“সিটি হ্যাকড” (১ম পর্ব)

“সিটি হ্যাকড” (১ম পর্ব)
লেখক; আলিফ খান (মেন্টাল)

— স্যার কেউ একজন আমার গুগল ড্রাইভ একাউন্ট হ্যাক করেছে..
— ও!
–স্যার শুনছেন আমার কথা? এইযে স্যার!
— আরে ভাই দেখছেন তো কাজ করছি! বলুন শুনছি!
— স্যার আমার গুগল ড্রাইভে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফাইল রয়েছে! Last night কেউ একজন হ্যাক করেছে এবং সব মুছে দিয়েছে!
— পুরুষ মানুষ হয়ে এভাবে ম্যান ম্যান করছেন কেন? কি আর আছে? কিছু পিক এইতো??
— স্যার আমার সাধারণ পিক হলে আমি পুলিশের কাছে আসতাম না সাধারণ এই গুগল ড্রাইভ হ্যাক হওয়াতে…

কথা হচ্ছিল রনি আর একজন পুলিশ সদস্য সাদেকের মধ্যে!
.
রনি ২৩ বছরের যুবক! ঢাকার একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করে! একটু শাকিব খান কাটিং তাই প্রায় মেয়েরাই রনির জন্য পাগল!
..
আজ সকালে রনি ঘুম থেকে উঠে মোবাইল এ ফেসবুকিং করতে করতে হঠাৎ গুগল ড্রাইভ এ গিয়ে দেখে কোন পিক কিংবা ভিডিও নেই!
অথচ অনেক পিক এবং ভিডিও ছিল!
..
সাদেক সাহেব; আসলেই তো..সামান্য গুগল ড্রাইভ হ্যাক হওয়াতে আপনি পুলিশ স্টেশনে কেন?
রনি; স্যার আমি আমার অপরাধ স্বীকার করে নিচ্ছি! প্লিজ আমাকে বাচান!
সাদেক সাহেব; আরে ভাই জলদি বলুন!
রনি; স্যার আমি লাইফে অনেক মেয়ের সাথেই প্রেম করেছি এবং শারিরীক সম্পর্ক ও করেছি! প্রেমের সুবাদে অনেক মেয়েই আমাকে তাদের নগ্ন পিক আমাকে দিয়েছিল! এবং কয়েকটি শারিরীক সম্পর্ক এর ভিডিও আমি গোপনে ভিডিও করেছিলাম! স্যার এই পিক এবং ভিডিও গুলো আমি গুগল ড্রাইভ এ রেখেছিলাম! স্যার আমি জাস্ট এগুলো এমনিই মাঝে মাঝে দেখার জন্য রেখেছিলাম! অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না আমার স্যার!
সাদেক; কত গুলো পিক ছিল? কয়টা মেয়ের পিক?
রনি; ৩০০+ হবে! প্রায় ১১-১২ জন মেয়ের পিক ওইগুলা! ওদের সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে অনেক আগেই!
সাদেক সাহেব; আপনি তো ভাই নিজে মরেছেন মেয়ে গুলারে নিয়ে মরেছেন!
রনি; স্যার প্লিজ আমাকে শাস্তি দিন!
সাদেক সাহেব; আপনার শাস্তি তো হবেই! আমি ভাবছি মেয়ে গুলোর কি হবে? হ্যাকার এর উদ্দেশ্য কি??
.
রনিকে এরেস্ট করা হলো…
রনির থেকে ১১ জন মেয়ের নাম্বার এবং ঠিকানা সংগ্রহ করলো পুলিশ!
কিন্তু মেয়েদের কিছুই জানানো হলো না!
এদিকে রনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে..কেউ তার মোবাইল ধরেছিল কি না..কেউ পাসওয়ার্ড জানতো কি না…

এদিকে সব ঠান্ডা…
পুলিশ ভেবেছিল এতগুলো মেয়ের পিক হ্যাক করে যেহেতু নেয়া হয়েছে সেহেতু হয়তো বড় কোন প্লানিং থাকবে হ্যাকারের…
কিন্তু ৪ দিন পার হয়ে গেলো কিন্তু শহরে কোথাও কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু লক্ষ্য করা যাচ্ছে না!

ওসি সাইফুল; সাদেক সাহেব শহর তো একদম চুপচাপ! আপনি তো কত ভয় পেয়েছিলেন! এগুলো পোলাপান করে! আবার ডিলিট করে দেয়! সবারই তো জানের মায়া আছে!
..
সাদেক সাহেব; স্যার এই থমথমে পরিবেশটাই আমার ভয় লাগছে..চুল-দাড়ি পেকেছে তো! অনেক কিছুই দেখেছি এই পুলিশের পোশাকে! বড় কিছু ঘটতে চলেছে স্যার..

৫ম দিন…
ভোর সকাল…
হঠাৎ পুলিশের একজন খোচর এর কল…

খোচর; স্যার আপনি যেই মেয়েটির ওপর নজর রাখতে বলেছিলেন,সেই মেয়েটি মারা গেছে! গত রাতেই নিজের রুমে ফাসি দিয়েছে!
সাদেক সাহেব ; আচ্ছা!

সাদেক সাহেব ১১টি মেয়ের ওপর নজর রেখেছিলেন বিভিন্ন লোক দিয়ে!
১টি মেয়ের সুইসাইড এর খবর পেয়ে বাকি মেয়েদের খবর নিয়ে জানতে পারে ১১ জনই গতরাতে সুইসাইড করেছে!

সাদেক সাহেব; স্যার বলেছিলাম বড় কিছু ঘটবে!
ওসি সাইফুল; সাদেক সাহেব আপনি সাদা পোশাকে মেয়ে গুলোর বাড়িতে যাবেন এবং পরিবার থেকে অনুমতি নিয়ে মেয়ে গুলোর রুম গুলো খুব ভালো করে সার্চ করে আসুন! দেখেন কিছু পান কি না! কিন্তু কোন ভাবেই হ্যাকের ব্যাপারটা এখনই মেয়েদের পরিবারকে জানাবেন না!
সাদেক সাহেব; জি স্যার!
.
সাদেক সাহেব ১১টি মেয়ের রুম পরিদর্শন করে কিছু লিড নিয়ে ফিরে আসে!
..
সাইফুল; কি পেলেন?
সাদেক; স্যার ১১টি মেয়েই রাত ২-৩ টার মধ্যে সুইসাইড করেছে! ১১ জনের মোবাইল আমরা সংগ্রহ করেছি! ১১ জনের মোবাইল এ একটা ম্যাসেজ কমন! সবাইকেই তাদের নিজেদের নগ্ন পিক পাঠিয়েছে হ্যাকার! এবং সবচাইতে বড় ব্যাপার ওই নাম্বারেই প্রতিটি মেয়ে ১০-২০ মিনিট করে কথাও বলেছে রাতে…
সাইফুল; নাম্বারটার কি অবস্থা?
সাদেক; অফ! আমি ডিটেইলস এর জন্য পাঠিয়েছি…খুব তাড়াতাড়ি জানাবে সীম কার নামে রেজিষ্ট্রেশন!
.
সাইফুল; কি ম্যাসেজ পড়েন তো সাদেক সাহেব!

“তোমার এই নগ্ন পিকটা যদি সরাসরি তোমার বাবার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার কিংবা হোয়াটাসএপে দেই কেমন হবে? তোমার বাবা কিংবা মা সুইসাইড করবে আর না হয় হার্ট এটাক করবে! তার চাইতে ভালো তুমি মরে যাও..তোমার মরে যাওয়াটা আমার খুব প্রয়োজন”

সাইফুল; আজব!
সাদেক সাহেব; জি স্যার! ১১ জনকেই একই ম্যাসেজ এবং তারপর কলে ১০-১২ মিনিট কথা তারপর মেয়ে গুলোর সুইসাইড!

পুলিশ সীমের ডিটেইলস এর জন্য অপেক্ষা করছিল! এদিকে ১১ টি মেয়ের পরিবারকে একসাথে থানায় ডেকে ওসি সাইফুল হ্যাকিং এর ব্যাপারটা খুলে বলে এবং পরিবারকে জানায় মেয়েরা কেন সুইসাইড করেছে!
একদিকে বাবা-মায়েদের হাহাকার করা কান্না!
..
অন্যদিকে মিডিয়াতে এই ঘটনা লিক হয়ে যায়!
প্রতিটি চ্যানেল ঢালাউ করে নিউজ করছে!
“হ্যাকিং এর শিকার ১১ যুবতী..হ্যাকার ধরাছোঁয়ার বাইরে”

নিউজে সারাদেশের মানুষ ব্যাপারটা জানতে পারে এবং সবাই যেন নড়েচড়ে বসে!
.
সেদিন রাতের অন্ধকারে ঘটে আরেক ঘটনা!
প্রচুর মানুষ পুলিশ স্টেশনের সামনে এসে কান্না শুরু করে হাহাকার শুরু করে…
সবার একটাই অভিযোগ…
“কিছুক্ষণ আগে তাদের মোবাইল এ একটা ম্যাসেজ আসে! ম্যাসেজে একটা গিফট এর কথা বলে একটা লিংক দেয়া ছিল! যারাই লিংক এ ক্লিক করেছে! তাদের ওই নাম্বার দিয়ে যতগুলো মোবাইল ব্যাকিং এর একাউন্ট ছিল! একাউন্ট এর সব টাকা মুহুর্তের মধ্যে হ্যাক হয়ে যায়! অনেকের একাধিক একাউন্ট ছিল! সব টাকা মুহুর্তের মধ্যে উধাও হয়ে যায়!

সাদেক সাহেব চেক করে দেখে…১১টি মেয়ের মোবাইল এ যেই নাম্বার থেকে ম্যাসেজ গিয়েছিল! সেই নাম্বার থেকেই ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছিল টাকা হ্যাক হওয়া নাম্বার গুলোতে!
..
সবাই পুলিশ স্টেশনের সামনে কাদছে এবং মিডিয়া সেগুলো ব্রেকিং নিউজ করে সরাসরি দেখাচ্ছে!
দেশবাসী অনিরাপত্তায় ভুগতে থাকলো!
একদিকে ১১টি সুইসাইড অন্যদিকে টাকা হ্যাক দেশবাসীর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে….

এদিকে পুলিশের হাতে এসে পৌছায় সীমের ডিটেইলস….
.
সাইফুল; কোথাকার??
সাদেক সাহেব; স্যার সীমটা রংপুর এর একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের! “আব্দুল সালাম” নামে রেজিষ্ট্রেশন করা!

ওসি সাইফুল এবং সাদেক সাহেব ছুটেন রংপুরে….

লোকেশন অনুযায়ী গিয়ে দেখে একটি বাড়ি!
বাড়ির উঠানে একজন লোক খালি গায়ে বসে কাজ করছে….

সাইফুল; আব্দুল সালাম আপনি?
সালাম; জি আমি?
সাইফুল; 01********8 এটা আপনার নাম্বার?
সালাম; জি! এইডা তো হারাইয়া গেছে!
সাইফুল; তারপর
সালাম; নতুন সীম কিনছি..
সাইফুল; আপনার সীম হারিয়ে গেলো! আপনি সীম তুলবেন না?
সালাম; হ তুলতে গঞ্জে গেসিলাম! দোকানদার কয় এই সীম তুলতে ২০০ টেহা..নতুন সীম ১০০ টেহা! আমি গরিব মানুষ নতুন সীম কিনছি!
.
সাইফুল; কিছু বলার নাই!
সালাম; আপনেরা কি ঢাকার তে আইসেন?
সাইফুল; হ্যা!
(সালাম ঘরের ভিতরে গিয়ে একটা কাগজ নিয়ে আসে)
সাইফুল; এটা কি?
সালাম; আমার এনে ঢাকার থেকে একজন স্যার আসছিল! সে বলসে ঢাকার থেকে কেউ আসলে তারে এই কাগজ দিতে…
সাইফুল; তারে দেখছেন?
সালাম; না! সে মাস্ক পড়া ছিল!
সাইফুল; সেই আপনার সীম চুরি করেছিল এবং আমরা পুলিশ! সে তার কাজ করার জন্যই আপনার এখানে সীম চুরি করতেই এসেছিল! তার কিছু বিবরণ দেন!
সালাম; ২৩-২৪ বছর বয়স! খুব স্মার্ট! বিদেশিদের মতো! অনেক বড়লোক! আমারে ১০০০ টাকা দিসে একরাত এখানে থাকছিল তাই!

সাইফুল কাগজটা খুলে..
লিখা ছিল…
.
“সবেতো খেলা শুরু
Good Luck”

চলবে!

গল্পটি কাল্পনিক ধন্যবাদ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here