হৃদপিন্ড_২ পার্ট_৭

হৃদপিন্ড_২ পার্ট_৭
#জান্নাতুল_নাঈমা

মুসকান কেবলি পানি মুখে দিয়েছিলো। ইমনের কথা শুনে গলায় পানি আটকে গেলো তাঁর। বিষম খেয়ে নাক,মুখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো। কাশতে শুরু করলো সমানে। এমন অবস্থা দেখে ইরাবতী মুসকানের কাছে গিয়ে মাথায় হালকা থাপ্পড় দিতে লাগলো। সায়রী পিঠে বুলিয়ে দিচ্ছে। সকলেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো তাঁকে নিয়ে। মুসকানের অমন অবস্থা দেখে যেনো হৃদপিন্ড বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো ইমনের৷ মা কে টেনে সরিয়ে দিয়ে সে কাছে গিয়ে মাথায় বুলাতে শুরু করলো। ভয়ার্ত চোখ মুখে চেয়ে ব্যাস্ত গলায় বলতে লাগলো,
—- এক থাপ্পড় দিয়ে খাওয়া শিখিয়ে দেবো। এভাবে কেউ খায়। আর একটু হলেই তো মরে যেতি নে আরেকটু পানি খা। চোখ, মুখ লাল হয়ে গেছে তুই কবে বড় হবি মুসু? এখনো ঠিকভাবে খাওয়া শিখলি না।

নিজহাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে গ্লাসে পানি ভরে মুসকানের মুখের সামনে ধরলো। মুসকানের কাশি থেমে গেছে। অবাক চোখে চেয়ে আছে ইমনের দিকে। শুধু মুসকান না চেয়ে আছে ইরাবতী,সায়রী,দিহানও। সবার চোখে মুখে বিস্ময় স্পষ্ট। ইমন মুসকানের থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে চেয়ে যখন দেখলো সকলের দৃষ্টি তাঁর দিকে তখন মেজাজ দেখিয়ে বললো,
—- কি সমস্যা? এভাবে ইডিয়টের মতো তাকিয়ে আছো কেনো তোমরা? একটা মানুষ বিষম খেয়ে মরার মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো কোথায় পানি দেবে তাঁকে ঠিক করার চেষ্টা করবে তা না হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো? মুরাদ জানলে কি ভাববে ওর বোনকে এখানে আমাদের ভরসায় পাঠিয়েছে সে খেয়াল আছে কারো?
—- ঠিকই তো ঠিকই তো আল্লাহ মুসু আমিতো ভয় পেয়ে গেছিলামগো নাও পানি খাও। বললো ইরাবতী।
—- ভাই তুই ঠিক আছিস তো? বিষয়ম টা কে খেয়েছে বুঝতে পারছিনা। তোর চোখ মুখ এমন লাল হয়ে গেছে কেনো? মনে হচ্ছে সাংঘাতিক ভয় পেয়েছিস? তুই তো ভাই এই অল্পতে ভয় পাওয়ার ছেলে না। বিস্ময় চোখে চেয়ে চিন্তিত গলায় বললো দিহান।
—- হয়েছে এসব কথা বাদ দাও তোমরা মুসু পানিটা খেয়ে নে তুই। বললো সায়রী।

মুসকান গ্লাস ধরতে নিলে ইমন দিলোনা বরং মুখের কাছে নিয়ে ইশারা করলো খেতে। মুসকানও খেয়ে নিলো৷ তা দেখে সায়রী আর দিহান একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো। ইরাবতী বললো,
—- আচ্ছা ফ্রিজে দই আছে সায়রী মুসুকে বের করে দে ওটা খেয়ে নিক।
—- সায়রী বের করে রাখ আধাঘন্টা বা একঘন্টা পর দিবি। ডিরেক্ট ঠান্ডা খাবার খাওয়া নিষেধ ওর। বললো ইমন।
—- বাব্বাহ এসব আমাদের কারো অজানা নয় ইমন। আলাদা করে বলতে হবেনা। মুসু শুধু তোর একার বন্ধুর বোন না আমাদেরও। বললো সায়রী।

দিহান ভ্রু কুঁচকে ইমনকে পর্যবেক্ষণ করছে। ইমন একটু ইতস্তত বোধ করলো। নিজের জায়গায় গিয়ে বসে আবারো খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। মুসকানের মাথা ঝিম ধরে গেছে ইমনের কারবার দেখে। সায়রীর দিকে চেয়ে আস্তে করে বললো,
—- আপু আমি ওঠে যাই।
সায়রী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই মুসকান ওঠে চলে গেলো। ইমন আড়চোখে একপলক দেখে নিলো তাঁর যাওয়া।
®জান্নাতুল নাঈমা
_________________________
রাত এগারোটা বাজে। দিহান শুয়ে আছে ফোন টিপার পাশাপাশি ইমনের সাথে দুএকটা কথাও বলছে। ইমন কিছু কাগজপএ ঘাটাঘাটি করে সেগুলো আবার যথাস্থানে রেখে দিলো। তারপর দিহানের দিকে চেয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো,
—- সায়রীকে ফোন করে বল এখানে আসতে।
—- যাহ কিসব বলিস বন্ধু হলেও তুই তো পুরুষ মানুষ এক রুমে থাকা ঠিক হবে না৷ বন্ধুর বউ সে হিসেবে তো একটু রেসপেক্ট দে।

ইমনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো দিহানের পেট বরাবর সাজোরে এক ঘুষি দিতেই দিহান ওমাগো বলে দিলো এক চিৎকার।
—- ফালতু কথা বললে একদম উপরে পাঠাই দিব। তাই ফালতু বকা বন্ধ করে যা বলেছি তাই কর।
—- ভাইরে মাইরা ফালাবি নাকি? এতো জোরে কেউ দেয়?
—- ফোন দে সায়রীকে।
—- সিরিয়াস কিছু?
—- হুম।

দিহান ফোন করলো সায়রীকে।
—- জান,,, মুসু ঘুমিয়েছে?
—- তোর জানের খ্যাতা পুড়ি শয়তান আমার ঘুমটা নষ্ট করলি ক্যান?
—- তাহলে গায়ে দিবা কি জানু?
—- ফাইজলামি কম কর ফোন রাখ ঘুমাতে দে।
দিহান কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই ইমন তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ফোনটা কেড়ে নিলো। আর সায়রীকে বললো,
—- তোর এই জোকারটা কে কি করে সহ্য করিস বলতো?
—- যেভাবে তোরা করিস আমাকেও ওভাবে করতে হয়।
—- আমার রুমে আয় জরুরি কিছু কথা আছে ফার্স্ট।
—- সকালে গেলে হয়না?
—- এখন আসতে বলেছি সো এখনি আসবি খাওয়া আর ঘুম ছাড়া কি তোর লিষ্টে আর কিছু নাই? দিনদিন তো ফুটবল হচ্ছিস। দুমিনিটে চলে আয় নয়তো সকাল হতে না হতেই বিধবার খাতায় নাম বসিয়ে দেবো। ধমকে ধমকে বললো ইমন।
.
—- হোয়াট! এসব কি বলছিস তুই ইমন। আর ইউ সিরিয়াস? মুসুর প্রতি তোর ফিলিংস তৈরী হয়েছে? ইমন তোর মাথাটাই গেছে তুই কি নেশাটেশা করেছিস। বিরক্তি মুখে বললো সায়রী।
—- আমি বিশ্বাস করিনা সায়ু। ইমন মজা করছে তাইনা? তোর মনে হয় ইদানীং কাজের চাপ বেশী তাইনারে? এজন্যই চাপমুক্ত হতে ঠাট্রা করছিস।

মুসকানের প্রতি এতোদিনের অনুভব করা অনুভূতি ব্যাক্ত করতেই যা রিয়্যাক্ট দেখালো সায়রী আর দিহান তাঁর আর বুঝতে বাকি নেই মুরাদ কি করবে। মুখ লুকানোর জায়গা বুঝি তাঁর আর রইলো না। পৃথিবীতে হয়তো এর থেকে কঠিন কোন পরিস্থিতি হয় না। ইমন নতজানু হয়ে বসে রইলো। একটা টু শব্দও সে করলো না আর। যা দেখে সায়রী আর দিহান ভড়কে গেলো। সামনে বসে থাকা ইমন চৌধুরী কে যেনো চিনতেই পারছে না তাঁরা। বাঘ যদি বিড়ালের ন্যায় আচরন করে সাধারণ মানুষ তা সহজে হজম করতে পারবেনা এটাই স্বাভাবিক।

—- ইমন সত্যি বল তুই ফান করছিস তো? তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে প্রশ্নটি করলো সায়রী।

ইমন দুহাতে নিজের চুল খামচে ধরলো৷ ঘনঘন শ্বাস নিতে শুরু করলো সে। তাঁর ভিতর যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা হয়তো কাউকে বোঝাতে পারবে না। দোটনায় পড়ে মাথা কাজ করছে না তাঁর। একমন বলছে সে ভুল আরেক মন বলছে অনুভূতির ওপর কারো জোর চলে না।

—- আমার কিছু করার নেই সায়ু। যেদিন থেকে আমি এখানে এসেছি যেদিন আমি ওকে দেখেছি তাঁর পর থেকে আমার সবকিছু উলোটপালোট হয়ে গেছে। আমি জানি তোরা আমাকে ভুল বুঝবি আর সবথেকে বেশী যদি কেউ ভুল বুঝে সেটা বুঝবে মুরাদ। কিন্তু আমার কিছু করার নেই আমার ওকে চাই।
—- মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর। আন্টি ঠিক বলেছে এবার তোর বিয়ে করে নেওয়া উচিত। একাকিত্ব জীবন কাটাতে কাটাতে পাগল হয়ে গেছিস তুই। বিবেক লোপ পেয়েছে তোর। বেশ রেগে বললো সায়ুরী৷

ইমনের মাথাও গরম হয়ে গেলো। বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। পাশে থাকা টেবিলে দুটো থাবা দিয়ে বললো,
—- আমার ওকে চাই চাই এট এনিকস্ট।
—- ইমন শান্ত হো সায়ু তুইও শান্ত হো তোরা মাথা গরম করলে কিছু সমাধান হবে না। বললো দিহান।
—- কি শান্ত হবো? কি শান্ত হবো বল? ও কি বলছে শুনেছিস তুই এসব কি ধরনের চাওয়া দিহান। তুই কি ভুলে গেছিস আমাদের অতিত?

সায়রীর কথা শুনে চমকে তাকালো ইমন। মনে পড়ে গেলো সায়ুরী আর দিহানের বিয়ের আগের ঘটনাটা।
সায়ুরীর থেকে দশবছর ডিফারেন্ট ছিলো ছেলেটির। সায়ুরীর বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলে সায়ুরীকে না জানিয়েই। কিন্তু সায়ুরী কিছুতেই এতো সিনিয়র একজন কে বিয়ে করবেনা। এদিকে দিহানও মনেপ্রাণে ভালোবাসে সায়ুরীকে। ইমনের কাছেও বিষয়টা ঠিক লাগেনি। মনে হয়েছে সায়ুরীর বাবা ভুল। তাই দিহান আর সায়ুরীকে পালাতে সহযোগিতা করেছে সে। তারপর নিজেরা বিয়ে করেও নেয় ওরা। গত বছরই পরিবার থেকে মেনে নেয় বিয়েটা এবং পারিবারিক ভাবে আবারো বিয়ে হয় ওদের।

বসে পড়লো ইমন৷ সেদিন সায়ুরীর বেলায় ঠিকই সব বন্ধু বান্ধব মিলে সায়ুরীর হবু বরকে কতোরকম ব্যাঙ্গই করেছিলো। সায়ুরীর বাবাকেও কম বকা বকেনি। মেয়ের থেকে এতো বছর বড় বয়সী পাএ বেছে নেওয়ায়৷ আজ মনে হচ্ছে সায়ুরীর সেই না হওয়া বরের অভিশাপই তাঁর লেগেছে৷ কিন্তু তাঁর একা কেনো লাগলো? সেদিন তো সে একা কিছু করেনি যা করেছে সব বন্ধুরা মিলেই করেছে। তাঁর ভূমিকা বেশী ছিলো বলেই কি আজ ভাগ্য তাঁকে এই পরিস্থিতিতে ফেললো?

দিহান আর সায়রীও চুপ হয়ে গেছে ৷ বেশ অনেকটা সময় গড়িয়ে যায়৷ কেউ কোন কথা বলেনা৷ ইমনের ফর্সা মুখটা লালচে আভায় ভরে গেছে চোখ দুটোও অসম্ভব পরিমাণে লাল হয়ে আছে৷ বুকের ভিতর তাঁর কি চলছে তা হয়তো কেউ অনুভব করতে পারবেনা। ইমনের অমন অবস্থা দেখে সায়রী শান্ত গলায় বললো,
—- দেখ ইমন তুই আমার বন্ধু এতো বছরের বন্ধুত্বের খাতিরেই বলছি তুই ভুল করছিস। তুই অন্যায় আবদার করছিস। দেখ আমাদের জেনারেশন আর মুসকানের জেনারেশন সম্পূর্ণ আলাদা৷ এক যুগের বেশী ডিফারেন্ট আমাদের ওর সাথে। এতো কম বয়সী কাউকে জীবনসঙ্গী করে তুই না নিজে সুখী হবি আর না ওকে সুখী করতে পারবি৷ আর সবথেকে বড় কথা মুরাদ এসব জানলে তোর সাথে ওর বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে মুসকানও খুব ছোট এসব ফিলিংসের কিছু বুঝবেনা ও। আজ কে তুই ওকে যা বুঝাবি ও সব মেনে নিবে কিন্তু নির্দিষ্ট একটা বয়সে পা দিলে তোর সব বুঝানো ফিকে হয়ে যাবে। তোর ভালো লাগবে পাহাড় ওর ভালো লাগবে সমুদ্র। তুই চাইবি মাটিতে হাটতে ও চাইবে আকাশে উড়তে।

—- আর যদি ওর সব চাওয়া পূর্ণ করি আমি? ওর জন্য আমি আবারো ফিরে যাবো চৌদ্দ বছর আগে। ওকে ভালোবেসে ওর ভালোর জন্য যা করতে হয় সব করবো। আমি ওর সাথে পা মিলিয়ে চলতে চাই। ভালোবেসে ভালো রাখতে চাই ওকে। আমার কোন চাহিদা নেই শুধু ভালোবাসার আর ভালোরাখার সুযোগ টুকু চাই। সায়ু মুরাদ এটুকু দেবেনা আমায়?

—- তুই একজন বিচক্ষণ মানুষ হয়ে এই ভুলটা কি করে করতে পারলি বুঝে আসছে না আমার ইমন। তোর স্ট্রং অনুভূতি আজ এতো নড়বড়ে ওহ গড।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইমন। দিহান হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। রাত একটা ছুঁই ছুঁই। সায়রী ঘড়ির দিকে একবার চেয়ে আবারো ইমনের দিকে তাকালো৷ শান্ত গলায় বলতে শুরু করলো,
—- দেখ ইমন তুই সবদিক দিয়ে বিবেচনা করে দেখ। আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি আশা করি বুঝতে পারবি। শুধু নিজের ফিলিংস কে গুরুত্ব দিয়ে স্বার্থপরের মতো তুই বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারিসনা বা একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারিসনা।
লালবর্ন চোখে তাকালো সায়রীর দিকে ইমন। সায়রী এক ঢোক গিলে বললো,
—- আমি জানি তুই জেদ করলে মুসকানকে নিজের বউরূপেও পাবি। এটা তোর দ্বারা সম্ভব হবে। কিন্তু ভাই জোর করে কিছু আদায় করা কি ঠিক? ধরে নিলাম বিয়ে করলি পুরুষ মানুষ শারীরিক চাহিদারও একটা ব্যাপার আছে৷ ঐটুকুন মেয়ের থেকে কি পাবি? বরং একটা জীবন শেষ হয়ে যাবে।
—- ব্যাস। অনেক বলেছিস তুই আর না। ইমন চৌধুরী কে কি ভাবিস তুই? আমি এতোটাই অমানুষ? বিবেকহীন আমি? আমি ওকে ভালোবেসেছি আর ভালোবাসতে চাই এর বাইরে আর কিছু চাইনা আমার। আমার ক্যারেক্টার সম্পর্কে তোরা ভালোভাবেই অবগত আছিস৷
—- ভুল অবগত ছিলাম কিন্তু এখন নেই৷ আজ ওর প্রতি ভালোবাসার ফিলিংস এসেছে কাল যে শারীরিক চাহিদার জন্য ওর প্রতি ফিলিংস আসবেনা তাঁর কি গ্যারান্টি?

আর নিতে পারলো না ইমন। বসা থেকে ওঠে রাগে হনহন করতে করতে বেরিয়ে গেলো। দিহান বললো,
—- সায়ু তুই শান্ত হো। আমাদের ওর দিকটাও ভাবা উচিত।
—- তুই চুপ কর৷ একদিকে কথা বলবিনা। আমি দুদিক ভেবেই কথা বলছি। আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি আমি আজ ইমনকে দেখে৷ পুরুষ মানুষের আক্কেল জ্ঞান কেনদিনই হবেনা। সে যতো শিক্ষিত,জ্ঞানীবান হিসেবে লোকের কাছে পরিচিত হোকনা কেনো। ভিতরে ভিতরে সবকটা বজ্জাতের হাঁড়ি।
—- শেষমেশ ইমনকে তুই এটা বলছিস?
—- তা নয়তো কি করবো? কোন আক্কেলে নিজের থেকে এতো কমবয়সি কারো প্রতি ওর ফিলিং উতলে ওঠলো?
—- সায়ু ফিলিংস কি বয়স বিবেচনা করে আসে? সায়ু আমাদের মস্তিষ্ক আর মন কিন্তু একভাবে চলে না। দেখ ওর মস্তিষ্ক জানে মুসু ওর থেকে বয়সে অনেক ছোট, মুসু ওর বন্ধুর বোন। ওর মস্তিষ্ক এটুকুতেই সীমাবদ্ধ কিন্তু ওর মন এটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকেনি ওর মন এর থেকেও বেশী কিছু ভেবে ফেলেছে। ওর ভিতর থেকে হয়তো মুসুর জন্য ফিলিংস এসে গেছে। এখানে আমাদের কারো হাত নেই।
দিহানের কথা শুনে সায়ুরী রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেলো,
—- আমার কথা এখন শুনলে ভালো নয়তো ভয়াবহ কিছু ঘটবে দেখে নিস তুই, মিলিয়ে নিস।
.
রুমের দরজা অবদি আসতেই চমকে গেলো সায়ুরী ইমনকে দেখে। মুসকান ঘুমিয়ে আছে আর ইমন এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তাঁর ঘুমন্ত মুখটার দিকে। দূর থেকেও স্পষ্ট বুঝতে পারলো ইমনের চোখ দুটো ঝাপসা। যে চোখে অস্বাভাবিক রাগ,জেদ,দেখে এসেছে এতোগুলো বছর সেই চোখে আজ কারো প্রতি গভীর ভালোবাসা, কাউকে পাওয়ার গভীর আকুলতা,কাউকে হারানোর ভয়, কারো জন্য কষ্ট দেখতে পারছে সে। আর আগালো না সায়ুরী ফিরে গেলো দিহানের কাছে । এতোক্ষন ধরে এতো নীতিবাক্য ছেড়ে শেষে সেও দূর্বল হয়ে গেলো কেমন। ‘ভালোবাসার অনুভূতির কাছে সমস্ত নীতিবাক্যও যে তুচ্ছ’।
.
সারারাত একভাবে বসে ছিলো ইমন। অপলকভাবে চেয়ে ছিলো মুসকানের মুখপানে। মুসকান যখন ঘুমের ঘোরে এপাশ থেকে ওপাশ ফিরেছে ইমনের মুখে যেনো অমাবস্যা নেমে এসেছে। আবার যখন এপাশ ফিরেছে নিজে নিজেই হেসেছে সে। হঠাৎই যেনো জীবনটা তাঁর পাল্টে গেছে। সামনের এই ঘুমন্ত পরীটাই যেনো তাঁর সুখ,দুঃখের একমাএ কারণ এখন। মনে মনে বিরবির করে বললো ইমন, ‘ আমার অনুভূতিগুলো কাউকে বুঝতে হবেনা শুধু আমার স্লিপিং বিউটি বুঝলেই হবে’।
.
ভোরেরদিকে ঘুম ভেঙে যায় মুসকানের। চোখ বুজেই ওঠে বসে সে। বালিশের পাশে হাতরিয়ে হাতরিয়ে চুলের ব্যান্ড খুঁজে নিয়ে চুলগুলো বেঁধে ফেলে। ওয়াশরুম যাবে বলে বিছানা ছেড়ে নামতে নেয়। নিজের বাড়ি, নিজের রুমে, নিজের বিছানা মনে করেই নামতে গিয়ে পড়ে যেতে নিতেই ইমন ধরে ফেলে।

—- আরে চোখ টা খুলে নামবিতো এখনই পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙতি। বলেই ধরে বিছানায় বসাতে যেতেই চোখ আটকে গেলো কানের নিচে ঘাড় বরাবর কালো তিলটার দিকে। কুশি কুশি চুলগুলোর ভিতর স্পষ্ট কালো তিলটা যেনো তাঁর দিকেই চেয়ে আছে। যা দেখে কিছুক্ষণের জন্য হৃদস্পন্দন থেমে গেলো তাঁর। একহাতে মুসকানের কাঁধে ধরে আরেকহাতে স্পর্শ করলো ঘাড়ের ঐ তিলটায়৷

চলবে।
যারা সিজন-১পড়েনি তাঁরাও পড়তে পারবে সিজনটু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here