শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়-২,৩

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়-২,৩
Sadia_afrin_nishi

লঞ্চ ইতিমধ্যে একপাশে হেলে পরেছে।সবাই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠল। আব্বা আমাকে নিয়ে ছাদের সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলেন। আব্বা হন্তদন্ত হয়ে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগলেন।মাও পেছন পেছন চলে এসেছে।আমাদের লঞ্চের কিছুটা দুর থেকে একটা ছোট্ট ট্রলার যাচ্ছিল।ট্রলারটা তাড়াতাড়ি করে আমাদের লঞ্চের কাছাকাছি চলে এলো।কিছুলোক লঞ্চের জানালা দিয়ে ট্রলারে লাফ দিয়ে পরল।ট্রলারটা ছোট হওয়ায় বেশি লোক উঠতে পারল না। ট্রলার পুরো ভরে গেছে আমার আব্বা তখন আমাকে ছাদের ওপর থেকে ছুড়ে মারলেন ট্রলারের মধ্যে।আমি গিয়ে পরলাম ট্রলারের মধ্যে। কিছুক্ষণের ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক পুরোই হতবাক।আমার কথা বলার শক্তি মনে হচ্ছে লোপ পেয়েছে। ট্রলারটা কিছুদূর যেতেই আব্বা, মার অবস্থানকৃত লঞ্চটির আরেকপাশও ডুবে গেল।লঞ্চটি মুহূর্তেই নদীর পানির সঙ্গে বিলীন হয়ে গেল । আমি ততক্ষণাত আব্বা বলে এক চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালাম।

জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা ভাঙাগোলপাতার ঘরে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না।চৌকি থেকে নেমে হাঁটা ধরলাম বাহিরে। বাহিরে কিছু লোকজন কীছু একটা নিয়ে কথা বলছিল।আমাকে দেখা মাত্রই একজন বলে উঠল,, ওই তো মাইয়াডার হুঁশ ফিরছে তাইলে আর ডরানোর কোনো কারণ নাই।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। একজন আমার কাছে এসে বলল,,

_মা তুমার শরীর ভালা লাগতাছে তো

আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।হঠাৎ করে বাবা-মায়ের কথা মনে পরতেই আমি হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম।আমার সামনে থাকা লোকটি তখন উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,

_কী হইছে মা কাঁনদো কেন

আমি তখন ভাঙা গলায় বললাম,,
_আমি আব্বা, মার কাছে যাব

লোকটির মুখটা তখন মলিন হয়ে গেল। সে আমার মাথায় হাত রেখে বলল,,

_আজই থেইক্কা আমিই তর বাপ,মা।এই দুনিয়ায় আমারও কেউ নাই তরও কেউ নাই।তাই আমরা দুইজন অহন বাপ,মাইয়া বুঝলি রে মা।

সেদিন থেকে শুরু হলো আমার জীবন সংগ্রাম।চিরতরে সুখ বিদায় নিয়ে দুঃখ,কষ্ট নেমে এলো।আব্বা, মা, দাদু সবার কথা খুব মনে পরত।আমার পালিত বাবা তখন আমাকে নানারকম কথার ছলে অতীত ভুলানোর চেষ্টা করতেন।দাদু কেমন আছে তাও জানি না।আমি ছোট হওয়ায় বাড়ির ঠিকানা কিছুই জানতাম না।আমার পালিত বাবা অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে দাদুর কাছে নিয়ে যাওয়ার কিন্তু ঠিকানা না জানায় প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছে।ধীরে ধীরে অতীত ভুলে পালিত বাবার সাথে নিজের জীবন শুরু করলাম।কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে দিন অতিবাহিত হতো আমাদের।খুব কষ্টকর সেই দিনগুলি।

সময়ের নিয়মে বয়স বারতে লাগল আমার।এখন আমার বয়স ষোল বছর। পালিত বাবা নামটা কেটে সেখানে বসেছে আমার বাবা নামটি।অতীতের স্মৃতি সবকিছু আমার কাছে এখন ঝাপসা। বাবা,মায়ের চেহারাও তেমন একটা মনে নেই বললেই চলে।বাবার মুখে শুনেছি ছোট বেলায় লঞ্চডুবির সময় আমি ট্রলারে বসে অজ্ঞান হওয়ার পরে বাবা আমাকে তার গ্রামে নিয়ে আসেন।নানা লোকে নানা কথা বলেছে কিন্তু আমার বাবা আমাকে কখনো একা ছেড়ে দেননি।সবসময় আমাকে আগলে রেখেছেন। আমার বাবা আমাকে লেখাপড়াও শেখাচ্ছেন।আমি এখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। খুব শীঘ্রই এসএসসি পরীক্ষা দিবো।লেখাপড়া করার ফলে আমার কথাবার্তা, চালচলনে এসেছে পরিবর্তন। এমন অভাবের সংসারে পড়াশোনা করাটা নিতান্তই বিলাসিতা বলে অনেকে মনে করলেও আমার বাবা মনে করেন তার মেয়ে বড় হয়ে তার মুখ উজ্জ্বল করবে। এজন্য পাড়া-পড়শীর নানারকম কটুক্তি শোনা স্বত্বেও আমার বাবা আমার পড়াশোনা বন্ধ করেননি বরং আরও উৎসাহ দিয়েছেন। আমার জীবনে চলার পথে একমাত্র অনুপ্রেরণা আমার বাবা।বাবা,মেয়েতে হেসে-খেলে বেশ ভালোই দিন চলছে আমাদের।

আমাদের গ্রামের মোড়লের ছেলে নিজাম।ছেলেটা একদম ভালো না।ইদানিং স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়শই আমার পথ রোধ করতে চেষ্টা করে। আমি প্রতিবারই ছলচাতুরী করে পলায়ন করি।আজও ঠিক আমার পথ আটকাতে দাড়িয়ে আছে।এই ছেলেটাকে দেখলেই আমার অন্তর কেঁপে ওঠে।আমি নত মস্তকে হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে পদার্পণ করছি।ঠিক সে সময়ই নিজাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

_ওই ছেড়ি অতো ভাব লইস কেন?সামনে যে এত্তো সুন্দার একখান পোলা খাড়াইয়া আছে সেইদিকে কী তর চোখ যায় না

আমি কিছু না বলে তাড়াতাড়ি পাঁ চালাতে লাগলাম।নিজাম হয়তো আমার কাজে প্রচন্ড ক্ষেপে গেছে।
আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজাম আমার হাত শক্ত করে ধরে ক্ষিপ্র গতিতে বলল,,

_তর অনেক সাহস হইছে তাই না। খাড়া তর ডানা ছাটার ব্যবস্থা করতাসি

এতটুকু বলে নিজাম হনহন করতে করতে চলে গেল। এদিকে আমার হাত রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।আমি হাতের দিকে তাকিয়ে দুফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে শ্রেণি কক্ষে চলে গেলাম।

স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে গিয়ে দেখি আমাদের ছোট্ট টিনের ঘরটা ভেঙে চুড়ে তছনছ অবস্থা। বাবা চোখে পানি উঠানে বসে আছে। আমি হতবাক হয়ে বললাম,,

_এগুলো কী করে হলো বাবা।

বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললেন,,

_মা রে মোড়লের পোলা আইছিল তর লাইগা বিয়ার প্রস্তাব লইয়া। আমি না করছি দেইখা ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা ফালাইছে।আমার গাঁয়েও হাত তুলছে। সামনের শুক্কুরবার(শুক্রবার)কাজী লইয়া আইবো।তহন বিয়া না দিলে কইছে জানে মাইরা হালাইবো

বাবা কথা শেষ করে আবার আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।আমার চোখেও পানি।ঘরবাড়ি ভেঙেছে ঠিক আছে কিন্তু আমার জন্য বাবা মার খেলো এটা কিছুতেই মানতে পারছি না।

আমার ভাবনার সুতো ছিঁড়ল বাবার কথা,,

_চল রে মা আমরা এইহান থেইক্কা পলাই যাই।তরে আমি শহরে নিয়া গিয়া ইস্কুলে পড়ামু।তুই চল মা আমার সাথে চল(মিনতি করে)

বাবার কথায় আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,,

_এসব তুমি কী বলছো বাবা।এখান থেকে চলে গেলে কোথায় থাকবো আমরা।আর শহরে যেতে তো অনেক খরচ হবে।এতো টাকা তুমি কোথায় পাবে

বাবা নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে বলল,,

_এই জমিডা বেইচ্চা দিমু।তা থেইক্কা যে টাকা পামু ওইডা লইয়া শহরে যামু। তারপর এখখান কামের (কাজের)ব্যবস্থা করমু তাই দিয়া দুই জনের চইল্লা যাইবো।তুই আর না করিস না মা। এইহানে থাকলে তর জীবনডা শেষ রে মা

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। চুপটি করে শুয়ে পরলাম বাবার বুকের ওপর মাথা রেখে।

বাবার চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।কেউ জমি কিনতে রাজি হচ্ছে না। সবাই জমি অনুযায়ী কম দাম বলছে।শেষমেষ বাবা নিরুপায় হয়ে অল্প দামেই জমিটা বিক্রি করে দিলেন।শেষ সম্বল এই জমিটুকুও গেল এখন মানুষের দারে দারে ঘুরতে হবে আমাদের। এরপর কী আছে নিয়তিতে তা একমাত্র ওপর ওয়ালাই ভালো জানেন।

_ _ _ _ _

প্রাণপণে দৌড়চ্ছি ইটের রাস্তা ধরে।পাঁ থেকে রক্তের ফিনকি ছুটছে।বাবারও একই অবস্থা। নিজের থেকেও বাবার এই অবস্থা দেখে আমার বেশি কষ্ট হচ্ছে। তবুও কিছুই করার নেই। ছুটতে যে আমাদের হবেই।

মোড়লের ছেলের কানে কীভাবে যেন আমাদের পালিয়ে যাওয়ার খবরটা চলে গেছে। হয়তো নজরদারি করছিল আমাদের ওপর।আমি আর বাবা বাড়ি থেকে বেরতেই আমাদের পিছু তাড়া করতে শুরু করল নিজামের দলের লোকজন। আমরা দুজনে ছুটতে ছুটতে প্রায় স্টেশন পর্যন্ত চলে এসেছি।ওরা এখনো আমাদের ধাওয়া করছে। এমন একটা দিনও যে আমার জীবনে আসবে এটা কখনোই ভাবতে পারিনি।

কপাল ভালো যে আমরা স্টেশনে পৌঁছে দেখলাম ট্রেন এখানো আছে। আমি তাড়াতাড়ি একটা কামড়ায় উঠে পরলাম। তারপর বাবার হাত ধরে টেনে তুললাম।আর একটুর জন্য ওদের হাত থেকে বেঁচে গেলাম আমরা। ট্রেনে বসে দুজনে হাঁপাচ্ছি।বাবার বয়স হচ্ছে এমনিতেই শরীরটা ভালো নয় তারওপর আবার এইসব।ট্রেনের মধ্যে সবাই আমাদের দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর কীসব যেন কানাঘুষো করছে।

ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি।ছোট বেলায় একবার নিজের বাড়ি হারিয়েছি আজ দ্বিতীয় বার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।তবে কারণ টা ভিন্ন।

ঢাকা পৌছলাম পরদিন বিকেলে।নতুন শহর কী করব, কোথায় যাব কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।বাবাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।এই শহরের মানুষগুলো বড্ড অদ্ভুত।কারো মনে কোনো দয়া-মায়া নেই।যার কাছেই সাহায্যের জন্য আবেদন করছি সেই দুরদুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে।এই অচেনা শহরে নিজেদের ভীষণ অসহায় লাগছে।মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি একটু আশ্রয়ের সন্ধানে। কিন্তু বিনিময়ে পাচ্ছি শুধুই অবহেলা,লাঞ্চনা।

চলবে,

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়(৩)
Sadia_afrin_nishi
____________________________

বাস্তবতার নিষ্ঠুর গন্ডি পেরিয়ে একজন আমাদের দিকে বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত।বাবা আর আমি যখন পথে পথে ঘুরছিলাম তখন আমাদের সাথে দেখা হয় একটি ছেলের।ছেলেটির চেহারা, শরীর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।কালো রঙের পোশাকে পুরো শরীর মোড়ানো, মুখে মাস্ক লাগানো।আমি কিছুক্ষণ অদ্ভুত প্রকৃতির এই মানবকে বোঝার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুই বোধগম্য হলো না। এমন তপ্ত গরমে এই চাঁদোয়া পোশাকের প্রয়োজনীয়তা বোঝার সাধ্য আমার নেই।খনেকের জন্য লোকটিকে আমার পাগল উপাধিতে আখ্যায়িত করতে খুব ইচ্ছে করল।আমার ভাবনার ছেদ ঘটল বাবার কথায়।বাবা লোকটির উদ্দেশ্যে বললেন,,

_বাজান আমগো একটু সাহায্য করবেন

লোকটি ইশারায় বোঝাল কী সাহায্য করতে হবে। বাবা লোকটির ইশারা বুঝতে পেরে বলল,,

_বাপজান আমরা গ্যারাম(গ্রাম) থেইক্কা আইছি।শহরে নিজেগো মানুষ বলতে কেউ নাই।যার কাছে সাহায্য চাই সেই আমগো দুরদুর কইরা তাড়াইয়া দেয়।আপনি কী আমারে একটা কামের(কাজের)
ব্যবস্থা কইরা দিতে পারেন(হাত জোর করে)

লোকটি বাবার কথার উত্তরে ইশারায় তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য বললেন।আমি এবার পুরোপুরি সিওর যে এই লোক নির্ঘাত বোবা। তাই তো কোনো বাক্য ব্যয় না করে ইশারা-ইঙ্গিত করছে।ইস লোকটির জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছে।

লোকটি আমাদের একটা ইটের দেওয়াল দেওয়া বাড়িতে নিয়ে এলেন।এমন বাড়ি গ্রামে দালান নামে পরিচিত।লোকটি বাবার উদ্দেশ্যে বললেন,,

_আজ থেকে এটাই আপনার ঘর।আপনারা এখানেই থাকবেন। রাতের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সব চলে আসবে। আর কাল আপনার কাজের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

এতটুকু বলে লোকটি শোঁ করে চলে গেল।”এটা কী মানুষ নাকি রোবট”, আমার ভাবনা জুড়ে এখন শুধু এই একটি প্রলাপের বিচরণ চলছে।মনের গহীন কোণে তাকে দেওয়া মতো একটা উপাধি এসে ধরা দিল। সেটি হলো “রোবটম্যান”।আনমনেই হাসলাম নিজের চিন্তাধারা পর্যবেক্ষণ করে।

_ _ _ _ _

পরদিন সকাল সকাল সেই রোবটম্যান বাবার জন্য কাজের জোগাড় করে দেয়।বাবার শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তার জন্য একটা মিডিয়াম সাইজের মুদি দোকান খুলে দেয়।মুদি দোকানটা সুন্দর করে পণ্যাদি দিয়ে সজ্জিত করে দেয়। আমি আর বাবা দুজনেই ওনার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ।

এভাবেই আমাদের দিন চলতে লাগল।নতুন শহর, নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগলেও পরবর্তীতে আমার আর কোনো অসুবিধে হয়নি।বাবা আমাকে একটা গার্লস স্কুলে ভর্তি করে দিল।একবছর সেখানে পড়ার পর আমি এসএসসি পরীক্ষা দিলাম। আল্লাহর ইচ্ছায় আমি খুব ভালো নম্বর পেয়ে পাস করলাম।তারপর একটা সরকারি কলেজে আমার পড়ার সুযোগ করে দিলো ওই রোবটম্যান।এই রোবটম্যান আমাদের পাশে সবসময় বটগাছের ছায়ার স্বরুপ।

আজ আমার মনটা ভীষণ খুশি।নতুন নতুন কলেজে যাচ্ছি বেশ ভালোই লাগছে। অনেকগুলো ফ্রেন্ডসও হয়ে গেছে আমার। ওরা সবাই খুব ভালো।সবকিছু মিলিয়ে মেজাজটা আজকে খুব ফুড়ফুড়ে।আনমনেই গান গেয়ে গেয়ে ফুলে হাত বুলাচ্ছিলাম।এই চার-পাঁচটা ফুল গাছ আমি লাগিয়েছি।ফুল গাছ আমার ভীষণ পছন্দের।ফিউচারে একটা নার্সারি করার প্রবল ইচ্ছে আছে।

“””””আমার সোনা বন্ধু রে তুমি কোথায় রইলা রে(২)
দিনে রাইতে তোমায় আমি
খুঁইজা মরি রে হহহ
আমার সোনা বন্ধু রে
তুমি কোথায় রইলা রে”””

হঠাৎই এক অদ্ভুতুরে কন্ঠস্বরে আমার গান থেমে গেল। পেছন ফিরে দেখি রোবটম্যান পকেটে দুহাত গুজে আমার দিকেই চেয়ে আছে। আজও তার মুখটা দেখার সৌভাগ্য আমার হলো না।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তার এহেন প্রকাশ্যে পলায়নের হেতুটি জানতে কিন্তু সাহসে কুলায় না।
আমার ভাবনার মাঝে এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে তিনি আবারও বলে উঠলেন,,

_উত্তর দিচ্ছো না কেন?এই বয়সেই সোনা বন্ধুর খোঁজ চলছে(রাগান্বিত স্বরে)

আমি আমতা আমতা করে বললাম,,

_এটা তো শুধু একটা গান ছিল। এতো সিরিয়াস ভাবার কিছু নেই

সে আমার উত্তরে নিজের এক ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,,

_বাব্বাহহ তোমার তো দেখছি কথার ফুলঝুরি ছুটছে মুখ থেকে। সাহস টা কী একটু বেশিই মনে হচ্ছে না?

আমি এবার কী বলবো বুঝতে পারছি না আর কিছু বললেও এই লোক বুঝবে কী না সন্দেহ তাই চুপ থাকাই শ্রেয় বলে মনে করছি।
কিন্তু বেশিক্ষণ আর চুপ থাকা হলো না। লোকটি আমার দিকে আবার প্রশ্ন ছুড়ল,,

_এই গাছগুলো কে লাগিয়েছে?

আমি তখন একটু মাথা উচু করে গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে বললাম,, আমি লাগিয়েছি।

লোকটি তখন আমার গোলাপ গাছ থেকে একটি ফুল ছিঁড়ে আমার কানে গুজে দিল।ওনার এমন সাবলীল কর্মকাণ্ডে আমি হতবাক।আমি স্বশব্দে বলে উঠলাম,,

_এটা কী করছেন আপনি?আমার গাছে হাত দিয়েছেন কেন?

লোকটির প্রস্তুত উত্তর,,

_যাকে যেখানে শোভা পায় সেখানে রেখেছি।

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লোকটি ঝড়ের গতিতে পদচারণ করেন রুমের বাহিরে। এই লোকের হাবভাব বোঝা দায়।এতদিনের পরিচয়ে আজই প্রথম তার সাথে আমার কথা হলো।এর আগে কখনো কথা বলার প্রয়োজন হয়নি যা বলতো তা বাবাই বলতো।আজ নিজে থেকে কথা বলতে এসে এভাবে হেনস্তা করবে আমাকে,তা আমি কখনোই ভাবিনি।

_ _ _ _ _

আজ কলেজে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে। রান্না শেষ করতে দেড়ি হলো যে তাই তো লেট হলো।প্রত্যেকদিন রান্না করে রেখে তারপর কলেজ যাই আজও তার ব্যতিক্রম নয়।কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়েছে যার ফলস্বরূপ রান্নায় দেড়ি আর তারও ফলশ্রুতিতে কলেজে দেড়ি।হাহহহ নিজের ওপরই এখন প্রচন্ড রাগ হচ্ছে কেন যে স্বপ্ন দেখতে গেলাম।সব দোষ ওই স্বপ্নের।আরেহ স্বপ্ন দেখতে দেখতেই তো ঘুম ভাঙতে দেড়ি হলো।নো নো নো স্বপ্নের কী দোষ, সব দোষ ওই স্বপ্ন গমনকৃত অবয়বটির।সে কেন আমার স্বপ্নে বিচরণ করে।তারজন্যই সব হলো।ধুর ভাল্লাগে না কিছু,আজ নিশ্চয়ই বকা খেতে হবে।

প্রয়োজনের সময় কিছুই হাতের নাগাল পাওয়া যায় না।রিকশাগুলোও আজকে হাওয়ায় বিলীন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।রোদের তাপদাহে দাড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে পরছে।নাকের ডগা,ললাটে জমা হয়েছে বিন্দু বিন্দু জলরাশি।হাতের টিস্যু দিয়ে মুছে নিতেই মুহূর্তে পূণরায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে সেই স্হান।আজ বোধহয় ভাগ্য আমার সাথে ছলাকলায় মেতেছে।চরম বিরক্তির সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আশ্চর্যে কপাল কুঁচকে এলো আমার সামনে দাড়ানো পুরুষ অবয়বটিকে দেখে। মনে মনে আওড়াতে লাগলাম,”এর এখানে আসার হেতু কী”?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here