হৃদয়ের_কথা #প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ |৬|

#হৃদয়ের_কথা
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
|৬|

৭.
অন্ধকারে চাদেঁর আলোয় ছাদে উপস্থিত পুরুষালী বলিষ্ঠ অবয়ব দেখে চমকে ওঠে রিধিমা। আশেপাশে নিশব্দতা শীতের রাত তবুও যেন ঘামতে শুরু করেছে রিধিমা। ভয়ে আরষ্ঠ হয়ে কাপাকাপা কন্ঠে জিগ্যেস করে আগন্তুুককে,
_ কে ওখানে? ছাদের লাইট অফ কেন করলেন?
………..
_ কি হলো কথা বলছেন না কেনো?কে আপনি?
…………
_ আমি কিন্তু চিৎকার করবো? পরিচয় দিন!

রিধিমার কন্ঠে আরষ্ঠ, জড়তা। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ভয় পেয়েছে। বাসার সবার নিশ্চয়ই ঘুমানোর কথা সে ছাদের দরজা লাগিয়েছিল স্পষ্ট। তাহলে কিভাবে আসলো কেউ ভেবে পাচ্ছে না। ব‍্যাক্তিটি যে আগে থেকে ছাদে ছিল স্পষ্ট। কিন্তু আগে কেনো বুঝতে পারেনি সে? রিধিমা এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে দৌড়ে ছাদের দরজা খুলে নিচে নামতে চায় কিন্তু একটা পুরুষালী হাত তাকে পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে। সে প্রাণপণে ছুটতে চাইছে। কাপাকাপা হাতে ছাদের দরজা খুলেই ফেলেছে এমন সময় লোকটি তার আরেকটি হাত দিয়ে তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। রিধিমার চোখে সবকিছু অস্পষ্ট হয়ে যায়। ঘন কালো আধার আর নিশব্দতায় ছেয়ে রয়েছে চারপাশ। সে লোকটির বলিষ্ঠ পুরুষালী হাতে বন্দি হয়েই রইল। বেশ কিছুক্ষণ পর ঘড়িতে ১২:০০ বাজার টংটং শব্দ হয়। সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাড়ি আলোই ছেয়ে যায়। লোকটির হাতে বন্দি অবস্থায় রিধিমা দেখে আশেপাশে বেলুনের ছড়াছড়ি, দেওয়ালে বেলুন দিয়ে ‘ হ‍্যাপি বার্থডে রিধিমা ‘ লেখা। গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে রয়েছে। সামনের টেবিলে বিশাল বড় থ্রি পাউন্ডের ব্লাকফরেস্ট ভ‍্যানিলা ফ্লেইভার কেক। পরিবারের সবাই একসঙ্গে দাড়িয়ে রয়েছে টেবিলের অপোজিটে। বিস্ময়ে হা হয়ে রয়েছে রিধিমা। আগুন্তুক লোকটি তার হাত ছেড়ে দিয়েছে কখন বুঝতেই পারেনি। সবাই মিলে একসঙ্গে হাসতে হাসতে বলে উঠল,
_ ‘ম‍েনি ম‍েনি হ‍্যাপি রিটার্নস অফ দ‍া ডে রিধিমা। হ‍্যাপি বার্থডে টু ইউ ‘।
রিধিমা এতটাই শকড যে রিয়েকশন দিতেই ভুলে গেলো। বিস্ময়ে পাশে তাকিয়ে দেখে তার পাশে সম্রাট। বুঝতে বাকি রইল না এই আগন্তুুকটা সম্রাটই ছিল। মর্তুজা সারোওয়ার আর রুবাইয়াত বেগম এগিয়ে আসলেন রিধিমার দিকে। রিধিমার কপালে চুমু খেয়ে ছোট্ট একটা ডাইমন্ডের চেন পড়িয়ে দিলেন মেয়েকে। শাখাওয়াত সাহেব আর শহীদ সাহেব সুন্দর দেখে ডায়মন্ডের ইয়াররিং আর মোবাইল দিলেন। হিনা বেগম এবং মাহিমা বেগম স্বর্ণের আংটি দিলেন। রাহুল আর সাহিল নানান রকমের চকলেট দিলো সঙ্গে টেডি। মেধা দুই রকমের অনেক সুন্দর আই শ‍্যাডো প‍্যালেট গিফট করলো। এদিকে নীলি আর জারিফাও উপস্থিত হয় সেইসময়। ওরা এসেই রিধিমার উপর ঝাপিয়ে পরে। অনেক উইশ করে সঙ্গে জারিফার পক্ষ থেকে রিধিমার পছন্দের কবি শেকসপিয়রের দুইটা বই ‘রোমিও এন্ড জুলিয়েট ‘ আর ‘হ‍্যামলেট’ গিফট্ করে আর নীলির পক্ষ থেকে রিধিমার পছন্দের ডোরেমন প‍্যাস্টেল কালার পেনসিল। সবাই ওর জন্মদিন মনে রেখেছিল আর গোপনে সারপ্রাইজড এরেন্জ করেছিল।এতো বড় সারপ্রাইজ’ড পেয়ে রিধিমা অনেক খুশি। পুরো পরিবার সহ সবাই মিলে কেক কেটে আনন্দ করে। তারপর ১ টাই খাবার খেয়ে যে যার মতো ঘরে চলে যায়। নীলি আর জারিফা রিধিমার সঙ্গেই থাকবে আজ তাই তারা তিনজনে রিধিমার ঘরে গিয়ে মিউজিক প্লেয়ারে লো ভলিউমে গান বাজাতে শুরু করে। আড্ডা শেষে সবাই ঘুমাতে ব‍্যাস্ত হয়।

৮. আকাশে মেঘ ধরেছে। চাঁদটা ঢেকে গেছে কালো মেঘে।পরিবেশটা শান্তশিষ্ট গুমোট আবহাওয়া। ঘড়িতে রাত তিনটা বাজছে। পুরো বাড়ি নিশব্দ। সম্রাটের রুমে এখনো আলো জ্বলছে। হাতে দুটো বক্স নিয়ে নাড়াচাড়া করছে সম্রাট। মুলত সবার গিফট দেওয়া হলেও সম্রাট এখনো পযর্ন্ত কিছুই দেয়নি রিধিমাকে। কেক কেটে খাওয়ানোর আগেই সম্রাট বেরিয়ে যায়। রিধিমা প্রচণ্ড মন খারাপ করে। সবাই ওকে আলাদা ভাবে উইশ করেছে গিফট্ করেছে। শুধু সম্রাট ই ওকে কিছু বলেনি। গিফট্ ও দেয়নি। রিধিমার গিফট্ চায়না কিন্তু সম্রাটের মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেতে চেয়েছিল। এদিকে সম্রাটের চোখে ঘুম নেই। অনুভূতি শূন্য মানুষের মতো একদৃষ্টিতে গিফটের দিকে তাকিয়ে। দরজা ঠেলার শব্দ আসতেই সম্রাটের বুঝতে বাকি নেই এই সময় ঠিক কে আসতে পারে। রিধিমা হন্তদন্ত হয়ে আসতেই পায়ে বেধে পরে যায়। সম্রাট তখনো পিছনে ফিরেনি। রিধিমার অভিমানে চোখে পানি টুইটম্বুর। আলতো করে নিজেকে সামলে বলল,
_ সম্রাট ভাইয়া???
…..
কোন সারা না পেয়ে রিধিমা এবার চোখ বন্ধ করে বলে উঠল,
_ আপনি এমন কেনো?
_ কেমন?
_ আজকে আমার জন্মদিন আপনি আমাকে উইশ করলেন না কেনো ভাইয়া?
_ সবাই তো করেছে আমার উইশ না করার সঙ্গে কি যায় আসে?
_ আপনার কাছে কি আমার কোন মুল‍্য নেই?
_ থাকা উচিত কি?
_ আমি পায়ে ব‍্যাথা পেয়েছি আপনার রুমে।
_ ডয়ারে মুভ আছে!
_ আমি জানি এগুলো আপনি ইচ্ছে করে করছেন আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন‍্য।
সম্রাট এবার চেয়ারে বসা অবস্থায় রিধিমার দিকে তাকালো!
_ কেনো মনে হলো?
_ এমন সারপ্রাইজ প্লান আপনার আর রাহুল ভাইয়ার !
_ না পুরোটাই রাহুল আর সবার।
_ মিথ্যা বলছেন। আপনার প্লান এগুলো এজন্যই ছাদে আগে থেকে ছিলেন। আপনি জানতেন সবার ইচ্ছে কৃত অবহেলায় আমি মন খারাপ করে ছাদে যাবো এজন্যই অনেক আগে থেকে ছাদে ছিলেন আপনি। আমাকে সামলানোর জন‍্য।
…….
_ আপনি আমার জন‍্য কোন উপহার আনেননি?
_ আনতে হতো বুঝি?
আমার কান্নায় ভাইয়া সাবলিল হেসে বললেন,কষ্টে অভিমানের পাল্লাটা বেড়ে গেলো আমি চলে আসতে যাচ্ছিলাম ভাইয়া বলে উঠলেন,
_ দাড়াঁ এক পাও নড়বিনা।
দাড়িয়ে পড়লাম আমি ভাইয়া এগিয়ে আসলেন। আমাকে চেয়ারে বসিয়ে বললেন,

_ কতো লোভী তুই। ছিচকাঁদুনেও বটে।
_ আমি লোভী বা ছিচকাদুনেঁ নয়। ছাড়ুন লাগবেনা আপনার উপহার।
_ দাড়াঁ

বলেই বক্স থেকে একটা লেটেস্ট মডেল কারটিয়ার কাপল ওয়াচ বের করলেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে জোড়া ঘড়ি একটা মেয়েদের আরেকটি ছেলেদের। এতোসুন্দর উপহার দেখে মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠছে। সম্রাট ভাইয়া কোন দ্বিধা দ্বন্দ ছাড়া আমার হাতে ঘড়িটা পড়িয়ে দিলেন। তারপর বললেন,
_ পছন্দ হয়েছে?
আমি আলতো হেসে বললাম,
_ খুবব।
_ এবার এটা আমায় পড়িয়ে দে।
আমি ঘড়ি পড়াতে পড়াতে বললাম,
_ আপনি কাপল ওয়াচ কেনো কিনলেন?
_ কেনো কেনা উচিত হয়নি? পছন্দ হয়নি? না আমার সঙ্গে মিল রেখে ঘড়ি পড়তে অসুবিধা তোর?
_ না আমি এমনটা বলি নাই
_ শশশশশশশশ
আমাকে থামিয়ে উনি বললেন,
_ ঘড়ি কিনতে গেছিলাম হঠাৎ এই কাপল ওয়াচে চোখ পড়ল। ওটা দেখা মাত্রই আমার তোর কথা মনে পড়েছে।চেষ্টা করলাম আলাদা কিনতে কিন্তু বাধ‍্য হয়ে জোড়াই কিনতে হলো।

_ আসলেই সুন্দর। থ‍্যাঙ্কস্ ভাইয়া।
_ হয়েছে? সবসময় মুডটা নষ্ট করিস কেনো? তোর থ‍্যঙ্কসের জন‍্য কিনেছি নাকি?
_ আমি তো ধন্যবাদ দিলাম শুধু।
_ দরকার নেই তোর ধন্যবাদের বাড়ির সবাই ঘুমে। তুই জেগে আছিস যে? নীলি আর জারিফা কি ঘুমিয়ে গেছে?
_ হ‍ুম ওরা ঘুমিয়ে গেছে। আমরা অনেক রাত পযর্ন্ত জগে মজা করেছি। আর আমি আপনার উপর রেগে আছি।মজা আর হলো কোথায়।
_ কেনো,?
_ সবাই আমাকে উইশ করলো শুধু আপনি বাদে!
_ অনেক রাত হলো ঘরে যা।
_ যাচ্ছি। আর আসব না আপনার রুমে।
রিধিমা ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে এমন সময় সম্রাট বলে উঠল,
_ তুই চাঁদের মতো সুন্দর! তোর বাকি জীবনটা চাদেঁর আলোর ন‍্যায় ঝলমলে হয়ে উঠুক। হ‍্যাপি সেভেনটিন বার্থডে রিধি।দ্রুত বড় হয়ে যা প্লীজ, তোকে বড় হতে দেখার খুব ইচ্ছে আমার!

সম্রাটের গলায় কিছুটা আবেগ আকুতি ছিল রিধিমা বুঝলো কিনা জানেনা। সে শোনা মাত্র দ্রুত রুম ত‍্যাগ করলো।
সম্রাট হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। হাত দিয়ে চোখমুখ ঢেকে জোরে নিশ্বাস নিলো। এমন আবেগ তো সে রিধিমাকে সরাসরি দেখাতে চায়নি। এজন্যই তো বারবার এভোয়েড করে রিধিমাকে। কেনো যে বেপোরোয়া মনটা বারবার বেইমানি করছে। রিধিমার সামান্য চোখের পানি সহ‍্য করতে পারেনা সম্রাট। ইচ্ছে করে ওর সমস্ত আবেগ,অনুভূতি,ভালোবাসা,ভালোলাগা দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিতে কিন্তু পরিস্থিতি সবসময় সঠিক নয় এটা সম্রাটের চেয়ে ভালো কে বুঝে?

~ চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here