হৃদয়ের_কথা #প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ |৯|

#হৃদয়ের_কথা
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
|৯|

১৪.
সম্রাট ছাড়া মর্তুজা পরিবারের তিনমাস পেড়িয়ে গেছে। মর্তুজা শাখাওয়াত সাহেবের কথা অনুযায়ী সবাই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে।শাখাওয়াত সাহেব উপর উপর কঠিন থাকলেও ছেলেকে পছন্দ মিস করে।বয়স হয়ে গেছে ছেলের উপর অফিসের দায়িত্ব দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত।সম্রাট দায়িত্বে কখনো হেলাফেলা করেনা। রিধিমার মাধ্যমে প্রতিদিন মাহিমা বেগম ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। রিধিমার হাতেই খাবার দাবার এটা সেটা পাঠিয়ে দেন। সম্রাট প্রায় অফিসের কাজে বিরতি দিয়ে কলেজে আসে রিধিমার সঙ্গে দেখা করতে। সময় পেলে রাহুল, সাহিলের সঙ্গে দেখা করে নেয়। এভাবেই চলছে সম্রাটের দিন।

বিকেল থেকেই আকাশে মেঘ জমেছে। ভেজা তুলার মতো পুরো আকাশে মেঘেদের বিচরণ।বৃষ্টি শুরু হয়ে টানা বষর্ণ হচ্ছে।রিধিমা পুরোটা বিকেল মন খারাপ করে জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখেছে। ভিজতে চেয়েছিল রুবায়াত বেগম আর সারওয়ার সাহেব নিষেধ করেছে। তারপর কাল থেকে সম্রাট খোঁজ নেয়নি। এজন্যই মন খারাপ। সম্রাটের জন‍্য টেনশন হয় রিধিমার। এতো সবকিছু হতোনা যদি না সম্রাট বাসা থেকে বের হতো। রাতের খাবারের জন‍্য রিধিমা নিচে নামেনি মূলত অভিমান থেকেই। শাখাওয়াত সাহেব ডেকে পাঠিয়েছিলেন। বড় বাবার কথা ফেলতে পারেনি রিধিমা। নিচে নেমে খেয়ে চলে এসেছে। সম্রাটকে একের পর এক কল করছে কিন্তু রিসিভ করছে না। শেষে ফোন আছাড় দিতে গিয়েও দেয়নি চুপচাপ কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় রিধিমার। সম্রাট ফোন করেছে। ঘমু থেকে আড়মড়া উঠে ঘড়িতে দেখে ১১:০০ বাজছে। রিধিমা ফোন রিসিভ করতেই ব‍্যস্ত কন্ঠে শুনতে পেলো,

_’আমি খুব ব‍্যস্ত ছিলাম সরি। কাজের জন‍্য বাহিরে যেতে হয়েছিল,, জানানোর সময় ও পায়নি!

_’আমাকে এক্সপেলেন করছেন কেনো? আপনি যা ইচ্ছে করেন আমার কি?’

রিধিমার কন্ঠে অভিমান স্পষ্ট। কন্ঠ কাপাঁকাপাঁ এখুনি কেদেঁ ফেলবে এমন।সম্রাট হালকা হেসে বলল,

_’তাই চলে যাবো তাহলে?’

রিধিমা চমকে উঠে বিছানা ছেড়ে। হন্তদন্ত হয়ে জিগ্যেস করল,
_’মানে? কোথায় আছেন আপনি এই বৃষ্টির মধ‍্যে?’

_’ছাদে!’

_’আপনি এই বাড়িতে? বৃষ্টির মধ‍্যে ছাদে উঠলেন কিভাবে? আপনি ভিজছেন কেনো সম্রাট ভাইয়া?’

রিধিমার ইচ্ছে করতে সম্রাটকে বাসার ভিতরে নিয়ে আসতে। না জানি বৃষ্টির মধ‍্যে কতক্ষণ ধরে ভিজছে। একটু বৃষ্টির ছোঁয়া পেলে সম্রাটের ভয়ংকর ঠান্ডা জ্বর বেধেঁ ‍যায়। রিধিমা হন্তদন্ত করে বলল,

_’ আপনি কতক্ষণ ধরে ভিজছেন?’

_’ এসেছিলাম ১০:০০টাই। ‘

হঠাৎ সম্রাট হাচিঁ দিয়ে উঠে। রিধিমা ব‍্যস্ত হয়ে বলল,

_’ আমি আসছি পরে শুনবো কিভাবে এসেছেন! আপনার ভয়ংকর ঠান্ডা লেগেছে। আমি কি করব আপনাকে নিয়ে?’

সম্রাট হেসে ফেলল। রিধিমা কল কাটল। ফোনটা চিলেকোঠার রুমে টেবিলের উপর রেখে বাইরে বের হলো। ভিজে জবজবে অবস্থা। ফোনটা বাচাতেই চিলেকোঠার রুমে পরিত‍্যক্ত টেবিলে ওয়ালেট সহ রেখেছে।

হাতে তোয়ালে নিয়ে ছাদেঁর দরজা আটকে দেয় রিধিমা। বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কারো টের পাওয়ার কথা না রিধিমা বৃষ্টিতে ভিজছে। সম্রাটকে চিলেকোঠার রুমটায় বসিয়ে মাথার মুছিয়ে দিলো। আসার সময় সম্রাটের ব‍্যবহার করা একটা টাউজার আর টিশার্ট নিয়ে এসেছে। সম্রাট জানতে চাইলে রিধিমা তাকে চেন্জ করে নিতে বলে। রিধিমা আদা চা আনতে গেছে। এই ফাঁকে সম্রাট চেন্জ করে ফেলে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে সম্রাট লাগাতার হাচিঁ দিয়ে যাচ্ছে। রিধিমা ফ্লাক্সে করে চা নিয়ে এসেছে। রিধিমা হালকা পাতলা ভিজেছে। আপাতত বৃষ্টি থামা পযর্ন্ত সম্রাট চিলেকোঠার ছোট্ট রুমে পরিত‍্যক্ত বিছানাতেই আশ্রয় নিবে।
সম্রাটকে এই অবস্থায় দেখে মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে রিধিমার।

_’এভাবে বৃষ্টিতে ভিজার কি প্রয়োজন ছিল?’

_’বললাম তো ব‍্যস্ত ছিলাম জানাতে পারিনি তোর অনেক গুলো কল দেখে ভাবলাম দেখা করে আসি। তুই খুশি হস নি?’

একটা ওয়ার্ড বলতেই চারবার হাচিঁ দিয়েছে সম্রাট। নাকটা লাল হয়ে গেছে। গরম গরম আদা চা টা খেয়ে একটু ভালো লাগছে ওর।

_’ এটা অবশ্যই খুশির বিষয় ছিল না।আপনি কতটা অসুস্থ হয়ে গেছেন। এক ঘন্টার বেশি ভিজেছেন আপনি!আমার ভিষণ খারাপ লাগছে আপনাকে এভাবে দেখে।’

_’কিছু হয় নি আমার। আপনাকে পাকনামি করতে হবে না। বসেন এখানে!’

_’আমি আজ গেট দিয়ে এসেছি!’

রিধিমা অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো,

_’কেউ দেখেনি আপনাকে?’

_’রাহুল আর সাহিল দেখেছে। ডিনারের পর সবাই খাওয়া দাওয়া করেই রুমে চলে গেছিলো। আমি তখনই এসেছি।’

_’বৃষ্টি মনে হয় সারা রাতই হবে। আপনাকে এখানেই ম‍্যানেজ করে থাকতে হবে।’

সম্রাট রিধিমার কথায় ছোট্ট করে উত্তর দেয়,

_’হু!’

১৫.
সকালে রিধিমার ঘুম ভাঙতেই নিজেকে চিলেকোঠার টেবিলে বসা অবস্থায় আবিষ্কার করে। তড়িঘড়ি করে উঠে সে সম্রাটকে পায় না। পুরো ছাদঁ জুরে খুজেও সম্রাটের দেখা না পেয়ে নিচে চলে আসে। শরীরটা তার ভারী আর গরম হয়ে আছে।জ্বর আসার সম্ভাবনা আছে। রাতে একটু ভিজেছিল এজন্যই। রুমে এসে ফোনটা খুজেঁ সম্রাটকে কল দেয়। সময় নিয়ে ফোন রিসিভ করে সম্রাট। গলাটা ভাঙা, হাচিঁ-কাশি দিচ্ছে। কথা শুনেই বুঝে যায় সম্রাট অসুস্থ হয়ে পড়েছে ভিষণ।

_’রিধি শোন! আমি সকালে সবার উঠার আগে চলে এসেছি। তোকে জানিয়ে আসতে চাইছিলাম কিন্তু রাতে তুই আমার অনেক সেবা করেছিস। ক্লান্ত ছিলি তাই তোর সুন্দর ঘুমটা ভাঙতে চাইনি।’

_’আপনার গলা বসে গেছে। নিশ্চয় অনেক জ্বর এসেছে?’

_’বেশি না। মাকে জানাস না টেনশন করবে অযথা।’

বলেই ফোনটা রেখে দেয় সম্রাট।

দুপুরের দিকে মাহিমা বেগম আর রিধিমা মিলে সম্রাটের ফ্লাটে যায়। রাহুল আর সাহিলের কাছেই খবর পেয়েছেন সম্রাটের অনেক জ্বর।মাহিমা বেগম শুনেই কান্নাকাটি করেছেন। রিধিমা বড় আম্মুকে সামলে নেয়। মাহিমা বেগম ছেলের পছন্দ অনুযায়ী ভালো ভালো কিছু রান্না করে নিয়ে এসেছেন। সম্রাট মাকে দেখে আবেগে জরিয়ে ধরে। মাহিমা বেগম ছেলের টেম্পারেচার মেপে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দেন। পুরোটা সময় ছেলের যত্ন নিয়েছেন। সন্ধ্যায় শাখাওয়াত সাহেব ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। স্ত্রীকে ছেলের ফ্লাটে একদিন থাকতেও পারমিশন দিয়েছে। রাহুল,সাহিল, মেধা এসে দেখে গেছে! মাহিমা বেগম রিধিমাকে ওদের সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু রিধিমা যায়নি।
সম্রাট মায়ের সান্নিধ্য পেয়ে সুস্থ হতে শুরু করেছে। পুরো একদিন মায়ের কোলে মাথা রেখে ছিল। মাহিমা বেগম ও নিজের কলিজার টুকরাকে অনেকদিন পর দেখে দিন দুনিয়া ভুলে গেছেন। রিধিমা মা ছেলেকে সময় দিয়ে বিল্ডিংয়ের বেলকোনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। ঝোলমলে রোদ উঠেছে। দুদিন লাগাতার বৃষ্টির পর রোদের দেখা পেয়েছে সবাই।আজ রিধিমা বড় মার সঙ্গে থাকবে ফ্লাটে। সম্রাটের ফ্লাটটা সুন্দর পরিপাটি গোছানো। পাচতলা বিল্ডিংয়ে চতুর্থ তলাতে ফ্লাটটা।রিধিমার এখানে অনেক ভালো লাগছে থাকতে। এখান থেকে মর্তুজা ভিলা দশ মিনিটের।
________
দু’দিন পার হয়ে গেছে সম্রাট এখন সুস্থ। ল‍্যাপটপে কাজ দেখছিল কাল থেকে আবারো অফিসে যাবে।মাহিমা বেগম আর রিধিমা মর্তুজা ভিলায় চলে এসেছে। মাহিমা বেগম আসতে চায়নি এতো তাড়াতাড়ি। শাখাওয়াত সাহেব সম্রাটকে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন।

এভাবে আরো দু’দিন কেটে যায়। একদিন সকালে মর্তুজা ভিলায় চৌধুরী পরিবারকে দেখে অবাক হয় রিধিমা। বড়দের জিগ্যেস করতে তারা বলে চৌধুরী পরিবারের বড় ছেলের বিয়ে। সবাইকে বিয়েতে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। রিধিমা অনেক খুশি হয় দাওয়াত পেয়ে। কিন্তু সম্রাটের কথা ভেবে মনটা খারাপ করে ফেলে। মাহিমা বেগম বুঝতে পেরে বলেন,

_’সম্রাট যাবে আমাদের সঙ্গে। তোর বড় আব্বু বলে দিয়েছে!’

_’সত‍্যি? সম্রাট ভাইয়া সত্যি আমাদের সঙ্গে একসাথে দাওয়াতে যাবে?’

_’হ‍্যাঁ। বাড়ির ছেলে আলাদা গেলে খারাপ কথা বলবে সবাই। তাই তোর বড় আব্বু আমাদের সঙ্গেই যেতে বলেছে।’

রিধিমা খুশিতে ফেটে পরে। বড়মাকে জরিয়ে ধরে নিজের রুমে চলে আসে। আজ সে ভিষণ খুশি সম্রাট থাকবে দাওয়াতে। কি মজা হবে। আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।কালকের জন‍্য তর সইছে না রিধিমার।রিধিমা ভাবলো সম্রাটকে ফোন দিবে কিন্তু তার আগেই নীলি আর জারিফা ভিডিও কল দিয়ে বসেছে। জারিফা,নীলিরাও বিয়ের দাওয়াতে থাকবে। প্রতিবেশি হিসাবে এলাকার সবাই চৌধুরী বাড়ির দাওয়াত পেয়েছে। রিধিমার মনে হচ্ছে কালকের দিনটা অনেক সুন্দর হবে তার জন‍্য।

~ চলবে

|পর্বটা একটু ছোট হয়েছে। আজ আরেকটা পর্ব দেওয়া হবে|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here