শব্দহীন অনুভূতি,পর্ব_১
পলি_আনান
-দাদাভাই মেয়েটাকে আমার কাছে এনে দাও।অতীতে এমন কিচ্ছু চাইনি তোমার কাছে এই প্রথম চাইছি প্লিজ দাদাভাই মেয়েটাকে আমার চাই চাই চাই!এনে দাও তুমি।
আরাফের এমন আকুল কন্ঠে কথা গুলো শুনে থমকে যায় নোমান।ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুচকে সন্দিহান গলায় বলে,
-কোন মেয়ে?কোন মেয়ের কথা বলছিস তুই?
-হৃদিতা,আমি হৃদিতার কথা বলছি তোমায়। ভুলে গেলে সেই মেয়ের কথা? তোমার চাচাজান কিভাবে সেই মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গেছিলো সেদিন। আমি সেই মেয়েটার কথাই বলছি।
আরাফের উওর শুনে ঠোঁট বাকিয়ে হাসে নোমান। ডান হাতের আঙুলে থাকা সিগারেটটা মুখে পুরে ধোঁয়া গুলো টেনে নেয়।তারপর নিশ্চিন্তে মাথা উচু করে ধোঁয়া গুলো আকাশের দিকে মুক্ত করে ছেড়ে দেয়। এতেই যেন তার চরম-পরম শান্তি।
-তা মেয়েটাকে কি জন্য চাই তোর?
-তোমার চাচাজান ঠিক যে কারনে মেয়েটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে আমার ঠিক সেই কারনে; আমার প্রয়োজনে তাকে চাই।বলনা তুমি, এনে দেবে তাকে?
-মেয়েটাকে আগে প্রস্তাব দিয়েছিলি?নাকি আমায় প্রস্তাব পাঠাতে হবে?
নোমানের কথায় বুকের ভেতরে থাকা সুপ্ত আগুনটা যেন ধুপ করেই বেড়ে যায় আরাফের।রাগে গিজগিজ করতে করতে গমগম সুরে বলে,
-তোমার কি ধারনা, যে কাজ আমি হ্যান্ডেল করতে পারি সেই কাজ আমি তোমার কাছে আনবো?নেভার! আমি যানি তুমি সবসময় বিজি থাকো তাই কখনো তোমায় বিরক্ত করতে চাইনা।কিন্তু আজ তোমাকে আমার প্রয়োজন বড্ড ঠেকায় পড়ে এসেছি তোমার কাছে। মেয়েটার কাছে নাফিসাকে পাঠিয়ে ছিলাম কিন্তু মেয়েটি নাকচ করে দেয়।নাফিসা অনেক বার ট্রায় করেছিল তাকে রাজি করাতে কিন্তু মেয়েটা তার দৃঢ় জবাবেই স্থায়ী আছে।আমার বিশ্বাস তোমার এক ইশারায় মেয়েটা সুইয়ের মতো সোজা হয়ে রাজি হয়ে যাবে।
-ওকে তুই যা চাইছিস তাই হবে, তুই এখন মেয়েটা যেখানে আছে সেখানে যা। তুই নিজে একবার বল তোর কথা। যদি রাজি না হয় তবে এই নোমান এনায়েত মেয়েটার সামনে দাঁড়াবে।
-ধন্যবাদ দাদাভাই, তোমাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ। লাভ ইউ ভাই, লাভ ইউ সো মাচ!
-লাভ ইউ মাই লিটেল ব্রাদার।
আরাফ আর নোমান একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে।বাগান থেকে সোজা গেটের বাইরে গিয়ে বাইক স্টাট দেয় আরাফ।দ্রুত বাইকের গতি বাড়িয়ে দিয়ে বাম হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো পেছন দিকে ঠেলে দেয়।ঠোঁটে লেগে আছে তার তৃপ্তির হাসি।হৃদিতা আজ তার সামনে এসে দাঁড়াবে, এবং আগামী দিন গুলোতে বেশ কয়েক ঘন্টা সময় হৃদিতা তার আশে পাশে থাকবে ভাবতেই আরাফের উৎকন্ঠা বেড়ে যাচ্ছে। হৃদিতাকে প্রথম দেখেছিল ঠিক আজ থেকে ছত্রিশ দিন আগে।তারপর থেকেই মাতাল ঝড় রাত বিরাতে তাকে প্রহার করছে।এক মুহূর্তে মেয়েটার কথা ভুলে গেলেই অনুভূতিরা তাকে নতুন করে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
সেদিন ছিল কাঠফাটা রোদের দুপুর। আরাফের বেশ পরিচিত পুরোনো বান্ধবী নেহার জন্মদিন। তাই তাকে উপহার দিতে বাইক নিয়ে সকাল শেষে রওনা হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে মাঝ পথে বিপরীত থেকে আশা একটি গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে নিজের বাইক সহ রাস্তার কিনারায় আছাড় খেয়ে পরে।হাত, পায়ে, হাটুতে অবশ্য বেশ জখম হয় তবুও সব কিছু উপেক্ষা করে দ্রুত বাইক নিয়ে বান্ধবী নেহার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
কিছুক্ষনের মধ্যেই নেহার বাড়িতে পৌছে গেলে আরাফের এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখে হোচট খায় নেহা।দ্রুত বসার ঘরে আরাফকে বসতে বলে ভিতরের রুমের দিকে স্যাভলন আর গজ কাপড় আনতে পা বাড়ায় সে।কেটে যায় বেশ কিছুক্ষন পুরো ঘরেই শুনসান নিরবতা আরাফ অবশ্য আগে থেকেই যানে আজ নেহার দাদীমা বাড়িতে নেই। তাই আরাফ বেশ খুশি মনেই এসেছিল। কেননা নেহার দাদীর খিটখিটে মেজাজের কথা গুলো আরাফের মোটেও সহ্য হয় না। এতক্ষনে বাড়িতে থাকলে আরাফকে দেখলে নিশ্চই চিল্লাফাল্লা করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলতো।
এতোক্ষন চুপচাপ বসে থাকা ছটফটে আরাফের জন্য বড্ড বিরক্তের তাই খুড়ে খুড়ে হেটে পা বাড়ায় ভেতরের রুমের দিকে। চারিপাশ চোখ বুলিয়ে নেহাকে বেশ কয়েকবার ডাক দেয় কিন্তু নেহার সাড়া শব্দ নেই।উপায় না পেয়ে আরেকটু এগিয়ে যায় তখনি অন্য একটি রুমের পর্দা ঠেলে বাইরে আসে হৃদিতা।ভেজা চুল গুলো ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে এগিয়ে আসছে রুমের পর্দা ঠেলে। সেই চুলের পানি ছিটকে পরছে আরাফের চোখে মুখে। আরাফ জড় বস্তুর মতো স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকে হৃদিতার দিকে তাকে যেন এক অদৃশ্য অনুভূতি টানছে।ওরনা ছাড়া হৃদিতা নিজের সামনে কোন অপরিচিত পর পুরুষ দেখেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। থমকে যায় তার সময় মূহুর্তেরা এমন অপ্রতিভ মূহুর্তে কখনো পড়েনি হৃদিতা। তার যখন হুশ আসে তখন বুঝতে পারে তার গায়ে ওরনা নেই দ্রুত রুমে ডুকে দরজায় খিল দিয়ে কাপঁতে থাকে।বিছানার পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলটার উপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে তুলে ঢকঢক করে সম্পূর্নটা শেষ করে এখনো কাপঁছে সে। আল্লাহর কাছে মনে মনে বার বার তওবা করছে।ছিহহ কত বাজে পরিস্থিতির কাঠগড়ায় দাড়িয়েছে সে।
চুপচাপ থমকে দাঁড়িয়ে আরাফ ভাবতে থাকে, কি হয়েছিল একটু আগে? মেয়েটি কে? এত ভয় পেলো কেন মেয়েটি? সব আরাফের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তখনি আরাফকে বকতে বকতে তার সামনে আসে নেহা।
-পায়ের এমন বাজে অবস্থা নিয়ে এখানে এমন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?যা গিয়ে সোফায় বস আমি ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি’।
-মেয়েটা কে রে দোস্ত?
আরাফের কথা শুনেই ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে যায় নেহার।
-কোন মেয়ের কথা বলছিস তুই?
-একটা মেয়ে ছিল,আমার সামনে এসেছে কি মনে করে আবার রুমের দরজা আটকে দিলো!
-ওহ, তুই হৃদিতার কথা বলছিস!সে আমার কাজিন হয়। আমাদের সাথেই থাকে।
-আগে তো দেখিনি মেয়েটাকে?
-আগে দেখবি কি করে এই বাড়িতে এসেছিস দুইবার তাও কোনদিন ঘরে ডুকিস নি এই প্রথম দাদি নেই তাই তুই ঘরে ডুকলি আর এই প্রথম হৃদিতার সাথে তোর দেখা হয়েছে।
-ওহ!
আরাফ একটু দম ফেললো। নেহার সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেও ভেতরটায় তার প্রলয়ংকারী ঝড়ে সবটা মুড়িয়ে দিচ্ছে কেন তার উওরটা বুঝতে পারছে না আরাফ নিজেই।হঠাৎ করেই অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে তাকে। চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছেড়ে আরো একবার মেয়েটার অস্তিত্ব চোখের উপর ভেসে উঠে।তৎক্ষনাৎ সূক্ষ্ণ মস্তিষ্ক তার ভাবনার বিচ্যুতি ঘটিয়ে দেয়।মনে মনে ভাবতে থাকে মেয়েটি হয়তো বা ক্লাস নাইট কিংবা টেনের স্টুডেন্ট।আরাফের সামনে যখন মেয়েটি দাড়িয়ে ছিল লম্বা আরফির বুকের শেষ প্রান্তেই মেয়েটির মাথা গিয়ে ঠেকে।বাচ্চা সুলভ চাহনীতে হয়তো জানান দেয় মেয়েটি আসলেই কিশোরী । আর বোকা আরাফ কি না কত কিছু ভেবে নিয়েছে মেয়েটাকে নিয়ে।নিজের কান্ডে নিজেই বিরক্তির কারন হয়ে যায় সে।নেহা তুলো আর স্যাভলন দিয়ে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করছে অসহ্য যন্ত্রনায় বার বার কেঁপে উঠছে আরাফ।
-তোর কাজিন কিসে পড়ে?নাইন নাকি টেন?
আরাফের কথা শুনে এক গাল হেসে দেয় নেহা।আরাফের মাথা গাট্টা মেরে বলে,
-তুই এখনো পাগল রয়ে গেলি। হৃদিতা তোর সাথেই পড়ে, একই ভার্সিটি তোরা, একই ক্লাস মিট।
নেহার প্রত্যুত্তরে হোচট খায় আরাফ। বড়বড় চোখ করে বলে,
-মেয়েটা আমার বয়সী?
-ধূর কে বলেছে তোর বয়সী?তুই তো বুড়ো ধামড়া ছেলে।আমার সাথে পড়া কালীন ক্লাস সেভেনে একবার ফেল করেছিস আবার নাইন তারপর ইন্টারে গিয়েও ফেল করেছিস,আগে শুনেছিলাম ক্লাস থ্রিতেও ফেল করেছিস এবার ভাব মেয়েটা তোর থেকেও অনেক ছোট।আর তুই বুড়ো ধামড়া এখন ভার্সিটির ফাস্ট ইয়ারে পড়ছিস মেয়েটার সাথে মানা যায় তোকে তো আদুভাই ডাকা উচিত।
নেহার এমন কাঠ কাঠ জবাবে বিরক্ত নিয়ে তাকায় আরাফ। বাম হাতে গাল চুলকিয়ে বলে,
-এইভাবে না বললেও পারিস। বাই দা ওয়ে মেয়েটার নাম কি?
-হৃদিতা মেহেরীন!
নেহার উওর শুনে মাথার উপরে থাকা টিনের চালার দিকে তাকায় সে।টিনের চালের ফুটো দিয়ে তীর্যক ভাবে সূর্যের আলোক রশ্মি আছড়ে পড়ছে সোফার কুশনে।আরাফ বেশ কয়েকবার মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
-হৃদিতা!কি নাম রে বাবা। একবার দেখায় আমার হৃদয়ে আগুনের চুল্লি জ্বালিয়ে দিয়েছে।আর নামটাও যেন তার সাথে যায়।
-আরাফ তোকে একটা কথা বলি, অনেক মেয়ের সাথেই ফ্লার্টিং করেছিস খবরদার আমার কাজিনের দিকে নজর দিবিনা । সে কিন্তু অন্য মেয়েদের মতো না, কিছুটা ধার্মিক স্বভাবের ছেলেদের সাথে মেলামেশাতে সে অভ্যস্ত নয়। তুই ওর সাথে কোন রকম মেলামেশার চেষ্টা করবিনা।
নেহার কথা শুনে গুমরে যায় আরাফ।মনে মনে সিধান্ত নেয় হৃদিতার সাথে ভুলেও কোন রকম মজা কিংবা ফ্লার্টিং করবেনা বরং আড়াল থেকে হৃদিতাকে নিরাপত্তা দেবে।
আরফির সব পরিকল্পনার স্থায়ী আর বেশি দিন রইলো না মাত্র ৩৩ দিনেই হৃদিতার প্রতি জমে গেছে রাগ, ক্ষোভ প্রতিহিংসা।মনে মনে সিধান্ত নেয় হৃদিতাকে আর শান্তিতে থাকতে দেবে না বরং এখন থেকে চব্বিশ ঘণ্টাই হৃদিতাকে কি করে জ্বালানো যায় সেই ব্যবস্থাই করবে সে।
বাইক নিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই ক্যাম্পাসের পেছনের রাস্তাটায় পৌছে যায় আরাফ। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে হৃদিতাকে ঘিরে, আরাফের বন্ধুরা-,লিবান,শাকীল,নাফিসা।বাইকটা সাইড করে দ্রুত তাদের দিকে এগিয়ে আসে সে।কালো বোরকা সঙ্গে নিকাব বাঁধা মেয়েটার চোখ দুটো দেখেই থমকে যায়। নিজের বন্ধু সুলভ হাসি হাসি মুখটা লুকিতে চোখে মুখে নিয়ে আসে গম্ভীর্য বেশভূষা।
-মিস হৃদিতা আপনার সঙ্গে কিছু কথা ছিল!
-আমি আপনাকে চিনি না, আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই আপনার বন্ধুদের বলুন আমায় যেতে দিতে অনেক্ষন থেকে আমায় এখানে আটকে রেখেছে।
হৃদিতার এমন কাঠ কাঠ জবাব কিছুতেই আশা করেনি আরাফ। সে ভেবেছিল মেয়েটা হয়তো ভীতু প্রকৃতির। কিন্তু হৃদিতার এমন কাঠিন্য জবাবে আরাফের মনের তেজ শত গুনে বেড়ে যায়। তাই না চাইতেও হৃদিতাকে লজ্জায় ফেলতে চোখ থাকা সানগ্লাসটা দ্রুত নামিয়ে ভ্রু প্রসারিত করে বলে,
-আমাকে সত্যি চিনতে পারছে না রিয়েলি?
আরাফকে ঠোঁট কামড়া হাসতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায় হৃদিতা। সেদিনের নিলর্জের মতো বিষয়টি মনে পড়তেই ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ডুকে যেতে।
-আমাকে কি জন্য ডেকেছেন তা বলুন। অন্য কথা শুনতে চাই না।
-আমার ফ্রেন্ড নাফিসা আগেই আপনাকে বলেছে।এখন থেকে আপনি আমায় ভার্সিটির ক্লাস শেষে পড়াবেন মানে আপনি আমার শিক্ষিকা।
-নো নেভার কখনো না। আপনাদের মতো এমন বেহায়াপনা ছেলে মেয়েদের সাথে আমি মিশতে চাইনা আর আপনি তো চরম অসভ্য। আমায় মাফ করবেন আমি চললাম।
হৃদিতার এমব নির্ভয় জবাবে বেশ অবাক হলো পাশে থাকা আরাফের বন্ধু গুলো কিন্তু মনে মনে বেশ রাগ লাগলো আরাফের।অপ্রাপ্ত চাওয়াটা যেন প্রাপ্ত হতে মনে মনে ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়।
-যানতাম এমন ঘাড় ত্যারামো করবে তাই তোমার ঘাড় সোজা করার মতো ব্যবস্থা আমার করা আছে।যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
হৃদিতার এবার কিছুটা ভয় লাগছে এতগুলো ছেলে মেয়ের সাথে সে কখনোই টিকতে পারবেনা।উলটা পালটা কিছু করে দেবে না তো।হাজারো ভয় থাকা শর্তেও নিজেকে বাইরে থেকে দৃঢ় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
আরাফ কিছুটা দূরে গিয়ে নোমানকে ফোন করে তখনি নোমান তার দল বল নিয়ে হাজির হয়।নোমানকে দেখেই ছিটকে দুই কদম পিছিয়ে যায় হৃদিতা।
এই লোকটাকে ভালো করে চেনে সে।নোমান এনায়েত। এলাকায় নাম করা একজন মানুষ। রাজনীতির পাশাপাশি, দলবল নিয়ে সন্ত্রাসবাদী করাও তার মুখ্য কাজ।সেদিন চাদা না দেওয়ায় বাজারে তার নির্দেশে একজন ব্যবসায়ীকে উলটো করে ঝুলিয়ে সবার সামনে প্রহার করে আর তা নিজের চোখে দেখতে পায় হৃদিতা। এর আগেও নোমানের হিংস্রতা সম্পর্কে অবগত হয়েছে হৃদিতা। এবার নোমানকে দেখেই হৃদিতার হাত পা কাপঁতে থাকে।
নোমান এক হাতে আরাফকে আগলে ধরে হৃদিতার সামনে দাড়ায়।তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-শোন মেয়ে তুমি তো ওয়ালীদের বাড়িতেই থাকো।পশ্চিম বাজারেই ওয়ালীদ মুদি দোকান করে আমি তাও যানি। এই তো গত মাসেই পাচঁ হাজার টাকা চাঁদা তুলেছিল তার দোকান থেকে আমার লোক।তোমাকে একটা অফার করছি আমার ছোট ভাইটা যা বলছে মেনে নাও না হলে ওয়ালীদের দোকানটা আর থাকবে না। যদি তুমি মেনে নাও তবে ওয়ালীদ থেকে কেউ কোন চাঁদা নেবে না। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
নোমানের কথা শেষ হতেই ঢোক গিলে হৃদিতা। এমনিতেই সে বাড়িতে থাকা নিয়ে ওয়ালীদের মা তাকে নানান কথায় খোটা দেয় তার উপর যদি যানে হৃদিতার কারনে দোকান বন্ধ হয়ে গেছে তবে এই বুড়ি কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ছাড়বে।হৃদিতার ভয় এখনো কাটেনি সে কাঁপাকাঁপা সুরেই বলে,
-আ..আমি আপনার ভাইকে পড়াবো। কোন সমস্য নেই আমার।
হৃদিতার উওর শুনেই ঠোঁট কামড়ে হাসে আরাফ।নোমান চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে আরাফের পিঠ চাপড়ে চলে যায়। যতক্ষন নোমান উপস্থিত ছিল প্রায় ততক্ষন হৃদিতা সহ আরাফের বন্ধু সবাই ভয়ে অসাড় হয়ে ছিল। কারন নোমান মানেই আগুন!
আরাফ ইশারা করে তার আশে পাশে সব বন্ধুকে সরে যেতে বলে,সবাই ঠিক মুচকি হেসে সরে যায়। হৃদিতাকে একা পেয়ে এক পা দুই পা করে এগিয়ে যায় তার দিকে,
-সুন্দরি দেখলে তো কেমন কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছি, উকিল যা শেখালো তাই বলতে হলো তোমায়।
-হ্যা এইসব চোর ছ্যাচোড়কে এখন শিক্ষা দিতে হবে আমায়।অসভ্য, ইতর!
-এই চোরের বসবাসরত জেল খানায় বন্ধী হবি তুই, দেখে নিস কাল থেকেই শুরু তোর উৎপীড়ন।বড্ড ভালো তুই সেই ভালোই তোর জীবনে কাল হবে মিলিয়ে নিস।আর আমাকে চোর বলিস তাই না, কথায় আছে চোরের সাক্ষী মাতাল।তুই নিজেই চোর বড্ড নেশালো যার চাহনীতে মাতাল আমি।
শেষ কথা গুলো বিড়বিড় করে বলছিল আরাফ।হৃদিতা ভ্রু কুচকে বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে অন্যদিকে।তার সব কিছু বিরক্ত লাগছে এখন দানবের মতো লম্বা মানুষটার সামনে নিজেকে কেমন পিপড়ে পিপড়ে লাগছে এখনী যেন তাকে তুলে আছাড় দিতে সক্ষম সে।
-আমি তাহলে এখন আসি আদুভাই!
হৃদিতার হঠাৎ অপমান সূচক কথা শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো আরাফ।
-এই মেয়ে কি বললি আমায়?কে আদুভাই?
-স.সরি আরাফ ভাই বলতে আদুভাই বলে ফেলেছি।
হৃদিতা দ্রুত সোজা হাটতে শুরু করে মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
-যেমন নাম তেমন কাম।আদুভাই – আরাফভাই বাহ বাহ! দোয়া করি আপনার ভবিষ্যৎ বাচ্চাটাও যেন এইভাবে প্রত্যক ক্লাসে ক্লাসে ফেল করে তবে সমাজ সচক্ষে এমন আদুভাইয়ের কাহিনি দেখতে পাবে।
আরাফ রাগে গিজগিজ করছে আর বড্ড রাগ লাগছে মেয়েটার উপর।
-দেখে নেবো তোকে অসভ্য মেয়ে!অবশ্য দেখার কি আছে তোকে তো আমি আগেই দেখে নিয়েছি ইসসস সে কি লজ্জা।
আরাফ হৃদিতার দিকে তাকিউএ লজ্জা ভঙ্গিতে হাসতে থাকে।
– আমাকে অসভ্য বলেছিস এই অসভ্যর সাথে থাকতে থাকতে তুই নিজেও অসভ্য হয়ে যাবি দেখেনিস।বেশি ভালো তুই এই ভালো হওয়ার কারনটাই তোর জন্য সবচেয়ে কালকূট হয়ে দাঁড়াবে।আলোর সাথে যেমন আধাঁরের মিল, তেমনি ভালোর সাথে মন্দের আর সভ্যর সাথে অসভ্যর মিল।তুই সভ্য আমি অসভ্য!
চলবে…….