হৃদপিন্ড পর্ব-৬

হৃদপিন্ড পর্ব-৬
#জান্নাতুল নাঈমা

ইমন খুব শক্ত করে ধরে আছে মুসকানের হাত।
দুজনেই দুজনের অনেকটা কাছে,একে অপরের নিশ্বাস -প্রশ্বাস যেনো গুনতে পারছে,,,
মুসকান ভয়ে ভয়ে ইমনের দিকে তাকাতেই তাঁর হৃদস্পন্দন কেমন বেড়ে গেলো। ঘন দাঁড়ি, গোঁফ গুলো দেখে কেমন বুকের ভিতর টা তাঁর চেপে ধরলো। এ কেমন অনুভূতি সে ঠিক বুঝতে পারলো না।
ইমন গভীর দৃষ্টিতে কিছুক্ষন চেয়ে মেয়েটাকে পর্যবেক্ষন করে ছেড়ে দিতেই মুসকান দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে ব্যাস্ত পায়ে বেরিয়ে যেতে নিলো।
ইমন কি যেনো একটা ভেবেই বললো দাঁড়াও সাথে সাথে মুসকান থেমে গেলো,মলিন দৃষ্টিতে তাকালো।
ইমনের মনের ভিতর কেমন মৃদু সুখানুভূতি খেলে গেলো, হাত দিয়ে ইশারা করে চলে যেতে বলতেই মুসকান ধীরপায়ে বেরিয়ে গেলো।

এতো মায়াবী কেনো মেয়েটা,এতো শান্তও বা কেনো?? যতোদিন যাচ্ছে কেমন একটা যেনো হয়ে যাচ্ছে না,,,

ইমনের রুম থেকে মুসকান কে বেরুতে দেখতে পেলো সায়রী। প্রথমে মুচকি হাসলেও পরে দ্রুত বেরিয়ে মুসকান কে ডাকলো।
মুসকান যেতেই বললো কি হলো মন খারাপ কেনো,এতো রাত হয়েছে ঘুমাওনি এখনো।
মুসকান দ্রুত উত্তর দিলো ওনি বললো মাথা টিপে দিতে তাই করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কেমন ধমকে বের করে দিলো। বলেই মুখ ভাড় করলো।
সায়রী অবাক স্বরে বললো কি,,,
মুসকান নালিশের ভঙ্গিতে বললো হুম আমি কি নিজে থেকে গেছি বলো আপা, নিজেই নিয়ে যেয়ে নিজেই বের করে দিলো। বুঝিনা বাপু এ কেমন মানুষ।
সায়রী অট্রস্বরে হেসে ফেললো।
আহারে মন খারাপ করো না। ও এমনি ওকে যদি বুঝতে পারো তো ওর থেকে ভালো মানুষ দুনিয়ায়,আর একটাও খুঁজে পাবে না। ও কি করেছে সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সকালে নাস্তা রেডি করে ওর সামনে হাজির করো। বেরুনের সময় এক গ্লাস পানি এগিয়ে দাও দেখবে ওর সব রাগ হাওয়া।
মুসকান মন দিয়ে কথা গুলো শুনে খুব খুশি হয়ে মাথা নাড়ালো।
সায়রী বুড়ো আঙুল উঁচু করে বললো পাক্কা,,,
মুসকান আঙুলটা ধরে এক গাল হেসে বললো পাক্কা।

,
ইমন রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেলো মুসকান টেবিলে সব খাবাড় গুছিয়ে রাখছে। সুপ্তির ক্লাসের জন্য সায়রী বরাবরই আটটার আগেই বেরিয়ে যায়, আজো তাই করেছে।
ইমন চেয়ার টেনে বসতেই মুসকান খাবাড় এগিয়ে দিলো। ইমন স্ট্রেট বসে খেয়ে উপরে ওঠে গেলো।
মুসকান দ্রুত এক গ্লাস পানি নিয়ে উপরে যেতেই দেখলো ইমন ফাইল নিয়ে বেরুচ্ছে।
মুসকান সামনে গ্লাস ধরতেই ইমন মুসকানের দিকে তাকালো। মুসকান ভয়ে এক ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেললো। ইমন ওভাবে তাকিয়েই ডানহাতে গ্লাসটা নিয়ে পানিটা খেয়ে নিলো। গ্লাসটা মুসকানের হাতে দিয়ে যেতে যেতে বললো দরজা লাগিয়ে বাসায় বসে পড়াশোনা করো। মুসকান ইমনের পিছন পিছন পা চালিয়ে যেতে লাগলো। দরজার কাছে যেতেই ইমন থেমে গেলো মুসকান ও থেমে গেলো।
ভয়ে ভয়ে ভাবতে লাগলো কিছু কি ভুল হলো,বা কিছু কি রেখে গেছে থামলো কেনো?
ইমন পিছন ঘুরে মুসকান কে পা থেকে মাথা অবদি একবার চোখ বুলিয়ে দেখে বাঁকা হেসে বেরিয়ে গেলো।
মুসকান আগা মাথা কিছুই বুঝলো না, হাসিটা দেখে খুশিও হতে পারলো না। দরজা লাগিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গ্লাস টা রেখে উপরে চলে গেলো।

এভাবেই দিনগুলো চলতে লাগলো বাসায় পড়াশোনা এক্সামের সময় স্কুলে গিয়ে এক্সাম দেওয়া। বাসার যাবতীয় কাজ মুসকান সামলায়,সেই সাথে ইমনের সব প্রয়োজন – অপ্রয়োজন ও তাঁর বেশ ভালোভাবেই মুখস্থ হয়ে গেছে। শুধু প্রয়োজন -অপ্রয়োজন নয় কখন ইমনের কি মুড হয় কখন সে রেগে যায় বা কখন কিসে রেগে যায় সেসবও ইদানীং বেশ মুখস্ত করে ফেলেছে। যতোদিন যাচ্ছে ততোই সে এসব বিষয়গুলো ইনজয় করতে শুরু করেছে।
নিয়ম করে দুবেলা খাবাড় তৈরী, ছুটির দিনে সুপ্তির সাথে খেলাধূলা,ইমনের যাবতীয় সব কাজ করার মাঝেই তাঁর সময়গুলো বেশ ভালোই যাচ্ছে।
নিজের ভীতর তৈরী হতে শুরু করেছে আলাদা এক অনুভূতি,,, এই অনুভূতির নাম কি দেওয়া যায় সে ঠিক জানে না। কিন্তু এই অনুভূতি গুলো তাঁর বড্ড বেশী ভালো লাগে।
ইমন যখন তাঁর সাথে একটু হেসে কথা বলে তখন তাঁর মনে হয় সে পুরো বিশ্বটাই জয় করে ফেলেছে। বিশ্ব জয় করা হাসি তাঁর ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে।
বিশ্ব জয় করা অনুভূতিরা তাঁর মাঝে শিহরন বয়িয়ে দেয়। তাঁর ডানা মেলে উড়তে ইচ্ছে করে খুব।
কেনোই বা করবে না বয়সটাই তো তেমন। সবে পনেরো তে পা দিয়েছে,,, মনটা তো একটু বেশীই উরু উরু করবে। কিশোরী বয়সের অনুভূতি গুলো যে বড্ড বেপরোয়া হয়,,,

,
আজ অফিসের কয়েকজন লোক বাসায় এসেছে কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই বাসায়।
সায়রী, সুপ্তি আর মুসকান একটু শপিংয়ে বেরিয়েছে।
মিটিং শেষ হতেই সবাই বেরিয়ে গেলো সায়রীর গাড়ি এসেও থামলো বাসার সামনে। অফিসের পি.এ মিস.রিতিয়া সায়রী আর সুপ্তির সাথে মুসকানকেও বেশ লক্ষ করলো। প্রথমে তেমন পাত্তা না দিলেও হিসেব নিকেশ করে তাঁর বড্ড খটকা লাগলো।
ইমনের মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন তাকে বেশ ভাবাচ্ছিলো পরোক্ষনেই ভাবলো তাই বলে এইটুকুন মেয়ে নাহ,,,

,
সায়রী বেশ লক্ষ করলো মুসকান আজ সব জামা কাপড় সাদা কালারের মধ্যেই নিয়েছে,,,হঠাৎ সাদা সাদা কেনো???
ইমনের ভালো লাগাকে কি গুরুত্ব দিচ্ছে,,, সে তো দিচ্ছেই তাই বলে নিজের মধ্যে ইমনের ভালো লাগা ফুটিয়ে তুলতে চাইছে,,,ও মা গো এতো বেশ এগিয়ে।
সায়রী রুমে যেতে যেতে ভাবলো সেই কতোগুলো বছর ধরে পুরো বাড়ির বাইরে ভিতরে সাদা রঙের দেয়াল করে রেখেছে নিজের রুমের প্রত্যেকটা জিনিসই সাদায় ঘেরা। সাদা কালো জীবনেই বাস করছে। কই একটু রঙের ছোঁয়া এনে দিবে তা না এ মেয়েও দেখি বড্ড বোকা। নিজেও সাদার মাঝে ডুবে যেতে চাইছে।

মুসকান আর সুপ্তি ছাদে রেকেট খেলছিলো এমন সময় ইমন ছাদে গেলো। মুসকান খেলা বন্ধ করে সুপ্তিকে চুপি চুপি বললো এখন আমরা রেষ্ট নেবো কেমন,,,সুপ্তি ইমনকে দেখে মামাই বলে ছুটে গেলো।
ইমন সুইমিং পুলের এক সাইটে দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত রেখে। আড় চোখে মুসকান কে একবার দেখে নিয়ে আবার সুইমিংপুলের দিকে দৃষ্টি স্থির রাখলো।
সুপ্তি ওটা সেটা বলছে ইমন হু, হা করছে। একসময় সুপ্তি বললো জানো মামাই আম্মুর স্কুলের এক ভাইয়া মুসু আন্টিকে চিঠি দিয়েছে। আর জানো চিঠিতে বড় বড় ওয়ার্ডে কি লিখা ছিলো,,,
মুসকান সুপ্তির কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো এই যা সুপ্তি এটা কি করছে আপা যে বলে দিলো এটা ওনাকে না বলতে,,,
মুসকান তারাতারি এগিয়ে বললো সুপ্তি চলো আমরা নিচে যাই,,,
ইমন সুপ্তির উৎসুক চাহনী কিছু বলার প্রবল ইচ্ছা দেখে মুসকানের দিকে কঠিন চোখে তাকালো।
মুসকান এক ঢোক গিলে মাথা নিচু করে চলে যেতে নিতেই সুপ্তি বলে ফেললো বড় বড় ওয়ার্ডে লিখা ছিলো আই,,,লাভ,,,ইউ। বলেই খিলখিল করে হেসে ওঠলো আর বললো মানে হলো আমি তোমাকে ভালোবাসি,,,
সুপ্তি ইমনের হাত ধরে নাড়াতে নাড়াতে বললো ও মামাই ও মামাই মুসু আন্টিকে ঐ ভাইয়াটা ভালোবাসে,আমিও বাসি,মাম্মাও বাসে। সবাই মুসু আন্টিকে কতো ভালোবাসে তাই না,,,
তুমিও কি ভালোবাসো মুসু আন্টিকে,,,
ইমন বিস্ময় চোখে চেয়ে রইলো সুপ্তির মুখের দিকে।
মুসকান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,হাত পা তাঁর ভীষনভাবে কাঁপতে শুরু করেছে। বুকের ভিতর কেমন হাতুড়ি পিটা শুরু করে দিয়েছে।
ইমন মুসকানের দিকে তাকালো মুসকান ভয়ে ভয়ে ইমনের মুখের দিকে দেখে দ্রুত ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো।

,
সুপ্তির কথা গুলো ইমনের মাথায় চলতেই থাকলো।
স্কুলে তো ক্লাসই করেনা চিঠির কাহিনীটা তাহলে কি সায়রীর সাথে আমাকে কথা বলতে হবে এ ব্যাপারে,,,

মুসকান রুমে চুপটি করে বসে আছে, তাঁর কেমন একটা লাগছে কেমন যেনো বুকটা চেপে ধরে আছে তাঁর, কিছু ভালো লাগছে না বার বার মনে পড়ে যাচ্ছে সুপ্তির বলা কথা গুলো। কেমন যেনো নিজেরও জানতে ইচ্ছে হচ্ছে সবার মতো ওনিও আমাকে ভালোবাসে তো,,,
ধূর ওনার যা রাগ ওনি কাউকে ভালোবাসেনা।
অমন রাগি মানুষের আবার ভালোবাসা কিসের।

রাত দশটার দিকে মুসকান ইমনের রুমে ইমনের পাশে বসে আছে,ইমন সমানতালে সিগারেট খাচ্ছে, ধোঁয়া ওড়াচ্ছে আর অফিসের কাগজপএ ঘাটাঘাটি করছে। মুসকান নিজের বই পড়ছে পাশাপাশি ইমন যা বলছে সেটাই করছে। কখনো কখনো এক ফাইল গুছিয়ে মুসকান কে দিচ্ছে মুসকান ফাইল রাখার জায়গায় সেটা সযত্নে রেখে আবার আরেক ফাইল এগিয়ে দিচ্ছে ইমন সেগুলো ঘাটাঘাটি করছে আর সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। মুসকানের প্রথম দিকে বড্ড কাশি হতো ইদানীং আর কাশি হয় না। সত্যি বলতে মুসকানের কাশি পেলেও সেটা খুব কষ্ট করে চেপে রাখে নয়তো এতো কাশি দেখে ইমন যদি বিরক্ত হয়,বা রেগে যায়।
এভাবে চেপে রাখতে রাখতে এটা তাঁর অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।
এখন আর খারাপ,লাগা,কষ্ট বা অস্বস্তি হয় না। কোন প্রকার সমস্যাও হয় না।

ইমন বেশ অবাক হয় মেয়েটা এতো স্বাভাবিক কি করে আছে,,,আড় চোখে একবার চেয়ে দেখে আবার কাজে মনোযোগ দেয়।
বেশ কয়েক মিনিট পর ইমনের বেশ কাশি শুরু হয়ে যায়, কাশিটা যখন ক্রমাগত বাড়তেই থাকে মুসকান ছুটে জগ থেকে পানি গ্লাসে ভরে ছুটে ইমনের সামনে ধরে। ইমন গ্লাসটা হাতে নিতেই মুসকান তাঁর ডান হাত দিয়ে ইমনের পিঠে বুলাতে শুরু করে,,,
ইমন পানিটা খেয়ে গ্লাস মুসকানের হাতের দিকে এগিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো মুসকান ব্যাস্ত চোখে মুখে তাঁর পিঠে হাত বুলাচ্ছে।
আর বলছে এবার কমেছে, ঠিক আছেন আপনি।
ইমন আবার একটু কেশে গলা ঠিক করে নিয়ে বললো ঠিক আছি।
মুসকান গ্লাসটা নিয়ে রেখে ইমনের পাশে বসতে নিতেই ইমন বললো বিছানা টা গুছিয়ে বেরিয়ে যাও।
মুসকান বাধ্য মেয়ের মতো সেটাই করে বেরিয়ে গেলো।
ইমন গিয়ে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলো।

ভোরের দিকে দাদীর ফোনে ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের। দাদী ফোন রিসিভ হতেই বললো দাদু ভাই আমি তোমার এতো পর হয়ে গেলাম,,,
ইমন কিছু বুঝতে পারলো না, চোখটা কঁচলে আধশোয়া হয়ে ওঠে বসলো।
কি বলছো দাদী,,,কিসের পর হলে আবার।
দাদী বললো তোমার বাসায় নাকি নতুন এক মেয়ে ওঠেছে।
ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো তোমায় কে বললো?
দাদী বললো সব খবড় আসে দাদু ভাই, লোকে তো অন্যরকম কথা বলা শুরু করেছে । মেয়েটা কে দাদু ভাই।
ইমন বললো দাদী আমি তোমাকে সব বলবো গিয়ে।
এখন রাখছি পর্শু যাবো আমি ওকে রাখি।
ফোন রেখে ইমন দ্রুত রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো।
মুসকান, সায়রী, সুপ্তি ওঠার আগেই ইমন বেরিয়ে পড়েছে আজ।
মুসকান ইমনকে ঘুম থেকে ওঠে না দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলো। মনটা তাঁর বড্ড ছটফট করছে, প্রতিদিন এমন সময় যার জন্য খাবাড় বানায় আজ সে এমন সময় কোথায় চলে গেলো,একটা বার বলেও তো গেলো না। মুসকানের এমন টেনশন দেখে সায়রী ইমনকে দ্রুত মেসেজ করলো।
ইমন রিপলাই দিলো আমি কাছাকাছিই আছি একঘন্টার মধ্যে বাড়ি ফিরবো।

,
রিক্তা, আর তূর্যর সাথে কথা বলছে ইমন। তূর্য রিক্তার ছোট ভাই, ইমনের সৎ ভাই ইভান এর সাথে একি ভার্সিটিতে পড়ছে সে। তাঁর থেকেই ইমন জানতে পারলো তাদের বাড়িতে এ কদিনে ঠিক কি কি ঘটেছে। ইমনের বাসায় একটা মেয়ে ওঠেছে বেশ সন্দেহ জনক সেটাই বলেছে ইমনের পি.এ মিস রিতিয়া। আর সেটা শুনে তাঁর সৎ মা তাঁর চরিএ একদম সকলের সামনে ধূয়ে দিছে সেই সাথে নানারকম বাজে কথাও বলেছে। এমনকি এই কথাও বলেছে ইমন চৌধুরী শেষে বুড়ো বয়সে পতিতা পল্লী থেকে এমন কম বয়সি মেয়ে ধরে আনলো।
কথাটা শুনা মাএই ইমন তাঁর হাত দুটো মুঠ করে ফেললো। চোখ দুটো তাঁর রক্ত বর্ন ধারন করেছে।
রিক্তা তূর্য কে চিমটি কেটে ইশারা করলো আর কিছু না বলতে আর তূর্য কে চলে যেতে তূর্য চলে যেতেই রিক্তা বললো ইমন,,,
মেয়েটা কে এতোদিন কেনো রাখছিস,,,
এভাবে থাকলে তোর সৎ মা না কদিন পর সামজের মানুষরাও বাজে ইনগিত দেবে। আমি জানি এতে তোর কোন জায় আসবে না কিন্তু মেয়েটার কি হবে ভাবতে পারছিস। ও তো মেয়ে আর বাচ্চা একটা মেয়ে ওর জন্য হলেও তোকে এ বিষয়ে সমাজকে কেয়ার করতে হবে।

ইমন কঠোর গলায় বললো শুনতে হবে না।
কারন ওকে আমি নিজের বউ এর অধিকারটা দেবো।
ইয়েস বিয়ে করবে আমি ওকে। তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান তাইনা।
হোয়াট!বিয়ে মানেটা কি? কি বলছিস এসব।
যা শুনছিস তাই বলছি, ভালোবাসি ওকে আমি।
হোয়াট আর ইউ সিরিয়াস,,,
হ্যাঁ,,,
এটা কিভাবে সম্ভব,,, মেয়েটা তো অনেকটাই ছোট। তোর মাথা ঠিক আছে তো।
একদম ঠিকাছে আমি ওর শরীর দেখে ভালোবাসিনি আমি কোন শারীরিক চাহিদার জন্যও ওকে বিয়ে করতে চাইছিনা, তাহলে বয়সটা কেনো ফ্যাক্ট হবে বলতে পারিস???
রিক্তা বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। আচ্ছা শোন সিগারেটের গন্ধ তোর কেমন লাগে।
নাক ছিঁটকিয়ে ইশ খুব বাজে তোরা যে কিভাবে খাস এগুলো আল্লাহ জানে। আমি আমার জামাইকে কড়া গলায় বলে দিব যেনো সিগারেট না খায়,আর যদি কখনো খাইতে দেখি তাইলে জান কবজ কইরা ফালামু একদম।

ইমন বাঁকা হাসলো,,, দুনিয়াতে প্রায় ৯৫% গার্লফ্রেন্ড বা বউরাই তাদের বয়ফ্রেন্ড বা হাজব্যান্ড কে এটা খেতে নিষেধ করে দেয়। ৯৫% মেয়েরাই এটার গন্ধ সহ্য করতে পারে না। কিছু কিছু মেয়েরা তো বমিই করে দেয় শুনেছি। আমি জানি এটা দেহের জন্য ক্ষতিকারক। তবুও আমি খাই ৩০বছরের জীবনের দশটা বছর আমি এটাকে নিজের জীবনে আগলে বেঁচে আছি। একটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে চাইলেও ছাড়তে পারবো না। সে যতোই এটা আমার ক্ষতি করুক না কেনো।
তুই জানিস মুসকানের কোন অসুবিধা হয় না সিগারেটের গন্ধে,,,ও সহ্য করতে পারে। পুরো রুমে সিগারেট মদের গন্ধ ভরপুর থাকলেও সারা রাত সেই রুমে ও টিকে থাকতে পারে। আমার পাশে বসে আমার পাশে থেকে আমার সেবা করতে পারে ওর কোন অসুবিধা হয় না। কখনো নাকটাও চেপে ধরেনা আর না কখনো গলা চেপে আসে ওর। তোরা তো হাত পা ছুটাছুটি করে করে ন্যাকামো করে করে কেশে চিৎকার চেচামেচি করে একাকার অবস্থা করে ফেলিস আর ওই বাচ্চা মেয়েটা একদম চুপচাপ থাকে। কি করে পারে বল তো কিভাবে আমার মতো একটা মানুষ কে সহ্য করে যাচ্ছে এতোগুলো মাস ধরে,মেয়েটা এতোটা সাধারণ হয়েও এমন অসাধারণে ঘেরা কেনো বলতো। এতটা নিষ্পাপ এতোটা সরল কেনো বলতো। মাঝে মাঝে ভয় হয় ওর সরলতাই ওর কাল হয়ে না দাঁড়ায় ।

ইমনের চোখে পানি চিকচিক করছে রিক্তা অবাক হয়ে বললো ইমন এসব কি হাউ দিজ পসিবল,,,
তুই সিরিয়াস,,,লাইফে প্রথম তোকে এভাবে দেখছি।
তোর চোখে আমি অসম্ভব পরিমানে ভালোবাসা দেখতে পারছি ইমন।
কিন্তু এই সমাজ, তোর পরিবার এটা কিভাবে নেবে??

ওকে যদি বিয়ে ছাড়া আমার কাছে রেখে দেই তাহলেও সমাজ খারাপ চোখে দেখবে।বাজে ভাবে সমালোচনাও করবে। আর ওকে যদি বিয়ে করে সারাজীবনের সঙ্গী করে নিজের কাছে রেখে দেই তাহলেও এই সমাজ সমালোচনা করবে। নানারকম কথা বলবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সমাজের মানুষদের কাজ ই হলো সমালোচনা করা। ভালো হলেও মন্দ হলেও তাদের সমালোচনার ভয়ে তো আমি আমার নিয়ম, আমার ইচ্ছে, আমার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে পারিনা। বরং যতো তারাতাড়ি সম্ভব বৈধ ভাবে মুসকানকে নিজের কাছে রেখে দেই। এতে এই সমাজ পরিবারের লোক যাই ভাবুক না কেনো যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি ঠিক খুশি হবেন।
আর ভাবিসনা মুসকানের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু হবে।
যেদিন মুসকান চাইবে সেদিনই আমি ওকে বৈধ স্বীকৃতি দিবো।
,
“সমাজ কি চায় সেটা নিয়ে আমি ভাবি না।
আমি ভাবি আমি কি চাই। সমাজ কি বলবে,আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা সমাজের চোখে কেমন দেখাবে তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই।
জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেএে নিজের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিয়েছি। নিজের জীবনের কিছু সিদ্ধান্ত অন্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে বুঝতে পেরেছি অন্যরা কখনো আমার জীবনের সিদ্ধান্ত ঠিক ভাবে নিতে পারবে না। কারন আমাকে আমার থেকে বেশী কেউ চেনে না,আমাকে আমার থেকে বেশী কেউ ভালোবাসেনা।
পরিবার,সমাজ শুধু তাদের সিদ্ধান্ত মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের জন্য মানুষের জীবনে যখন কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায় তখন তাঁর দায়ভার তারা নিতে আসেনা বরং তাঁরা আঙুল ওঠিয়ে প্রশ্ন করে এমনটা কেনো হলো, প্রশ্ন করা ছিঃ ছিঃ করা ছারা তাঁরা আর কিছুই করতে পারেনা।
হ্যাঁ আরেকটা জিনিস বলতে পারে খুব সহজ ভাবেই ভাগ্যে ছিলো তাই হয়েছে।ভাগ্যে কেনো থাকবে নিজের ভাগ্য কে নিজে তৈরী করে নিতে দেবে না কেনো এই সমাজ, এই পরিবার?? কেনো তাদের এতো বাড়াবাড়ি, কেনো তাদের এতো কৌতুহল মানুষের জীবন নিয়ে??
উপরওয়ালা কি এই সমাজ, এই পরিবারের লোকদের নির্দেশ দিয়েছে অন্যের জীবনে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার? সমাজের মানুষদের দায়িত্ব দিয়েছে অন্যের জীবনের ভালো-মন্দ নিয়ে রাতদুপুর সমালোচনা করার?
উপরওয়ালা যেটা আদেশ করেছে মানুষ সেটাই অমান্য করে আর যা নিষেধ করেছে মানুষ সেটাই করে বেড়ায়। কই কোন অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে তো কাউকে দাঁড়াতে দেখিনা বা বিপদগ্রস্ত মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে দেখিনা। অথচ কারো জীবনে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটা ঘটে গেলেই শুরু হয়ে যায় নানারকম নেগেটিভ সমালোচনা। এই সমাজের মানুষদের মাঝে কোন পজিটিভ ভাবনাই নেই। তাঁরা সবসময় মানুষের দোষ,খুঁত ধরা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে তাই আমি এই সমাজের মানুষদের কাছে, বা আমার নিজের পরিবারের কাছে কোন পজিটিভ ভাবনা আশা করিনা,তাদের থেকে কোন প্রকার সাপোর্ট আশা করিনা।
হাজারো দুঃখ, কষ্টের মাঝে ডুবে থাকলেও কেউ এসে ভরসার হাত বাড়িয়ে দেয় না। কেউ দূর থেকে ইনজয় করে কেউ কাছ থেকে ইনজয় করে।
কখনো কখনো নিজের রক্তের সম্পর্কের মানুষ রাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ইউ আর ফিনিশড,ইউর এক্সজিসটেন্স ইজ ওভার।
নিজের আপন লোকরাও হয়ে ওঠে পর,স্বার্থপর, বেঈমান।
আর কখনো কখনো পর হয়ে ওঠে আপন।
যাকে চিনতাম না জানতাম না সেও হয়ে ওঠে অনেকটা কাছের, হুট করে জীবনে চলে এসে জীবনটা করে তোলে রঙিন।
কি অদ্ভুত তাই না যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক ছিলো তারাই জীবনটা নরকে পরিনত করে দিয়েছিলো।
আর যার সাথে কোন সম্পর্কই নেই সেই হঠাৎ করে এসে জীবনটা কে নতুন করে উপভোগ করতে শিখিয়ে দিলো। সুখ চিরস্থায়ী নয় কিন্তু আমার এই অল্প সময়ের সুখটাই যেনো আমাকে সারাজীবনের কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।
সব-সময় সমানে সমানে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।
কখনো কখনো নিজের বিপরীতমুখী মানুষ টার সাথেও গড়ে ওঠতে পারে খুবই সুন্দর সম্পর্ক।
কখনো কখনো ম্যাচিওর কারো থেকে আনম্যাচিওর মানুষ টাই জীবনের জন্য অনেকটা মঙ্গলকর হয়ে ওঠে।

চলবে………….

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here