বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০৮
লেখক_ঈশান_আহমেদ
আমি চাই আরাভ আর রিধিকার বিয়ে দিতে।আপনাদের কি কোন অমত আছে?(মা)
আলহামদুলিল্লাহ এটা তো ভালো খবর।(নিধিকার বাবা)
ভালো খবর তবে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে?(নিধিকার মা)
আসলে বেয়ান আপনার বড় মেয়ের মতো আপনার ছোট মেয়েটাও অনেক লক্ষী।তাই আমি ও কে তাড়াতাড়ি আমার ছোট বউমা বানিয়ে নিতে চাই।(মা)
আচ্ছা বেয়ান আমারও কোন আপত্তি নেই।(নিধিকার মা)
আমার কি বলো আমাদের!(নিধিকার বাবা)
আমি তো হা হয়ে আছি।মনে হয় আকাশ থেকে পড়েছি।এটা আমি কি শুনলাম!রিধিকার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর ও এক অবস্থা।আমি কি করব এখন!
আমাদের মত থাকলে তো হবে না।যারা বিয়ে করবে তাদের মতও তো নেওয়া উচিত।তোমাদের দুজনের কি মত আছে এই বিয়েতে?(বাবা)
আরাভের মত আছে।(মা)
আমি তো অবাক এগুলো কি বলে আম্মু?ওফ অসহ্য!এখন মেজাজটা যা গরম হচ্ছে!আম্মু যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি তো ভয়ে কিছু বলতেই পারছি না।
রিধি তোর কি মত আছে?(নিধিকার মা)
যাক একদিক থেকে বাঁচলাম।আমি নিশ্চিত রিধিকা মত দিবে না!
রিধিকার মুখে কোন কথা নেই।একটার পরে একটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ছে সে!এমন একটা কথা কেবল সে জানল আর এর মধ্যেই তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হলো।কি করবে সে!তার মাথায় কোন কাজ করছে নাহ্।সবাই তার মুখের দিকে তাকিয়ে কিন্তু তার চোখ আরাভের দিকে।এই বুঝি আরাভ কিছু বলবে।কিন্তু আরাভ কিছুই বলছে নাহ্।সে উল্টো রিধিকার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
রিধিকা আরাভের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
আমি রাজি!(রিধিকা)
এখন তো এই মেয়ের উপর রাগ হচ্ছে।
যাক আলহামদুলিল্লাহ।(সবাই)
নিধিকার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ ছলছল করছে।নিধিকা উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।যাক তাতে আমার কি!না আমার রিধিকার সাথে কথা বলা লাগবে।সবাই বসে গল্প করছে।রিধিকা দেখলাম ওর রুমের দিকে গেল।আমি উঠে ওর পিছুপিছু গেলাম।গিয়ে দেখি রিধিকা ওর রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
আসবো!(আমি)
রিধিকা পিছনে না ফিরেই বলল,
হুম আসুন।(রিধিকা)
আমি রিধিকার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমি বুঝেছি হয়তো আপনি আমাকে কিছু বলবেন।তাই রুমে চলে এসেছি।(রিধিকা)
দেখো রিধিকা সবটা জানার পরে এইসব কি করছো তুমি!তুমি কেন বিয়েতে রাজি হলে?(আমি)
রিধিকা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কি হলো বলো!(ধমক দিয়ে বললাম)
আমি কি করব!আমি যদি রাজি না হতাম তাহলে সবাই ভাবতো আমার কারো সাথে সম্পর্ক আছে।আর বিশেষ করে আম্মু যদি বুঝতো তাহলে আমার খবর ছিল।(রিধিকা)
তাই বলে তুমি এতোকিছু জানার পরে বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে?(আমি)
আমি না হয় রাজি হয়েছি!আপনি কিছু বললেন না কেন?আপনি তো ‘না’ করতে পারতেন।(রিধিকা)
দেখো রিধিকা আম্মু সবটা জানে।আর সেই জন্যই হয়তো সে ভাবছে আমার যদি বিয়ে হয়ে যায়।তাহলে আমি নিধিকাকে ভুলে যাবো।কিন্তু এটা সম্ভব নয়।আর আমি কখনো আম্মুর উপরে কথা বলি না।তাই আজও চুপ ছিলাম।তবে তোমার রাজি হওয়া ঠিক হয়নি।(আমি)
ওহ্ নিজের বেলায় কিছু না আমার বেলায় সব দোষ!(রিধিকা)
রিধিকা বেলকনির গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।আমি দুইপাশের গ্রিলে হাত দিলাম।আমি আর রিধিকা অনেকটা কাছাকাছি।রিধিকা ভয়ে মাথা নিচু করে আছে।
রিধিকা ওভারস্মার্ট সাজা ভালো না।তোমার এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি।তুমি এটার কথা বলেও একটা অজুহাত দিতে পারতে কিন্তু তুমি তা করোনি।কারণ তুমি আমাকে দয়া দেখাতে চাও।আমি না দয়া জিনিসটা একদম পছন্দ করি নাহ্।(আমি)
কথাগুলো বলে রিধিকার রুমের বাইরে চলে আসলাম।রিধিকার রুম থেকে বের হতেই নিধিকা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।চোখগুলো ফুলে গেছে আর কেমন লাল হয়ে আছে!ও যখন কান্না করে তখন ও কে এমন দেখায়।আগে নিধিকার এমন চেহারা দেখলে আমার অনেক কষ্ট হতো কিন্তু এখন সবটা কেমন জানি অন্যরকম হয়ে গেছে।ওর প্রতি আগের মতো দূর্বলতাটা নেই।
আরাভ তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।কথাগুলো তোমার জানা উচিত।(নিধিকা)
আপনার কোন কথা শোনার আমার ইন্টারেস্ট নেই।(আমি)
ওর সামনে থেকে চলে আসলাম।
_
_
_
এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল।আজ আমার আর রিধিকার বিয়ে।এই সাতদিনে মাকে অনেক বুঝিয়েছি কোন কাজ হয়নি।তার এক কথা আমি আমার ছেলেকে আর এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারছি নাহ্।তবে বিয়ে হয়ে গেলে কি সত্যি আমি আর কষ্ট পাবো না আর এতো সহজেই নিধিকাকে ভুলে যাবো!রিধিকাও তার বাবা-মাকে বলেছিল তার পড়াশোনা শেষ হলে বিয়ে করার কথাটা।তবে আম্মু বলেছে বিয়ের পরে পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে।তাই রিধিকার হাতেও আর কিছু ছিল না।
নিয়তির কি খেলা!যাকে আমি নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসি।সে আমার ভাবি আর তার ছোট বোনের সাথে আমার বিয়ে।এইসব ভাবলে কষ্ট হয় আবার হাসিও পায়!এইসব কেন হয় আমার সাথে।
আরাভ তুমি তো আমায় এতোটা ভালোবাসতে!তুমি আমার চোখ দেখেও কি কিছু বুঝতে পারোনি এতোদিনে।তোমার আমাকে বোঝা উচিত ছিল।(নিধিকা)
আরাভ আর রিধিকাকে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে নিধিকা।আর চোখ দুটো ছলছল করছে।এতো কষ্টের মাঝেও সে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি টেনে রেখেছে।
মি.চৌধুরী আমার না বিয়ে করতে ভয় করছে।(রিধিকা)
তা এখানে বসে আছো কেন!পালিয়ে গেলেই তো পারতে আমিও বেঁচে যেতাম।(আমি)
হায়রে চৌধুরী!পালাতে পারলে তো হতোই কিন্তু পালিয়ে যেতাম কোথায়?একটা বয়ফ্রেন্ড থাকলে না হলে তার সাথে পালাতাম।এখন আমি পালিয়ে কোথায় যেতাম!(রিধিকা)
একদম চুপ করে বসে থাকো।বেশি কথা বলবে না।(আমি)
হঠাৎ নিধিকার দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম সে দাঁড়িয়ে আছে ছলছল চোখে।আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে।এমন কষ্ট একদিন আমিও সহ্য করেছি।আজ তোমারও সহ্য করতে হবে মিসেস.নিধিকা চৌধুরী।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছে।কবুল বলতে মন না চাইতেও কবুল বলতে হলো।তবে রিধিকা কবুল বলেছে কি না তা আমার অজানা!কারণ তার আর আমার মাঝে বিশাল বড় এক পর্দা!
বিয়েটা হয়ে গেল।রিধিকাকে নিয়ে বাড়িতে আসলাম।তবে আমার এইসব কিছু ভালো লাগছে না।সবকিছু ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে মন চাইছে।কিন্তু না এখন আমি আর একা না।আমার নামের সাথে আরেকজনের নাম জুড়ে গেছে।যতই স্ত্রী হিসেবে না মানি,কিন্তু রিধিকা এখন আমার দায়িত্ব।
বাসর ঘরে ঢুকে দেখি রিধিকা বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।
একি!কোন মেয়ে বাসর ঘরে এভাবে ঘুমিয়ে থাকে?আর ঘুমালেও এমন সারা বিছানা নিয়ে ঘুমাবে!আজব!
রিধিকা,এই রিধিকা উঠো!(আমি)
রিধিকা ঘুম থেকে উঠে আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
মি.চৌধুরী আপনি এখন ডাকাডাকি করছেন কেন!আর আমি তো জানি আমরা আর পাঁচটা দম্পতির মতো নয়!সো এখন ঘুমাতে দিন বিরক্ত করবেন না।(রিধিকা)
রিধিকা বিছানার একপাশে ঘুমাও।তুমি যদি সারা বিছানা একা নিয়ে ঘুমাও তাহলে আমি কিভাবে ঘুমাবো!(আমি)
আচ্ছা সরি!আমার মনে ছিল না যে এটা আপনার বিছানা।আপনাকে তো একটু জায়গা দেওয়া উচিত।(রিধিকা)
রিধিকা রাগ উঠাবে নাহ্।একপাশে শুয়ে পড়ো বিছানার!(আমি)
রিধিকা উঠে বসল।মাঝখানে একটা বালিশ দিকে অন্য পাশে মুখ করে শুয়ে পড়ল।আমিও শুয়ে পড়লাম।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রিধিকা বিছানায় নেই।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে সাজছে।আমি আর ওর দিকে না তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রিধিকা রুমে নেই।নিচে গিয়ে দেখি রিধিকা আর নিধিকা রান্নাঘরে একসাথে কাজ করছে।ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসলাম সোফায়।
কিরে রাতে ঘুম কেমন হলো?(ভাইয়া)
অনেক ভালো হয়েছে ভাইয়া।(আমি)
বাসর রাতে কি ঘুমিয়েছিলি নাকি?(ভাইয়া)
ইয়াহ্!আরও শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছি!(আমি)
তুই কি আমার সাথে মজা করছিস?(ভাইয়া)
তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?(আমি)
দুই ভাই একসাথে হেসে দিলাম।
আপু মি.চৌধুরীর সাথে এমনটা কেনো করলি তুই?(রিধিকা)
কি করেছি আমি?(নিধিকা)
আমি সবটা জানি আপু।(রিধিকা)
নিধিকা রিধিকার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।
ভালো তো!সবটা জেনেই বিয়ে করেছিস।আরাভকে সবসময় দেখে রাখবি।কখনো ও কে কষ্ট পেতে দিস না।আমি তো অনেক কষ্টই দিয়েছি।(নিধিকা)
নিধিকার চোখ দিয়ে একভাবে পানি পড়ছে।
আপু তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?আপু তুই কি এগুলো ইচ্ছে করে করেছিস?প্লিজ বল আমাকে!(নিধিকা)
রিধু চুপ কর এখন।নাস্তা বানানো শেষ।চল সব টেবিলে দিয়ে আসি।আর মায়ের শরীরটা ভালো না।আমি উনার ঘরে নাস্তা দিয়ে আসতেছি।(নিধিকা)
রিধিকা আর কিছু বলল নাহ্।নিধিকা মায়ের রুমে গিয়ে নাস্তা দিয়ে আসল।সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।
রিধিকা তুমি কি কবুল বলেছিলে?(আমি)
রিধিকা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হয়তো আমার কথা শুনে চমকে গেছে।
না মানে আমি তো তোমার কবুল বলা শুনি নাই।তাই বললাম।(আমি)
মি.চৌধুরী মাথার চিকিৎসা করান।মনে হয় একদম নষ্ট হয়ে গেছে।চিকিৎসা না করালে মরিচিকা পড়ে যাবে!(রিধিকা)
রিধিকা আমার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল।
–
–
–
–
ভাই তোর কিছু কথা জানা উচিত যা তুই জানিস নাহ্।যার কারণে তুই নিধিকাকে ভুল বুঝছিস!(ভাইয়া)
সন্ধ্যার সময় টিভি দেখছিলাম হঠাৎ ভাইয়ার মুখে এই কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেল।এগুলো কি বলল ভাইয়া!তার মানে ভাইয়া সবটা জানে তারপরেও এতোদিন চুপ ছিল!আমি কি বলবো এখন!আমার কি কিছু বলা ঠিক হবে নাকি ভাইয়ার থেকেই সবটা শুনবো।
চলবে………….