সর্বনাশীনি_তুমি #পর্ব:১২ #Mishmi_muntaba_moon

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:১২
#Mishmi_muntaba_moon

সেহরিশের কথা শুনে ইকরাম উপমা উভয়ই বিস্মিত হয়ে তাকালো।বলে কি পাগল হয়ে গেলো নাকি?চোখ মুখ কুচকে সেহরিশের দিকে তাকিয়ে বলল

‘কি যা তা বলছেন।’

ইকরাম উপমার দিকে তাকিয়ে সেহরিশকে চোখ দিয়ে দেখিয়ে বলল

‘উপমা এইটা কি তোমার বয়ফ্রেন্ড? ‘

‘নাহ নাহ এ,,’

‘বয়ফ্রেন্ড প্লাস ফিউচার হাসবেন্ড। ‘

মুচকি হেসে বলল সেহরিশ।উপমা কপাল দুই আঙুল দিয়ে চেপে ধরে বিরক্ত সংবরণ করার চেষ্টা করলো।ইকরামও জোড়পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল

‘ওহ আচ্ছা তাহলে সেফলি যেও উপমা।বায়।’

বলে ইকরাম চলে গেলো বাড়ির ভেতরে।ইকরামকে যেতে দেখে উপমা মুখ খুললো।দাতে দাত চেপে বলল

‘কি পেয়েছেন হ্যা।আর এইখানে কেনো এসেছেন আপনি?’

সেহরিশ ভ্রু কুচকে দূর আকাশে তাকালো।কিছু পর্যবেক্ষণ করে উপমার হাত ধরে বলল

‘আকাশ মেঘলা লাগছে।চলো বাসায় দিয়ে আসি।’

উপমা সেহরিশের এমন আচরণে আহত হলো।তার কোনো কথা যেনো কানেই ঢুকছে না।হাত ঝাড়া দিয়ে বলল

‘আপনি সো কোলড পসেসিভনেস কেনো দেখাচ্ছেন?’

সেহরিশ উপমার দিকে তাকালো।গম্ভীর কন্ঠে বলল

‘ কস আই এম পসেসিভ এবাউট ইউ।আচ্ছা এই সব বাদ দাও চলো।’

বলে সেহরিশ আবারও উপমার হাত ধরলো।উপমা রাগে বিরক্তিতে কিছু করতে না পেরে সেহরিশের ধরা হাত শক্ত করে চেপে ধরে মুচরাতে লাগলো।উপমা ভেবেছিলো এই হাতে যেহেতু ব্যাথা পেয়েছে চেপে ধরলে হয়তো ব্যাথায় ছেড়ে দেবে কিন্তু নাহ সেহরিশের মুখে ব্যাথার অথবা উপমার হাত ছাড়ার কোনো লক্ষন দেখতে পারলো না।তাই উপমাও আর চেষ্টা করলো না।সেহরিশের হাতে ব্যাথা দিতে একদমই চায় না উপমা।

বাড়িতে পৌছাতেই নেমে বাড়ির দিকে হাটা ধরলো।কিন্তু সেহরিশের কাধের কথা একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে।কি করবে ভেবেচিন্তে পিছে ফিরলো।সেহরিশ গাড়ি থেকে নেমে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে উপমা বার কয়েক পলক ফেললো।সেহরিশের কাছে গিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল

‘আপনার কাধের চোট টা,,

বলে চুপ করে গেলো উপমা।কেনো যেনো মনে হচ্ছে ফিরে আসা উচিত হয় নি।কি ভাবছে সেহরিশ।

‘ঠিক আছি আমি।’

বলে সেহরিশ উপমার মাথায় হাত দিলো।উপমা অনেকটা দূরে গিয়ে দাড়ালো।ভ্রু কুচকে সেহরিশকে বলল

‘আপনি সুযোগ পেলেই শুধু ধরাধরি করেন কেনো?’

উপমার কথায় সেহরিশ হাসলো।কিছুটা ঝুকে ভ্রু উচিয়ে বলল

‘এইটাকে ধরাধরি বলছো আসল ধরাধরি দেখালে তোমায়।’

বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবারও ঠোঁট কামড়ে হাসলো।উপমা মুখটাকে কঠিন করার চেষ্টা করার মাঝেই জাফর সাহেবকে দেখে মুখের রঙ পাল্টে গেলো। দ্রুত পায়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। গেটের ভেতরে গিয়ে জাফর সাহেবকে আসতে না দেখে উপমা দাঁড়িয়ে গিয়ে বাহিরে উঁকি দিলো।তার বাবকে সেহরিশের সাথে কথা বলতে দেখে মুখটা মলিন হয়ে গেলো উপমার।সেহরিশ শান্ত গম্ভীর মুখে কিছু একটা বলছে।কথার মাঝেই চোখজোড়া উপমার দিকে আটকালো মুহূর্তেই চোখাচোখি হলো।উপমা একদৃষ্টি তাকিয়ে ভিতরে চলে গেলো।

____

এক মাস পার হতে না হতেই পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো পুরো জোরে।সিলেবাসের প্রায় অর্ধেক ছিলো বাকি।পরীক্ষার আগের রাত পড়ে শেষ করলো যেমন তেমন করে।বাকি নিজের থেকে লিখে দিয়ে আসবে বলে ভাবনা।
যতোদিন পরীক্ষা চললো সেহরিশকে আগের মতো দেখা গেলো না।প্রথম দুই পরীক্ষায় একেবারেই দেখা যায় নি তারপরের কিছু পরীক্ষায় বিকেলে পরীক্ষার পরে গাড়িতে হেলান দেয়া অবস্থায় দেখেছিলো উপমা।আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলে নি।

শেষ পরীক্ষায় আবার ইকরামকে দেখা গেলো ইশফাকে নিতে এসেছিলো হয়তো।উপমাকে দেখে হেসে ওর দিকে বাড়লো।উপমা বিনয়ী হাসলো।ইকরাম আশেপাশে তাকিয়ে বলল

‘ইশফাকে দেখেছো?’

‘ইশফাতো চলে গেলো।আপনি কি ওকে বলে আসেন নি?’

‘নাহ আমি তো এইখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম ওকে নয়ে যাই।’

উপমা ছোট করে ‘ওহ’ বলে চুপ করে গেলো।ইকরাম আগ বাড়িয়ে বলল

‘তুমি যাবে না বাড়ি?’

‘হুম হুম আমি তো বাড়িতেই যাচ্ছিলাম।’

‘চলো তাহলে একসাথেই হাটতে হাটতে চলে যাই।’

উপমা ইকরামের দিকে তাকালো।হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে।উপমার দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বিরক্ত লাগার সত্ত্বেও হেসে ইকরামের সাথে পা বাড়ালো।

‘তোমার বয়ফ্রেন্ড রাজনীতির নেতা নাকি।আমি চিনতাম না তো রাজনীতির ব্যাপার স্যাপারে আরকি ততোটা খবরা খবরা রাখি না তো।’

ইকরামের কথা শুনে হেসে বলল

‘নাহ উনি আমার বয়ফ্রেন্ড না।’

উপমার কথায় ইকরাম ভ্রু কুচকে বলল

‘কিন্তু ওই ছেলে যে বলল?’

উপমা কিছু বলল না চুপ করে রইলো। ইকরামই হেসে বলল

‘তোমার পিছে ঘুরছে হয়তো তাই না?’

উপমা বিরক্ত হলো।কি যা তা বকছে সেহরিশের ব্যাপারে।দাতে দাত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল

‘নাহ এমন কিছুই না।’

ইকরাম উপমার কথার বিপরীতে কিছু বলল না।কিছুটা হাটতেই সামনে বড় দোকান দেখে ইকরাম উপমাকে কিছু না বলে দোকানে গেলো। উপমা কিছু বুঝতে না পেরে দাড়ালো।চলে গেলে আবার যদি বলে রেখেই চলে গেলো বেয়াদব মেয়ে।নিজে নিজেই ভেবে দাঁড়িয়ে রইলো।ইকরাম এলো হাতে দুটো আইসক্রিম হাতে।একটা উপমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল

‘নাও আমার তরফ থেকে ট্রিট।’

ইকরামের কথায় উপমা ভ্রু কুচকালো।আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে আবারও ইকরামের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

‘কিন্তু কিসের ট্রিট?’

‘এইযে এতো কঠিন একটা যুদ্ধ করে এলে।’

উপমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে হেসে বলল

‘আই মিন এতো কষ্টের পরীক্ষা দিয়ে এলে।আরে নাও লজ্জা পেও না।’

উপমা বিরক্ত হওয়ার সত্ত্বেও আইসক্রিম হাতে নিলো।খেলো না।কিছুটা বাড়তেই ইকরাম উপমাকে বিদায় দিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে চলে গেলো।
উপমা আইসক্রিম হাতে হাটতে লাগলো একা একা তার মাঝেই কোথা থেকে সেহরিশ এলো। উপমা সেহরিশের দিকে তাকালো কিছুক্ষন দেখলো। ধূসর শার্ট গায়ে চোখ গুলো প্রতিদিনের মতোই তীক্ষ্ণ। দাড়ি গুলো কিছুটা বেড়েছে।নজর ফিরালো।

‘ইশফার ভাই তোয়ামকে ট্রিট দিয়েছে নাকি।’

সেহরিশের কথায় উপমা তাকালো আবার সেহরিশের দিকে। সামনে তাকিয়ে হাটার সাথে মুখে আইসক্রিম দিতে নিতেই সেহরিশ ছিনিয়ে নিলো।

‘আইসক্রিম নিলেন কেনো? ‘

সেহরিশ কিছু না বলে দোকান থেকে আরেকটা আইসক্রিম নিয়ে এসে সেইটা থেকে এক কামড় দিয়ে উপমার হাতে ধরিয়ে দিলো আর উপমার হাত থেকে নেওয়া আইসক্রিম নিজে খেতে লাগলো।ধীরে সুস্থে খেয়ে শেষ করতেই সেহরিশ রিকশা দার করাতে করাতে বলল

‘এক্সাম কেমন দিলে?’

‘আলহামদুলিল্লাহ।এখন ভালো রেজাল্ট আসলেই হলো’

‘ ইনশাআল্লাহ ভালো হবে।

রিকশ এসে সামনে দাড়াতেই উপমা কে উঠতে বললো সেহরিশ।উপমা না উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেহরিশ বলল

‘উপমা আমার কথা কেনো শোনো না কেনো?আমাকে বিশ্বাস নেই তোমার?’

উপমার মন নরম হলো।রিকশায় উঠে বসলো।সেহরিশ উঠতেই রিকশা চলতে লাগলো কোথায় যাচ্ছে কেনো যাচ্ছে উপমা জানার আগ্রহ নেই।সেহরিশের সাথে আছে ভালো লাগছে। সেহরিশ উপমার কোমড় চেপে ধরে। মৃদু ছোয়ায় কেপে উঠে উপমা।সারা শরীর জুরে কাপুনি দিয়ে উঠলো।সেহরিশের দিকে তাকাতেই দেখলো মুচকি হাসি মুখে।

আজও সেই ফুলের বাড়িতে আসলো।উপমা ভ্রু কুচকে সেহরিশের দিকে তাকালো।সেহরিশ কিছু না বলে উপমার হাত ধরে বাড়ির পিছনের দিকে গেলো।ঘাসের সমারোহ একটা বড় সাদা জবা ফুল গাছ ভরে আছে সাদা ফুলে ভরে আছে।সেহরিশ বসলো উপমাও বসলো সেহরিশের পাশে।জায়গাটা ঢাল হওয়ায় সেহরিশ পিছনে হাত ভাজ করে শুয়ে পড়লো।উপমা দুই পায়ের হাটু তুলে বসে দুই হাত পায়ের হাটুর উপর রেখে থুতনিতে হেলান দিলো।

‘আপনাকে দুর্বল লাগছে অনেক। ‘

সেহরিশ হাসলো কিছু বলল না।আকাশে চোখ রাখলো কিছুক্ষন তারপর মাথা তুলে উপমাকে পা মেলে বসতে বললে উপমা ভ্রু কুচকে পা মেলে বসে।সেহরিশের উপমার পায়ে মাথা রাখে।ধীর কন্ঠে বলে

‘রাজনীতি আমাদের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে ভাবি নি ‘

কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারও মৃদু কন্ঠে বলল

‘আবার হয়তোবা ভেবেছিলাম।’

উপমার কষ্ট লাগলো সেহরিশের কথা শুনে।সেহরিশ চোখ বন্ধ করে আছে। উপমা ঠোঁট দাত দিয়ে চেপে চোখে টলমলে ভাব কমাতে চাইলো।ঢোক গিলে বলল

‘ আমি কখনোই চাই না আপনি রাজনীতি থেকে পিছু হটেন।এইটা খারাপ কাজ নয়।’

‘তোমার জন্য সব ছাড়তে রাজি উপমা।’

‘এইটা আপনার স্বপ্ন, ছোটোবেলার নেশা আপনি বাবার কথায় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না আশা করি।’

‘তুমি আমার একমাত্র নেশা যাতে আমি চিরজীবনব্যাপী আসক্ত থাকতে চাই।’

আনমনা ভাবে উপমা আকাশের দিকে চেয়ে ছিলো সেহরিশের কথায় তার দিকে তাকালো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থেকে নজর ফিরালো।
উপমা মনে মনে ভাবলো ‘তার জন্য একি বেহাল সেহরিশের ও যেনো সেহরিশের স্বপ্নের মাঝে বাধা যার জন্য সেহরিশ তার বাবা মার অবাধ্য সন্তান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলো।’দীর্ঘশ্বাস ফেললো উপমা।

চলবে,,,,
‘ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। কেমন আগাচ্ছে সবাই বলবেন প্লিজ। মন্তব্য জানাবেন সবাই 😚😚)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here