মায়াজালে_আবদ্ধ পর্ব_৯,১০

মায়াজালে_আবদ্ধ
পর্ব_৯,১০
কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
পর্ব_৯

দুদিন হসপিটালে থেকে মায়া এখন মোটামুটি
সুস্থ। জুনায়েদ এই দুদিন নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে ওর পাশে বসে থেকে ওকে সুস্থ করেছে। জুনায়েদ মনে একটাই ভয় ছিল পিউকে হসপিটাল রেখে আসার পরের দিন ওর মৃত্যু হয়েছিল যদি মায়ার ও তেমন হয় তখন কি হবে? জুনায়েদ আর কখনও নিজের জন্য অন্যর ক্ষতি হতে দিতে পারবে না। রীমলি ওকে অবিশ্বাস করেছিল এটা নিয়ে এতোদিন ওর আফসোস হতো কিন্তু এখন আর হচ্ছে না।ওর মনে হচ্ছে মেয়েটা প্রাণে বেঁচে আছে এটাই ওর জন্য অনেক। মনে একটা সান্ত্বনা থাকবে ও ভালো আছে আর সুখে আছে। পৃথিবী গোল তাই ঘুরতে ঘুরতে কখনো না কখনও দেখা হয়ে যাবে তখন দুচোখ ভরে দেখে নিজেকে বোঝাতে পারবে। মায়া বেডে শুয়ে আছে আর জুনায়েদ ওর মাথার পাশে বসে কথা গুলো ভাবছে। আমির গতকাল বাড়িতে ফিরে গেছে আজ আবার আসবে বলেছে। যদিও ও যেতে চাইছিল না কিন্তু জুনায়েদ ওকে জোর করেই পাঠিয়ে দিয়েছে। হসপিটালে থাকলে সুস্থ মানুষ ও অসুস্থ হয়ে যায় সহজে কেউ এখানে থাকতে চাইনা কিন্তু আমিরের অন্যকিছুতে মন আটকেছে ও সেই নেশাতেয় ও এখানে পড়ে আছে। জুনায়েদের প্রতি ওর ভালোবাসা অনেক আছে কিন্তু সেটা কোনো নেশা নয়। আমির হসপিটালের রিসিপশনের গিয়ে বসে থাকে জুনায়েদ টেনশনে না থাকলে এতোক্ষন ঠিক বুঝে নিতো ওর সমস্যাটা ঠিক কোথায়। তবুও ও কিছুটা অনুমান করেছে আর খবর ও নিয়েছে। এই কয়েকদিনে জুনায়েদের চেহারার বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। জুনায়েদ সব সময় পরিপাটি থাকার চেষ্টা করে।কিন্তু এখানে এসে ওর খাওয়া গোসল সব বন্ধ। খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো বেশ কিছুটা লম্বা আকার ধারণ করেছে। চোখের নিচে কালি পড়েছে। এলোমেলো চুলগুলো দেখে মনে হচ্ছে কোনো পাখির বাসা। বাসা থেকে ওর জন্য পোশাক পাঠিয়েছিল তাই শার্ট টা কোনো রকমে চেঞ্জ করে নিয়েছে এতেই কিছুটা ভদ্রলোক বলে মনে হচ্ছে।। জুনায়েদের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। মানুষের জীবনের থেকে মূল্যবান আর কিছু হয়না। পরিপাটি পরেও হলে চলবে কিন্তু জীবন চলে গেলে আর কখনও ফিরে পাওয়া যাবেনা। এমন সময় মায়া জুনায়েদের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

> আপনি বাড়িতে গিয়ে গোসল করে ফ্রেস হয়ে আসুন। আপনাকে এভাবে দেখতে আমার একদম ভালোলাগছে না। কি করেছেন নিজের সেদিকে খেয়াল আছে আপনার?

> মায়া আমি নিজের কথা ভাবা ছেড়ে দিয়েছি। ক্ষণস্থায়ী জীবন, আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি তার কোনো গেরান্টি নেই। মরতে তো একদিন হবেই। কিন্তু আমার জন্য যদি কেউ কষ্ট পাই সেই দাইটা তো আমারই তাইনা? তুমি আমাকে নিয়ে ভেবোনা। আর তুমি ঠিক হয়ে গেলে তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে রেখে আসবো। তুমি কখনও আর আমার সাথে যোগাযোগ করবে না নয়তো তোমার আবারও কিছু হয়ে যাবে যেটা আমি মানতে পারবো না।

> আপনার সাথে যদি নাই থাকতে পারবো তাহলে সেই জীবন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। আপনি বরং আমাকে বিষাক্ত কিছু এনে দিন যেটা খেয়ে আমি মরে যায়।

> বাজে বকছো কেনো? পিচ্চি পিচ্চিদের মতো থাকবে।আর তুমি সুস্থ হলে আমি তোমার একটা কথাও আর শুনবোনা বুঝলে? তোমার উপরে আমার ভীষন রাগ জমা হয়ে আছে। অসুস্থ তাই কিছু বলছিনা।

> কি করেছি আমি? ঠোঁট ফুলিয়ে

> এতোকিছু করেও বলছো কি করেছো? ধমক দিয়ে

> মানে আপনি কি জানেন? আমি কি করেছি? আমতা আমতা করে

> কী দরকার ছিল সেদিন আমাদের বাড়িতে যাওয়ার? বিয়ের বয়স হয়েছে তোমার?

> আমার আঠারো হয়েছেতো আরও কতো হতে বলছেন? হেসে

> আঠারো বছর হলেই বিয়ের বয়স হয়ে যায় কে বলেছে তোমাকে?। শুনো আমি কোনো পিচ্চির সাথে সংসার করতে পারবো না। আর তোমাকে তো আমি একটুও ভালোবাসি না। ভালোবাসা এতো সহজ নয়।

জুনায়েদ কথা শুনে মায়া কাঁদতে শুরু করলো। ও এতোক্ষন শুয়ে ছিল কিন্তু জুনায়েদ কথা শুনে ও শোয়া থেকে উঠে বসলো। জুনায়েদ ওকে হাত দিয়ে ধরতে গেলো কিন্তু পারলো না মায়া ওকে বাধা দিয়ে বিছানা থেকে নামতে গেলো। দুদিন অসুস্থ আর একভাবে শুয়ে থাকার পর হঠাৎ দাঁড়ানোর জন্য ওর মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। জুনায়েদ ওকে তাড়াতাড়ি ধরে বসিয়ে দিয়ে ধমক দিয়ে বলল,

> হচ্ছে টা কি বলবে?

> আমি বাড়িতে যাচ্ছি আপনি তো আমাকে পছন্দ করেন না আবার দেখতেও পারেন না তাই এখানে থেকে কি হবে?

> শুনো পিচ্চি এখান থেকে যদি এক পা নড়েছো তাহলে কিন্তু ভয়ানক খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।

> আপনি তো…
> কথা বলবে না আমি আসছি।

জুনায়েদ ওকে বিছানায় রেখে বাইরে আসলো রিসিপশনে কথা বলে এখানের সব বিল পেমেন্ট করে বাড়িতে ফোন দিলো গাড়ি পাঠাতে আর মায়াকে নিয়ে যেতে। বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়ি থেকে লোকজন আসলো। মায়ার মা মিরা বেগম মায়াকে নিজের কাছে রাখতে চাইলেন। অসুস্থ সন্তানের সেবাযত্ন করার জন্য মায়ের থেকে ভালো আর হয়না। তাই জুনায়েদের বাড়ির লোকজন ওকে পাঠিয়ে দিতে রাজি হলেন। জয়নাল সাহেব মায়ার বাবার সাথে আলাপ করে বলেছেন মায়া যতদিন না পুরোপুরি ভালো হচ্ছে আর ওর সামনে পরিক্ষা আছে এটা শেষ হচ্ছে ততদিন ও বাবার বাড়িতেই থাকবে। সবার আলোচনার মাঝে মায়া মাথা নিচু করে আড়চোখে জুনায়েদের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে লোকটা এতো পাষাণ কেনো কে জানে। আমার জন্য তাঁর হৃদয়ে ভালোবাসা নেই এটা না হয় বুঝলাম কিন্তু মায়া মমতা বলেও কি কিছু নেই? জুনায়েদ স্বাভাবিক ভাবে তাঁকিয়ে আছে। ও তো চাই মায়া ওর আশেপাশে না আসুক। দু পরিবারের কথা অনুযায়ী মায়াকে ওর বাড়ির লোকজন নিয়ে গেলো আর জুনায়েদের বাড়ির লোকরা সবাই হসপিটাল থেকে বাড়িতে ফিরে আসলো। ওদের বাড়িতে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।জুনায়েদ রুমে ফিরে ফ্রেস হয়ে বাথরুম থেকে বাইরে আসতেই ওর ফোনটা বেজে উঠলো। জুনায়েদ ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অমির ফোন করেছে তাই ও আর অপেক্ষা করলো না রিসিভ করে কানে ধরতেই ও বলল,

> দোস্ত তোরা চলে গিয়েছিস কেনো?

> চলে গিয়েছি মানে কি? তুই কি আমাদের সারাজীবন হসপিটালে থাকতে বলছিস? ভ্রু কুচকে

> সারাজীবন কেনো থাকবি? যতদিন না আমার সাথে ওর ঠিকঠাক হচ্ছে ততদিন পযর্ন্ত থাকলেই হতো। কিন্তু এখন কি হবে? মন খারাপ করে

> কি হয়েছে বলবি? আচ্ছা তুই হসপিটালে কিছু অঘটন ঘটানোর চিন্তা করছিস নাতো? ব্যপার কি বলতো?

> আর ব্যাপার আমি প্রেমে পড়েছি। তুই টেনশনে আছিস তাই বলতে পারিনাই। আমি রিসিপশনে বসে আছি।

> তা কোন রুগীর প্রেমে পড়লি শুনি?

> আল্লাহ কি বলছিস রুগী কেনো হবে? হসপিটালে কি শুধু রুগী থাকে নাকি? চোখ খুলে তাঁকিয়ে দেখ কত কত সুন্দরী আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।

> তোর নজর কোনোদিন ভালো হবে না।জীবনেও তো একটা প্রেম করবার পারোস নাই শুধু প্রেমে পড়তেই পারিস। আঙ্কেল যদি জানে তুই হসপিটালের রিসিপশনের ওই মেয়েটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস তাহলে কিন্তু উনি হার্ট এটাক করবেন। কখনও মানুষ হবি না তাইনা? আর মেয়েটাকে ছাড়। মেয়েটা নিজের পড়াশোনার জন্য জবটা করছে ওকে আর বিরক্ত করিসনা। এমনিতেও মেয়েটা খুবই ভালো।

> তুই বুঝলি কেমন করে? আমি ওই মেয়েটার কথায় বলছি?

> শুধু আমি না অনেকেই হয়তো বুঝেছে তুই যেমন করে ওর দিকে তাকিয়ে বসে থাকিস। আমি কিছু একটা বুঝেছিলাম তাই ওর সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। যাইহোক বাড়িতে আই।

> শোন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মেয়েটার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাবো। প্রেম বিয়ের পরে হবে, আগে বিয়ে হবে। মেয়েটা প্রেম করতে রাজি না হলেও বিয়ের জন্য রাজি হবে মনে হয়।

> আচ্ছা তোর যা মন চাই কর। তবে আগে নিজের একটা থাকার জায়গা ঠিক করে নিস নয়তো আঙ্কেল তোকে ত্যাগ করলে কোথায় থাকবি?

> তা ঠিক বলেছিস। ভেবে দেখছি।

জুনায়েদে ওকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে দিলো। কোনো কথায় ওর আর শুনতে ইচ্ছা করছে না। আমির ছেলেটাই এমন। কোনো ভালো মেয়ে দেখলেই তার মনে প্রেম উথলে পড়ে আবার দুদিন পরে সব ঠিক হয়ে যায়। তবে ওর মনটা ভালো। হসপিটালে থেকে জুনায়েদ একদম ঘুম হয়নি তাই ও ফোনটা পাশে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ক্লান্তি আর দুর্বল শরীরের জন্য ও খুব তাড়াতাড়ি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।

আকাশে মেঘ ডাকছে আর তারসাথে পাল্টা দিয়ে শনশন করে বাতাস বইছে। হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে পিচ ঢালা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে জুনায়েদ। ক্রমশ বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই ওর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। চারদিকে জনমানবশূন্য কোথাও কেউ নেই। ওর জানা নেই এটা ঠিক কোথায় আর কার জন্য ও এভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ও আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না এগিয়ে আসলো উদ্দেশ্যে বাড়িতে ফিরে যাওয়া। ও কিছুদূরে এগিয়ে আসতেই লক্ষ্য করলো একটা মেয়ে ওর সামানে দিয়ে এগিয়ে চলেছে। জুনায়েদ দৌড়ে মেয়েটার পেছনে ধাওয়া করলো কিন্তু ওর নাগাল পেলো না। মেয়েটার পরণের পোশাক টা খুবই দৃষ্টিকটু লাগছে জুনায়েদের কাছে। ও সাধারণত এমন মেয়েদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে তবুও ওর বিস্তার মেয়ে বন্ধু আছে যারা এগুলো পড়তে পছন্দ করে। কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলা উচিৎ নয় তাই ও কাউকে এগুলো নিয়ে কিছুই বলেনা। কিন্তু এই মেয়িটাকে ওর প্রয়োজন। ওর কেনো জানি মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে ধরলে ওর সব সমস্যা নিমিষে দূর হয়ে যাবে। সব কিছুই এই মেয়েটা করছে। জুনায়েদের সামনে সামনে মেয়েটা দৌড়ে চলেছে। কিছুদূরে এসে মেয়েটা একটা বিল্ডিংয়ের ভেতরে চলে গেলো। জুনায়েদ ও মেয়েটার পেছনে পেছনে সেদিন এগুলো। নির্জন বাড়ি। কেমন গা ছমছমে পরিবেশ বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে এখুনি কেউ কথা বলে উঠবে আর ও ভয়ানক কিছু দেখবে। জুনায়েদ মনে সাহস নিয়ে সিঁড়িতে পা রাখলো তারপর ও দ্রুতগতিতে ছাদে গিয়ে দেখলো পেছনের দিকে মুখ করে মায়া দাঁড়িয়ে আছে। জুনায়েদ ভ্রু কুচকে ফেলে ভাবলো মায়া এখানে কি করছে? ও কৌতূহলী হয়ে মায়ার কাছে এগিয়ে যেতেই কোথা থেকে সেই মেয়েট দৌড়ে এসে মায়াকে নিয়ে নিচে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে গেলো। । গগনবিদারী একটা চিৎকার দিয়ে জুনায়েদ ঘুম থেকে উঠে বসলো। ওর ঘা ঘেমে একাকার হয়ে আছে। সত্যি সত্যি বাইরে মেঘ ডাকছে হয়তো বৃষ্টিও পড়ছে।। রুমের মধ্যে বেশ অন্ধকার রাত হয়ে এসেছে। জুনায়েদ পাশে রাখা ফোনটা নিয়ে সময় দেখলো ঘড়িতে এখন রাত নয়টা নয় বাজে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ও বুঝলে বেশ অনেক সময় নিয়ে ও ঘুমিয়ে ছিলো।। কিন্তু এই মূহুর্তে ওর মায়ার জন্য প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে। মেয়েটার যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তখন কি হবে। এখানে আর বসে থাকা যাবেনা কথাটা ভেবেই ও সার্ট নিয়ে বের হলো মায়াদের বাসাই যাবার জন্য। বিয়ের পর এই প্রথমবার ও মাথাদের বাড়িতে যাচ্ছে।

চলবে

#মায়াজালে_আবদ্ধ
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
#পর্ব_১০

বাইরে ঝড়ো হাওয়ার সাথে হালকা বৃষ্টি পড়ছে। যদিও বৃষ্টির পরিমাণ বেশি না তবুও ভিজে যাবার একটা সন্দেহ থেকেই যায়। জুনায়েদ একবার ভাবলো ছাতাটা নিয়ে গেলে ভালো হবে তারপর আবার ভাবলো দরকার নেই এইটুকু তো রাস্তা দৌড়ে চলে যাওয়া যাবে সমস্যা হবে না। ড্রয়িং রুমে জয়নাল হাসেন আর আমেনা বেগম কিছু একটা নিয়ে খোসমেজাজে গল্প করছেন আর হাসাহাসির করছেন। জুনায়েদকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে জয়নাল সাহেব ভ্রু কুচকে জিঞ্জাসা করলেন,

> বৃষ্টির মধ্যে বাইরে কি?

> দরকার আছে। একটু বাইরে যাবো। যেতে যেতে

> কোথায় যাবে?

> মায়াকে আনতে।

> মানে কি জুনায়েদ? মেয়েটা অসুস্থ আর সকালে তো তুমি ছিলে ওখানে যখন কথা হয়েছিল।তখন তো তুমি কিছুই বললে না তাহলে হঠাৎ এখন কি হলো?

> কিছুনা আমি যাচ্ছি।

জুনায়েদ হন্তদন্ত হয়ে বেরিয় গেলো। দরজা কাছে পটল বসে বসে ঝিমাচ্ছে হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই গভীর ঘুমে লুটিয়ে পড়ছে। ওকে দেখে জুনায়েদের ইচ্ছা করলো ওর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে কিন্তু দিলো না। রাগটাকে কন্টোল করলো। পটল জয়নাল সাহেবের একান্ত অনুগত তাই উনি যতক্ষণ না রুমে যাবেন ততক্ষণ ও এখানেই বসে থাকবে। জুনায়েদ এটাকে বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই মনে করে না। এই ছেলেটার জন্য যে ওর জীবনে চুড়ান্ত একটা ক্ষতি হয়েছে এটা ও কিছুতেই ভুলতে পারবে না। জুনায়েদ হাত মুঠো করে বৃষ্টির মধ্যেই নেমে পড়লো রাস্তায়। ও প্রায় দৌড়ে গেট পার হয়ে পাশের বিল্ডিং গিয়ে ঢুকলো। ওকে দেখেই দারোয়ান গেট খুলে দিয়েছে বাড়ির নতুন জামাই বলে কথা।। জুনায়েদ ভেতরে গিয়ে কলিংবেল বাজানোর বেশ কিছুক্ষণ পরে ঘুমে টলতে টলতে মায়ার মা দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে ফেললেন। বৃষ্টির মধ্যে জামাই এই বাড়িতে উনি বিশ্বাস করতে পারলেন না তাই চোখ ভালো করে মুছে তাঁকিয়ে দেখলেন। সত্যি সত্যি এসেছে। উনি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলেন,

> হঠাৎ তুমি ?

> মায়া কোথায়?

জুনায়েদ ওর শাশুড়ির কথা ইগনোর করে সারাসরি মায়ার কথা জিঞ্জাসা করলো। জুনায়েদের কথা শুনে উনি থতমত হয়ে গেলেন তবুও অমতা আমতা করে বললেন,

> ওর রুমেই আছে। সিড়িঁ দিয়ে উঠে গিয়ে ডান দিকের রুমটা ওর।

জুনায়েদ আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত পায়ে উঠে গেলো উপরে। ওকে উপরে উঠে যেতে দেখে মায়ার মা অবাক হয়ে তাঁকিয়ে ভাবছে এর আবার হলো কি কে জানে। । জুনায়েদ দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুঁলে গেলো। মায়া বিছানায় বসে আনমনে ফোন টিপছে আর মিটিমিটি হাসছে।ওর বন্ধুদের সাথে অনলাইন চ্যাটিং চলছে।। হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনে মায়া মাথা তুলে তাঁকিয়ে জুনায়েদ কে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,

> আপনি?

> তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আসো বাড়িতে ফিরতে হবে। পাশে দাঁড়িয়ে

> মানে কি? এতোরাতে বাড়িতে যাবো মানে?

> অবাক হবার কি আছে বুঝলাম না। বাড়িতে ফিরতে হবে মানে ফিরতে হবে। যাও দ্রুত করো। ঝাড়ি দিয়ে

> আমি পারবো না। সকালেই তো আপনি আমাকে এখানে পাঠিয়ে দিবেন বললেন এখন তো চলেই এসেছি। আমাকে আপনার বোঝা মনে হয়। নাক ফুলিয়ে

> যাবেনা?

> না।

জুনায়েদ মায়ার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে পকেটে রেখে ওর হাত ধরে জোর করে বিছানা থেকে নামিয়ে বলল,

> চলো চেঞ্জ করতে হবে না। যেমন আছো তেমনই যাবে। বেশ সুন্দর লাগছে।

> ছেড়ে দিন নয়তো আমি কিন্তু চিৎকার করবো।

> করো আমার কোনো সমস্যা নেই।

> হঠাৎ আপনার কি হয়েছে বলবেন? এমন কেনো করছেন?

> হঠাৎ বউয়ের জন্য দরদ উতলে পড়ছে
বুঝলে। কপালে পিচ্চি একটা বউ জুটেছে তার দায়িত্ব তো আমাকেই নিতে হবে। কিছু হলে তো লোকে বলবে জুনায়েদ নিজের বউয়ের দাঁড়িয়ে পালন করতে অপারগ। গম্ভীর হয়ে

> আপনি লোকের কথার দাম কবে থেকে দিতে শুরু করলেন শুনি? ছাড়ুন কিন্তু।

জুনায়েদ মায়ার কথার কর্ণপাত করলো না। ওকে টেনে রুমের দরজা পযর্ন্ত নিয়ে আসতেই ও মায়া বলল,

> প্লীজ আমি আপনার সাথে আগামীকাল যাবো। বাড়িতে সবাই কি বলবে?। আর আপনি আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখুন কি পড়ে আছি। নতুন শশুর বাড়িতে শার্ট আর প্লাজু পড়ে চলে যাবো?

ওর কথা শুনে জুনায়েদ একবার মায়ার দিকে তাঁকিয়ে কিছু একটা ভেব দ্রুত বিছানার উপর থেকে ওড়নাটা নিয়ে এসে ওর গায়ে ভালো করে পেচিয়ে দিয়ে বলল,

> এবার তো কোনো সমস্যা নেই তাইনা?

> না আছে সমস্যা।

> আচ্ছা।

জুনায়েদ কথাটা বলেই ওকে কোলে তুলে হাটতে শুরু করলো। মায়া অবাক হয়ে জুনায়েদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। লোকটার আজ হঠাৎ কি হলো ওর মাথায় আসছে না। যে লোক ওকে একদম সহ্য করতেই পারেনা সে আজ ওকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেবার জন্য উতলা হচ্ছে। জুনায়েদ ওকে নিয়ে হাটতে হাঠতে বলল,

> এভাবে তাঁকিয়ে থেকো না তোমার আম্মুর ফিউজ উড়ে যাবে। গম্ভীর হয়ে

>কেনো? অবাক হয়ে

> তোমাকে কোলে নিয়ে হাটছি তারপর আবার তুমি এভাবে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছো। লজ্জা সরম বলতে তো একটা অদৃশ্য বস্তুর অস্তিত্ব আছে পৃথিবীতে তাই না? তোমার না হয় সেটা কম কম তাই বলে কি উনাদের ও কম?

জুনায়েদের কথা শুনে মায়ার হঠাৎ মনে হলো সত্যিই তো বাড়িতে আম্মু আব্বু কাকুরা সবাই আছে। ওদের এভাবে দেখলে কি ভাবছেন উনারা? আবার ওর রাগ ও হলো ভাবলো লোকটা নিজেই এমন করছে আবার ওকে বলছে ওর লজ্জা শরম কম কম। ও কি ইচ্ছা করে কারো কোলে উঠেছে নাকি? ও কিছুতেই থাকবে না। কথাটা ভেবেই মায়া পা নাড়াতে শুরু করলো। জুনায়েদ ওকে শক্ত করে ধরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে ড্রয়িং এসে থামলো। সোফায় মায়ার বাবা মা আর ছোট কাকা বসে আছেন। ওরা জুনায়েদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। জুনায়েদ মায়াকে না নামিয়েই বলল,

> ওকে বাড়িতে নিয়ে গেলাম। সকালে অলিকে পাঠাবো ও এসে মায়ার ড্রেস নিয়ে যাবে।

জুনায়েদ হাটতে হাটতে কথাটা বলে দরজার দিকে এগুলো। ড্রয়িং রুমের সবাই অবাক হয়ে হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছে।। মায়ার মা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাজের মেয়ে ময়নাকে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন দরজা খুলে দিতে। ময়না সেই অনুযায়ী দরজা খুলে দিয়ে ওদের আগে আগে বাইরে এসে দাঁড়ালো। জুনায়েদ ওকে নিয়ে টান পায়ে হেটে গিয়ে নিজেদের বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়লো। জয়নাল সাহেব আর আমেনা বেগম দরজা খোলা রেখে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলেন এতক্ষন। জুনায়েদ ভিজতে ভিজতে ভেতরে ঢুকতেই জয়নাল সাহেব দাঁড়িয়ে পড়লেন। উনি একবার ছেলের দিকে তাঁকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে কাশি দিয়ে মনে মনে বললেন, ছেলেটা দিন দিন বেহায়া হচ্ছে লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই।। ওই বাড়িতে আমার মান সম্মানের ছিটেফোঁটাও আর থাকলো না। আল্লাহ তুমি এ কাকে আমার ঘরে পাঠালে। এই প্রথমবার আফসোস হচ্ছে উনার। আমেনা বেগম সরল মনের মানুষ, উনি ছেলের পেছনে হাটতে হাটতে বলেন,

> বাবা ওকে এভাবে না আনলে হতো না?

> না আম্মু হতো না। মেয়েটা অনেক ছোট, আর বুদ্ধি ও অনেক কম। একটুও কথা শুনছিলো না।।

> ও আচ্ছা।

জুনায়েদ মায়াকে নিয়ে গিয়ে অলির রুমে বসিয়ে দিয়ে অলিকে বলল,

> আজ থেকে তুই ওর সাথে থাকবি। যখন যা প্রয়োজন আমাকে বলবি। আমাকে না বলে কোথাও যাওয়া চলবে না। আর আম্মু এদের খাবার তুমি আজ থেকে এই রুমে দিয়ে যাবে। এরা আজ থেকে গৃহবন্ধী। আমার হুকুম।

জুনায়েদ কথাটা বলে গটগট করে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করলো। তারপর আমিরকে ফোন দিয়ে বলে দিলো আগামীকাল সকালে একটা সিসি ক্যামেরা নিয়ে বাড়িতে আসতে। অলির রুমের দরজায় এ সিসি ক্যামেরা লাগাবে ঠিক করলো। জুনায়েদের ধারণা অপরাধী নিজের কাজে বিফল হয়েছে তাই সে আবারও আসবে মায়াকে আক্রমণ করতে।ও এই সুযোগে অপরাধীকে হাতেনাতে ধরবে আর তাকে উচিৎ শিক্ষা । জুনায়েদ ওর এক পুলিশ বন্ধুকে বলে রাখলো ওকে সাহায্য করতে। এভাবে দুখী দুখী মুখ নিয়ে ঘুরলে একটার পর একটা অন্যায় হতেই থাকবে আর জুনায়েদ নিজের পছন্দের মানুষ গুলোকে হারিয়ে ফেলবে এটা ও আর হতে দিবে না। নিজের থেকেও প্রিয় ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হতে দেখার থেকে মৃত্যু ভালো তবুও ও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। নিজের কষ্ট কে নিজের মধ্যে দাফন করে সমাজ সংসারের সামনে সুখে থাকার অভিনয় করছে। অন্তদহনে জ্বলে পুড়ে মরছে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ও চেঞ্জ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। অনেক সময় ঘুমানোর জন্য আজ ওর কিছুতেই ঘুম আসছে না। হঠাৎ করেই আবারও ওর রীমলাকে দেখতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কেমন করে দেখবে ফোনে যে একটাও ছবি নেই। কথাটা ভাবতেই ওর মনে হলো ফেসবুকে রীমলির আইডিতে তো চেক করাই যায় ওখানে থাকতে পারে। জুনায়েদ এবার ফোন নিয়ে ফেসবুক লগইন করে রীমলির আইডিতে গিয়ে বুঝলো ওকে ও আগেই ব্লক করে রেখেছে। পুরাতন মেসেজ গুলোই দেখে ওর বুকের মধ্যে জ্বলে উঠলো। কেমন অস্থির লাগছে। ও আর পড়তে পারলো না। চোখ দুটো জ্বলছে মনে হচ্ছে এখুনি টুপ করে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়বে।।ভাবলো কেনো এমন হলো কি অন্যায় করেছিলাম যার শাস্তি আমি এভাবে পাচ্ছি আল্লাহ ভালো জানেন। এমন তো হবার কথা ছিল না। ।কথাটা বিড়বিড় করে বলে জুনায়েদ চোখ বন্ধ করলো। যার কথা ভাবলে আগে হৃদয় ভালোলাগার শিহরণ বয়ে যেতো আর তার কথা ভাবলে সারা মন জুড়ে দুঃখে ভরে যায়। জুনায়েদ ভাবছে না জানি এটা আবার কবে লজ্জায় পরিণত হয়। যতোদিন না এটা লজ্জায় পরিণত হবে ততদিন পযর্ন্ত ওকে এই যন্ত্রণা সহ্য করতেই হবে। এমন কি কোনো সময় আসবে যখন ওর রীমলির কথা মুখে আনতে লজ্জা অনুভব করবে। মনে হবে ও এক সময় কোনো মেয়েকে ভীষন ভালোবেসেছিল কথাটা কাউকে জানানো ঠিক হবে না। মানুষে জানলে কি ভাববে?। এসব কথা এলোমেলো ভাবতে ভাবতে ও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। সকালে বাড়ির ভেতরে হৈচৈ শুনে জুনায়েদের ঘুম ভাঙলো। ও তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে নিচে এসে যাকে দেখলো তাঁকে দেখার জন্য ও প্রস্তুত ছিল না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here