সৃজা পর্বঃ১০,১১

সৃজা
পর্বঃ১০,১১
লেখিকাঃআরুনীয়া চৌধুরী
পর্বঃ১০

মামা এসেছেন সাফওয়ানের কেসটা তদন্ত করতে।আগে নাকি তিনি বাংলাদেশ সিআইডির গুরুত্বপূর্ণ অফিসার ছিলো।পরে কোনো কারণে চাকরি বাদ দিয়ে এখন দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ায়।শুধুমাত্র আমার শাশুড়ী মায়ের সাথেই তার যোগাযোগ আছে।আমার শাশুড়ীরা পাঁচ ভাই বোন।একটাই ভাই তাদের সবার ছোট।কোনো এক অজানা কারণে শুধু আম্মার সাথে তার সম্পর্ক আছে।তবে আমার শ্বশুর মশায়ের কথা শুনে বোঝা গেলো এ বাড়ির সাথেও ওনার খুব একটা ভালো সম্পর্ক নেই।

মামা মানুষটা একটা আস্ত রহস্য। সে রহস্য ভেদ করার ইচ্ছে আমার আপাতত নেই।মনটা শুধু সাফওয়ানের ভাবনায় বিভোর আছে।সকালে নাস্তা করেই মামা বেড়িয়ে গেছে।তিনি সাফওয়ানের থেকে আগে পুরো ব্যাপারটা শুনেছে।কিছু না বললেও মনে হচ্ছে অপরাধী বের করা তার বা হাতের খেলা।

বাড়ির সবাই স্বাভাবিক ব্যবহার করলেও আমার মন থেকে কোনোকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে না।বিকেলে স্যার আসলো পড়াতে।কিন্তু আমি কিছুই পড়িনি।চুপ করে এসে বসলাম।আর দিনের মতো প্রশ্ন করলাম না।স্যার নিজে থেকেই আজ কথা বললেন

“মিসেস.চৌধুরী জীবনে অনেক সমস্যাই আসবে তাই বলে স্বাভাবিক কাজগুলো ব্যাহত করবেন না।নিজেকে মন থেকে শক্ত করতে শিখুন।”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।তিনি বলতে লাগলেন

“আমি আজ আপনাকে একটা গল্প শুনাবো।এটা আমারই গল্প।”

“আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন আমার বাবা মারা যায়।পরিবারের বড় সন্তান ছিলাম আমি।ছোট ছোট চারটা ভাইবোন আর অসহায় মায়ের দায়িত্ব ছিলো আমার উপর।প্রথম কয়েক বছর বাবার জমানো টাকা আর আত্মীয় স্বজনের সাহায্য নিয়ে চলেছি।কিছু করার ছিলো না।এমন পরিস্থিতিও ছিলো না যে পড়া ছেড়ে দিবো।আমার মায়ের স্বপ্ন যত কষ্ট হোক না কেনো পড়াশোনা করতেই হবে৷কলেজ জীবন থেকেই টিউশন করাই।সারাদিন টিউশন আর রাতে নিজের পড়া।মাঝে মাঝে মনে হতো পৃথিবীর সকল কষ্ট স্রষ্টা আমাকে দিয়েছে।কিন্তু না ছোট ভাই বোনদের আমার প্রতি শ্রদ্ধা দেখলেই মনটা ভরে যায়।এখনও আমি আমার পরিবারের খুটি।একটা শার্ট কেনার আগে দশবার ভাবি।আমার কষ্ট হলেও কখনো যাতে ওদের কষ্ট না হয় সেটা ভাবি।” বলতে বলতে স্যারের কন্ঠটা ভারি হয়ে আসলো।

উনি যে এখনো কত কষ্ট করে এটা ওনার পোশাক দেখলেই বোঝা যায়।স্যারের কষ্টের কাছে আমার কষ্ট অতি তুচ্ছ।কোথায় সাগর আর কোথায় এক ফোটা জল।নিজের মনকে শক্ত করার একটা উপায় পেয়ে গেলাম।মন থেকে ভাবলাম আমার শ্বশুর থাকতে তো সাফওয়ানের কিচ্ছু হবে না তাহলে আমি এতো ভাবছি কনো।ভাবনা বাদ দিয়ে ঠিক করে পড় সৃজা।

স্যার চলে যাওয়ার পরও স্টাডি রুম থেকে বেরোলোনা সৃজা।রাত ১১টার দিকে সার্ভেন্ট তাকে ডেকে গেলো।সে ওভাবেই সেখানে রইলো।পড়ার মাঝেই চিন্তা এলো আজতো সাফওয়ান নেই যে তাকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে যাবে।নিজের ভাবনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে স্টাডি রুমেই বসে রইলো।পড়তে পড়তে ভোরের দিকে তার চোখটা তন্দ্রাঘোরে আচ্ছন্ন হলো।

হঠাৎ শূন্যে ভাসার মতো অনুভূতি হলেও প্রগাঢ় ঘুমের কারণে যেনো চোখগুলো খোলা দায়।দুটো বলিষ্ঠ হাত তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আর সে ঘুমাচ্ছে।অনুভূতি তীব্র হতেই ঘুম থেকে ধরফরিয়ে ওঠার চেষ্টা করলো সৃজা।কিন্তু পুরোপুরি উঠতে পারলোনা।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মানুষটির দিকে।

এই তো তার সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি যার জন্য তোর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।হ্যা,সাফওয়ান এসেছে।সে এখন সৃজাকে জড়িয়েই ঘুমিয়ে আছে।সৃজা অবাকের চরম মাত্রায় পৌঁছালো।কিছুক্ষণ কথা বললোনা নির্বাক রইলো।তার অতি কাছের মানুষটাকে দেখলো।তাপর কিছু বলতে নিতেই সাফওয়ান বললো

“উহু নড়চড় করো না।ঘুমে ডিস্টার্ব হয় তো জান।গত দুরাত ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনি।তাই নিজেও ঘুমাও আমাকেও ঘুমাতে দাও।”

সাফওয়ানের কথা শুনে তার মায়া হলো।আহারে!লোকটা দুরাত ঘুমাতে পারেনি আর আমি কিনা ডিস্টার্ব করছি।আবার আগের অবস্থানে ফিরে গেলো সৃজা।তবে চোখের ঘুম চলে গেছে।তাই সাফওয়ানের মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো।সৃজার মনে হাজার প্রশ্ন যার উত্তর সাফওয়ানের কাছেই পাবে সে।

সাফওয়ানের ঘুম গভীর হতেই সৃজা উঠে গেলো।আজ সকালটা সৃজার কাছে অন্যরকম লাগছে।তার মনে হচ্ছে আজ গাছে গাছে প্রজাপতি আর দিনের থেকে বেশি উড়ছে।আর ফুলেরাও বেশি ফুটেছে।সৃজার চোখ সবকিছুই আজ নতুন করে আবিষ্কার করলো।সে বাগানে গিয়ে কিছু তাজা ফুল নিয়ে আসলো তারপর টি-টেবিলের আর্টিফিসিয়াল ফুলগুলো সরিয়ে সেগুলো রাখলো।তাজা ফুলের ঘ্রাণে সৃজার মনটা সতেজ হয়ে গেলো।

১১টার দিকে সাফওয়ানে শাওয়ার নিতে গেলো।
সাফওয়ান যাওয়ার পরপরই সে নিচে গেলো।নামতে নামতে দেখলো টিভিতে নিউজ হচ্ছে

“এতগুলো বাচ্চা অসুস্থ হওয়ার পেছনে চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির কোনো যোগসূত্র নেই।কারণ প্রোডাক্টগুলো সম্পূর্ণ নকল।চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির লোগো ব্যবহার করে তৈরি করা হতো এই নকল জুস।চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি আবারো প্রমাণ করে দিলো তারা দেশের নাম্বার ওয়ান।…….

নিউজটা শুনে সৃজা সস্তি পেলো।সৃজার শাশুড়ী তাকে দেখে মুচকি হাসি দিলো।তিনি সার্ভেন্টকে বলছে আজ কি কি রান্না হবে।সৃজা দাড়িয়ে শুনলো সেটা।সাফওয়ানের পছন্দের সব খাবার হবে আজ।একটু পর সৃজার কাছে আসলেন তিনি

“সাফওয়ান যখন কোনো বিজনেস ট্রীপে বাইরে থাকে তখন আসার পর ওর পছন্দের সব খাবার চাই।এতে নাকি তার মমের ভালোবাসা প্রকাশ পায়।” প্রতিত্তোরে মুচকি হাসলো সৃজা।

“আমি সার্ভেন্টকে বলে দিচ্ছি আজ নাস্তা রুমেই করে নাও।আর তোমার এতো রাত জেগে পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই।এতে শরীর দূর্বল হয়ে যাবে।আর তুমি অসুস্থ হলে সাফওয়ানের চিন্তা বাড়বে সৃজা।”

“জ্বী আম্মা।”

“এখন থেকে ঠিক মতো খাবে কেমন?”

“জ্বী আচ্ছা।”

সাফওয়ান গোসল করে বেরিয়েছে।আজও তার গায়ে শুধু একটা সাদা তোয়ালে।সৃজার মাঝে মাঝে মনে হয় যেকোনো সময় এটা খুলে যাবে।কতক্ষণ দরজায় দাড়িয়ে নিজ স্বামীকে প্রত্যক্ষ করলো সে।কাছে এসে বললো

“ড্রেস পরুন একটু পর সার্ভন্ট আসবে তার সামনে কি এভাবে থাকবেন নাকি?”

“আর ইউ জেলাস সুইটহার্ট? ” সৃজার কোমর আকড়ে ধরে বললো।

“আমি জেলাস হবো কেনো?ব্যস আপনি অন্য মেয়েদের সামনে এভাবে যাবেন না এটাই বললাম।” পরক্ষণেই দরজায় নক হলো।

সার্ভেন্টকে ঢুকতে না দিয়ে নিজেই নাস্তা এনে রাখলো রুমে।ততক্ষণে সাফওয়ান চেঞ্জ করে নিয়েছে।

সাফওয়ানের মামা চলে যাবে একটু পর তাই সাফওয়ান তার সাথে কথা বলছে।বাইরে সবাই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।একটু পর দুজনই বেরিয়ে আসলো।মামা যেভাবে এসেছিলো ঠিক সেভাবেই আবার চলে যাচ্ছে।তবে তার কাছে সবাই কৃতজ্ঞ কারণ তিনি সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন।নিউজ চ্যানেলে এখন শুধু আসল অপরাধীকে দেখাচ্ছে এবং চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির গুণগান গাওয়া হচ্ছে।নিউজ চ্যানেলগুলো এরকমই প্রয়োজন পরলে কাউকে রাস্তায় নামাতে পারে আবার প্রয়োজন পরলে তাকে আকাশেও ওঠাতে পারে।

তবে নিউজটা শুনে মনটা এক প্রকার শান্ত হয়েছে।যদিও আমি এসব ব্যবসা সম্পর্কে খুবই কম জানি তবুও ব্যবসায় শত্রুতা আমার পছন্দ না।

আম্মা মামাকে ধরে কেঁদে ফেলবেন এমন অবস্থা। তবে শেষ পর্যন্ত কাঁদলেন না।অনেক কঠিন নারী উনি সেটা আমি দুদিন আগেই বুঝেছি।সহজে চোখের পানি ফেলে না।সানিয়া আপুও আছে আজ।মামা সানিয়া আপুর উদ্দেশ্যে বললেন

“আম্মু যেটা হয়ে গেছে সেটা পরিবর্তন হবে না।কিন্তু নিজের জীবনটা তো খেলা নয়। আবার নতুন করে সব শুরু করো।আর মামার খোজ নিও মাঝে মাঝে।আমার সেই চঞ্চল ভাগ্নিটাকে খুব মিস করে তো এই মামা।”

সানিয়া আপু এর প্রতিউত্তরে শুধু বললো ঠিকভাবে যাবেন।বলে চলে গেলেন।হয়তো তার চোখও ছলছল করছে।

আমি কি বলে বিদায় দিবো তা জানিনা তবে বললাম

“সাবধানে যাবেন মামা।আর আপনার আরেকটা মেয়ে আছে এটা মনে রাখবেন।মাঝে মাঝে এখানে আসবেন প্লিজ।”

মামা আমার মাথায় হাত রাখলো বললো

“সুখি হও তুমি।এ বাড়ির যোগ্য বউ হয়ে ওঠো।তবে যাই হোক নিজেকে আগে প্রতিষ্ঠিত করবে। মানে পড়াশোনাটা ছাড়বেনা।আর কোনো প্রয়োজন পরলে এই অধম মামাকে স্মরণ করবে।”

সবার কাছে বিদায় নিয়ে তিনি চলে গেলেন।আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি আমার শ্বশুরমশায় তাকে বিদায় দেয়ার সময় ছিলেন না।সাফওয়ানে মামাকে এগিয়ে দিতে গেলেন।

চলবে…..

#সৃজা
পর্বঃ১১
লেখিকাঃআরুনীয়া চৌধুরী

স্টাডি রুমে গেলাম।সার্ভেন্ট পরিস্কার করছে রুম।এ বাড়ির সব ঝকঝকে তকতকে থাকা চাই।আমার শাশুড়ীমা খুবই নিট এন্ড ক্লিন মানুষ উনি ময়লা একদম পছন্দ করে না।ভুলে যদি কোথাও অপরিষ্কার থাকে তাহলে সার্ভেন্টদের সেদিন রক্ষে নেই।

ইশারায় বললো”ম্যাম ফাইভ মিনিটস।”

ডাইনিংয়ে টিউলিপকে খাওয়ানো হচ্ছে।অন্যদিন হলে সে পুরো বাড়ি দৌড়ে এটা সেটা ভেঙে তারপর খাবার খায়।কিন্তু আজ ভদ্র মেয়ের মতো খাচ্ছে কারণ তার মাম্মা বাসায়।মাকে টিউলিপ ভালোবাসা থেকে ভয় পায়।সে জানে তার মা তাকে প্রচুর ভালোবাসে।আর মা যেটা বলে সেটা শুনে চলা তার উচিত। তবে শুধু মায়ের সামনে।চুপিচুপি সে অনেক কিছুই করে।যা করে সবই সৃজাকে বলে।এতটুকু একটা পুতুল সৃজার।সৃজা এই মেয়েটার মায়ায় সবার আগে জরিয়েছে।

রুমে এসে পরলাম।মায়ের সাথে দুদিন আগে কথা হয়েছিলো।মাকে ফোন দেয়া দরকার।দুবার রিং হলো কিন্তু ধরলোনা হয়তো বিজি আছে।মাকে এসব জানাবো না।তাহলে শুধু শুধু চিন্তা করবে।মায়েরা সবসময়ই সন্তানদের নিয়ে চিন্তা করে সে যত বড় হোক না কেনো।বরং সন্তান বড় হলে চিন্তা আরো বাড়ে তাদের।

ফোনটা নিয়ে বারান্দায় দাড়ালাম।আজ অনেকগুলো বেলি ফুল হয়েছে।আমি আসার পরদিন আম্মা এই গাছটা বারান্দায় লাগিয়েছে।হয়তো তার ধারণা আমার বেলি ফুল পছন্দ।আমার কি ফুল পছন্দ সেটা আমি নিজেই জানিনা।কারণ যখন যে ফুলটা আমার চোখের সামনে থাকে সেটাই ভালো লাগে।এইযে যেমন এখন আমার পছন্দের ফুল বেলি।

দূর থেকে দেখতে পেলাম সাফওয়ান বাড়িতে ঢুকছে।রোদ লেগে তার মুখটা লাল হয়ে গেছে।অতিরিক্ত ফর্সা মানুষদের এমন হয়।আমার মাঝে মাঝে মনে হয় সে আমার থেকেও ফর্সা।তার হাটায় আলাদা একটা গাম্ভীর্য আছে।ঠিক আমার শ্বশুরমশায়ের মতো।এতোদিন পর আমি তার হাঁটা-চলাও খেয়াল করলাম।

“এক কাপ কফি নিয়ে আসো তোমার হাতের।”

“আপনি বসুন আমি যাবো আর আসবো।”

কফি নিয়ে রুমে এসে দেখি উনি ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত।কি আশ্চর্য সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ।আমাকে টেনে পাশে বসালেন।ল্যাপটপটা সরিয়ে রাখলেন।

“আমার বউটা এ দুদিন কি করেছে?মমের কাছে শুনলাম তুমি নাকি সেন্সলেস হয়ে গেছিলে।কেনো?আমিতো জানতাম সৃজা একটা বাঘিনী।”

রাগ করে বললাম”বাঘিনীদের কি মন নেই নাকি।আমারতো আরকারো মতো হাজারটা গার্লফ্রেন্ড নেই আছে শুধু একটা জামাই।”

সাফওয়ান বুঝতে পারলো তাকে খোঁচা মেরে কথাটা বলেছে।কিন্তু পাত্তা দিলো না এতে।সৃজার হাতের আঙ্গুলগুলো নাড়াচাড়া করতে লাগলো।

“আচ্ছা বলুনতো আমাদের কোম্পানির জুসে সমস্যা কোথায় ছিলো?যদিও কিছুটা শুনেছি নিউজে তবুও আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।”

“ওটা আমাদের কোম্পানির জুস ছিলো না।তবে লোগো এবং অন্যান্য সকল দিক দিয়ে আমাদের কোম্পানির মতোই ছিলো।আর কোম্পানির এই কনফিডেনসিয়াল জিনিসগুলো গোপনে চুরি হতো।এতে কোম্পানির কিছু লোক জড়িত ছিলো।যেহেতু আমাদের কোম্পানির মতোই সকল বিষয়ে হুবুহু মিল ছিলো তাই ওরা ভেবেছিলো আমাদের কোম্পানির জুস খেয়েই অসুস্থ হয়েছে বাচ্চারা।প্রাথমিকভাবে আমাকে এর দায়ভার নিতে হবে এটাই নিয়ম।প্রকৃত সমস্যা তারা খুজে বের করতে পারেনি।তাই আসল অপরাধী খুঁজে বের করতে সমস্যা হয়েছে।”

“আপনি পালিয়ে গেলেন কেনো?এখানে থেকেও তো সমস্যার সমাধান করতে পারতেন।”

“তোমার এটাও জানা দরকার।আমাদের কোম্পানির রেপুটেশন বজায় রাখতেই যেতে হলো।যদি আমাকে পুলিশ স্টেশনে যেতে হতো তাহলে এ পরিবারের সম্মানহানি ঘটতো।আর এখন আসল অপরাধী ধরা পরার পর নিউজ চ্যানেল গুলোই বলবে আমি বিজনেস ট্রীপে বাইরে ছিলাম।সিম্পল।”

“এতোকিছু ভাবতে হয় আপনাদের?”

“বিজনেস করতে হলে এসব ভাবতেই হয়।আরো অনেক কিছু জানতে পারবে ধীরে ধীরে।”

“তাহলে আপনি ফোনে কার কথা বলছিলেন?কে আপনার পিছু লেগেছে?”

“আছে এক বাস্টার্ড। এসব তুমি বুঝবেনা। বিজনেসে শত্রুতা থাকবেই।তুমি নিজের পড়ায় মনোযোগ দাও।”প্রথম কথাটা মুখটাকে বিকৃত করে বললেও শেষেরদিকে স্বাভাবিকভাবেই বললো।”

মামার বিষয়টা আমার জানতে ইচ্ছে করছে।প্রশ্নটা দমিয়ে না রেখে করেই ফেললাম

“মামা এ বাসায় আসুক বাবা এটা চায় না কেনো?”

“তোমাকে এটা কে বললো?আর এ ব্যাপারটা বোধ হয় মম তোমাকে ভালো বলতে পারবে।আমি আর তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিনা।তোমাকে আদর করতে চাই এখন।”

লজ্জায় সৃজার মুখ লাল হয়ে গেলো।

“তুমি এতো লজ্জা কোথায় পাও।সবসময় আমি কাছে আসলেই লাল হয়ে যাও।তবে তোমাকে এভাবে দেখতে আমার অন্যরকম ফিলিংস হয়।সাফওয়ান নিজ অর্ধাঙ্গিনীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো পূর্বে যেসব মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো তারা কেউই কখনো লজ্জা পায়নি।উল্টো তারাই সাফওয়ান না চাইলেও ওর টাকার লোভে পায়ের কাছে পরে থাকতো।তবে এই মুহূর্তে মনে পরে শুধুই আফসোস হচ্ছে।তার জীবনে সৃজার মতো আলো ছিলো কিন্তু সে এর পূর্বেই অন্ধকারে ডুব দিয়েছিলো।সে অন্ধকার দূরে ঠেলেই সৃজার আগমন।

সৃজার গালে সাফওয়ানের ট্রীম করা দাড়ির ছোঁয়া লাগছে।সৃজা এখন সাফওয়ানে উরুর উপর তার গলা জড়িয়ে বসে আছে।সৃজার কোমরটাকে আরেকটু কাছে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো সাফওয়ান।কপালে কপাল ঠেকিয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো সৃজার গোলাপি ঠোঁটগুলোর দিকে।কিন্তু সৃজার এখন অস্থির লাগছে।পরিবেশ হালকা করার জন্য বললো

“আম্মা বললো কয়েকদিন পর টিউলিপের জন্মদিন। এবার নাকি বড় করে অনুষ্ঠান করবে।”

“হ্যা, এবার তো পাঁচ বছর হলো।ওর নিজেরও ভালো লাগবে।সারাদিনতো একা থাকে।”কপালে কপাল ঠেকিয়েই বললো।তার উষ্ণ নিঃশ্বাস সৃজার কপোল ছুঁয়ে যাচ্ছে।

“একা কোথায় আমিতো আছি।”মুখটা তুলে সাফওয়ানের দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালো।যেনো সে ভুল কথা বলেছে।

” ভাবছি টিউলিপের একটা সঙ্গী আনা দরকার আমাদের কি বলো?” সৃজার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিলো।

সৃজা প্রথমে কিছুক্ষণ বুঝতে পারলোনা সাফওয়ানের কথার মানে।বুঝতে পেরে লজ্জা না পেয়ে উল্টা বললো

“প্লিজ এতো তাড়াতাড়ি না অন্তত দু বছর পর।”

কোন মেয়ে না চায় মা হতে, সৃজাও চায় তবে পড়াটার কথা ভেবে মনে হলো বাচ্চাতো পরেও নেয়া যাবে।এখন বাচ্চা নিলে পড়াশোনায় এক বছর গ্যাপ তার মানে সেটা রিকোবার করতে আরো সমস্যা হবে।কিন্তু সৃজা চায় একজন আদর্শ মা হতে।তার জন্য তো নিজেকে উপযুক্ত করতে হবে।

সৃজার মুখের দিকে তাকিয়ে সাফওয়ান হেসে দিলো।বললো

“আরে বোকা আমিতো এমনি বললাম।তুমি এখনো অনেক ছোট,তাছাড়া তোমার পড়াশোনা বাকি আছে।”

সৃজা খুশি হয়ে সাফওয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সাফওয়ানও তার মাথায় হাত বুলিয়ে জড়িয়ে ধরলো।প্রিয় মানুষটার ছোঁয়ায় এতো সুখ সাফওয়ান আগে কখনো পায়নি।কই কতো মেয়েইতো তাকে সঙ্গ দিয়েছে এরকম তো শান্তি পায়নি।

আজ টিউলিপের দাদা-দাদী আসবে।তারাও লন্ডনে থাকে।বিয়ের পর বুবু সেখানেই ছিলো তাদের সাথে।টিউলিপও তার দাদ-দাদীর কাছেই জন্মেছে। অর্থাৎ জন্মসূত্রে সে ব্রিটিশ নাগরিক।

তবে তাদের সাথে এ বাড়ির সম্পর্ক বেশি ভালো না।এর একটা কারণ হলো দুলাভাই মারা যাওয়ার পর ওনারাও বুবুকে দায়ী করেছে।এমনকি এমন দুঃসময়ে বুবুর পাশেও দাড়ায়নি।দুলাভাইয়ের লাশ ছুঁতেও না করেছিল টিউলিপের দাদী।তবে এখন অনেকটা স্বাভাবিক।

কারণ শোক আর রাগে মানুষ অনেক আঘাতের কথাই বলে ফেলে।রাগের সময় বলা কথাগুলো মানুষ না ভুললেও শোকের সময় বলা কথাগুলো তারা ভুলে যেতে চায়।না ভুললেতো জীবন স্বাভাবিক হবেনা।আর আমরা সবাই স্বাভাবিক জীবন চাই।

পুরোনো ক্ষত ঠিক না হলেও টিউলিপকে নিজেদের কাছে রাখতে তাদের সাথে এ বাড়ির সম্পর্ক আছে।আর টিউলিপের প্রতিও তাদের অধিকার আছে।তাই ওর জন্মদিনে তারাই আগে আসবে।

সবাইকে মোটামুটি ইনভাইট করা হয়েছে।বাবা মাকেও বলা হয়েছে। এবার হয়তো মাকে দেখতে পাবো।অনেকদিন হলো দেখি না।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here