শেষটা ছিলো অন্যরকম,পার্টঃ1

শেষটা ছিলো অন্যরকম,পার্টঃ1
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ

দোতালা বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে মায়ান। সামনের বাসার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে সে । একসময় এই বাসায় আসছিলো সরল সোজা বলদ হয়ে । যাকে‌ বলে আনস্মার্ট ক্ষেত । গ্রাম থেকে চাকরি করার জন্য এখানে এসেছিলো । আর এখন সে এই বাসার জামাই হয়ে গেছে । ব্যাপারটা কি অদ্ভুত তাই না ?? এসেছিলো চাকরির খোজে,আর আর এখন সে এই বাসার জামাই । হা হা হা..

– এর মধ্যে ঘটে গেলো অনেক কাহিন সমাপ্ত হয়েছে মান অভিমানের‌‌‌‌.. ঘটে গেছে তার সাথে কিছু অনাঙ্খিত ঘটনা ।
– আচ্ছা আগে আমার পরিচয়টা দিয়ে নেই আমি মাহিম আহাম্মেদ মায়ান । দেখতে মোটামোটি তেমন খারাপ না ।
বাবার মার একমাএ ছেলে আর মা নেই আমার ছোটবেলা তাকে হারালাম বাবা আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে । পড়ালেখা মোটামোটি শেষ এখন বসে খাই আর ঘুমাই আপতত এইটুকু কাজ আমার ।

এলাকায় বেকার থাকতে থাকতে ভবেঘুরে হয়ে গেলাম আমি. কাজ কি জিনিস ভুলে গেছি,সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ানো, আর গ্রামে মুরব্বিদের সাথে আড্ডা দেওয়া আমার স্বভাব হয়ে গেছে । প্রতিদিন কোনো না কোনো টপিক নিয়ে তাদের সাথে তর্ক বিতর্ক হয় । আসলে আমার ভালো লাগে তাদের সাথে তর্ক বিতর্ক করতে । কখনো আমি হেরে যাই আবার কখনো তারা হেরে যায়, এটা হলো নিত্যদিনের কাজ আমার ।
আমি এই গ্রাম থেকে ওই গ্রামে টো টো করি ।

আর আব্বা সারাদিন ক্ষেত খামার, আর গরু গুলো দেখাশোনা করে আমি তো গরুর ধারে কাছে যাই না আমার থেকে এইসব অসহ্য লাগে অন্যরকম লাগে ।

– আসলেই গ্রামের মতো সবুজ শ্যামল, শুদ্ধ বাতাস আর কোথাও পাওয়া যায় না । এই গ্রামটা মনে হয় আমার প্রাণ । পাখিদের কিচিরমিচির সবুজের রঙয়ের ছড়াছড়ি আমাকে মুগ্ধ করে । নদীর ধারে যখন বসি, উফফ কি যে ভালো লাগে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না । কল কল করে পানির শব্দ শো শো করে বাতাসের আওয়াজে মনে হয় আমি তাদের ভালোবাসা আসক্ত । নদীর উপর যখন ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় মাঝি যখন ভাটিয়ালি গান গায়, মনে হচ্ছে স্বর মনে হয় তার থেকে তৈরি হচ্ছে, খালি গলায় কত মধুর সুরলো ভাবে গান গায় তারা । প্রতিটি কথার অর্থ মাধুর্যে যে কাউকে মুগ্ধ করে তোলে । নদীগুলো ঢেউয়ে ঢেউয়ের তালে তালে আমি গান তুললাম এমন..
ও নদীরে তুই যাস কোথায় রে কল কলাইয়া ছল ছল ছলাইয়াে কোন সাগরে

– থাকো না তুমি যেয়ো না দূরে,
এক নদী এক স্রোতে বহিয়া এক স্বরে.. ❤

নদীর ধারে বসে ঢিল মারা । এইগুলো ছিলো আমার নিত্যদিনের রুটিন । এতসব ছেড়ে কোথাও যেতে ভালো লাগে

– তারপরও আব্বায় জোর করে এই শহরে আমায় পাঠিয়ে দিয়েছে,, যাওয়ার আগে মনে হলো গাছপালা এই নদী বাতাস সবাই আমার সাথে অভিমান করছে । মনের সাথে যুদ্ধ করে চলে আসলাম.. এই শহরে

– বাসাটা ছিলো আমার দূর সম্পর্কের ফুফুর । ফুফুর নাম রাবেয়া বেগম । ফুফা অনেক আগে মারা গেছে । এই বিশাল বড় বাসায় ওনি আর তার মেয়ে থাকে । বাবার কাছ থেকে শুনলাম মেয়েটি যথেষ্ট ভদ্র, কিন্তু এখানে এসে যা দেখলাম তাতে তো আমার হালুয়া টাইট হয়ে গেছিলো ।

– তো মূল গল্পটা শুরু করি ।

মায়ানের এক হাতে ব্যাগ আরেক হাতে ইয়া বড় বইয়ের ঘাট্টি.. অনেক খুজে বাসার ঠিকানাটা খুজে পেলো মায়ান । গেটটা ঠেলে বাসায় ডুকতে যাবে এমন সময় দ্বিতীয় তলা থেকে এক মেয়ের গলার স্বর শুনা গেলো.. মায়ান উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে
– এই মেয়েটি মনে হয় বর্ণ. মেয়েটির পুরো নাম রুবাইয়া তাসনীম বর্ণ আমি ডাক শুনে ওপরের দিকে তাকালাম ।

বর্ণঃ- এই যে এখানে কি, আর কে আপনি ।

মায়ান- কি বলছেন শুনতে পাচ্ছি না । দাড়ান আমি আসছি ।

বর্ণ- আরে আরে আপনি দাড়ান আমি আসছি । আপনি ডুকবেন না । সে আসার আগে মায়ান বাসার দরজা কলিংবেল চাপতেই রাবেয়া ফুফু দরজা খুলে দিলো । মায়ান ওনার পা দুটো সালাম করলো.

-রাবেয়া বেগমঃ- আরে ঠিক আছে বাবা,তুমার আসতে কষ্ট হয় নি তো ।

মায়ান- না ফুফু কষ্ট হয় নি । আব্বায় কয়ছিলো এখানে এসে চাকরির খোজ করতে তাই কয়েকটা দিন থাকবো.. গ্রামে বসে আছি দেখে পাঠিয়ে দিছে ।

-রাবেয়া বেগমঃ- আমি সব জানি তুমার বাবা আমাকে সব বলেছে । ওহ ছোটবেলা থেকে আমার জন্য অনেক করেছে ওনি, আমি ওনার জন্য এতটুকু করতে পারবো না তা কি হয় নাকি । তুমার যতদিন মন চায় থাকো আর যখন চাকরি হবে তখন যাবা তার আগে না ঠিক আছে ।

“”মায়ান- হুম ঠিক আছে ।

– বর্ণ এতক্ষণ দরজার কাছ থেকে সব কথা শুনছিলো, তবে এখন আর থাকতে পারলো না, সে তাদের সামনে চলে গেলো.

বর্ণ- মা, মা!!

রাবেয়া বেগমঃ- হুম আয় দেখ কে এসেছে, আমার ভাইয়ের ছেলে এসেছে তোকে বলেছিলাম না যে গ্রামে আমার ভাই ছিলো যে আমার জন্য কষ্ট সহ্য করছে তার ছেলে এসেছে ।
বর্ণ বললো তা তো দেখতে পাচ্ছি । কিন্তু আমাদের এখানে এসেছে কেনো ??

বর্ণ এমন কথায় রাবেয়া বেগম আর মায়ান তো অবাক ।

রাবেয়া বেগমঃ- এই তুই কি বলছিস মাথা ঠিক আছে তর । চুপ কর আমি বলছি আর তুই নাক গলার কে?? বর্ণ তার মার এমন কথায় শুনে রাগে ফুসছে ‌.

– মায়ান বাবা তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো । সে একটু এমনিই আর অনেক দূর থেকে এসেছে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো । আমি তোমার জন্য টেবিলে খাবার বাড়ছি..
মায়ান চুপ করে ওয়াশরুমে চলে গেলো ।

– রাতে খাবারের সময় মায়ান আর বর্ণ সামনা সামনি বসে খাবার খাচ্ছে । মায়ানের ফুফু বললো তা‌ তুমার বাবা কেমন আছে..

মায়ান – জ্বি ভালো আছে ।

বর্ণের এখন একদম মায়ানের আর তার মার কথা সহ্য হচ্ছে না. সে বলে উঠলো তোমরা কি থামবা নাকি আমি চলে যাবো খাবার রেখে । রাবেয়া বেগম বলে উঠলো ওমা দেখো মেয়ের কান্ড আচ্ছা ঠিক আছে আমরা কথা বলবো না তুই খা…

– মায়ান বাবা তুমাকে আরেকটু ভাত দিবো ।
– না ফুফু ঠিক আছে ।

মায়ান খাওয়া দাওয়া শেষ করে উঠলো । ফুফু বর্ণকে ডেকে বললো আমার রুমটা দেখিয়ে দিতে । বর্ণ তো রেগে মেগে বললো তার কিসের রুম ছাদে যে রুমটা আছে সেখানে বলো থাকতে । রাবেয়া বেগম ওনাকে ধমক দিয়ে বললো কি বলছিস আর একটা কথা বললে তর খবর আছে যেটা বলছি সেটা কর..

অগত্য বর্ণ মায়ানের দিকে বিরক্তি স্বরে বললো এই যে হাবলা আসেন ।.

– দোতলার একটা রুমের সামনে এসে বর্ণ মায়ানকে বললো এই যে হাবলা এটা আপনার রুম । মায়ান বলে উঠলো আমার নাম হাবলা না মায়ান ।

– বর্ণ বললো তো আমি কি করবো ।

চুপ চাপ করে রুমে যান আর আমার মুখের ওপর কেনো কথা বলবেন না আর বেচে বেচে আমাদের বাসায় আসতে হলো আপনাকে । আর আম্মার আদিখ্যতা তার ভাইয়ের ছেলেকে একবারে কোলে বসিয়েছে খাইয়েছে ।

আপনার মতলবটা কি কেনো এখানে এসেছেন ।

-যত দ্রুত পারেন এইখান থেকে বিদায় হওয়ার চেষ্টা করুন । অসহ্য.. এই বলে ওনি চলে গেলো ।

– মায়ান তার রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলো হাত থেকে ব্যাগটা আর বইগুলো নিচে রাখলো । রুমটার চারদিকে তাকিয়ে দেখলো, না তেমন খারাপ না রুমটা পরিপাটি আর গোছানো । বেশি দেরি না করে সে শুয়ে পড়লো ।

– শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো বাবা বলেছে ফুফুর মেয়েটা যথেষ্ট ভালো কিন্তু এখানে এসে দেখছি পুরো অন্যরকম সে ।

– বর্ণ দেখতে যেমন সুন্দর । তেমনি অহংকার আর বদমেজাজি। বর্ণের মা বর্ণকে তেমন শাসন করে নি তাই এল

এই বিশাল বাসায় সে আর তার মা থাকে!! আর আত্নীয়স্বজন আছে তবে যোগাযোগ নেই ।

বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এমন বদমেজাজি হয়েছে । বর্ণ শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো যেভাবে হক এই লোকটাকে তাড়াতে হবে ।

– শখ কত ঢেং ঢেং করে এখানে চলে এসেছে থাকতে আর আম্মুও কি একবারে যা খাতির করছে মনে হচ্ছে এই বাড়ির জামাই সে ..

– মায়ান আগে কখনো কোথাও এইভাবে আপমানিত হয় নি ।মনে হচ্ছে বেশিদিন তার থাকা হবে না.শুধু বাবার কারণে থাকা হচ্ছে । আর আল্লাহ জানে মেয়েটা যে কখন কিভাবে আপমান করে বসে তা ভাবতেই তার গা শিহরে উঠছে । ক্লান্ত শরীর বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারলো না সে ঘুমিয়ে গেলো ।

– পরের দিন সকালে চিৎকার আর চেচামেচি তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো মায়ানের বর্ণ একের পর বই তার মুখের ওপর মারতে থাকলো…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here