সিটি_হ্যাকড” (৫ম এবং শেষ পর্ব)

#সিটি_হ্যাকড” (৫ম এবং শেষ পর্ব)

–I hate this city system…
— তাই তুই শহরের পুরো সিস্টেমটাই হ্যাক করে নিলি?
হ্যাকার; (চুপ)
জয়; দুনিয়ার সবচাইতে বড় হ্যাকারটাও একসময় প্রশাসন এর কাছে ধরা পড়েছে! সেখানে তুই কিভাবে ভাবলি তুই ধরা পড়বি না!
মাহবুব(হ্যাকার); কে বলেছে জানতাম না! আমি জানতাম আমি একদিন না একদিন ধরা পড়বোই!
জয়; তাহলে?
মাহবুব; আমি শুধু এই শহরের প্রশাসন এবং শহরবাসীকে দেখাতে চেয়েছিলাম আমি মাহবুব একাই কি করতে পারি..কারন এই শহর আমাকে অযোগ্য ভেবেছিল কিন্তু আমি এই শহরকে দেখিয়ে দিয়েছি শহরটাই আমার অযোগ্য এবং আমার কাছে অসহায়…
জয়; এতটা ঘৃণা কেন এই শহরকে?
মাহবুব; আমার মা একজন ব্রাজিলিয়ান নাগরিক! বাবা বাংলাদেশি! বাবা ব্রাজিল যায় এবং সেখানেই তাদের প্রেম এবং বিয়ে! আমি জন্ম নেই! ব্রাজিলেই আমার বেড়ে উঠা কিন্তু বাবার থেকে বাংলাদেশের গল্প এবং গুগলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ লড়াই এবং এখানকার মানুষের লাইফস্টাইল সম্পর্কে জানতে পেরে মনের এক কোনে বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহ জন্মায়! মা মারা যায় তার কিছুদিন পর বাবাও মারা যায়! আমি একা হয়ে যাই!৩ বছর আগের ঘটনা..
আমি বাংলাদেশে চলে আসি! বাংলাদেশ ঘুরতে শুরু করি!
বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু জানলেও একটা ব্যাপার আমি জানতাম না!
“বাংলাদেশ প্রশাসন”
ব্রাজিল একটি অন্ধকার রাষ্ট্র..সেখানে প্রশাসনিক কাঠামো তেমন নেই কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ,বাংলাদেশ সেনাবাহিনী,বাংলাদেশ র‍্যাব এর সম্পর্কে জানার পর আমি মুগ্ধ হই তারপর এগুলো সম্পর্কে প্রচুর ঘাটাঘাটি করি! আমি অবাক হই! কত সুন্দর করে তারা দেশকে রক্ষা করছে!
একসময় আমার বাংলাদেশ পুলিশে কাজ করার আগ্রহ জন্মায়!
আমি এপ্লাই করি!
সবকিছুই ঠিক ছিল….
কিন্তু আমাকে ওরা রিজেক্ট করে দেয়!
আমার হাইটে সমস্যা!
আমি নাকি ঠিকমতো বাংলা বলতে পারি না!
আমি নাকি এই পোস্ট এর জন্য যোগ্য না!
এসব বলে আমাকে ওরা রিজেক্ট করে দিল!
জয়; এরকম হাজার হাজার ছেলে রিজেক্ট হচ্ছে! স্বাভাবিক ব্যাপার!
মাহবুব; আমি হারতে শিখি নি! আমি কখনো কোথাও হারি নি! নিজের দেশের হয়ে কাজ করবো এইটা ভেবে আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম! কিন্তু ওরা আমাকে বাদ দিয়ে দিল! আমি এটা মেনে নিতে পারি নি! ২ দিন টানা রুমে বসে কেদেছি আর ভেবেছি কেউ কিভাবে আমাকে হারাতে পারে….
জয়; তারপর….
মাহবুব; হ্যাকিং আমার আগে থেকেই জানা ছিল! শুরু করি হ্যাকিং! পুরো শহরকে দেখিয়ে দিয়েছি এই অযোগ্য,খাটো মাহবুব কি কি করতে পারে….
(জয় মাহবুবকে একটা থাপ্পড় দেয়)
জয়; তুই একটা সাইকো! তোর এই ফালতু ব্যাপারের জন্য ১১টা মা তাদের মেয়েকে হারিয়েছে!
মাহবুব; (হা হা হা)
জয়; তুই কখনো হারিস না! আজ দেখ তুই হেরে আমার সামনে বসে আছিস…
মাহবুব; আপনার কি মনে হয় আমি না চাইলে আপনি আমাকে ধরতে পারতেন?
জয়; মানে?
মাহবুব; যেই হ্যাকারটা পুরো শহর হ্যাক করে ফেললো…তাকে এত সহজে ধরে ফেলা সম্ভব?
জয়; কি বলতে চাস?
মাহবুব; আমি চাইলে আপনি কখনো আমাকে ট্রেক করতে পারতেন না! কিন্তু আমার উদ্দেশ্য যখন সিটি হ্যাকড! তখন এই খেলায় আমি জিতে গেলে শহরটা হ্যাক করবে একজন কিন্তু আমি হেরে গেলে শহরটা হ্যাক করবে দুইজন! তাই আমি হেরে গিয়েও জিতে গেলাম!
.
জয়; বুঝিয়ে বল…
মাহবুব; ৭ বছর পর তো বেরিয়েই যাবো! কে বাচাবে এই শহরকে?
জয়; শালা সাইকো! আমি এমন ভাবে চার্জশীট করবো যাতে তোর ফাসি হয়! মার্ডার কেস দিব!
মাহবুব; অহ মিস্টেক! মেয়ে গুলোর সুইসাইড কেসটা চাইলেই আপনি আমার ওপর চাপাতে পারেন! এটা ভাবি নি! ভাবলে হয়তো ধরা দিতাম না!
জয়; নাটক কর?
মাহবুব; আমি শহরকে দেখিয়ে দিয়েছি আমি মাহবুব কি কি করতে পারি এখন মরে গেলেও আফসোস নেই! কিন্তু স্যার শহর কিন্তু হ্যাকড হবেই…
জয়; ফাসির জন্য প্রস্তুত হ!
মাহবুব; রা*বে* দিয়ে আমার মতো মাহবুবকে হ্যাক করা সম্ভব না স্যার! ওই ১১ জন মেয়ের যেমন মরে যাওয়াটা আমার প্রয়োজন ছিল ঠিক তেমনি এখন আমার এরেস্ট হওয়াটা খুব জরুরি ছিল! I hate The city…
(জয় উঠে চলে যাচ্ছে)
মাহবুব; ৩য় ইচ্ছাটা পূরন করতে পারবেন তো?
(জয়ের মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ে)
জয়; কে তুই?
(মাহবুব অট্ট হাসি)
জয়; বল শুয়োরের বাচ্চা!
মাহবুব; হ্যাকিং দুনিয়া সম্পর্কে আপনার কোন আইডিয়াই নেই স্যার!এ এক অন্ধকার জগৎ! এ অন্ধকারের খেলায় কখনো কখনো হেরে গিয়ে জিততে হয়! I hate this city হা হা হা হা হা হা…….
(জয় চলে আসে)
.
জয় মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো দেশবাসীকে জানায় মাহমুব আসলে নিজের ক্ষমতা দেখানোর উদ্দেশ্যেই হ্যাকিং করে চলেছিল!
এবং সে একটা সাইকো!
..
জয় “হার্ট হ্যাকারকে” “ধন্যবাদ” লিখে একটা ম্যাসেজ দেয়! কিন্তু কোন রিপলে আসে না!
এদিকে দিন যেতে থাকে!
মাহবুবের বিরুদ্ধে চার্জশীট জমা দেয়া হয়!
আদালতে মাহবুবের ফাসির রায় হয়!
..
একসময় মাহবুবের ফাসি হয়ে যায়!
ফাসির মঞ্চে দাড়িয়েও মাহবুব বলছিল “আমি যাচ্ছি কিন্তু এই শহর কাদবে”
.
এদিকে জয় একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবছে…
হার্ট হ্যাকারের ৩য় ইচ্ছার কথা মাহবুব জানলো কিভাবে?
তাহলে কি মাহবুব আসল হ্যাকার না?
হার্ট হ্যাকার এর গল্পটা কি তাহলে হ্যাকারের একটা প্লানিং!
আসল হ্যাকার কি তাহলে এখনো অন্তরালে?
এসবই ভাবছিল জয়!

মাহবুব এর ফাসির ৩ দিন পর হঠাৎ জয়ের ফেসবুকে ম্যাসেজ দেয় হার্ট হ্যাকার!
..
হার্ট হ্যাকার; শহর এখন নিরাপদ!
জয়; (কিছুটা চমকে) হ্যা ধন্যবাদ! আপনার জন্যই সম্ভব হয়েছে!
হার্ট হ্যাকার; ৩য় জিনিসটা দেন!
জয়; কত টাকা চান বলুন? আপনি আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর হয়ে কাজ করবেন??
হার্ট হ্যাকার; টাকা চাই না!
জয়; তাহলে…
হার্ট হ্যাকার; মনযোগ দিয়ে শুনুন!
আপনি আপনার সাইবার সেল থেকে কোরিয়া পুলিশের ওয়েবসাইট এ একটা বার্তা পাঠাবেন! তারা বার্তার রিপলের জন্য আপনার আইডি এবং ফেইস ভেরিফাই চাইবে! আপনি সেটা দিবেন! তখন তারা বাংলাদেশ সাইবার সেলকে তাদের ওয়েবসাইট এ রাখবে! তখন আমি বাংলাদেশ সাইবার সেল দিয়ে কিছু কাজ করবো!
জয়; কি কাজ বলুন?
হার্ট হ্যাকার; সাইবার সেলের পাসওয়ার্ড এখনো আছে আমার কাছে কিন্তু তারা কোন প্রশাসন এর লোকের আইডি এবং ফেইস ভেরিফাই ছাড়া আমার লিংকে এড হবে না! তাই আপনাকে যেটা বললাম সেটা করতে হবে!
জয়; আচ্ছা আমি দিলাম! তারপর আপনি কি করবেন?
হার্ট হ্যাকার; আমি ওয়েবসাইটটা অল্প কিছু সময়ের জন্য হ্যাক করবো! এটা পারলেই আমাকে একটা হ্যাকার টিম তাদের গ্রুপে এড করবে!
জয়; তাদের ওয়েবসাইট হ্যাক হলে তো তারা বাংলাদেশের ওপর ক্ষেপবে!
হার্ট হ্যাকার; সমস্যা নেই! আমি ইমপিটি করে দিব! তাদের ওখানে লিংক ডিটেইলস এর কোন নাম থাকবে না! আর যদি কোন ভাবে তারা বের করে ফেলে বাংলাদেশ থেকে লিংক গিয়েছে! তাহলেও আমি সিস্টেম করে দিব যাতে তারা বুঝে অন্য কোন দেশ থেকে ফেইক বাংলাদেশ বানিয়ে লিংক পাঠিয়েছে!
.
জয়; অসম্ভব আমি এটা করবো না!
হার্ট হ্যাকার; আপনি কথা দিয়েছিলেন কিন্তু…
জয়; শহর বাচাতে আমি পুরো দেশকে নিয়ে বাজি ধরতে পারবো না! এটা আপনি আগে বললে হয়তো আমি আপনার কথায় রাজি হতাম না!
হার্ট হ্যাকার; আপনি কিন্তু নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনছেন!
জয়; দুঃখিত আমি! আমি আপনার কথা মানতে পারছি না!
(হার্ট হ্যাকার ম্যাসেজ রিপলে করে নি আর)

হ্যাকারদের একটা আলাদা জগৎ রয়েছে! মাহবুব সেখানেই জানতে পেরেছিল একটা চাইনিজ হ্যাকিং টিম কাউকে বলেছে কোরিয়ান ওয়েবসাইট হ্যাক করতে! সেটার জন্য বাংলাদেশি ওয়েবসাইট এর প্রয়োজন! তখনি মাহবুব জয়ের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে এবং হার্ট হ্যাকার সম্পর্কে জানতে পারে! তারপর মাহবুব হার্ট হ্যাকার এর সম্পর্কে খবর নেয় এবং হার্ট হ্যাকার যে কত বড় হ্যাকার তা জানতে পারে! মাহবুব যেটা পারবে না হার্ট হ্যাকার সেটা পারবে সেটা মাহবুব বুঝেছিল! তাই মাহবুব চেয়েছিল হার্ট হ্যাকারকে শহরের বিরুদ্ধে লাগাতে আর সেটার জন্যই মাহবুব ধরা দেয়! কারন মাহবুব জানতো হার্ট হ্যাকারের কথায় জয় কখনোই রাজি হবে না এবং হার্ট হ্যাকার শহরের পিছনে লাগবে!
মাহবুব আরও ভেবেছিল সে ৭ বছর পর বেরিয়ে যাবে কিন্তু আনফরচুনেটলি মাহবুবের ফাসি হয়ে যায়!

২ দিন পর হঠাৎ জয়ের মোবাইল এ একটা ম্যাসেজ!

“জবান ঠিক রাখলি না!
এই শহরকে এমন ভাবে হ্যাক করবো যে শহরের আনাচে কানাচে শুধু কান্নার শব্দ শুনবি”
“হার্ট হ্যাকার”

হার্ট হ্যাকার আউট অফ নেটওয়ার্ক হয়ে যায় এবং আইডি অফ!

সমাপ্ত!
.
লেখক; আলিফ খান (মেন্টাল)
.
গল্পটি কাল্পনিক ধন্যবাদ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here