স্বর্ণাভ সুখানুভূতি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ #নিবেদন,পর্ব-৮,০৯

#স্বর্ণাভ সুখানুভূতি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
#নিবেদন,পর্ব-৮,০৯
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা
০৮

সময়টা দ্বিপ্রহরের প্রথম লগ্ন । পুত্রবধুর কাধে ভর দিয়ে অনিকের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন মায়মুনা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তীর্যক চোখে চাইলেন কালো আবরণে আবৃত মুশরাফার পানে। বিয়ের পর থেকে কিয়ৎপরিমাণ সদাচরণ না করা মানুষটাকে সাহায্য করল কেন মেয়েটা? সে চাইলে খুব সহজেই এড়িয়ে যেতে পারত, ভারটা জাওয়াদের কাধে তুলে দিতে পারত তবে দিল না কেন? প্রশ্নগুলো হানা দিল মস্তিষ্কে। মুশরাফা সিড়িঘরে উঁকি দিয়ে বলল,
‘ আর কিছুক্ষণ দাঁড়ান কষ্ট করে, উনারা এসে পড়বেন এখুনি।’

মায়মুনা তাকালেন সিড়ির দিকে। জাওয়াদ অনিকের সাথে গল্প করতে করতে হেলেদুলে আসছে। তার অসুস্থতায় ছেলের স্বাভাবিক আচরণ দেখে ভ্রু কুঁচকালেন। পরের মেয়ে ব্যতিব্যস্ত হচ্ছে, এদিকে নিজের ছেলে আড্ডায় মজেছে! মায়ের রাগমাখা চাহনি চোখে পড়তেই কথা থামাল জাওয়াদ। দ্রুত পা চালিয়ে এসে দাঁড়াল পাশে। স্ত্রীর কাধে মায়ের হাতটা তখনো আছে দেখে চমৎকার হাসল। হেসে হেসে জিজ্ঞেস করল,
‘ এখন একটু ভালো লাগছে?’

মায়মুনা বিরক্ত হলেন, অভিমানের প্রলেপ ও যোগ হলো মনে। রাগ জমল চোখে। বললেন,
‘ আমার কষ্ট দেখে হাসি পাচ্ছে তোর! ‘

জাওয়াদ হাসি থামিয়ে দিল তড়িৎ। দুঃখী ভান করে বলল, ‘ স্যরি মা, আমি তোমাকে দেখে হাসি নি। অন্যকারণে হেসেছি। স্যরি!’

মায়মুনা চোখ ফিরালেন। জাওয়াদ মায়ের ভার নিজের কাধে নিল। ধীর স্বরে বলল, ‘তোমাদের দুজন একসাথে দেখে ভালো লাগছে আমার। তোমাকে ওর মা মনে হচ্ছিল। ওকে তোমার মেয়ে বলে যখন মনে হবে তখন দৃশ্য গুলো কেমন সুন্দর হবে ভেবেই খুশিতে হাসি পেয়েছিল । বিশ্বাস করো, তোমাদের ভাব হলে, আমার আর কোন দুঃখ থাকবে না।’

থামল জাওয়াদ। মাকে আগলে নিয়ে বলল, ‘ তোমাকে আমি সাত সমুদ্র তেরো নদীর সমান ভালোবাসি। সেই তোমার কষ্ট দেখে আমি হাসব, এটা তুমি ভাবলে কিভাবে মা? তোমার কি একবারও বুক কাঁপল না!’ নাটকীয় ভঙিতে বলল জাওয়াদ।

মায়মুনার রাগ আর টিকল না। হেসে ফেললেন তিনি। আর যাই হোক, এই ছেলের উপর রেগে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। ছেলেটা হতেই দিবে না। জাওয়াদ ও হাসল। তারপর বলল,
‘ আন্টি, ভাবি কেউ আমার সামনে আসবে না। তুমি সবার সাথে রাফাকে পরিচয় করিয়ে দিও। ‘
তারপর রাফাকে বলল,
‘ অনিকদের বাসার পরিবেশ ভিন্ন। আমার সাথে তোমার দেখা হবে না। উনারা খুব ফ্রেন্ডলি, তোমার খারাপ লাগবে না। তাছাড়া মা তো আছেনই। তাই না মা?’

প্রশ্নবোধক চাহনিতে মায়ের পানে তাকাল জাওয়াদ। যার অর্থ, তুমি ওর খেয়াল রাখবে, তাই না? মায়মুনা যে কথার উত্তর দিলেন না। বললেন, ‘আগে ভেতরে যাই। কখন থেকে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিস। কলিংবেল দে।’

কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে গেল। তবে কাউকে দেখা গেল না। অনিক এসে জাওয়াদকে কী যেন ইশারা করল। জাওয়াদ মুশরাফাকে বলল,
‘ ফোন সাথে রেখো।’

মুশরাফা মাথা নাড়াল। জাওয়াদ ভেতরে ঢুকল। সালাম দিতে বসার ঘরে চলে গেল। ও যেতেই দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন রোকসানা। এক গাল হেসে বলল,
‘আসসালামু আলাইকুম, আপা। ভালো আছেন?’ বলে জড়িয়ে ধরলেন। মায়মুনা হেসে উত্তর নিলেন।

মুশরাফাকে দেখিয়ে বললেন, ‘ জাওয়াদের বউ।’
মুশরাফা সালাম দিল। রোকসানা স্নেহের হাসি দিয়ে বললেন, ‘ কতদিন ধরে তোমার পথ চেয়েছিলাম। অবশেষে আমার বাসায় পা পড়ল তোমার। ভালো আছো, মা? আসো ভেতরে আসো।’

দরজা ছাড়লেন তিনি। মুশরাফা উত্তর দিয়ে শ্বাশুড়িকে ভেতরে আনল। রোকসানা তাদের রুমে আনলেন। অনিকের বাবা মারা গেছেন বছর সাতেক হলো। ঘরটায় এখন শুধুই তার বাস।
সেই ক্ষণে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো ঘর্মাক্ত এক নারী। পরনে তার কুর্তি, মাথায় ঘোমটা নেই। মাথার কাপড় টেনে এসে সালাম দিল। ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বলল,
‘পুরো গায়ে ঘাম, কোলাকুলি করতে পারলাম না আন্টি। মনে কষ্ট নিবেন না। ‘
মায়মুনা হেসে বলল, ‘সমস্যা নেই মেয়ে। গরম থেকে এসেছো, ফ্যানের নিচে বসো।’

আয়েশার সাথে মায়মুনার আগে দেখা হয়েছে। কথায় বুঝা গেল। তাদের মাঝে সৌজন্যবোধ নেই।

আয়েশা এসে মুশরাফার খাটের পাশে চেয়ারে বসল। রোকসানা পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘মুশরাফা, ও আয়েশা। আমার ছেলে রায়হানের বউ। আমার মেয়ে। ‘

কী সুন্দর পরিচয়! মুশরাফা অবাক চোখে চাইল। কোন শ্বাশুড়ি কি পুত্রবধুকে এভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে! আয়েশার চেহারায় বিস্ময়ের রেখা নেই। যা প্রমাণ করে, শ্বাশুড়ি এহেন পরিচয়ে সে অভ্যস্ত। ব্যাপার ভীষণ সুন্দর ঠেকল মুশরাফার। আয়েশার সাথে কথা বলে ভালো লাগার মাত্রা বাড়ল। কী অমায়িক ব্যবহার তার। মুশরাফা যখন ভাবি ডাকল, তখন হেসে বলল,
‘ তোমাকে আমার বোনের মতো মনে হয়। আপু ডেকো তো। আমার শুনতে ভালো লাগবে।’

মুশরাফার একমুহূর্তের জন্য মনে হলো, আয়েশা তার আপন বোন। মুশরাফা অস্বস্তি নিয়ে বলল,
‘আপু, এখানে কি ভাইয়ারা কেউ আসবে?’
আয়েশা হেসে বলল,
‘ না। এ বাসায় হুটহাট কেউ এ ঘর থেকে ও ঘর হয়না। আমার তিন দেবর, আমি তাদের সাথে দেখা দিই না। তা জেনে তারাও সামনে আসেনা। রায়হান না থাকলে, খাবার সময় হলে বা বাইরে যাবার হলে ওরা মাকে ডেকে বলে, মা আমাকে রুমে পাঠিয়ে ওদের ডাকেন। নয়তো দেখছো না, আমি কেমন ঘোমটা ফেলে ঘুরছি! উনারা সামনে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে নিজেকে আবৃত করে রাখতাম।’

মুশরাফার বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ল। পর্দার সৌন্দর্য বোধহয় একেই বলে। দেবর, শ্বাশুড়ি সবাই কী চমৎকার ভাবে ওর পর্দায় সাহায্য করছে! সে ও তো এমন একটা পরিবেশ চেয়েছিল। পাওয়াটা এখন অবধি হয়ে উঠল না। কত সংগ্রাম, কত যন্ত্রণা, কটুকথা সহ্য করে আসছে এই পর্দার জন্য। মনে ঈর্ষা হলো। আয়েশার ভাগ্যটা আল্লাহ তাকে ও দিক। ও মুগ্ধস্বরে বলল,
‘ মাশা আল্লাহ। নিয়মটা চমৎকার! ‘

আয়েশা গর্বের হাসি টানল মুখে। বলল, ‘ জানো? বিয়ের আগে এ নিয়ে আমার কত চিন্তা ছিল। বিয়ের পর পর্দার পরিবেশ পাব কি না। তিন দেবর শুনে আমি ত বিয়েই ভেঙে দিচ্ছিলাম। তারপর রায়হান আর মা নিশ্চয়তা দিয়েছে। আমি এসে এমন পরিবেশই পেয়েছি। আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর হচ্ছে, এখনো বাসার ভেতর দেবরদের মুখোমুখি হতে হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিক। আমার দোয়া আসে শুধু। ‘

আয়েশার স্বর চঞ্চল হয়ে উঠল। ওর স্বরেই সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ফুঁটে উঠছে। মুশরাফা মনে মনে ‘মাশা আল্লাহ ‘ বলল কয়েকবার। বিস্ময় ওর চোখের তারায় ভাসছে। কিছু মানুষ কোন জিনিস না চাইতে ও পেয়ে যায়। আবার কেউ হাজার চেয়ে ও পায় না। হাজার সংগ্রামের পর অর্জন করে নিতে হয় তাদের। তবে যারা সংগ্রাম করে তারাই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। এই যে মুশরাফা পর্দার জন্য সবকিছু সহ্য করছে, এসবের প্রতিদান আল্লাহ দিবেন, আর তা উত্তম রূপে। এ কথা ভাবলেই মুশরাফার মনে আর আফসোস কিংবা আক্ষেপ থাকে না। মুশরাফা হেসে বলল,
‘ মা শা আল্লাহ! আল্লাহ উনাদের উত্তম পুরষ্কার দিক। ‘

‘বোরকা ছেড়ে ফ্যানের নিচে বসো। আমি নাস্তা নিয়ে আসি।’ আয়েশা রান্নাঘরে চলে গেল। মুশরাফা বোরকা খুলে নিশ্চিন্ত মনে বসল। একটু জিরিয়ে রান্নাঘরে গেল। আয়েশা নাস্তা বানাচ্ছে। রোকসানা রান্না দেখছেন। পাশে মোড়া পেতে বসে তার সাথে গল্প করছে মায়মুনা। মুশরাফা গিয়ে আয়েশা বলল,
‘আপু, আমাকে দিন, আমি কিছু করি।’

আয়েশা আপত্তি করল, মুশরাফা জোর করেই ছুরি হাতে নিয়ে আপেল কাটল। ট্রে-তে সাজানোর সময় মুশরাফা বলল, ‘নাস্তা পাঠাবেন কিভাবে, আপু?’

আয়েশা বলল, ‘রায়হান এসে নিয়ে যাবে।’

মুশরাফা ভয় পেল যেন। তা দেখে সে কী হাসি আয়েশার! হাসতে হাসতেই ফোন হাতে তুলে ডায়াল করল। দু’বার রিং হতেই কেটে দিল। এর পরেই বসার ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ এলো কানে। মৃদু ডাক এলো এর পর, ‘আয়েশা?’
সেই ডাক অনুসরণ করে আয়েশা ট্রে হাতে গেল বসার ঘরে। সেকেন্ড কয়েক বাদে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে ফিরল। যাবার কালে ওকে এত খুশি দেখায়নি, বোধহয় প্রিয়তমই সেই খুশির কারণ। মুশরাফা মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইল ওর পানে।

সময় গড়ানোর সাথে সাথে ওর বিস্ময়ের মাত্রা যেন বাড়তে থাকল। চমৎকার কিছু দৃশ্য চোখে পড়ল। আজান পড়তেই বসার ঘরটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল, খানিক বাদে পাঁচ জোড়া পায়ের শব্দ শোনা গেল। সেই শব্দ বিলীন হলো সদর দরজায়। একটা পুরুষ কন্ঠ শোনা গেল, ‘আমরা নামাজে যাচ্ছি। দরজা লাগিয়ে দাও, মা।’

দরজা লাগিয়ে এসে রোকসানা বললেন, ‘যতটুকু হয়েছে ততটুকুতেই থাক। গোসলে যাও তুমি। আগে নামাজ, পরে কাজ।’

ঢাকনা দিয়ে ঢেকে বউ শ্বাশুড়ি বের হলো। গোসলে ঢুকল। মুশরাফা ও অযু করে এসে নামাজে দাঁড়াল। আয়েশা গোসল শেষে নামাজে দাঁড়াল। জাগতিক সব কিছু ভুলে অনেক সময় নিয়ে নামাজ পড়ল। রান্নাঘরে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা হাজারটা কাজের চিন্তা দেখা গেল না ওর মাঝে। নামাজ শেষ করে জিকির করল, মোনাজাত করল। ততক্ষণে নামাজ শেষে ফিরেছে ছেলেরা। এবার বোধহয় আড্ডা বসেছে অনিকের ঘরে।
আয়েশা জায়নামাজ গুছিয়ে ছুটল রান্নাঘরে। বাটি বাটি খাবার এনে সাজালো টেবিল। তারপর ফিরল রুমে। ফোন কানে লাগাল আবার। অন্যসময় ডাকার কাজটা মায়মুনার কাধে থাকে। নিজের ছেলেদের তিনিই ডাকেন। মেহমান এলে আয়েশা ফোনের মাধ্যমে স্বামীকে ডাকে। খাবার সার্ভ করার দায়িত্ব থাকে অনিকদের চার ভাইয়ের উপর। ওখানে কোন নারীর প্রবেশ হয়না। এমন কি, বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হলে ও নিজেরা নেয়।

ছেলেদের খাবার শেষ হবার পর রায়হানের ফোন পেয়ে মুশরাফাকে নিয়ে বের হলো আয়েশা। টেবিলে খাবার সার্ভ করাই পেল। পরিষ্কার প্লেট, বাটি। মুশরাফা চমকে প্রশ্ন করল, ‘উনারা না সবে খেয়ে গেল। তবে প্লেট গুলো এঁটো হয়নি কেন?’

আয়েশা গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল, ‘ স্ত্রীর কাজে সাহায্য করা সুন্নত কি না! সেই সুন্নতই পরিষ্কার করিয়েছে এসব।’ আয়েশার চেহারায় সেই সুখমাখা হাসি। সেই হাসি প্রকাশ পাচ্ছে স্বামীর প্রতি সন্তুষ্টতা।

জাওয়াদের কথা মনে পড়ল মুশরাফার । জাওয়াদ ও তো ওকে সাহায্য করে, তবে সরাসরি করে না। কত বাহানার আশ্রয় নেয়! এই যে সেদিন কাকনের পরিবার এসেছে, ওর উপর কাজের চাপ পরে যাচ্ছে বলে বাহানা দিয়ে রুমে ডেকে পাঞ্জাবি ভাজ কর‍তে বসিয়ে দিল। তারপর বিকেলে মামা মামীকে ডেকে ওকে মামা বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। না বললে ও সব টের পায় মুশরাফা। ভালোবাসা দেখতে যেমন সুন্দর, অনুভব করতে ও তেমন সুন্দর। হোক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ। মুশরাফা হেসে বসল।

একটা খালি প্লেটে একটা গলদা চিংড়ি রাখা। আয়েশা মায়মুনা আর রোকসানাকে ডেকে এসে সেই প্লেট টেনে বসল। তা দেখে মুশরাফা রসিকতা করে বলল,
‘ এই চিংড়িটা যেন ‘আয়েশা তোমার জন্য’ বলে উঠছে। কারণ কী আপু?’

আয়েশা লাজুক হাসল, ‘আসোলে একটা চিংড়ি কম পরেছিল। আমি ওকে বলিনি। টেবিলে সবার জন্য দিয়েছিলাম। ও বোধহয় বাজার থেকে আনার সময়ই টের পেয়েছে। ‘

মুশরাফার স্মরণে আবার হানা দিল জাওয়াদ, সেই এঁটো পরোটা, আইসক্রিম । মুশরাফা আনমনে হেসে উঠল। ওকে হাসতে দেখে আয়েশা ভ্রু কুঁচকাল, ‘তুমি হাসছ কেন? কিছু মনে পড়েছে বুঝি!’ ওর স্বরে দুষ্টুমি।

লাজুক হাসল জাওয়াদের রাফাও। প্রসঙ্গ ঘুরাল। খাবারের দিকে চোখ বুলিয়ে বলল,
‘ আপনি কি জানেন? এখন আপনাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করছে?’

আয়েশা ভ্রু কুঁচকাল, ‘কিভাবে?’

মুশরাফা বলল, ‘ হাদিসে এসেছে, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মেহমানের সামনে দস্তরখানে খাবার পরিবেশন করা থাকে; ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা মেজবানের(গৃহস্থ) জন্য আল্লাহর রহমতের দোয়া করতে থাকেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ফেরেশতারা আপনাদের জন্য দোয়া করছে। ‘

আয়েশা মুগ্ধ স্বরে বলল, ‘ সুবহানাল্লাহ! কী সুন্দর হাদিস! আমি জানতাম না। জাযাকিল্লাহু খায়রান। তোমার জানা বিষয় আমার সাথে শেয়ার করো তো!’ নতুন কিছু জানার খুশিতে উৎফুল্ল আয়েশার চোখ মুখ। অকপটে স্বীকার করল, নিজের অজ্ঞতা। কোন জড়তা নেই। অথচ মানুষ ‘জানি না’ শব্দ উচ্চারণের মাঝে নিজের ভাবমূর্তি নষ্টের আভাস পায়।

ওর এই সরলতা ভালো লাগল মুশরাফার। হেসে বলল,
‘ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন মেহমানের সমাদর করে এবং তার হক আদায় করে।’

সবেই ডাইনিং রুমে পা পড়েছে দুই শ্বাশুড়ির। মায়মুনার পা ঠিক হয়ে গেছে। আপাতত সুস্থ বলা যায় তাকে। মুশরাফার কথা কানে গেলে রোকসানা ধীর স্বরে মায়মুনার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘মাশা আল্লাহ! মেয়েটার ধর্মীয় জ্ঞান চমৎকার। আসার পর থেকে খেয়াল করলাম আপা, মেয়েটা আসোলেই অমায়িক। ভদ্র, নম্র, ধার্মিকতা সব গুণ আছে দেখি। মাশা আল্লাহ! আমি যখন আয়েশাকে দেখি, তখন আমার মনে হয়, আমি পুত্রবধু আনিনি। আল্লাহর রহমত এনেছি। এমন একজন মানুষ ঘরে থাকলে ঘরটা আল্লাহর রহমতে ঘিরে থাকে। নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবতী মনে হয়। এখন মনে হচ্ছে, আমি একা নয়, আপনি ও আমার দলে আছেন।’
সরলমনা রোকসানা উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মাতলেন।

অপছন্দনীয় পুত্রবধুর সম্পর্কে এহেন মন্তব্য শুনে মায়মুনা ইতিউতি করলেন। তাকে খুশি হতে দেখা গেল না। তবে বিরক্তের রেখা ও কপালে টানা রইল না। যাকে কখনো মূল্যায়ন করেননি, সেই মেয়েটা আজ উনার মূল্য বাড়াল! ওর কারণে রোকসানার চোখ উনিও ভালো হলেন, ভাগ্যবতী হলেন। আসোলেই কি ভাগ্যবতী উনি? মায়মুনা অদূরে বসা পুত্রবধূর দিকে তাকালেন। মুশরাফা উনাকে দেখেই উঠে এলো। বলল,
‘আপনার পায়ে ব্যাথা কমেছে, মা?’ বলে নিজেই ধরে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল। তার পাশে বসে এটা ওটা এগিয়ে দিল। রোকসানা আর আয়েশা এসে সার্ভের দায়িত্ব নিলে ও শ্বাশুড়ির দেখভালের দায়িত্বটা হেলা করল না। এক পর্যায়ে মায়মুনা কপালে বিরক্তির ভাজ পেলে বললেন,
‘ কিছু লাগলে আমি নিয়ে খাব। তুমি নিজের খাওয়ায় মন দাও।’

সবার সামনে না আবার বকে দেন, এই ভয়ে মুশরাফা চুপ করে গেল। খাওয়ায় মন দিল। মায়মুনা ধীর স্বরে বললেন, ‘আপা এত ঝামেলা করতে গেলেন কেন? আমাদের জন্য ডাল ভাত হলেই হতো। শুধু শুধু টাকা নষ্ট করলেন।’

উত্তরটা আয়েশা দিল, হেসে,
‘আন্টি, মেহমান আল্লাহর রহমত। পরিবারে মেহমান আসলে, আল্লাহ তাআলা রহমত ও বরকত নাজিল করেন। আপনারা এসে যে খাবার গ্রহণ করছেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃত আপনাদের জন্য নির্ধারিত রিজিক। আপনারা আপনাদের রিজিক গ্রহণ করছেন, আমাদের নয়। টাকা নষ্ট হয়নি, বরং আল্লাহর রহমত অর্জিত হয়েছে। ‘

খাওয়ার মাঝে মালাই পাবদার বাটি তুলে রোকসানা বললেন, ‘মুশরাফা তোমাকে আরেকটা মাছ দিই?’

রোকসানা মুশরাফার পাতে তুলে দিতে গেলে, মুশরাফা বললেন, ‘ একটা এখনো শেষ করতে পারিনি আন্টি। আপনি বসুন, কিছু লাগলে আমি নিব।’

রোকসানা দিলেন না। খাবারের ব্যাপারে কাউকে জোরাজোরি করা অনুচিত। সবার নিজের পছন্দসই খাওয়ার অধিকার আছে। মায়মুনা নিজের জন্য কোল্ড ড্রিংক ঢেলে নেয়ার সময় মুশরাফার সামনে থাকা গ্লাসে ও ঢাললেন। কিছু না বলে ঠেলে দিলেন মুশরাফার দিকে। আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। এই ছোট্টো কাজটা মুশরাফাকে ভীষণ অবাক করল। শ্বাশুড়ির কাছ থেকে ছোট্টো যত্ন পেয়ে কী খুশি হলো ও! চমৎকার হাসল। মায়মুনা ভ্রু কুঁচকে চোখ ফেরালেন। বললেন,
‘ কলা ভর্তাটা খেয়ে দেখো, ভীষণ মজা হয়েছে। ‘ বলে নিজেই তুলে দিলে পুত্রবধূর পাতে।

মুশরাফাকে ভীষণ খুশি দেখাচ্ছে। যে হারানো কিছু খুঁজে পেয়েছে। এই মুহুর্তে মায়মুনাকে ওর আপন আপন লাগছে। এই আপনভাবটা কত খুঁজেছিল শ্বাশুড়ির মাঝে। বিয়ের ছ’মাস বাদে প্রথম শ্বাশুড়ি সাথে খেতে বসেছে সে, সেই বসায় শ্বাশুড়ি আপ্যায়নের সুযোগ পেল এর চেয়ে আনন্দের কী হতে পারে!’

চলবে…

স্বর্ণাভ সুখানুভূতি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। (পর্ব-৯)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

দুপুরের খাবারের পর গল্পের আসর বসেছে রোকসানার ঘরে। চার নারী নিজেদের জীবনের নানাবিধ ঘটনা বর্ণনা করছেন। মুশরাফা খাবার ঘর থেকে খেয়াল করছে মায়মুনার কোমল আচরণ। ওর সাথে সেভাবে কথা না বললেও তাকাচ্ছেন নরম চোখে। মুশরাফার ভীষণ আপন লাগছে আজ শ্বাশুড়িকে। ঠোঁটের কোণের হাসি সরছেই না। আড্ডাকালে ফোন বেজে উঠল। কানে দিতেই অপাশ থেকে জাওয়াদ কেবল একটা কথাই বলল,
‘ তোমার ফোনের চার্জারটা দাও তো।’

উত্তরে মুশরাফা ছোটো করে উত্তর দিল, ‘ ডাইনিং এ আসুন। ‘

ফোন রাখতেই মায়মুনা মাথা তুলে বললেন, ‘জাওয়াদ?’
মুশরাফা সায় জানালে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী বলছে?’
‘ফোনের চার্জার দিতে বললেন।’
‘তো, যাও!’

মুশরাফা হ্যান্ড ব্যাগ খুঁজে চার্জার নিল। উঠার আগে আয়েশা আর রোকসানার উদ্দেশ্যে বলল,
‘আপনারা রুমে থাকুন, আমি উনাকে ডাইনিংরুমে ডেকেছি।’

রোকসানা কোমল হাসলেন। মুশরাফা চার্জার হাতে বের হলো। জাওয়াদ চেয়ারের হাতল ধরে দাঁড়ানো। মুশরাফা দ্রুত পা পেলে এগিয়ে গেল। তাকাল এক পলক। যেন কত কাল দেখেনি মানুষটাকে। দেখেই প্রাণ জুড়ে এলো। মুশরাফা প্রসন্ন হেসে বলল,
‘আসসালামু আলাইকুম।’

জাওয়াদের মুখে ও প্রসন্নতা স্পষ্ট। সালামের উত্তর নিয়ে বাঁকা চোখে চেয়ে বলল,
‘ এত মিস করছিলে আমায় যে দেখেই দৌড় দিলে!’

মুশরাফা চার্জার বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ চার্জারের বাহানায় দেখা করতে কিন্তু আমি ডাকি নি।’ ঠোঁট চেপে হাসল সে। জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকে বিরক্তির ভান করে বলল,
‘ আমার খেয়েদেয়ে কাজ নেই তো, আমি তোমাকে মিস করব।’
‘আসোলেই, লাঞ্চের পর আপনার আপাতত কোন কাজ নেই। সুতরাং অলসমন আমাকে মিস করতেই পারে।’ মুশরাফার হাসি বাড়ছে।

জাওয়াদ নিজের ফোন বের করে মুশরাফার সামনে ধরল। বলল,
‘সি, ২৫% চার্জ আছে। তুমি যে সবসময় এক পাতা বেশি বুঝো তার প্রমাণ। ‘

জাওয়াদের ফোনের ব্যাটারি কোয়ালিটি ভালো। এই পঁচিশ পার্সেন্ট দিয়েও কমপক্ষে এক ঘন্টা ফোন চালানো যাবে। তা ছাড়া ফোন চার্জ দেয়ার ধাঁত নেই জাওয়াদের। চার্জ শেষ হয়ে দুই তিন পার্সেন্ট এ এসে যখন দাঁড়ায়, বন্ধ হবে হবে ভাব ঠিক তখন মুখ বাঁকিয়ে ফোন চার্জে রাখে। তা অজানা নয় মুশরাফার। সে হাসি থামিয়ে ভাবুক স্বরে বলল,
‘বুঝতে পেরেছি। ‘
জাওয়াদ বিজয়ী হাসি দিল। মুশরাফা সেই হাসি বিলীন করে বলল,
‘ আপনি আপনার অনুভূতিগুলো সরাসরি প্রকাশ করলে আমি আপনার নামে মামলা করব না, বিশ্বাস করুন!’

জাওয়াদের হাসি থেমে গেল। এই মেয়ে ধুরন্ধর চালাক! কথায় কথায় ওকে জব্দ করার সুযোগ ছাড়ে না। কেমন রাগ নিয়ে তাকাল। মুশরাফা হেসে উঠল। জাওয়াদ ওকে অন্তর্ভেদী চোখে পরখ করে বলল,
‘ তা আজ এত খুশি কেন? সুখবর টবর দিবে না কি!’

মুশরাফার হাসি থেমে গেল এ কথার পর। কেমন লজ্জা অনুভব হলো। জাওয়াদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই দেখল ওর চোখে মুখে দুষ্টুমি খেলা করছে। যার অর্থ লোকটা ইচ্ছে করে ওকে জব্দ করতে চাইছে। সফল ও হয়েছে। এই যে মুশরাফা কেমন বিব্রতবোধ করছে! জাওয়াদ সেই মাত্রা গাঢ় করল,
‘ আমাকে বলতে পারো, আমি কাউকে বলব না। বাচ্চা যখন দুনিয়ায় এসে ওয়া ওয়া কাঁদবে তখন ও আমি কাউকে কিচ্ছুটি বলব না। ‘

‘ ধ্যাৎ! আমি চলে যাচ্ছি।’ লাজুকলতা পালাতে চাইল যেন। জাওয়াদ হেসে হাত ধরে বলল,
‘আরে! কারণ ত বলে যাও।’
‘বলব না।’
‘মা কিছু বলেছে!’ মুশরাফা আবার দাঁড়াল। ওর আড়ষ্টতা বিলীন হলো। বলল,
‘মাকে আপনি কিছু বলেছেন?’
জাওয়াদ না জানার ভান করল, ‘আমি কী বলব তোমার মাকে? ‘
‘বলেন নি! তাহলে উনি হঠাৎ অন্যরকম ব্যবহার করছেন যে!’
‘অন্যরকম মানে!’

মুশরাফা উৎফুল্ল স্বরে বলল, ‘ জানেন, খাবার সময় মা আমাকে আপ্যায়ন করেছেন।’

মুশরাফা হাসছে। ওকে সুখী দেখাচ্ছে। পাতে এটা ওটা তুলে দিতেই এত খুশি, আচ্ছা মা যেদিন ওকে মেয়ের মতো আগলে নিবেন তখন কেমন খুশি হবে ও! ভেবেই আপনমনে হাসল জাওয়াদ। বিড়বিড় করে দোয়া করল, আল্লাহ এই নারীর সুখ স্থায়ী করুক। স্বামী স্ত্রী যখন খুনসুটিতে মাতে তখন সেই দৃশ্য দেখে আল্লাহ আরশ কেঁপে উঠে।
জাওয়াদ হেসে বলল,
‘ এই খুশিতেই তাহলে ফেটে পড়ছে মুশরাফা আহমেদ? ‘

মুশরাফা প্রথমে হাসল। পরক্ষণেই বলল, ‘মুশরাফা সিদ্দিকী। ‘
‘আহমেদ এ কী সমস্যা?’
‘মেয়েদের নামের সাথে বাবার নাম ছাড়া অন্য কারো নাম জড়ানো সুন্নত পরিপন্থী কাজ। ‘

‘স্বামীর নাম ও জড়ানো যাবে না?’
‘না। ‘
‘কেন!’ জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকাল।

‘ স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে কোন রক্ত সম্পর্ক থাকে না কিন্তু বাবা-মেয়ের রক্ত সম্পর্ক চিরদিনের।
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে মনোমালিন্য হলে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে তখন এই নাম থাকে না।
স্বামী মারা গেলে স্ত্রী অন্য পুরুষকে বিয়ে করতে পারে, তখন এই নামের কী দশা হবে তা সহজেই অনুমেয়।
কেয়ামতের দিন আল্লাহ সবাইকে তার বাবার নাম ধরে ডাকবেন।’

‘আজকাল ত সবাই এটাকে সম্মান মনে করে।’
‘এত সম্মানজনক হলে রাসূল (সাঃ) এর স্ত্রীগণ তাদের নামের সাথে রাসূলের নাম ব্যবহার করতে নিশ্চয়ই। কিছু তারা তা করেন নি। তারা বাবার নাম এবং নিজের নামেই পরিচিত হয়েছিলেন। ‘

জাওয়াদ শুনল, বুঝল। তারপর বলল, ‘তবে মুশরাফা সিদ্দিকীই থাকুক। ‘

বিকেল মুশরাফারা তৈরি হয়ে নিল। রোকসানা কিছুতেই যেতে দিতে রাজি নন, পরে মুশরাফাই তার পরীক্ষার কথা বলে মানাল। মুশরাফা দুই নারী থেকে বিদায় নিয়ে গৃহস্থের জন্য দোয়া করল,
‘আল্লাহুম্মা বারিক লাহুম ফিমা রাযাক্বতাহুম ওয়াগফিরলাহুম, ওয়ারহামহুম। অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে যে রিযিক প্রদান করেছেন, তাতে তাদের জন্য বরকত প্রদান করুন। তাদর পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি রহমত নাজিল করুন। (মুসলিম, মিশকাত) ‘

জাওয়াদ আগে চলে গেছে অনিকের সাথে। আয়েশা, রোকসানা মুশরাফাদের এগিয়ে দিলেন দরজা অবধি।

গাড়িতে জাওয়াদ জিজ্ঞেস করল, ‘ওখানে ভালো লেগেছে?’
মুশরাফার প্রসন্ন উত্তর, ‘হ্যাঁ। কী চমৎকার উনাদের বাসার পরিবেশ! একটা পর্দাশীল মেয়ের জন্য এর চেয়ে সুন্দর অর্জন হতেই পারে না। কী সুন্দর! মাশা আল্লাহ!’

মুশরাফা মনের ভাব প্রকাশ করেছে কেবল। আগে পরে কিছু ভাবে নি। ওর কথায় জাওয়াদ চট করে মায়ের দিকে তাকাল। ওর চোখ যেন বলে উঠল, মা আমরা কি ওকে এমন একটা পরিবেশ দিতে পারি না?

মায়মুনা নির্লিপ্ত চেয়ে চোখ সরালেন। সন্ধ্যা নাগাদ ওরা বাসায় ফিরল। কাকনের পরিবার চলে গেছে কাল। সাথে করে কাকনকে ও নিয়ে গেছে। দুপুরের রান্না হয়নি। মুশরাফা মাগরিবের নামাজ পড়ে ক্লান্ত শরীরে রান্না ঘরে চলে গেল। রাতের খাবার রান্না করে আবার পড়তে বসতে হবে। মায়মুনা নামাজ পড়ে এসে ওকে রান্নাঘরে দেখে ধমকে উঠলেন,
‘ এই অসময়ে রান্নাঘরে কী?’

মুশরাফা আঁতকে উঠল। ধীর স্বরে বলল, ‘ডিনার রেডি করছি। ‘
‘এখন কিসের ডিনার?’
‘ডিনার রেডি করে পড়তে বসব।’
‘ডিনার রেডি করা লাগবে না।’ গম্ভীরমুখে বললেন মায়মুনা। মুশরাফা প্রশ্ন করল,
‘কেন মা? ‘
‘বাইরে থেকে খাবার আনাব। যাও তুমি।’

মুশরাফা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এত পথ পাড়ি দিয়ে এসে রান্না করবার শক্তি নেই, তারউপর পড়ার চাপ। হেসে বলল, ‘জাযাকিল্লাহু খায়রান। ‘

মায়মুনা ভ্রু কুঁচকালেন, ‘ এটার মানে কী’
‘ এর বিনিময়ে আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক।’
চমৎকার এই দোয়ায় মায়মুনা চমকালেন বেশ। মেয়েটা উনার জন্য এত সুন্দর দোয়া করেছেন! ভ্রু নাড়ালেন। স্বর নরম করে বললেন,
‘রুমে গিয়ে জাওয়াদকে পাঠাও।’

মুশরাফা গিয়ে জাওয়াদকে পাঠাল। জাওয়াদকে দেখে মায়মুনা বললেন,
‘বাইরে গেলে আসার সময় খাবার নিয়ে আসিস।’

জাওয়াদ হাসতে হাসতে বলল, ‘ মায়া হয়ে গেছে, মা!’

মায়মুনা রুমে যেতে যেতে বলল, ‘তোর বউকে বলবি উল্টাপাল্টা কাজ না করতে, আমার মেজাজ গরম হয়। ‘

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here