ভুলে_থাকা_গল্প,০২,০৩

#ভুলে_থাকা_গল্প,০২,০৩
#লেখা__ইয়ানা_রহমান
#পর্ব_২

প্রিয়া লেখা পড়া নিয়ে খুব সিরিয়াস। এসএসসি তে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলো। এবারও সেই রেজাল্ট আশা করছে। তাই সে অন্য কোন দিকে সময় ব্যয় না করে শুধুই পড়াশুনায় কনসেন্ট্রেশন করে।
প্রিয়ার ইচ্ছে সে মায়ের মত ডক্টর হবে।

প্রতিদিন সকালে কলেজে চলে যায়, কলেজ ছুটি হয় আড়াইটায়। কলেজ থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে ভাত খায় দাদীর সাথে। প্রিয়া যতক্ষন না ফিরে ততক্ষণ জমিলা খাতুন নাতনী প্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। প্রিয়া ফিরে এলেই দুজনে বসে বাইরে কি হলো সেই গল্প করতে করতে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। তারপর এক দেড় ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে। আসরের নামাজ আদায় করেই পড়তে বসে। বুয়া এসে এক কাপ কফি দিয়ে যায়। কফি খেতে খেতে আজকের ক্লাসের নোটসগুলি দেখতে থাকে। মাঝে মাঝে বিল্ডিংয়ের বান্ধবীরা আসে। তাদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দেয়।চা নাস্তা খায়। তারপর মাগরিবের আযান হলে নামাজ আদায় করে সেই যে পড়তে বসে রাত এগারোটার আগে কখনোই ওঠে না। প্রিয়ার ফেইসবুক একাউন্ট আছে কিন্তু খুব বেশি এক্টিভ না সেখানে। কলেজের বান্ধবীরা ম্যাসেঞ্জারে পড়াশুনা নিয়ে অনেক ডিসকাস করে, সেই জন্যই ফেইসবুক একাউন্ট রেখেছে। যখন বোর ফিল করে তখন একটু নিউজ ফিডে ঘুরাঘুরি করে, আর মাঝে মাঝে নিজের দু চারটা ছবি পোস্ট করে। এই হলো প্রিয়ার নিত্যদিনের রুটিন। তাহলে ওকে বাইরের কেউ চিনবে কিভাবে। ওরা এই বিল্ডিংয়ে এসেছে খুব বেশিদিন না আবার একেবারে নতুনও না।

ওর মা হসপিটাল ডিউটি শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে তরকারিটা রান্না করে। আর বিশেষ কিছু হলে সে নিজের হাতেই রান্না করে। অন্যন্য রান্না কাজের বুয়া ই করে।
সন্ধার পর জোবায়দা আহমেদ চেম্বারের জন্য বেরিয়ে যায়, ফিরে সেই রাত এগারোটার পর।
বাবা রায়হান আহমেদ ও নয়টা দশটার আগে বাসায় ফিরে না। আর ফিরলেও বসে বসে টিভিতে টক শো দেখে। অফিস থেকে ফেরার পথে প্রায়ই বাজার করে ফেরে। সপ্তাহের ছুটির দিনটা তার অনেক প্রিয়। সেদিন সে পরে পরে ঘুমায়। কোন কাজ করে না। শুধু নামাজ পড়ে খায় আর রেস্ট নেয়। মাঝে সাঁঝে কোন নিমন্ত্রণ থাকলে সেখানে অ্যাটেন্ড করেন। এ ছাড়া ছুটির দিনটা সে নিজের জন্য রাখে। কিছুক্ষণ প্রাণপ্রিয় মেয়ে আর মায়ের সাথেও গল্প করে। সে খুব শান্তি প্রিয় মানুষ। কোন ঝুট ঝামেলা হৈচৈ তার পছন্দ না।

.
ইমনের ভাই বিজনেসের কাজে সারাদিন বাইরে থাকে। কখনো কখনো বিজনেসের কাজে দেশের বাইরে যায়, সাথে স্ত্রী লিজাকে নিয়ে যায়। স্ত্রীকে লিমন চৌধুরী খুব ভালোবাসে। সন্তান নেই সেজন্য তার মনে কোন আক্ষেপ নেই। আল্লাহ চায়নি তাই সন্তান দেননি। ইমন আছে, ছোট ভাই হলেও সে তাদের সন্তানের চেয়ে কোন অংশে কম না।
লিজা একটি প্রাইভেট কলেজে পড়ায়। সকালে সবার নাশতা রেডি করে দিয়ে, নিজেও খেয়ে বেরিয়ে যায়, দুপুরে তিনটার দিকে বাসায় ফিরে আসে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কোমরে আচল গুঁজে লেগে পড়ে সংসারের কাজে। বাসায় ছোট একটা কাজের ছেলে আছে। নাম রফিক। একদম ফাঁকিবাজ সে, সারাদিন খেলে বেড়ায়। লিজা বাসায় না থাকলে রফিক সংসারের কোন কাজ করে না। এমনকি ঘরটাও ঝাড় দেয় না। তাও লিজা রফিককে কিছু বলে না, আর কিছু না হলেও ফুট ফরমায়েশ, দোকানে পাঠানো, বাসা দেখে রাখাটা তো হয়। এই যথেষ্ট। বার তের বছরের ছেলে এর বেশি আর কি করবে। আর রফিক হচ্ছে ইমনের এসিস্ট্যান্ট, ইমনের কোন কাজের কথা বলতে দেরি সেই কাজ করতে দেরি হয় না। ইমন রফিককে খুব স্নেহ করে, কিছু খেতে টুকটাক টাকা পয়সা দেয়, নিজে চকলেট চিপস কিনে এনে দেয়, জামা কাপড় জুতো কিনে দেয়।

রফিক সেদিন ইমনের বেডসাইড টেবিলের ওপর থেকে ইমনের সানগ্লাস পড়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাড়িয়ে হিরোর মত হাত নেড়ে অভিনয় করছিলো, সেটা ইমন দরজায় দাড়িয়ে দেখছিলো আর হাসছিলো। তারপর হাত তালি দেয় ইমন।

বাহ রফিক তুই তো ভালই অভিনয় করতে পারিস। ভবিষ্যতে হিরো হতে পারবি।

রফিক একটু ভয় পেয়ে যায়, ভাবে ভাইয়ার প্রিয় সানগ্লাসে হাত দিয়েছি,
আজকে আমার আর র/ক্ষে নেই।
কিন্তু ইমন কিছুই বলেনি, উল্টো পরের দিন রফিকের জন্য একটা সানগ্লাস আর একটা ঘড়ি কিনে এনে দিয়েছে।
রফিক তো মহা খুশি সেগুলি পেয়ে। সারাদিন সে একটু পরপর সানগ্লাস চোখে পরে। ঘড়ির কথা আর কি বলবো। সারাক্ষণ ঘড়ি হাতেই থাকে। ঘুমানোর সময় ও ঘড়ি হাতে নিয়ে ঘুমায়।

ইমন ভার্সিটিতে যায় নয়টায় আর ক্লাস শেষ করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা গল্পগুজব করে ফিরে আসে বিকেল চারটায়।
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আবার সমাজ উদ্ধার করতে বেরিয়ে যায়। ফিরে রাতের বেলা। পড়ে না খুব একটা। পরীক্ষা এলেই বইয়ের আর নোটসের ওপর হামলে পরে।রেজাল্টও ভালোই করে। ইমনের মেয়েলি কোন সভাব নেই। ওর ধারণা প্রেম করলেই কারো আন্ডারে থাকতে হবে। তার কথা মত চলতে হবে। এসব তার পোষাবে না। এখন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে। এই ফ্রিডম লাইফ তার অনেক পছন্দ। কোন মেয়ের চক্করে পড়ে স্বাধীনতা হারাতে রাজি না সে। ওর বন্ধুদের তো দেখছে একেকজন প্রেমে পড়ে নিজেদের কি হাল করেছে।

জীবনের সেই স্বাধীনতা প্রিয় ইমন এখন একটা মেয়ের কথা ভেবেই চলেছে। খোলা চোখেও মেয়েটিকে দেখছে, চোখ বন্ধ করলেও মেয়েটিকেই দেখছে। রেস্টলেস ভাবে সময় পার করছে। কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না। খুব অস্থির লাগছে।
বারবার উঠে পানি খাচ্ছে। তারপরও পিপাসা কমছে না। কখন সকাল হবে কখন রাশেদ মেয়েটির খবর এনে দিবে।

সেই রাতে ইমনের আর ঘুম হলো না। সারারাত নির্ঘুম কেটে গেলো। মনে মনে বললো,
এইজন্যই এতদিন প্রেমের জালে ধরা দেইনি। প্রেম মানেই যন্ত্রণা প্যারা। কিন্তু কিছুতেই মন থেকে মেয়েটিকে সরাতে পারছে না।
সকাল বেলা ব্যালকনিতে রাখা রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। অনেকক্ষণ সেখানে একইভাবে বসে রইলো।
নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো কালকের দেখা সেই অচেনা মেয়েটি সামনের বিল্ডিং থেকে বের হয়ে আসছে। পরনে তার কলেজ ড্রেস। সাদা ভাজ করা ওড়না, চুলগুলো দুই বেণী করে সামনে এনে রাখা, বেনীর প্রান্তে সাদা রীবন দিয়ে বাঁধা, পায়ে সাদা কেডস। গাড়িতে উঠে চলে গেলো।

ড্রেসের মনোগ্রাম দেখে বুঝে গেলাম এটা হলিক্রস কলেজের ড্রেস। আগে পরে রাস্তায় দেখেছে এই ড্রেস পড়া মেয়েদের।

কালকে দেখেছিলো একরকম আর আজ কলেজ ড্রেসে দেখেতো চোখ ফিরাতেই পারছে না। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে। মেয়েটিকে দেখে বুকের বা পাশে কেমন চিনচিন করে ব্যথা করে উঠলো। নিজের হাত মুঠি করে নিজের বুকের বাপাশে কি/ল মারতে থাকলো, বললো, হায় আমি তো শেষ। এই রূপের সাগরে আমি ডুবে ম/র/তে চাই। এরই নাম কি প্রেম? এইভাবে কি প্রেম হয়? মনে হয় আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। এই মেয়েকে আমার চাই যেমন করেই হোক, ওকে আমার সারাজীবনের জন্য চাই। বুকের খাঁচায় বন্দী করতে চাই।

চলবে……

#ভুলে_থাকা_গল্প
#লেখা__ইয়ানা_রহমান
#পর্ব -৩

সকাল সকাল প্রিয় মুখটি দেখে ইমন খুশি হয়ে গেলো। সারারাতের অস্থিরতা, নির্ঘুম রাতের কষ্টটা নিমিষেই দুর হয়ে গেলো। মনে মনে বলছে, এতো সকালে মেয়েটি বেরিয়ে যায়। আর আমিতো সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠি নয়টা সোয়া নয়টায়। তাই হয়তো এই পরীটার দর্শন কোনদিন পাইনি। এই একটুখানি দেখায় ইমনের বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হলো।

কলেজে পড়া কালীন সময়ে ইমন রোজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে জগিংয়ের জন্য বেরিয়ে যেতো। ভার্সিটিতে ঢোকার পর আর জগিংয়ে যায় না। রাত নয়টার দিকে জিমে যায়।
জিম করে শরীরটাকে একদম পিটানো ফিগারের তৈরি করেছে।

বলিষ্ঠ দেহের যুবক ইমন। উচ্চতা পাঁচ ফিট দশ/এগার ইঞ্চি। গায়ের রং শ্যামলা। খাড়া টিকালো নাক, বড় বড় চোখ, মাথা ভরতি সিল্কি চুল। সব মিলিয়ে ইমন দেখতে খুব হ্যান্ডসাম। হিরোর মত ভাব নিয়ে দামী বাইকে করে ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করে। ওর চাল চলন চোখে পড়ার মত। ভাবই আলাদা।

ভার্সিটির কত মেয়ের ক্রাশ ইমন। কত মেয়ের প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে কিন্তু ইমন কারো প্রেমের প্রস্তাব একসেপ্ট করেনি, ফিরিয়ে দিয়েছে সবাইকে। কোন মেয়েকেই পাত্তা দেয়নি। কোন মেয়েকে নিজের জীবনের সাথে জড়ায়নি।

ইমনের ছেলে বন্ধুর পাশাপাশি কয়েকজন মেয়ে বন্ধুও আছে। ইমন ওদের সাথে ঠিক মত কথাও বলে না।
অনেক মেয়েরা ওর জন্য হাপিত্যেশ করে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, পিঠপিছে ওকে অহংকারী বলে।

তাতে ইমনের কিছু এসে যায় না।

ইমন প্রচ্ছন্ন মন নিয়ে বারান্দা থেকে রুমে চলে এলো। মনের ভিতর প্রবল ঝর বইছে, তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভাঙচুর হচ্ছে কোথাও। স্থির হয়ে বসতেও পারছে না। এই অল্প দেখায় মন ভরে না। চোখ জুড়ায় না। আরো অশান্ত হয়ে পড়েছে অবাধ্য মনটা। বুকের ভিতরের এই ঝড়ের নাম কি ভালোলাগা ভালোবাসা।

ইমনের আর রুমে থাকতে ইচ্ছে করলো না। রান্না ঘরের থেকে টুংটাং শব্দ আসছে।
ইমন রান্না ঘরের দিকে গেলো। আজ তার সবই ভালো লাগছে। একটা ভালো লাগা ছেয়ে আছে মনে। চেহারাটাও খুশি খুশি দেখাচ্ছে।

লিজা রান্না ঘরে নাস্তা রেডি করছে।রফিক এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে।

ইমন গিয়ে বললো,
ভাবীমা কি করছো?

বাব্বাহ তুই এতো সকালে? সূর্য আজ কোন দিক দিয়ে উঠেছে? বলে জানালা দিয়ে উকি দিলো?

সূর্য রোজ যেদিক থেকে উঠে আজও সেই দিক থেকেই উঠেছে। আজ একটু আগে আগে ঘুম ভেঙেছে তাই তোমাকে হেল্প করতে আসলাম। বলো কি করতে হবে?

লিজা হেসে বললো, ইমন তোর কি হয়েছে বল তো? শরীর ঠিক আছে তো?
দেখি এদিক আয় কপাল ছুঁয়ে দেখি জ্বরটর হলো নাকি আবার!

ভাবিমা কি যে বলো না? তুমি একা একা কত কষ্ট করো, তাই তোমাকে একটু হেল্প করতে চাইলাম।

ইমনের দিকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে লিজা বললো, হেল্প করতে হবে না, এখন নাশতা খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর। তারপর বল তোর পড়াশুনার কি খবর?

সব ঠিকঠাক চলছে।

টাকা পয়সা লাগলে বলিস। টাকা যা লাগে চেয়ে নিবি, সংকোচ করবি না কিন্তু পড়াশুনায় যেনো কোন গাফলতি না দেখি।

আপাতত কোন টাকা পয়সা লাগবে না। পড়াশুনাও ঠিকমতই চলছে তুমি ভেবো না।

ভাইয়া কোথায়, সে খাবে না?

হুম ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেছে।
তুই ভার্সিটিতে যাবি কখন?

রোজকার সময়ে, কেনো জিজ্ঞেস করছো?

আমার মামাতো বোন চম্পা আসবে, ও একটা প্যাকেট দিয়ে যাবে, সেটা রেখে দিস। ব্যাস আর কিছু না।

তাকে চা কফি কিছু দিতে হলে?

ভাবীমা হেসে দিয়ে বললো, সে সব তোকে কিছুই করতে হবে না। প্যাকেটটা দিয়েই চম্পা চলে যাবে।

আমাকে কলেজের জন্য বেরুতে হবে। আজ কলেজে মিটিং আছে তাই একটু আগেই বেরুবো। না হলে আমিই রাখতে পারতাম।
রফিক তো আমি যাওয়ার পর খেলায় ব্যস্ত থাকে। আমার বোন যদি বাসায় এসে কাউকে না পেয়ে ফিরে যায় তাহলে ব্যাপারটা কেমন দেখায় না?

আচ্ছা আমি তোমার বোনের থেকে প্যাকেট নিয়ে তারপর বের হবো।

লিমন শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলে সবাই বসে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলো।

ভাইয়া ভাবীমা দুজনেই রেডি হয়ে যার যার কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।

ইমন রাশেদকে কল করলো। দোস্ত আমি তোকে একটা কাজ দিয়েছিলাম। সেটা কতদূর করেছিস। তুই তো আমাকে কিছু জানালি না।

স্যরি দোস্ত কাজটা আমি এখনও করতে পারিনি।

একটা মিথ্যা কথা বললো রাশেদ, কালকে নীপার ফোন বন্ধ ছিলো তাই ওর সাথে কথা বলতে পারিনি। আজকে ওর সাথে কথা হলে জিজ্ঞেস করবো। জেনে নিয়ে তোকে বলবো। ভার্সিটিতে যাবি কখন?

আমার একটু দেরি হবে তুই চলে যা। ভাবীমা একটা কাজ দিয়েছে সেটা হলেই চলে আসবো।

ওরা দুজন নিজের বাইক নিয়ে ভার্সিটিতে যায়। একসাথেই রওনা হয় রোজ।

নীপার ওপর এমন মেজাজ খারাপ হচ্ছে, একটা কথাই তো জানতে চেয়েছি। কিন্তু সেই কথার পিঠে ও কি কি বললো। আসলে মানুষ ঠিকই বলে প্রেম মানুষকে কু/কু/র বানিয়ে দেয়। নিজের অস্তিত্বই ভুলে যেতে হয়। প্রেমে পড়ে ভুল করেছি। ভুল না পাপ করেছি।

সবই বুঝি কিন্তু নীপাকে ছেড়ে থাকতেও তো পারি না। তাই ওর দেয়া সব যন্ত্রণা হজম করে যাই। ওর সাথে কথা বলতে না পারলে মরমে মরে যাই যেনো। আমার দুনিয়াটা থেমে যায় তখন। ও আছে তো সব আছে। তাই তো সব বাজে ব্যবহার , বকাঝকা সহ্য করি।

কালকে এতবার নীপা কল করেছে আর আমি ফোন সাইলেন্ট করে আরামে ঘুম দিছি। সেই অপরাধে না জানি আজকে আবার কি হয়।
আজকে মন পাখিটার মান ভাঙাতে হবে যে করেই হোক। আর ইমনের কাজটাও করতে হবে না হলে ইমনের কাছে আর প্রেস্টিজ থাকবে না। আমাকে খুব
পচাবে। অকর্মা ভাববে আমাকে।
সামান্য একটা কাজ দুই আঙ্গুলের তুরি বাজিয়ে করে ফেলবো ভেবেছিলাম। নীপার জন্য সব ভন্ডুল হয়ে গেলো।

ভাবীমার বোন চম্পা এলো দশটার একটু আগে। আজকে ইমনের আর প্রথম ক্লাসটা করা হলো না। অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে।

ভাবীমার বোন চম্পা পরিচয় জিজ্ঞেস করে জেনে নিলো। লিজা বলেছিলো ওর দেবরের কাছে প্যাকেটটা দিয়ে যেতে। দেবরের নাম ইমন।

চম্পা একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল ইমনের দিকে। আপু আপনার কাছে এই প্যাকেটটা দিয়ে যেতে বলেছে।

হুম ভাবীমা আমাকে বলে গেছে।

আপুকে আপনি ভাবীমা বলেন? দারুন তো। শব্দটা খুব মিষ্টি লাগলো।

দুজনের মাঝে আলাপ পরিচয় হলো। ইমন এই মেয়েটিকে আগে কখনো দেখেনি।

মেয়েটি বললো, আমি ইডেন কলেজে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমার ফ্যামিলি রাজশাহী থাকে। আমি কলেজের হোস্টেলে থেকেই পড়াশুনা করি।

চম্পা মেয়েটা দেখতে শুনতে ভালই। রুচিশীল মার্জিত পোশাক মেয়েটির। বেশ ভদ্র বলেই মনে হলো।

চম্পাতো ইমনকে দেখে পুরাই ফিদা। ইমনের সাথে গল্প জুড়ে বসতে শুরু করেছিল। তার যে যেতে হবে সে কথা বেমালুম ভুলতে বসেছে।
ইমনকে চম্পার ভালো লাগতে শুরু করেছে। চম্পা ওর বোনের বাসায় এই প্রথম এসেছে।

ইমন ইতস্তত করে বললো, আমি দুঃখিত আপনাকে সময় দিতে পারছি না। আমার ক্লাসের লেইট হয়ে যাচ্ছে। আপনি আবার আসবেন বেড়াতে।তখন না হয় কথা বলা যাবে।

তাহলে আমিও আপনার সাথেই যাই। আপনার ভার্সিটির পথেই ইডেন কলেজ, আমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবেন।

স্যরি সেটা পারবো না। রাস্তা থেকে আমার এক বন্ধু উঠবে। ও রোজ আমার সাথেই ভার্সিটিতে যায়।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে রিক্সা নিয়েই চলে যাই।

মেয়েটি চলে যেতেই ইমন হাপ ছেড়ে বাঁচলো। সে নিজেও রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো।

বাসা থেকে বেরুতেই নীপার সাথে দেখা হয়ে গেলো। চোখাচোখি হতেই নীপা ইমনকে সালাম দিয়ে বললো, ভাইয়া কেমন আছেন? ভালো আছেন?

ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?

জী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

নীপা তুমি আজ কলেজে যাওনি কেন? আজ কি ছুটি?

শরীরটা ভালো না ভাইয়া, তাই আজ কলেজে যাইনি।

ও আচ্ছা,

প্রিয়ার সম্পর্কে জানতে চাওয়া কথাগুলো রাশেদের থেকে জেনে নেয়ার মত ধৈর্য্য ইমনের হলো না। তাই সে নিজেই জিজ্ঞেস করবে বলে ভাবলো।

নীপাকে সে আগে থেকেই চিনে। আর নীপাও চিনে ইমনকে। একই সোসাইটিতে থাকে আবার রাশেদের ক্লোজ ফ্রেন্ড। যদিও আগে কখনো ওদের কথা হয়নি।

ইমন খুব ইতস্তত করে মাথা পিছনের দিকে চুলকে বললো,
নীপা তোমার কাছে একটা কথা জানতে চাই, তুমি কিছু মনে করবে নাতো?

কি জানতে চান বলুন আমি কিছু মনে করবো না।

কালকে তোমাদের সাথে একটা মেয়ে খেলছিলো না, সেই মেয়েটি কে ? কোথায় থাকে কি নাম ওর।

কোন মেয়েটা ভাইয়া? সেখানে তো অনেক মেয়েই ছিল।

সালোয়ার কামিজ পরে যে মেয়েটি খেলছিলো আমি তার কথা বলছি।

এতক্ষণে নীপা বুঝতে পারলো রাশেদ তাহলে কালকে সত্যি কথাই বলেছিলো। ইমন ভাইয়াই রাশেদকে দিয়ে জেনে নিতে বলেছিলো। আমি শুধুই আমার জানটাকে ভুল বুঝলাম।

ভাইয়া ওটা তো আমার বান্ধবী। ওর নাম প্রিয়া। আমাদের বিল্ডিংয়ের তিন তলায় ওদের বাসা।
কেনো বলেন তো ভাইয়া? ওর কথা জানতে চাইছেন কেনো? কিছু কি হয়েছে?

না না কিছু হয়নি। ওকে আর কখনো আমাদের এদিকে দেখিনি তাই জিজ্ঞেস করলাম।

ও আচ্ছা।

আমার একটা উপকার করবে আপু ?

কি উপকার ভাইয়া?

ওর ফোন নাম্বার আর ফেইসবুক এড্রেসটা দিবা? না করো না প্লিজ। আমি জানি দুটোই তুমি জানো।

নীপা একটু ইতস্তত করে বলে ভাইয়া কারো পার্সোনাল কিছু তাকে না জিজ্ঞেস করে দেয়া কি ঠিক হবে?

প্লিজ ছোট আপু
প্লিজ দাও। তুমি তো আমাকে ভালোভাবেই চিন।
আমরা একই সোসাইটিতে থাকি, আর আমার সম্পর্কে আরো ভালো করে জানতে হলে রাশেদকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিও।

রাশেদের কথা বলাতে কাজ হলো।

নীপা ওর ফোন থেকে প্রিয়ার ফোন নাম্বার আর fb আইডি দেখিয়ে দিলো। আর বললো ভাইয়া আমি যেনো কোন ভাবে ফেঁসে না যাই আব্বু আম্মু তাহলে আমাকে আস্ত রাখবে না।

তুমি আমার ছোট বোনের মত। তোমার ক্ষতি হোক এটা আমি কোনভাবেই চাইবো না।

প্রিয়া সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নিয়ে ইমন চলে গেলো। আজ আর ভার্সিটিতে গেলো না। এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে দুপুর একটা বাজতেই প্রিয়ার কলেজের গেটে গিয়ে প্রিয়ার বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর প্রিয়ার দেখা মিললো।

আজ প্রিয়ার একটু আগেই ছুটি হয়েছে। সে বান্ধবীদের সাথে ফুচকার দোকানে দাড়িয়ে ঝাল ঝাল ফুচকা খেতে লাগলো। ঝালে প্রিয়ার ঠোঁট লাল হয়ে গেল। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে বারবার পানি খাচ্ছে আর ঠোট গোল করে মুখের সামনে হাত নিয়ে পাখা করছে।

ইমন এই দৃশ্য প্রাণ ভরে দেখছে। আর মিটমিটিয়ে হাসছে।

প্রিয়া ঝালে হা হু করতে করতে উঠে সামনে এসে রাস্তার দিকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো ওর গাড়ি এসেছে কি না।
নাহ গাড়ি এখনও আসেনি। একটা ছেলেকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলো। প্রিয়া সেদিকে পাত্তা দিলো না। গাড়ি আসতে আজকে এত দেরি করছে কেনো? বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে ড্রাইভারকে ফোন করবে তখন আবার রাস্তায় দাড়ানো ওই লোকটার দিকে তাকালো, তখনও দেখলো ছেলেটা বাইকে কিছুটা হেলান দিয়ে ওর দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here