#ভুলে_থাকা_গল্প,০৪,০৫
#লেখা__ইয়ানা_রহমান
#পর্ব -৪
খুব ঝাল করে বানানো ফুচকা খেয়ে বেসামাল অবস্থা প্রিয়ার। ওর বান্ধবীরাও ঝালে হূ হা করছে।
রুনু বললো ঝালে খুব কষ্ট হচ্ছে তারপরও মজা করে খেয়েছি। থ্যাংক ইউ মামা আপনার মজা করে বানানো ফুচকার জন্য।
মলি বললো প্রিয়া একটা চকলেট দে। আজকের ফুচকা বেশি ঝাল ছিলো। সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে।
প্রিয়া বললো, ব্যাগে আজকে একটা চকলেট ও নেই। থাকলে এতক্ষণ ধরে আমি কষ্ট করি?
দাড়া চকলেট কিনে নিয়ে আসি।
প্রিয়ার ঝাল ফুচকা খেয়ে ঠোঁট লাল হয়ে গেছে। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি খাচ্ছে আর ঠোঁট পাউট করে হা হু করছে আর হাত দিয়ে পাখা করার মত বাতাস করছে। রাস্তার ধারে একটা দোকান থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানি আর কয়েকটা চকেলট কিনে নিলো।
তখন দেখলো একটা ছেলে ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মুখটা কেমন হাসি হাসি করে রেখেছে। প্রিয়া ভাবলো কাউকে নিতে এসেছে হয়তো। বা কারো জন্য অপেক্ষা করছে। তেমন কোন পাত্তা দিলো না বা তাকালোও না আর।
প্রিয়া চকলেট আর ঠান্ডা পানি নিয়ে ফিরে এসে বান্ধবীদের সবাইকে একটা করে চকলেট দিলো। বোতল খুলে অনেকটা ঠান্ডা পানি খেয়ে নিলো।
সবাই প্রিয়ার হাত থেকে ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে খেতে লাগলো।
প্রিয়া রাস্তার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে গাড়ি এলো কিনা দেখছে।
পিউ বললো , দেখ ঐ হিরো এদিকেই তাকিয়ে আছে। এদিকে কাকে দেখছে? কি দারুন স্মার্ট ছেলেটা। আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম।
মলি বললো সত্যি দোস্ত তুই ঠিকই বলেছিস, পোলা তো নয় যেন আগুনের গোলা। আমিও ক্রাশ নামের চকলেট খাইলাম।
প্রিয়া বললো, তাহলে আমার চকলেট নিলি কেন? চকলেট ফেরত দে। ওই ক্রাশ চকলেট খেয়েই ঝাল দুর কর। ফজিলগুলি, ছেলে দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
পিউ বললো, কেনো ছেলেটাকে তোর ভালো লাগেনি? তুই একটা হা*র্ট*লে*স মেয়ে। একেবারেই নিরামিষ। পড়া ছাড়া কিচ্ছু বুঝিস না। তোর সাথে থেকে থেকে আমরাও প্রায় নিরামিষ হতে বসেছি। সুন্দরকে সুন্দর বলতে শিখ।
মোটেও আমি নিরামিষ না। আগে পড়াশুনা শেষ করবো তারপর প্রেম ফ্রেম নিয়ে ভাববো।
মলি গেয়ে উঠলো এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছে, হুহ।
সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
প্রিয়া রাস্তার দিকে চেয়ে বিরক্ত হচ্ছে ড্রাইভার চাচা এখনও আসছে না কেনো?
ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ড্রাইভার চাচাকে ফোন দিতে দিতে রাস্তায় তাকাচ্ছে। ছেলেটা একইভাবে তাকিয়ে আছে। কেমন অসস্তি লাগছে।
ড্রাইভার চাচা কল রিসিভ করলো,
চাচা আপনি কোথায়? আমার কলেজ ছুটি হয়ে গেছে, আমি অপেক্ষা করছি তো।
ছোট ম্যাডাম আমি আরো আগেই রওনা দিছি কিন্তু মাঝ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হইয়া গেছে। ম্যাকানিক গাড়ি ঠিক করতেছে। তয় আসতে কিছু দেরি হইবো।
আচ্ছা চাচা আমি রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে যাই। আপনি গাড়ি ঠিক হলে আম্মুকে নিতে চলে যাবেন।
আচ্ছা ছোট ম্যাডাম সাবধানে জাইয়েন।
ঠিক আছে চাচা। বলে কল কেটে ব্যাগে রেখে দিলো। কিন্তু অসাবধানতা বশত ফোনটা ব্যাগের ভিতর না পড়ে পড়লো চেয়ারের পাশে ঘাসের ওপর।
মলি বললো কোন সমস্যা?
হুম সমস্যাই তো, গাড়ি নষ্ট হয়ে রাস্তায় বসে আছে।
মলি বললো, আমি তোকে নামিয়ে দিবো চিন্তা করিস না।
প্রিয়া বললো, না দোস্ত লাগবে না। তোর বাসার রাস্তা উল্টো দিকে। আমি রিক্সায় চলে যেতে পারবো।
তারপর আরো কিছুক্ষণ সবাই গল্প করে।
প্রিয়া বললো,আমি আসি রে। রিক্সায় যেতে এমনিতেই দেরি হবে। দাদী টেনশন করবে, না খেয়ে বসে থাকবে।
কালকে আবার দেখা হবে বলে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
প্রিয়া গল্প করতে করতে ভুলেই গেল ওর ফোনের কথা। ফোনটা পরে রইলো ফুচকার দোকানের চেয়ারের পাশের ঘাসের ওপর।
ইমন বিষয়টা খেয়াল করে আর বিশ্ব জয়ের একটা হাসি দেয়। সবার চোখের আড়ালে মোবাইলটা তুলে নেয়।
প্রিয়া রিক্সায় উঠে বসে। রিক্সা চলতে থাকে। প্রিয়া দেখতে পেলো না ওদের দিকে তাকিয়ে থাকা সেই হ্যান্ডসাম ছেলেটি ওর রিক্সার ঠিক পিছনেই বাইকে করে ওকে ফলো করছে।
বাসায় এসে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটানোর সময় দেখলো সেই ছেলেটি বাইক পার্ক করছে। প্রিয়া একটু অবাক হলো, একটু না অনেক খানি অবাক হলো।
কে এই ছেলে? এখানে এলো কেনো, কোন বাসায় এসেছে। নাকি সে এখানেই থাকে? অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, নিজের মাথায় নিজেই একটা চাটি মেরে সব প্রশ্ন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সিড়ি বেয়ে ওপরে চলে গেলো।
আজকেও সবাই ব্যাডমিন্টন খেলতে নেমেছে। শুধু ইমন ছাড়া।
ইমন এখনও খেলতে নামেনি। আজকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রিয়ার কলেজের সামনে রোদে দাড়িয়ে থেকে একটু বেশীই টায়ার্ড হয়ে গেছে। বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে, দুপুরের খাবার খেয়ে এসি অন করে আরামে একটা ঘুম দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু ঘুমটা ঠিক মত হয়ে ওঠেনি। কারণ একটু পরপর প্রিয়ার ফোনে কল বেজে উঠছে। ইমন প্রিয়ার ফোন ঘেঁটে ফেইস বুকে ঢুকে নিজে ওর ফ্রেন্ড লিস্টে অ্যাড হয়।
তারপর নিজের নাম্বারটা সেভ করে দেয়। তারপর ওর ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে বেশ কিছু ছবি নিজের ফোনে সেভ করে নেয়।
মাহিন কল করে ওকে ডাকলো, কইরে ইমন খেলবি না? সবাই এসে গেছে তো, নিচে নাম।
একটু পরেই আসছি তোরা শুরু কর।
এক দল খেলা শুরু করে দিলো।
রাশেদ খুব ভয়ে ভয়ে আছে, ইমনের দেয়া কাজটা এখনও করতে পারিনি। খুব ছোট হয়ে গেলাম ওর কাছে। সব নীপার জন্য। ইচ্ছা করছে ডা*ই*নিটার গলা টি/পে দেই। কথা বলবো না ওর সাথে। অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণ। এতো ভালোবাসি সেটা বোঝেনা।
ওদিকে নীপার দল খেলতে নেমেছে। নীপার খেলায় মন নেই। বারবার রাশেদের দিকে তাকাচ্ছে। রাশেদ ফিরেও তাকাচ্ছে না। নীপা বুঝতে পারছে রাশেদ ভয়ানক রে*গে আছে। তাই তো ওর ফোন ধরছে না। নিজ থেকেও ফোন করছে না। খুব কান্না পাচ্ছে নীপার। ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেন? আমি কিভাবে ওর রাগ ভাঙাবো। এসব ভাবতে ভাবতে নীপা খেলা থেকে আউট হয়ে গেলো।
প্রিয়া আজ খেলছে না, মুখ ভার করে বসে বসে খেলা দেখছে। ওর মন খারাপ, কলেজ থেকে ফেরার পর ব্যাগে হাত দিয়ে দেখে ফোন নেই। কল দিয়ে দেখেছে রিং হয়, কিন্তু কেউ রিসিভ করে না। ফোনটা কোথায় পড়ে গেছে মনে করতে পারছে না।
শেষের কলটা করেছিলো ড্রাইভার চাচাকে, তারপর তো ফোন ব্যাগেই রেখেছিল। তাহলে ফোনটা গেলো কোথায়?
নীপা গিয়ে প্রিয়ার পাশে বসলো।
প্রিয়া বললো, কিরে আজকে এতো তাড়াতাড়ি বসে পড়লি।
ভালো লাগছে না ইয়ার। মনটা খুব খারাপ।
কেনো কি হয়েছে?
রাশেদ আমার সাথে ব্রেকআপ করেছে।
বলিস কি মাসে কয়বার ব্রেকআপ হয় তোদের? তারপর আবার প্যাচাপ করিস কিভাবে? পারিস ও তোরা।
ইমন এসে খেলতে শুরু করেছে। হঠাৎ প্রিয়ার চোখ যায় ইমনের দিকে। ইমনকে এখানে খেলতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়।
নীপা তুই কি ওই ছেলেটাকে চিনিস?
ইমনকে দেখিয়ে প্রিয়া জিজ্ঞেস করলো।
নীপা বললো, হুম চিনি তো। ওটা ইমন ভাইয়া,
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছে। A উইংসে উনাদের বাসা। ওই বিল্ডিংয়ের দোতলায় থাকে। কেনো বল তো, কিছু করেছে নাকি?
না কিছু করেনি। আজকে উনাকে আমি আমাদের কলেজের সামনে দেখেছি আবার এখানেও দেখছি তাই জিজ্ঞেস করলাম।
ও আচ্ছা,
উনি খুব ভালো ছেলে। সবার উপকার করে বেড়ায়। পড়াশুনায় ও ভালো। সভাবচরিত্র ও খুব ভালো। উনারা, আমরা অনেক বছর ধরে এখানে থাকি।
চিনিস নাকি তাকে?
হুম উনিও আমাকে চিনে আমিও উনাকে চিনি অথচ আমাদের কোনদিন কথা হয়নি। আজকেই একটু কথা হলো।
তাই নাকি, কি কথা হলো?
না তেমন কিছু না কেমন আছি জিজ্ঞেস করলো, কোন কলেজে পড়ি এইসব।
ওদিকে ইমনের চোখ জোড়াও প্রিয়াকে খুজে চলেছে। প্রিয়া সাইডে বসা তাই ওকে দেখা যাচ্ছে না।
রাশেদ ইমনকে জিজ্ঞেস করলো, কি রে আজকে ক্লাসে যাস নি কেনো? তোর জন্য ওয়েট করছিলাম।
একটু কাজ ছিলো তাই যেতে পারিনি। কাল যাবো।
ওকে আমি অপেক্ষা করবো। আমি তোর কাজটা এখনও করতে পারিনি দোস্ত। নীপার সাথে ঝগড়া চলছে।
টেনশন নিস না, ব্যাপার না। আমি ম্যানেজ করে নিবো। তুই যে কোন কাজের না এটা আমি আগে বুঝিনি। বন্ধুরে একটা প্রেম করাইয়া দিবি সেটা পারিস না। অথচ নিজে চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছিস।
না রে দোস্ত প্রেম করে কেউ শান্তিতে নেই। প্রেম মানেই প্যারা। এখন বুঝবি না, প্রেমে পরে দেখ তখন বুঝবি।
চলবে….
#ভুলে_থাকা_গল্প
#লেখা__ইয়ানা_রহমান
#পর্ব -৫
রাতে আব্বু আম্মু দাদীর সাথে ডিনার করতে বসেছে প্রিয়া। কিন্তু সে কিছুই খাচ্ছে না। প্রিয়ার পছন্দের গলদা চিংড়ির মালাইকারি রান্না হয়েছে আজ। কিন্তু প্রিয়ার সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কোন। ভাতের ওপর হাতের আঙ্গুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাড়াচাড়া করছে।
আব্বু বললো,
প্রিয়া খাচ্ছিস না কেনো মা? শরীর খারাপ? সেই তখন থেকে দেখছি তোর মুখটা কেমন ভার।
কি হয়েছে মা আমাকে বল।
কিছু না আব্বু শরীর ঠিক আছে। এমনিই মনটা ভালো নেই।
এমনি এমনি কি কারো মন খারাপ হয় বললো প্রিয়ার আম্মু জোবায়দা আহমেদ। কি হয়েছে বল আমাদের। না বললে বুঝবো কিভাবে?
দাদী বললো, আমিও খেয়াল করেছি, কলেজ থেকে ফেরার পর থেকেই কেমন যেনো বিষণ্ণ দেখাচ্ছিলো। মন মরা হয়ে কিছু খুঁজছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলেনি।
রায়হান আহমেদ প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
কি হয়েছে মা, আমাকে বলবি না?
আব্বু আমি আমার মোবাইল ফোনটা হারিয়ে ফেলেছি। ড্রাইভার চাচার সাথে কথা বলার পর ব্যাগেই রেখেছিলাম, আমার স্পষ্ট মনে আছে কিন্তু বাসায় এসে দেখি ব্যাগে ফোনটা নেই।
ও এই কথা, এইজন্য আমার মেয়ের মন খারাপ? ফোনে কল করে দেখেছিস রিং হয় কিনা?
হুম দাদীর ফোন দিয়ে কল করে দেখেছি রিং হয় কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করে না। একটু আগেও দাদীর মোবাইল দিয়ে কল করে দেখলাম, এখন আর রিং হচ্ছে না ফোন বন্ধ।
আচ্ছা কালকে কলেজে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখ কেউ পেয়েছে কিনা। আর না পেলে পরশু বিকেলে তুই আর আমি মার্কেটে গিয়ে একটা নতুন ফোন কিনে নিয়ে আসবো।
জোবায়দা আহমেদ বললো, কালকে কলেজে যাওয়ার পর ফোন খুজে পেলে ভালো কথা, আর না পেলে পরশু না, কালকেই ওকে ফোন কিনে দিতে হবে। না হলে ওর খোজ নিবো কিভাবে? ওই বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে কিভাবে? আর রাস্তা ঘাটের ব্যাপার কত রকম সমস্যা হতে পারে। ওর ও তো আমাদের দরকার হতে পারে। তাই কালকে বিকালেই ওকে সাথে নিয়ে গিয়ে ভালো দেখে নতুন একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিও, রায়হান সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো।
রায়হান সাহেব বললো, ঠিক আছে আমি কালকে ওকে মার্কেটে নিয়ে যাবো। ওর পছন্দমত একটা মোবাইল ফোন কিনে দিবো।
কিরে মা এবার খুশি তো?
প্রিয়া হেসে ফেললো, হুম।
তাহলে এখন ভাত খা। তোর প্রিয় চিংড়ির মালাইকারি তোর অপেক্ষায় আছে।
প্রিয়া এবার নিশ্চিন্ত মনে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
রায়হান সাহেব মেয়ের দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে চেয়ে দেখলেন। মেয়েটা তার খুব প্রিয়। ওর মুখের দিকে তাকালে মনটা ভরে যায়। মেয়ের মলিন মুখ দেখলে প্রাণটা ছ্যাৎ করে ওঠে।
ওর হাসিখুশি মুখটা তার বড্ড বেশি প্রিয়। মেয়েটা যেনো তার জান। এই মেয়েকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন। মেয়েকে সফলতার শীর্ষে দেখা তার অনেকদিনের লালিত স্বপ্ন।
ওদিকে ইমন প্রিয়ার ফোন ঘাটা শেষ করে ফোনটা বন্ধ করে দেয়। ভাবে কালকে যেকোন সুযোগে ফোনটা ফেরত দিয়ে দিবে।
ভাবীমা ইমনের রুমে এসে খাটের একপাশে বসে জিজ্ঞেস করে_ কিরে আমার বোনকে তোর কেমন লাগলো বললি না তো!
কেমন আবার লাগবে, সব মেয়েদের যেমন লাগে তোমার বোনও তেমন। তোমার বোনের মাথায় কোন শিং ছিলো না তো! শিং থাকলে না হয় স্পেশাল দেখাতো।
আমার এতো সুন্দরী বোন আর সব মেয়ে কি এক হলো? ওর মাথায় শিং থাকলে বুঝি তোর খুব ভালো লাগতো?
হুম ভালো লাগতো তো, মাথায় শিং গজানো একটা মেয়ে মানুষ দেখতে একটু অন্য রকম লাগতো না?
ওরে বদমাশ, বলে ভাবীমা ইমনের কান টেনে দিলো।
বলনা চম্পাকে তোর কেমন লাগলো?
ভাবীমা’র হাত থেকে কান ছাড়িয়ে নিয়ে কান ডলতে ডলতে বললো, তুমি কি বলতে চাইছো বুঝিয়ে বলো তো?
আমি চাইছি তুই আমার বোনের সাথে ফ্রেন্ডশীপ কর, আর ধীরে ধীরে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যা। তারপর না হয় অন্য কিছু ভাববো।
কি যে বলো না তুমি? মেয়েদের সাথে ফ্রেন্ডশীপ করবো আমি! অসম্ভব। ওদের সাথে আমার বনে না। মেয়েদের আদিক্ষেতা আমার সহ্য হয় না।
এটা কোন কথা হলো, বিয়ে কিন্তু একটা মেয়েকেই করতে হয়, তখন সহ্য করবি কিভাবে?
সেটা অনেক সময়ের ব্যাপার। তখনকারটা তখন দেখা যাবে। তুমি এখন যাও আমি ঘুমাবো।
এতো তাড়াতাড়ি আজকে তোর ঘুম পেয়ে গেলো? রোজ তো ঘুমাস অনেক দেরিতে। আজকে কি হলো, হঠাৎ শুভ বুদ্ধির উদয় হলো কিভাবে? আচ্ছা আমি যাচ্ছি, তুই ঘুমিয়ে পর।
ভাবীমা চলে যেতেই ইমন প্রিয়ার ফেইসবুকে ঢুকে পোস্ট করা সব ছবি বারবার দেখতে লাগলো। বারবার দেখেও যেনো তৃপ্তি হয় না। মন ভরে না।
মোবাইলের স্ক্রিনে প্রিয়ার ছবিতে কতবার যে ঠোঁট ছুঁয়ে ভালোবাসার পরশ দিয়েছে তার ঠিক নেই। অনেক কথা বলে যাচ্ছে প্রিয়ার ছবির সাথে।
ঘড়ির অ্যালার্মে পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পরে ইমন।
ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিল রাতেই। সকালে প্রিয়া কলেজে যাওয়ার আগে যেনো ওকে একবার দেখতে পায়, দেখাটা যেনো কোনভাবেই মিস না হয় তাই।
আজকের সকালটা অনেক সুন্দর আর উজ্জ্বল। সূর্য তার নরম আলো বিলিয়ে দিচ্ছে। পরিবেশটাকে খুব স্নিগ্ধ মনে হচ্ছে। শীতের আগমনী হালকা হিমেল হাওয়া মনটাকে ফুরফুরে করে দিচ্ছে।
ইমন বারান্দায় হাফ গ্রীলে দুহাতে ভর দিয়ে একহাতের আঙ্গুলের ভিতর আরেক হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে সামনের দিকে একটু ঝুঁকে দাড়িয়ে রইলো। প্রিয়ার বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।
প্রিয়া বেরিয়ে আসতেই ইমনের বাসার দিকে তাকালো। কালকে নীপা বলেছিলো ইমন A উইংসের দোতলায় থাকে। তাই একবার সেদিকে তাকিয়েছিল। ও ভাবেনি ইমনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখবে। প্রিয়া দেখলো ইমন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। দুজনের চোখাচোখি হতেই ইমন মিষ্টি একটা হাসি দিলো।
প্রিয়া লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। গাড়িতে উঠে চলে গেলো। গাড়িতে বসে ভাবতে লাগলো ছেলেটা ওকে কি ভাবলো? নিশ্চয়ই হ্যাংলা ভেবেছে, ছি ছি কি লজ্জা কি লজ্জা।
রাশেদ আর নীপার মান অভিমান ভাঙেনি। রাতে নীপা অনেকবার কল করেছে কিন্তু রাশেদ কল রিসিভ করে নি। তারপর নীপা মেসেজ করেছে।
স্যরি বাবু, আমার ভুল হয়েছে। ক্ষমা করে দাও। তুমি কথা না বললে আমি ম/রে যাবো। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ রাগ করে থেকো না। এই যে আমি কান ধরছি, আর তোমাকে সন্দেহ করবো না। প্লিজ আমার সাথে কথা বলো।
রাশেদ মেসেজ সিন করে কিন্তু কোন রিপ্লাই দেয় না।
নিজে নিজেই বলতে থাকে তোর কষ্ট পাওয়াই উচিৎ। আর ম/রে গেলে ম/রে যা।
আমি তোর জন্য ইমনের কাছে অনেক ছোট হয়েছি। এতো সহজে তোকে ক্ষমা করবো না। কিছু হলেই সন্দেহ করবে আর বাজে কথা বলবে, পেয়েছে কি? এবার একটা শিক্ষা দিয়ে তারপর তোর সাথে কথা বলবো। এতো ভালোবাসি সেটা মোটেও বোঝেনা। গবেট একটা। সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েছে তো তাই মূল্য দিলো না। হারিয়ে গেলে বুঝবি সেদিন।
.
ইমন আর রাশেদ নিজেদের বাইক নিয়ে একসাথে ভার্সিটিতে চলে গেলো।
নীপা আজও কলেজে যায়নি। রাশেদের যাওয়ার সময় ওর সাথে সামনাসামনি কথা বলার জন্য দাড়িয়ে ছিলো। আর কথা না বলে থাকতে পারছে না। আজকে ওর সাথে কথা বলে সব ঠিক করবেই, এই পরিকল্পনা নিয়েই রাস্তার একপাশে এসে দাড়িয়ে আছে।
রাশেদ বাইক নিয়ে বের হতেই নীপাকে দেখলো। নীপা ডাকলো রাশেদকে। রাশেদ একবার নীপার দিকে তাকিয়ে দেখলো কিন্তু কোন কথা না বলে বাইক নিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো।
রাশেদের নীপাকে দেখে খুব খারাপ লাগলো। এই দুদিনেই মেয়েটা চেহারার কি হাল করেছে। দেখে তো মনে হচ্ছে এই দুদিন খাওয়া দাওয়া করেনি। আর ঘুমায়নি নিশ্চয়ই। তাইতো চোখের নিচে কালি পড়েছে। আমি কি ওর প্রতি অন্যায় করে ফেলেছি? ও যদি ভুল কোন ডিসিশন নিয়ে নেয়? কিছু করে বসে? তখন আমার কি হবে, আমি যে ওকে খুব ভালোবাসি। এসব ভাবছে আর এগিয়ে যাচ্ছে।
পিছনে ইমনের বাইক। ইমন বাইক থামিয়ে বললো, নীপা এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো? আজও কলেজে যাওনি? তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
না ভাইয়া আমার কিছু হয়নি, আমি ঠিক আছি। এমনি কলেজে যাইনি। পরীক্ষার জন্য পড়ছিলাম।
এখানে কি করছো?
মেডিসিন নিতে এসেছি।
ইমনের কাছে রাশেদের কথা খুব বলতে ইচ্ছে করলো নীপার কিন্তু লজ্জায় সংকোচে কিছুই বলতে পারলো না।
মেডিসিন নেয়া হলে বাসায় যাও, রাস্তায় দাড়িয়ে থেকো না। লোকে খারাপ বলবে।
ইমন শেষের ক্লাসটা করলো না। সে দ্রুত বাইক ছুটিয়ে প্রিয়ার কলেজের সামনে এসে দাড়ালো। ঠিক সময়েই এসেছে। মাত্রই কলেজ ছুটি হয়েছে। মেয়েরা দলে দলে গেটের বাইরে বেরিয়ে আসছে। আর একটু দেরি হলেই হয়তো প্রিয়ার দেখা পেতো না।
প্রিয়া ওর বান্ধবীদের সাথে গেটের বাইরে বেরিয়ে এলো। আজও ফুচকার দোকানে গিয়ে বসলো। সব বান্ধবীরা নিজেদের মধ্যে গল্পে ব্যস্ত। ফুচকার অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছে ওরা।
সাদিয়া বললো, ওই দেখ কালকের ওই হিরোটা আজও এসে বসে আছে।
কিন্তু সে কার জন্য এসে বসে থাকে বলতো?
আমাদের এদিকেই তো তাকিয়ে আছে।
কালকেও আমাদের এদিকেই তাকিয়ে ছিল আর আজকেও আমাদের এদিকেই তাকিয়ে দেখছে। সত্যি করে বলতো এই রোমিও কার জন্য অপেক্ষা করছে। সত্যি করে বল ওই রোমিওর জুলিয়েট টা কে?
মলি বললো, দাড়া আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করে জেনে আসি। যদি কোন সদুত্তর না পাই তাহলে কয়েকটা কথা শুনিয়ে আসবো। এভাবে নির্লজ্জের মত মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আছে কেনো। আমাকে তো চিনে না বাছাধন। একেবারে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে দিবো। আর কোনদিন এমুখো হওয়ার সাহস পাবে না।
প্রিয়া মলিকে বলে উনাকে কিছুই বলার দরকার নেই তোর। যার জন্য বসে থাকে থাকুক। সরকারী রাস্তায় যে কেউ বসে থাকতেই পারে। ঝামেলা করে লাভ নেই, কে না কে শেষে হিতে বিপরীত হতে পারে।
প্রিয়া নিজেও কিছু বুঝতে পারছে না। ছেলেটা এখানে কার জন্য আসে? কারো সাথে কথা বলতেও তো দেখে না।
কেউ ওকে কিছু বললে প্রিয়ার ভালো লাগবে না কারণ ওরা একই সোসাইটিতে পাশাপাশি বিল্ডিংয়ে থাকে।
ফুচকা খেয়ে পাশের দোকান থেকে একটা কোক কিনতে গেলো প্রিয়া।
ইমন প্রিয়ার পিছু পিছু গেলো। দোকানে ভিতরে গিয়ে একদম প্রিয়ার পিঠ ঘেষে দাড়ালো ইমন। দোকানে অনেক ভিড় ছিল তাই প্রিয়া ব্যাপারটা খেয়াল করলো না।
প্রিয়া কোক কিনে ছিপি খুলে এক ছিপ কোক খেয়ে ফিরে আসার জন্য ঘুরতেই ইমনের সাথে ধাক্কা খেল। ভরা বোতল থেকে কিছুটা কোক ছলকে ইমনের শার্টের ওপর পড়লো।
প্রিয়া বললো স্যরি স্যরি আমি খেয়াল করিনি। ইশ আপনার শার্টটা তো নষ্ট হয়ে গেলো।
অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ইমন হার্টের একটা বিট মিস করলো। মুখে বললো ইটস ওকে। কিন্তু মনে মনে বললো, মেঘ না চাইতেই জল। প্রিয়ার এতো কাছে দাড়িয়ে ইমনের নিজের ভিতর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। একটা ভালো লাগা কাজ করছে। ঘোর লাগা চোখে প্রিয়াকে দেখতে লাগলো।
প্রিয়া দোকানদারের কাছ থেকে পানি চেয়ে নিলো। তারপর ইমনকে একটা সাইডে নিয়ে বললো, হাতে একটু পানি নিয়ে কোক পরা জায়গাটা একটু ক্লিন করে নিন।
ইমন হাতে পানি নিয়ে শার্টে কোকের ভিজা অংশটা যতটা সম্ভব ক্লিন করে নিলো।
প্রিয়া আবার স্যরি বললো।
ইমন বললো নো প্রবলেম, এতবার স্যরি বলতে হবে না। আমি কিছু মনে করিনি।
প্রিয়া চলে আসতেই ইমন ডাকলো,
প্রিয়া শুনুন।
প্রিয়া ফিরে তাকালো, কিছু বলবেন? আর আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
ইচ্ছে থাকলে সবই সম্ভব। তাই আপনার নাম জানাটা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল না।
ইমন প্রিয়ার মোবাইল ফোনটা ওর দিকে এগিয়ে দিলো। আপনার ফোন।
প্রিয়া চরম অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো, আমার ফোন আপনার কাছে কেনো? ফোনটা আপনার কাছে গেলো কিভাবে? কোথায় পেলেন এটা? আমিতো কালকে ফোনটা হারিয়ে ফেলেছিলাম।
আপনার ফোন হেঁটে হেঁটে আমার কাছে আসেনি। আমি ফোনটা তুলে নিয়েছিলাম।
মানে? কি বলছেন বুঝিনি। খুলে বললে ভালো হয়।
মানে, কালকে আপনি ফোন ব্যাগে রাখতে গিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন। তখন আমি তুলে নিয়েছিলাম। কাল থেকে ফোনটা আমার কাছেই ছিল। আজকে ফোন ফেরত দিতেই এসেছি।
তাহলে কালকে যখন পেয়েছিলেন তখন সাথে সাথে দেন নি কেন? জানেন আমি ফোনটা কত খুঁজেছি। আর কতবার কল করেছি। আপনার কাছে ফোন ছিলো তাহলে কল রিসিভ করেননি কেনো?
আজকে ফোন ফেরত দিয়ে কিছুক্ষণ সামনাসামনি কথা বলবো এই আশায় কালকে ফোন ফেরত দেই নি। আর কল রিসিভ করিনি।
কি কথা বলবেন আমার সাথে? আপনি কি আমাকে আগে থেকেই চিনেন?
চিনি কিন্তু আমাদের মধ্যে কখনো কথা হয়নি।
আমি আপনার বন্ধু হতে চাই। আমার বন্ধু হবেন?
আপনি আর আমি বন্ধু হবো কিভাবে? আপনি একজন ছেলে আর আমি একজন মেয়ে। ছেলে আর মেয়েতে কি বন্ধু হয় কখনো?
কেনো বাধা কোথায়? আমরা ছেলে আর মেয়ে বলে কি বন্ধু হতে পারি না?
না মানে আমরা কেউ কাউকে চিনি না জানি না, আপনি ছেলে আমি মেয়ে, আপনি বয়সে আমার বড়, আমি আপনার ছোট তাহলে বন্ধুত্ব হবে কিভাবে?
বন্ধু হতে সমবয়সী হতে হয় না আর বন্ধুর কোন জেন্ডার ভেদ হয় না। আমরা দুজন প্রতিবেশী, আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব হতেই পারে। বন্ধুত্ব করে দেখেন ঠকবেন না। আমি মানুষটা খারাপ না। বলেই প্রিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো আমি ইমন।
প্রিয়া মোবাইলটা ব্যাগে রেখে বললো, আপনার কথা ভেবে দেখবো। ফোনটা ফেরত দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আসি আমার গাড়ি এসে গেছে।
প্রিয়া বান্ধবীদের কাছে এসে ওদের সাথে কোক শেয়ার করে খেলো।
সাদিয়া বললো, এতক্ষণ ওই লোকটার সাথে কি কথা বললি?
আমি বলেছিলাম না কাল আমার ফোন হারিয়ে গেছে, উনি পেয়েছেন তাই ফেরত দিলো। ফোন বের করে ওদের দেখালো।
মলি বললো, ফোন ফেরত দিয়ে আবার মন নিয়ে যায়নি তো?
স্নেহা বললো, উল্টোটাও হতে পারে, ফোন ফেরত নিয়ে ওর মনটা নিজেই পুষ্পশোভিত ট্রেতে সাজিয়ে ওই হিরোকে দিয়ে এসেছে।
কি যে বলিস না, আমার কারো সাথে প্রেম হলে তোরাই সবার আগে জানবি। আমি গেলাম গাড়ি দাড়িয়ে আছে।
প্রিয়া গাড়িতে আর ইমন বাইক নিয়ে পিছনে পিছনে প্রিয়ার গাড়ি ফলো করছে।
অনেক রাতে ইমন প্রিয়ার মেসেঞ্জারে কল করে।
প্রিয়া পড়া শেষ করে কলেজ ব্যাগ গুছিয়ে, পড়ার টেবিল গুছিয়ে মাত্রই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।
প্রিয়া ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায় কে ফোন করেছে দেখার জন্য। ফোনের স্ক্রিনে ইমন নামটা দেখে ওর চক্ষু বড় বড় হয়ে যায়, দুই ঠোঁট একটু ফাঁক হয়ে যায়। এটা কার নাম, কার নাম্বার। আমার এই নামে চেনা কেউ আছে বলে তো মনে পড়ছে না। ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেল।
আবার রিং টোন বেজে উঠলো। কয়েকবার বাজলো।
প্রিয়া ফোন ধরলো না।
টুং করে একটা মেসেজ আসলো।
মেসেজ ওপেন করতেই দেখলো সেখানে লেখা, প্লিজ ফোনটা ধরুন। একটু কথা বলবো। এতো পাষাণ হবেন না। আমি আপনার বন্ধু, শত্রু নই। আপনাকে আমার অনেক কথা বলার আছে। আপনার সাথে কথা বলবো বলে সেই কখন থেকে ছটফট করছি।
চলবে…..