সেই_চিরচেনা_তুমি,অস্তিম_পর্ব

#সেই_চিরচেনা_তুমি,অস্তিম_পর্ব
#Alisha_Anjum

— সমুদ্র? এবার কি একটা বিয়ে করা যায় না?

সমুদ্র মায়ের পাশে বসে ঝিমচ্ছিল। রাত হয়তো তিনটা হবে। এতো গভীর রাতে মায়ের কথা শুনে সমুদ্র ঝট করে চোখ খুলল। অলসতা দৌড়ে পালালো। মা এ কোণ ব্যাথায় ঠোকর দিল? সমুদ্রের মা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে। সমুদ্র মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। এলোমেলো দৃষ্টিতে বলে উঠলো

— আগে তুমি সুস্থ হও তারপর ভাবা যাবে এসব নিয়ে।

— বয়স তো হলো বাবা। একত্রিশ পার করছিস। তোর বন্ধু বান্ধবরা বাচ্চার বাবা হয়ে গেলো। আমি কি মরার আগে আমার বড় ছেলের সুখ দেখতে পারবো না?

সমুদ্র চুপ হয়ে আছে। মন যে ভীষণ বিরোধিতা করে। নয়নতারা ছাড়া সে অন্য কারোর সাথে ঘর বাঁধার কথা ভাবনাতেও ঠাঁই দিতে পারে না। সেই ২৬ বছর বয়সে নয়নতারা কে ঠাঁই দেওয়া। নয়নতারার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠা। অসাধারণ এক রমনী নয়নতারাকে সে হুট করেই অজান্তে মন দিয়ে বসে। তারপর আর রক্ষে হলো না। নয়নতারা তাকে ভালোবাসে না। শুধুই প্রিয় ভাবে, বন্ধু ভাবে। কিন্তু সমুদ্র মানতে পারলো না। ছেলেরা পারে না সবকিছু দ্রুত স্বাভাবিক করে নিতে। নেশায় মাতলো সমুদ্র। সংসারের অর্থ দিনকে দিন নষ্ট করলো নিজ হাতে।

— এবার কথা দে তুই আমাকে বউয়ের মুখ দেখাবি।

সমুদ্রের ভাবনার মাঝেই মায়ের কন্ঠ। সমুদ্রের হাত তার মায়ের মুঠোয়। সমুদ্র আলতো স্পর্শে হাত সরিয়ে নিলো মায়ের থেকে। হঠাৎ কি মনে করে সে বলে উঠলো

— হ্যা মা এবার তুমি ছেলের বউ দেখবে।

কথাটা বলে সে হনহন করে ছুটলো কোথাও। তার মা পিছন থেকে তাকিয়ে রইলো ছেলের দিকে। সমুদ্র অবুঝের মতো এই গভীর রাতে বেড়িয়ে এলো ঘর থেকে। পকেট থেকে বের করলো ওয়ালেট। তাতে নয়নতারার একখানা ছবি ছিল। সমুদ্র একটু সময় নিয়ে দেখলো সেই ছবি। তারপর তীব্র জেদ নিয়ে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলো। সব চিহ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক। ভালোবাসা শুধুই মরিচিকা। এতে শান্তি নেই। ভালোবাসা শুধু পারে চোখে ঘাঁ তৈরি করতে। সমুদ্র আর নয়নতারার জন্য অপেক্ষায় থাকবে না। এবার সময় নিজের জন্য বাঁচার। মায়ের মুখে হাসি ফোটাবার।

🍁
প্রিয়তমার ছবি আগুনে দগ্ধ করে সমুদ্র হাটছে গভীর রাতের অন্ধকার পথে। পেছনে আসছে নয়নতারা সে সব দেখেছে। সমুদ্রের নাগালে যেতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে। ল্যামপোস্টের আলো দেখা যাচ্ছে সমুদ্র তার থেকে অনেক দূরে। নয়নতারা দৌড়ে দৌড়ে আসছে। দৌড়াতে দৌড়াতে এক সময় সে সমুদ্রের সাথে উঠলো। নয়নতারাকে দেখে সমুদ্র চমকে উঠলো। সে ভীষণ অবাক হয়ে হাঁটার গতি রোধ করতে বাধ্য হলো। নয়নতারা খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। সমুদ্র রেগে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়লো

— কি সমস্যা?

— ডাক্তারদের সমস্যা থাকে না।

— তাহলে আমার পিছু কি?

— আপনার পিছু আসলে দোষ কি?

— ইয়ার্কি হচ্ছে? মেজাজ কিন্তু গরম নয়ন।

— আমার মন ভীষণ নরম। ইয়ার্কি আমি পারি না প্রিয়জন।

— নয়নতারা?

— দিচ্ছি তো সাড়া!

— ভালো হবে না কিন্তু।

— কষ্টটা প্রসমিত হবে তবু।

— মায়ায় ফেলো না পুনরায়। দোহাই তোমার। আমি ভালোভাবে বাঁচতে চাই।

— আমি ডাক্তার থাকতে আপনার কোনো চিন্তা নাই।

— সত্যিই বিরক্ত হচ্ছি।

— তাতে আমার কি!

— পথ ছাড়ো

— হাত ধরবো।

— আমাদের সম্পর্ক আগের মতো নেই

— নতুন করে গড়বো। নতুন নাম দেবো।

— তোর কবিতা শোনার টাইম আমার নেই। সর তুই সামনে থেকে।

— এভাবে বললে কিন্তু কষ্ট লাগে।

বেশ হয়েছে নয়নতারার ঢং। সমুদ্র মানতে পারলো না। রেগে সে নয়নতারার দুই বাহু চেপে ধরে উচ্চস্বরে বলে উঠলো

— কি চাও তুমি? কি শুরু করেছো?

— আমি সব দেখেছি।

নয়নতারার কথায় সমুদ্রের রাগ নিমিষেই উবে গেল। এক ঝাঁক আপত্তি এসে জেঁকে বসলো মনে। নয়নতারা কি দেখে নিয়েছে তার ছবি পোড়া? সমুদ্র থমকানো ভাব নিয়ে বলল

— কি দেখেছো তুমি?

— আন্টির কথা থোকে ছবি পোড়া পর্যন্ত সব।

নয়নতারার কথায় সমুদ্র মুখ ঘুরিয়ে নিলো নয়নতারা থেকে। নয়নতারা সমুদ্রকে আরো অপ্রস্তুত করতে পুনরায় সামনে গেল সমুদ্রের। সমুদ্র ঢলঢল চাহনিতে চাইলো নয়নতারার দিকে। মনে ভীষণ কষ্ট চেপে বলে উঠলো

— আগে থেকেই তো সব জানো। তখন মায়া হয়নি?

নয়নতারা মুচকি হাসলো। বলল

— প্রেম কি আগে বুঝিনি। ভালোবাসা মানিনি।

— আজ মানো?

— জানি না। তবে আপনার জন্য খুব মন কাঁদে। খুব দেখতে ইচ্ছে করে আপনাকে। আপনার সাথে সময় কাটানোর জন্য মন ছটফট করে।

সমুদ্র জিজ্ঞেস করলো

— আর?

— আর সবসময় আপনার পাশে থাকতে ইচ্ছে করে। আপনার মতো কেউ আমাকে বোঝে না।

— ভালোবাসো?

এ প্রশ্নে নয়নতারা নুইয়ে পড়লো। সে সত্যিই জানে না। ভালোবাসে কনা সমুদ্রকে। শুধু সমুদ্রের জন্য ওমন ওমনই লাগে। মন ছটফট করে।

— জানি না। কিন্তু আপনাকে বিয়ে করবো।

সমুদ্র নয়নতারার কথার পিঠে বলার কিছু পেলো না।সে হনহন করে হাঁটা দিলো সামনের দিকে। নয়নতারা যেন বেকুব হয়ে গেল। একটু সময় নিয়ে বুঝতে চাইলো আসলে কি হলো বিষয়টা? কিন্তু সবই নয়নতারার মাথার উপর দিয়ে গেলো। সে ছুট দিলো সমুদ্রের পিছু। পিছু ডাক দিয়ে বলল

— কি হলো আপনার? আজব?

সমুদ্র পেছন না ফিরেই বলে উঠলো

— যে কষ্ট দিছো সেটা আগে ভোগ করতে হবে তোমাকে। আমাকে এখন ডিসটার্ব কোরো না। আমি কাজে যাচ্ছি।

পেছন থেকে নয়নতারা চিল্লায়ে বলে উঠলো

— এতো রাতে আপনার আবার কি কাজ!

— ডাকাতি করতে যাচ্ছি। মায়ের অপারেশনের জন্য টাকা দরকার।

— সে তো ঝিনুক আজ বাবার থেকে নিয়ে এসেছে। জমা দেওয়াও হয়ে গেছে।

নয়নতারার কথায় সমুদ্র ঝট করে থেমে গেলো। কি বলল নয়নতারা? টাকা ঝিনুক এনেছে বাপের বাড়ি থেকে? জমা দেওয়াও হয়ে গেছে? সমুদ্র তড়িৎ বেগে পেছন ফিরে নয়নতারার কাছে চলে এলো। হুটোপুটি খেয়ে বলে উঠলো

— কি বললে?

নয়নতারা যেন সুযোগ পেয়ে বসলো। আলগা ঢংয়ে গা ভাসিয়ে দিতে সে দ্বিধা বোধ করলো না। সামুদ্রকে পেছনে ফেলে নিজে সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলল

— সরি আমি এক কথা দুবার বলি না।

সমুদ্র নয়নতারার পিছু নিয়ে বলল

— নয়ন ঢং কোরো না। ঝিনুক কেন টাকা এনেছে?… নয়ন দাঁড়াও আমি অন্যের টাকা দিয়ে মায়ের অপারেশন করবো না।

নয়নতারা থামলো না। সমুদ্র বলে উঠলো

— হসপিটালে চলো। তোমাদের টাকা ফেরত দেবো। আসে হসপিটালে যাবো।….. নয়নতারা? তুমি কি প্রতিশোধ নিচ্ছো আমার সাথে?

নয়নতারা হেসে উঠলো। আসলেই সে প্রতিশোধ নিচ্ছে। অনেক হাটিয়েছে সমুদ্র। এবার ইটের বদলে পাটকেল খাবে সমুদ্র। নয়নতারা মুখ ফিরিয়ে পিছনে তাকিয়ে বলল

— টিট ফর ট্যাট শখা।

সমুদ্র বেজায় বিরক্ত। সে মুখ কুঁচকে বলল

— এই ভাবেই হাঁটতে থাকবে? থামো।

— নো। একদম কাজি অফিসের সামনে থামবো।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here