শেষটা ছিলো অন্যরকম,পার্টঃ3
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
আজকের দিনটা মায়ানের জন্য খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে মায়ান সেটা নিজেও জানে না ।
মায়ান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বই নিয়ে চেয়ারে বসলো । যে চেয়ারটা বসেছে সে, সে চেয়ারটা তুলতুলে নরম
যাক ভালো লাগছে মায়ানের, খুব আয়েশ করে বসে বই পড়ছে সে । এর মধ্যে কোথার থেকে বর্ণ এসে পড়লো । বর্ণকে দেখে মায়ান কিছুটা বিরক্ত হলো !! যেই একটু আরাম করতে যাবো এমনি বিপদ এসে হাজির উফফ ??
– এখন কোন বিপদ আমার জন্য অপেক্ষা করছে আল্লাহ ভালো করে জানে.. ( আল্লাহ তুমি রক্ষা করো এই মেয়ের থেকে.মনে মনে বললো মায়ান.)
– বর্ণ হাত দুটি বুকে বেধে মায়ানের সামনে দাড়ালো তারপর বললো এই যে জমিদার সাহেব খুব তো আরাম করে দিন কাটাচ্ছেন. তো খাবারটা যে খান ওইটা বাজার থেকে কে আনে জানেন । সারাদিন তো ঘরে বসে থাকেন কেনো কাজ নেই আপনার . তো একটু বাজার সদাই টুকটাক কাজ করে হেল্প তো করতে পারেন আমাদের ।
– মায়ান বর্ণের কথা শুনে এইবার চুপ করে না থেকে বললো আরে ভাইরে ভাই এই সামন্য কথাটা আগে বললেই হতো এতো ঘুরানের কি আছে ।
বর্ণঃ- আমি কথা ঘুরাই.??
মায়ানঃ- অব্যশই আপনি কথা ঘুরান !! এখন সরেন বাজারে যেতে হবে আপনার সাথে কথা বললে বাজারে গিয়ে কিছু পাবো না । এই বলে মায়ান উঠে চলে যেতে লাগলো..
বর্ণ পিছন থেকে ডেকে বললো এই যে খুব তো উঠে যাচ্ছেন বাজার করবেন কি দিয়ে টাকা আছে তো !!
মায়ানঃ- সেই নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না । আজকের বাজার আমার টাকা দিয়ে হবে, এটা বলে মায়ান মুচকি হাসি দিয়ে বেড়িয়ে গেলো ।
মায়ানের কথায় বর্ণের খুব রাগ হলো, বিড় বিড় করে বলতে থাকলো সে খুব তো টাকার গরম দেখাচ্ছে । দাড়া এই গরম আমি বের করবো খচ্ছর বেটা !!
-বাজার করে আসতেই রাস্তায় মিলির সাথে দেখা.. মিলি মায়ানকে দেখে তার কাছে এলো
মিলিঃ- হাই ভাইয়া কেমন আছে..
মায়ানঃ- ভালো তুমি কেমন আছো..
মিলিঃ- হুম ভালো.. তো কোথার থেকে আসছেন.
মায়ানঃ- এইতো বাজার থেকে আসছি তুমি..
মিলিঃ- এইতো কাজিনদের বাসার থেকে আসলাম. আচ্ছা আপনি সেইদিনের পর থেকে আর ভার্সিটিতে যান না কেনো..
মায়ানঃ- না আমি এসে কি করবো । আমার তো ভার্সিটিতে কোনো কাজ নেই । আর আসলোও বর্ণ রাগ করবে । এতে তুমাদেরও ভালো লাগবে না..
মিলিঃ- হুম ভাইয়া!! আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে এখন যাই তাহলে!! সময় হলে বর্ণের সাথে একদিন আমাদের বাসায় আইসেন ।
মায়ানঃ- হুম ওকে…
মায়ান বাজার করে বাসায় আসলো
খুব হাপিয়ে গেছে সে, এতটা পথ বাজার নিয়ে হেটে আসতে তার দম বন্ধ হয়ে গেছে । এখন যদি কেউ এসে পানি দিতো কত ভালোই না হতো, এই কথায় ভাবতেই এক গ্লাস পানি তার মুখের সামনে ধরলো কেউ.. সে চেয়ে দেখে বর্ণ
ও বাবা এই মেয়েটা কোথার থেকে উড়ে আসলো, এতো কিছু না ভেবে সে বর্ণের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢক ঢক করে পুরো পানিটা খেয়ে নিলো.
~~~~~~~
বর্ণ মায়ানের কাছ থেকে বাজারের ব্যাগটা বুজে নিয়ে । মায়ানের দিকে একটা কাগজ দিলো নেন ধরেন সোজা একদৌড় দিয়ে ফটো কপি করে নিয়ে আসেন ..
মায়ান কাগজটা হাতে নিয়ে বলে এখন হাপিয়ে গেছি একটু পরে যাই ।
বর্ণঃ- না তা হবে না এখনই যেতে হবে জলদি যান..
অগত্য মায়ান উপায় না দেখে আবার দোকানের উদ্দেশ্য ছুটলো..
– ফটো কপি করে বর্ণের হাত দিলো, বর্ণ এইবার কিছু বলতে যাবে তার আগে ফুফু চলে আসলো… ফুফুকে দেখে মায়ান হাফ ছেড়ে বাচলো যাক বাবা ঠিক সময়ে রাবেয়া ফুফু এন্টি নিলো..
– বর্ণ তো তার মাকে দেখে খুব খুশি হলো না । ধ্যাত মনে করছিলাম এই খচ্ছরটাকে আরো প্যারা দিমু । কোথার থেকে আম্মু এসে সব ভেস্তে দিলো ।
ফুফুঃ- কিরে তুই এখানে কি করছিস,
বর্ণঃ- কিছু না আম্মু । এই বলে সে চলে গেলো..
ফুফুঃ- তুমি কোথায় থাকো সারাদিন কেনো খোজ খবর থাকে না চলো খেতে যাবা ।
মায়ান মনে মনে বললো আর খাওয়া এই আপনার পাজি মেয়েটার জ্বালায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি ।
দুপুরের খাবারের পর..
আবার এদিক ওইদিক তাকিয়ে দেখলো পাজিটা এখানে নেই. মায়ান একদৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো । বিছানায় গা টা মাএ এলিয়ে দিয়েছে । তার মধ্যেই বর্ণ হাজির..
মায়ান বর্ণকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে… বর্ণ মায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো প্যারা নাই এখন কেনো কাজ দিবো না । তবে বিকালে আমি বলার আগে আমার জন্য ফুচকা নিয়ে আসবেন । ওকে বাই.. মায়ান বর্ণের চলে যাওয়ার পানে শুধু তাকিয়ে থাকলো তাকে কেনো কথা বলার সুযোগ দিলো না বর্ণ..
মায়ানের আর কেনো উপায় নেই তো শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া !!
– বিকেলে মায়ান বর্ণের জন্য ফুচকা এনে দিলো.. বর্ণ মায়ানের হাত থেকে ফুচকাটা নিয়ে চলে গেলো, উল্টা মায়ানের দিকে তাকিয়ে মুখে ভেংচি কেটে চলে গেলো । মায়ান ভাবে কি আজীব মেয়েরে বাবা থ্যাকুউ বলার বদলে এটা কি করে গেলো ।
একদম অন্যরকম মেয়ে।
– বিকালে ফুফুর সাথে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিলো মায়ান, ফুফুটা বেশ ভালো মনের মানুষ অল্পতে মায়ানকে নিজের ছেলে মত করে নিয়েছে ।
ফুফুঃ- মায়ান তুমার কি এখানে থাকার কেনো কষ্ট হচ্ছে
মায়ানঃ- না ফুফু ঠিক আছে.. (মনে মনে বললো আপনার মেয়েটা যা জ্বালাচ্ছে আমার তো দুই দিন পর গাট্টি নিয়ে ভাগতে হবে ..)
রাতে খাবারের পর প্রতিদিন ছাদে যাওয়া
মায়ানের অভ্যাস হয়ে গেছে । রাতের চাদটা খুব ভালো লাগে রাতে চাদটা থাকে খুব সিগ্ন, ওই যে গ্রামের অভ্যাস মায়ানকে পিছু ছাড়ছে না । গ্রামেও মায়ান রাতে চাদ দেখতো.
বর্ণ মায়ানের প্রতিদিন রাতে ছাদে যাওয়ার ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে, তার থেকে মায়ানের এই অভ্যাস অসহ্য লাগে খচ্ছরটা প্রতিদিন ছাদে গিয়ে কি করে দেখতে হবে আজকে ??
আজকে আর এর হেস্তনেস্ত করে ছাড়বে । বর্ণ তার মাকে ঔষুধ খাইয়ে ছাদে গেলো….
– ছাদে গিয়ে মায়ানের সামনে দাড়ালো সে..
এই যে এইদিকে আসুন,
মায়ানঃ- জ্বি বলুন..
বর্ণঃ- এইরকম জ্বি টি করবেন না অসহ্য লাগে । তার আগে বলুন আপনি ওই মেয়েটির হাত ধরেছেন কেনো,
মায়ান অবাক হয়ে বললো কোন মেয়েটির হাত ধরেছ আমি ??
বর্ণঃ- কেনো মনে নেই আপনার.!! আপনাকে আমি বাজার করতে পাঠালাম আর আপনি সেখানে ঢলাঢলি করতে গেছেন !!
( আসলে আপনারা কিছু বুজছেন না তো বর্ণ কি বলছে মায়ানকে ওকে আমি ব্যাপারটা খুলে বলছি.. বাজার করে আসার সময়ে মিলির পরে ওই মেয়েটির সাথে দেখা হয় মায়ানের যতটুকু খেয়াল আছে সে তো মেয়েটির সাথে যাষ্ট কথা বলছে হাত তো ধরেনি কিন্তু বর্ণ এই গুলো কি বলছে.)
মায়ান এইবার বর্ণকে বললো দেখুন আপনার কোথাও ভুল হয়েছে আমি তার সাথে যার্ষ্ট কথা বলছি আর কিছু না..
বর্ণঃ- আপনি থামুন আপনার মতো ছেলেদের আমার চিনা আছে । এইই আপনি কেনো এসেছেন বলেন তো মেয়েদের সাথে ঢলাঢলা করতে নাকি…?? এই বলে বর্ণ চলে গেলো.
মায়ানের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো । সে যে কাজ করেনি সেটার মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে বর্ণ । কাদতে ইচ্ছে করছে তার…. বর্ণ এমন করে কথা বলাতে তার খুব খারাপ লেগেছে
সে শুয়ে শুয়ে ভাবে না আর থাকা যাবে না এইবার এই বাসা থেকে চলে যাওয়ার একটা ফন্দি আটতে হবে ।
-যেইদিন থেকে এই বাসা এসেছে সেইদিন থেকে বর্ণ মায়ানের পিছে পড়েছে, একটাও দিন শান্তি মতো থাকতে দিচ্ছে না তাকে !!
আর পারছে না সে বর্ণের এমন ব্যবহার..কালই চলে যাবে তার গ্রামে পরের দিন..
চলবে