স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি। #দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। (পর্ব- ৩৮)

#স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি।
#দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। (পর্ব- ৩৮)
#আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা।

মুশরাফা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে বাবার পানে। তার চোখে অবিশ্বাস। বাবা ওকে ডাকছে, ওর সাথে নিজ থেকে কথা বলতেছে! এমনটা সম্ভব! মুশরাফার বদ্ধমূল ধারণা, সে ভুল দেখছে। সার্বক্ষণিক কল্পনায় থাকা পরিবার, কল্পনায় প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিয়েছে।
মুশরাফার আগমন টের পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো তারিফ । বাবার জীবন্ত মূর্তিকে কল্পনায় রেখে পাশ কেটে ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেল রাফা। ভাইকে দেখে সালাম দিল,
‘আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!’

বোনের মাথায় আলতো হাত দিয়ে বলল,
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমার বোনটা কেমন আছে এখন? জ্বর সেরেছে?’

মুশরাফা প্রসন্ন হাসল,
‘ আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো আছি।’

কিচেনে সন্ধ্যেবেলার নাস্তার জন্য কেক বানাচ্ছেন ফরিদা। তাকে সাহায্য করছে, ফাইজা, জায়ফা। দুজনকে কেক বেক করার দায়িত্ব দিয়ে বেরিয়ে এলেন তিনি।

মুশরাফা দাঁড়িয়ে ভাই, মামীর সাথে কুশল বিনিময় করছিল। আকস্মিক মাথাটা ঘুরে উঠল। চোখ কুঁচকে নড়ে ওঠল সে। কাছে থাকা দুজন তা খেয়াল না করলেও গজ কয়েক দূরে থাকা জাওয়াদ ঠিকই খেয়াল করল। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে দাঁড়াল। বিনীত স্বরে ফরিদার উদ্দেশ্যে বলল,

‘ জ্বর সারলেও রাফার উইকনেস রয়ে গেছে। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয় না। তারউপর জার্নি করে এসেছে। মামী, ওকে ভিতরে নিয়ে একটু বিশ্রাম করতে দিন। না হয় মাথা ঘুরে পড়বে।’

ফরিদা চটজলদি মুশরাফাকে তারিফের রুমের দিকে নিয়ে গেলেন, ‘চল, বাইরের কাপড় ছেড়ে বসবি কিছুক্ষণ।’

যেতে যেতে জাওয়াদের পানে চেয়ে স্বস্তি, কৃতজ্ঞতা সন্তুষ্টিজনক হাসি উপহার দিল মুশরাফা। বাস্তবিক অর্থেই তার দাঁড়িয়ে থাকা দায় হয়ে পড়ছিল। পাশে থেকেও মামী আর ভাই জায়ফা বুঝল না, দূর থেকে মানুষটা কিভাবে বুঝল! এই মানুষটা তাকে একটু বুঝে বোধহয়, সবার থেকে বেশি।’

মুশরাফা চলে যাবার পর তারিফ জাওয়াদের কাধ চাপড়ে খুশিতে গদগদ সুরে বলল,
‘ফাইনালি, তুমি মুশিকে নিয়ে এসেছো। আমি তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। থ্যাংকস ফর কামিং।’

জাওয়াদ হাসল কেবল। ফারুকী হতাশ শ্বাস ফেলে বললেন, ‘রাফা আমাকে পাশ কাটল কেন? ও কি আমাদের ঘৃণা করতে শুরু করেছে?’
জাওয়াদ হেসে বলল, ‘ও বিশ্বাস করতে পারেনি, আপনি ওকে ডাকছেন বা কথা বলেছেন। ভেবেছে কল্পনা মাত্র। বহুকাল বাদে আপনার আন্তরিকতা দেখেছে কি না!’

জাওয়াদ কোমল মনে বললেও ফারুকী ওর কথায় তিরস্কারের আভা পেলেন। হতাশ, কাতর শ্বাস ফেললেন কেবল।

___________________

ফরিদা মুশরাফাকে নিয়ে আগালেন তারিফের রুমের দিকে। তারিফের রুমের দরজা খোলা। দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই আকস্মিক থেকে গেল মুশরাফা। চোখ আটকাল রুমের মধ্যকার অভিজাত খাটে। খাটের এক কোণে বসে আছেন এক মহিলা। দরজা দিয়ে তার পেছন দিক দেখা যাচ্ছে কেবল। না দৃশ্যমান হলো চেহারা আর না স্বর। তবুও মুশরাফা চিনে গেল মানুষটাকে। যার ছায়া তার মুখস্থ, তার দেহাংশ চিনবেনা তা কী করে হয়! মুশরাফা ন্যানোসেকেন্ডে বুঝে গেল, এই মানুষটা সেই, যাকে সে হাজার চেয়ে ও পায়নি, তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো অপ্রাপ্তি যার কাছে আটকে আছে। তার মা, লায়লা আঞ্জুমান। মুশরাফা অপ্রত্যাশিত মানুষকে দেখে ভড়কাল, চমকাল, থমকাল। মনে মনে প্রশ্ন করল, এটাও কি বাবার মতো কল্পনার খাতায় যোগ হবে? সে পিটপিট করে তাকাল বারকয়েক। দরজায় মৃদু শব্দ হলো। একধ্যানে বসে থাকা মহিলাটির ধ্যান ভাঙল। ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলেন। এক পলক চাইতেই থমকে গেলেন। পুরো দেহ ঘুরিয়ে বসলেন। পূর্ণচোখে তাকালেন মেয়ের দিকে। কাতর, অনুতপ্ত সে চাহনি। পুরো শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। বুক কেঁপে উঠল, চোখে পানি জমল। কতদিন বাদে এলো তার অতি যক্ষের ধন, তার মেয়েটা! লায়লা চেয়ে রইলেন। মন চাইল ডাকতে কিন্তু স্বর বেরুলো না। তিনি ভেজা চোখে চেয়ে রইলেন।

মায়ের রুগ্নমুখ চোখ পড়ল মুশরাফার। সরল না সামনে থেকে। সে নিশ্চয় হলো, এ তো ভ্রম নয়, মা সত্যিই বসে আছেন।

মুশরাফা অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল মামীর দিকে। মা এ বাসায় কেন এলো! সে এসেছে মা জানে না? তারিফ বলে নি? বললে তো নিশ্চয়ই আসতো না। মুশরাফা আমতাআমতা করে বলল, ‘মামী, তুমি ও কি মাকে দেখতে পাচ্ছো?’

ফরিদা হাসলেন। বললেন, ‘দেখতে পাচ্ছি। আপা সত্যিই এসেছেন। কার জন্য জানিস? ত…

মুশরাফা অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল মায়ের দিকে। কথা শেষ করবার আগেই আটকাল মুশরাফা। মামীর কথা তার কানে যায় নি। সে যখন শুনল মা সত্যি এসেছে তখন সর্বপ্রথম মস্তিষ্কে চাপ দিল একটা শব্দ, ‘জাওয়াদ। তড়িৎ ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল হল রুমে বসা জাওয়াদের দিকে। তারিফের সাথে বসে আছে জাওয়াদ। তার দৃষ্টি এদিকেই। যেন কিছু দেখার অপেক্ষায় আছে। মুশরাফার মুখে আতঙ্কের লেশ লেপটে গেল। সে ভীত স্বরে বলল,
‘মামী, জাওয়াদ!

ফরিদা আবার হাসলেন, ‘ মায়ের সাথে দেখা করবি? আজকে জাওয়াদ কিছু বলবে না। ‘

মুশরাফার মন মায়ের দিকে পা বাড়াবার জোরদাবি করলে, বিবেক পা বাড়াতে দিল না। বরং এক পা পিছিয়ে দিল। মা ওকে পছন্দ করে না। এখন ওকে দেখে নিশ্চয়ই বাজে রিয়েক্ট করবে, হয়তো কিছু বলেও ফেলবেন। শ্বাশুড়ির উপর যে জাওয়াদের প্রচুর রাগ জমা সে কথা বেশ জানা মুশরাফার। মুশরাফাকে বিন্দুমাত্র অসম্মান করলেও জাওয়াদ প্রতিবাদ করবে, ছেড়ে কথা বলবে না। ঠিক হাসপাতালের মতো এই ভরা বাসায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে । মা আর স্বামীর দ্বন্দ্ব দেখতে ইচ্ছুক নয় মুশরাফা। তাই মায়ের সাথে আলাপের ব্যাপক ইচ্ছে থাকলেও প্রকাশ করল না। ইচ্ছেদের দমিয়ে পিছু হাঁটল। চাপা শ্বাস ফেলে বলল,
‘ জাওয়াদ খুব সিনক্রিয়েট করবে, তুমি তো জানোই মামী। আমি কোন অশান্তি চাইছিনা। আমরা বরং অন্যরুমে বসি।’

মুশরাফা গেস্ট রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে ধপ করে বসে চাপা শ্বাস ফেলল। সেই শ্বাসে ঝরে গেল হাজার অপ্রাপ্তি, আক্ষেপ। মায়ের মুখটা ভাসছে চোখে। আচ্ছা, মাকে ওমন দেখাল কেন? মা কি অসুস্থ? মুশরাফা অনেকটা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, ‘মামী, মায়ের মুখটা কেমন যেন লাগছিল, মা কি অসুস্থ?’

ফরিদা মুশরাফার নিকাব খুলে দিতে দিতে চাইলেন মুশরাফার পানে। তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলেন না। কী যেন ভেবে বললেন, ‘ একটু অসুস্থ। ‘

‘কী হয়েছে মায়ের?’ উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল মুশরাফা। ফরিদা উত্তর দিলেন না ইচ্ছে করে। মুশরাফা উতলা হয়ে নিজে জিজ্ঞেস করুক। কথা এড়িয়ে মুশরাফার জিলবাব, নিকাব খুলে দিলেন। কেক বেক করা শেষে ওভেনে দিয়ে ছুটে এলো জায়ফা। ‘আপিইই’ বলে চেঁচিয়ে, একঝাঁক ভালোবাসা নিয়ে জড়িয়ে ধরল। মুশরাফা স্নেহের সুরে বলল,
‘কেমন আছিস? কতবার ফোন দিলাম তোকে, ধরলি না কেন? ‘

মায়ের অসুস্থতার কথা মুশরাফাকে জানানো মানা ছিল। ফোন তুললেই জায়ফা বলে ফেলতো। তাই তুলে নি। সে কথা বলল না জায়ফা। দুঃখী সুরে বলল, ‘ভালো আছি। এক্সাম চলছে আমার। ফোন সাইলেন্ট করে পড়ায় ফোকাস করেছি, তাই ধরতে পারিনি। ‘
ছেড়ে দিয়ে পরখ করে মুগ্ধস্বরে বলল,
‘ আপি, তোমাকে ভীষণ প্রিটি লাগছে।’

পর্দার আড়ালে থাকা রূপবতী মুশরাফা দৃশ্যমান হতেই চমকে উঠলেন ফরিদাও। সায় জানালেন।মুগ্ধমনে বললেন,
‘আসোলেই মিষ্টি লাগছে! ‘
মুশরাফা স্মিত হেসে বলল, ‘ শ্বাশুড়ি মা সাজিয়ে দিয়েছে।’

ফরিদা আসবার কালে জাওয়াদকে ইশারা করেছিলেন। যার অর্থ, তোমার বউ তোমার জন্য ভয় পাচ্ছে। তুমি বুঝাও।
ইঙ্গিত পেয়ে জাওয়াদ এসে ডুকল রুমে। ওকে দেখে জায়ফা ঠাট্টার স্বরে বলল,
‘ পেয়ারা জিজাজী, আপনি ফিতা ধরা, জুতা চুরি, সালামি সব কিছু থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছেন। একবারে ফ্রিতে পেয়ে গেছেন আমার কিউট, সুইট, প্রিটি বোনটাকে একবারে ফ্রিতে পেয়ে গেছেন। এটা রীতিমতো অন্যায়। ‘
থেমে বোনকে ইশারা করে বলল, ‘ দেখুন, আমাদের অপরূপা বোনকে পেয়ে আপনি বিশাল ব্যবধানে ভীষণ ভাবে জিতে গেছেন। এই জয় উপলক্ষে শালিকামহলকে ট্রিট দেয়া উচিত।’

জাওয়াদ জায়ফার দিকে তাকাল না। ওর পাশ কাটিয়ে তাকাল তার অপরূপার দিকে। চোখ ধাঁধিয়ে এলো। ওর পানে চেয়ে হেসে বলল, ‘ এমন জয় উপলক্ষে তো বিনা দ্বিধায় রাজ্য ও গিফট করা যায়। ট্রিট তো সামান্য। শীঘ্রই ট্রিট পেয়ে যাবেন। তার আগে আমাকে আমার ট্রফির সাথে কথা বলতে দিন।’

আমার ট্রফি! মজা পেল জায়ফা। এই যুগলের প্রেম দেখতে ভালো লাগে ওর। জায়ফা সরে দাঁড়াল, জাওয়াদ ভেতরে গেল। ফরিদা ওদের স্পেচ দিয়ে রুম ছাড়লেন। যাবার কালে জায়ফাকেও নিয়ে গেলেন।

তারা যেতেই জাওয়াদ হেসে বলল, ‘ মানুষ বলাবলি করছে, তোমাকে পেয়ে না কি আমি জিতে গেছি। তাকাও তো! কেমন জয় পেলাম দেখি!’

মুশরাফা হেসে তাকাল। ওর মাথায় ঘুরছে মায়ের চিন্তা। মায়ের কী অসুখ? ওমন দেখাচ্ছিল কেন? কী হয়েছে? জানতে মন উৎসুক। চোখের সামনে মা অথচ কথা বলতে পারছে না। মনটা ভীষণ ভারি লাগছে। জাওয়াদের অগোচরে কথা বলতে পারবে, কিন্তু এতে সে মুনাফিকের কাতারে পড়ে যাবে। সে জাওয়াদকে ওয়াদা দিয়েছে, তার অনুমতি ছাড়া মায়ের সাথে নিজ থেকে কথা বলবে না। সে কি একবার অনুমতি নিবে? মুশরাফা আমতা-আমতা করে বলল,
‘ শুনুন না!’
জাওয়াদ ঠাট্টার স্বরে বলল, ‘ বলুন, আমার অপরূপা?’

মুশরাফা ভয়ে ভয়ে বলল, ‘মা আছে এ বাসায়।’

জাওয়াদ নির্বিকার স্বরে বলল, ‘ শুধু তোমার মা নও, তোমার পুরো পরিবার আছে এ বাসায়।’

মুশরাফা বিস্মিত চোখে চাইল, ‘ আপনি জানতেন?’

‘ হ্যাঁ। ‘
মুশরাফা অবিশ্বাস নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি জেনেও নিজ থেকে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন?’
জাওয়াদ মৃদু হেসে জবাব দিল, ‘আমি সজ্ঞানে সব জেনে বুঝে তোমাকে এ বাসায় নিয়ে এসেছি।’

যেখানে জাওয়াদ নিজে মুশরাফার বাবা মায়ের সামনে যেতে অপছন্দ করে সেখানে ওকে নিয়ে এসেছে! পুরো ব্যাপারটা মুশরাফার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সে কেবল ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। চোখে হাজার প্রশ্ন। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে বলল,
‘ কেন? কী ভেবে এনেছেন? আজ কি আবার সবার সাথে বোঝাপড়া করবেন?’

ওর লাগাতার প্রশ্নে জাওয়াদ হাসল। কদম বাড়িয়ে স্ত্রীর পাশে বসল। এক হাতে আগলে নিল। মুশরাফার কথার উত্তর না দিয়ে আয়াতের অর্থ শুনাল, ‘ অচিরেই তোমার রব তোমাকে এত বেশি দিবেন যে, তুমি খুশি হয়ে যাবে।’

থেমে প্রসন্ন গলায় বলল, ‘তোর সেই একদিনটা এসে গেছে রাফা, আজই সেইদিন। আজ তুমি চাইলে তোমার পরিবারের সাথে আলাপ করতে পারো। আমি কিছু বলব না।’

মুশরাফা হতভম্বতায় কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না। জাওয়াদ কি ওর পরিবারকে মেনে নিয়েছে? কিন্তু এটা কিভাবে হলো! এত রাগ ক্ষোভ কিভাবে শেষ হলো। মাকে তো কখনো জাওয়াদের সাথে যোগাযোগ করতেও দেখেনি, শুনেনি। বিস্ফোরিত চোখে চাইল,
‘আপনাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মিটে গেছে?’

জাওয়াদ উত্তর দিল না কেবল প্রশ্রয়ের হাসি উপহার দিল। জাওয়াদের মুখে আজ ওর পরিবারের নামে অভিযোগ নেই। সে আজ প্রাণবন্ত। ওর সেই হাসি দেখে বিস্ময়ে জ্ঞান হারাবার দশা হলো মুশরাফার। ওর কাছে সব কিছু ধোঁয়াশা মনে হলো। কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। মুশরাফা আবার প্রশ্ন করল,
‘বাবা তখন সত্যিই ছিল! ‘

জাওয়াদ স্মিত হেসে সম্মতি দিল। বাবা ওর সাথে নিজ থেকে কথা বলেছে, এটা স্বপ্ন নয়! প্রথমে বাবার আচরণ তারপর জাওয়াদের আচরণ সব গুলিয়ে ফেলছে মুশরাফা হচ্ছে কী এসব! ওর প্রশ্নবিদ্ধ, দ্বিধান্বিত চেহারার পানে চেয়ে জাওয়াদ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
‘ইয়ে তো বাস শুরুওয়াদ হ্যায়, আগে আগে দেখো হোতা হ্যায় ক্যায়া।’

সেই ক্ষণে রুমের বাইরে থেকে তারিফের স্বরে ভেসে এলো, ‘মুশি?’
কিসের সঙ্কেত পেল কে জানে? জাওয়াদ তড়িৎ সরে গেল। দূরে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ আসুন ভাইয়া!’

তারিফ একা এলো না। মাকে সাথে নিয়ে এলো। লায়লা ঠিকঠাক হাঁটতে পারছেন না। এক হাতে মাকে ধরে রেখেছে তারিফ। লায়লা দরজায় ঠায় দাঁড়িয়ে গেলেন। অপলক চেয়ে রইলেন মেয়ের দিকে। একসময় ডাকলেন কাতর স্বরে, ‘রাফা?’

শেষ কবে আদর মেশানো এই ডাক শুনেছে, মুশরাফার মনে নেই। কতকাল বাদে আজ কাঙ্খিত সেই ডাক শুনে চমকাল মুশরাফা, ভড়কাল। বুক কেঁপে উঠল, চোখ ভিজল। মুশরাফা কদম বাড়াতে গিয়ে জাওয়াদের দিকে তাকাল। কী ভেবে থেমে গেল। জাওয়াদ নিজেই এগিয়ে এলো। ধীরে বলল,
‘আজ থেকে তোমার এবং তোমার পরিবারের মাঝে বাঁধা হিসেবে আমাকে পাবে না। আমার অনুমতি এবং সম্মতি সব তোমার হয়ে গেছে। যাও কথা বলো উনার সাথে। ‘

মুশরাফা ছলছল চোখে চাইল। অবিশ্বাস নিয়ে বলল, ‘আপনি সত্যিই অনুমতি দিচ্ছেন!’

জাওয়াদ প্রশ্রয়ের হাসি দিল, ‘সত্যিই!’ বলে মুশরাফার দু’কাধ ধরে একটা কদম সেই এগিয়ে নিল। মুশরাফা ধীর পায়ে এগিয়ে গেল। মায়ের কাছে গিয়ে অস্ফুট স্বরে ডাকল, ‘মা? ‘

লায়লা স্থির চোখে চেয়ে রইলেন মেয়ের পানে। ওই ‘মা’ ডাকটা তার ভেতর আলোড়ন তুলে ধরল। মন মস্তিষ্ক এলোমেলো করে দিল। বুক ভেঙে কান্না এলো। তিনি কিছু বলতে পারলেন না। হারানো সন্তান খুঁজে পাবার পর যেমন মা আগলে নেন তেমন পরম আদরে মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন। তারপর এতকালের সব আক্ষেপকে প্রাপ্তিতে রূপ দিয়ে ডুকরে উঠলেন। কেঁদে কেঁদে অস্ফুট সুরে বললেন, ‘রাফা, আমার রাফা। আমার মেয়ে।’

____________

মুশরাফা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর মাথাটা মায়ের বুকে। মা শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরেছেন, কিছুক্ষন বাদে বাদে মেয়ের মুখটা তুলে ধরছেন। গালে অজস্র চুমু খাচ্ছেন, তারপর আবার টেনে নিচ্ছেন বুকে। শক্ত করে আঁকড়ে রাখছেন, যেন ছেড়ে দিলেই উড়ে যাবে। পারলে বুকে ঢুকিয়ে নিবেন। আকাশসম বিস্ময় নিয়ে অসাড় হয়ে আছে মুশরাফা। কিছু বুঝে আসছে না ওর। যেই মা কখনো ওর সাথে নিজ থেকে কথা বলা পছন্দ করেন নি, ওকে বুকে টানেনি, পাশটায় বসেনি। সেই মা আজ হঠাৎ ওকে বুকে টেনে নিলেন! যেই মমতার জন্য ও ব্যাকুল হয়ে ছিল, সেই মমতা নিজ থেকে দান করছেন? ওকে বুকে টেনেছেন! এটা সত্যিই! নাকি এটা কল্পনা, যেমনটা বাবাকে নিয়ে করেছে। দ্বিধায় মুশরাফার মাথা ঘুরে উঠল, চোখে ঘোর লাগল। কিছু জিজ্ঞেস করবার শক্তি হারাল। যান্ত্রিক মানবের মতো কেবল চেয়ে রইল, চোখে হাজার প্রশ্ন নিয়ে।

এক বুক কেঁদে মেয়েকে ছাড়লেন লায়লা। মেয়ের সুন্দর মুখশ্রীতে হাত রাখলেন, আলতো হাত মাথায় রাখলেন। একঝাক মায়া মমতা নিয়ে চাইলেন মেয়ের পানে। চোখ বেয়ে অনর্গল বর্ষিত হচ্ছে নোনাজল। মেয়েকে ছুঁয়ে কাঁপা স্বরে বললেন, ‘আমার মেয়ে ফিরে এসেছে। আমি তোকে আর যেতে দিব না। আমার কাছে রেখে দিব, তুই কোথাও যাবি না।’

মুশরাফা হতবুদ্ধি, বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তখনো। লায়লা অনুতপ্ত স্বরে বলল, ‘ মা তোকে খুব কষ্ট দিয়েছি না? আমি অহংকারে অন্ধ হয়ে গেছি, কিছুই দেখিনি। পাষাণ হয়ে গেছি। খুব খুব অন্যায় করে ফেলেছি তোর সাথে। আমি যা করেছি তার জন্য মাফ চাইতেও লজ্জা লাগছে। ‘
থামলেন লায়লা। আকস্মিক মেয়ের হাত ধরে বললেন, ‘ আই এম স্যরি! আমাকে মাফ করে দে..আমি…

লায়লা হাত জোড় করতে চাইলেন। মুশরাফা চমকে উঠল। কল্পনা থেকে বেরিয়ে বাস্তবে এলো। মাকে হাতজোড় করতে দেখে হকচকিয়ে গেল, ‘কী করছো মা! কী হয়েছে তোমার? হুট করে এমন আচরণ করছো কেন?’
লায়লা সে কথার উত্তর দিলেন না। রোগা,,বিধ্বস্ত, অনুতপ্ত লায়লাকে উউদ্ভ্রান্তের মতো দেখাচ্ছে। তিনি যেন পাগলের প্রলাপ বকছেন। পারছেন না মেয়ের পায়ে পড়ে যেতে। বারবার বলছেন, ‘আমি তোর সাথে ভীষণ অন্যায় করে ফেলেছি, আমাকে মাফ করে দে। ‘

এইক্ষণে এসে মুশরাফা বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করল, মা তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। এবং ওকে গ্রহণ করতে চাইছেন। মুশরাফা ধীরে বলল,
‘ আমার কাছে তোমরা কখনোই অপরাধী হওনি। দয়া করে এমন করো না, আমার অস্বস্তি লাগছে।’

লায়লা উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণ করলেন অনেক্ষণ। মুশরাফা শেষ অবধি ‘ক্ষমা করে দিয়েছি’ বলে শান্ত করল। লায়লা কাতর স্বরে বললেন, ‘একবার ‘মা’ ডাক তাহলে?’

মুশরাফা অশ্রুভেজা চোখে ডাকল, ‘মা?’ এই ডাক নেবার সময় ওর স্বর কাঁপল, ভিজল চোখ। এক শব্দের ডাকটা কানে পৌঁছাতেই লায়লার বুকে প্রশান্তির স্রোত বয়ে গেল, বুকটা আনন্দে ভরে উঠল। চোখ বেয়ে পানি গড়াল, ঠোঁটে ভিড়ল প্রসন্ন, প্রতিক্ষা, প্রাপ্তির হাসি। কতদিন, কতকিছুর পর অবশেষে মেয়ে ডাকল তাকে। লায়লা আবার বুকে টেনে নিলেন মেয়েকে। অজস্র চুমু খেলেন মেয়ের কপালে, গালে, মাথায়। অস্ফুট সুরে বললেন, ইউ আর মাই প্রিন্সেস। ‘

মুশরাফার ছোটোবেলার স্মৃতি মনে পড়ল। ছোটোবেলায় মা যখন ওর উপর খুব খুশি হতেন তখন ওকে হারহামেশা বলতেন, ‘ইউ আর মাই প্রিন্সেস। ‘ তারপর উত্থান-পতনে মাকে হারাল, হারাল মায়ের দেয়া রাজ্য, সম্বোধন সব। এতকাল বাদে আজ সেই বুলি শুনে মুশরাফার মনে হলো হারানো রাজ্য বুঝি আবার ফিরে এলো। মনে পড়ল একটা আয়াত, ‘অচিরেই তোমার রব তোমাকে এত বেশি দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে। (সুরা দোহা-৫)

সেই দিন এলো অবশেষে! কত প্রতিক্ষা, কত দোয়া, কত মোনাজাতের পর! মন বার কয়েক পড়ল, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। ‘ কিয়ৎক্ষণ বিশ্বাস হলো না ওর। তীর্যক চোখে তাকাল জাওয়াদের পানে। দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে লোকটা। যেন সে ভীষণ উপভোগ করছে। মুশরাফা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এতকালের জমে থাকা কষ্ট আনন্দ হিসেবে ঝরিয়ে দিল। ডুকরে উঠল মাকে ধরে। কান্নার ঢোক গিলতে গিলতে অভিযোগের ঝুলি খুলে বসল, ‘ তোমার কথা খুব মনে পড়েছে মা, তুমি কেন পর হয়েছিল? একটাবারও মনে পড়েনি আমার কথা? আমি সবসময় তোমার অপেক্ষায় থেকেছি। কখনো সান্ত্বনার আশায়, কখনো মমতার আশায়, কখনো ফোনের আশায়, কখনো দেখার আশায়। তুমি কখনো আসোনি। আমার সংসারে উঁকি দাও নি। একটু যোগাযোগ করোনি। কেন করোনি? আমার কথা একটুও মনে পড়েনি তোমার, মা?’

লায়লায় মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অনুতাপের বাণী শোনালেন, কাঁদলেন। আগে তো বুঝেন নি, এবার বুঝেছেন আর যেতে দিবেন না। এবার মেয়ে করিয়ে রাখবেন। মা-মেয়ের মিলনক্ষণ হলো বুঝি এই ক্ষণে।

গেস্ট রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন নাজমুল সাহেব, ফরিদা, ফাইজা। মা-মেয়ের মিলন দেখবে বলে আজ সকাল সকাল হাজির হয়েছেন তারা। এই দৃশ্যখানা দেখে চোখ জুড়াল। অবশেষে রাফা তার মাকে পেল। তাদের ঠোঁট হাসি, হাসির রেশ তারিফ, জাওয়াদ, জায়ফার ঠোঁটে ও। শূন্য চোখে এই দৃশ্যখানা পরখ করছিলেন ফারুকী । তিনি কেবল মেয়েকে দেখছেন। মেয়েটা কী সুন্দর হয়েছে দেখতে! মেয়েটাকে দেখে স্নেহ ভিড়ল মনে। মুগ্ধতা এলো। আদর করতে মন চাইল। তিনি এগিয়ে এলেন। আবার থামলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশে চাইলেন। সোফায় বসা সাফাকে বললেন, ‘সাফা, কাম!’

সাফা গুমোট চোখে চাইল। বাবা মেয়ের চোখে চোখে কথা হলো। তারপর সাফা উঠে এলো। ধীর পায়ে ঢুকল রুমে, বাবা সমেত। ফারুকীই আগে এগিয়ে গেলেন। ধীর স্বরে ডাকলেন, ‘রাফা?’

ডাকটা বাবার। মুশরাফার বহুপরিচিত ডাক। চমকিত চোখে তাকাল মুশরাফা। একরাশ অনুতাপ চোখে নিয়ে মেয়ের কাছে এলেন ফারুকী। ক্ষমা চাইলেন না, বুলি আওড়ালেন না। কেবল ছোটো বাচ্চাদের কাছে টানার মতো হাত বাড়িয়ে কেমন করে বললেন, ‘ বুকটা কেমন ভারি হয়ে আছে, একটু বাবার বুকে আসবি?’

মুশরাফা কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। আকস্মিক ‘বাবা’ বলে বাবার বুকে মাথা ঠেকল। ফারুকী এক হাতে আগলে নিলেন। মাথায় চুমু খেলেন। কিছু বললেন না তিনি। মুশরাফা খেয়াল করল, একটা বিন্দুফোঁটা সদ্য ওর মাথায় পড়ল। বাবা কাঁদছেন? অনুতাপে, না কি ওকে পাবার আনন্দে? ফারুকী ছাড়লেন। আদুরে সুরে বললেন, ‘কেমন আছিস?’
মুশরাফা কান্নাভেজা মুখে হাসছে, ‘তোমাদের পেয়ে গেছি, এখন আমার চেয়ে ভালো কেউ নেই। তুমি কেমন আছো?’

‘ভালো আছি, ভী…ষণ ভালো আছি।’ মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন ফারুকী। তাকে ভীষণ খুশি দেখাচ্ছে।

সাফা এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে। মুশরাফা চাইল বোনের পানে। সাফা ও তাকাল। দুই বোন একে অপরের পানে চেয়ে রইল অনেকক্ষণ। সাফা এগিয়ে এলো। ধীর, কোমল স্বরে বলল, ‘ আই অলসো স্যরি। আমি তোর উপর একটু বেশিই রুড হয়ে গিয়েছিলাম। ড্রেসাপ আর বিয়ে নিয়ে ওমন আচরণ করা ঠিক হয়নি। মনে কিছু রাখিস না! ‘

মুশরাফা অমায়িক হাসল। বোন ওর সাথে কথা বলেছে এটাই অনেক। বলল, ‘আমি কিছু মনে রাখিনি আপি। সেসব কবেই ভুলে গেছি। তা ভালো আছো তুমি?’

সাফা সুন্দর করে হাসল, ‘আছি। অনেক দিন পর দেখছি তোকে। খুব সুন্দর হয়ে গেছিস।’

চালচুলোহীন আগেরকার মুশরাফার পরিবর্তিত রূপ দেখে বাস্তবিক অর্থেই অবাক হয়েছে সাফা। মুশরাফা সুন্দর করে হাসল। বলল, ‘আমি তোমাকে খুব মিস করেছিলাম, আপি।’
সাফা স্নেহের সুরে বলল, ‘ তাই বোধহয় আবার আমরা একসাথে। চলে এসেছি। আর মিস করার সুযোগ পাবি না।’
জায়ফা এগিয়ে এলো, ‘আমাকে রেখে কী বলছো?’
সাফা চোখ রাঙাল, ‘ বড়োদের মাঝে তোর কী? যা।’

হলরুমে আড্ডা বসেছে। সেন্টার টেবিলে সন্ধ্যেবেলার নাস্তা। দুই সেট সোফা বসা মুশরাফার সব আপনজন। বাবা মায়ের মাঝে বসা মুশরাফা। মুখোমুখি সোফায় বসা জাওয়াদ। আশপাশের সোফায় ভাই বোন, মামা মামী ফাইজা। আড্ডা জমেছে, কত কথা কত আড্ডা! মুশরাফা শুধু প্রাণভরে চেয়ে আছে চারদিকে। উপভোগ করছে, অবাক চোখে দেখছে তার কল্পিত দৃশ্যের বাস্তব রূপ। বিস্মিত চোখে দেখছে বাবা মায়ের প্রতি জাওয়াদের কোমল রূপ, মায়ের মমতা, বাবা স্নেহ।

মেয়েকে পেয়ে লায়লার অসুখ যেন ছুটে পালাল। মেয়েকে বাবার পর কাছ ছাড়ছেন না। নাস্তা করবার সময় ও পাশ ঘেঁষে বসেছেন। পাশে বসিয়ে রেখেছেন। মেয়েকে দেখছেন। তার মেয়েটা কী সুন্দর হয়েছে! আগে কি এমন ছিল? কই খেয়াল হয়নি তো! কী মায়া মেয়ের মুখে? এত মায়া আগে চোখে পড়েনি কেন? বড়োই আফসোস হলো তার। কমলার কোয়ার আঁশটা যত্ন করে বেছে মেয়ের মুখে দিচ্ছেন। কী যত্ন তার মাঝে! ‘কতদিন তুই বাড়ি যাস না, এবার আমার সাথে যাবি। অনেকদিন থাকবি। ছাদে একটা সুন্দর বাগান করেছি তোর জন্য। দেখবি গিয়ে।
তারিফের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনেছিস? তোর জন্য বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছে ছেলেটা। তুই এসে গেছিস, এবার আবার আয়োজন করব। ‘

মুশরাফা হাসল কেবল। মাকে পরখ করে বলল, ‘মা তুমি আগের থেকে শুকিয়ে গেছো। মুখটা রোগা রোগা লাগছে। কী হয়েছে তোমার?’

মেয়ের পরখ দেখে লায়লা হাসলেন। চোখ ঘুরিয়ে চাইলেন জাওয়াদের দিকে। জাওয়াদের দৃষ্টি উদাস। শ্বাশুড়ির অসুস্থতার কথা শুনে মুশরাফা আবার না তাকে ভুল বুঝে এই চিন্তা তার। সে কথা বুঝতে পেরে সন্তুষ্টির হাসি দিলেন লায়লা। জামাইটা ভালো পড়েছে, মেয়েটাকে ভীষণ ভালোবাসে। সে ভালোবাসায় ফাটল ধরালেন না তিনি। বললেন, ‘ বয়স হচ্ছে না? এখন কত রোগ হবে। ওসব নিয়ে চিন্তা করিস না। এখন আমার ভালো থাকার দিন, ভালো থাকব।’

মুশরাফার ও ভালো থাকার দিন, প্রাপ্তির দিন। হুট করেই সব পেয়ে গেল ও। কিভাবে পেল? জাওয়াদ কিভাবে নিল, কিভাবে অনুমতি দিল? কত প্রশ্ন মাথায়? কবে জানবে? উৎসুখ করল মন।
কবে কাছে পাবে? কাছে পেলেও কি জানতে পারবে? না কি অন্যখুশিতে মন হারাবে? কে জানে? প্রাপ্তির দিনে সব প্রাপ্ত হয়।
__________

নাস্তার পর্ব শেষে সাফা বেরুবার জন্য তৈরি হয়ে নিল। বেরুবার কালে বাবার সামনে পড়ল সাফা। ফারুকী গম্ভীরমুখে বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছো?’

চাপা থাকা বিরক্তি যেন এইক্ষণে বেরিয়ে এলো সাফার, ‘ আই কান্ট টেইক ইট এ্যানিমোর।’

ফারুকীর চেহারা গম্ভীর থেকে গম্ভীরতর হলো, ‘ ডিনারে আমি তোমাকে দেখতে চাই। তুমি আর কারো কষ্টের কারণ হবার চেষ্টা করবে না।’

সাফা একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে বলল, ‘ তোমার কথায় এতকিছু করলাম। আর ফোর্স করবে না। ওর জন্য আমাদের কতটা হেনস্তার স্বীকার হতে হয়েছে ভুলে গেছো তুমি, ড্যাড? তুমি ভুলে গেলেও আমি ভুলব না। এসব আমার দ্বারা হবে না, আমি গেলাম।’

যেতে উদ্যত হলো। ফারুকী চাপা শ্বাস ফেলে বললেন, ‘ফর ইয়োর মাদার।’

পৃথিবীর সব মানুষ ভালো হবে এই ভাবনা ভুল। সব মানুষ নিজের ভুল বুঝতে পারবে, এমনটা ভাবাও অনুচিত। এই ভুবনে বাস করা মানুষের একটা অংশ খারাপ থাকে। অন্যায়ে ডুবে থাকে। তাদের মাঝে কিছু মানুষ নিজের ভুল ধরতে পেরে ভালো হয়ে যায়। আর কিছু মানুষ কখনোই ভালো হয়না। তারা নিজের ভুল বুঝতে পারে না, বুঝতে চায় না। কিছু মানুষ কখনো ভালো হয়না, শুধু অভিনয় করে। তারা ভুল নিয়েই বাঁচতে চায়, অন্যায়ে দিব্যি বাঁচে। সব মানুষ ভালো হয় না, সবাইকে ভালো হওয়া মানায় না। ভালো খারাপের সংমিশ্রণেই দুনিয়া। এটাই বাস্তবতা।

চলবে…

এই গল্পের জন্য পাঠকমহলের বিরক্তি, অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে। । পরবর্তী পর্বে গল্পের ইতি টানব ইনশা আল্লাহ।

আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here