শেষটা_ছিলো_অন্যরকম,পার্টঃ4

শেষটা_ছিলো_অন্যরকম,পার্টঃ4
লেখক_সাব্বির_আহাম্মেদ

পরের দিন সকালে মায়ান খেতে আসলো না । অন্যদিন হলো তো বর্ণের আগে আগে চলে আসতো খেতে আজকে আসলো না কেনো ব্যাপার কি বিষয়টা খটকা লাগলো বর্ণের তবে সে তা বুজতে দিলো না তার মাকে ??

রাবেয়া বেগমঃ- কিরে মায়ান কি ঘুম থেকে উঠে নাই নাকি??

বর্ণঃ- আমি কি জানি । আমাকে জিজ্ঞাসা করছো কেনো ??
রাবেয়াঃ- এ কেমন কথা একই বাসায় থাকি এটাতো জানারিই কথা !! আর ছেলেটা আসার পর থেকে তার পিছনে পড়ে আছিস কেনো, শান্তি মতো থাকতে দিচ্ছিস না কেনো.. তোর সমস্যা কি ??

বর্ণঃ- আমার কি সমস্যা আমার তো কেনো সমস্যা নেই তুমার ভাইয়ের ছেলে তুমি থাকতে দিবে নাকি কি করবে সেটা তো তোমার ব্যাপার তাতে আমার কি.. এই কথা বলে বর্ণে তার রুমের দিকে চলে গেলো..

– রুমে ডুকে সে যেটা দেখলো তা দেখে তো তার চোখ ছানাবড় বড় হয়ে গেলো..

মায়ান উপুড় হয়ে শুয়ে আছে তার বেডে, ( খচ্চরটা এখানে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আর মা আমাকে বকছে দাড়া তোকে দেখাচ্ছি.)

বর্ণের রাগ হলো খুব খচ্ছরটার কত বড় সাহস তার রুমে এসে তার বেডে শুয়ে আছ…
বর্ণ মায়ানের কাছে গিয়ে ডাক দিলো..

এই যে শুনছেন এই যে.

বর্ণের চিৎকারে মায়ানের ঘুম ভাঙ্গলো । সে ঘুম থেকে উঠে রুমের চারদিক তাকিয়ে বললো আমি এখানে কেনো ??

বর্ণ মায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো আমারও তো একই প্রশ্ন আপনি এখানে কেনো.. আর কেন সাহসে আমার রুমে ডুকছেন, ডুকছেন তো ভালো কথা তারও পর আমার বেডে ঘুমিয়েছেন ??

মায়ানঃ- আরে ভাইরে ভাই একটুই তো ঘুমাইলাম । আর আমি নিজেও জানি কিভাবে আপনার রুমে আসলাম । আমি জানলে আপনার রুমে এসে নিজের‌ বিপদ ডেকে আনবো নাকি.? এই বলে মায়ান চলে যেতে লাগলো..

বর্ণ পিছন থেকে ডাক দিলো এই দাড়ান বলছি এই বিছানাটা নিয়ে যান, আর সুন্দর করে ধুয়ে নিয়ে আসেন..!!

মায়ানঃ- পারমু না এটা আমার রুমে বিছিয়ে ঘুমাবো বিছানাটা তো সুন্দর..

বর্ণ মায়ানের সামনে এসে বললো কি বললেন আপনি
মায়ান এইবার বর্ণের সামনে এগাতে লাগলো. বর্ণ কিছুটা ভয় পেয়ে বললো এ কি আপনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেনো দূরে যান বলছি ।

– মায়ান বর্ণের কেনো কথা না শুনে বর্ণের দিকে এগাতে লাগলো বর্ণের পিঠ এইবার দেয়ালে ঠেকে গেলো মায়ান ধীরে ধীরে তার কাছে চলে আসলো । বর্ণ কি করবে সে বুজতে পারছে না..আপনি যদি আর এক পা সামনে আসেন আমি কিন্তু চিৎকার করবো.. পরে আম্মু এসে দেখলে আপনাকে চিরতরে এই বাসায় থেকে বিদায় করে দিবে..

মায়ানঃ- হুম চিৎকার করে জোরে চিৎকার করো আমি তো এটাই চাই, যেকোনো একটা অজুহাত দিয়ে এই বাসায় থেকে বের হতে পারলেই চলবে আমার

মায়ানের চলে যাওয়ার কথাটা শুনে বর্ণের মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো,খানিকটা সময়ের জন্য তার মনে অস্থতিরতা শুরু হয়ে গেলো, আচ্ছা মায়ানের জন্য কি তার মনে জায়গা তৈরি হচ্ছে নাকি, না এটা হতে পারে না যে ছেলেটাকে আমি সহ্য করতে পারি না তার জন্য মনে কিভাবে জায়গা তৈরি হবে..

– মায়ান বর্ণের খুব কাছে চলে আসছে দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস শব্দ শুনা যাচ্ছে, বর্ণ চোখ বন্ধ করে রেখেছে, মায়ান বর্ণের দিকে তাকিয়ে হাসলো, মায়াবি চেহারার অধিকারী মেয়েটা, এখন একটু ছুয়ে দিতে পারলে মন্দ নয়, সে বর্ণের অগোছোলো চুল গুলো সামনের থেকে সরিয়ে বর্ণকে প্রাণভরে দেখছে মায়ানের ছোয়াতে বর্ণ কেপে উঠছে সারা শরীরে শিহরণ দিয়ে উঠছে তার, একদিকে অনইজি লাগছে আরেকদিকে ভালোই লাগাছে । কিছুক্ষণ এইভাবে থাকার পর বর্ণ মায়ানকে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো..

সারাদিন বর্ণ মায়ানের সামনে আসে নাই লজ্জায়

– বিকালে বর্ণ মায়ানের কাছে গিয়ে বলে..
“” চলেন একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি..

মায়ান তো বর্ণের কথা শুনে অবাক হয়ে বর্ণের দিকে তাকিয়ে আছে !!

বর্ণঃ- হুম যা শুনছেন তাইইইই আজকে মনটা ভালো আজকে আর ঝামেলা করবো না । আজকের দিনটা আপনি প্যারা থেকে মুক্ত ‌‌‌..

মায়ান বললো তো কেনো প্যারা থেকে মুক্ত আজকে জানতে পারি আমি.
বর্ণঃ- এতো জানতে হবে না এখন যাবেন নাকি হা‌ বা না কোনটা বলেন ??

ওকে চলেন. ( যা ঝাজ এই মেয়েটার. মনে মনে বললো মায়ান )

বাসায় থেকে বের হয়ে মায়ান হাটা শুরু করলো বর্ণ তা দেখে এইই আপনি হেটে কোথায় যাচ্ছেন এইদিকে আসেন রিক্সায় উঠেন,

রিক্সা করে তারা লেকে আসলো
লেকের ধারে বসে আছে মায়ান আর বর্ণ…

– বর্ণ আজকে প্রচুর কথা বলছে, মায়ান শুধু শুনে যাচ্ছে

এই মেয়েটাকে দেখে মনে হয় না এতোকথা জানে ( মায়ান মনে মনে ভাবে কথাটা ) , এমনিতে তো সারাদিন আমার সাথে ঝামেলা করে দিন যায় । আজকে তো না আসলে বর্ণকে চিনাই যেতো না পুরোপুরি ।

আসলে একটা মানুষকে কাছ থেকে যতটুকু চিনা যায়, দূর থেকে তেমনটা চিনা যায় না । বর্ণকে দেখে এমন মনে হচ্ছে, মেয়েটার মনটা এতো ভালো তবে আমার সাথে কেনো এমন করে শুধু শুধু..

– মায়ান অন্যমনষ্ক হয়ে আছে দেখে বর্ণ বললো কি ভাবছেন এতো
কখন চলে যেতে পারবেন আমাদের বাসা থেকে ?? এই বলে বর্ণ হাসালো, এই মেয়েটার এমন হাসিতে মায়ান শতবার মরতে রাজি আছে , মেয়েটার হাসি দেখলে যে কেউ ক্রাশ খাবে একদম অন্যরকম মেয়েটা হাসি

আজকে অনেক ঘুরাঘুরি করলো তারা এবং অনেক কিছু খেলো, তবে এই ঘুরাঘুরিতে মায়ানের সব থেকে লস হয়েছে

ম্যানিব্যাগে যত ছিলো সব ফাকা করে দিছে বর্ণ,

মায়ানের মন খারাপ এটা দেখে বর্ণ বললো আহারে জমিদারের কি ধন ফুরিয়ে গেছো হুম ওকে সমস্যা নেই রিক্সা ভাড়াটা আমি দিমু এখন চলেন অনেক রাত হয়ে গেছে…..

– বাসায় এসে কলিংবেল চাপলো ফুফু এসে দরজা খুলে দিলো কিরে তোরা এতোক্ষণ কোথায় ছিলি..

বর্ণঃ- মা এতো কথা বইলো না, অনেক ক্লান্ত টেবিলে খাবার বাড়ো,
খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো । আজকে মায়ান খুব ক্লান্ত তাইইইই সে আর বেশি রাত জাগলো না ঘুমিয়ে গেলো ।

এইদিকে বর্ণের কিছুতে ঘুম আসছে না । চোখটা বন্ধ করলেই মায়ানের চেহারা ভেসে উঠে, সে মনে মনে মনকে প্রশ্ন করে মায়ানকে কি সে ভালোবেসে ফেলছে সেটা কেমন করে ?? কোলবালিশকে মায়ান ভেবে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, যদি কোলবালিশের প্রাণ থাকতো এতোক্ষণে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিতো হা হা, কিন্তু বেচারা তো প্রাণহীন তাই সহ্য করে যাচ্ছে বর্ণের পাগলামিগুলো

বর্ণে শুয়ে শুয়ে ভাবে যত যাইই হক কালকে মায়ানকে তার ভালোবাসার কথা বলবে আর প্রোপজও করবে যদি মায়ান রাজি হতে না চায়, তবে যেভাবেই হক তাকে রাজি করাবেই সে..

– খুশি মনে বর্ণ ঘুমিয়ে গেলো

পরের দিন সকালে রাবেয়া সকালে মায়ানকে ঘুম থেকে ডেকে উঠালো.. মায়ান এই‌ মায়ান উঠো জলদি

মায়ান ঘুম থেকে উঠে বললো কি হয়েছে ফুফু.

ফুফুঃ- আসলেই কথাটা কিভাবে বলি, বুজতে পারছি না !!

মায়ানঃ- ফুফু কি হয়েছে বলেন সমস্যা নেই..
ফুুফুঃ- আজকে তুমার রহিম চাচা কল দিয়ে বললো ভাইজান হঠৎা করে অসুস্থ হয়ে গেছে.. আর তুমাকে যতো তাড়াতাড়ি পাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলছে ।

মায়ান তো ফুফুর মুখ থেকে তার বাবার অসুস্থতার কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে শার্ট আর প্যান্ট পড়ে নিলো, তো ফুফু আমি এখনি রওয়ানা দিচ্ছি..

ফুফুঃ- এখনিই রওয়ানা দিবা সকালের নাস্তা করে যাও
মায়ানঃ- না ফুফু..

আচ্ছা ঠিক আছে এই‌ নেও কিছু টাকা আর আমি বাসার দারোয়ানকে বলে আজকে প্রথম বাসের টিকেটা কেটে রেখেছে তুমি বাসায় পৌছে আমাকে কল করে জানিয়ো

মায়ান টাকাটা নিয়ে ফুফুর পায়ে সালাম করে বের হয়ে গেলো…

এইদিকে আজকে খুব বেলা করে উঠলো বর্ণ, খুশি খুশি মনে মায়ানের রুমের দিকে একদৌড় দিলো

মায়ানের রুমের সামনে গিয়ে দেখে রুমটা আগের থেকে খুলা সে কিছুটা অবাক হয়ে রুমে ডুকে দেখলো মায়ানের ব্যাগ বই রুমে আছে কিন্তু মায়ান নেই, সে কোথায় গেলো অনেক জায়গা খুজলো কিন্তু মায়ানের পাওা নেই কোথাও..

– বর্ণ মনে মনে বললো খচ্ছরটা কোথায় গেলো, আচ্ছা ছাদে গিয়ে দেখি তো, আই মিন শিউর খচ্চরটাকে সেখানে পাবো, ছাদে উঠে দেখে সেখানোও মায়ান নেই, বর্ণের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো ,

সে ছাদ থেকে নেমে তার মাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো মা মায়ান কোথায়, তার মা বললো মায়ান নেই সে চলে গেছে

বর্ণঃ- চলে গেছে মানে কি বলছো তুমি চলে গেছে মানে কি..
রাবেয়া বেগমঃ- চলে‌‌ গেছে মানে চলে গেছে, এতো কথা বলতে পারবো না এখন তোকে আমার কাজ আছে যা তো এখন এখান থেকে ( রাবেয়া বেগম রেগে কথাটা বললো বর্ণকে)

বর্ণের তার মায়ের কথায় খারাপ লাগলো না একটুও , যতটা খারাপ লাগছে মখন মায়ানে চলে যাওয়া শুনে

– ফোনটা নিয়ে বর্ণ মায়ানের নাম্বারে কল দিলো রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ রিসিভ করছে না মায়ান, এখন বর্ণের মন খারাপের সাথে সাথে অভিমানও হলো. মায়ানের ওপর!!

( আচ্ছা বর্ণই তো চায় মায়ান তার বাসা থেকে চলে যাক তো মায়ান যেভাবেই হক বাসা থেকে তো চলে গেলো, এইদিকে মায়ানের বাবার অসুস্থতটা কি মিথ্যা নাকি সত্যি নাকি‌ এটা মায়ানের বাসা থেকে বের হওয়ার চাল কোনটা ?? ) আপনারা কি বলেন.. আপনাদের কাছে কি মনে হয়,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here