শেষটা_ছিলো_অন্যরকম 🍀,পার্টঃ7

শেষটা_ছিলো_অন্যরকম 🍀,পার্টঃ7
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ

মায়ান রওয়ানা দিবে তার আগেই বর্ণ চলে আসছে. বর্ণকে দেখে মায়ান আরো বিরক্ত হলো এই মেয়েটা আর আসার সময় পেলো না ।

– যাক আমার মা একটা বিনা পয়সা কাজের ছেলে পেয়েছে তাও চলে যাচ্ছে, এতো আদর করে কি লাভ হলো তার…

রাবেয়া বেগম বললো, এই তুই চুপ থাক আমি জানি না মায়ান কেনো চলে যাচ্ছে, তর মত মেয়ে পেটে নিয়ে আমার কপালটাই খারাপ হলো,

বর্ণ বললো দেখো আম্মা তুমি কিন্তু কোনখানের তুমার ভাইয়ের ছেলের জন্য তুমার পেটের মেয়ের সাথে দুশমনি করছো আল্লাহর এিশটা দিন এইটা কিন্তু ঠিক না।

– মায়ান বর্ণ আর তার ফুফুর ঝগড়া দেখে বিরক্ত হয়ে বললো আচ্ছা ফুফু যাই ভালো থাকবেন. ফুফু বললো এটা কিন্তু তুমি ঠিক করছো না মায়ান, ওকে সাবধানে যাইয়ো,

মায়ানঃ ঠিক আছে ফুফু আসসালামু আলাইকুম..

মায়ান ব্যাগ আর বইটা নিয়ে গেটের বাহির পা রাখবে ওমনি বর্ণ ডাক দিলো মায়ানকে..

এই শুনেন চলে যাচ্ছেন আপনি, শুনুন

মায়না ঘুরে বর্ণের দিকে তাকিয়ে বললো, কি হয়েছে কিছু বলবেন..

– যেখানে হারানের জন্য পুরো দুনিয়া অপেক্ষা করছে,
সেখান থেকে নিজ থেকে হেরে যাওয়াটা কি খুব জরুরি..
মায়ান বললো আমি আপনার কথায় কিছুই বুজতে পারিনি..

বর্ণঃ- ওকে ঠিক আছে তাহলে ব্যাগটা রেখে বইটা নিয়ে উপরে আসুন ।
মায়ান বললো কেনো..
বর্ণঃ- আহা আগে উপরে আসুন তারপর বলছি । অগত্য মায়ান আর কেনো উপায় না পেয়ে ব্যাগটা রেখে বইটা নিয়ে উপরে আসলো ।

মায়ান উপরে আসতেই বর্ণ বললো আচ্ছা আপনি এতো ভীতু কেনো আপনি না আমায় ভালোবাসেন,তাহলে কেনো আমাকে একা করে চলে যাচ্ছেন ??

– মায়ান বললো আমি চাই তুমি আমাকে ছাড়া ভালো থাকো, আমি তুমাকে সুখে দেখতে চাই,
বর্ণঃ- বেশি সাহিত্যিক হয়ে গেছেন, আচ্ছা এখানে কি বই আছে দেখি, মিরার গ্রামের বাড়ি, মিসির আলী, এইই তাহলে আপনার পরিক্ষার প্রস্তুতি, তো আপনি যেহেতু এত সুন্দর সুন্দর উপন্যাস পড়েন তাহলে এখন আপনার একটা পরিক্ষা নিবো, পরিক্ষাটা হলো আমি কেমন এই নিয়ে এক পাতা লিখবেন
– পাশ করলে থেকে যাবেন আর ফেল করলে চলে যাবেন… তো এখন কলমটা দেন

মায়ান প্যাকেট থেকে কলমটা বের করে বর্ণের দিকে বাড়িয়ে দিলো ।

বর্ণঃ- আমাকে দিতে হবে না এটা আপনার কাছে রাখেন আর এই‌ নিন খাতা, মায়ান খাতা নিয়ে বর্ণের দিকে একরাশ বিরক্ত নিয়ে লিখা শুরু করলো, বর্ণ মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে গেলো,

– মায়ান এক পৃষ্ঠা লিখে কাগজটা নিয়ে নিচে নেমে দেখলো তার ব্যাগ নেই, কি হলো এখানেই তো আমার ব্যাগটা রাখলাম কোথায় গেলো সেটা, সিড়ি বেয়ে আবার উপরে উঠে ফুফুর সামনে পড়লো সে, মায়ানকে দেখে ওনি বললো কি হলো তুমি এখনো গেলে না ।

মায়ানঃ আসলে ফুফু আমি নিচে ব্যাগটা রেখে ওয়াসরুমে গিয়েছিলাম পরে এসে দেখি আমার ব্যাগটা নেই সেখানে,

ফুফু অবাক হয়ে বললো কি বলো মায়ান এটা কি করে সম্ভব বাড়ি থেকে তুমার ব্যাগ উধাও করলো কেলা, ফুফু বর্ণকে ডাকা শুরু করলো বর্ণ এই বর্ণ এইদিকে আয় তো…

– বর্ণ মায়ানকে‌ দেখে বললো আপনিও এখানে এসেছেন, যাননি,
ফুফুঃ ওই‌ মায়ানের ব্যাগ কোথায় ব্যাগটা বাসা থেকে কে উধাও করলো..
বর্ণ তার মা’র কেনো কথার জবাব না দিয়ে মায়ানকে বললো কাগজটা কই লিখছেন, এই বলে মায়ানের হাত থেকে কাগজট কেড়ে নিলো একপ্রকার, আর বললো ব্যাগটা আমার কাছে আছে কাগজটাতে কি লিখছেন তা পড়ে নেই আগে তারপর দিবো.. এই‌ বলে বর্ণ চলে যেতে লাগলো

রাবেয়া বেগম বললো কিসের কাগজ এটা,
বর্ণ বললো আছে, তুমি বুজবা না.
রাবেয়া বেগমঃ- কি
আর পার্সোনাল, তুমি এতো বুজবা না, মায়ান তার ফুফুকে বললো আরে অংক ছোট্ট একটা অংক সে বুজে না সেটা লিখে দিয়েছি,

– বর্ণ রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে চিঠিটা পরম যত্নে খুলে পড়তে লাগলো সে

** বর্ণ এতটাই সাধারণ মেয়ে, যার হ্দয়টা খুবই কোমল, বর্ণকে বুজতে কেনো মনোবিশেজ্ঞ হতে হবে না, বর্ণের চটাং চটাং কথা, আর কথায় কথায় হাত পা ছুড়াছুড়ি দেখে যদি কেউ মনে করে থাকে বর্ণ একটা দুর্ধষ মেয়ে তাহলে সে একজন বোকা, এই বাড়িতে পা রেখে বর্ণকে দেখে মায়ান, তখনি বুজে নেয় মায়ান বর্ণ যতই চটপট বদমেজাজি আসলে ভিতরে সে শ্রাবণ মাসের জলে জলে থৈ থৈ করা এক নদী, মায়ানের প্রতি তীব্র আকর্ষণে বর্ণের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় , বার বার সে মায়ানের কাছে ছুটে যেতো, ঝাপিয়ে পড়তে চায়তো মায়ানের বুকে, কিন্তু ভদ্র ছেলে মায়ান কেনো আগ্রহ দেখা তো না বলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতো বর্ণ, অক্ষম অক্রোশে অযথাই অপমান করতো মায়ানকে আর নিজের ঘরে গিয়ে দরজাটা বর্ণ করে নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়তো, এবং হাউমাউ করে কাদতো এই ব্যাপারটা বুজতে পেরে মায়ান শত অপমান মুখ বুজে সহ্য করে নিয়ে, এই বাসায় ছেড়ে কখনো যেতে চাই নি, মুখে যতই অপমান করে মায়ানকে, ভিতরে ভিতরে তাকে খুব ভালোবাসে, মায়ানকে এতোটা ভালোবাসে যে মেয়েটা তাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে জেনেও কিছু করার নেই আজ ওকে যেতে হবে মায়ান চায় মায়ানকে ছাড়াই ভালো থাকুক বর্ণ, চিঠিটা পড়ে বর্ণ খুব অবাক হয়ে গেলো.. ****

সে খাট থেকে নেমে মায়ানের ব্যাগটা নিয়ে মায়ানের সামনে গেলো, মায়ান বললো আশা করে লাভ নেই ব্যাগটা দেও চলে যাই..

বর্ণ খুব রেগে বললো আগে এই কাগজটা মা পড়বে তারপর যাবেন..

মায়ানঃ তার কেনো দরকার নেই, গুলিস্তান থেকে একটা ব্যাগ কিনে নিমু এই বলে মায়ান চলে যেতে লাগলো,

বর্ণ: এই খবরদার হাতের ইশারায় মায়ানকে আসতে বললো মায়ান আসতেই বর্ণ মা মা বলে চিৎকার দেওয়া শুরু করলো,
মা শুনে যাও তো
মায়ান তো ভয়ে বলতে লাগলো আমি লিখি নাই এইগুলো আমার মতো অনেকজন লিখতে পারে এই কাগজটা আমি লিখি নাই,বর্ণ মায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো হুম..

বর্ণের মা এসেই বললো তুই এখনো তার সাথে ঝামেলা করছিস??

– বর্ণ মায়ানের এই অবস্থা দেখে একটু হেসে বললো,শুধু তুমার কথা চিন্তা করে তুমার ভাইয়ের আদরের ছেলেকে বাসায় না যেতে দিলে তুমি খুশি তো…

– রাবেয়া বেগম তো খুব খুশি সে মায়ানের গায়ে হাত দিয়ে বলে আমার ভাইয়ের ছেলে আমার সাথে থাকবে এতে আমি খুশি হবো না এতে আমি অনেক খুশি, ( মায়ান তো কিছুই বুজলো না সে কি ভাবলো আর কি হলো..বর্ণ তো পুরা পল্টিবাজ মেয়ে )

বর্ণ মায়ানের দিকে ব্যাগটা দিয়ে বললো নিন ব্যাগটা ধরুন আর সোজা ভিতরে যান, মায়ান ব্যাগটা হাতে নিয়ে কয়েক কদম হেটে বর্ণের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো আমি যেটা লিখছি সেটা কি ভুল‌ লিখেছি,

বর্ণ একটু শরম পেয়ে বললো বর্ণ মায়ানের বুকে ঝাপিয়ে পড়তে চায়,

মায়ান- হু‌ম চায় না বর্ণ, মায়ানের বুকে কি তারকাটা আছে নাকি এই বলে মায়ান হেসে দিলো মায়ানের সাথে সাথে বর্ণও হেসে দিলো, এই যেনো এক সুখের হাসি,

– তারপর থেকে বর্ণ আর মায়ান চুটিয়ে প্রেম করতে লাগলো, কত পুকুরে, ডোবা নেমে বর্ণের জন্য কচুরি পানার ফুল আনা, কত রিক্সাওয়ালার দুলাভাই হওয়া, প্রত্যেকদিন নিত্য নতু্ন জায়গা দুজন মিলে ভালোবাসার খুনসুটি করা,

( একটা কথা আছে না বেশি সুখ কপাল থাকে না, তেমনি বর্ণ মায়ানের বেলার ঘটলো )

সেই দিনটা তাদের দুজনের
ছিলো কালো রাত ফুফুকে ঘুম পাড়িয়ে বর্ণ আর মায়ান ছাদে গিয়ে বসে গল্প করছে, মায়ান ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে, বর্ণ কিছুক্ষণ মায়ানের দিকে তাকিয়ে রাগীস্বরে বললো চাঁদ কি আমার থেকে সুন্দর

মায়ান বললো না, কার সাথে কার তুলনা এই চাঁদের কি আছে, তার তো কেনো বডি নাই, শুধু পোটকা মাছের মতো গোল মুখ, আর তুমি আমার চাঁদ না ছাদ

বর্ণ অবাক হয়ে বললো কি, মায়ান বললো ছাদ কারণ এই ঢাকা শহরে তুমি ছাড়া আমার আর কেউ আছে, বর্ণের মায়ানের কাধে মাথা রেখে বললো চাপাবাজ, এই চাপাবাজির জন্যই তো আমি তুমার প্রেম পড়েছি,মায়ান বললো আর আমি ফান্দে পড়ছি, এইবার কাধ থেকে মাথাটা উঠিয়ে মায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো কি বললা মায়ান গান ধরলো ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে, এটা শুনে বর্ণ বললো দাড়া খচ্ছর লাঠি কই, মায়ান তা দেখে এক দৌড় দিলো
বর্ণমায়ানকে দৌড়াতে লাগলো,
এইই মারলো কিন্তু ব্যাথা পামু ( বর্ণ দৌড়াতে দৌড়াতে বললো )

– সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই তারা দুজন যেটা দেখে মূহর্তে তারা শকড হয়ে যায় , ফুফু মেঝেতে পড়ে আছে দুজন দৌড়ে গেলে ওনার কাছে…

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here