একা_তারা_গুনতে_নেই — লামইয়া চৌধুরী। পর্বঃ ১০

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ১০
দীপা সময় নিয়ে চুড়ি পরা শেষ করল। তারপর কপালে টিপ দিতে দিতে বলল, “আমার বিয়ে হচ্ছে।”
নিলয় দ্রুত পায়ে এসে ইমাদের পাশে বসল। চিন্তিত গলায় দীপাকে বলল, “তোর মাথা ঠিক আছে?”
“বিয়ের বয়সে বিয়ে না হলে মাথা কী আর ঠিক থাকে বন্ধু?”
দীপা টুল ছেড়ে উঠে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখল। সে কলা পাতা রঙের সিল্কের একটা শাড়ি পরেছে। বন্ধুদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “দেখ ত কেমন লাগছে? পছন্দ করবে না আমায়?”
ইমাদ চোখ মেলে সোজা হয়ে বসে দীপার দিকে মুখ তুলে তাকাল, “ছেলেটা কে?”
“কড়ির ভাই। কড়ি ত সুন্দর। ওর ভাইও দেখতে ভালোই হবে, তাইনা বল?”
নিলয় বলল, “কড়ির ভাই তা তো আমরাও জানি।”
ইমাদ প্রশ্ন করল, “কেন বিয়ে করছিস তুই?”
“ডার্টি আনসার আসছে মাইন্ডে। ডোন্ট আস্ক মি ব্রো।”
নিলয় বলল, “ফাইজলামি রাখ তোর। কী হয়েছে কেন এসব করছিস প্লিজ খুলে বল। তোকে আমরা চিনি না? কেন বিয়েতে রাজি হয়েছিস এখনি বলবি তুই। তাহমিদের বেলায় কিছু শুনিস নি, বলিসনি। এবার সে কাজটা করিস না দয়া করে। আমাকে আর ইমাদকে সব বল।”
দীপা শাড়ির আঁচলটা পেছন দিয়ে টেনে এনে মুখের সামনে বাতাস করতে করতে বলল, “উফ এত নার্ভাস লাগছে! আমাকে যদি পছন্দ না হয়? যদি রিজেক্ট করে দেয়? ডান চোখের আই লাইনার আর বাম চোখেরটা মেলেনি তাইনা? চোখ একটা ছোট, একটা বড় লাগছে। উফ।”
দীপা আবার ড্রেসিংটেবিল এর কাছে গিয়ে আয়না দেখে দেখে টিস্যুতে আই লাইনার তুলছে।
ইমাদ আয়না দিয়ে দীপার দিকে তাকাল, “টিপ ঠিক মত বসেনি।”
দীপা টিপ খুলে নতুন করে পড়ে বলল, “ঠিক আছে না?”
“হুম।”
“সুন্দর দেখাচ্ছে?”
নিলয় বলল, “পেত্নীর মত লাগছে।”
দীপার মুখ থেকে অস্ফুটে আর্তনাদ বেরিয়ে এল, “আসলেই? কী করব? খোঁপা খুলব? লিপস্টিকটা মুছে ফেলব?”
নিলয় ধমকে উঠে হাত দেখাল, “এক থাপ্পরে তোর সব দাঁত ফেলে দিব। বল এসবের পেছনের মোটিভ কী?”
দীপা বলল, “ধুর! এখন জ্বালাস না তো। এমনিতেই টেনশনে আছি।”
দীপা নতুন করে আর সাজবার আর সুযোগ পেল না। ওকে দেখতে মেহমানরা চলে এল। দীপার মা দীপাকে শক্ত করে বলে দিলো, “দোহাই লাগে কথা কম বলবি তুই। আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাবি না। যা জানতে চাইবে শর্টকাটে আনসার দিবি।”
“ওকে ডান।”
কাদিনের সাথে তার পুরো পরিবার এসেছে। দীপার পরিবারের তুলনায় কাদিনদের পরিবার বেশ বড়। দীপার বাবা নেই। মা আর ছোট ভাই ব্যস। দীপার মা ওদের নাশতা দিয়ে বসালেন। এরপর দীপাকে নিয়ে যেতে এলেন। দীপা মহা দুশ্চিন্তা নিয়ে প্রশ্ন করল, “ঘোমটা দিলে ভালো নাকি না দিলে?”
“কী আশ্চর্য! ঘোমটা দিবি না?”
“ঘোমটা দিলে ক্ষ্যাত বলবে না ত? আজকাল কেউ ঘোমটা টেনে যায় নাকি?”
তিনি একটু ভেবে বললেন, “আচ্ছা, তাহলে দিস না।”
“কিন্তু ঘোমটা না দিলে ত বউ বউ লাগবে না।”
“এখন কিন্তু মার খাবি।”
দীপা শেষ পর্যন্ত ঘোমটা ছাড়াই মায়ের সাথে চলল। ড্রয়িংরুমে গিয়ে দীপা বিভ্রান্ত হয়ে গেল। পাত্র কোনটা? তিনজন একাধারে বসে আছে। ও কড়ির দিকে তাকাল। কড়ি দুই আঙুল তুলে দেখাল। তার মানে মাঝের জন। দীপা আরেকটা সোফায় গিয়ে বসল।
.
মুবিন আজ স্কুলে যায়নি। তাই মিলা একাই স্কুলে গেল। ছুটির পর বাসায় ফিরে এসে অবাক হয়ে গেল। তার ঘরের পাখাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই নতুন পাখা কিনে আনা হয়েছে। কিন্তু সে পাখা তার ঘরে লাগানো হয়নি। মুবিনের ঘরের পুরাতন পাখাটা খুলে এনে তার ঘরে ফিট করা হয়েছে। আর নতুন পাখাটা মুবিনের ঘরে লাগান হচ্ছে। মিলা হতভম্ব হয়ে তাকাল। মিস্ত্রি ঠিকঠাক পাখা লাগাচ্ছে কিনা শিল্পী মুবিনের ঘরে দাঁড়িয়ে তদারকি করছে। মিলা ছুটে নিজের ঘরে চলে গেল। দরজা বন্ধ করে কাঁধ থেকে স্কুল ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলল। চুলের ফিতা, রাবার ব্যান্ড খুলেও ছুঁড়ে ফেলল এখানে সেখানে। বেণুণী খুলে হাত দিয়ে মাথার চুল যত পারল এলোমেলো করল, দু’হাতে টেনে ছেড়বার চেষ্টাও করল। উঠে গিয়ে পাখার সুইচ বন্ধ করে দিলো। পাখার গতি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে, যা বাড়ছে তা হলো অবহেলা।
.
রিমা অনেকক্ষণ দীপাকে এটাসেটা জিজ্ঞাসা করল। এরপর দীপার মাকে বলল, “আন্টি কিছু মনে না করলে কাদিন আর ও আলাদা একটু কথা বলুক?”
দীপার মা সম্মতি দিলেন, “অবশ্যই, অবশ্যই।”
দীপার ভাই দীপাকে আর কাদিনকে আলাদা ঘরে দিয়ে চলে গেল। ইতোমধ্যে দীপাকে কাদিনের মন্দ লাগেনি। হালকা – পাতলা গড়নের ছিমছাম চেহারার মেয়ে। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা তবে হাসিটা ভালো। হাসলে দাঁতের মাড়িগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। চেহারায় মিষ্টি মিষ্টি একটা ভাব চলে আসে। রিমা আপুর সাথে যখন হেসে হেসে কথা বলছিল তখন ভালোই লাগছিল। এখন ঝটপট মেয়েকে কিছু প্রশ্ন করে ফেলা দরকার।
কাদিন গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বলল, “ভালো আছেন?”
“জি। আপনি?”
পাল্টা প্রশ্ন করে দীপার মনে হলো প্রশ্নটা না করাই ভালো ছিল। মা পইপই করে কম কথা বলতে বলে দিয়েছিলেন।
কাদিন উত্তর দিলো, “জি ভালো। আপনার কোনো প্রশ্ন আছে?”
একটা প্রশ্ন করতে দীপার পেটটা মোচড় দিয়ে উঠল, কিন্তু এই প্রশ্ন করেছে জানলে মা ওকে ঝাড়ুপেটা করবে। প্রশ্নটা হলো, “আপনি কোন পারফিউম ইউজ করেন? গন্ধটা ভালো। এটা কী দেশে আছে? থাকলে আমার ভাইকে কিনে দিব। গাধাটা কী একটা পারফিউম যে দেয় গন্ধে মাথা ভোঁ ভোঁ করে।”
মনের বিরুদ্ধে গিয়ে দীপা না – বোধক মাথা নাড়ল। কাদিন প্যান্টের দু পকেটে দু হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “আপনি কিছু মনে না করলে আমি কি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি?”
“জি।”
“আপনি বসুন না, বসুন।”
“না ঠিক আছে।”
“যৌথ পরিবার নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাইছি। মানে যৌথ পরিবারে কোনো অস্বস্তি আছে কি?”
“কোনো অস্বস্তি নেই।”
শুনে কাদিন উপর নীচ মাথা নাড়ল। খানিক থেমে জানতে চাইল, “এই আয়োজনে আপনার মত আছে? আপনার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু হচ্ছে না তো?”
“না, আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু হচ্ছে না।”
“আমি যদি এ ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলি আপনার কি তাতে কোনো আপত্তি থাকবে?”
দীপা মনে মনে বলল, “মানুষটাতো সেই বোরিং! পৃথিবীতে এত ধরনের প্রশ্ন থাকতে তিনি বেছে বেছে কীসব প্রশ্ন করছেন! যাচ্ছে তাই একটা!”
মুখে বলল, “না।”
“আচ্ছা। ভালো থাকবেন। আসছি।”
কাদিন ঘুরে বেরিয়ে আসছিল। দীপা হঠাৎ বলে বসল, “আপনার আবার কথায় কথায় আচ্ছা বলার অভ্যাস নেই তো?”
কথাটা বলেই সে জিহ্ব কাটল। উফ শেষ পর্যন্ত নিজের কথার উপর সে আর নিয়ন্ত্রন রাখতে পারেনি। কী লাভ হলো এত কষ্ট করে! সব ঐ ইমিটার দোষ। আচ্ছা শুনেই মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে গেছে। কাদিন দরজার নব ধরে রেখেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল, “না, সে অভ্যাস নেই।”
তারপর দরজা খুলে চলে গেল। দীপা নিজের ঘরে গিয়ে ইমাদের উপর চড়াও হলো, “তোর জন্য সব গোলমাল হয়ে গেছে। তোর জন্যে, শুধু তোর জন্যে।”
ইমাদ আর নিলয় কিছুই বুঝল না। দীপা মুখ ভোঁতা করে বসে রইল। ওরা কতবার কত প্রশ্ন করল কোনো উত্তরই দিলো না সে। কাদিনরা চলে গেল। হ্যাঁ, না কিছুই বলল না। দীপাকে শুধু উপহারসরূপ কিছু বই দিয়ে গেল। দীপার মন খারাপ। শেষ প্রশ্নটা কেন করল সে? ধ্যাত!
চলবে…
★অটোগ্রাফ সহ আমার ২য় বই “যে শ্রাবণে ফাগুন” এর প্রি-অর্ডার চলছে….
★প্রি- অর্ডার লিঙ্কঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=882805749142024&id=100022378217757
ফোনে অর্ডার করুন- ১৬২৯৭ এই নাম্বারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here