মেঘকন্যা Part_16_Extra,17

মেঘকন্যা
Part_16_Extra,17
Writer_NOVA
Part_16_Extra

তারপর চোখ দুটো ফট করে খুলে ফেললাম। যতটা ধড়ফড়িয়ে উঠতে চাইলাম শরীরে বিশাল ভারী ওজনের কারণে উঠতে পারলাম না।নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম।এতক্ষণ যা দেখছিলাম সব স্বপ্ন ছিলো।এরকম অদ্ভুত স্বপ্ন দেখার মানে কি?সারা শরীর বেশ শীত করছে। তারপরও আমি দরদর করে ঘামছি।আসলেই কি আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম নাকি সত্যি ছিলো?গায়ে চিমটি কেটে দেখি তো।কিন্তু চিমটি দেওয়ার জন্য তো হাত উঠাতে পারছি না।দূর থেকে ফজরের আজান ভেসে আসছে। আজানের শব্দ পেয়ে অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম।ছোট বেলা থেকে লোকমুখে শুনেছি,আজানের আগের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।তাহলে আমি যা দেখেছি তাও সত্যি হবে।

আমিঃ ঐ ছেলেটা কি জানি বলেছিল?আয়িশ আমার স্বামী। কিন্তু কিভাবে?স্বপ্নের কথা বিশ্বাস করে কি আমি আয়িশকে স্বামী হিসেবে মানবো।এটা তো নিত্যান্ত বোকামি ছাড়া অন্য কিছু নয়।কিন্তু আমার মাথা খাটাতে হবে।

নিজের সাথে যুদ্ধ করতে লাগলাম।একে একে সবকিছু আমার কাছে খোলসা হতে লাগলো।একের পর এক জট খুলতে লাগলো।অপরদিকে কেউ আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে ঘুমোচ্ছে।তার হাতটা আমার কোমড় জড়িয়ে রাখা।প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। অনেক দিন পর সেই চিরচেনা ঘ্রাণ পাচ্ছি রুমে। সাথে হিম শীতল বাতাস।

আমিঃ আচ্ছা, আমাকে যে জরিয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। সে কি আয়িশ?আমি তো একমাত্র আয়িশের মনের কথা শুনতে পাই না।তাছাড়া বিয়ের দিন আয়িশকে আমি সবার আগে রাস্তায় পেয়েছিলাম।আয়িশকে আমার সবসময় অন্যরকম মনে হতো।মানে আমাদের পৃথিবীর নয়।কিরকম অদ্ভুত অদ্ভুত লাগতো।এখন আমার মাথায় সব খেলছে।ও তো সবসময় আমার মনের কথা বুঝে নিতো।কখনো কিছু বলতে হতো না?জিজ্ঞেস করলে বলতো, ও নাকি এমনি বুঝতে পেরেছে। আমার বিপদে সবার আগে আমি ওকে কাছে পেতাম।তাহলে কি সত্যি সেদিন আয়িশের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। তাহলে এতদিন আমার সাথে যে ছিল, যাকে আমি জ্বীন বলে জানতাম। সে আর কেউ না আমার আয়িশ।কিন্তু কিভাবে?আয়িশ অদৃশ্য হতে পারে? আমার আগে অনেকবার মনে হয়েছে আয়িশের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন শক্তি আছে। ও কিরকম অদ্ভুত টাইপের।কিন্তু এখন আমি কিভাবে বুঝবো ও আমার স্বামী। এখন যে আমার সাথে আছে,সে কি আয়িশ?ছেলেটাকে দেখবো কিভাবে? নিশ্চয়ই অদৃশ্য হয়ে আছে।

খুব কষ্ট করে হাত ছুটিয়ে নিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম।তাকে ঠেলে ধাক্কিয়ে আমার থেকে সরালাম।
সে আমাকে ছেড়ে অন্য দিকে সরে গেল।তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু ঘুমের ঘোরে বন্ধ করে রেখেছি।মোবাইলের আলোতে আমি দেখতে পেলাম একটা ছেলে উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। বুকটা ধক করে উঠলো।পেছনের সাইডটা পুরো আয়িশের মতো দেখতে।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে আয়িশকে যেই সরাতে নিবো, আব্বি নামাজের জন্য ডাক দিলো।আমি দরজার দিকে পুরো ধ্যান দিলাম,আব্বির কথা শোনার জন্য।

আব্বিঃ মেঘা,মেঘা মা-মণি। ফজরের আজান হয়ে গেছে। নামাজ পরতে উঠে পরো।নামাজ কাযা করো না।সবার আগে নামাজ তারপর ঘুম। নিশ্চয়ই ঘুম থেকে সালাত উত্তম।

আমিঃ উঠছি আব্বি।তুমি মসজিদে চলে যাও।বাইরে থেকে গেইটে তালা মেরে যেও।

আব্বিঃ তোমার আম্মিকে তুলে দিও।আমি ডাক দিয়ে এসেছি। তবুও যদি না উঠে। তাই তোমাকে বললাম।

আমিঃ আচ্ছা আব্বি।

আব্বি নামাজ পরতে মসজিদে চলে গেল।আমি ফ্লাশ লাইট বিছানার দিকে মেরে আৎকে উঠলাম।বিছানায় কেউ নেই। আমি স্পষ্ট দেখেছি এখানে কেউ ছিলো।জলদী করে লাইট জ্বালিয়ে এদিক সেদিক খুঁজলাম। কিন্তু কোথাও নেই।

আমিঃ আয়িশের রুমে চেক করে দেখিতো ও রুমে আছে কিনা।দরজাটা বন্ধ। গেল কিভাবে? আমিও না।মাথা পুরো গেছে।যার আসতে কোন দরজা লাগে না, বাইরে যেতে দরজা কেন লাগবে?

🌨️🌨️🌨️

যেমন ভাবা তেমন কাজ। ছুটে গেলাম আয়িশের রুমে। ওর রুমের দরজা আবজানো থাকে।আম্মি লাগাতে মানা করেছে। যদি মাঝরাতে কিছু হয় তাই।
আমি দরজা ঠেলে উঁকি দিয়ে দেখলাম আয়িশ উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। আমি কি তাহলে ভুল দেখলাম।গুটি গুটি পায়ে নিজের রুমে গিয়ে ওযু করতে ওয়াসরুমে ঢুকে পরলাম।

আয়িশ এক লাফে বিছানায় বসে বুকে ফুঁ দিলো।আর এক মিনিট রুমে থাকলে মেঘার কাছে ধরা পরে যেতো।তিনবার সূরা ইখলাস পরে বুকে ফুঁ দিলো।

আয়িশঃ আরেকটু হলে ধরা পরে যেতাম।আল্লাহ তোমার দরবারে লাখো কোটি কোটি শুকরিয়া। আজ হঠাৎ আমার বউয়ের কি হলো?ওর মনে কিছু একটা খিচুড়ি পাকাচ্ছে।এতো তাড়াতাড়ি কি ও জেনে যাবে আমার পরিচয়। তাহলে ওর জন্য বিপদ।

আয়িশ দুই হাঁটু মুড়ে দুই গালে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবতে লাগলো।কি করবে?

দিন গড়িয়ে রাত নামলো।সারাদিন খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাইনি।আয়িশকে এক প্রকার এড়িয়ে চলি।
সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছি। আয়িশ, আব্বির সাথে দেশের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।আমি খাবার নেড়েচেড়ে সকালের স্বপ্নের কথা ভাবছি।
কিছুতেই স্বপ্নটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। আমার বারবার মনে হচ্ছে এটা আমার সাথে ঘটবে।কথা বলার ফাকে ফাকে কিছু সময় পর পর আয়িশ আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। আমি ওর থেকে এখন দূরত্ব বজিয়ে রাখি।কোন কথা বলি না।স্বপ্নের কারণে নয়।আমাকে একদিন টিকটিকি দিয়ে ভয় দেখিয়েছে।সেদিন ভয়ে ওকে জরিয়ে ধরেছিলাম।তখন মনে হয়েছে ওর ছোঁয়া আমার খুব চেনা।কোন রকম খাবার শেষ করে রুমে চলে গেলাম।সারা রুমে পায়চারি করছি আর বিরবির করছি।

আমিঃ আয়িশ কোন সাধারণ ছেলে নয়।কারণ ও যে আঘাত পেয়েছিলো তা কোন সাধারণ মানুষের ৪ দিনে ভালো হওয়ার কথা নয়।কমপক্ষে ১ মাস লাগবে।কিন্তু আয়িশ পুরো সুস্থ। আসলেই আয়িশ কে?ওর বাবা-মায়ের কথা বললে রেগে যায় কেন?আমার ওর পরিচয় এবার বের করতেই হবে।ও কি সত্যি আমার স্বামী?যদি সত্যি আমার স্বামী হয় তাহলে আমার কাছ থেকে লুকাচ্ছে কেন?আমি ওর পেছনের সব রহস্যের সমাধান খুঁজে বের করবোই করবো। আচ্ছা আম্মি,আব্বির সাথে ভাব নিয়ে দেখিতো তারা আয়িশের বিষয় কিছু জানে কিনা।

দরজা খুলে উকি মেরে আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম আয়িশ আছে কিনা।ওকে না দেখে আম্মির রুমের দিকে হাঁটতে লাগলাম।রুমের সামনে এসে আমি শুনতে পেলাম তারা কোন বিষয় কথা বলছে।আম্মির মুখে আয়িশের নাম শুনে আমি লুকিয়ে রইলাম দরজার আড়ালে।তারা কোন একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।আমি কান খাঁড়া করলাম।তারপর আমি যা শুনলাম তাতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।তারা বলছিল___________

চলবে

#মেঘকন্যা☁️
#Part_17
#Writer_NOVA

অঙ্গরাজ্য…….

ইশাল ঘুম থেকে উঠে দুই হাতে বেশ জ্বালা অনুভব করলো।বেশ অবাক হয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। দুই হাতে অগণিত বড় বড় রক্ত ফোস্কা পরে আছে।পুরো লাল টকটকে হয়ে আছে।ধরলেই ফেটে রক্ত পরবে।কিন্তু ঘুমানোর সময় তো দুটো হাত ঠিক ছিলো।এখন ঘুমের মধ্যে এই অবস্থা কি করে হলো?ষাঁড়ের মতো চেচিয়ে তার পিতাকে ডাকলো।

ইশালঃ আব্বাজান, আব্বজান। কোথায় আপনি?জলদী আসুন। দেখে যান কি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে।

রাজা সবে মাত্র রাজদরবারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।ইশালের চিৎকার শুনে ছুটে ওর কক্ষে ছুটে এলো।দেখলো ইশাল পালঙ্কে মুখ গোমরা করে বসে আছে।কিছু একটা ভাবছে।

রাজাঃ কি হয়েছে পুত্র? ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো ম্যা ম্যা করছো কেন?আমার কি খেয়ে-পরে কোন কাজ নেই নাকি।সবসময় তোমাকে নিয়ে পরে থাকলে রাজ্য কে চালাবে?সামনে মেঘরাজ্যের সাথে আমাদের যুদ্ধ। কত প্রস্তুতি বাকি আছে। তুমি তো কাজের কাজ কিছু করো না। বরং আমার সময় নষ্ট করো।তোমাকে নিয়ে আমি আছি মসিবতে।

ইশালঃ আপনার বকবকানি শেষ হয়েছে। শেষ হলে আমি কিছু কথা বলতাম।(শান্ত কন্ঠে)

পুত্রের শান্ত কন্ঠ শুনে রাজা বেশ অবাক হলো।তার পুত্রের মনে যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় ঘুরে তখনি সে এমন মারাত্মক ভঙ্গিতে থাকে।

রাজাঃ কি হয়েছে পুত্র?
ইশালঃ আমার হাতের দিকে তাকান।
রাজাঃ একি!!!! তোমার হাতের এই অবস্থা হলো কি করে?কোথা থেকে এরকম করে এলে?
ইশালঃ ঘুম থেকে উঠে দেখি এই অবস্থা।
রাজাঃ তুমি কি মেঘকন্যাকে স্পর্শ করেছো পুত্র? একমাত্র কন্যাকে স্পর্শ করলেই তোমার হাত এই অবস্থা হবে।

ইশাল কিছু সময় খুব মনোযোগ সহকারে কিছু একটা ভাবলো।তখনি মনে হলো সে আজ মেঘাকে স্বপ্নে দেখাছে।যেখানে সে মেঘাকে কখনো গলায় চেপে তো কখনো মুখ চেপে ধরেছে।তাছাড়া একটা চড়ও মেরেছিলো।যার কারণে ইশালের হাতের এই অবস্থা।
ইশাল ও মেঘা একি স্বপ্ন দেখেছে।

ইশালঃ আব্বাজান আমি স্বপ্নের মধ্যে মেঘকন্যাকে দুই হাত দিয়ে আঘাত করেছি।

রাজাঃ এই কারণে তোমার হাতের এই অবস্থা। তুমি ঐ মেয়েটাকে নিয়ে এখনো কেন পরে আছো বলো তো।বাস্তবে ওকে ছুঁতে গিয়ে জোরে ঝাটকা খেয়েছো।স্বপ্নে যাকে ছোঁয়ার দরুন তোমার হাতের বাজে অবস্থায়। তাহলে ভেবে দেখো তো সত্যি তুমি যদি ওকে ছুঁতে যাও তাহলে তোমার অবস্থা কি হবে?কয়েক সেকেন্ডে তুমি জ্বলে পুরে ছারখার হয়ে যাবে।

ইশালঃ স্বপ্নটা দেখে ভালো করেছি আব্বাজান।কারণ আমি পরবর্তী পরিকল্পনা এই স্বপ্ন অনুযায়ী হবে।

রাজাঃ তুমি কি দেখেছো আমাকে একটু বলো তো।

ইশাল পুরো স্বপ্নটা রাজাকে বলে দিলো।রাজা বেশ অবাক হলো।কারণ স্বপ্নের মধ্যে একটা সুন্দর করে পরিকল্পনা দেওয়া আছে।যা ওদের মাথায় কখনি আসেনি।একি স্বপ্ন দুজনে দেখার কারণটা কি?কারণ হলো একজনকে কিছু অজানা সত্যি জানানো।আরেক জনকে তার পরিকল্পনা বোঝানো।

রাজাঃ তুমি যখন স্বপ্নে মেঘকন্যাকে স্পর্শ করেছে আমি নিশ্চিত তখন আয়িশ ওর সাথে ছিলো।মেঘপুত্র কন্যার আশেপাশে থাকলে তুমি তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। বরং নিজে অপদস্ত হয়ে ফিরবে।মনে রেখো পুত্র, মেঘা এখনো নিজের শক্তি ব্যবহার করতে পারে না। কন্যা তার শক্তি ব্যবহার শেখার আগে তোমাকে তোমার কাজ হাসিল করতে হবে।

ইশালঃ এর মানে হলো রাতে আয়িশ মেঘার সাথে ছিলো।যার কারণে স্বপ্নে আমি স্পর্শ করায় আমার হাতের এই অবস্থা। আমি ছারবো না আয়িশকে। ও অনেক বাড়াবাড়ি করছে।

রাজাঃ মাথা ঠান্ডা রাখো পুত্র। স্বপ্ন যোগে তুমি নতুন পরিকল্পনা পেয়ে গেছো।সেটাই কাজে লাগাও।এবার তোমার জিত হবেই হবে। কিন্তু তার জন্য তোমাকে কন্যাকে একা পেতে হবে।যাতে তুমি তাকে তুলে নিয়ে ঘন জঙ্গলে আটকে রাখতে পারো।কন্যা যদি কোনভাবে বাসার থেকে একা বের হয় তাহলে সাথে সাথে সুযোগ কাজে লাগাবে।এখন হাত দেও ঔষধ লাগিয়ে দেই।

রাজা ঔষধ এনে ইশালের হাতে লাগাতে থাকলো।ইশাল পরবর্তী পরিকল্পনা মনে করে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। এভাবে যে স্বপ্নে সে এত সুন্দর একটা পরিকল্পনা পেয়ে যাবে তা কল্পনাও ভাবে নি।

🌨️🌨️🌨️

ছাদে দাঁড়িয়ে একা একা চোখের পানি ফেলছি।সবাই আমাকে এভাবে ধোকা দিলো।কেউ আমাকে সত্যটা জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না।আমি কি মেনে নিতাম না সবটা।পুরো ঘটনা খুলে বললে কি হতো?খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।গত পরশু রাতে আম্মি-আব্বির রুমে গিয়ে আমি তাদের কথাবার্তা শুনতে পেয়েছি।

পরশু রাতে……

আম্মিঃ আমি বলি কি এবার আমাদের ঘটা করে আয়িশ ও মেঘার বিয়েটা দিয়ে দেওয়া উচিত।সেদিন কিভাবে বিয়ে হয়েছিল তাতো আমরা জানি না।

আব্বিঃ কিন্তু আমি চিন্তা করছি অন্য বিষয়ে।মেঘা যদি জানে আমরা ওকে না জানিয়ে পুরো বিষয়ে ছিলাম।তাহলে আমরা যে ভয় পাচ্ছি তাই হবে।

আম্মিঃ আমাদের কি দোষ বলো?আমাদের মেয়ের জামাই মানে আয়িশ তো বললো ওকে কিছু না বলতে।মেঘার যে আয়িশের সাথে বিয়ে হয়েছে সেটা শুধু তুমি আমি ও আয়িশ জানি।মেঘা এখনো জানে না। ও জানলে আমাদের ভুল বুঝবে এটা স্বাভাবিক। তবে আয়িশ বেশি দিন এখানে থাকলে লোক আজে বাজে কথা বলবে।তাই আমি চাই ঘরোয়াভাবে কাজী ডেকে আবার বিয়ে পরালে খারাপ হয় না।তাহলে লোকের কথার থেকে তো বাঁচবো।

আব্বিঃ আমিও সমস্যাটা ফেস করছি।লোকমুখে শুনছি, ঘরে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে রেখে আমি অন্য একটা যুবক ছেলেকে কি করে বাসায় ঠাঁই দিয়েছি?কিন্তু তারা তে জানে না আয়িশ আমাদের মেয়ের জামাই।

আম্মিঃ আয়িশ যদি আমার মেয়ের জামাই না হতো তাহলে কি আমি ওকে একা ওর রুমে মেঘাকে রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম বলো।আমরা তো সেই ছোট বেলা থোকে জানতাম আমাদের মেয়ের আয়িশের সাথে বিয়ে হবে।সেটা আমাদের স্বয়ং আয়িশের বাবা জানিয়েছে।

আব্বিঃ আমি বুঝতে পারছি না কি করবো? তবে তোমার বুদ্ধিটা খারাপ নয়।আমি দেখি আয়িশের সাথে কথা বলে।ও কি বলে?ওর থেকে ভালো কোন ছেলে আমি দেখিনি।মেঘার জন্য নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু ভয় করছে। আমার মেয়ে যদি কখনো শত্রু পক্ষের কথা শুনে ওর ক্ষতি করে বসে।

আম্মিঃ তুমি চিন্তা করো না।আল্লাহ যা করে তা ভালোর জন্য করে।আয়িশের মতো ছেলের সাথে আমাদের মেয়ে কখনো এমন করবে না। কারণ আয়িশ ওর স্বামী। তারপরেও যদি নিজের স্বামীর ক্ষতি নিজে করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। আমার তো মনে হয় মেঘাও আয়িশকে পছন্দ করে।

আব্বিঃ মেঘা যদি ওকে পছন্দ করে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। আমি এতে অনেক খুশি।আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেনো ওদের মিল করে দেয়।

আমি আর কোন কথা শুনলাম না।মুখ আটকে সেখান থেকে ছুটে নিজের রুমে চলে এলাম। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। দরজা বন্ধ করে চিৎকার পেরে কান্না করলাম।তারা আমার কাছ থেকে কেন এতকিছু লুকালো।তারা আগের থেকে জানতো আয়িশের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আমি এবার নিশ্চিত আয়িশ আমার স্বামী। এই কথাগুলো জানার পর থেকে আয়িশকে আমার সহ্য হচ্ছে না। ওর নাম শুনলে রাগ উঠছে। এক দন্ড ওকে দেখতে পারছি না।এখন আমি পুরো দমে ওকে এড়িয়ে চলি। কেন জানি আমার ভালো লাগাটা এখন বিরক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমার খুব রাগ হয়েছে আয়িশের ওপর।

🌨️🌨️🌨️

হঠাৎ ভাবনায় ছেদ পরে আয়িশের কথায়।কখন যে আয়িশ আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে আমি খেয়াল করি নি।অবশ্য খেয়াল করবো কি করে? ওর মনের কথা তো আমি শুনতে পাই না।

আয়িশঃ নে মাল্টি কালার তোর কফি।আমি নিজ হাতে বানিয়ে এনেছি। তোর ফেভারিট চকলেট কফি।

আমি ওকে এড়িয়ে অন্য দিকে সরে আসলাম।ফাঁকের ওপর চোখ মুছি নিলাম।ওর মুখটাও আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না।আব্বি, আম্মির কথাগুলো শোনার পর থেকে আয়িশ আমার কাছে অসহ্যকর একটা নাম।আমি নিজেও বুঝতে পারছি না ওকে আমার এতো অসহ্য কেন লাগছে।আমি কতবার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু নিজের মনকে আমি কন্ট্রোল করতে পারছি না।

আয়িশঃ কি রে নে ধর?এত কষ্ট করে তোর জন্য বানিয়ে আনলাম আর তুই খাবি না।আচ্ছা ঠিক আছে আমিই তাহলে দুটো খেয়ে নেই।

আমি ওকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলাম।ও দুই হাত মেলে আমাকে আটকে চোখ মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।

আয়িশঃ তোর কি হয়েছে বলতো?তুই আমাকে এড়িয়ে চলছিস কেন?কয়েক দিন ধরে আমার সাথে ভালো করে কথা বলিস না।কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিস না।আমার সামনে আসিস না।গতকাল সকাল থেকে দেখছি আমাকে দেখলে তুই বিরক্তি হচ্ছিস।হয়েছে টা কি বলবি কি আমায়?কোন ভুল করে থাকলে বল।আমি ১০০ বার কান ধরে উঠবস করতেও রাজী।কিন্তু মুখ গোমরা করে থাকিস না। আমার অনেক খারাপ লাগে।

আমিঃ কিছু হয়নি।(মুখ গোমড়া করে)

আয়িশঃ কিছু একটা তো হয়েছে? তুই বলবি নাকি আমি তোর মাথায় কফি ঢালবো।বাই দ্যা রাস্তা, আটার বস্তা। তোর জন্য আগামীকাল অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে।(খুশি হয়ে)

আমিঃ আমি ইতিমধ্যে অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ পেয়ে গেছি।যাতে আমি পুরো শর্কড।তাই নতুন করে কোন সারপ্রাইজ পেতে চাইছি না। কারণ একসাথে এতো সারপ্রাইজ আমি হজম করতে পারবো না।

কথাটা বলে এক মিনিটও সেখানে থাকলাম না।কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলাম।কেন আমাকে না জানিয়ে সবাই এই কাজটা করলো।জানিয়ে করলে কি সর্বনাশ হতো।

মেঘা যাওয়ার পর আয়িশ নিজের হাতে থাকা কফির মগ দুটো রাগে এক আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো।আয়িশের কপালের রগ ফুলে ফেঁপে উঠছে। চোখ দুটো নিমিষেই লাল হয়ে গেলো। তবে প্রিয় মানুষটার অবহেলায় বুকের বা পাশটা একটু বেশি ব্যাথা করছে।

আয়িশঃ আমি ঠিক এই ভয়টাই তোকে নিয়ে পাচ্ছিলাম।আর তুই সেটা সত্যি করে দিলি।কেন আমার সাথে এমন করছিস?নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ কেন করতে পারছিস না?সব উত্তর আমার জানা আছে।তার জন্যই তো তোকে কিছু বলতে চাইনি।কিন্তু সত্যি তো কখনো লুকিয়ে থাকে না।একদিন না একদিন ঠিক বের হবে।তা এখন বের হয়েই গেছে। তাই তো এখন আমাকে সহ্য করতে পারিস না।তুই কবে নিজের শক্তি একা ব্যবহার করতে শিখবি?আমাকে নিজের করে নিবি।বল না রে? আল্লাহ আমাকে এতো পরীক্ষার মধ্যে কেন ফেলছে।আমি যে আর পারছি না।সবকিছু একা সামলাতে সামলাতে আমি ক্লান্ত। এই ক্লান্তি দূর করতে আমার তোকে প্রয়োজন মেঘপরী।তুই আমার বেঁচে থাকার কারণ।তুই যদি আমায় ছেড়ে যাস তাহলে আমি কোথায় যাবো?পৃথিবীতে থাকাই তো তোর জন্য। তুই বিহীন আমি হয়তো জীবিত লাশ হয়ে থাকবে।তুই যত অবহেলা করিস আমি তোকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।অনেক ভালবাসি আমার বউটাকে।তবে তুই যদি চাস তাহলে অনেক দূরে চলে যাবো।অনেক দূরে,কখনো তোর সামনে আসবো না।

আয়িশের চোখ দিয়ে ওর অনরবত পানি পরছে। নিজেকে আজ বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তার।সব ছেড়ে পৃথিবীতে যার জন্য পরে আছে। সেই আজ তাকে সহ্য করতে পারছে না।মেঘা তো ওর সাথে কখনি এমন করে নি।হঠাৎ কি হলো?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here