সৃজা অন্তিম পর্ব

সৃজা
অন্তিম পর্ব
লেখিকাঃআরুনীয়া চৌধুরী

সাদা তোয়ালেটা দিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে সাফওয়ানকে চোখে পরল সৃজার।কানে ফোন নিয়ে সে সৃজার দিকেই তাকিয়ে ছিল।

সাফওয়ানের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে সৃজা ইশারায় জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?সাফওয়ান ইশারায় বলল কিছুনা।

পরক্ষণেই ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বরের অবিরাম হ্যালো শুনে আবার কথা বলা শুরু করল।এবার কথা বলতে বলতে সৃজার রুমের বেলকনিতে গিয়ে দাড়াল সাফওয়ান।বেলকনির রেলিং নেই দেখে সাফওয়ানের রাগ হল।কি আশ্চর্য বেলকনি দিয়েতো অনায়াসে যে কেউ রুমে ঢুকতে পারত।কথা শেষ করে হনহন করে রুমে ঢুকল সাফওয়ান। সৃজা ফিরে তাকাল।রাগী মুখে বলল

“এই সত্যি করে বলতো বিয়ের আগে তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড ছিল?” সন্দিহান দৃষ্টি তার,সাফওয়ান সিরিায়সলি জিজ্ঞেস করছে কথাটা, তার মুখের অভিব্যক্তি এর প্রমাণ।সৃজার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে গেল হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করছে কেন?তারপরও নিজেকে সামলে সাফওয়ানের সামনে এসে দাড়াল

“হঠাৎ এসব আপনার মাথায় ঢুকল কেন?”

সাফওয়ান সৃজার হাত দুটো আকড়ে পেছনে নিয়ে ধরল।
“আমি যা জিজ্ঞেস করছি সেটা বল”

সৃজা অগত্যা কথা না পেচিয়ে বলল
“এইসব বয়ফ্রেন্ড -টয়ফ্রেন্ড ছিলনা আমার।উদ্ভট সব প্রশ্ন আপনার,ছাড়ুন আমায়।”

এবার যেন নিজেকে আশ্বস্ত করতে পারল সাফওয়ান, সৃজার হাতগুলো ছেড়ে দিল সন্তর্পণে।এবার কাছ থেকে কোমর আকড়ে ধরার আগেই দরজায় নক পরল সাফওয়ান তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়াল।সেদিকে একবার তাকিয়ে সৃজা দরজা খুলে দিল।
সৃজাদের বাসার কাজের মেয়ে তিন্নি দাড়িয়ে আছে।দরজাটা খোলামাত্রই সৃজাকে জড়িয়ে ধরল।সৃজা প্রথমদিকে ভয় পেয়ে গেল।পরে মানুষটাকে চিনতে পেরে নিজে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কত আর বয়স মেয়েটার বারো কি তেরো, আরো তিন বছর আগেই গ্রামে এক দূর্ঘটনায় ওর বাবা-মা মারা যায় তখন থেকে তিন্নি এখানেই থাকে।সৃজার মাকে টুকটাক কাজে সাহায্য করে।সৃজা নিজের ছোট বোনের মতো দেখে ওকে।সৃজার ইচ্ছায় সে স্কুলেও পড়ে।মেয়েটা কেঁদেই দিল

“তোমার কি আমার কথা মনে পরেনা সৃ দিদি?”
সৃজা দুহাতের আঁজলে মুখটা ধরে চোখগুলো মুছে দিল তারপর বলল

“উহু মনে পরে নাতো”
সৃজা দুষ্টুমি করেই কথাটা বলল কিন্তু তিন্নির কান্না বেড়ে গেল।

“আরে বোকা কাঁদিস কেন তুই তো সবসময় আমার সাথেই থাকিস তাই মনে পরার দরকারই পরেনা।” তিন্নি যেন এবার অনেক খুশি হল।চোখগুলো মুছে বলল

“আচ্ছা চল তোমাদের খাইতে ডাকতাছে বড়মা।জামাইবাবু কোথায় সৃ দিদি?”

“ওনি বেলকনিতে যা ডেকে আয়,আমি যাচ্ছি।”

গ্রাম হলেও চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে সৃজাদের বাড়িটা একদম পাকা।শহরের আট-দশটা বাড়ির মতোই গড়ে তুলেছেন সৃজার বাবা।আজ তিনি কোন কাজে শহরে গেছে ফিরতে দেরি হবে তাই মেয়ে আর জামাই আসার খবরটা সৃজার মা-ই ফোন করে জানিয়ে দিল।মেয়ে-জামাইয়ের আসার খবর শুনে তিনি পারেনা এখনি এসে পরে,তবে সৃজার মাকে জানাল আসছে, এখনি রওয়ানা দিবে।

প্রায় তিনটার দিকে দুপুরের খাবার খেল সাফওয়ান।জামাই আদরে কোন কমতি রাখেনি সৃজার মা।সৃজার বাবা বাসায় না থাকায় মন্টুকে দিয়েই সব বাজার করালেন।নিজেদের পুকুরের মাছ তুললেন সাথে সাথে। আরেকটু বড় হওয়ার জন্য যেই চালকুমড়োটা গাছ থেকে ছিড়েনি সেটাও আজ ছিড়ে ফেলেছে।

খাওয়ার পর সাফওয়ান সৃজার রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে আর সৃজা মায়ের কোলে শুয়ে আছে।সেই কখন থেকে ভাবছে মাকে বলবে বিদেশ যাওয়া কনফার্ম হওয়ার কথা কিন্তু বলতে পারছেনা,জড়তা কাজ করছে।

সৃজার মা এতোদিন পর মেয়েকে নিজের মতো করে পেলেন।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে তার সুপ্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন।দূরে কোথাও থেমে থেমে ফিঙ্গে পাখিটা ডাকছে,ইস! কতদহন পর পাখিটার আওয়াজ শুনল।রাস্তার ধারে বড় অশ্বত্থের মগডালে এর বাসা।সেখান থেকেই আওয়াজটা আসছে।সৃজা বলল

“মা একটা কথা বলব তোমায়,যার জন্য আমার এখানে আসা।”

মেয়ের কথা শুনে অজানা আশংকায় হাতটা থেমে গেল সৃজার মায়ের।মেয়ের দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললেন

“আমি বিদেশ যাচ্ছি পড়ার জন্য আগামি মাসেই যাওয়া হবে।টিকিট কনফার্ম করা হয়েছে তাই বাবা বলল কদিন তোমাদের কাছে ঘুরে আসতে।কিন্তু……

অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সৃজার মা।তখনই সৃজার বাবার আগমন ঘটল তাই পরবর্তী কথা চাপা পরল।

বিকেল পাঁচটার দিকে সাফওয়ান রেডি হচ্ছিল সৃজা রুমে এসে অবাক হয়ে বলল

“কোথায় যাচ্ছেন?”

সাফওয়ান ঘড়িটা পরতে পরতে উত্তর দিল
“বাসায় যাবো,অফিসে কাজ আছে।কয়েকদিন পর এসে নিয়ে যাবো তোমাকে।” সৃজার হঠাৎই মন খারাপ হয়ে গেল কিন্তু সাফওয়ানকে বুঝতে না দিয়ে বলল

“অফিসে যাওয়া কি অনেক জরুরি? ”

“হ্যা, যেতেই হবে।” কিন্তু মনে মনে বলল এখানে থাকলে কদিন পর তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা তাই এখনই নাহয় কিছুটা চেষ্টা করি।

সৃজা চুপচাপ বসে রইল বিছানায় তারপর এগিয়ে গিয়ে নিজে থেকেই টাইটা বেঁধে দিয়ে কোটটা গায়ে গলিয়ে দিল।তার এখন দমবন্ধ লাগছে,মনে হচ্ছে কান্নারা গলায় আটকে আছে।লোকটা চলে যাবে শুনেই এত খারাপ লাগছে বুঝতে পারল সৃজা কিন্তু মনকে শক্ত করে রাখল।

বাইরে আসতেই সৃজার বাবা-মা অবাক হয়ে বললেন এতো তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে কেন।কিন্তু অফিসের কাজের চাপের কথা বলতে তারাও সায় দিল।সৃজার আশা ছিল বাবা-মার কথায় অন্তত থেকে যাবে কিন্তু না তাও হলনা।তাই চুপচাপ বাহির ঘরের বারান্দায় দাড়িয়ে স্বামীকে বিদায় দিল,যদিও তার মন চায়না যেতে দিতে।

‘ হে মোর প্রিয়
হে মোর নিশীথ রাতের গোপন সাথী।
মোদের দুইজনেরই জনম ভরে কাঁদতে হবে গো–
শুধু এমনি করে সুদূর থেকে, একলা জেগে রাতি।।
মোরা কে যে কত ভালোবাসি কোনদিনই হবে না তা বলা।'(কাজী নজরুল ইসলাম)
গভীর রাতে বেলকনিতে বসে মনে মনে কবিতাটা বিরবির করে পড়ল সৃজা।সত্যিই কি কোনদিন বলা হবেনা কতটা ভালোবাসি তাকে।সাফওয়ানকে তো কবেই ক্ষমা করেছে।যতই হোক এই লোকটার প্রতি বেশিদিন রাগ করে থাকতে পারেনা সে।যদিও সৃজার মনে সারাজীবন ওই স্মৃতিগুলো তাজা থাকবে।

কিছুক্ষণ আগে সাফওয়ান ফোন দিয়ে জানিয়েছে সে পৌছে গেছে তবে সৃজাকে না সৃজার মাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে।তখন থেকে মন খারাপটা আরো বেশি ঝেকে ধরল সৃজাকে।কি এমন হত যদি তাকেও একবার ফোন দিয়ে জানাতো, মহাভারত তো আর অশুদ্ধ হতনা।ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল লিস্টে সাফওয়ানের নাম্বারটা বারবার চেক করছে ভাবছে কল দিবে আবার পরক্ষণেই সে ভাবনায় গুড়ে বালি।

সাফওয়ানের ভাবনাতেই রাত পার করল সৃজা।ইস!সে যদি জানতে পারত তার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের মানুষটিও রাতে তাকে ভেবে ঘুমাতে পারেনি।

ভোরের পাখি ডাকার শব্দ শুনে ফোলা ফোলা চোখে মায়ের কাছে গেল সৃজা।সৃজার মা মেয়ের নির্ঘুম রাত কেটেছে বুঝতে পারলেন।আগেও পরীক্ষার পূর্বের দিনগুলোতে সকালে মেয়েকে দেখে চমকে উঠতেন তিনি।কিন্তু আজ বুঝতে পারলেন না জেগে ছিল কেন।তাই প্রশ্ন করেই বসলেন

“রাতে ঘুমাসনি কেন?একি অবস্থা তোর মা?”
সৃজা কিছু না বলে মাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরল।ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বলল

“আমি ঘুমালে তারপর যাবে।” সৃজার মা পরম মমতায় মেয়েকে আকড়ে ধরলেন।মাথায় বিলি কেটে দিলেন।বিনিময়ে নানা চিন্তার ভিরে একরাশ প্রশান্তি খুজে পেল সৃজা।

প্রায় তিনদিন কেটে গেল সৃজা বাড়িতে এসেছে।এর মধ্যে শুধু সৃজার শাশুড়ী আর সানিয়ার সাথেই কথা হয়েছে। সাফওয়ান তার মাকে ফোন দিলেও সৃজাকে দেয়নি আর সৃজাও দুরুদুরু হৃদয়ে কল করার সাহস পেলনা।

কিন্তু এ তিনদিন সৃজার কিভাবে কাটল শুধু সে-ই জানে।সৃজার সময় যেন কাটতে চায়না।সে চাইলেও তাকে দেখতে আসা শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারেনা।কতদিন পর স্কুল জীবনের বন্ধুদের সাথে দেখা হল কিন্তু সে উচ্ছাস আর খুজে পলনা।খাওয়ার সময় মনে হয় সাফওয়ান হয়তো কাজের চাপে এখনো খায়নি তাই নিজেরও খাওয়ার রুচি থাকেনা।আগের মতো আর নদীর ছলছল শব্দে প্রশান্তি আসেনা,পাখির ডাকও বিরক্ত লাগে,বাগানের সদ্য ফোটা ফুলগুলোও ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করেনা সৃজার।এসব কিছুর মাঝে প্রশ্ন একটাই কিন্তু কেন??এর উত্তরও হয়তো সৃজা জানে,সে প্রেমে পরেছে, গভীর প্রেমে যে প্রেমে প্রমিককে না দেখলে প্রেমিকার মন হাজার বাণে বিদ্ধ হয়,যে প্রেমে প্রেমিকের জন্য হাজার রাত অপেক্ষার আগুনে দগ্ধ হতে হয়।তবে সৃজা কেন পারবেনা তার সিদ্ধান্ত বদলাতে,সেও পারবে।

সৃজার মা মেয়ের নির্লিপ্ত চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন মেয়ে তার ভালো নেই।বাইরে ভালো থাকলেও মনে মনে সে প্রচুর অসুস্থ।মায়ের মন হয়তো সবই বুঝতে পারল তাই নিরিবিলি বিকেলে পুকুরের পাশে বসা মেয়ের পাশে বসলেন।মাথায় হাত রেখে মেয়ের চোখের দিকে তাকাতে বুঝলেন এতক্ষণ কাঁদছিল তার মেয়েটা।মাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদল তার সেভাবেই অস্পষ্ট স্বরে বলল

“ওনার কি একটুও সময় নেই আমাকে কল করার?উনি আমার সাথে কথা বলেনা কেন মা?”

মেয়েকে কান্না দেখে মা হতভম্ব এভাবে সৃজা শেষ কবে কেঁদেছিল তা মনে নেই।কিন্তু এখন এ অবস্থায় দেখে তার বুক ফেটে যাচ্ছে,আদরের মেয়ে তার।কান্না কিছুটা থামতে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

“তুমিও তো কল দাওনা,সে ও কি এটা মনে করে না?করে।আমি জানিনা তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে?তবে যা-ই হোক স্বামী যদি তোমায় ভালোবেসে আগলে রাখতে চায় তাহলে তাকে ফিরিয়ে দিয়োনা কখনো।”

সৃজা তার উত্তর পেয়ে গেছে কি করবে সেটাও ভেবে নিয়েছে।চোখের পানিটা মুছে পুকুরের জল মুখে ছিটিয়ে মায়ের পিছু পিছু ঘরে গেল।ফোনটা বের করে বাবাকে কল করল।সৃজার বাবা চমকে গেলেন মেয়ের ফোন পেয়ে।

রাত ১২টার দিকে সাফিয়া চৌধুরী তড়িঘড়ি করে অফিসে কল দিল কিন্তু সাফওয়ান ধরল না সে তখন নিজের আসনেই মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।তার এসিস্ট্যান্টকে কল করল তাকেও পেলনা।অগত্যা ছেলেকে অবাক করার প্ল্যান ভেস্তে গেল তার।

রাত প্রায় ২টার দিকে সাফওয়ান বাড়িতে পা রাখল।ডিনার না করেই উপরের দিকে পা বাড়াল।রুমের লাইটটা না জালিয়েই টাইটা ঢিলা করে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরল।শোয়ার সাথে সাথে কেউ মৃদু আর্তনাদ করে উঠল।সাফওয়ানের ক্লান্তি সম্পূর্ণ উবে গিয়ে ভয় গ্রাস করল। সাথে সাথে সে রুমের লাইটটা জালিয়ে বিছানায় তাকালো।অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইল সৃজার দিকে।সৃজা তখন নিজের কোমরে হাত দিয়ে ব্যথাপূর্ণ চোখে পরখ করছে।সাফওয়ান ঘাবড়ে গেল,সৃজা এখানে কিভাবে এল।যেন তার বিশ্বাসই হচ্ছে না,আস্তে করে বিছানায় গিয়ে বসে সৃজাকে ছুঁয়ে দিল।তৎক্ষনাৎ সৃজা ব্যথা ভুলে গোলগোল চোখে সাফওয়ানের দিকে তাকাল।

সাফওয়ান এবার বুঝতে পারল সৃজা সত্যি এসেছে,কিন্তু কার সাথে?এসবকিছু ভুলে সে আগে সৃজাকে হরবরিয়ে জিজ্ঞেস করল

“বেশি ব্যথা পেয়েছো?কিভাবে লাগল?” সৃজার কাছে প্রশ্নটা উদ্ভট লাগল।ওনার মাথাটা হুট করে কোমরের উপর পরাতেই তো এমন হয়েছে।রাত ১২টার দিকে সে এ বাড়িতে এসেছে।বাবাকে কোনমতো রাজী করেছে সে।বাড়িতে এসে দেখল সাফওয়ান নেই।সাফিয়া চৌধুরী বৌমাকে দেখে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলেন।ছেলেকে অবাক করার উদ্দেশ্যে সাফিয়া চৌধুরী কল দিয়েছিল কিন্তু ধরেনি।তাই সৃজাও অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছিল।

কিছুক্ষণ সাফওয়ানের চিন্তাক্লিষ্ট মুখের দিকে তাকিয়ে বলল

“আমার খোজ নেননি কেন এতদিন?”

সাফওয়ান মনে মনে বলল খোজ কোথায় নিলাম না? নিয়েছি তো,শুধু তুমি জানোনা।কিন্তু মুখে বলল

“কাজে ব্যস্ত ছিলাম।”

“ঠিক আছে আপনি কাজ করুন আমি ঘুমাবো।”

“এই তুমি এরকম ব্যবহার করছো কেন?”
সৃজা প্রতিত্তোরে কিছু না বলে কম্বলটা টেনে শুয়ে পরল।সাফওয়ান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফ্রেশ হতে গেল।এসে লাইটটা অফ করে সৃজার পাশে শুয়ে পরল।আজ কদিন পর হয়ত তার ঘুম হবে।এ কদিনতো ঠিক করে ঘুমাতেই পারেনি।এই মেয়েটাকে কিভাবে এত ভালোবাসলো সে মাঝে মাঝে ভেবে পায়না। মৃত্যুর আগ-মুহূর্ত পর্যন্ত এই মেয়েকেই চাই তার।মৃদু স্বরে সৃজাকে কয়েকবার ডাক দিল সাফওয়ান।সৃজা সাড়া দিলনা।কিছু সময় পর বলল

“হুম?”

“মালয়েশিয়া না গিয়ে দেশেই কোনো ভালো ভার্সিটিতে পড়লে হয় না?”

সৃজাতো নতুন করে এই কথাটা শোনার অপেক্ষাই যেন করছিল।

“প্লিজ আরেকটু ভেবে দেখো,আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা তাই না?তুমি আমাকে না বুঝলে কে বুঝবে বলো?” সাফওয়ানের করুন দৃষ্টি ডিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট বুঝতে পারল সৃজা।এগিয়ে গিয়ে সাফওয়ানের বুকে মাথা রাখল, একটু উচু হয়ে কপালে চুমু খেল।তারপর অবাক সাফওয়ানকে আরো অবাক করে দিয়ে বলল

“আমি কোথাও যাবোনা আপনাকে ছেড়ে।পড়তে হলে এখানে থেকেই পড়বো।”

সাফওয়ান যেন আকাশের চাঁদটি হাতে পেল।খুশিটা কিভাবে প্রকাশ করবে বুঝতে পারলোনা।তাই সৃজাকে হাতের বাধন শক্ত করে জড়িয়ে ধরল যেন তাকে আজ বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলবে।সৃজা ব্যথা পেয়ে উহ্ করে উঠল।সাফওয়ান চমকে বলল

“বেশি ব্যথা পেয়েছো?” সৃজা ঠোঁটগুলো উল্টে বলল

“হু”
সাফওয়ান তবুও ছাড়লোনা সৃজার কানের পাশে চুলগুলো গুজে দিয়ে বলল

“তাহলে এবার থেকে এভাবেই জড়িয়ে ধরবো।আমাকে ছেড়ে থাকার চিন্তাও করবেনা কখনো প্লিজ।”

বলেই সৃজার কপালে কয়েকবার অধর ছোঁয়াল।সৃজা আবেশে ছোখগুলো বন্ধ করে শান্তির ঘুম দিল।হয়ত আগামি দিনগুলো সুন্দর হবে তাদের।

মধুরেণসমাপয়েৎ

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here