদর করতে গেলেও তো তুই বিছানার সাথে মিশে যাবি মুসু।

মুসকান কিছু বললো না ইমন পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে বললো,

—– আমি যেনো এরপর তোকে এরূপে না দেখি। তাহলে ভয়ংকর কিছু ঘটে যাবে। শরীরের এই হাল দেখলে আর বিয়ে করতে মন চায় না আমার। বলেই পিঠে হাত বুলালো ইমন।

মুসকান সরে গিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,

—– তুমি আমাকে ভালোবাসো না। তুমি এমন করে কেনো বলছো? তুমি জানোনা ভালোবাসলে মন দেখে ভালোবাসতে হয় শরীর নয়।

—– ও তাই নাকি জানতাম না তো তুই মন দেখে ভালোবেসেছিস তাহলে?

—– তা নয় তো কি? তুমি অনেক সুন্দর কিন্তু তোমার মতো সুন্দর সুন্দর ছেলে তো আরো আছে কই আমিতো তাদের ভালোবাসিনি। তুমি ইয়া বড় মানুষ আমি চাইলেই তো পারতাম আমার সমান সমান কাউকে ভালোবাসতে কই বাসিনিতো।

—– না তুই চাইলে পারতি না৷ বাহুতে শক্ত করে চেপে কথাটা বললো ইমন।

মুসকান ভয়ে এক ঢোক গিলে বললো,

—– সত্যি সত্যি না বোঝাচ্ছিলাম।

ইমন এক আঙুলে মুসকানের ঠোঁট চেপে ধরে বললো,

—– কিছু বোঝাতে হবে না। আমি ছাড়া কাউকে নিয়ে ভাববিনা মুসু। আমি ছাড়া তোর মনের দুয়ারে কাউকে কখনো ঠাই দিবিনা ওকে?

—– হুম। মাথা নাড়ালো মুসকান।

ইমন মুসকানের ঠোঁটের দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,

—– চোখ বন্ধ কর।

মুসকান চোখ তুলে তাকালো ইমনের চোখের দিকে। ইমন ইশারা করল চোখ বুজতে। মুসকান চোখ বুজলো তবে তাঁর চোখের পাপড়িগুলো অনবরত কাঁপছে। ইমন মৃদু হেসে এগিয়ে গেলো তাঁর ঠোঁটের দিকে। ইমনের মুখের গরম শ্বাস মুসকানের মুখে পড়তেই ওর শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন হয়ে এলো দুরুদুরু বুকে মুখ সড়িয়ে ফেললো সে। ইমনের খুব ইচ্ছে করছে একটুখানি ছুঁয়ে দিতে কিন্তু মুসকান তাঁর সে ইচ্ছে পূরণ করবে না৷ করলেও সেটা হবে এক পাক্ষিক চোখ বুজে ফেললো সেও৷ কয়েকদফা ঘন শ্বাস ছেড়ে সিদ্ধান্ত নিলো সরে যাবে। কিছু ইচ্ছে দমিয়ে রাখাই ভালো। আবারো চোখ খুলতেই দেখলো মুসকান ঘাড় ঘুরিয়ে ঘনঘন শ্বাস ছাড়ছে। ঘাড়ে থাকা তিলটাও চোখ এড়ালো না তাঁর। আচমকাই মুসকান কে টেনে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো সে।
.
দরজায় শব্দ হতেই ইমন মুসকান কে ছেড়ে দিলো ইমন৷ মুসকানের শরীরের তীব্র কম্পন ইমনের বুকের ভিতর তীরের মতো আঘাত করছে। এ আঘাতের যন্ত্রণা কতোখানি তীক্ষ্ণ তা শুধু সেই জানে। দ্রুত মুসকানের ওড়না ঠিক করে দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে ফিসফিস করে বললো,

—– রিল্যাক্স কিছু হয়নি। স্বাভাবিক রাখ নিজেকে। বলেই ওঠে গিয়ে দরজা খুললো।

—– ভাইয়া মুসকান কে নিয়ে খেতে আসুন আম্মা ডাকছে। বললো রিমি।

—– ওকে দুমিনিটে আসছি।
_________________
অনেক দিন পর পেট ভরে ভাত খেলো মুসকান৷ সামনে বসিয়ে ইমন মুসকানকে মন ভরে খাওয়িয়েছে মরিয়ম আক্তার। খাওয়া শেষে সবেই ওঠেছে ইমন৷ তখনি ঝড়ের গতিতে বসার ঘরে ঢুকে ইমনের কলার চেপে ধরলো মুরাদ। মা,বোন, স্ত্রীর সামনে বিশ্রি একটা গালি দিয়ে বললো,

—– কোন সাহসে আমার বাড়িতে ঢুকেছিস তুই৷ বেরিয়ে যা আর এক সেকেন্ডও যেনো এখানে না দেখি।

ইমন এবার তাঁর আসল রূপে ফিরে এলো। কয়েক মূহুর্তের জন্য ভুলে গেলো তাঁর সামনে মরিয়ম আক্তার আর মুসকান রয়েছে৷ তাঁর এরূপে মুসকানের মনে তাঁর জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে তা একবারের জন্যও ভাবলো না। মুরাদের কলার চেপে মেঝেতে শুইয়িয়ে হিংস্র জন্তুর মতো গর্জন করে বলে ওঠলো,

—– বোন কে দিয়ে দে এ বাড়ির ত্রিসীমানায় ইমন চৌধুরী কেনো তাঁর বাড়ির কাজের লোকও কোনদিন পা ফেলবে না। বলেই মুখ বরাবর দিলো এক ঘুষি।

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here