শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়-১৬,১৭

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়-১৬,১৭
(রহস্য উন্মোচন পর্ব)
Sadia afrin nishi
১৬

দশমিনিট অপেক্ষার পর সাক্ষরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেলাম। আমি এসেছি সাক্ষরের হয়তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। সে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার মুখপানে। তার অবাকদৃষ্টি আর আমার হতবাক দৃষ্টি নিয়ে কেটে গেল পাঁচমিনিট।এই পাঁচমিনিট দুজন দুজনের দিকে তাকিয়েই পাড় করে দিলাম।সাক্ষর হয়তো অবাক হচ্ছে আমাকে তার সামনে আসতে দেখে আর আমি হতবাক হচ্ছি তার চেহারার পরিবর্তন দেখে। এই তিনদিনে লোকটার মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়।মুখমন্ডল/ঠোঁট শুষ্ক,চোখ জোড়া রক্তরঙা,চুলগুলো অগোছালো পুরোই অন্যরকম লাগছে তাকে।নিরবতা ভেঙে আমিই প্রথম কথা শুরু করলাম,,

_”কেমন আছেন?”

সাক্ষর–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তুমি?

আমি কিছুক্ষণ নিরব থেকে উত্তর দিলাম,,

_”হুম আছি”

সাক্ষর– বিশ্বাস করতে পেরেছ কী?

_”পুরোপুরি নয় তবুও একবার চেষ্টা করে দেখতে চাই। আমি চাই আমার ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যে প্রমাণিত হোক।জিতে যাক আপনার বলা বাক্যগুলো।সেই লক্ষ্যেই আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাতে চাই তাই তো আপনার থেকে সব ঘটনা জানতে এলাম।আশা করি আর কোনো সত্য গোপন করবেন না।”

সাক্ষর–কী জানতে চাও বলো?

_জানতে চাই আপনি আইনের লোক হওয়া সত্বেও কেন এতবড় অন্যায় করেছেন? কেন সবসময় মুখে মাস্ক পরে থাকতেন?কেন হাবাগোবা ছেলে সেজে কলেজে যেতেন আর বছর কয়েকপর কাউকে কিছু না বলে কলেজ থেকে কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলেন? কে প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে রান্না করে রেখে যায়? আর এসবকিছু কেন আমার থেকে গোপন করেছেন? বলুন আজ আমি আমার সব প্রশ্নের উত্তর চাই।

আমার করা প্রশ্ন শুনে সাক্ষর একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে বলতে শুরু করল,,

আইনের লোক হওয়া সত্বেও আমি কোনো রুপ অন্যায় করিনি তাই তোমার এই প্রশ্নটা আমি যৌক্তিক বলে মনে করছি না। সবসময় মাস্ক পরে থাকতাম কারণ আমি “সিক্রেট পুলিশ অফিসার ” সো আমাকে সবার থেকে আড়ালে থেকে আমার দায়িত্ব পালন করতে হতো কিন্তু একদিন মিশনের সময় অসাবধানতা বসত একজন ক্রিমিনাল আমার পরিচয় জেনে ফেলে এবং আমার চেহারাও দেখে ফেলে।ওই ক্রিমিনালকে আমার হাত থেকে সেদিন ফসকে যায়।এজন্য আমাকে অলটাইম মাস্ক ইউজ করতে হয়।আমাদের বাড়িতে রান্না করে দেয় রিফাত। আমার বাড়িতে বাহির থেকে লোক আনা বিপদজনক। রিফাত সবধরনের রান্না শিখেছে হোস্টেলে থাকাকালীন তাই ওই সব রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রাখত।রিফাত আমার সহকারী কর্মকর্তা।আর এসব কিছু তোমার থেকে গোপন করার একটাই কারণ সেটা হলো আমার পেশা।আমার পেশায় আমি শপথরত যে প্রশাসন এক্সপোজ না করা পর্যন্ত আমি কাউকে আমার পরিচয় দিতে পারব না তাই আমি তোমার থেকেও আমার পরিচয় লুকিয়েছি।তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শেষ এবার তুমি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেও, কলেজে হাবাগোবা ছেলে সেজে থাকতাম বলতে তুমি কী বোঝাতে চাইছো?

_”কেন বুঝতে পারছেন না? ”

সাক্ষর–নাহ সত্যিই বুঝতে পারছি না প্লিজ বলো?

_”আমি যখন কলেজে নতুন এডমিট হই তখন আমাদের কলেজে একটা হাবাগোবা ছেলে ছিল।সে পড়াশোনায় মারাত্মক ভালো এবং সিরিয়াল ছিল।কিন্তু কয়েকবছর পর হঠাৎই সে লাপাত্তা হয়ে যায় কাউকে কিছু না বলে। এমন কী স্যাররা পর্যন্ত কেউ কিছুই জানে না।তারপর আমাদের বিয়ের রাতে আমি আপনার মুখ দেখে প্রচন্ড রকম শকড হয়েছিলাম। কারণ কলেজের সেই হাবাগোবা ছেলেটিই তো আপনি।তবে আপনার বেশভূষা আর সেই ছেলেটির বেশভূষা বিস্তর ফারাক। কিন্তু চেহারা হুবহু একই।”

আমার কথা শেষ হতেই সাক্ষর ব্যস্তকন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,

_”তারপর তারপর কী হয়েছে? পেয়েছ আর সেই ছেলেটির দেখা?”

_হ্যাঁ পেয়েছি তো সেই ছেলেটি তো আপনিই।

সাক্ষর– না না নাহ সেই ছেলেটি আমি না। সে আমার যময ভাই সার্থক যাকে আমি এই তিনটি বছর যাবত খুঁজে চলেছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।আমার ভাইটা আমাকে একা করে কোথায় হারিয়ে বসে আছে তা আমি আজও জানতে পারলাম না।সবকিছু যদিও আমার আর আমার এই পেশাকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। তবুও আমি তাকে খুঁজে চলেছি প্রতিনিয়ত।

সাক্ষরের কথায় আমি এবার পুরোই শকট হয়ে গেলাম। কলেজের সেই ছেলেটি কী না সাক্ষরের যময ভাই। যাকে এতোদিন আমি সাক্ষর ভাবতাম সে আসলে সাক্ষর নয় সার্থক।এ আমি কী ভুল করে এসেছি এতোদিন।আমি এবার সাক্ষরের দিকে তাকিয়ে উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলাম,,

_”কেন এমন হলো আপনার ভাইয়ের? কোথায় হারিয়ে গেল সে?কীভাবে হলো সবকিছু? প্লিজ বলুন।

সাক্ষর–পুলিশের চাকরিতে জয়েন করার পর থেকে আমার সব অপারেশনই সাকসেসফুল হয়েছে। এতে করে দেশের মঙ্গল হলেও চরম ক্ষতি হয়েছে দুষ্কৃতিকারীদের।ওই যে তখন বললাম একজন ক্রিমিনাল আমার মুখ দেখে ফেলেছিল তারপর তারা আমার ডিটেইলস বের করে জানতে পারে আমার বাড়িতে আমি আর আমার ভাই থাকি।আমার বাবা- মা লন্ডনে সেপারেট। আমি আর আমার ভাই দেশের টানে এই বাংলাদেশে থাকি।দেশের জন্য কিছু করতে চাই।আমার ভাই একজন সাইন্টিস্ট হতে চাইত সবসময়।দু ভাই একজোট হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে উঠে পড়ে লেগে গেলাম। আমি পুলিশ আর ও সাইন্টিস্ট হওয়ার লক্ষ্যে।আমার ভাইটার মাথায় একটু বুদ্ধি কম ছিল। ঠিক বুদ্ধি কম নয় সে মানুষের বাহ্যিক চাকচিক্যকে বেশি প্রাধান্য দিত না সবসময় সাদামাটা থাকতেই পছন্দ করত।বেশ ভালোই চলছিল সবকিছু। কিন্তু একদিন আমার ভাই কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় কিন্তু আর বাড়িতে ফেরে না। তারপর অনেক খুঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান আমি পাইনি।আমি নিশ্চিত এটা ওই দুষ্কৃতকারীদের কাজ।আর এসব খুনের পেছনে নিশ্চয়ই ওদেরই হাত আছে।

_কিন্তু সেই দুষ্কৃতকারীরা কারা?তাদের আসল পরিচয় কী? আর তাদের অপরাধ ই বা কী যার জন্য তাদের সঙ্গে আপনার শত্রুতা?

সাক্ষর–তারা হলো এমপি হাশেম মির্জা এবং তার চাচা খায়েশ মির্জা। মন্ত্রীত্বের পবিত্র আসনকে তারা করেছে অপবিত্র।ভালো মানুষীর মুখোশ পরে প্রতিনিয়ত অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে দুই চাচা-ভাতিজা।সব রকমের কালো ব্যবসা তাদের হাতের মুঠোয়। এটা নিয়ে তদন্ত করে তাদের মুখোশ সবার সামনে টেনে খুলতে চাওয়ায় আমার পেছনে পড়ে যায় তারা।অনেক বার আমাকে মারার চেষ্টাও চালায়।কিন্তু আমার কোনো প্রকার ক্ষতি করতে না পেরে আমার সহজসরল ভাইটাকেই গুম করে দেয়।

কথা শেষ করে আড়ালে দু’হাতে চোখের জল মুছল সাক্ষর।সেই জল আমার চোখের দৃষ্টি এড়াল না। সাক্ষর হয়তো সবকিছু সত্যি বলছে। এখন আমার দায়িত্ব সবকিছুর যথাযথ প্রমাণ দিয়ে সাক্ষরকে মুক্ত করা। আরও একটি দায়িত্ব এখন আমার বেড়ে গেল সেটা হলো সার্থককে খুঁজে বের করা। আসল অপরাধীর নাগাল আমাকে পেতেই হবে তা যে করেই হোক।আমার ভালবাসাকে মুক্ত করতে জীবন বাজি রাখতেও আমি প্রস্তুত।

সাক্ষরকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম হাইওয়েতে।সাক্ষর আমাকে বারবার সাবধান করে দিয়েছে যাতে আমি সাবধানে থাকি। যে কোনো মুহূর্তে আমার ওপরেও বিপদ আসতে পারে।

————————————————————-

হাইওয়ের পাশ ঘেঁষে হেটে চলেছি।কিছুই ভালো লাগছে না। নিজেকে বড্ড একা একা লাগছে। কী করে এতসব প্রমাণ আমি জোগাড় করব? কী করে সার্থককে খুঁজে বের করবো? কী করে সাক্ষরকে মুক্ত করবো?কিছুই বুঝতে পারছি না। সবকিছু তো আমার একার দ্বারা সম্ভব নয়। সাক্ষরের কর্মগত সততার ওপর ভিত্তি করে তাকে এখন কোর্টে চালান না করে জেলের একটা স্পেশাল কক্ষে রেখে তার কাজের তদন্ত
করা হচ্ছে। সবাই জানে সাক্ষর এমন কোনো কাজ করতেই পারে না যার জন্য তার পেশার গাঁয়ে চুনকালি লাগবে। তবুও আইনের কাছে সবাই সমান। আইন চায় সাক্ষী,প্রমাণ। মুখের কথায় আইন চলে না।

হাইওয়েতে কিছু দুর হেঁটে যেতেই গাড়ির হর্নের শব্দে পেছনে ফিরে তাকালাম। তারপর যা দেখলাম তারজন্য মটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

চলবে,

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়(১৭)
Sadia afrin nishi
_____________________________

অনেক মানুষ একসাথে জড় হয়ে আছে।এগিয়ে গিয়ে ভীড় ঠেলে ঢুকে দেখি আরও একটা লাশ।ঠিক আগের লাশগুলোর মতোই।এবার তো সাক্ষর জেলে তাহলে কে করল এই খুন।আশেপাশের মানুষেরা বলাবলি করছে কে বা কারা যেন লাশটাকে বড় গাড়ির মধ্যে থেকে ছুড়ে হাইওয়েতে ফেলে দিয়ে চলে গেছে।আমার কাছে সবকিছু কেমন অগোছালো ধাঁধার মতো লাগছে। যতই অগোছালো হোক না কেন আমাকে এর উত্তর খুঁজে বের করতেই হবে।

লাশগুলো যে মর্গ থেকে সাক্ষরই সরিয়ে আনত এটা তো আমি সিওর কিন্তু খুনগুলো কে করছে এটাই আসল রহস্য। এই মুহুর্তে আমার দরকার একজন ল-ইয়ারের খোঁজ। তারজন্য আগে আমাকে অফিসার মাইনুল হাসানের সাথে কথা বলতে হবে। উনি নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবেন।

থানা থেকে অফিসার মাইনুল হাসানের পার্সোনাল নম্বর কালেক্ট করলাম। তারপর তাকে ফোন করে থানার পাশেই একটা কফি শপে মিট করার অফার দিলাম। উনিও রাজি হয়ে গেলেন।হয়তো আমার অসহায়তা ধরতে পেরেছিলেন।

সবকিছু অফিসারকে খুলে বললাম। অফিসার আমার কথাগুলো বিশ্বাস করে নিলেন।সাক্ষরের অভ্যাস সম্পর্কে অবগত থাকার জন্যই এতটা কোমল ব্যবহার করছেন হয়তো।অফিসার আমাকে সাথে করে সনামধন্য ল-ইয়ার ব্যারিস্টার কামরুল ইসলামের সাথে মিট করিয়ে দিলেন। ব্যারিস্টার কামরুল ইসলাম একজন সৎ ব্যারিস্টার।সাক্ষরের এমন অবস্থার কথা শুনে উনি নিজেও গভীর ভাবে শোকাহত হয়েছেন। সাক্ষরের পেশা সম্পর্কে উনিও আগে থেকেই অবগত ছিলেন। সাক্ষর আর ওনার মধ্যে বন্ধুক্তপূর্ণ সম্পর্ক।

ব্যারিস্টার সাহেব আমাকে বললেন সাক্ষরের কাছ থেকে সব ক্রিমিনালদের ডিটেইলস এনে ওনার হাতে তুলে দিতে।কিন্তু আজকে আর সাক্ষরের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয় তাই আমাকে আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ব্যারিস্টার সাহেব আর অফিসারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলাম।পনের মিনিটের মাথায় বাড়িতে পৌঁছে গেলাম।

————————————————————-

বাসায় ফেরার পথে মিতালীকে ফোন করে আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছিলাম।এখন দুজনে মিলে সেই গুপ্ত কক্ষে সাক্ষরের সব গোপনীয় কাজগপত্র তল্লাশি করছি। সাক্ষরের যে যময ভাই আছে এটা শুনে মিতালীও চরম অবাক হয়েছে।এক ঘন্টা ধরে খোঁজার পরেও যখন কোনো কিছুই না পেয়ে ফিরে আসছিলাম ঠিক তখনই আমার চোখ যায় আলমারির মধ্যে ছোট্ট একটি কৌটোকে।কৌটো টা হাতে নিয়ে দেখলাম এটা একটি লক করা টিনের কৌটো। আলমারির ভেতরে আশেপাশে চোখ বুলতেই পেয়ে গেলাম কৌটোর চাবিটা। কৌটোর মুখ খুলে ভেতরে পেলাম একটা মেমোরি কার্ড।মিতালী আমার দিকে খুব উদগ্রীব হয়ে চেয়ে আছে ভেতরে কী আছে জানার জন্য। আমি ওকে মেমোরি কার্ডটি বের করে দেখালাম।মিতালী আমাকে মেমোরি কার্ডটা ওপেন করতে তাড়া দিতে লাগল। আর কিছু না খুঁজে মেমোরি কার্ডটা নিয়ে আমরা ওপরের ঘরে চলে গেলাম।
পেনড্রাইভে মেমোরি কার্ডটা চালু করে দুজনেই অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে পড়লাম ভেতরে কী আছে দেখতে।

মেমোরি কার্ডে কিছু ফটো আর ত্রিশ মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপ রয়েছে। ফটোগুলো আমি ঠিক চিনতে পারলাম না তবে ভিডিও টা দেখার পর বুঝতে পারলাম ফটো আর ভিডিওতে যারা রয়েছে তারা সবাই একই মানুষ। ভিডিওটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নয়জন লোক বসে মাদকদ্রব্য আর কিছু ঔষধ প্যাকেটিং করছে। নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথাও বলছে এগুলো সাপ্লাই সম্পর্কে। আমি এই মেমোরিকার্ড টা যত্ন করে তুলে রাখলাম। পরবর্তী দিন এটাই হবে আমার প্রথম ক্লু ব্যারিস্টারকে দেওয়ার জন্য।

রাতে মিতালী রান্না করল।আমাকে কিছুটা খাবার জোর করে খাইয়ে দিয়ে নিজের দিকে খেয়াল রাখতে বলে মিতালি চলে গেল তার নিজের বাসায়। এখন এই বাড়িতে আবার আমি একা।

————————————————————-

সকাল সকাল ব্যারিস্টারের অফিসে এসে হাজির আমি।ব্যারিস্টার আমাকে দেখে সৌজন্যমূলক হাসি প্রদান করলেন।প্রতিত্তোরে আমিও কিঞ্চিৎ হাসলাম।তারপর বসে পড়লাম দুজন আসল আলোচনায়।ব্যারিস্টার সাহেবকে মেমোরি কার্ডটি দেখাতেই তিনি সেটা ওপেন করে ভিডিওটি দেখলেন। ভিডিও ক্লিপটিতে যারা আছে তারা প্রত্যেকে এমপির লোক এবং তারা সকলেই এখন মৃত। সাক্ষরের কথাই হয়তো সত্যি এরা সকলে খারাপ কাজের সঙ্গে লিপ্ত। এরা সকলে এমপির লোক হওয়া সত্বেও কে এদের মার্ডার করল আর কেনই বা করল?তার নেক্সট টার্গেট এবার এমপি নয়তো? এমনো হাজার প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ব্যারিস্টার জানালেন আমাদের প্রথমে হসপিটালে যেতে হবে যেখানে ওই লাশগুলোকে পোস্ট মর্টেম করানো হয়েছে। সেখান থেকে তথ্য কালেক্ট করে তারপর অনুসন্ধান চালাতে হবে।

সময় নষ্ট দু’জন না করে দু’জনে বেড়িয়ে পরলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে। হসপিটালে গিয়ে লাশগুলোর পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট দেখে বোঝা গেল এই খুন একজনই একই প্রক্রিয়ায় করেছে। ডক্টরের কাছে আমি জানতে চাইলাম এটা কোনো সাইকো কিলারের কাজ কী না? ডক্টর বলল,,

_”হয়তেও পারে আবার নাও হতে পারে ”

হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে ব্যারিস্টার সাহেব বললেন আমাকে বাড়িতে ফিরে যেতে। আগামীকাল সকাল সকাল এমপির সঙ্গে দেখা করতে হবে। এমপি নিজেই হয়তো এই রসহ্যের চাবিকাঠি।

————————————————————-

এমপির বাড়িতে ঢোকার জন্য অনুমতি পেতে বেশ সময় লেগে গেল। এমপির সঙ্গে ব্যারিস্টার সাহেব নিজেই আলোচনা করছেন আমি শুধু পাশে বসে দেখছি।এমপি জানালেন,,”তিনি এমপি মানুষ। তার শত্রুর অভাব নেই। তাকে ফাঁসাতে চায় সবাই।”

এমপির মুখ থেকে কোনো কথাই বের করা গেল না। আজকের মতো ব্যারিস্টার বাবু তার অফিসে চলে গেল।আর আমিও বাড়ি যেতেই চেয়েছিলাম কিন্তু সাক্ষরের সঙ্গে দেখা করাটা জরুরি মনে করলাম তাই রিকশা ধরে থানায় চলে গেলাম।

রিকশা ওয়ালার ভাড়া থানায় প্রবেশ করলাম। এখনও দেখা করার সময় আছে। তাড়াতাড়ি অনুমতি নিয়ে সাক্ষরের কাছে চলে গেলাম।সে আমাকে দেখে অনেকসময় যাবত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।তারপর শুরু করে দিল একগাদা ভাষণ। আমি ঠিক বুঝতে পারি না, এই লোক জেলে বসেও আমার প্রতি এতটা এগ্রেসিভ কেন? আমার চেহারার হাল নিয়ে কথা বলছে অথচ নিজের চেহারার কী অবস্থা সে খেয়াল কী আছে তার। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে বললাম আমি,,

_”আপনার সমস্যা টা কী বলুন তো? এলাম একটা দুটো কথা বলতে আর আপনি কীনা ধমকাধমকি শুরু করে দিলেন।আমার চেহারার হাল না হয় নাজেহাল কিন্তু আপনার চেহারার এ কী দশা। আচ্ছা শুনুন, কিছু না জেনে শুনে বিপদে যখন আমিই আপনাকে ফেলেছি তখন এই বিপদ থেকে আমিই আপনাকে মুক্ত করব।কিন্তু তারজন্য তো আপনার সাহায্যের দরকার। আপনার কাছে ক্রিমিনালকে ধরার জন্য কী কী প্রমাণ আছে এবং কোথায় আছে প্লিজ বলুন। আমি শুধু আপনার গুপ্ত কক্ষ থেকে একটা মেমোরি কার্ড ব্যতিত আর কিছুই পাইনি।”

সাক্ষর–আমার কাছে আপাতত ওই মেমোরি কার্ড টাই আছে। আর কোনো প্রমাণ নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি ওই কিলারের নেক্সট টার্গেট এমপি। ওই কিলার অনেকটা আমার পক্ষেই কাজ করছে।সকল দুষ্কৃতিকারীদের সে নিজের হাতে শাস্তি দিচ্ছে। কিন্তু আমার আর তার মধ্যে একটাই তফাত সে যা করছে তা অন্যায়ভাবে আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে করছে আর আমি অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তি দিতে চেয়েছি।আমাদের দু’জনের লক্ষ এক হলেও রাস্তা ভিন্ন। এখন শুধু এতটুকুই বলতে পারি তোমরা এমপির বাড়ির দিকে নজরদারি কর তাহলে সেই কিলারের খোঁজ পেলেও পেতে পারো।

আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম তবে এবার পুরোপুরি সিওর হলাম।এবার সবকিছু ঠিকঠাক প্ল্যানমাফিক এগোতে পারলে আমাদের জয় নিশ্চিত।

দু’জনে টুকটাক কথা বলতে বলতে ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে গেল। সাক্ষরকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম বাড়ির পথে। সাক্ষর আমাকে নানাভাবে সতর্ক করে দিল এবং সকল কাজে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলল।আমি যে বোকামি করে ফেলেছি তাতে করে এই কীসের একটা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষর আর জেল থেকে রেহাই পাবে না। তাই সাক্ষরকে বাঁচাতে যে করেই হোক আমাকে এই কেস সল্ভ করতেই হবে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here