সর্বনাশীনি_তুমি #পর্ব:১১ #Mishmi_muntaha_moon

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:১১
#Mishmi_muntaha_moon

রাতের ১২ টা বাজে।ছন্নছাড়া অবস্থায় সেহরিশকে বাড়িতে ফিরতে দেখা গেলো।হাতের সোজা পিঠে রক্ত দেখে রাবেয়া বেগম আতংক নিয়ে সেহরিশের হাত ধরলো।

‘একি! কি করে এলি বাহির থেকে সেহরিশ।আয় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি কতোখানি কেটেছে।’

সেহরিশ ওর মার থেকে হাত ছাড়িয়ে বিপরীতে রাবেয়া বেগমের হাত নিয়ে বলে

‘আমি ঠিক আছি।তুমি জেগে থেকো না যাও ঘুমিয়ে পড়ো।’

বলে সেহরিশ নিজের রুমে গয়ে দরজা বন্ধ করলো।কিন্তুর মার মন তো এতো সহজে মানে না।রাবেয়া বেগম অনেক ভেবেচিন্তে ফোন হাতে নিলেন।

_
রাতের সাড়ে ১২ টা বাজে। কিন্তু উপমার চোখে ঘুম নেই।ওর মার ফোনে রাবেয়া বেগমের কল এসেছিলো দেখেছে কিন্তু কি কথা হয়েছে তার মা বলে নি উপমাকে।ওমন সময় নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ কারণে কল করেছিলো। শোয়া থেকে উঠে বসলো।অন্ধকার চারিপাশ কিছু দেখা যাচ্ছে না। টি-টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিলো কয়েকবার।বুক ভারী লাগছে।আবারও বালিশে মাথা এলিয়ে দিলো।
চোখ বন্ধ করে ঘুমানের চেষ্টায় থাকার মাঝেই ফোন বেজে উঠলো।এতো রাতে ফোন আসায় অবাক হলো। স্ক্রিনে ভেসে ওঠা না পড়ে আতংক ছড়ালো মনে।

‘আসসালামু আলাইকুম রাবেয়া আন্টি।সব ঠিক আছে এতো রাতে ফোন করলেন যে?’

‘সেহরিশ তো আমার কথা শুনছেনা মা। বাহির থেকে কিছুক্ষন আগে এলো হাতে চোট দেখলাম আরও কোথায় লেগেছে ছেলেটা বলবেও না আমায়।আমি কি করি বলোতো এখন?’

রাবেয়া বেগমের কান্নাজড়িত কন্ঠে উপমার বুক ধক করে উঠে।কিন্তু এতো রাতে ওর যাওয়া সম্ভব না। না চাওয়া সত্ত্বেও মৃদু কন্ঠে সহজ নাকচ করে বলল।

‘আমি কি বলবো আন্টি এইখানে আমার কিছুই করার নেই।’

___

সারারাত ঘুম হলো না আর উপমার।সকালে নানান ভাবনা ভেবে শেষে সেহরিশদের বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
জাফর সাহেব কে বেরিতে দেখে তার কিছুক্ষন পর উপমা ব্যাগ নিয়ে চুপি চুপি বেরিয়ে যায়।

সেহরিশদের বাড়ির সামনে দাড়াতেই আবারও ভাবতে লাগলো ঠিক করছে কিনা।কিন্তু সেহরিশের আগে আর কিছুই ভাবনায় এলো না।সকল ভাবনা ঝেড়ে দিয়ে বেল বাজালো।
দরজা খুলে রাবেয়া বেগম উপমা কে দেখে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত দিয়ে আদর করে অস্রুভেজা চোখে নিজের রুমে চলে গেলেন।
উপমা ধীর পায়ে সেহরিশের রুমের দিকে পা বাড়ালো।মৃদু আওয়াজে দুই থেকে তিনবার নক করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই সেহরিশকে নজরে পড়ে।ডান কাত হয়ে শুয়ে আছে।উপমা আওয়াজ না করে সেহরিশের কাছে বাড়লো।
সেহরিশের কাছে গিয়ে সবার প্রথম হাতে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো কোথায় চোট পেয়েছে।বাম হাতের পাতায় কালচে ভাব দেখে বুজতে পারলো এইখানে চোট পেয়েছে।
ঘুমের মাঝেই ফার্স্টএইড বক্স খুজে হাতে ব্যান্ডেজ করতে লাগলো।মনে মনে ভাবছে ঘুমের মাঝেই কাজ সেরে জেতে পারলে ভালো হয়।হাতের ব্যান্ডেজ শেষ করে সেহরিশের মুখে তাকাতেই দেখে চোখ মেলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
ঘাবড়ে গিয়ে সেহরিশের হাত ঝেড়ে দাঁড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।সেহরিশ হাল্কা আর্তনাদ করে বাম কাধে চেপে উঠে বসে।
সেহরিশকে আর্তনাদ করতে দেখে উপমা চিন্তিত হয়ে শার্ট টানাটানি করে কাধে দেখতে লাগে

‘এইখানে কিছু হয়েছে আপনার হুম?’

সেহরিশ শার্ট থেকে উপমার হাত ছাড়িয়ে বসিয়ে দিয়ে বলে।

‘স্টপ উপমা আমার শার্ট ধরে টানাটানি করা বন্ধ করো।ঠিক আছি আমি।’

সেহরিশের কথা শুনে উপমা তার হাত দুটো গুটিয়ে নিলো।চোখ এদিক সেদিক করে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ঘুরে পা বাড়াতে নিতেই সেহরিশ উপমার হাত টান দিয়ে বিছানায় বসায়।উপমা ভ্রু কুচকে তাকায় সেহরিশের মুখপানে।

‘ সব কিছু শেষ করে আবার আমার দিকে পা বাড়ালে যে?’

সেহরিশের কথা শুনে উপমা মাথা নিচু করলো।আমতা আমতা করে বলল

‘আমি স্ব-ইচ্ছায় আসি নি রাবেয়া আন্টি বলেছিলেন তাই।’

নিচে তাকিয়ে থাকার মাঝেই সেহরিশ শার্ট খুলতে দেখে আড়চোখে, ঘাবড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।এদিকে সেদিকে তাকাতে তাকাতে বলল

‘কি করছেন শার্ট খুলছেন কেনো?’

সেহরিশ কোনো কথা বলল না শার্ট খুলে দুর্বল কন্ঠে বলল

‘কাধে একটু অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দাও তো।’

সেহরিশের কন্ঠ শুনে উপমা চোখ তুলে তাকালো।সেহরিশের দুর্বল কন্ঠটা একদম হৃদয়ে গিয়ে লেগেছে উপমার।কতটা মলিন লাগছে। উপমা সেহরিশের কাধে তাকালো।নীলচে হয়ে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটা গভীরভাবে আহত।
উপমা ঠোঁট কিছুটা ফুলিয়ে টলমল চোখে টি-টেবিলে অয়েন্টমেন্ট খুজতে লাগলো সেহরিশের কথা মতো পেলো এক চিপায়।
অয়েন্টমেন্ট হাতে নিয়ে সেহরিশের কাধে লাগিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসেজ করে দিলো।ম্যাসেজ করতে করতে পিঠে গলায় চোখ বুলাতে লাগলো আর কোথাও লেগেছে কি না।
দেখার মাঝেই আবার সেহরিশ চোখ মেলে উপমার দিকে তাকাতেই উপমা নিশ্চুপ হয়ে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ালো।মৃদু কন্ঠে বলল

‘আন্টি অনেক চিন্তায় ছিলো আপনার জন্য এভাবে বিবেকহীন মানুষের মতো থাকা টা একদমই যায় না আপনার সাথে।’

বলে বেরিয়ে গেলো সেহরিশের রুম থেকে উপমা।যাওয়ার সময় রাবেয়া বেগম প্রশ্নোত্তর করতে লাগলেন।কাধের কথাটা বললো উপমা কিন্তু একটু কেটেকুটে কমিয়ে নাহলে চিন্তা করবে আবার।

___

সেহরিশের কথা মাথা থেকে ইদানীং ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছে।ভবিষ্যতে কি আছে বলা যায় না কিন্তু বর্তমানের পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলাটা প্রয়োজন।তাহলে কষ্টটা যদি লাঘব হয়। পড়ায় মন দিলো উপমা।১ ঘন্টা পড়ে বিরক্ত হয়ে বই রাখলো।ঘর থেকে বেরিয়ে সোফায় বসতেই জাফর সাহেব উপমার দিকে তাকালেন।হাতের রিমোট টেবিলের উপর রেখে বললেন

‘পড়া শেষ? ‘

জাফর সাহেবের কথায় উপমা ধীরে বলল

‘না আব্বু।’

বলে সোফা ছেড়ে উঠতে নিতেই উপমার বাবা বলল

‘থাক কিছুক্ষন পর পড়তে বসো আবার।পড়ার মাঝে ব্রেক নেওয়া উচিত।’

জাফর সাহেবের কথায় উপমা মাথা নাড়িয়ে রুমে গেলো।তার রুমে কোনো বারান্দা নেই।তাই পড়ার টেবিলে বসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলো।কাল ইশফাদের বাড়ি যাবে।একসাথে কিছুক্ষন বসে পড়ে গল্প করে আসবে ভাবলো।

রাতের দিকে ছাদে যাওয়ার কথা ভাবলো।একা কখনোই যেতে দেবে না তাই পাশের বাড়ির রিয়াকে ডাক দিলো। ছাদে যাওয়ার কথা বলতে প্রথমে না বললেও উপমার জোরাজোরিতে যায়।
ছাদে গিয়ে উপমা সেহরিশদের ছাদে উঁকিঝুঁকি দিতে লাগলো।কিন্তু আজ ছাদটা বড়ই অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না।আকাশে চাঁদ উঠেছে।চারিপাশ আলোকিত তার সত্বেও। উপমা ছোট ছোট চোখ করে দেখার চেষ্টা করার মাঝেই মোবাইলের মেসেজ টোন বাজলো। মোবাইল রিয়ার কাছে থাকায় রিয়া উপমার মোবাইলের স্ক্রিন অন করে মেসেজ দেখতে লাগলো

‘সেহরিশ এইটা আবার কে কি লিখেছে এ,,,’

পড়ার আগেই উপমা সর্বস্ব দিয়ে দৌড়ে রিয়ার থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।ধমক দিয়ে বলে

‘অন্যজনের ব্যাক্তিগত আলাপ পড়া উচিত না বুঝলি।’

বলে মেসেজ ওপেন করলো।ভ্রু কুচকে পুরো মেসেজ পড়লো।কিছুটা পড়ে চোখ বড় করে তারাতারি মেসেজ থেকে বের হয়ে বলল

‘উফফ আমি সিন করলাম কেনো।হায়রে গাধি উপমা।’

বলে কিছুক্ষন স্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আবারও মেসেজ ওপেন করে

‘সিন যখন করেই ফেলেছি মেসেজ পড়তে কি সমস্যা।’

বলে পড়তে লাগলো”এতো রাতে ছাদে কেনো?”

মেসেজ পড়ে ভ্রু কুচকে আবারও সেহরিশের ছাদে তাকালো।সেহরিশ কি ছাদে? কই উপমা তো দেখছে না।আর থাকলে ও যেহেতু দেখছে না সেহরিশ দেখলো কি করে।

__
পরেরদিন দুপুরে গেলো ইশফাদের বাড়ি। দরজার বেল বাজাতেই ইশফার ভাই দরজা খুললো।ইশফার সেই কথা বলার পর থেকে ইশফার ভাই নরমাল থাকার পরেও কেমন অস্বস্তি লাগে।
উপমা ইশফাদের বাড়িতে ঢুকে ইশফার ভাই ইকরামকে সালাম দিলো।ইকরাম ও উপমার সাথে কুশল বিনিময় করে হাসিমুখে উপমাকে ইশফার রুমে যেতে বলল।
রুমে ঢুকতেই দেখে ইশফা জোরে জোরে ধুমসে পড়ছে।উপমা ধীর পায়ে ইশফার পাশে দাঁড়িয়ে বলল

‘ কিরে তুই না বললি তুই ঘুমাচ্ছিস?’

উপমার কথা শুনে ইশফা ঘাবড়ে গিয়ে উপমার দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল

‘তুই আসবি আমাকে বলবি না?’

‘হুম যেনো তুই আমার আসার কথা শুনে ঘুমিয়ে বলবি আমার কিছুই পড়া হয় নি দোস্ত।’

‘আরেহ না আমি সকালে সত্যি ঘুমাচ্ছিলাম আজ দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছি।উঠেই পড়তে বসলাম দোস্ত।’

উপমা ঠোঁট বাকিয়ে খাটে বসলো।বিকেল দিকে ইশফাদের বাড়িতেই খেয়ে দেয়ে বিকেলে ছাদে গিয়ে আড্ডা দিলো।ইশফার ভাইও ছিলো। উপমা ফিরে যাওয়ার কথা বলে ছাদ থেকে নেমে ইশফার রুম থেকে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
নিচে গিয়ে হাটার মাঝেই পিছন থেকে ইকরামের ডাক শুনে দাড়ালো।

‘একা একা যাচ্ছো কেনো। আমি পৌছে দিয়ে আসছি তোমায় আসো আমার সাথে।’

ইকরামের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাড়াহুড়ো করে হাত নাড়িয়ে বলল

‘না না আমি যাচ্ছি ভাইয়া আপনার কষ্ট করার প্রয়োজন নেই।’

‘নাহ একা একা যাবে এই পড়ন্ত বিকেলে। ‘

উপমা পড়লো বিপদে।কি বলেব ভাবতে লাগলো

‘একা কেনো আমি আছি তো ওকে দিয়ে আসার জন্য। ‘

উপমা রাস্তার পানে তাকালো।সেহরিশ আসছে একেবারে পরিপাটি হয়ে।সেহরিশ এসে উপমার পাশে দাড়ালো।ইকরাম সেহরিশকে পরোখ করে বলল

‘এইটা কে উপমা?তোমার ভাইয়া হয় নাকি?’

উপমা কিছু বলবে তার আগেই সেহরিশ গম্ভীর কন্ঠে বলে

‘ ভাইয়া নয় সাইয়া’

চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here