সূর্যোদয় #পর্ব_১২ #কারিমা_দিলশাদ

#সূর্যোদয়
#পর্ব_১২
#কারিমা_দিলশাদ

জয় ঐশীর নাম শুনেই স্মৃতিকে প্রশ্ন করে।

“ ঐশীকে কোথায় পেলি আবার?”

“ আজকে রিতু আন্টিদের বাসায় গিয়েছিলাম না, সেখানে। ”

“ ওনি রিতু আন্টিদের বাসায় কি করছিল?”

“ ওমা মৃধা আর অথৈ আয়ানকে পড়ায় না। তুই কি জানতি না? আর তুই বা এতকিছু কেন জানতে চাইছিস?”- জয়ের একের পর এক প্রশ্নে স্মৃতি এবার কিছুটা বিরক্তি নিয়েই উত্তর দেয়। আর জয় স্মৃতির এমন ত্যাড়া জবাবে বিরক্ত প্লাস বিব্রতবোধও করে মায়ের সামনে এভাবে বলায়। তবে জয় সেটা চাপা দিতে বলে,

“ এতকিছু কই আর জানতে চাইলাম। আর ওনি ওখানে পড়ায় তা মনে ছিল না আমার। আর তাছাড়া ওইদিনই না ওনি বললো ডান্স ক্লাস শুরু করেছে, তাই এখন ছেড়েও তো দিতে পারে। আর ওনার কথা তুইই তো বললি। আমি খালি একটু কৌতুহল থেকে জানতে চাইলাম আরকি। দ্যাটস ইট।”

জয় আর স্মৃতির কথার মাঝেই ইলোরা ইয়াসমিন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলে,

“ কিসের ডান্স ক্লাস?”

স্মৃতিই এবার চটপট জবাব দেয়,

“ জানো আম্মু ঐশী আপু না দারুণ নাচে। উফফফ। আমি আপুর একটা নাচের ভিডিও দেখেছি। এত্তো যে সুন্দর করে নাচে। তার একটা ডান্স ক্লাসও আছে। কয়েকমাস হলো শুরু করেছে। বেশ ভালো চলেও।”

স্মৃতির কথায় ইলোরা ইয়াসমিন ভাবে ‘ বাহ্ মেয়েটার এই গুণও আছে দেখি!’ – ইলোরা ইয়াসমিন নিজের অজান্তেই কথাটা জোরে বলে ফেলেন। ইলোরা ইয়াসমিনের কথায় স্মৃতি বলে,

“ হ্যা আম্মু। আমার তো খুব ইচ্ছে হয় আপুর কাছে নাচ শিখতে। ”

“ না থাক। এখন এসব শিখতে হবে না। পড়াশোনায় ফোকাস করো। এসব পরে হবে নি।”- ইলোরা ইয়াসমিনের কথায় স্মৃতি মন খারাপ করে ফেলে।

এরপর তাদের মাঝে আর কোনো কথা হয় নি। সবাই চুপচাপ খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়।

————————

খেয়ে দেয়ে পড়তে বসেছিল স্মৃতি এর মধ্যে জয় আসে তার রুমে নক করে। হাতে এক বাটি আইসক্রিম। জয় এসে আরেকটা চেয়ার নিয়ে স্মৃতির পাশে বসে আইসক্রিমের বাটিটা ওর দিকে এগিয়ে দেয়। স্মৃতি আইসক্রিমের বাটিটা রীতিমতো লুফে নিয়ে খেতে থাকে। আর জয় স্মৃতির টেবিলে থাকা একটা কিউব নিয়ে ঘুরাতে থাকে।

একপর্যায়ে জয় কিউব ঘুরাতে ঘুরাতে স্মৃতির দিকে আড়চোখে চেয়ে বলে,

“ তা আজ দিন কেমন কাটলো?”

“ ভালো।”- স্মৃতির সহজ উত্তর।

“ রিতু আন্টিদের বাসায় গিয়ে কি কি করলি?”

“ তেমন কিছুই না গল্প করলাম, আড্ডা দিলাম, খেলাম দেলাম আর চলে এলাম।”

“ আর ঐশীর সাথে কি কথা হলো?”

এবার স্মৃতি খাওয়া থামিয়ে ভাইয়ের দিকে চাইলো। যে এখন খুব মনযোগ দিয়ে কিউব মিলানোতে ব্যস্ত। যেন কিউব থেকে নজর সরালে দুনিয়া উল্টেপাল্টে যাবে।

“ এটাই কি ছিল মূল কথা? বাই এনি চান্স তুই কি এই আইসক্রিম আমাকে ঘু*ষ হিসেবে দিলি?”

স্মৃতির বাঁকা নজরের তী’ক্ষ্ণ কথায় জয় এবার ভড়কে যায়। সে আমতা আমতা করে বলে,

“ মূল কথা মানে? আর তোকে ঘু*ষ কেন দিব আমি? তোর খেতে মন না চাইলে খাস না। কে জো’র করেছে তোকে? দে খেতে হবে না আর তোর। আমিই খাব।”

“ না না ভাই নিস না প্লিজ। সরি সরি সরি প্লিজ ভাইয়া।”- বাটি নিয়ে দুই ভাইবোনের কাড়াকাড়ি অবস্থা। একপর্যায়ে জয় কিছুটা আইসক্রিম খেয়ে বাটিটা স্মৃতিকে দেয়। একটু পরে আবার বলে,

“ নে এবার বল। কি কথা হলো ওনার সাথে তোর?”

স্মৃতি আবার জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলে তা দেখে জয় বলে,

“ তাহলে আইসক্রিম দে।”

স্মৃতি দূরে সড়ে আবার না না করতে থাকলে, জয় আবার বলতে বললে স্মৃতি নিজে আইসক্রিম খেতে খেতে জয়কেও এবার একটু একটু করে মুখে তুলে দেয়। আর বলে,

“ তেমন কিছু না। এমনেই এদিক ওদিকের কথা। অনেক কথায় হয়েছে। তবে তেমন বলার মতো না। এমনেই গার্লস টক।”

“ গার্লস টক না?”- বলেই স্মৃতির মাথায় একটা চাটি মা*রে জয়৷

জয় একটু পর আবার বলে,

“ ওনার নাচের ভিডিও কই পেলি? কোথায় দেখেছিস?”

“ আরে এক সিনিয়র আপুর কাছে। সেও নাচ শিখতো আপুর কাছে। সেখান থেকেই দেখেছি। দারুন নাচে।”

স্মৃতির কথা শুনে জয়ের এখন ঐশীর নাচ দেখার ইচ্ছে হচ্ছে। সে চুপ করে কিছু একটা ভাবছে। স্মৃতি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এরপর ভাইকে বলে,

“ বাই দ্যা ওয়ে তুই আপুর প্রতি এতো ইন্টারেস্টেড কেন বলতো? এখন এটা বলিস না যে ক্যাজুয়ালি জিজ্ঞেস করেছিস। আমি এতটাও ডাম্ব না। হুহ্।”

জয় স্মৃতির কথায় কিছু বলার ভাষা পেল না। হতভম্ব হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি বলবে এখন সে? এভাবে হাতে হাঁড়ি ভে’ঙে যাবে কে জানতো। সে এখন বেশ উশখুশ করছে। স্মৃতি জয়ের অবস্থা দেখে মনে মনেই হাসলো। তবে ভাইকে আর বিব্রত করতে চাইলো না। কথা কা’টাতে সে নিজেই বলল,

“ আচ্ছা ভাইয়া শোন না। আমিও নাচ শিখি না আপুর কাছে। প্লিজ……”

“ পাগল তুই! আর কয়েকদিন পরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী হয়ে যাবি। এখন এসব করার সময় আছে নাকি। ”

স্মৃতির এবার সত্যি প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে গেল। সে নিজেও জানে এখন এসবের সময় না। তারপরও সে নিজের ইচ্ছেটাকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। মলিন মুখ নিয়ে বলল,

“ সবাই তাইই বলছিস। ঐশী আপুও তাই বললো।”

“ কি বলেছে?”

“ এই যে এখন শেখার সময় না। পড়াশোনায় ফোকাস করতে। আমাদের সিনিয়র যেই আপুরা শিখতো তাদেরকেও নাকি এখন না করে দিয়েছে। বলেছে দরকার পড়লে খুব বেশি মন চাইলে শুক্রবার করে যেতে সে একটু তাদের সময় দিবে নি। তাও মাসে এক দুইবার৷ তবে কারো পরীক্ষা খারাপ যেন না হয়। ”

জয় কথা শুনে ভিতরে ভিতরে একটু মুচকি হাসলো। সব দিকেই নজর থাকে মেয়েটার। আবার স্মৃতির দিকে তাকিয়ে চিন্তিতও হলো। স্মৃতির অনেকদিনের শখ ছিল নাচ শেখার। একা একাই নিজের ঘরে নাচানাচি করে। ভালোই নাচে। তবে এখন এসব শিখতে দিতেও মন মানছে না৷ সে আর কোনো কথা বললো না। বোনের মন খারাপ দেখেও কিছু বললো না। কিছু কিছু সময় কথা না বলাই ভালো।

——————

ঐশী তার নতুন ডান্স ক্লাসের জন্য রুম গোছগাছে ব্যস্ত। সাথে আশা, অনিক, কবিতা। গোছগাছ বলতে তেমন কিছু না।

দুটো ফ্যান লাগালো, সেট করলো। আসবাব বলে আপাতত চারটা চেয়ার, একটা ছোট্ট টেবিল, আর দুইটা বেঞ্চ। এইতো। তবে এখন যাবে ঘরের সাজগোছের জন্য কিছু গাছ, পর্দা, আর অন্যান্য কিছু জিনিস কিনতে। রুমটা সে সুন্দর করে সাজাতে চায়। যেন দেখেই মনটা ভালো হয়ে যায়। তাই এসব কেনার উদ্দেশ্য আশা আর সে বের হয় গাঙিনারপাড় যাওয়ার জন্য।

কোয়ার্টার এরিয়াগুলো বরাবরই সুন্দর হয়। এই রাস্তাটা দিয়ে হাটতে ঐশীর কখনো খারাপ লাগে না। কারো খারাপ লাগার কথাও না। আশা আর ঐশী দুজন মিলে রাস্তার একদম ফুটপাত দিয়ে গল্প করতে করতে মোড় পর্যন্ত হেঁটে যাচ্ছিল। এরমধ্যে যে কি থেকে কি হয়ে গেল। কিছু অতিব স্মার্ট নামক ছেলে আছে না যারা রাস্তাটাকে নিজের বাপের সম্পত্তি মনে করে সার্কাস দেখাতে দেখাতে বাইক চালায়?

তেমনি কিছু ছেলে এঁকেবেঁকে রাস্তায় বাইক নিয়ে যেতেই চাকা একেবারে স্লিপ খেয়ে আশাকে পিছন থেকে এসে ধাক্কা দেয়। আশা এবং বাইকের যারা আছে তারা প্রায় ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে।

ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটে যে ঐশী কিছুক্ষণের জন্য একদম ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যায়। এরপর দৌড়ে আশার কাছে যায়। গিয়ে দেখে বেশ ভালো চোট পেয়েছে আশা। রাস্তায় বাইকের তিনটা ছেলে এবং আশা ঐশী বাদে রাস্তায় তখন আর কেউ ছিল না। এমন অবস্থায় সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আশাকে ডাকতে থাকে ঐশী। আশা তখন ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। ছেলেগুলোও ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। ঐশী সেদিকে একবার নজর দিয়ে আশাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে ততক্ষণে ঐশীর চিৎকার আর বাইকের অস্বাভাবিক আওয়াজ শুনেই বাসভবনের সামনে অবস্থানরত পুলিশগুলো ছুটে এসেছে। তারা এসে বাইকের ছেলেগুলো এবং আশাকে এসে ধরে।
পুলিশেরা ইমিডিয়েটলি রিকশার ব্যবস্থা করে ফেলে।

আশাকে রিকশায় উঠিয়ে দেওয়ার সময় এতকিছুর মাঝখানেও ঐশী গিয়ে যেই ছেলেটা বাইক চালাচ্ছিল তার গালে গায়ের সবশক্তি দিয়ে একটা চ*ড় মা’রে। আর বলে,

“ কু**রবাচ্চা তোর বাপের রাস্তা পাইছস। মা*****….”

বাইকের ছেলেগুলো আশার মতো ততটা ব্যাথা পায় নি। রাস্তায় ঘষা লাগার ফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া উঠে গেছে। আশা পা নড়াতে পারছে না। হয়তো বাইকের চাকাটা পায়ে এসে লেগেছে। পুলিশগুলোর মধ্যে একজন আবার আশা আর ঐশীর পিছনে পিছনে রিকশা নিয়ে আসছে। রিকশায় উঠেই ঐশী তারাতাড়ি করে অনিককে কল করে। অনিক আর কবিতা কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়েছে তবে বেশিদূর যেতে পারে নি। ঐশী অনিককে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে বললে। সবশুনে অনিক আর কবিতাও ছুটে চলে। আর বাকি বন্ধুদেরও জানায়।

আশার কাতর মুখ দেখে ঐশীর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তার বেস্ট ফ্রেন্ড। এই মেয়েটা তার সব ভালো খারাপ সময়ে তার পাশে ছিল। তাকে যদি কেউ একটু হলেও বুঝে তবে সেটা একমাত্র এই মেয়েটা। যে এখন ব্যা’থায় কাতরাচ্ছে। ঐশীর চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে।

কিছু লোকের বেপ’রোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য প্রতিদিন কত মায়ের বুক খালি হয় তা আল্লাহ জানে। আর এসমস্ত উশৃংখল ছেলেদের জন্য তো নিরিবিলি জায়গাতেও চলাচল করে শান্তি নেই। আপনি যতই নিয়ম সেফটি মেনে চলাচল করেন না কেন এদের বেপ’রোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য যে কাউকে ভু’ক্তভো’গী হতে হয়। প্রতিদিন কত মানুষ এভাবে দূ’র্ঘটনার শিকার হয় আল্লাহ জানে। এরা রাস্তাকে নিজের বাপের সম্পত্তি ভাবে। এগুলোর জন্য একবিন্দু পরিমাণ মায়া সহানুভূতি দেখানোও ভুল। আজকে আপনি এদের সহানুভূতি দেখান। দেখবেন সুস্থ হয়ে আবার যেই লাউ সেই কদুই হবে।

#চলবে……………..

( কপি করা নিষেধ। তবে শেয়ার করতে পারেন। এন্ড স্টে সেফ।)

[ বি:দ্র: পর্বগুলো আগেরই লেখা ছিল। এটাও। তবে কালকে গল্প কপি করতে গিয়ে ডিলিট হয়ে গেছে। এখন লিখলেও এটা আগেরটার মতো হয়নি। কিছুটা অগোছালো রয়ে গেছে। সরি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here