সৃজা পর্বঃ২৮,২৯

সৃজা
পর্বঃ২৮,২৯
লেখিকাঃআরুনীয়া চৌধুরী
পর্বঃ২৮

ওভাবেই কতক্ষণ সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে রইল সৃজা।ভোরের স্নিগ্ধ আলোতে নিজের সহধর্মীকে দেখার লোভ সামলাতে পারলনা।ভালো করে চেয়ে দেখল সাফওয়ানের দাড়ি ক্লিন সেভ করা।তার মানে রাতেই সেভ করেছে।ভেবেই ঠোঁটের কোনটা প্রসারিত হল সৃজার।

সকাল ৯টা।চৌধুরী বাড়ির স্টাডি রুমে তাদের একমাত্র বৌমা সৃজা পড়ছে।তবে পড়ার থেকে বেশি তার মাথায় সাফওয়ানের কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে।একটু আগে সার্ভেন্ট বলে গেল সাফওয়ান তাকে ডাকছে,কিন্তু সৃজা যায়নি ইচ্ছা করেই।সার্ভেন্টকে না করে দেয়ার পরই আবার মনে খচখচ শুরু হয়েছে এটা ভেবে কোনো জরুরি দরকারে ডাকেনিতো?একটু পরে নিজে থেকেই গেল সাফওয়ানের রুমের সামনে।সাফওয়ান হ্যান্ড ওয়াচটার চেইন লাগাচ্ছে।সবসময়ের মতো সৃজার দিকে না তাকিয়েই বলল

“বাইরে দাড়িয়ে আছো কেন?রুমে এসে টাইটা বেঁধে দাও আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।” সৃজা নির্বিকার।

“এই ছিল আপনার জরুরি কাজ।”

“হ্যা তো?এটাকে তোমার জরুরী মনে হয় না?আরে দাড়িয়ে আছো কেনো?এদিকে আসো ফাস্ট।”

অগত্যা সৃজাকে শুনতে হল।ধীর পায়ে সাফওয়ানের কাছে যেতেই সৃজার কোমর আকড়ে ড্রেসিং টেবিলে বসিয়ে দিয়ে টাইটা ধরিয়ে দিল।এর মধ্যেই কল আসল সাফওয়ানের ফোনে।সৃজা টাই বাঁধার চেষ্টা করছে আর সাফওয়ান কথা বলছে কম এদিক ওদিক নড়ছে বেশি।সৃজা অধৈর্য হয়ে ফোনটা কেড়ে নিয়ে টাই বাঁধায় মনোযোগ দিল।যতক্ষণে সাফওয়ান বুঝতে পারল সৃজা কি করেছে ততক্ষণে টাই বাঁধা শেষ।সৃজা নামার আগেই সাফওয়ান দুহাতের বেরিতে আকরে ধরল তাকে।সৃজার কানের কাছে অধর ছুঁইয়ে বলল

“এবার কোথায় পালাবে সৃ?”সৃজা ইতিউতি করে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল

” বাবা আপনি?ভিতরে আসুন।”

সাফওয়ান হকচকিয়ে সৃজাকে ছেড়ে দিয়ে বুঝতে পারল আসলে বাবা আসেনি সবটাই পালানোর ফন্দি।ইতোমধ্যে সৃজার রুমের বাইরে চলে গেছে,তাড়াহুড়োতে তার চুলের গোছাটা খুলে গেছে।সেদিকেই নিষ্পলক তাকিয়ে ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল সাফওয়ানের।

গ্রাম থেকে এসেছে অনেকদিন হল।এর মধ্যে অনেক কিছুই বদলে গেছে।সৃজা এখন সাফওয়ানের রুমেই থাকে তবে তাকে গভীরভাবে ছোঁয়া বারণ।সাফওয়ান এটাই মেনে নিয়েছে,অন্তত তার সাথে তো থাকবে।প্রায় প্রতিদিনই টিউলিপের সাথে ভিডিও কলে কথা হয় সৃজার।বায়না তার একটাই পুতুল মাম্মার কাছে যাবে।সানিয়াও ধমকে তাকে চুপ করায় আর পাশ থেকে তানভীর সানিয়াকে ধমকায়।নানু বাড়ির পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক মনে হয় সৃজার কাছে।

তবে সাফওয়ানের ব্যস্ততাও বেড়েছে আগের থেকে কয়েক গুণ।সৃজার আগুপিছু আর ঘুরে ঘুরে বিরক্ত করার সময় পায় না।রাত হলে অফিস থেকে এসে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দেয়।সৃজাও সাফওয়ান আসার সাথে সাথে রুমে পা বাড়ায়।ক্লান্ত, শ্রান্ত মানুষটার কিছু লাগবে নাকি তাই দেখে।সাফওয়ান মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায়।যে মেয়েটা তার একটুখানি কষ্ট সহ্য করতে পারেনা,সে নাকি আবার পাঁচ বছর দূরে থাকবে।

এইযে এখনও সাফওয়ান অফিস থেকে আসার সাথে সাথে সৃজা তার দিকে লেবুর শরবত এগিয়ে দিল।সাফওয়ান নিলো না।সৃজা অবাক হল,আজ আবার কি হয়েছে তার?জিজ্ঞেস করবে ভেবেও করল না।বিছানায় ঘাপটি মেরে বসে রইল।সাফওয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েও সৃজার দিকে তাকাল না।সৃজার রাগ হল এবার,প্রতিদিন তো অফিস থেকে ফিরে চোখের সামনে না দেখলে চেচামেচি শুরু করে আজ কি হল মশাইয়ের।চোখগুলো ছোট ছোট করে কপাল কুচকে সাফওয়ানের সামনে দাড়িয়ে প্রশ্ন করল
“এই যে মশাই কি হয়েছে আপনার?আজ মনে হয় একটু বেশিই চাপে ছিলেন।”

সাফওয়ান তাকাল না উল্টো পাশ কাটিয়ে চলে গেল ডাইনিংয়ে।সৃজার এবার রাগ হল,স্বামীর সামান্যতম অবহেলা সে মানতে পারছেনা অথচ দিনের পর দিন সে ও তো কম অবহেলা করেনি।

ডিনার সেরে চুপচাপ বিছানায় গা এলিয়ে দিল সাফওয়ান।ওপাশে যে তার অবহেলা সইতে না পেরে সৃজার বুকে ক্ষনে ক্ষনে রক্তপাত হচ্ছে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল তার নেই।রক্তক্ষরণ তো তার হৃদয়েও হচ্ছে।

বিছানার এক কোনে সৃজা বসে আছে অনেকক্ষণ হল।এর মধ্যে হয়ত সাফওয়ান ঘুমিয়েও গেছে।মাঝরাতে সৃজার মনে নানা ভাবনারা হানা দিল।তবে কি আবার কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে সাফওয়ান,সে জন্যই ঘরের বউকে আর ভালো লাগছেনা।ভাবনাটাকে সত্যি মনে করে হনহন করে যেয়ে রুমের লাইট অন করে দিল।তারপর সাফওয়ানকে ডাক দিল,প্রথমবার আস্তে পরে জোরে।কিন্তু সাফওয়ান উঠল না।এবার সৃজা নিজেই বিছানায় হাটু গেড়ে বসে সাফওয়ানের পোলো শার্টের কলার চেপে ধরল।ক্ষানিকটা চেচিয়ে বলল

“মেয়েটা কে??” এতক্ষণ সাফওয়ান জেগেই ছিল তাই প্রশ্নটা বুঝতে সমস্যা হয়নি।কিন্তু কথা হল কোন মেয়ের কথা বলছে।হাত দিয়ে কলার ছাড়াতে ছাড়াতে বলল

“মাঝরাতে কি শুরু করেছ?ঘুমাও,তোমার ঘুমানো দরকার।এখানে ঘুম না এলে তোমার রুমে যাও?”

সৃজার রাগ এবার তরতর করে বেড়ে গেল। এখন আমার রুমে চলে যেতে বলছে। যাবোনা আমি,রাগে দাতে দাত চেপেই বলল

“কোন মেয়ের কথা বলছি বুঝতে পারছেন না?যেই মেয়েকে পেয়ে আর আমাকে ভালো লাগছেনা তার কথা বলছি।আপনি কি মনে করেছেন বুঝি না আমি?নিশ্চয় আবার নতুন করে কাউকে ধরেছেন।আমি তো ছুঁতে দেই না।বেশিদিন সহ্য করতে পারলেন না তাই না?নিজের পুরুষত্বে আঘাত লেগেছে বলে কথা।”

সাফওয়ানের এবার রাগ উঠে গেল তরতর করে।সৃজার হাত দুটো জোর করে ছাড়িয়ে একটা চড় মেরে বসল।সৃজা কিছুটা পিছিয়ে গেল।গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে রইল।সাফওয়ান এগিয়ে গিয়ে সৃজার চোয়াল আকড়ে ধরল।

“এই তুই কি আমাকে মেয়েবাজ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিস না?এতো এতো ভালোবাসার পরেও তোর আমাকে চরিত্রহীন মনে হয়?”

সৃজা হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে রয়েছে।কপোলের থাপ্পরটা তার চোখে অশ্রু ঝরতে বাধ্য করছে।সৃজার নীরবতা দেখে সাফওয়ান আবারো দ্বিগুণ রেগে বলল

“এই বলছিস না কেন?এই ২ মাস কি আমি তোকে জোর করেছি সেক্** করার জন্য?”

সৃজা এবার নিজের ভুল বুঝতে পারল কিন্তু দমে গেল না।নিজেকে ধাতস্থ করে প্রশ্ন করল

“তাহলে আজ এরকম করছিলেন কেন?”
সাফওয়ান ছেড়ে দিল সৃজাকে।দুহাত দিয়ে চুলগুলো পেছনে ঠেলে বলল

“তোমার আগামী মাসে ফ্লাইট।আজ টিকিট কনফার্ম হয়েছে।তুমি তো চলেই যাবে তাহলে শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে লাভ কি?”

সৃজার ভেতরটা ধক করে উঠল।এই কথাটা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল।তাকে তো বিদেশ যেতেই হবে।সে একবার ভেবেছিল ইমরান চৌধুরীকে বলবে সে যাবেনা এখানেই পড়বে।বেশি না দুদিন আগে ভেবেছিল সে।এর মধ্যে নানা অযুহাতে তার সাথে কথা বলার সুযোগ বা সময় কোনোটাই হয়ে ওঠেনি।

সাফওয়ান শান্ত স্বরে বলল
“তুমি কি আমাকে একটু ও পছন্দ করো না?আমার নামে যে জায়গাটা তোমার হৃদয়ে রয়েছে তা কি পুরোটাই বিষাক্ত?আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না?”

সৃজা আর পারলনা ফুপিয়ে কেঁদে দিল।মানুষটা কিভাবে বলল তার বরাদ্দকৃত জায়গাটা বিষাক্ত।সে তো জানেনা সাফওয়ান নামে তার হৃদয়ে বরাদ্দকৃত জায়গাটা তার সবচেয়ে প্রিয়।সে জায়গাটা নানা রঙের ফুলে পরিপূর্ণ হয়ে বাগানে পরিণত হয়েছে।প্রতিদিন তার কত যত্নই না সৃজা করে।কই তাতো দেখল না।শুধু বাইরেটা দেখে কি বিচার করা যায় সব??

কান্নার আওয়াজ সাফওয়ানের কর্ণগোচর হল কিন্তু নড়ল না।ঠায় কতক্ষণ সেখানেই বসে রইল।কতক্ষণ বাদেই মনে হল চড়টা কি বেশি জোরে হয়ে গেল?বেশি ব্যথা পেয়েছে?ব্যথা বেশি না পেলে তো এভাবে কাদবেনা।মনটাকে শান্ত করে সৃজার কাছাকাছি বসল।

গালে ভাসমান সাফওয়ানের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ।সেদিকে তাকিয়ে থেকেই বলল

“খুব বেশি ব্যথা করছে,বরফ লাগিয়ে দেই এক মিনিট আমি আসছি।” সাফওয়ান আর পিছু ফেরার সময় পেল না।তার আগেই সৃজা ঝাপিয়ে পরল সাফওয়ানের বুকে।সাফওয়ানের শরীর ভারসাম্য হারিয়ে কিছুটা পেছনে হেলে পরল।কতক্ষণ নির্বাক রইল সাফওয়ান বোঝার চেষ্টা করল কি হয়েছে।

ক্ষনিকের জন্য খুশি হলেও পরক্ষণেই সৃজার হাত দুটো সরিয়ে দিল,নিজেও উঠে বসল।তার স্পর্শে অভিমান স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে।মায়া করে কি লাভ সে তো আর সাফওয়ানকে ভালোবাসেনা৷

সৃজা কান্না করা ফোলা ফোলা চোখেই তাকিয়ে রইল সাফওয়ানের যাওয়ার দিকে।তার কি দোষ এখানে?প্রথম ভুলটাতো সাফওয়ানেরই।অফিস থেকে এসে একটু ভালো করে বলতে পারতো তুমি কিন্তু কোথাও যাবেনা।তাহলেই তো সৃজা শুনত তার কথা।এভাবে রাগ দেখানোর কি মানে?সৃজাও গো ধরে বসে রইল সাফওয়ান ভালোভাবে মনের কথা না বললে সেও টিকিট ক্যান্সেল করবেনা।

কিয়ৎক্ষণ সাফওয়ানের অপেক্ষা করে সৃজা ঘুমিয়ে পরল বালিস ছাড়াই।মাঝরাতে কেউ একজন তার শিয়রে ঠিকই বালিস পৌঁছে দিল।সৃজাও আরাম পেয়ে গাঢ় ঘুম দিল।

আজ সকাল হতে সাফওয়ান আর সৃজাকে ডাকেনি।সৃজাও স্টাডি রুমের দরজার কাছে একবার আসছে তো আরেকবার চেয়ারে যে বসছে।তার মনে হচ্ছে এই বুঝি সাফওয়ান ডাক দিবে সৃ বলে।কিন্তু না ওকে ভুল প্রমাণ করে সাফওয়ান নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেল।সৃজা বুঝতেও পারেনি সাফওয়ানের অভিমানটা কত গাঢ়।দীর্ঘদিনের অবহেলার মাশুল এভাবে ফেরত পাবে সৃজা বোঝেনি।

এদিকে ছেলে না খেয়ে যাওয়ায় সাফিয়া চৌধুরী স্টাডি রুমে এলেন।দরজায় কড়া না নেড়েই নিঃশব্দে সৃজার পেছনে এসে দাড়ালেন।দেখলেন সৃজা পরছে ঠিকই তবে বইয়ের পাতা ভিজে একাকার টপটপ করে চোখের জল পরছে বইয়ে।

“সাফীর জন্য যদি এতই টান থাকে তাহলে ওকে শুধু শুধু কষ্ট দাও কেন তুমি?”

সৃজা চমকে উঠলো,তার শরীর কেঁপে উঠল হঠাৎ আওয়াজে।তড়িঘড়ি করে দুহাতে চোখের জল মুছে ফেলল।চেয়ার ছেড়ে উঠলেও তাকানোর সাহস পেলনা।মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে রইল।

“আমার দিকে তাকাও,তুমি জানো আজ ছেলেটা না খেয়েই চলে গেছে।সারাদিন কাজের চাপে সময়ও পায় না কিছু খাওয়ার,লাঞ্চটাও ঠিক করে হয়না তার।”

কথাগুলো শুনে আরো বেশি খারাপ লাগা কাজ করছে সৃজার মনে।সাফিয়া চৌধুরীর কথাগুলো যেনো সৃজার মনে অকাম্য এবং অসহ্যকর।কই সে তো এসব জানতো না।

“আমি জানলাম কি করে তাইতো?আমি তো মা তাই সন্তানের ভালো মন্দ সব কিছুর খবর রাখতে হয়।কিন্তু তোমারও তো স্ত্রী হিসেবে এসব জানার দরকার ছিল।”

মুহূর্তেই অনুশোচনা ঘিরে ধরল সৃজাকে,তাও আষ্টেপৃষ্টে যেন এসব কথা ক্ষনে ক্ষনে তাকে কষ্ট দিচ্ছে।কান্নামাখা কন্ঠেই কিছু বলার চেষ্টা করল সৃজা কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরলোনা।সব কেমন গলায় এসে আটকে যাচ্ছে।সাফিয়া চৌধুরী আর কিছু বললেন না।তিনিও নিজেও বুঝতে পারছেন মেয়েটাও কষ্ট পাচ্ছে।তাই যেমনভাবে এসেছিলেন তেমন করেই প্রস্থান করলেন।

বিকেলে সৃজার শ্বশুর মশাই সৃজাকে ডেকে পাঠালেন।সৃজা চুপচাপ ইমরান চৌধুরীর অপর পাশের চেয়ারে বসে আছে গত পাঁচ মিনিট যাবৎ।তারা এখন বাড়ির লনে বসে আছে।ইমরান চৌধুরী বিকেলে বাড়ি থাকা মানে তাকে লনেই পাওয়া যাবে।এসময় এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে মাঝে মাঝে আলোচনা করেন আর নয়তো চা পান করে আর প্রকৃতি বেক্ষণ করেন।

হাতের চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে বললেন

“তোমার টিকিট কনফার্ম হয়ে গেছে বউমা নিশ্চয় সাফওয়ানের কাছ থেকে শুনেছো।তবে এর আগে আমি চাইছি তুমি একবার নিজ গ্রামে যেয়ে ঘুরে আসো।বাবা মায়ের দোয়া নিয়ে আসো।”

কথাটায় কি ছিল সৃজা সঠিক জানেনা তবে এই রাগী অসম্ভব গম্ভীর শ্বশুরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হল তার।এভাবে তো ভেবে দেখেনি সে,ভাববে কিভাবে তার তো হুজুগের বশেই সিদ্ধান্তটা নেয়া হয়েছে।তার চেতন মন হয়তো এখনো মানতে পারছেনা এই বাড়ি,এই সংসার সর্বোপরি সাফওয়ানকে ছেড়ে তার পাঁচ বছর থাকা লাগবে।

চলবে….

#সৃজা
পর্বঃ২৯
লেখিকাঃআরুনীয়া চৌধুরী

সৃজার মৌন দৃষ্টিতে চোখ রেখে ইমরান চৌধুরী খানিকটা ভরকে গেলেন।মেয়েটা হয়তো আবেগে কেঁদে ফেলবে।খুব দ্রুতই নিজেকে সামলে নিল সৃজা।কয়েকদিন হল তার মন আবেগি হয়ে উঠছে বেশি।বিশেষ করে সাফওয়ানের ব্যবহারে পরিবর্তনের পর থেকে তার মন কাঁদে বেশি,বিশেষ সময়ে তা বাইরেও এসে পরে, যা সৃজাকে বড়ই অস্বস্তি দেয়।এবারও তাই ঘটল অস্বস্তিতে নিজের শ্বশুর মশায়ের দিকে তাকাতে পারছেনা।এতো লজ্জা কোথা থেকে তাকে পেয়ে বসে তা মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হয় সৃজার চেতন মন।মৌনতা ভেঙে মিনমিন করে সৃজা বলল

“আমিও যেতে চাইছিলাম বাবা,আপনি নিজে থেকে বলায় আমি খুশি হয়েছি।ধন্যবাদ আপনাকে। ”

“আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই।তোমার বিদেশ যাওয়ার পেছনে আমার নিজেরও স্বার্থ রয়েছে।”

ওহ!তাহলে স্বার্থের ঘোরেই কথা বলে সবাই।তবে কি স্বার্থ থাকে পারে ওনার।ইমরান চৌধুরী হয়তো বুঝতে পারলেন চায়ের কাপটা পূনরায় হাতে নিয়ে বললেন

“ভাবছো কি স্বার্থ তাইতো?তাহলে শুনো আমি চাইছি তুমি ভালো করে গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট করলে আমার কোম্পানি একজন দায়িত্বশীল সিইও পাবে এবং পরবর্তীতে অফিস এবং বাড়ি একইসাথে সামলাতে তোমার কোন সমস্যা হবেনা।আর তাছাড়া সাফওয়ানের চাপটাও কমবে,ছেলেটা একা হাতে সব সামলাচ্ছে,এতে করে সৃষ্টিকর্তা না করুক খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবনতা রয়েছে।”

সৃজা এবার বুঝতে পারল ইমরান চৌধুরীও একজন দায়িত্বশীল পিতা।তার মাঝেও ভালো বাবার গুণ রয়েছে,নিজ সন্তানকে সুস্থ দেখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আগেই নিতে চান তিনি।কিন্তু সৃজা!সে কি ভালো স্ত্রী হওয়ার ধর্ম পালন করতে পারছে?হয়তোবা না।

“রেডি হয়ে থেকো আগামিকাল সকালে তুমি যাবে, সাফওয়ান দিয়ে আসবে তোমায়।”

“জ্বী আচ্ছা।”
এর মধ্যে সাফিয়া চৌধুরীর আবির্ভাব ঘটল।তিনিও বিকেলে প্রকৃতি বিলাসে বেরিয়েছেন।তবে বাইরের সৌন্দর্যটা দেখবে কম খুতগুলো চোখে পরবে বেশি তার।হয়তো মালিকেও এজন্য কথা শুনতে হতে পারে,এ গাছে পানি দেয়া হয়না মনে হচ্ছে,ওই গাছের পাতা ছাটা ভালো হয়নি,গাছের ফুল কেন কম?এরকম নানা প্রশ্নে জর্জরিত হবে মালি বেচারা।

কিন্তু সৃজা এর মধ্যে থাকতে চাইলো না তাই কথা শেষে অন্দরমহলের দিকে হাটা দিল সে।ইমরান চৌধুরী পলকহীন সেদিকেই তাকিয়ে রইলেন।এই মেয়েটাকে নিয়েও তার এখন স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছে।চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিকে আরো উচ্চ পর্যায়ে নেয়ার একটি ধাপে পরিণত হবে তার বউমা।

বাসার ভিতরে ঢুকলেও আনমনে হাটছে সৃজা, অব্যাসবসত সে এগিয়ে যাচ্ছে।তার মাথায় সব কথা ছেড়ে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে আগামীকাল সাফওয়ান তাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে।আচ্ছা সে কি কষ্ট পাবে আমাকে নিয়ে যাওয়ার সময়?আর আমাকে ছেড়ে কি সে থাকতে পারবে এ-কদিন।কেনো থাকতে পারবেনা পাঁচ বছর থাকতে পারলে এ-কদিন নাহয় তার প্র্যাক্টিসই করবে।সৃজা মনকে প্রবোধ দিল।সবশেষে তার মনে উকি দিল এতো কাজ ছেড়ে সাফওয়ান কেনো তাকে নিয়ে যাবে?ভাবতে ভাবতে সাফওয়ানের রুমে পৌঁছে গেল সে।এই রুমটাই এখন তার বড্ড প্রিয়।সাফওয়ান বাসায় না থাকলেও মনে হয় আশেপাশেই আছে তাই সৃজা ঠিক করল এ রুমেই পড়বে আজ, নো স্টাডি রুম।

সন্ধ্যার দিকে পড়তে বসলেও রাত ১০টার দিকেই ঘুমিয়ে কাঁদা হয়ে গেল সৃজা।অভ্যাসবসত সে এখনো চেয়ারে বসে টেবিলে বইয়ের উপর মাথা দিয়ে রেখেছে।সাফওয়ান এলো ১১টার দিকে,এসে দেখল রুমের বেহাল দশা।বিছানায় এদিকে সেদিকে শিট ছড়িয়ে পরে আছে।কয়েকটা বই ল্যাম্প টেবিলটার কিনারে।সবশেষে নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে দেখল টেবিলে মাথা রেখে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে।সব ক্লান্তি যেনো মুহূর্তেই ক্ষানিকটা উবে গেল।

সাফওয়ান অফিস ব্যাগটা নিঃশব্দে রাখল,রিস্ট ওয়াচটাও তাই করল।কাবার্ড থেকে বাসায় পরার ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল মৃদু পায়ে।ফিরে এসে দেখল সে এখনো ঘুমে তাই কালবিলম্ব না করে কোলে তুলে নিল।তারপর আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে উঠে যাওয়ার সময় বুঝতে পারল সৃজার হাত তার পোলো শার্টের কলারে।আস্তে করে হাতটা সরিয়ে সাফওয়ান মিনমিন করে বলল

“যেগে থাকতে তো ছুঁতে দাওনা আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নিজ ঠিকই ছুয়ে দাও।”
মনের সাথে অনেক বাকবিতন্ডার পর ঠিক করল ওষ্ঠে নয় কপালে একটা চুমু দিয়েই সরে যাবে।কপালে ঠোঁট ছোঁয়ানোর আগমুহূর্তে সৃজা চোখ মেলে তাকালো সাফওয়ানকে অবাক করে দিয়ে সৃজা বলল

“এতক্ষণ লাগে একটা চুমু দিতে?” কথাটা বলেই আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল।সাফওয়ান ক্ষণিকের জন্য চমকালেও বুঝতে পারল ঘুমের ঘোরে কথা বলেছে।এসময় তার মনে নতুন ভাবনা এলো তাহলে কি সৃজা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে।কথাটা মনে মনে ভাবতেই শিহরণ বয়ে গেল তার মনে।আর দেরি না করে সৃজার ওষ্ঠাধরে নিজের ওষ্ঠ ছোয়ালো গভীরভাবে।সৃজা যেন এবার তড়াক করে চোখ খুলল,চোখগুলো গোলগোল করে কতক্ষণ সময় নিয়ে বুঝল কি হচ্ছে।তবে বুঝতে পেরে সাফওয়ানকে না সরিয়ে সে ও রেসপন্স করল।সাফওয়ান এতোটাই উন্মত্ত ছিল প্রেয়সীর ওষ্ঠাধরে যে বুঝতেই পারলোনা অসম্ভব কিছু হচ্ছে আজ।যখন তার মস্তিষ্ক সে সিগনাল দিল তখন আর ফিরে আসার সময় ছিল না কারন তার অর্ধাঙ্গিনী আজ স্বেচ্ছায় তার কাছে এসেছে।কয়েক মুহূর্ত যেতেই সাফওয়ান নিজে থেকে সরে এলো।সৃজা কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল।ইস!কি লজ্জা কি লজ্জা।নির্লজ্জের মতো এটা কি করল সৃজা।

সাফওয়ান নিজেকে সামলে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলল
“চলো খাবে।আমার ডিনার করা হয়নি।”

সৃজা খুশিমনে সাফওয়ানের পিছুপিছু ডাইনিংয়ে গেল।সাফওয়ানের অভিমান কিছুটা কমেছে মনে হল তার।সবকিছু গুছিয়ে উপরে এসে খেয়াল করল সাফওয়ান তার আগেই শুয়ে পরেছে।চোখের পাতা বন্ধ তার,আশ্চর্য এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেল।লাইটটা নিভিয়ে সৃজাও বিছানায় বসল,তার মনে হল সাফওয়ান সত্যিই ঘুমিয়ে পরেছে।সৃজা নিজেও শুয়ে পরল,সাফওয়ানের থেকে কিছুটা দূরত্বে তার বালিসটা থাকলেও নিজ দায়িত্বে সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দিল।ঘুমানোর ভান করা সাফওয়ান তখন ভাবলো বালিসের মতো এভাবেই যদি সৃজা তার এবং নিজের দূরত্বটা ঘুচিয়ে দিত।

সাফওয়ানের মুখোমুখি হয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে তার বুকে জায়গা করে নিল সৃজা।সাফওয়ান যেনো এই সময়টার অপেক্ষা করছিল।হয়তো আরো কিছুদিন প্রেয়সীকে জড়িয়ে ঘুমানো হবেনা তাই কিছু সময়ের জন্য অভিমানটা একপাশে সরিয়ে সেও পরম আবেশে সৃজাকে বুকে ঠাই দিল।সৃজাতো মনে করেছে ঘুমের ঘোরেই হয়তো সাফওয়ান তাকে জড়িয়ে ধরেছে,তবে এতেই সে খুশি।

সকাল সকাল উঠেই সৃজা আগে লাগেজ গোছানো শুরু করল।তারপর নিজেও রেডি হওয়া শুরু করল।সাফওয়ান তখন ওয়াশরুমে,ঝর্ণার আওয়াজ রুমেও আসছে তবে তা ক্ষীণ, অর্থাৎ সাফওয়ান গোসল করছে।আওয়াজটা বন্ধ হতেই সৃজা তড়িঘড়ি করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে একটা গলার হার পরার চেষ্টা করল।কিন্তু লাগাতে পারছেনা।সাফওয়ান ততক্ষণে টাওয়েল গায়ে সৃজার পেছনে এসে দাড়িয়েছে।মৌনতা বজায় রেখেই হারটা পরিয়ে দিল সাফওয়ান।সকালে ভেজা হাতের ছোয়ায় সৃজা কিছুটা কেঁপে উঠল।

সাফওয়ান নিজেও রেডি হয়ে নিল।সৃজার তার শাশুড়ীর রুমে গেছে ততক্ষণে।বৌমাকে দেখে নিজের মনটা খারাপ হয়ে গেল সাফিয়া চৌধুরীর।কি লক্ষ্মী প্রতিমা বৌমা তার,অথচ গায়ে গয়নাই পরতে চায়না।এইযে এখন বাবার বাড়ি যাবে একটা পাতলা হার পরে আছে,এটা যেনো কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।তাই নিজ হাতে পছন্দের কিছু ভারী গয়না পরিয়ে দিলেন।সৃজার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল

“আমার ঘরের লক্ষ্মীকে খুব মিস করবো।না গেলে হয় না মা?”
সৃজা তড়িৎ শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরল।বিদায় মুহূর্তটাও তার জন্য আনন্দের, এতো আনন্দ কেনো তার জীবনে?এমনও শাশুড়ী হয় বুঝি!!সাফিয়া চৌধুরী বললেন ”

“তাড়াতাড়ি এসে পরো কিন্তু, তুমি চলে গেলে আমিতো একা হয়ে যাবো।” সৃজার মায়া হলো শাশুড়ীর জন্য সত্যিই তো তিনি একা হয়ে যাবেন। টিউলিপ ও তো নেই।তারপর নিজে থেকে ভেবেই বলল

“আপনিও আমার সাথে চলুন আম্মা।” সাফিয়া চৌধুরীর মুখে হাসি খেলে গেল।

“এই বাড়ি ছেড়ে যে আমার মরণও নাই মা।তুমিতো নিজেই দেখো ওরা কি পরিমান অনিয়ম করে আর নিজের সংসার ছেড়ে তো আমি বেশিদিন থাকতেই পারিনা।”

“আম্মা তারপরও চলুন না” সৃজা বায়না শুরু করল।
সাফিয়া চৌধুরী পরে গেলেন বিপাকে।পরে বললেন

“তুমি এবার যাও আমি নাহয় পরের বার যাবো।ঠিক আছে?”

“হুম ঠিক আছে।”

নিচ থেকে সাফওয়ানের ডাক এলো।

“নিচে চলো নাহলে সাফী পাগল হয়ে যাবে।এতোদিনে তো বুঝতে পেরেছো ও লেট পছন্দ করেনা।”

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।সৃজাদের পেছনেও একটা গাড়ি চলছে তাতে নিরাপত্তা রক্ষীরা রয়েছে।এই গাড়িটা সাফওয়ান ড্রাইভ করছে সৃজা তার পাশের সিটে।সৃজা ভেবে পায় না এই লোকটা এতো ঘাড়ত্যাড়া কিভাবে হলো?ড্রাইভারকে পেছেনের গাড়িতে রেখে সে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছে এর চেয়ে ফালতু মানুষ সে দুটো দেখেনি।সৃজার শ্বশুর নিরাপত্তার কথা ভেবে বাড়ির সবচেয়ে ভালো ড্রাইভারটা তাদের গাড়িতে দিয়েছিল আর তার পুত্র কি না নিজেই গাড়ি চালাচ্ছে।একথা যখন জানবে তখন কি ভাববে সৃজার শ্বশুর সে নিয়েই চিন্তায় রয়েছে সৃজা।

জানালার কাচ খোলা সেদিকেই দৃকপাত করে রয়েছে সৃজা।যদিও অতিরিক্ত বাতাসে চোখ খোলা দায় তবুও এই লোকটার দিকে তাকাবেনা সে।তাই নীরবতা ভেঙে সাফওয়ানই বলল

“এতো রাগ করার কি হল?আমি কি প্রথমবার গাড়ি চালাচ্ছি।আর তাছাড়া তোমার অসুবিধাটা কোথায়?ওহ্ তুমি কি পেছনে বসে আমার সাথে একান্তে সময় কাটাতে চাইছিলে?”

সৃজা ততক্ষণে রাগে ফুসছে তবে সেটা রাস্তার গুটিকয়েক মানুষই দেখতে পেল।সাফওয়ান আবারো রাগানোর জন্য বলল

“আরে তোমার মনের কথা ভেবেই তো ড্রাইভার নিলাম না যাতে রোমান্সে থার্ড পারসন না থাকে।”

সৃজা এবার নিজের উড়ন্ত চুলগুলোকে কানের পেছনে গুজে সাফওয়ানের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল

“আর একটা কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।”

সাফওয়ান সে দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে শান্ত কন্ঠে বলল

“তুমি খারাপ হবে কেন?খারাপ তো আমি তাই নিজের ওয়াইফ পাঁচ বছরের জন্য শাস্তি দিয়ে অন্য কোথাও পারি দিচ্ছে।”

রাগী দৃষ্টি নিমিষেই শান্ত দৃষ্টিতে পরিণত হল।সৃজার বুকটা ধ্বক করে উঠল।এই কথার পৃষ্ঠে কি বলবে তা ভেবে পেলনা,তাই পূণরায় বাইরে দৃষ্টি মেলল।সাফওয়ান সেদিকে একবার তাকিয়ে ড্রাইভিং এ মন দিল।

বর্তমানে সৃজার চুলের তীব্র গন্ধ সাফওয়ানকে ঘায়েল করছে।সে যদিও ঘুমিয়ে আছে সিটে মাথা এলিয়ে,কিন্তু তীব্র বাতাসে চুলগুলো সব সাফওয়ানের মুখে যেয়ে পরছে।সাফওয়ান গাড়ির কাঁচটা উঠিয়ে দিল এরপর সৃজার মাথাটা নিজের কাঁধে নিয়ে নিল খুব সাবধানে।সৃজাও সাফওয়ানের এক হাত জড়িয়ে ঘুমিয়ে রইল।

প্রায় ৫ ঘন্টা জার্নির পর সৃজা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে।গ্রামের মাটির সুগন্ধ নাকে পৌঁছাতেই তার ঘুম ভেঙে গেল।তড়িঘড়ি করে উঠে ঘুমঘুম কন্ঠেই সাফওয়ানকে বলল কাচটা নামিয়ে দিতে।

কাচটা নামাতেই সৃজা অপলক বাইরে তাকিয়ে রইল।এখন তার কলেজের সামনে দিয়ে গাড়িটা যাচ্ছে কতক্ষণ কলেজের নামটার দিকে তাকিয়ে রইল এর একটু পরেই কাঁচাবাজার এখানে তার এক বান্ধুবির বাবার দোকান রয়েছে।গাড়িতে সৃজাকে এক মুহূর্ত দেখে তিনি খুশিমনে হাত নাড়ালেন।সৃজাও হাত নাড়াল,সাফওয়ান সেদিকে একবার তাকাল।পথে যাওয়ার সময় বিভিন্ন জনের সাথে দেখা হল প্রায় সকলেই হাসি মুখে সৃজার দিকে তাকিয়ে রইল।

বাড়িতে পৌঁছা মাত্রই সৃজা আর সাফওয়ানের অপেক্ষা করলনা তার আগেই নেমে পরল।ড্রয়িং রুমে গিয়েই আগে পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরল।সৃজার মা অবাক হলেন মেয়েকে এসময় দেখে কারণ তারা সম্পূর্ণ না জানিয়েই এসেছে।সৃজার মা মেয়ের আগে জামাইর খবর নিলেন।

“জামাই কোথায়?তুই একা কেন মা?”

সৃজার মাতায় এবার বাজ পরল,অতিখুশিতে সেতো তাকে বাইরে রেখেই চলে এসেছে।যেভাবে দৌড়ে এসেছিল ঠিক সেভাবেই বাইরে গেল,ততক্ষণে সাফওয়ান গাড়ি পার্কিং করে সৃজার লাগেজ নিয়ে ভিতরে ঢুকছে।দূর থেকে মন্টু এসে জোর করেই লাগেজটা তার হাতে নিল।মন্টু এ বাড়ির কাজ করে দেয়।সৃজা তাকে দেখে বলল

“কেমন আছো মন্টু ভাই?”

মন্টু বত্রিশ পাটি দাঁত বের করা একটা হাসি দিয়ে বলল
“ভালা আছি সিজা আপা।”

“ওফফো তুমি কখনোই আমার নামটা ঠিক করে বলতে শিখলেনা।”

সাফওয়ান কিছুক্ষণ সৃজার চিন্তান্বিত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল।সৃজার মা জামাইকে দেখে খুবই খুশি হলেন।এই প্রথম ছোট মেয়ে আর জামাই বাড়ি একসাথে বাড়ি এল।

সৃজা স্নান করছে আর সাফওয়ান তার বিছানায় শুয়ে ফোনে কথা বলছে।সৃজা ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই কথা বলতে বলতে সাফওয়ান মাঝপথে আটকে গেল।কি পরেছে এটা সৃজা!১৬ বছরের কিশোরীর মতো সৃজা আজ স্কার্ট আর টপস পরেছে আর গলায় ওড়না।সাফওয়ান যেনো আরেকবার ঘায়েল হল এই রূপে।কই আগেতো জানতনা সৃজা বাসায় এগুলো পরে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here