ফানাহ্ 🖤 #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান #পর্বসংখ্যা_১৩

#ফানাহ্ 🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_১৩

-ওখানে ভূত আছে মেহরাজ আমি যাবো মা ও ঘরে। আমি ভ ভয় প পেয়ে

ঘুমের ঘোরেই দুই লাইন বলে আবারও তলিয়ে গেল বুদ হয়ে। মেহরাজ আলতো করে মোহরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অনেক বেশিই হয়তো ভয় পেয়ে গেছে মেয়েটা। তবে এতে মেহরাজ যে খুব বেশি কারসাজি করেছে তাও কিন্তু নাহ। মোহরের ঘরের পাশে যে ফিসফিসানির শব্দ সে শুনতে পেয়েছিল সেটা রেকর্ডেড ভয়েস,আর সাদা ধোয়ার মতো দেখা অবয়ব টা লেজার রশ্মির খেলা, এটুকুই।
বাকিটা মোহর আতঙ্কগ্রস্থ হয়েই ভয় বেড়ে গেছে। মানুষের মস্তিষ্ক যেকোনো দৃশ্য তৈরি করতে কম্পিউটারের চেয়েও সচল। মানব মস্তিষ্ক যখন কোনো বিষয়বস্তু মন থেকে বিশ্বাস করে মস্তিষ্কতে মহীয়ান করে তখন মস্তিষ্ক ঠিক সেটাই দেখায় যেটা মানুষ কল্পনা করে। মানব শরীরের স্নায়ুবিক সিস্টেমের কেন্দ্র বা মধ্যমণি হলো মস্তিষ্ক। কল্পনা হলো মস্তিষ্কে মনের ভেতর সৃজনশীল প্রতিচ্ছবি তৈরি করার ক্ষমতা। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের বাইরে মন থেকে কিছু অনুভব ও চিত্রায়ন করা হলো কল্পনা। ভয় পেয়ে মোহরের মস্তিষ্ক ধরেই নিয়েছিল ওকে কোনো অশরীরী অপ্রকৃতস্থ কোনো শক্তি তাড়া করছে, তাই ওর আশেপাশের পরিবেশেও ঠিক তেমনটাই আবহ আসছিল।

মেহরাজের প্রশস্ত কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ ফেলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোহরের ঘুমন্ত চেহারায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সমস্ত চেহারা।
উজ্জ্বল তামাটে বর্ণের গায়ের রঙ খুব ফর্সা নয়, তবে শ্যামলাও নয়। ঘনপল্লবে বেষ্টিত আঁখিযুগল সবচেয়ে বেশি নজরকাড়া। চিকন পাতলা ঠোঁট, ছোট নাক, হালকা পাতলা গড়নের লম্বাটে লতানো শরীর। অদ্ভুত মাদকতায় পরিপূর্ণ সমস্ত চেহারা।
একবার দেখলে আঠাকাঠির মতো চোখ লেগে থাকে, সরাতে ইচ্ছে করে না। কী গভীর মায়া, নিশ্চুপ নির্জীবতায়ও কতটা প্রাণপূর্ণ! মোহরের তামাটে বর্ণের অতি সাধারণ চেহারাও কোনো দুধে আলতার মতো গড়নের কোনো মেয়েকে মাত দিকে নিঃসন্দেহে সক্ষম। অদ্ভুত মায়া জড়ানো মুখ যা যেকোনো পুরুষকে দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য করবে।

মেহরাজ থেকে থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছে, আবারও এসে বসছে মোহরের একদম কাছটায়। বিছানাতে নয়। মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে বিছানায় ঠেস দিয়ে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে। কতবার চেষ্টা করছে তবুও কিছুতেই অগ্রাহ্য করতে পারছে তা তার মোহমায়ার মায়াবী মুখ খানা। ভোর চারটা বেজে ছয় মিনিট। সারাটা রাত এক লহমার জন্যেও চোখের দু পাতা এক করেনি। অনিমেষ তাকিয়ে ছিল। মোহরের নিঃশ্বাসের শব্দ গুনেছে, তীব্র প্রদীপ্তিয়ময় অন্তঃস্থলের ঢিপঢিপ শব্দ গুনেছে। প্রাণহারীনিকে কাছ থেকে দেখবার জন্যেই তো এতো প্রচেষ্টা!

প্রদোষকালের বুক চিরে ধরণীতে প্রস্ফুটিত ফুলের মতো ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে কমলাকার ভাস্কর। নরম রোদের আলোতে ঝিলমিল করছে শরতের প্রস্ফুটিত কুড়ির মতন সকাল। আব্রাহাম ম্যানসনের বৃহতাকার দেওয়ালের মধ্যিখানে অবস্থিত বসার ঘরটাতে গুঁটি কয়েক মানুষের অবস্থান। সকাল বেলা করে আম্বি আর নাজমা নাস্তা সাজাচ্ছেন টেবিলে। কাকলি তাথই এর বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে এদিক ওদিক। হাঁটছে কম, ঢুলছে বেশি। চোখ মুখের অবস্থা অবিন্যস্ত। সারাটা রাত বাচ্চাটা না নিজে ঘুমিয়েছে না তাকে ঘুমাতে দিয়েছে।

-গুড মর্ণিং আন্টি!

চিকচিকে মেয়েলী কথায় প্লেট সাজাতে সাজাতে দরজার দিকে দৃষ্টি অগ্রসর হলো আম্বি খাতুনের। উপস্থিত মানুষটাকে দেখে হাসলো মৃদু, বললেন

-গুড মর্ণিং। এসো এসো নাস্তা করবে আমাদের সাথে।

তিয়াসা বেশ আহ্লাদী গলায় বলল

-করবো আন্টি, রাজের সাথে আগে দেখা করবো। ও কি ঘুম থেকে উঠেছে?

-এখনো তো নামেনি। উঠেছে বোধ হয়,দাঁড়াও আমি ডেকে দেই

বকে ব্যস্ত হয়ে সিড়ির দিকে এগোতে নিলে তিয়াসা নড়েচড়ে এগিয়ে এলো,আম্বির হাত ধরে বললো

-আরে আপনি কাজটা শেষ করুন না আন্টি। আমি নিজেই গিয়ে দেখা করে নিচ্ছি

আম্বিও দ্বিরুক্তি করলো নাহ। তিয়াসা সিড়ি বেয়ে উঠে একদম কোণার ঘরের দিকে আসলো। আস্তে করে দরজায় ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। প্রচণ্ড উচ্ছ্বাস, আর উৎফুল্লকর চিত্তে ঘরে ঢুকলেও মুহুর্তেই তা মিলিয়ে গেল, এক ফালি অমানিশা এসে ভর করলো ফর্সা মুখ খানাতে। ভ্রু যুগল কুচকে এসে ক্ষুদ্ধতরে কপালে গাঢ় ভাঁজ পরলো। ঝড়ের বেগে এগিয়ে এসে চেঁচিয়ে উঠে বলল

-তুমি এখানে কি করছো?

অকস্মাৎ চিৎকারে হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লো মোহর। অস্বাভাবিক চিত্তে এদিক ওদিক তাকালো। আপতিকভাবে ঘুম ভাঙায় পরিস্থিতি বুঝে উঠতে বেশ সময় লাগলো। কিন্তু ততক্ষণে তিয়াসার মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে, দাঁত খিঁচিয়ে বলল

-তুমি এই ঘরে কেন এসেছো, কখন এসেছো তুমি? রাতে এখানেই ছিলে? কি হলো উত্তর দাও রাতে এই ঘরেই ছিলে তুমি?

মোহর ধাতস্থ হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই তিয়াসাকে আর নিজেকে এই ঘরটাতে দেখে অত্যাধিক ভড়কে গেল। রাতে কি হয়েছিল, হুট করেই মনে করতে পারছে না। মোহরের নিরুত্তর থাকাটা তিয়াসার রাগ অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে তুললো। ক্ষিপ্ত ভাবে মোহরের হাত চেপে টেনে খাট থেকে নামাতে নিলে নিজের হাতের উপরে বরফের ন্যায় শীতল স্পর্শের প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হয়। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালে মেহরাজের জলদগম্ভীর ধারালো চোখ টাকে একদম কাছাকাছি অবস্থায় দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গেল।

-হাতটা ছাড়ো

মেহরাজের এরূপ শান্ত গলায় নড়েচড়ে উঠলো তিয়াসা। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় স্থির দাঁড়িয়ে আছে মোমের পুতুলের মতো।

-কি বলেছি শুনতে পাওনি? ওর হাতটা ছাড়ো!

দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলে এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে এক ঝটকায় তিয়াসার হাত সরিয়ে দিল। প্রচণ্ড ঝটকায় তাল সামলাতে না পেয়ে দু কদম পিছিয়ে গেল তিয়াসা। মোহর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বিমূর্ত ভাবে তাকিয়ে আছে।
তিয়াসা মেহরাজের আপাদমস্তকে চোখ বুলিয়ে মোহরের দিকে তাকালো। সদ্য গোসল করে বেড়িয়েছে মেহরাজ পরনে শুরু কালো রঙের একটা ট্রাউজার , অত্যাধিক ফর্সা লোমহীন বুকের উপরের দিক টাতে মৃদু একটা আচরের দাগ। যা লালচে আকারে সগৌরবে গলার নিচের দিকে অবস্থান করে আছে। আর বিছানাতে মোহর এলোমেলো অবস্থায় চোখ মুখ ও কেমন ফোলা ফোলা।
অবাঞ্ছিত খেয়াল মাথায় বড়সড় কারেন্টের শকের মতো ঝটকা দিল। অস্থির গলায় বলল

-তোমরা এক ঘরে ছিলে? ও আর তুমি এক ঘরে ছিলে রাজ!!

মেহরাজ ততক্ষণে শার্ট গায়ে জড়িয়ে বোতাম লাগাচ্ছে, তিয়াসার প্রশ্নকে দাম্ভিকতার সাথে অগ্রাহ্য করে বিরক্ত গলায় বলল

-কারো ঘরে ঢুকতে যে পারমিশন নিতে হয় এই জ্ঞান টুকু নেই?

তিয়াসার মাথা দপদপ করে উঠলো। ছুটে গিয়ে মেহরাজের কলার চেপে ধরলো, উন্মাদের ন্যায় চেঁচিয়ে বলল

-ওকে নিজের বউ মেনে নিয়েছো তাই না? বাড়ির লোককে ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে দুজন একঘরে কি করছিলে হ্যাঁ? কি মনে করেছো উপরে লোক দেখানো সেপারেশন দেখিয়ে রাত হলে দুজন ন’ষ্টামি করবে আর কেও বুঝবে নাহ হ্যাঁ? উত্তর দাও?

মেহরাজ দুহাতে নিজের কলার ছাড়িয়ে সরিয়ে দিল তিয়াসাকে। অত্যন্ত তেজস্বী গলায় রক্তচক্ষে হাড হীম করা গলায় গর্জে উঠে বলল

-একমাত্র মেয়ে বলে আজ তুমি বেঁচে গেলে। নাহ তো মেহরাজের কলারে হাত দেওয়ার শাস্তি কিরূপ হতে পারে তা তোমার ধারণার বাহিরে, আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাওয়ার আগে বেরিয়ে যাও এই ঘর থেকে, না তো আমি ভুলে যাব তুমি এ বাড়ির কেও হও

তিয়াসা কেঁপে উঠলো মেহরাজের রূঢ় ধমকে। মুখ ফুটে আর কিছু বলবে তার আগেই মেহরাজ হাতের তর্জনী তুলে বলল

-আই রিপিট, এক্ষুনি এই মুহুর্তেই যদি তুমি এই ঘর থেকে বের না হও তাহলে কি হবে তুমি ভাবতেও পারবে না!

তিয়াসা আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো নাহ। ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। মোহর এতক্ষণ পাথরমূর্তির মতো বসে ছিল, মেহরাজের ধমকানিতে ওর শিরা উপশিরা কেঁপে উঠেছে, এমন ভয়ংকর রাগ! আজ অব্দি কারো দেখেনি মোহর। সমুদ্রের ন্যায় শান্ত চরিত্রের এই রূপটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। সারা মুখ রক্তাভ বর্ণে উপনিত হয়েছে, গলার রগ গুলো ফুলে উঠেছে। প্রচণ্ড অপ্রতিভতায় থ মেরে বসে রইলো মোহর।

-দশ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আসুন

মুহুর্তেই বদলে আবারও স্বাভাবিক গলায় বলল মেহরাজ। এতে যেন মোহর আরও কিয়দংশ ভড়কে গেল। অপ্রস্তুত হয়ে মেহরাজের দিকে তাকালে ও গম্ভীর গলায় বলল

-দশ মিনিটের চেয়ে বেশি নাহ। আমি অপেক্ষা করছি।

-এতো কান্নাকাটির কি আছে, এই মেয়ের ন্যাকা এই জন্যেই আমার সহ্য হয়না। বেহায়া,বেশরম

ফিসফিস করে ভর্ৎসনা করছিল এতক্ষণ নাজমা। শাহারা আড়চোখে তাকাতেই চুপসে গেল। শাহারা নিজেও প্রচণ্ড বিরক্ত, আর তার চেয়েও বেশি লজ্জিত। তার এখন মনে হচ্ছে না তিনি এই সময় নিচে নামতেন আর নাইবা এইরকম একটা পরিস্থিতির মুখাপেক্ষী হতে হতো।
তার চেয়েও বেশি রাগ হচ্ছে তিয়াসা নামের মেয়েটার উপর। এতদিন ভাবতো মেয়েটার শুধু পোশাক আশাকেই হয়তো বেহায়াপনা, কিন্তু মেয়েটা নিজেও যে এতটা নির্লজ্জ তা ভাবতে পারেনি। তা না হলে এতগুলো মানুষের ভেতরে এসব কেও বলে? স্বামী স্ত্রী এক ঘরে কখন থাকবে কি করবে এসব কেও গুরুজনদের সামনে এভাবে বলে? ছি ছি ছি, লজ্জায় নলা নত হচ্ছে উনার।

-তিয়াসা, তুমি আগেই এতটা কেন ভাবছো বলো তো। এমন ও তো হতে পারে তুমি যা ভাবছো ভুল ভাবছো। সবসময় মানুষের চোখের দেখাও তো ঠিক হয়না?

-আমি ঠিকই দেখেছি ছোট আন্টি, এখন আমার আপনাদের ও বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনারাও জানতেন তাই না যে মেহরাজ ওই মেয়েটাকেই বউ করে ঘরে রাখে। শুধু শুধু ডিভোর্সের নামে মিথ্যা আশা দিয়েছেন আমাকে। ড্যাড ঠিকই বলেছিল আপনারা সবাই ঠক

কাকলি তিয়াসার কথায় চুপসে গেল। সকাল বেলা করে এসব শুনতে হবে ভাবতেও পারেনি। মেহরাজের ঘর থেকে এসেই কেঁদে যাচ্ছে তিয়াসা। আর সবার সামনেই বলেছে মেহরাজ রাতের অন্ধকারে চুরি করে মোহর কে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।

-তুমি আগেই বেশি বলছো তিয়াসা। মেহরাজ আসুক সবটা ওর থেকেই শোনা যাবে

আরহাম মুর্তজার কথা শেষ না হতেই মালা ক্ষীণ গলায় বলে উঠলো

-ওই তো আসছে ছোট সাহেব

বলেই আবারও চুপ করে গেল। এ বাড়ির লোকের ঠিক নেই। সবার মুখ থমথমে না জানি কার রাগ কার উপর ঢেলে দেবে। তার চেয়ে বরং এখন চুপ থেকে তামাশা দেখায় ভালো।

ততক্ষণে মেহরাজ সিড়ি ভেঙে নিচে নেমে এসছে। পরনে নিত্যদিনের মতো অফিসের ফরমাল ড্রেসাপ নয়, ইনফরমাল ভাবেই কফি কালার একটা টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার পরনে। চোখ মুখের ভঙ্গিমা নিতান্তই স্বাভাবিক। এক হাত পকেটে গুঁজে আরেক হাতে মোহরের কবজি মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।
ড্রয়িং রুমে বসা সকলের উৎসুক দৃষ্টি তখন মেহরাজের হাতে চেপে রাখা মোহরের দিকে। যে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিয়ৎকাল পিনপতন নীরবতা ছেয়ে রইলো৷ নিস্তব্ধতার ভাঙন হলো আজহার মুর্তজার গলায়,

-মেহরাজ, তুমি আর মোহর একসাথে থাকছো এটা কি সত্য?

মেহরাজ উত্তর করলো নাহ। তার আগেই শাহারা বেগম নাক কুচকে বললেন

-আজহার! তোমার ছেলে এখন তার বউকে তার ঘরে রেখেছে কি না এই নিয়েও জবাবদিহি করাবে তুমি?

আজহার মুর্তজা বেশ অপ্রস্তুত হলো। তৎক্ষনাৎ আরহাম বলে উঠলো

-জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হয়েছি বলেই করছি মা। ওদের যখন সেপারেশন চলছে এই মুহূর্তে ওদের একসঙ্গে থাকার ব্যাপার টা ডিভোর্সে অনেক ইফেক্ট করবে

-সেপারেশন? ডিভোর্স? কিসের কথা বলছেন আপনারা?

আরহামের কথার পৃষ্ঠে অবিলম্বেই ফিচেল গলায় প্রত্যুত্তর করলো মেহরাজ। এতক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেও আম্বি এবার বেশ তেজী হয়ে বলল

-তোর আর মোহরের ডিভোর্স। এই বিয়ে আমরা কেও মানি না এটা তুই ভালো করেই জানিস বাবু। তোর বিয়ে তিয়াসার সাথেই ঠিক হয়ে আছে গত চার বছর ধরে, আর হবেও ওর সাথে

-তিয়াসার সাথে আমার বিয়ে তোমরা ঠিক করেছো। নিজেরাই গিয়ে আংটি পড়িয়েছো। আমি কি কখনো বলেছি আমি ওকে বিয়ে করতে চাই? আর নাইবা আমি নিজে ওকে আংটি পড়িয়ে নিজের বাগদত্তার স্বীকৃতি দিয়েছি?

আম্বির কথার উত্তরে মেহরাজের বলা কথাগুলো শ্লথ স্রোত বয়ে দিলো উপস্থিত পরিবেশ জুড়ে, তিয়াসা কান্নার গতি আরও বাড়িয়ে বলল

-দেখলেন, দুদিনের এই মেয়েকে পেয়ে ও কি করে সম্পর্ক টাকে অস্বীকার করছে? এমন কেন করছো তুমি রাজ? আমি তোমাকে ভালোবাসি, ওই মেয়েকে কেও মানবে না

-সী ইজ মাই ওয়াইফ। আমি স্বেচ্ছায় ওকে বিয়ে করেছি। আর আমি নিজে মানি। কেও মানুক না মানুক আই ডন্ট কেয়ার

উপস্থিত সকলে বিস্মিত হলো, তার চেয়েও দ্বিগুণ হলো মোহর। বিস্ফোরিত চোখে তাকালো মেহরাজের দিকে। এখানে তার ভূমিকা টা কোথায় বুঝছে নাহ? কি থেকে কি হচ্ছে? সে কি বলবে, তার কি কোনো মতামত দেওয়ার নেই? নাহ নেই। অদ্ভুত একটা জোর মোহরের বুকে বাসা বেঁধেছে, মেহরাজের হাতের মধ্যিখানে চাপের পিষ্ঠনে আবদ্ধিত হাতটা যেন ওকে বারবার বলছে এইখানটাই তোর ভরসা, তোর আশ্রয়। ছাড়িস নাহ। কিন্তু কোনো ভাবেই কোনো ভাবনায় স্থির হতে পারছে নাহ।
মোহরের ধ্যান ভাংলো কাকলির কর্কশ গলায়, তাচ্ছিল্য করে সে বলল

-ও কি করে এ বাড়ির বউ হবে মেহরাজ। না আছে জাত, না আছে বংশপরিচয়, না আছে পরিবার, না আছে ঘর।

কাকলির কথাটুকু শেষ না হতে মেহরাজের হাতের মুষ্টি আরও দৃঢ় হলো, তার চেয়েও অধিকতর দৃঢ় হলো তার ভরাট গলা। জড়তাহীনা বলে গেল

-আমিই ওর জাত,ওর বংশপরিচয়, ওর পরিবার ওর ঘর। আমিই ওর স্বামী। আর কোনো কিছুর দরকার আছে বলে মনে করিনা
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

©Humu

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here