শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়-৪,৫

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়-৪,৫
Sadia_afrin_nishi

“আপনি এখানে?”

অস্থিরতা নিয়ে কথাটা বললাম আমি।আমার এই উক্তিটি যার জন্য করা সে আর কেউ নয়, “রোবটম্যান”।ওনাকে এভাবে এখানে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরেছি আমি।নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রশ্ন করলাম,

_কী হলো বলুন আপনি এখানে কী করছেন।

রোবটম্যান আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলল,,

_এ্যানসার দিতে বাধ্য নই

ওনার এহেন জবাবে আমি একটু অপমানবোধ করলাম। মাথা নিচু করে চলে যেতে নিলেই ওনার রাশভারি কন্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই আবার ঘুরে দাড়ালাম।

_”যেতে বলেছি কী”

ওনার কথার জবাবে কী বলা উচিত ঠিক বুঝতে পারছি না। লোকটা অতীব মাত্রায় ঘাড়ত্যাড়া। নিজেই সবসময় অধিকার ফলাতে আসে। আমি মৌনতা কাটিয়ে মিনমিনে স্বরে বললাম,,

_কলেজে দেড়ি হচ্ছে এখনই প্রস্থান করা আবশ্যক

উনি আমার কথায় হয়তো বিরক্তবোধ করলেন।চোঁখ মুখ কুঁচকে উত্তর দিলেন,,

_তো যাতে তাড়াতাড়ি যেতে পারো সেজন্যই তো এলাম

আমি প্রশ্নসূচক চাহনি নিক্ষেপ করে বললাম,,

_মানেটা বুঝলাম না, ক্লিয়ার করুন

উনি এবার চরম বিরক্তির আভা ফুটিয়ে বললেন,,

_তোমাকে অতো মানে বুঝতে হবে না। তুমি পিচ্চি আছো সেভাবেই থাকো।আর হ্যাঁ আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করি না। চুপচাপ বাইকে উঠে বসো

আমি আরও কিছু বলতে নিলেই মাস্কের আড়ালে ওনার রক্তিম চোখ জোড়া দেখে দমে গেলাম। তারপর ধীরে ধীরে বাইকের দিকে অগ্রসর হলাম।

এই ঘটল এক বিপত্তি। বাইকে ওঠার এক্সপ্রেরিয়েন্স না থাকায় আমি একটু নার্ভাস হয়ে পরলাম। এতটাই টেনশন হচ্ছে যে বাইকের দিকে তাকিয়ে থম মেরে দাড়িয়ে থাকলাম। আমার এহেন অবস্থা মনে হয় উনি বুঝতে পারলেন তাই ঘাঁড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,,

_ভয়ের কোনো কারণ নেই, উঠে বসো

আমার ওনার কথায় একটু স্বস্তিবোধ তাই ধীরে ধীরে উঠে বসলাম বাইকে।আমি উঠে বসতেই উনি আমাকে বললেন,” পেছন থেকে ওনাকে ধরে বসতে”।ওনার এমন কথায় আমি আরও নার্ভাস হয়ে পরলাম। এটা কী করে সম্ভব। আমার পক্ষে ওনাকে ধরে বসা অসম্ভব।পরিস্থিতি আটকাতে আমি মিনমিনে স্বরে বললাম,,

_আমি ঠিক আছি আপনি বাইক স্টার্ট দিন আমার লেট হচ্ছে খুব

আমার কথাটা ওনার পছন্দ হলো কী না জানিনা তবে উনি আর কোনো কথা না বলেই বাইক স্টার্ট দিয়ে দিল।

এ মা এটা কী হচ্ছে? আমার মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভাসছি।মুহূর্তেই চারদিক পেছনে চলে যাচ্ছে আর আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সামনে।প্রচন্ড ভয় করছে আমার।সারা শরীরের পশম কাঁটা দিয়ে উঠছে।পাঁয়ের তলা শিরশিরিয়ে উঠছে। আমি এবার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে দু’হাতে শক্ত করে জাপটে ধরলাম আমার সামনে থাকা ছেলেটিকে।দুচোখ খিঁচে বন্ধ করে আছি।ভয়ের চোটে যে আমি রোবটম্যানকে জড়িয়ে ধরে আছি এটা আমার মাথাতেই নেই।বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে আমার ললাটে, নাকের ডগায় কিন্তু সেগুলো মোছার সময় আমার নেই।আমি তো নিজেকে আড়াল করতেই ব্যস্ত।কিছুক্ষণ পরেই সবকিছু নিস্তেজ হয়ে গেল।কম্পন, হাওয়ার গতি ধীরে ধীরে কমতে কমতে একদম বন্ধ হয়ে গেল। আমি তখন বুঝতে পারলাম বাইক থেমেছে।ওনাকে জড়িয়ে থাকা হাতের বাঁধন আলগা হয়ে এলো আমার।চোখ খুলতেই বাইকের মিররে দৃশ্যমান হলো আনন্দে উচ্ছ্বসিত রক্তিম বর্ণের দুটো চোখ।হয়তো তখন ওনার কথা না শোনার ফল ভোগ করায় উনি বেশ আনন্দ পেয়েছেন।এটা ওনার মুখ না দেখেও আমি বুঝতে পারছি ওই রক্তিম চোখের মনিকোঠা দিয়ে।

ধীরে ধীরে নিজেকে স্বাভাবিক করে বাইক থেকে চট করে নেমে পড়লাম আমি।নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে। মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত করে ফিরেছি।ওনার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে কাঁধের ব্যাগের ওপর এক হাত রেখে লম্বা লম্বা পা ফেলে ততক্ষণাত ওখান থেকে প্রস্থান করলাম আমি।উনিও আর আমাকে পেছন থেকে ডাকেননি।কলেজের বিশালাকার ক্যাম্পাস পেরিয়ে ক্লাসরুমের এরিয়ায় পাঁ রেখে গেটের দিকে চোখ নিবদ্ধ করতেই দেখলাম সেই বাইকওয়ালা এখনো ওখানেই আছে।আমি তাড়াতাড়ি করে চোখ ঘুড়িয়ে নিয়ে ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলাম।

নতুন কলেজে এডমিট হওয়ায় তেমন কোনো ক্লোজ বন্ধু এখনো হয়নি আমার তবে আমার ক্লাসমেট মিতালির সঙ্গে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। মেয়েটা বেশ মিশুক প্রকৃতির। মিতালি হিন্দু ধর্মের। কিন্তু বন্ধুক্ত গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে আমাদের দু’জনের ধর্ম বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি বরং আমরা দুজন দুজনের ধর্মকে শ্রদ্ধা করেই বন্ধুক্তটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

আর একটুর জন্য আজকের মতো বেঁচে গেলাম। এখনো ক্লাসে স্যার এসে পারেনি।মিতালির পাশের সিটটা এখনো ফাঁকা পরে আছে।এটা নতুন নয় প্রতিদিনই মিতালি ওর পাশে আমার জন্য জায়গা বরাদ্দ রাখে।আমার মাঝে মাঝে খুব হাসি পায়।কলেজে উঠে ও কেমন প্রাইমারির স্টুডেন্টদের মতো বিহেভ করে মেয়েটা তবে আবার ভালোও লাগে আমার প্রতি ওর কানসাস দেখে।

আমার আজকে একটু লেট হওয়ায় মিতালি চিন্তিত স্বরে বলল,,

_কী রে এতো দেড়ি করলি কেন? শরীর ঠিক আছে তোর? তোকে কেমন জানি দেখাচ্ছে? কোনো প্রবলেমে পরেছিলি নাকি?

আমি মিতালির অবস্থা দেখে হা করে চেয়ে আছি ওর মুখপানে।আর মিতালি সে তো আমার উত্তরের অপেক্ষায় অধীর হয়ে চেয়ে আছে। আমি এবার খিলখিলিয়ে হেসে দিলাম। আমার হাসি দেখে মিতালি প্রচন্ড বিরক্ত হলো।কড়া করে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিল আমাকে।আমি তারপর ওকে বললাম,,

_আচ্ছা তোরা সবাই কেন আমাকে বকিস বল তো?আমি তো কাউকেই বকতে পারিনা? সকাল সকাল ওই লো…….

“লোকটা” বলতে গিয়ে থেমে গেলাম আমি।ইস কী বড় ভুল করে ফেললাম। এখন যদি মিতালি জিজ্ঞেস করে তখন কী বলবো আমি?

আমার ভাবনা সত্যি প্রমাণ করে মিতালি বলে উঠল,,

_কী বলছিলি তুই? পরিষ্কার করে বল।সকাল সকাল কে তোকে কী বলেছে শুনি?

আমি আমতা আমতা করে বললাম,,

_ কই কে আবার কী বলবে আমাকে।কেউ কিছুই বলেনি। তুই অযথা টেনশন করছিস।

মিতালির হয়তো আমার কথা বিশ্বাস হলো না। সে আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই ক্লাসে স্যার প্রবেশ করলেন।অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীর ন্যায় আমরাও তখন উঠে দাড়িয়ে স্যারকে ওয়েলকাম করলাম। তারপর দু’জনই এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়ায় মন বসালাম।

_ _ _ _ _

কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরে বাবা আর আমি একসঙ্গে খাবার খেয়েছি। তারপর দু’জনে মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। বাবা-মেয়েতে অনেক দিন পর এভাবে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হলো।রাতে বাবার জন্য কিছু ছোট মাছের তচ্চরি করলাম। এই খাবারটা বাবার খুব পছন্দ। আমি আবার এসব খেতে পারিনা। ছোট মাছে কাঁটা বেশি থাকে যদি গলায় বিঁধে যায় সে ভয়তেই খাওয়া হয়না। আমি আবার একটু ভীতু প্রকৃতির।আমার জন্য কিছু শাকপাতা রান্নার আয়োজন করলাম।

রান্না প্রায় শেষের পথে এমন সময় বাবা দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে এলেন সাথে করে নিয়ে এলেন মেহমান। এই মেহমানও আর কেউ নয় “রোবটম্যান”।

ওনার আগমনে আমি ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। কেন মনটা হচ্ছে জানি না তবে মনে হয় সকালের ঘটনাটি আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে যার দরুন ওনাকে এখন আমার কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে।

বাবা হাতমুখ ধোঁয়ার উদ্দেশ্যে কলপাড়ে গেলেন।আমি আর রোবটম্যান ঘরে একা।এই একাকিত্ব সময়টা আমার মনে আরও বেশি অস্বস্তির সৃষ্টি করছে।আমি চুপচাপ ঘর থেকে কেঁটে পড়ার উদ্দেশ্যে এক পাঁ বাড়াতেই কেউ আমার হাতটা খুব শক্ত-পোক্তভাবে চেপে ধরল।আমি কিঞ্চিৎ ব্যথা অনুভব করলাম যার ফলে চোখে জল চিকচিক করে উঠল

চলবে,

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়(৫)
Sadia_afrin_nishi
____________________________

“এভাবে ধরে রাখার মানে কী?”…

টলমলে চোখে তাকিয়ে কথাটি বললাম আমি রোবটম্যানকে।রোবটম্যান আমার দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে যেন কিছুই হয়নি।আমি ওনার উত্তর না পেয়ে বিরক্তবোধ করলাম। কপাল কুঁচকে এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না।এমন একটা দানবীয় শরীরের অধিকারী মানুষের সঙ্গে আমার মতো চুনোপুঁটির পাঙ্গা নেওয়াটা নেহাতই বোকামির শামিল।ওনার এই চুপ থাকাটা আমার মনে চরম বিরক্তির সৃষ্টি করছে।আমি আবারও মিনমিন স্বরে বলে উঠলাম,,

__উত্তর দিচ্ছেন না কেন?

উনি এবার আমার দিকে সামান্য অগ্রসর হয়ে বললেন,,

__ইচ্ছে হয়েছে তাই ধরেছি

ওনার এমন লাগাম ছাড়া জবাব শুনে আমার মধ্যে এবার অতীব রাগের সৃষ্টি হলো যার ফলে আমি অগ্নিমূর্তির ন্যায় মুখশ্রীর আকার ধারণ করে বলে উঠলাম,,

__ইচ্ছে হয়েছে বলেই ধরে ফেললেন? আমি কী কোনো বস্তু নাকি যে ইচ্ছে হলেই ধরা যায়?আমি একটা মানুষ। আমার অনুমতি না নিয়ে আপনি আমার গাঁয়ে টাচ করতে পারেন না।

আমার বলা কথাগুলো শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে পরলেন।কিছুক্ষণের জন্য আমি ভাবলাম,”উনি হয়তো আমার কথায় ঘাবড়ে গেছেন”। কিন্তু আমাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে মুহূর্তেই ওনার চোখমুখের আকৃতি পাল্টে গিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠলেন।আমি এবার নিজেই হতভম্ব হয়ে পরলাম। এ আবার কেমন লোক? নিশ্চিত পাগল-টাগল হয়ে গেছে।হাসি থামিয়ে উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললেন,,

__কলেজে উঠে মনে হচ্ছে একটু বেশিই বুঝতে শিখে গেছ তবে এতো বোঝা ভালো নয়। একটু কম কম বুঝতে চেষ্টা করো তাতে তোমারই ভালো।আর হ্যাঁ আমার যখন যা ইচ্ছে আমি তখন তাই করি সো আমার থেকে কোনো রুপ কৈফিয়ত আশা করো না।
ফারদার যদি আমি আমার সাথে বেয়াদবি করো তার ফল খুব খারাপ হবে,”মাইন্ড ইট”।

ওনার বলা এই বাক্যগুলো আমার শরীরে যেন আগুনে ঘিঁ ঢালার ন্যায়। আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললাম,,

__আপনার সমস্যা কী হ্যাঁ?আমার ওপর কীসের এতো অধিকার আপনার? কে হন আপনি আমার?
কেউ না তো তাহলে এমন কেন করছেন।শুনুন আমাদের জন্য অনেক করেছেন আপনি তারজন্য আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাই বলে এই নয় যে আপনার সব রকমের অন্যায় আমরা মেনে নেবো।আপনি কোন সাহসে আমার শরীর স্পর্শ করেন।

উনি এবার আমাকে হেঁচকা টানে নিজের একদম কাছে টেনে আনলেন।আমাদের মধ্যে এখন একবিন্দু সম দূরত্ব। আমার গলা দিয়ে কথা বলা অটোমেটিকলি বন্ধ হয়ে গেছে।হাত পা কেমন জানি কাঁপা-কাঁপি করছে।আগে কখনো কোনো ছেলের এতো কাছে আমি যাইনি।কেমন একটা অন্যরকম অনুভুতি টানা ঝাপটে উড়ছে মন-আকাশে।হঠাৎ ওনার কথায় আমার ধ্যান ফিরল।আমি ওনার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেলাম ওনার রাগী মুখশ্রী। রক্তবর্ণ চোখ দুটো দিয়ে যেন এখুনি ভস্ম করে দেবে আমাকে।আনমনে একটা শুকনো ডোক গিলে নিজের আঁখিযুগল নত করলাম আমি।উনি আমার দিকে চেয়ে বলতে লাগলেন,,

__কী যেন বলছিলে এবার বলো।তোমাকে স্পর্শ করেছি কোন সাহসে? নেও এবার তো পুরোপুরি কাছে টেনে নিয়েছি দেখি তুমি কী করতে পারো।আমার থেকে পলায়ন করে বেড়ানোর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে মিস. নীহারিকা।

আমি এবার আশ্চর্য হয়ে বললাম,,

__আপনার থেকে পলায়ন করেছি আমি? কখন কীভাবে করলাম একটু বলবেন প্লিজ?

উনি ভ্রুঁ কুঁচকে বললেন,,

__এই মাত্রই তো পালিয়ে যাচ্ছিলে সেজন্যই তো তোমাকে আটকাতে হলো

আমি এবার চোখ সরিয়ে নিলাম ওনার থেকে।তারপর মাথা নিচু করে বললাম,,

__পালাতে চাই নি। রান্না চুলায়, সেটাই দেখতে যাচ্ছিলাম।

উনি আরও কিছু বলতে নেওয়ার আগ মুহুর্তে এমন সময় বাবার কন্ঠস্বর টের পেয়ে উনি আমার থেকে যথাযথ দুরত্ব বজায় রেখে সরে দাঁড়ালেন।

__”কী রে মা নীহা বাহিরের লাইটটা বন্ধ কেন?অন্ধকারে তো চলতে সমস্যা হবে ”

__হ্যাঁ বাবা আমি এখনি জ্বালিয়ে দিচ্ছি

বাবা কথা শেষ করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন।আমি আড়চোখে একবার রোবটম্যানকে পর্যবেক্ষণ করে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম।বাব্বাহ লোকটা এখনো রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে আমার পানে।

রাতের খাওয়া শেষে রোবটম্যান নিজের বাড়িতে চলে গেল।ওনার হয়তো আমার মতো ছোট মাছে প্রবলেম। খাওয়ার সময় আমি লক্ষ্য করেছি সেটা।কষ্ট হলেও উনি মুখে কিছু বলেননি তৃপ্তি করেই খাবারটা শেষ করেছেন।যাওয়ার আগে আমাকে চোখের ইশারায় ওয়ার্নিং দিয়ে গেছেন যে,”পরে দেখে নেবে”

_ _ _ _ _

কলেজের মাঠটা সুদীর্ঘ জায়গা জুড়ে।আমাদের গ্রামের উঠোনের মতোই।সুদীর্ঘ মাঠের এক প্রান্তে ইটের তৈরি দালান যেটা ক্লাসরুম নামে পরিচিত।তার পেছন সাইডে বিশাল বড় একটি সিরিজ গাছ।এই তপ্ত দুপুরে সিরিজ গাছের ছায়ায় বসে দক্ষিণা হাওয়া গাঁয়ে মাখার আনন্দেই অন্যরকম।ব্যাগটা কোলের ওপর রেখে দুচোখ বন্ধ করে এই মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে ব্যস্ত আমি।সব ছাত্র-ছাত্রীরা হয়তো এতক্ষণে বাড়ি চলে গেছে। আজ মিতালী আসেনি তাই আমি একাই এখানে বসে মনের সাথে আনন্দ উল্লাস করছি।চোখে র ওপর কিছু একটা পরতেই আমি সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালাম। ও মা এটা তো সিরিজ ফুল। এই ফুলটা আমার কাছে খুব সুন্দর লাগে দেখতে।হালকা গোলাপি গড়নের ফুলটা খুবই কোমলীয়।আলতো হাতে ছুলেও ছিঁড়ে পরার ভয় থাকে।আমি কয়েকটা ফুল সেখান থেকে তুলে নিলাম। তারপর সেগুলো পেঁচিয়ে একটা ছোট্ট তোড়া তৈরি করে কানের কাছ থেকে চুলের অর্ধাংশে লাগিয়ে নিলাম। হাতের আন্দাজে লাগালেও হয়তো ঠিকভাবেই লাগাতে পেরেছি।মনটা আজকে বেশ ফুড়ফুড়ে লাগছে।মাঝে মাঝে এভাবে প্রকৃতির আস্তরণে মিশে যেতে বেশ লাগে। মনে হয় অন্য কোনো জগতে বিচরণ করছি।কিন্তু এই জগৎ থেকে বেরলেই আবার সেই মরিচীকার দুনিয়া।

কলেজের গেট বন্ধ করার সময় হয়ে গেছে। এখন আমাকে উঠতে হবে নয়তো এখানেই আটকা পরে যাবো।তাড়াতাড়ি করে উঠে গেটের কাছে অগ্রসর হলাম।গেট পেরনোর সময় খেয়াল করলাম আমার মতো আরও একজন এখনো কলেজে আছে। তবে সে প্রকৃতি প্রেমে আসক্ত নয় সে আসক্ত কিছু মোটা মোটা বইয়ের ফ্রেমে।দারোয়ানের ডাকে ছেলেটি তাড়াতাড়ি তার হাতের ওপর মেলে থাকা বইটি কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল।তারপর দারোয়ানের সাথে সৌজন্যমুলক হাসি দিয়ে কলেজ ছাড়ল।ছেলেটে চলে যেতেই আমিও নিজের মনে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here