হৃদপিন্ড_২,পার্ট_১২,১৩

হৃদপিন্ড_২,পার্ট_১২,১৩
জান্নাতুল নাঈমা
পার্ট_১২

সময় খুব দ্রুতই চলে গেলো। চলে এলো বিয়ের দিন। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধবে ভরপুর। ভোর রাতেই গরু জবাই করা হয়৷ মাংস কাটতে গিয়ে বা হাতের আঙুলে আঘাত লাগে ইমনের৷ মুরাদ তাঁকে রুমে নিয়ে এসে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে চলে যায়। ইমন কিছুক্ষণ রেষ্ট নিবে তাই রিমির বড় বোন রুমাকে বলে এক কাপ কফি দিতে। সকলেই কাজে ব্যাস্ত রুমা কফি বানিয়ে মুসকানকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। মুসকান কফি নিয়ে রুমে যেতেই দেখে ইমন চোখ বুজে একহাত কপালে ঠেকিয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছে। হাতের ব্যান্ডেজ দেখে কান্না পেলো তাঁর। মুখটা কাঁদো কাঁদো করেই কাছে গিয়ে পাশে বসলো৷ ধীর আওয়াজে বললো,
—- তোমার কফি।
ইমন চোখ মেলে তাকালো। এই মিষ্টি কন্ঠস্বর,এই মিষ্টি মুখটারই অপেক্ষা করছিলো সে। মুচকি হেসে ওঠে বসলো। পলকহীন ভাবে চেয়ে জিগ্যেস করলো,
—- তুই বানিয়েছিস?
মুসকান মাথা বামে-ডানে ঘুরিয়ে না করলো। ইমন তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে কফির মগ নিয়ে বললো,
—- চা,কফিটা অন্তত শিখতে পারিস? আর কিছু না হলেও এই দুটো তো আমি তোর হাতেই খাবো।
মুসকান মাথা নিচু করে বললো,
—- আচ্ছা।
—- কি আচ্ছা শিখবি নাকি?
—- হুম।
—- একদম না। এই বয়সে এটা না শিখলেও দোষের কিছু নেই৷ আরো দু,এক বছর পর এসব শিখে নিবি। এখন শিখতে গেলে হাত,পা পুড়াবি আর দোষ হবে আমার৷
মুসকান গোমড়ামুখে বললো,
—- এখনিতো বললে শিখতে আবার এ কথা বলছো কেনো?
ইমন কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বললো,
—- কই এটা বলেছি নাকি? না তুই ভুল শুনেছিস। আমি বলেছি দু এক বছর পর শিখতে পারিস।
মুসকান বোকা চোখে চেয়ে রইলো। ইমন মিটিমিটি হাসছে আর কফি খাচ্ছে। কফি শেষ করতেই মুসকান চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইমন বললো,
—- তুই কি আমার আঘাতের স্থান টা দেখিসনি মুসু?
মুসকান টলমল চোখে তাকালো বললো,
—- দেখেছি৷ কিন্তু সময় নিয়ে তাকাইনি আমার ভয় লাগে।
—- তাহলে আমার আঘাতে তোর খারাপ লাগেনি তাইতো?
মুসকান চুপ হয়ে চেয়েই রইলো। ইমন হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
—- একটা চুমুতো খেতেই পারিস। প্রেমিকার চুম্বনে প্রেমিকের মরণ ব্যাধিও সেড়ে যায় তা কি তুই জানিস না?
হাত থেকে কফির মগ টা ফস করে পড়ে গেলো। যার ফলে আরো বেশীই কাঁপছে মুসকান। ইমন তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ধমকে বললো,
—- চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। যা বলছি এখনি যা। এতো ছোট আত্মার মানুষ যেনো আমার সামনে আর এক সেকেন্ডও না থাকে৷
মুসকান হতভম্ব হয়ে পিছন ঘুরতেই ইমন আবারো ধমকে ওঠলো,
—- ঐ এটা কে নেবে? তোর কলিজা এতো ছোট জানলে তোর চুমু চাওয়া তো দূরের কথা নিজেও চুমু খেতাম না।
মুসকান নিচু হয়ে মগটা কুড়িয়ে নিয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে ছুঁড়ে ফেললো মগটা। রাগে গটগট করতে করতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। সামনে রাগ খাটাতে পারেনি বলে রাগটা ইমনের আড়ালেই খাটালো৷ একেতো তাঁকে লজ্জা দিয়েছে তারওপর ধমক দিয়ে অপমান করে রুম থেকে বের করে দিয়েছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তাঁর। রান্নাঘরে মরিয়ম আক্তার মেয়েকে বকা দিচ্ছেন। সারাদিনে একটা কাজও করেনা মেহমানকে কফি দিতে বলেছে বলে এতো রাগ দেখানোর কি আছে বুঝলেন না তিনি৷ তাই কয়েকটা বকা দিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন ৷
.
দুপুর গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। মুসকান, মুসকানের বান্ধবী আর মামাতো, খালাতো ভাই বোনরা মিলে বাসর সাজাচ্ছে। বিয়ে পড়ানো হয়েছে আধাঘন্টা আগেই। মুরাদের বন্ধু,বান্ধব রা মিলে বসার রুমে আড্ডা দিচ্ছে। রিমিও তাঁদের সাথেই রয়েছে। ইমন অনেক সময় ধরে মুসকানকে দেখেনি। তাই সবার থেকে সরে গিয়ে যে ঘরে বাসর সাজানো হচ্ছে সে ঘরে গেলো। গিয়ে দেখলো সবাই মিলে খুব হৈচৈ করছে। মুসকানও প্রচুর মজায় আছে ওদের সাথে। কি সুন্দর, মিষ্টি হাসি মেয়েটার, কি সুন্দর করে সবার সাথে কথা বলছে অথচ তাঁর সামনে এলেই চুপসে যায় কেমন। মাথা চুলকে মিটিমিটি হাসতে লাগলো দরজার পাশে দাঁড়িয়ে। মুসকান কথার ফাঁকে দরজায় তাকাতেই ইমনকে দেখতে পায়। ইমন ইশারা করে বাইরে আসতে। মুসকান এক ঢোক গিলে ধীরস্থিরভাবে বিছানা থেকে নেমে বাইরে যেতেই ইমন মুসকানের হাতটা চেপে ধরে ছাদে নিয়ে যায়।
.
মুসকান যখন রুম থেকে বের হয় পিছন পিছন তাঁর খালাতো ভাই শাওনও বের হয়। শাওন এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছে। মুরাদ সহ মুরাদের সকল ভাই, বোনরাই প্রচন্ড রাগি সেই সাথে কাজিনদের ব্যাপারেও ব্যাপক সিরিয়াস। ইমনের সাথে ওভাবে মুসকানকে দেখে অবাক হয় সে। সেই সাথে সন্দেহও হয়। কারন তাঁর নানি মারা যাওয়ার পরেরদিনই মারুফের বন্ধুর সাথে মারিয়ার সম্পর্কের কথা ফাঁস হয়েছে। অনেক ঝামেলাও হয়েছে এ নিয়ে। একি কাহিনী কি মুরাদ ভাইয়ের বন্ধুও করছে? আর মুসকান? ও তো অনেকটাই ছোট মারিয়ার থেকেও ছোট ও ওর সাথে ইমন ভাইয়ের মতো একজন মানুষ সম্পর্কে জরাবে? নিজের সন্দেহ সঠিক না ভুল? তা বুঝার জন্যই সে চুপিচুপি চলে যায় ছাদে।

ছাদের দরজার পাশেই দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুসকান৷ ইমন তাঁকে ওটা সেটা প্রশ্ন করছে সে শুধু হুম,না করে উত্তর দিচ্ছে। ইমন এক ধ্যানে চেয়ে আছে মুসকানের লজ্জামিশ্রিত মুখটার দিকে। বুড়ো আঙুল দিয়ে মুসকানের ঠোঁটের কোনার তিলটায় হাত বুলাচ্ছে আলতো ভাবে। দরজার চিপা দিয়ে শাওন দেখার চেষ্টা করছে ঘটনাটা আসলে কি? ইমনের কন্ঠস্বর কানে এলেও স্পষ্ট বুঝতে পারছেনা। রাতের বেলা ছাদে লাইট অন থাকে বলে এটুকু দেখতে পাচ্ছে যে ওরা কি করে? যতোটা বুঝার বুঝে গেছে সে। তারপরও শেষটা দেখার অপেক্ষায় তারপর এদের শায়েস্তা করবে। ভালো মানুষীর আড়ালে আসল ইমনটাকে টেনো হিঁচড়ে বের করবে আজ শাওন।

মুসকানের চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে কপালে আলতো স্পর্শ করলো ইমন। তারপর পকেট থেকে দুটো গোলাপ বের করে একটা মুসকানের হাতে দিলো। আরেকটা মুসকানের বেনুনীর ভিতর গুঁজে দিলো। মুসকান গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে সে৷ ইচ্ছে করছে ছুটে পালাতে। কিন্তু সামনের মানুষ টার অবাধ্য হয়ে এক পা নড়ার শক্তিও তাঁর নেই।

ইমন কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—- সেদিনেরটা রিটার্ন হয়ে যাক? কাঁদবি না প্লিজ।
মুসকানের বুকটা ধক করে ওঠলো। পুরো শরীর তাঁর মৃদু কেঁপে ওঠলো। চোখ বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকলো সে। ইমন তাঁর দুগালে, কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মুসকানের হাত আপনাআপনিই চলে গেলো ইমনের বুকে, পিঠে। মৃদু হাসলো ইমন। ইচ্ছে করছিলো আরো কাছে নিতে ভেসে যেতে অন্য এক দুনিয়ায় কিন্তু সে আর এগোলো না। দুহাতে শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিয়ে বললো,
—- এতো নরম কেনো তুই? প্লিজ শান্ত হো কিছু করবোনা এমনি বলেছি। সেদিনতো ভুল করে হয়ে গেছে বার বার কি আমি ভুল করবো নাকি? এই শুধু জরিয়ে ধরবো একটু বলেই বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চুলে নাক ঘষতে লাগলো।

দুজনই যখন একে অপরের সাথে মিশে রয়েছে। দুজনেরই যখন শ্বাস-প্রশ্বাস মিলে, মিশে একাকার ঠিক সে সময়ই মুরাদ ইমনের শার্টে চেপে ধরে একটানে সড়িয়ে বিশ্রি একটা গালি দিলো। আচমকাই এমন কিছু হওয়াতে ইমন কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু মুরাদ যখন মুসকানের গায়ে হাত তুললো মাথায় রক্ত চড়ে গেলো তাঁর। ইমন মুরাদের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে অগ্নি চক্ষুতে চেয়ে রাগান্বিত গলায় বললো,
—- তোর সাহস কি করে হয় ওর গায়ে হাত তোলার?
—- তোর সাহস কি করে হয় আমার বোনকে নোংরা ভাবে স্পর্শ করার?
—- মুখ সামলে কথা বল মুরাদ। তুই না জেনে না বুঝে রিয়্যাক্ট করতে পারিস না।
—- কি বুঝাবি তুই কি বুঝাবি? বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক।
দু বন্ধুর মধ্যে মারামারি লেগে গেলো। একজন অপরজনকে সমান তালে ঘুষি দিয়েই যাচ্ছে। মুসকান ভয়ে গুটিশুটি হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। শাওন ওদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ওদের দুজনের শক্তির কাছে সে যেনো সামান্য পিঁপড়া মাএ।
একপর্যায়ে ইমনকে নিচে ফেলে মুরাদ তাঁর উপরে ওঠে কলার চেপে ধরে বললো,
—- তুই আমার কলিজার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কোথায় পেলি?
ইমনও তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে মুরাদকে নিচে ফেলে কলার চেপে ধরে বললো,
—- তুই আমাকে কোন প্রশ্ন করতে পারবিনা। না জেনে, না বুঝে তুই আমার হৃদপিন্ডে আঘাত করেছিস।
একিভাবে মুরাদ আবার ইমনকে নিচে ফেলে চিৎকার করে বললো,
—- আমার কলিজার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস কে দিলো তোকে?
—- ইমন চৌধুরীকে সাহস দিতে হয়না।
—- মুসু আমার কলিজা। কি করে পারলি তুই?
—-মুসু আমার হৃদপিন্ড। একিভাবে মুরাদকে নিচে ফেলে চিৎকার করে কথাটা বললো ইমন।
—- খুন করে ফেলবো আমার বোনের দিকে হাত বাড়ালে।
—- তোর বোনকে আমি ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই।
—– মরে গেলেও ওকে পাবিনা তুই। বললো মুরাদ৷
সাথে সাথে ইমন একের পর এক ঘুষি দিতে লাগলো। মুসকান কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে বললো,
—- আমার দাদাভাইকে মেরোনা। বলেই নিচে বসে পড়লো।
ইমন ছেড়ে দিলো মুরাদকে মুরাদ সাথে সাথে ওঠে গিয়ে মুসকান কে কোলে তুলে নিলো। ঘাড় বাঁকিয়ে ইমনের দিকে চেয়ে হিংস্র গলায় বললো,
—- তোকে আমি ছাড়বোনা।
ইমন শার্টের কলার ঠিক করতে করতে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—- আর আমি তোর বোনকে।
_________________________
পুরো বাড়িতে থমথমে পরিবেশ। গতকাল রাতেই মুরাদের বাড়ি থেকে শুরু করে চৌধুরী বাড়িতেও খবর পৌঁছে গেছে। ইমন মুরাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সকলের সামনে জোর গলায় বলে এসেছে মুসকান যদি তাঁকে চায় তাহলে পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই ইমন চৌধুরী কে আটকানোর।

সকাল থেকে মুসকান কিছু মুখে দেয়নি। মুরাদ বাদে সকলেই এসেছে তাঁর কাছে। কেউ তাঁকে খাওয়াতে পারেনি৷ সব রাগ, অভিমান দূরে ঠেলে অবশেষে মুরাদই আসে খাবার নিয়ে। ভাত মেখে মুখের সামনে খাবার দিতেই মুসকান ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। মুরাদের চোখও ঝাপসা হয়ে আসে। বোনের দুগালে দশআঙুলের ছাপ দেখে তাঁর বুকটা হুহু করে ওঠে। একদিকে প্রিয় বন্ধুর করা বিশ্বাসঘাতকতা, বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ অন্যদিকে বোনকে করা আঘাত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাঁকে। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে পরম স্নেহে বোনকে খাওয়িয়ে দিলো সে। তারপর অনেকটা সময় মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝালো যাতে এসবে মনোযোগ না দেয়। ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে বলে এও বললো, রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেব। ইমনের থেকেও হাজারগুন ভালো হবে সেই ছেলে৷ ইমন তো কদিন পর বুড়ো হয়ে যাবে। আমার বোনের বুড়ো বর কেনো হবে?

মুরাদ যতোই তাঁকে ভুলানোর চেষ্টা করছে মুসকান ততোই কান্নায় ভেঙে পড়ছে। একসময় ব্যার্থ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মুরাদ। মরিয়ম আক্তার মুরাদকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বলে,
—- দেখ মুরাদ তুই বাড়াবাড়ি করছিস। কাল ছেলে টাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলি। ওরা যদি একজন আরেকজনকে পছন্দ করেই থাকে এতে দোষের কি আছে? হ্যাঁ ইমনের বয়সটা মুসুর থেকে বেশী তাই বলে এতোটাও না যে এদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যাবে না। ভুলে যাসনা তোর বাবা যখন আমাকে বিয়ে করে আনে তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম আর তোর বাবা স্কুল মাস্টার ছিলো। একটা ছেলের নিজের পায়ে দাঁড়াতেই পঁচিশ, ছাব্বিশ বছর লেগে যায়। উচ্চশিক্ষিত হয়ে উচ্চপদে চাকুরি নিতে গেলেও আটাশ,ঊনএিশ বছর বয়স হয়ে যায়। প্রত্যেক মেয়ের বাবা-মাই চায় উচ্চশিক্ষিত কর্মঠ ছেলেকে মেয়ের জামাই করতে। সেভাবে বিবেচনা করে দেখলে আমি কোন সমস্যা দেখছিনা। তাছাড়া এরকম অহরহ আছে যারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্কুল পড়ুয়া মেয়ে বিয়ে করে। তাঁরা কিন্তু অনার্স,মাস্টার্স পাশ করা মেয়ে বিয়ে করেনা। কিন্তু তাঁদের এটাই করা উচিত অথচ তাঁরা কমবয়সীদের দিকে নজর দেয়। বিয়ে করে তাঁরাও সংসার করে।
সেখানে ইমন, মুসু যদি দুজন দুজনকে চায়। আমরা কেনো চাপ প্রয়োগ করবো?

মুরাদ রেগে চলে যেতে নিতেই মরিয়ম আক্তার হাত টেনে ধরে কঠিন গলায় বলে,
—- ইমন যথেষ্ট ভালো একটা ছেলে। উচ্চশিক্ষিত, উচ্চপদে চাকরি করে। চারিএিক দিক দিয়েও কোন সমস্যা নেই। ওর পরিবারে,ওর কাছে আমার মেয়ে সুখীই হবে। আমাদের তো ভাগ্য ভালো এমন একটা ছেলে আমাদের মেয়েকে পছন্দ করে। তাছাড়া এখনি তো বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে না। ওরা যদি একে অপরের পছন্দ করেই থাকে করুক না সমস্যা কোথায় । তুই কেনো বন্ধুত্ব নষ্ট করবি? কেনোই বা বোনের মন থেকে ইমনকে সড়ানোর চেষ্টা করবি? আর সত্যি বলতে ইমনের থেকে মুসুই হয়তো বেশী চায়। আমিতো মা ছোট থেকেই মেয়েটা ওর জন্য পাগল। দেখিস নাই কোন মেয়ে ইমনের ধারে,কাছে আসতে দেখলেই কেমন ক্ষেপে যেতো। তুই বিষয়টা কঠিন না করে সহজ ভাবে মেনে নে বাবা। আর যাই হোক বন্ধুত্ব নষ্ট করিস না।
.
মরিয়ম আক্তারের বোঝানোতে লাভ হয়নি। মুরাদ সেই এক কথায় রয়েছে ইমন তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আর যাইহোক কোন বিশ্বাসঘাতকের কাছে সে বোন দেবেনা। মুসকানকে পুরো ঘর বন্দী করে রেখেছে মুরাদ। না স্কুলে, না প্রাইভেটে কোথাও যেতে দিচ্ছে না। এর মধ্যে একদিন রিমির ফোন দিয়ে ইমনের সাথে কথা বলতে শুনেছিলো মুসকানকে। ফলশ্রুতিতে রিমির ফোন ইউজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। মায়ের ফোনের সিম খুলে নিয়েছে। মোট কথা ইমন, মুসকানের যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ।

চলবে…

হৃদপিন্ড_২
জান্নাতুল নাঈমা
পার্ট_১৩

গতকদিনে একদম পাগল হয়ে গেছে ইমন৷ কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা সে। অফিস থেকে ফিরেছে রাত এগারোটায় ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়েছিলো। কিন্তু ঘুম তাঁর চোখে ধরা দেয়নি। দেবে কি করে? তাঁর মন যে খুবই তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। এই তৃষ্ণা মেটানো খুবই দুষ্কর। মুরাদের নাম্বারে ডায়াল করলো কিন্তু কল গেলোনা। যাবে কি করে সেদিনের পর থেকে মুরাদের ফোনে ইমনের নাম্বার গুলো ব্ল্যাকলিষ্টে রয়েছে। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তাঁর। দিহানকে ফোন করে এক নাগাড়ে চিল্লাতে শুরু করলো। দিহান ফোনের স্পিকার বাড়িয়ে সেই চিল্লানো শুনালো সায়রীকে। বেশ অনেকটা সময় পর সায়রী স্বান্তনা দিলো ইমনকে। ইমন স্বান্তনায় ভোলার পাএ নয়। তাই সায়রীকে বকা দিয়ে ফোন কেটে দিলো।

ছেলের চিল্লানো ঠিক ইরাবতী আর আকরাম চৌধুরীর কানে পৌঁছায়। আকরাম চৌধুরী দরজায় নক করতেই ইমন দরজা খুলে দেয়। ইরাবতী ভয়ে আর রুমে ঢুকেনি। আকরাম চৌধুরী রুমে গিয়ে ছেলেকে বোঝাতে লাগলেন। বোঝানোটা অবশ্যই ইমন মুসকানের ভালোবাসার বিপক্ষে ছিলো যার ফলে আরো রেগে যায় ইমন। হাতে থাকা ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে। চোখ,মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে তাঁর। এমন রূপে ছেলেকে দেখে ভড়কে যায় আকরাম চৌধুরী। সচরাচর ছেলেকে রাগতে দেখা যায় না। আর যখন রেগে যায় তখন তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়৷

নিচে নামতেই ডায়নিং টেবিলে যা পায় সব ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে। টেবিলে দুটো থাবা দিয়ে বলে,

—- নেক্সট টাইম কেউ আমার থেকে মুসুকে আলাদা হওয়ার কথা বললে আমি ভুলে যাবো তাঁর সাথে আমার কোন সম্পর্ক আছে।

ইরাবতী ছেলের রূপ দেখে আঁচলে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করে। ইমন আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না বাড়ির বাইরে গিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মুরাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
রাত বারোটা বাজে প্রায়। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো ইমন৷ পরপর তিনটা সিগারেট শেষ করে গেট টপকিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। মেইন দরজায় ঠকঠক আওয়াজ করার কথা ভাবলেও করলো না। মুসকানের রুমের জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে কয়েক দফা ভারী শ্বাস নিলো আর ছাড়লো।
জানালায় কয়েকবার ঠকঠক আওয়াজও করলো। কিন্তু কোন লাভ হলোনা।

চারদিকে মৃদু বাতাস বইছে ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে হয়তো শুরু হবে ঝড়। সেই ঝড় কি তাঁর মনে বয়ে চলা ঝড়ের থেকেও প্রবল হবে?

অনেকটা সময় ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো ইমন। একটি দেয়ালের ব্যবধান শুধু তাঁর আর মুসকানের মাঝে। যদি কোন ম্যাজিক হতো আর এই দেয়ালটা বিলীন হয়ে যেতো, যদি এক পলকে দেখতে পেতো তাঁর হৃদপিন্ডটাকে। একটুখানি ছুঁয়ে দিতো তাঁর প্রাণপাখিটাকে খুব কি ক্ষতি হয়ে যেতো?

বিদ্যুৎ চকমকানো তে আম্মু বলে কেঁদে ওঠে মুসকান। কেঁপে ওঠে ইমন। গলার স্বর উঁচু করে বলে,

—- মুসু ভয় পাস না আমি আছি জানালা খোল দেখ আমি দাঁড়িয়ে আছি কিছু হবে না।

ইমনের কন্ঠ শুনতেই দ্বিগুন ভয় পেয়ে যায় মুসকান। ভূত ভূত বলে আরো চেঁচিয়ে ওঠে। ইমন মৃদু ধমকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

—- চুপপ কোন ভূত নেই আমি এসেছি আমি তোর ঢংয়ের নানাভাই।

—- আম্মু,,,বলেই মুসকান কেঁদে ওঠে। রেগে যায় ইমন। রাগান্বিত গলায়ই বলে,

—- দেখ মুসু তোর জন্য যদি এখন তোর কষাই ভাই এসে আমাকে তাড়িয়ে দেয়। আর আমি তোকে এক পলক দেখতে না পেয়েই চলে যাই তাহলে তুই আর তোর ভাই আগামীকাল সকাল আর দেখতে পারবিনা বলে দিলাম। দু’ভাইবোন মিলে আমাকে একদম ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিস। নিজে আর কতো ক্ষতবিক্ষত হবো এর থেকে বরং তোদের ওপারে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও ওপারে চলে যাই।

মুসকানের আর বুঝতে বাকি রইলো না সত্যি ইমন এসেছে। খুশিতে কেঁদে ফেললো সে। উত্তেজনায় হাত কাঁপছে তাঁর। দ্রুত জানালা খুলে দিলো। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দুহাত ঢুকিয়ে দিয়ে মুসকানের দুহাত শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন। মুসকান কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেললো। ইমন চোখ রাঙিয়ে বললো,

—- কাঁদবি না একদম। কেনো কাঁদছিস? তোর ঐ হিটলার ভাইয়ের কতো দম আছে আমি দেখে ছাড়বো। আমার বউটা বাচ্চা তুলে নিয়ে গেলে মা, ভাইদের জন্য কান্নাকাটি করবে বলে ওকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি নয়তো বুঝিয়ে দিতাম আমি কি জিনিস।

মুসকান কেঁদেই চলেছে ইমন মুখ এগিয়ে মুসকানের দুহাতে একের পর এক চুমু খাচ্ছে। নিজের এক হাত বাড়িয়ে মুসকানের চোখের পানিও মুছে দিলো। আদুরে গলায় বললো,

—- এতো কাঁদছিস কেনো? এই দেখ আমি কতো আদর করছি।

আবারো বিদ্যুৎ চমকালো মুসকান মৃদু চিৎকার দিয়ে ইমনের হাত খামচে ধরলো। ইমনও তাঁর দুহাত শক্ত করে চেপে ধরলো। চারদিকে বাতাসের বেগ বেড়ে গিয়ে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। পুরো শরীর ভিজে শরীরের সাথে শার্ট লোপ্টে গেছে ইমনের। মুসকান ভাঙা আওয়াজে বললো,

—- তুমিতো ভিজে যাচ্ছো।

—- হুম তো কি বলতে চাচ্ছিস? চলে যেতে বলছিস? কতোদিন পর তোকে পেয়েছি হিসেব করেছিস? একদম কথা বলবিনা চুপ করে বসে থাক। ভিতরে যেহেতু ঢুকতে দিবিনা সেহেতু বাইরেই থাকতে দে।

—- আমি কি দরজা খুলবো?

—- না একদম না তোর স্বাদের ভাই তো এখনো জেগেই আছে মেবি। টের পেলে অযথা লাফালাফি করবে। আপাতত আমি রিল্যাক্স মুডে আছি বলেই মুসকানের হাতের পিঠে চুমু খেলো।

—- না না কেউ জেগে নেই আমি দরজা খুলি? ফিসফিস করে বললো মুসকান।

—- উহুম মুরাদ জেগে আছে।

—-না নেই৷

—- জেদ করছিস কেনো? নব দম্পতিরা এতো আগো ঘুমায় নাকি? তোর ভাই তো লুইচ্চার মহারাজা বউকে এতো আগেই ছাড়বে নাকি?

মুসকান তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। তা দেখে মৃদু হাসলো ইমন।

—- আমার দাদাভাই কে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবে না বলে দিলাম।

—- আজেবাজে কথা কোথায় বললাম যা সত্যি তাই তো বললাম৷

—- ছাড়ো আমি দরজা খুলবো। আমি জানি সবাই ঘুমিয়ে আছে কেউ জেগে নেই।

—- ওকে তাহলে আজ কিন্তু আমি তোর সাথে ঘুমাবো। যেভাবে খুশি সেভাবে আদর দিবো।

লজ্জায় চুপসে গেলো মুসকান৷ আর টু শব্দটিও করলো না সে। ইমন মুখে দুষ্টু হাসি একে বললো,

—- মুরাদ আর রিমি এখন কি করছে জানিস?

চোখ বন্ধ করে ফেললো মুসকান৷ হাত ছুটাতে নিতে চাইলেই আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন। বললো,

—- আরে শোন শোন তোর ভাই কতো ভালো এটা শুনলেই বুঝতে পারবি।

—- আমি কিছু শুনবো না৷ মিনমিন করে বললো মুসকান।

—- এ বাবা মুসু তুই লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? আর শুনতেই বা চাচ্ছিস না কেনো? আমি কি বাজে কিছু বলছি নাকি? নাকি তুই অন্যভাবে নিচ্ছিস বিষয়টা। তুই তো দেখি বড্ড পেকে গেছিস সব বুঝিস?

ইমনের দুষ্টুমিতে রাগ হলো মুসকানের। এতো লজ্জা কেনো দিচ্ছে ইমন? কেনোই বা এভাবে কথার জালে ফাঁসাচ্ছে? গায়ের শক্তি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে সরে যেতে নিতেই ইমন চট করে হাত বাড়িয়ে ওড়না টেনে ধরলো৷ বৃষ্টির পানিতে অর্ধেক বিছানা ভিজেই গেছে। মুসকানের ওড়না একটানে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাইরে নিয়ে এলো। মুখ হাত মুছে ওড়নাটা মাথায় চাপিয়ে নিলো। ওড়না বিহীন মুসকান তো লজ্জায় আরো ইমনের সামনে যেতে পারছেনা। এমন সময়ই কারেন্ট চলে গেলো৷ সাথে সাথে মুসকান ভয়ে জানালার কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দিলো। ইমনও মুচকি হেসে হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। এতোক্ষণ ইমন মুসকানকে দেখতে পেলেও এখন আর দেখতে পারছেনা৷ একে অপরের উপস্থিতি, স্পর্শ অনুভব করছে শুধু।
.
প্রায় দুঘন্টা বৃষ্টি তে ভিজেছে ইমন। সেই সাথে পুরো দু’ঘন্টা মুসকানের সাথে সময়ও কাটিয়েছে। মুসকান তাঁকে জানিয়েছে আগামীকাল স্কুলে যাবে। আগামীকাল অফিসও নেই ইমনের তাই কথা দিয়েছে টিফিন পিরিয়ডে দেখা করতে যাবে। কিন্তু ভোরের দিকেই গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হয় ইমনের। সারাদিন বিছানা ছেড়ে ওঠতেও পারেনা সে। জ্বরের ঘোরে অচৈতন্য রয়েছে সে৷ দুপুরের দিকে ডাক্তার আসে বাড়িতে। একটা ইনজেকশন পুশ করে দিয়ে বেশ কিছু মেডিসিনও দেয়।

এদিকে মুসকান ইমনের অপেক্ষা করতে করতে অস্থির হয়ে গেছে। তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের অস্থিরতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ইমন তাঁকে কথা দিয়েছিলো আসবে অথচ আসেনি। বিষয়টা সহজ ভাবে হজম করতে পারলো না মুসকান৷ টিফিন পিরিয়ড শেষ হতে আর মাএ পাঁচমিনিট। মুসকান দৌড়ে সায়রীর কাছে যায়। একা একপাশে ডেকে নিয়ে অসহায় চোখ,মুখ করে বলে,

—- আপু নানাভাইকে একবার ফোন দেবে?

—- কি বলছিস মুসু মুরাদ জানতে পারলে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবে আমাদের।

—- তুমি না বললেই তো জানবেনা শুধু এক মিনিট কথা বলবো প্লিজ আপু তোমার পায়ে পড়ি।

সায়রী না করতে পারলো না৷ একদিকে ইমন একদিকে মুরাদ এদিকে বাচ্চা মেয়েটার অসহায় মুখ টা। ইমন,মুরাদকে গুরুত্ব না দিলেও মুসকানের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে বাঁধ্য হলো সায়রী। এতে করে যে ভয়ংকর ঘটনাটা ঘটলো তা কি করে সামাল দেবে সায়রী?

ইমনের ফোন রিসিভ করে ইরাবতী। ইমনের অসুস্থতার খবর শুনে ফোন ফেলে ক্লাসে গিয়ে নিজের ব্যাগটা নিয়েই দৌড়ে চলে যায় স্কুলের বাইরে। সাথে সাথেই অটো পেয়ে অটোতে ওঠে চলে যায় মুসকান। সায়রী তাঁর পিছন দৌড়ে এসে এতো করে ডাকলেও সে আর থামে না। এমন ভয়াবহ অবস্থায় জীবনে পড়েনি সায়রী৷ দ্রুত ইমনের নাম্বারে ডায়াল করে সে। জানতে পারে ইমনের ভীষণ জ্বর। এ কথা শুনেই মুসকান অমন উন্মাদের মতো ছুটে গেলো। যে মেয়েটা একা স্কুল,প্রাইভেটে যায় না সে মেয়েটা আজ কতো সাহস দেখিয়ে কিভাবে চোখের পলকে চলে গেলো। ভাবতেই গা শিউরে ওঠলো সায়রীর। ছুটির পর মুরাদ এসে যদি মুসকান কে না পায় তাহলে কি ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে হবে তাঁকে ভাবতেই মাথাটা এক চক্কর দিয়ে গেলো তাঁর।
.
চৌধুরী বাড়িতে ঢুকেই সোজা ইমনের রুমে চলে গেলো মুসকান। ইমনকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় দেখে নানাভাই বলেই ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো। ইরাবতী মুসকানকে দেখে অবাক হলোনা। কারণ সে কিভাবে এসেছে সবটা সায়রীর থেকে শুনেছে। এতদিন ছেলের পাগলামি দেখে কেঁদেছে সে কিন্তু আজ মুসকানের পাগলামি দেখে শান্তি লাগছে। কারণ এদের এই পাগলামিই এদেরকে এক করার জন্য যথেষ্ট।
.
অচৈতন্য অবস্থায়ই মুসকানকে আঁকড়ে ধরলো ইমন। মুসকান কেঁদেই চলেছে৷ ইরাবতী মুসকানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

—- কেঁদো না মামনি এই জলপট্টি টা ওর মাথায় দাও ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে জ্বর কমে যাবে।

মুসকান জলপট্টি হাতে নিলো কিন্তু কিভাবে দেবে ইমন তো তাঁর কোলে মুখ গুঁজে রয়েছে। ইরাবতীর সামনে লজ্জা পেলেও ইমনের অসুস্থতা কে বেশী গুরুত্ব দিয়ে স্বাভাবিক রয়েছে মুসকান। ইরাবতী বুঝলো এভাবে জলপট্রি দেওয়া যাবেনা। তাই মুসকানকে বললো ইমনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। ওদের একা রেখেই ইরাবতী রুম ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
নিজ রুমে গিয়ে স্বামীকে সবটা জানায় আর বলে,

—- যেখানে ওরা দুজন দুজনে জন্য এতোটা পাগল সেখানে শুধু মুরাদের জন্য আমরা থেমে থাকতে পারি না৷ তুমি আজি মুরাদের চাচার সাথে কথা বলবে।

আকরাম চৌধুরী মেজাজ দেখিয়ে বলে,

—- মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমারও। আমার একটা সম্মান আছে ইমনের মা সেটা তুমি ভুলে যেতে পারোনা। আমার ছেলের মাথা খারাপ হয়েছে বলে বউ এর মাথা খারাপ হয়েছে বলে আমার তো মাথা খারাপ হয়নি তাইনা? এডিউকেটেড একটা ছেলে হয়ে কি করে এসব মাথায় আনতে পারে সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা। এই মেয়েটা না হয় বাচ্চা তোমার ছেলে তো বাচ্চা নয়৷ এখনো সময় আছে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে বলো আর মেয়েটাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দাও। পাগল হয়েছি আমি আমার ছেলের জন্য ঐ বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো? তাও যদি হতো মেয়েটার বয়স সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমার ছেলের জন্য সুন্দরী, উচ্চশিক্ষিত,উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে আনবো আমি।

—- তুমি বোধহয় ভুলে গেছো তোমার ছেলে ঠিক কি? এসব কথা তোমার ছেলের কানে দিয়ে পুএ হারা হবার শখ না জাগলে মুখ টা বন্ধ রাখো।
_____________________
প্রায় একঘন্টা পর ইমনের হুঁশ ফেরে। নড়েচড়ে বুঝতে পারে ছোট ছোট দুটিহাত তাঁর চুলগুলো নিয়ে খেলা করছে। ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ তাঁর কানে বাড়ি খায়৷ চোখ বুজে দু’হাতে মুসকানকে টেনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে জাবটে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

—- আই লাভ ইউ মাই লিটল ওয়াইফ।

—- উফফ মরে গেলাম আমি ছাড়ো৷

—- উহুম ছাড়বোনা সারাজীবনের জন্য রেখে দিব আমার কাছে। তোর ঐ হিটলার ভাই নিতে এলেও ছাড়বোনা৷ মেরে বস্তা বন্দি করে ভ্যানগাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিব তোর মায়ের কাছে তবুও তোকে ছাড়বো না৷ বলেই গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। তখনি সায়রী রুমে ঢুকে চেঁচিয়ে ওঠে,

—- এসব কি হচ্ছে ইমন? বাচ্চা মেয়েটাকে একা পেয়ে এভাবে সুযোগ নিচ্ছিস?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here