মায়াবিনী মানবী,পর্ব_১০,১১

মায়াবিনী মানবী,পর্ব_১০,১১
হুমাশা_এহতেশাম
পর্ব_১০

বুজলা, ভালোবাসা জিনিসটা ভাইগ্যে থাকলে চাইরদিকে সুখ আর সুখ দেহা যায়। আর না থাকলে চাইরদিকে সুখের মইধ্যেও দুঃখ ছাড়া আর কিছু খুইজা পাওয়া যায় না।

লিপির কথা জুইঁর কাছে কিছু টা বোধগম্য হলো আবার কিছু টা হলো না।কথাটার মর্ম সে বুঝতে পেরেছে।কিন্তু হঠাৎ করেই এমন কথা কেন বলল সেটা জুইঁর জানা নেই।

আসলে তখন জুইঁ লিপির রুমে একটা কথা জানার জন্য আসে।লিপি মানুষ টা খুব ভালো। তার বহু গুণের মধ্যে একটা গুণ হলো একটু বেশি কথা বলা।কারো সঙ্গে কথার মজলিসে বসলে পেটের সব
কথা উগলে দিবে।এমন মানুষ জীবনে থাকলে একশো ভাগের মধ্যে পঞ্চাশ ভাগ সময় তারা কাজে আসে আর পঞ্চাশ ভাগ অকাজে আসে।মূলত জুইঁ আলআবির সম্পর্কে ই জানতে এসেছে তার কাছে।

লিপির রুমে এসে দেখে লিপি কেবলই পান মুখে তুলছে।জুইঁ কে দেখে পান ভর্তি মুখ নিয়েই একটা হাসি দিলেন।জুইঁও হাসির বদলে তাকে হাসি ফেরত দিল।

জুইঁ ধীর পায়ে এসে লিপির বিছানায় বসে পরল।জুইঁর জানা মতে লিপির সঙ্গে এখন একটু কথা বললেই লিপি গল্পে মশগুল হয়ে যাবে।জুইঁ খুব বুদ্ধি খাঁটিয়ে লিপির সঙ্গে কথা বলতে লাগলো। একপর্যায়ে দুজনই গল্পের জ্বালে আটকা পরতেই জুইঁ লিপিকে জিজ্ঞেস করল…

–আচ্ছা আলআবি ভাইয়া কে কেমন লাগে আপনার? মানে মানুষ হিসেবে?

লিপি পানের শেষ পিকটা ফেলে বলল…

–আমার জীবনে দেহা ভালা মানুষ গুলানির মইদ্যে আলআবি একজন। পোলাডা ভালা আছে। তয় কয়লার মইদ্যে থাকা হিরা মানিক সবাই তো আর দেকবার পারে না।আলআবি হইলো কয়লার মইদ্যে হাইন্দা থাকা হিরা।

জুইঁ মনে মনে শান্তির হাসি হেসে তারপর মুখ টাকে একটু বিকৃত করে নাক ছিটকে বলল…

–নিজের বাবার সঙ্গে ই যে ভালো করে কথা বলে না সে আবার কেমন হিরা?

তখনি লিপি বলে…

বুজলা, ভালোবাসা জিনিসটা ভাইগ্যে থাকলে চাইরদিকে সুখ আর সুখ দেহা যায়। আর না থাকলে চাইরদিকে সুখের মইধ্যেও দুঃখ ছাড়া আর কিছু খুইজা পাওয়া যায় না।

জুইঁ এই কথা টা শোনার পরে বলল…

–আপনার কথার অর্থ তো বুঝতে পারলাম। কিন্তু একথা কেন বললেন?

লিপি একটা দীঘর্শ্বাস ছাড়ল।এই দীর্ঘশ্বাস জুইঁ কে বলে দিচ্ছে -“আমরা চোখে যা দেখি সর্বদা সেটাই সত্যি হয় না।বরং অগোচরে ই হয় সবচেয়ে তিক্ত সত্যির আদান-প্রদান।”

লিপি আনমনে বলে উঠলো…

–আলআবি কি আর এইরম আছিলো?আছিলো না।

জুইঁ লিপির কথা বুঝতে পারল না।তবে এটুকুন ঠাহর করতে পারল যে তার সামনে বসে থাকা তার লিপি আন্টি তাকে আজ হয়তো কোন এক তিক্ত স্বাদ ভরা অধ্যায় পড়ে শুনাবে। জুইঁ লিপিকে উদ্দেশ্য করে বলল…

–তাহলে কেমন ছিল উনি?

লিপি হঠাৎ করেই বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দরজা ভালো মতো লক করে দিল।তারপর আবার জুইঁর কাছে এসে বসে পরল।জুইঁ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে লিপির দিকে তাকাতেই লিপি বলতে লাগলো…

–আলআবির বাবা মানে সিরাজ খালুরা হইলো তিন ভাই।সিরাজ খালু সবার থেইকা বড়।যশোর এর ওই বাড়িতে তিন ভাই থাকতো এক লগেই।তিন ভাইর আদরের বইন আছিল দিলরুবা। দিলরুবা থাকত ঢাকাতেই।সজল হইলো মাইজ্জা খালুর পোলা।মানে মাসুদ খালুর পোলা।আর ছোড খালু হইল মুর্তজা খালু।হেয় বিয়া শাদির ধারে কাছেও ঘেঁষে নাই।এক্কেবারে ভবঘুরে আছিলো।দিলরুবার মাইয়া হইলো আলো।এগো সক্কলেরই একখান কইরা মাইয়া পোলা।খালি মুর্তজা খালু বাদে।ভালাই চলতাছিল সংসার। সিরাজ খালু যা কইতো তাই হইতো বাড়ির শেষ কথা।

পোলা মাইয়া গুলি বড় হইলো।আলোরা ছুটি পাইলেই বেড়াইতে আইসা পড়ত।শেষবার আলো গেরামে যহন আইছিল তহন আলো পড়ত কেবল ইন্টারে।আলোর বাপ ওবায়দুর ছিলেন পরহেজগার মানুষ। হের পুরা ডা পরিবার আছিল পরহেজগার। আর আলোর দাদিতো দুবার হজ কইরা আসা মহিলা ছিলেন।ইন্টারে উটতে না উটতেই আলোরে বিয়া দেওনের লেইগা আলোর দাদি উইঠা পইরা লাগে।আলোর বাপ তার মায়ের কথায় দিনে চোইদ্দ বার উঠতো আর বইতো।আর তাছাড়া আলোর বাপেও চায় মাইয়া তাড়াতাড়ি বিয়া দিতে।

এদিকে আলআবি, আলো আর সজল আছিলো এক বয়সের পোলাপান। সবগুলিই তহন ইন্টারে উটছে।বুজো না মাইয়া পোলা তো!সজল আর আলো একজন আরাক জনরে পছন্দ কইরা ফেলায়।তয় দুইজনের পেরেম নাকি বাইল্যকালের থেই চলতে আছিলো।আলোর বিয়ার কথা হুইন্না সজল আলআবিরে কয় কোনমতে বিয়া যেন ঠিক না হয়। আলআবি কোন কালেই কাউরে ডরাইতো না।তয় বড়গো ভিষণ সম্মান করতো। এহন যেমন দেহ বাপের লগে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা কয় এমন করতো না।আর সক্কলে সিরাজ খালু রে ভয় পাইলেও আলআবি ভয় পাইতো না।

আলো গেরামে যহন আইলো তহন আলোর বাপে সবাইরে ডাইকা কইলো মাইয়ার বিয়া ঠিক করছে।আর তার আম্মা মানে আলোর দাদি নিজে বিয়া ঠিক করছে।এই কথা শোনার পরে আর কেউ কিছু কইলো না।হেইদিন রাইতে আলআবি যাইয়া সিরাজ খালু রে সজল আর আলোর ব্যাপারে সব কিছু ভাইঙ্গা কয়।অনেক কওনের পর সিরাজ সাহেব কইছিল যদি কোন ভাবে পারে তাইলে হে বিয়া ডা আটকাইব।এর মাঝে ই আলোর দাদি বিয়ার দিন তারিখ ঠিক কইরা ফেলায়।আলআবির তহনও বিশ্বাস আছিলো যে সিরাজ খালু কিছু একটা করবো।বিয়ার উপলক্ষে সবাই ঢাকা যায়।

বিয়ার দিন আলো আলআবির কাছে অনেক কাইন্দা কাইন্দা কয় এই বিয়া আলো করতে চায় না।ওইদিন ছাঁদে কিছু একটার লেইগা যাইয়া আমি তিন ভাই বোনরে দেইখা ফেলি আর সব কথাও শুইনা ফালাই।সজল আর আলো একজন আরেক জনের হাত ধইরা কানতাছিল।আলআবি দুইজনের সামনে মূর্তির মতো খাড়াইয়া ছিল।পোলা মাইয়া দুইডার কান্দন দেইখা আমিও হেইদিন কাইন্দা ফালাইছিলাম।

তহন দেহি আলআবি সজল আর আলো রে রাইখাই হনহন কইরা নিচে নাইমা যাইতাছে।আমিও ওর পিছু পিছু গেলাম। যাইয়া দেহি আলআবি সিরাজ খালুর লগে কথা কইতাছে…

–বাবা আমি তো তোমাকে আলো আর সজলের কথা বলেছি।তুমি তাও চুপ আছো কিভাবে? (আলআবি)

–যা হচ্ছে এখানে হতে দাও বাঁধা দিও না।(সিরাজ সাহেব)

–বাবা প্লিজ এমন ভাবে বলো না।সজল এর কষ্ট তুমি দেখতে পাও না?আলোর কষ্ট তুমি দেখতে পাও না?আর বয়সই বা কতো ওর।মাত্রই তো ১৮ তে পা দিল।(আলআবি)

–আলোর দাদি সজলের ব্যাপারে জেনে গিয়েছেন আর আমাকে ওয়াদা করিয়েছেন আমি যেন বিয়ে কোন ভাবে বন্ধ না করি।সেই সাথে তোমার মাসুদ চাচাকেও ওয়াদা করিয়েছেন সে যেন কোন ভাবেই আলোকে তার ছেলো বউ হিসেবে ঘরে না তোলে।(সিরাজ সাহেব)

–ওহ।তার মানে চাচ্চুও জানে ওদের সম্পর্কে? (আলআবি)

–এবাড়ির প্রত্যেকে জানে।আর দয়া করে তুমি বা তোমরা কোন সিনক্রিয়েট করো না।আর তুমি খুব ভালো মতো জানো মাশরুখ পরিবার কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করে না।(সিরাজ সাহেব)

সেইদিন আলআবি আর সিরাজ খালু আরো তর্ক করে।একসময় খালু আলআবির গালে একখান চড় মাইরা দেয়।বিয়া ডা কোন ভাবেই আটকানো যায় নাই। জোড় কইরাই আলোরে বিয়া দেয়া হয়।আলো বিদায়ের সময় কইছিল একটু ওর রুমটা শেষ বারের জন্য দেখব। জীবন্ত মাইয়াডা সেই যে ঢুকলো আর জীবন্ত ফিরতে পারল না।লালশাড়ি পইরা মাইয়াডার লাশ বাইর হইলো।বিয়া বাড়ি চোখের পলকে হইলো মরা বাড়ি।সবাইর সামনে আলআবি হেইদিন কইছিল…

–প্রেম ভালোবাসা অন্যায় বলে মনে হয় কেন আপনাদের কাছে। একটা মেয়ে একটা ছেলে কে কেন ভালোবাসতে পারবে না?আরে যেখানে সামান্য খাবার খেতে গেলে খাবারটা ভালো না লাগলে তা না খেয়ে অন্য খাবার প্লেটে তুলে নেই খাওয়ার জন্য সেখানে একটা মেয়ে যাকে ভালোবাসে না তার সাথে কি করে সারাজীবন থাকবে?খাবারের মতো সে তো আর তার স্বামী কে পাল্টাতে পারবে না।মেয়ের জন্য এতোই যখন চিন্তা তখন মেয়ের সুখ নিয়ে একফোঁটা চিন্তা কারো নেই কেন?আলো চলে গেছে এখন আর চিন্তা করতে হবে না। চিরতরের জন্য আপনাদের চিন্তা ঘুচিয়ে দিয়ে গেছে। আর চিন্তা করতে হবে না।আর করতে হবে না।

সেই দিন ই আলআবি যশোর আইসা পরে।বাপ পোলার দূরত্ব বাড়তে বাড়তে আইজকা এইখানে আইসা থামছে।ইন্টার এর পড়ালেহা শেষ করোনের পর আলআবি হুট কইরাই ফেরানসে চইলা যায়।আলআবি যাওনের পর সজলর আর মুর্তজা খালু হুট কইরা কই যানি উধাও হইয়া গেছে। কোন খোঁজ খবর নাই।আলআবি দেশে ফিরনের পর একবারের লেইগাও যশোর যায় নাই।সজলের বাপ মাও এহন চট্টগেরাম থাহে।

কথা গুলো বলে লিপি তার ওড়নার আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে নিলেন।জুইঁ এতক্ষণ একদৃষ্টিতে লিপির দিকে তাকিয়ে তার কথা শুনছিল।লিপির কথা বন্ধ হতে ই জুইঁ তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল মুছে নিল।জুইঁর মনে এখন জমেছে অনেক গুলো প্রশ্ন।জুইঁর মনে হচ্ছে সে এখন প্রশ্নের স্তুপে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে জুইঁ লিপিকে কিছু বলতে উদ্যত হলো আর তখনই দরজায় কেউ কড়া নাড়লো।

চলবে………….

#মায়াবিনী_মানবী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_১১

লিপি ফিসফিসে গলায় জুইঁকে বলল…

–তোমারে যে এইসব কথা গুলি কইছি তুমি কিন্তু কইও না কাউরে।

জুইঁ ও ফিসফিসে গলায় লিপিকে সম্মতি জানাতেই
লিপি দ্রুত পায় এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল।লিপির পিছু পিছু জুইঁ ও গিয়ে দাঁড়াল।

দরজার সামনে আলআবি পকেটে তার হাত দুটো গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। আলআবির মুখমন্ডলে সন্দেহের স্পষ্টতা জ্বলজ্বল করছে। নাক মুখ কুঁচকে গলায় দৃঢ় সন্দেহের রেশ টেনে আলআবি বলল…

–কি ব্যাপার দরজা লক করে কি করছিলে তোমরা?

এমন সন্দিহান প্রশ্নে লিপি সহ জুইঁ ও কিছু টা ঘাবড়ে গেল।লিপি দরজার নব শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরে দৃষ্টি একবার জুইঁর দিকে দিচ্ছে আরেকবার আলআবির দিকে দিচ্ছে।

জুইঁর এরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার অভ্যাস রয়েছে।তার বাবার কঠোরতা তাকে এমন পরিস্থিতির সঙ্গে বহুবার সাক্ষাৎ করিয়েছে।

ঠোঁটের কোণে জুইঁ মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলতে তুলতে বলল…

–আরেহ!মেয়েদের কতো সিক্রেট থাকে।আপনি কি বুঝবেন?

জুইঁ মনে মনে আতঙ্ক চেপে রেখে হাসি হাসি মুখ বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আলআবি আগের তুলনায় সন্দেহ কিছু টা কমিয়ে ভ্রুযুগল এর এক ভ্রু উঁচিয়ে ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল…

–সত্যি তো?

জুইঁ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক বুঝতে পেরে জোর গলায় বলে উঠলো…

–সত্যি নয়তো কি মিথ্যা নাকি? আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি মিথ্যা কথা বলছি?

আলআবি স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো…

–তা কখন বললাম?একপাতা বেশি বুঝে ফেলো কেন?

পরমুহূর্তেই আলআবি শাহাদাৎ আঙুল অধরের মধ্যখানে চেপে ধরে আবার বলে উঠলো…

–হুশঁ।আর কোন কথা চাই না।আমরা বাইরে যাবো। যাও পাঁচ মিনিটে রেডি হবে।

জুইঁ লিপির রুম থেকে বের হতে হতে বলল…

–কোথায় যাবো আমরা?

আলআবি করিডোর দিয়ে সামনে সামনে হাটছে আর জুইঁ আলআবির পিছনে হেঁটে চলছে। জুইঁ আগে থেকে ই অবগত যে আলআবি জুইঁর কোন প্রশ্নের জবাব এখন দিবে না।এর আগেও জুইঁর সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে।কোথাও যাওয়ার সময় আলআবি বলতে চায় না যে তারা কোথায় যাচ্ছে।

প্রথম দিকে জুইঁর কাছে এ বিষয় টা চরম বিরক্তিকর বলে মনে হতো।কিন্তু আলআবির সঙ্গে বাইরে যেতে যেতে হঠাৎ করে ভালো লাগা শুরু করে।তাই এখন আর দ্বিতীয় বার আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করতে গেলো না।জানা আছে আলআবি বলবে না।

চুপচাপ দুজন দুজনের রুমে ঢুকে পরলো।কিছু সময় পর জুইঁর রুমে ঠকঠক আওয়াজ তুলে কেউ কড়া নাড়লো। জুইঁ তখন হিজাবের শেষ পিনটা লাগাচ্ছিল।একহাতে পিন লাগাতে লাগাতে আরেক হাতে দরজা টা খুলে দিল।খুলতে ই আলআবি কে দেখতে পেল।নিজেকে খুব পরিপাটীরূপে সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জুইঁ আলআবি কে একটু দাঁড়াতে বলেই ভিতরে গিয়ে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে কাঁধে সাইড ব্যাগটা ঝুলিয়ে আলআবির সামনে দাড়ালো।আলআবি যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে জুইঁ দাঁড়িয়ে বলে উঠলো…

–আন্টি কে বলে নেই।একটু দাঁড়ান।

আলআবি জুইঁ কব্জিতে ধরে সামনে এগোতে এগোতে বলল…

–তোমার আন্টিকে বলা হয়ে গিয়েছে। এবার চলো।

জুইঁ আর কথা বাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করলো না।গাড়ি তে উঠে বসতে ই আলআবি গাড়ি স্টার্ট দিল।

বিলাসবহুল একটা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে এসে জুইঁদের গাড়ি টা থামলো।জুইঁ উৎসুক ভঙ্গিমায় বলল…

–এখানে কার জন্য এসেছি আমরা?

আলআবি নিজের সিটবেল্টটা খুলতে খুলতে বলল…

–বিশেষ কারো জন্য।

আলআবি গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে গিয়ে জুইঁর পাশের দরজা খুলে দিল।জুইঁর কানে আর মনে কেবল ” বিশেষ কারো জন্য ” কথাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে।

জুইঁ ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নেমে আসলে আলআবি গাড়ির চাবি পকেটে গুঁজে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে থাকে। আলআবির সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে জুইঁও উপরে উঠছে।শপিংমলের ভিতরে পা রাখা মাত্র ই জুইঁর কানে ইমামের সুদৃঢ় কন্ঠের আযানের ধ্বনি ভেসে আসে।জুইঁ আলআবি কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো…

–আযান যেহেতু দিয়ে দিয়েছে। তাহলে আমরা নামাজটা পড়ে বরং শপিং করি?

আলআবি জুইঁর কথায় সায় দিয়ে জুইঁ কে মহিলাদের জন্য বরাদ্দকৃত নামাজের স্থানে নিয়ে গেল।আর নিজেও শপিংমলের পাশে থাকা মসজিদের জন্য রওনা হলো।

এমুহূর্তে জুইঁর বাম হাত আলআবির বলিষ্ঠ দুই হাতের মধ্যে। জুইঁর সামনে থাকা মাস্ক পরিহিত আলআবি শুভ্র বর্ণের চুড়ি পড়াতে ব্যস্ত জুইঁকে।কিন্তু জুইঁর চোখ ব্যস্ত আছে ব্যস্ত আলআবি কে দেখায়।কিন্তু হঠাৎ আবারও সেই কথাটা মাথাচারা দিয়ে উঠতেই জুইঁ আলআবির থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়।

আলআবি অবাক চোখে জুইঁর দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই এভাবে হাত ছাড়িয়ে নেয়াতে আলআবি প্রস্তুত ছিল না।”কি হলো?” কথাটা আলআবি মুখ দিয়ে না বলে জুন কে চোখের ইশারাতেই বুঝিয়ে দিচ্ছে।

কিছুক্ষণ আগে……

নামাজ পড়ে আসার পর আলআবি জুইঁ কে নিয়ে সোজা চুড়ির দোকানে ঢুকে পরলো। দোকানিকে সাদা কাঁচের চুড়ি বের করতে বলল।কথাটা জুইঁর কর্ণপাত হতেই বিস্ময় নিয়ে জুইঁ আলআবি কে জিজ্ঞেস করলো…

–আপনি চুড়ি নিবেন কেন?কার জন্য?

আলআবি জুইঁর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল…

–বললাম তো বিশেষ কারো জন্য।

জুইঁ কে কোন প্রশ্ন করার সময় সুযোগ না দিয়ে ই জুইঁর একহাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে এলো।জুইঁ তখন কিছু বলার জন্য উদ্যত হয়েও আলআবির দিকে চোখ পরতেই থমকে গেল।

তবে বেশি সময়ের জন্য নয়।মস্তিষ্ক আলআবির বলা কথা গুলো সরণ করিয়ে দিতেই জুইঁ হাত ছাড়িয়ে নেয়।

জুইঁ কিছু টা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো…

–আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডের জন্য নিচ্ছেন। এতে আমাকে জরাচ্ছেন কেন?

কথা বলেই দম নিয়ে আবার বলে উঠলো…

–বাই এনি হাউ আপনি কি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন আপনার গার্লফ্রেন্ডের জন্য এই চুড়ি লেস ফিতা চুস করে দেয়ার জন্য?

জুইঁর কথায় আলআবি এক প্রসারিত ঠোঁটের হাসি হাসলো।জুইঁর কাছে এ হাসি স্বাভাবিক বলে মনে হলো না।ড্যাবড্যাব করে কেবল তাকিয়ে রইলো আলআবির দিকে।

আলআবির জুইঁর অনেকটা কাছে এসে জুইঁর কানে কানে বলল…

–#মায়াবিনী_মানবী পাশে থাকলে গার্লফ্রেন্ডের কি দরকার?

কথা গুলো আলআবি হিজাব পরিহিত জুইঁর কানের কাছে গিয়ে বললেও জুইঁর মনে হচ্ছে আলআবির বলা কথার উষ্ণতা হিজাব ভেদ করে তার কানকে উষ্ণ করে দিচ্ছে।আলআবি কাছে আসায় মনে হচ্ছে আলআবির সুঠাম দেহের কিছু টা উত্তাপ এসে জুইঁকে গ্রাস করে ফেলছে।হৃদপিন্ড নামের প্রত্যঙ্গটাও তার লাফালাফি বাড়িয়ে
দিয়েছে।

জুইঁ নিজেকে সামলে নিয়ে আলআবির থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো।লজ্জায় আলআবির মুখপানে তাকাতেও পারছে না।

চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়ে একরাশ লজ্জা নিয়ে পুরো দেড় ঘন্টা আলআবির সঙ্গে থাকতে হয়েছে জুইঁর।আলআবি এই দেড় ঘন্টায় নানান জিনিস কিনেছে কিন্তু জুইঁর সেদিকে কোন খেয়াল ছিল না।জুইঁ বলতেই পারবে না আলআবি কি কি কিনেছে। আলআবি যেদিকে গিয়েছে জুইঁও সাথে সাথে কেবল সেদিকে ই ছুটেছে।একটা টু শব্দ পর্যন্ত করেনি।আলআবি জুইঁর অবস্থা বুঝতে পেরে সেও কিছু বলে নি।

পুরো টা সময় জুইঁর ভাবনার কেন্দ্র বিন্দু ছিল #মায়াবিনী_মানবী।জুইঁ বুঝতে পারছে না কথা টা আলআবি কাকে বলেছে।কিছু সময় মনে হচ্ছে জুইঁকেই উদ্দেশ্য করে বলেছে।আবার কিছু সময় মনে হচ্ছে অন্য কেউ আছে। যে আলআবির জীবনের মায়াবিনী মানবী।

বাসায় এসে জুইঁ একে বারে চুপ হয়ে গিয়েছে। আলআবি কেও যথা সম্ভব ইগনোর করে চলছে। রাতেও খাবার টেবিলে তারাতাড়ি করে খেয়ে নিজের রুমে চলে গিয়েছে।

দশদিন চলে যেতে সময় লাগেনি বেশি।জুইঁর কাছে মনে হয়েছে জীবনের এই দশদিন দ্রুততার সহিত কেটেছে। আজ রাতেই জুইঁ আর তার আঙ্কেল আন্টি যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।জুইঁ সকাল সকাল উঠেই একচোট অবাক নামের বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা খেল।ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে ই

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here