বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৮

বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-৮
#পলি_আনান

সেদিনটি ছিল একটি মেঘে ঢাকা দিন।পরিবেশটা দেখে মনে হয় যেন আজ আকাশের মন খারাপ তাই ঘুমুট ভাব নিয়ে বসে আছে।বৃষ্টি নামবে নামবে করেও আর নামছে না। চারিদিকে বয়ে যাচ্ছে শন শন বাতাস।ওজিহা তখন নবম শ্রেণীর ছাত্রী স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতে তার প্রায় ৩ টা বেজে গেল।হোস্টেলের সামনে এসে দেখলো নানান মানুষ জন দাড়ি আছে দুইটা পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সাইডে,কিছু পুলিশ বাইরে কি নিয়ে বেশ আলোচনা করেছে।গুটি গুটি পা ফেলে সে হোস্টেলের ভেতর ডুকে পরে।হোস্টেলের বাকি মেয়ে গুলো দাঁড়িয়ে আছে জরোসরো হয়ে। ওজিহা তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবলো তাদের জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে কিন্তু না এদের সাথে কোন দিনো সে কথা বলে নি আপন লাগেনি,কথা বলতে মন সায় দেয় নি এই হোস্টেল জুড়ে তার একটাই আপন মুখ আর সে হলো প্রিয়া আপু।মনের যত কথা, সুখ ভাগাভাগি করে নেওয়া সবটা জুড়ে হলো প্রিয়া আপু।সিড়ি বেয়ে দোতালায় চলে যায় ওজিহা, সবাইকে চোখে পরছে তার কিন্তু প্রিয়া আপুকে চোখে পড়ছেনা কেন।চিকন গলিটা পার করলেই তাদের রুম।রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ওজিহা থমকে যায়। রক্তের স্রোত যেন ভেসে চলছে পুরো রুম জুড়ে সামনে তিন চারজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে,দরজার পাশটা পুরো আটকে দেওয়া হয়েছে যেন কোন বাইরের মানুষ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।দরজার কিছুটা দূর থেকে ওজিহা দেখতে পায় রক্তে পুরো রুম ভেসে যাচ্ছে আশে পাশে তাকিয়ে কোথাও প্রিয়াকে দেখতে পাচ্ছেনা সে। খাটের এককোনে সাদা কাপড় দিয়ে কাকে যেন ঢেকে রাখা হয়েছে,অবচেতন মন বার বার ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রিয়া আপুর কিছু হয় নি তো!ওজিহা পাশে তাকিয়ে দেখে তাদের হোস্টেলের দায়িত্বরত বড় আপু দাড়িয়ে আছে তার মুখে ভীত কর অবস্থা।ওজিহা দৌড়ে তার সামনে গিয়ে বলে,

“আপু, প্রিয়া আপু কোথায় কি হয়েছে প্রিয়া আপুর,এখানে এত রক্ত কেন?
” ওজিহা প্রিয়াকে যেন কে খুন করেছে আর পুলিশ ওর লাশ টা কিছুক্ষন পরেই নিয়ে যাবে”
মেয়েটার বলা শব্দ গুলো ওজিহার কানে বজ্ররের মতো শব্দ করলো,হুট করে দৌড়ে রুমে ডুকে সে প্রিয়ার মুখ থেকে সাদা কাপড়টি সরিয়ে দেয় আর প্রিয়ার অবস্থা দেখে জোরে একটি গগন বিহিন চিৎকার দেয়।দুইজন পুলিশ এসে প্রিয়ার লাশ টা আবারো ঢেকে দেয়।সেই মূহুর্তেই ওজিহার চোখ মুখ কুচকে সেন্স লেস হয়ে যায়।থেতলানো মাথা,চোখের কোটর থেকে বেরিয়া আসা চোখ জিহ্বা বের করা খুব ভিবষৎ ভাবে মারা হয় প্রিয়াকে।যে কেউ দেখে বুঝে যাবে এটা কোন মানুষের হাতের খুন না নিশ্চই কোন খারাপ জিন বা পেত্ন দ্বারা খুন হয়েছে।সেদিনটার কথা মনে পড়লে আজো বুকের ভেতরে এক চাপা কষ্ট অনুভব হয়।প্রিয়ার সাথে বলা ওজিহার শেষ কথাটি ছিল

“যানিস ওজিহা তোর মাঝে একটি পবিত্রতা আছে, একটা পবিত্র সত্তা আছে আর সেই পবিত্রতার কারনে তোর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা খারাপ কিছু।”

এটাই ছিল শেষ কথা তারপর ওজিহা স্কুল চলে যায়। এরপর প্রিয়ার সাথে কি হয় বা না হয় কিছুই যানে না সে।প্রিয়ার মুখটি ভেসে উঠলে আজ ও শিউরে উঠে সে,প্রিয়ার কথা মতে তার সাথে পবিত্রতা আছে যা তাকে রক্ষা করবে আর ওই পিচাশের কথা মতে ওজিহাকে বেশি দিন আর বেচেঁ থাকতে পারবে না তার পবিত্রতা দ্বারা।সব কথা উলটে পালটে যাচ্ছে। ওজিহার মস্তিষ্কে তবে একটা কথা সে ভালো ভাবেই বুঝে নিয়েছে সূত্রটা কিন্তু একই।

“ওহিজান”!

ওজিহার কানের সামনে কথাটা বেশ জোরে বললো নাহিয়ান।হঠাৎ এমন ধমকে ভাবনার জগৎ থেকে চমকে উঠে ওজিহা।তার সারা শরীরে ঘাম লেপ্টে আছে,জুলফি বেয়ে ঘাম পড়ছে,তার হাত পা কাপছেঁ বেশ ক্ষিপ্র গতীতে।ওজিহা কেমন যেন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি স্বাভাবিক লাগলো না নাহিয়ানের কাছে।
” তোমার কি হয়েছে ওহিজান?
“ন…না কিছু না।আমি ঠিক আছি।
” তুমি ঠিক থাকলে তখন দেয়ালের সাথে দাঁড়িয়ে কি বিড়বিড় করছিলে তোমার ঘামে শরীরের অবস্থা দেখেছো, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র গোসল করে এসেছো।”

নাহিয়ানকে কি জবাব দেবে ভেবে পায় না ওজিহা, মস্তিষ্ক বার বার অন্যদিকে মন নিয়ে যাচ্ছে, সেই প্রিয়ার কাছে কি আছে ওজিহার সাথে,কি হচ্ছে প্রতিনিয়ত তার সাথে,
“ওহিজান আমি কিছু যানতে চাইছি তোমার কাছে,তুমি উওর দিচ্ছ না কেন তোমাকে দেখে আমার স্বাভাবিক লাগছে না!
“আমি ঠিক আছি,আসলে অন্ধকার রুমে আমি থাকতে পারিনা আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”
“ওওঅঅ তাই বলো,।কিন্তু আমি তো লাইট অন করেই গেছিলাম অফ করলো কে?.
কথাটা বলতে নাহিয়ানের বাম ভ্রু টা কুচকে যায় ওজিহা বেশ বুঝতে পারছে নাহিয়ান নিশ্চই তাকে সন্দেহ করছে। কথা ঘুরানোর জন্য ওজিহা লাফিয়ে উঠে যায় আর চোখ মুখ কুচকে বলে,
” ছিহহহহ,ওয়াক আমার শরীর থেকে ঘামের বিশ্রী গন্ধ।
ওজিহার হঠাৎ এমন আচরন দেখে নাহিয়ান হতবম্ভ হয়ে যায়।ওজিহাযে তার থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে,পালানোর ভঙ্গিমা করছে, তা বুঝতে পেরে নাহিয়ান হাত টেনে ওজিহাকে কোলে বসিয়ে দেয়।নাহিয়ানের এমন কান্ডে সে চমকে যায়।

“তোমার শরীরের ওই সুভাসেই তো পাগল হয়েছি ওহিজান।আর তুমি বলছো ঘামের গন্ধ(ওজিহার চুলের ঘ্রান নিতে নিতে ঘোর লাগা কন্ঠে)সেই ঘ্রান একদম শুরুতে যে সুভাসে আমি মোহে পরেছি একদম সেই সুভাস আজ আবার আমাকে পাগল করে দিচ্ছে ওহিজান.!
নাহিয়ানের কথা কিছুই ডুকছেনা তার মাথায়,কি বলছে,কিসের ঘ্রাণ, কি প্রথম দিন,দূর…!
” আপনি কি বলছেন উলটা পালটা দেখি ছাড়ুন আমাকে এমন চিপকে ধরেছেন কেন,উফফফ আমার অসহ্য লাগছে”!
ওজিহা নাহিয়ানের হাতের বাধন ছাড়িয়ে দরজা খুলে দৌড়তে নিলেই সামনে থাকা সুঠাম দেহের কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়।হঠাৎ এমন একটি ঘটনায় নাহিয়ান থমকে যায়, ওজিহা উঠতে নিলেই সামনে থাকা ব্যাক্তিটি ওজিহার হাত ছুতে গেলেই নাহিয়ান দৌড়ে এসে তাকে পাজা কোলে তুলে নেয়।এতোক্ষন চোখ মুখ কুচকে ছিল ওজিহা চোখ খুলে যখন সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে তখন চারশো চল্লিশ ভোল্টের শক খায়।আর ব্যাক্তিটিকে দেখেই দাতে দাত চেপে তাকিয়ে থাকে নাহিয়ান।
“মুহিব ভাই আপনি আমার বেড রুমের সামনে কি করছেন?এখন আর আমার আগের দিন নেই যে যখন তখন আমার রুমে ডুকে যাবেন এখন আমি বিবাহিত আমার পার্সোনালিটি আছে সো ভবিষৎতে নক করে আমার রুমে ডুকবেন। ”
নাহিয়ান আর কোন কথা না বলে ওজিহাকে নিয়ে রুমে ডুকে যায় আর মুহিবের মুখের উপর ঠাসসস করে দরজা বন্ধ দেয়।এতোক্ষন ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ওজিহার কাছে সবটা ধৌয়াসা লাগছে, মুহিব এই বাড়িতে কি করছে আর উনি তাকে ভাই ডাকলো কেন?কোন যোগ সূত্রে তারা ভাই?
নাহিয়ান ওজিহাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় আর তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“খবরদার ওই মুহিবের আশে পাশে তোমায় যদি আমি দেখি তোমার বাম গাল যেমন লাল করেছি এবার ডান গাল টাও লাল করে দেবো, মাইন্ড ইট,
” কিন্তু কেন আর মুহিব আপনার কি হয়ে?
“এতো কথা তোমায় আমি বলতে পারবো না, যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
” না আগে আমি শুন…
ওজিহার কথা শেষ করতে না দিয়েই তার আগেই সে ধমকে উঠে,
“তোমায় আমি যেতে বলেছি যাও!
নাহিয়ানের ধমকে কেপেঁ উঠে সে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা টা বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে,
” উফফফ এই লোকটা এতো ধমকায় কেন!
কিন্তু মুহিব এখানে কি করছে?…..

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here