ফানাহ্ 🖤 #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান #পর্বসংখ্যা_১২

#ফানাহ্ 🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_১২

– খেয়াল কোথায় থাকে আপনার!

আচানক গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে ধ্যান ভেঙে সচকিত হয়ে পাশে তাকালো। মেহরাজ চুলার নব টা ঘুরিয়ে স্থৈর্য দৃষ্টিতে তাকালো মোহরের দিকে।

– আরেকটু দেরি হলেই তো দুধ উপচে পড়তো, যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন শরীরে ছিটকে পড়তে দেরি হতো নাহ

মোহর হুকচকিয়ে গেল। নিজের এমন বেখেয়ালি আচরণে নিজেরই অপ্রস্তুত লাগছে। কোনো রকম
অপ্রতিভ ভাবে বলল

– আমি খেয়াল করিনি দুঃখিত

– আপনি রান্নাঘরে কেন এসেছেন?

মোহর অপ্রতিভতা সামলে আবারও চুলার নব মুচড়ে আগুন জ্বালাতে জ্বালাতে বলল

– দিদা চা খেতে চেয়েছিলেন তাই

– ভালো মানুষকে চা করতে পাঠিয়েছে, এ তো রান্নাঘরই উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় আছে

অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল মেহরাজ। মোহর ভ্রুকুটি করে বলল

– কিছু বললেন?

– না কিছু না

বলেই ফ্রিজের দিকে গেল। ভেতর থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল বের করে নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে নিলে পেছন থেকে মোহর বলল

– আমি মোটেও রান্নাঘর উড়িয়ে দেওয়ার মতো নই, আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে কিচেন সম্পর্কে

– হ্যাঁ তার নমুনা কিছুক্ষণ আগেই পেয়েছি

মোহরের যেন আত্মসম্মানে লাগলো। শেষে কি না রান্নাঘর নিয়েও খোটা শুনতে হবে? একটু বেখেয়ালি বশত অন্যকিছুর ভাবনাতে বুদ হয়ে গেছিল বলেই টের পাইনি, তার জন্য নিশ্চয় সে রান্নাঘর উড়িয়ে দেওয়ার মতো মেয়ে নয়।

– সে তো একটু অসাবধান হয়ে গেছিলাম তাই। আপনি না আসলেও আমি ঠিকই সামলে নিতে পারতাম

মেহরাজ কিয়ৎকাল নিরেট চোখে তাকিয়ে রইলো। দুই পা এগিয়ে এসে ফিচেল গলায় বলল

– আপনি কি আমার সাথে ঝগড়া করতে চাচ্ছেন মোহমায়া?

মোহর মুহুর্তেই দমে গেল। মূর্ছে গেল হুট করে জ্বলে ওঠা চঞ্চলতা। নাজুক দৃষ্টি নামিয়ে নিলেও পরক্ষণেই মেহরাজের বলা কথাটা উপলব্ধি করে বিব্রত মুখাবয়বে বলল

– মোহমায়া? মানে?

– শুধু মোহ কেমন খালি খালি লাগে। তাই মোহমায়া। নট ব্যাড, সাউন্ডস গুড রাইট?

– আমার নাম মোহর শিকদার। আমাকে আমার নামে ডাকলেই খুশি হবো

-, শুনেছি আগের যুগে অনেকেরই শ্বশুড়বাড়িতে এলে নাম পরিবর্তন হয়ে যেত। নিজের আগের নাম যা ছিল সেটা বাদ দিয়ে স্বামী, শ্বশুরালের নাম নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতো। বাট দ্যাটস নান অফ মাই বিজনেস। আপনার যাদি আপত্তি থাকে তবে আমি আপনাকে আপনার নিজের নামেই ডাকবো মোহর শিকদার

বলেই পুরু অধর ছড়িয়ে বাকা হেসে স্থানত্যাগ করলো মেহরাজ। মোহর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলো খানিক। এই লোকটাকে কি সে আদও বুঝতে পারবে?

সাত পাঁচ ভেবে কাপে চা ঢেলে নিয়ে হাঁটা ধরলো নিচতলার একদম কোনার ঘরের দিকে। কলেজ থেকে ফিরে বিকেলে শাহারা বেগম ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কতক্ষণ গল্প গুজব করে মোহরকে চা বানানোর কথা শাহারাই বলেছিল। কিন্তু রান্নাঘরে একা দাঁড়িয়ে থেকে শ্রীতমার কথা গুলো বারবার মনে পড়ছিল। আসলেই কি সম্পর্ক টাকে সুযোগ দেওয়া উচিত? কিন্তু এ বাড়ির লোক তো তাকে মানে না, আর মেহরাজের পূর্ব থেকেই একজন বাগদত্তা আছে। সেই বা কি চাই এসবের কিছুই জানে না মোহর। কার ভরসায় ভরসা আনবে ও?

ভাবতে ভাবতেই ঘরটার সামনে এসে গেল। দরজায় দাঁড়িয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল

– আসবো?

– হ্যাঁ হ্যাঁ আসো। আবার অনুমতির কি দরকার

মোহর ভেতরে ঢুকে শাহারা বেগমের খাটের পাশের টুলটাতে বসলো। কেটলি থেকে চা ঢেলে শাহারা বেগমের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল

– কারো ঘরে ঢুকতে গেলে তো অনুমতি নেওয়া উচিত, তা নয় কি?

– হ্যাঁ তা উচিত। তবে আমার ঘরে ঢুকতে গেলে আর পারমিশন নিতে হবে না, তোকে আজীবনের প্রবেশাধিকার দিয়ে দিলাম। আর হ্যাঁ আমি কিন্তু ওতো তুমি টুমি করতে পারবো না বাপু

মোহর স্মিত হাসলো। ক্ষীণ শব্দ হলো তাতে। শাহারা বেগম চায়ের কাপটা রেখে নাজুক দৃষ্টিতে তাকালো মোহরের মায়াভরা ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ার দিকে। একটু হাসিতেই চিকচিক করে উঠেছে। মেয়েটা হয়তো নিজেই জানে না সে কতটা মায়াবতী। বৃদ্ধা কুচকানো চামড়ার এক হাত এগিয়ে দিয়ে মোহরের নরম গালে হাত রাখলেন। পৌঢ়া গলার স্বরে খানিকটা শীলতা মিশিয়ে বললেন

– হাসলে কতটা মনোহরী লাগে রে তোকে। সবসময় এভাবে হাসিস না কেন বলতো

মোহর ক্ষীণ শব্দে হাসলো। তাতে বিদ্যমান তাচ্ছিল্য বোধগম্যতার বাইরে ছিলনা বৃদ্ধার। তবুও কৌতুহলী চেয়ে রইলেন। নির্জীব গলায় মেয়েটা বলল

– আমাকে হাসার কোনো কারণ তো উপরওয়ালা দেননি দিদা। একসময় দিয়েছিলেন, অনেক বেশিই দিয়েছিলেন। তখন এতটা হেসেছি তাই হয়তো ফুরিয়ে গেছে আমার হাসির মেয়াদ

মুহুর্তেই মূর্ষে গেল বৃদ্ধার চেহারার খুশিয়াল ঔচ্ছ্বাস। চোখ মুখে জড়ো হলো একরাশ বিষন্নতা। এই বদ্ধ ঘরের চার দেওয়ালের মাঝে বলা এই যুবতীর কথাটা তার অন্তর আত্মা ছেদ করলো বিভৎসভাবে। আফসোস, এ কথার মর্মার্থ যদি এ বাড়ির লোকেরা বুঝতো। তাহলে হয়তো মেয়েটার প্রতি এহেন নিষ্ঠুরতা আসতো নাহ

– দিদা, তোমার ঘরের টেবিলফ্যানটা কি আছে?

রুক্ষ একটা চিকন নারী কণ্ঠ কানে আসতেই মোহরসহ শাহারা বেগম ও ঘুরে তাকালো দরজার দিকে। বাইশ তেইশ বছরের একটা মেয়ে। ছিমছাম গড়ন। খোপা করা চুল অবিন্যস্ত অবহেলায় ঘাড়ের কাছে পরে আছে। পরনের বাসন্তী রঙের জামাটা গায়ের রঙের সাথে মিশে গেছে মনে হচ্ছে।

– তাথই এদিকে আই বনু। বস আমার কাছে

– বসতে আসিনি দিদা। তোমার টেবিলফ্যানটা থাকলে দাও

কয়েক কদম এগোতে এগোতে বলল তাথই। কথার মাঝে এক পলক শুধু তাকালো মোহরের দিকে। অভিব্যক্তিতে কিছুই ঠাওর করা গেল না মোহরের প্রতি ওর আচরণ টুকু।

– তোর ঘরের ফ্যানটার কি হয়েছে? চলছে না?

– চলছে। কিন্তু কেমন শোঁ শোঁ আওয়াজ করছে। একদম ভাল্লাগছে না আমার কোনো শব্দ। তুমি দিবা কি না বলো

– দেবোনা কেন। অবশ্যই দেব। মোহর আমার আলমারিটার পাশের টেবিলের উপরে কাপড় দিয়ে ঢাকা আছে ফ্যানটা। ওকে দে তো

মোহর কিঞ্চিৎ ঘাড় নাড়িয়ে, উঠতে গেলে তাথই কর্কশ গলায় বলল

– ও কেন যাবে। আমি নিজেই নিতে পারবো

বলেই এগোতে নিলে মোহর এগিয়ে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বলল

– আপনি বসুন না আপু। আমি এনে দিলে কি খুব সমস্যা হবে?

তাথই রূঢ় দৃষ্টিতে তাকালেও সেটা স্থায়ি হলো নাহ। মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এগিয়ে থপ করে বসলো এতক্ষণ মোহরের বসে থাকা টুলটার উপরে। শাহারা বেগম কেটলি থেকে কাপে চা ঢেলে তাথইয়ের দিকে ধরে বলল

– একটু চা খা বনু। মাথাটা ধরেছে বোধহয় তোর। আরাম লাগবে

– আমার আরামের চিন্তা তোমাদের করতে হবে নাহ। এভাবে আদর আপ্যায়ন করে কি বারবার বুঝিয়ে দিতে চাও আমি এ বাড়ির মেহমান, যাতে আমি এ বাড়িতে না থাকি

– তা কেন হবে বনু। তুই এ বাড়ির বড়ো মেয়ে। তোরই তো বাড়ি।

– থাক আমাকে এসব ভুজুংভাজুং দেওয়ার দরকার নেই। আমাকে ফ্যানটা দিয়েছো ওই যথেষ্ট

মোহর ফ্যানটা এগিয়ে এনে পাশে রাখলে তাথই উঠে দাঁড়ালে মোহর নরম গলায় বলল

– আপু এখানে বসুন না। অসুবিধা হলে আমিই চলে যাচ্ছি। আপনি বিরক্ত হবেন না

– নাম কি তোমার?

হুট করেই কথার মাঝে প্রশ্ন করলো তাথই। মোহর এক নজর তার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল

– মোহর

– শোনো মণি নাকি মোহর। আমাকে তেল দিতে এসো না। এটা আমার বাড়ি। আমি কোথায় থাকবো কোথায় সুবিধা সেটা আমিই ভালো বুঝি।

বলেই ফ্যানটা হাত থেকে খপ করে নিয়ে শাহারা বেগমের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল

– আসছি

বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ওর যাওয়ার পানে চেয়ে ফোস করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন শাহারা। ভরা গলায় বলল

– কি যে হলো মেয়েটার। আগে এমন ছিল না। কি সুন্দর হাসি হাসি কথা বলতো। আমার ঘর থেকে নড়তই না। বিয়ের পর যাও বা পাল্টেছিল বাচ্চাটা হওয়ার পর থেকে একেবারেই খিটখিটে হয়ে গেছে।

মোহর তাথই এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বসলো আগের স্থানে। শাহারা বেগমের কথা শুনে মৃদু হেসে বলল

– আপুর সমস্যা টা আমি বুঝতে পেরেছি। চিন্তিত হবেন না। শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে।

…………………………

পুরো সন্ধ্যা টা পার করে প্রায় রাত আটটার দিকে ঘরে এলো মোহর। শাহারা বেগমের সাথে গল্প করতে করতে এতটা সময় পার হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। ঘরে আসলেই তো আবারও শূন্যতা হাহাকার ঘিরে ধরে। কংক্রিটের চার দেওয়ালের মাঝে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে যেন। মোহরের ঘরের সাথে একটা বারান্দা আছে, বারান্দা বলা ভুল হবে, ওটা অন্য একটা বারান্দার অংশ। স্লাইডিং উইন্ডো টা খুললে খাছেই ওটা। ঘরের জানালা টা একদম মেঝে পর্যন্ত। প্রথমে দেখলে যে কেও দরজাই ভাববে।

ঘরে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে নিলো। তোয়ালে টা হাত থেকে রেখে জানালার কাঁচটা খানিক সরিয়ে দাঁড়ালো। ফুরফুরে হাওয়া বইছে। বর্ষাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে শরতের আগমন বার্তায় পুরোদমে
তোড়জোড় শুরু করেছে। থেকে থেকে বৈরী হাওয়ায় রেশমের ন্যায় ফুলের গন্ধ এসে ধাক্কা দিচ্ছে নাকে। এই বাড়ি থেকে একটু দূরেই একটা ঝিল মতো আছে। শহরের বুকে এমন দৃশ্য বেশ দুষ্কর।

বেশ খানিকক্ষণ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থেকে, সরে এলো। টেবিলে বসে বইয়ে মুখ গুঁজে ঘন্টা চারেক পার হয়ে গেল। রাত প্রায় একটা। ঘরের লাইট বন্ধ করে শুতে এলো মোহর।
বিছানায় শুয়ে খানিক এপাশ ওপাশ করে যেইনা চোখ দু’টো লেগে এসেছে তখনি ধপ করে কিছু পড়ার শব্দে ঘুম ছুটে গেল। মনে হলো শব্দটা জানালার দিক থেকেই আসছে। কিন্তু জানালার নিচে তো ফাঁকা। আর পড়ে যাওয়ার মতো কিছু নেই ও? মনের ভুল ভেবে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করতে নিলে কারো পায়ের শব্দ কানে এলো। মনে হলো কেও গুনগুন করে গান গাইছে।
হুট করেই কেমন ঠান্ডা হয়ে আসলো মোহরের হাত পা। জানালার বাইরে ফিসফিসানির শব্দ ও আসলো কানে। মোহর বিছানা থেকে নেমে গুটি গুটি পা ফেলে এগিয়ে গেল। মনে হচ্ছে কোনো মেয়েলি কান্না। আর অনেকগুলো মানুষের একসাথে ফিসফিসানির শব্দ। জানালার বাইরে দাঁড়ানোর মতো স্পেস বা রেলিং নেই। তাহলে এখানে কেও কি করে আসতে পারে? ভূতে ভয় পাওয়ার মতো মেয়ে সে না। তবে এরূপ অভিজ্ঞতাও নেই। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড়ো হলো। ধপাস করে স্লাইডিং উইন্ডো টা সরিয়ে দিতেই হুট করে একটা সাদা ছায়া মতো বাতাসে মিশে গেল।
ভয়ে আতংকে হাড় হীম হয়ে এলো মোহরের। ছুটে এলো দরজার দিকে। ছিটকিনি খুলে ফেললেও মোহরের আকস্মিক ভয়কে আরও দ্বিগুণ করে দিল দরজাটা। ঘাবড়ে গেল মোহর এটা কি হচ্ছে ওর সাথে! কয়েকবার চেষ্টা করেও দরজাটা খুলতে পারলো নাহ। সে তো ছিটকিনি ছাড়া কোনো লক করেনি ও। কয়েকবার নব মুচড়েও খুলতে পারলো নাহ। এবার মনে হলো সত্যিই কোনো অশরীরী অপ্রকৃতস্থ কোনো উপস্থিতি টের পেলো নিজের আশেপাশে। প্রচন্ড উদ্বিগ্নতা ঠেলে মনে মনে সাত কালেমা জপ করে ছুটে গিয়ে আবারও নব মুচড়ে দিতেই ফট করে খুলে গেল দরজাটা।

বাইরে যাওয়ার পথ পেয়েই কোনো দিক না ভেবে এক ছুটে বেরিয়ে গেল। দিকবিদিকশুন্য হয়ে এক দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো মেহরাজের ঘরের সামনে। ঘনঘন দুই তিনবার দরজা ধাক্কালো। তবুও খুলছে না। মোহরের ক্রমশই মনে হচ্ছে বায়বীয় কোনো সূক্ষ্ম উত্তাপ ধেয়ে আসছে ওর দিকে। ভয়বিহ্বলে তটস্থ হয়ে সজোরে ধাক্কা দিতেই দরজা টা খট করে খুলে গেলো। মোহর এক ছুটে গিয়ে ঝাপটে পরলো মেহরাজের প্রশস্ততর বুকটার মাঝে। অবস্থান,পরিস্থিতি ঠাওর করে উঠতে পারার আগেই মোহর আতঙ্কগ্রস্থের মতো বলল

– ও ওহ ওখানে আছে, ওখানে কেও আছে। আমা আমাকে ধরবে। আমাকে ধাওয়া করতে আসছে

– মোহ? কি হয়েছে? কি আছে। দেখি এদিকে তাকান?

ঘামে ভিজে গেছে সারা শরীর। হাত পা অস্বাভাবিক ঠান্ডা হয়ে আসছে। লাল হয়ে আসা মুখটায় জ্বলজ্বল করা চোখ তুলে মেহরাজের দিকে তাকিয়ে বলল

– ওই ঘরে কিছু আছে। ভ্ ভূত ভূত আছে। আমি যাবো না যাবো…

বলতে বলতেই প্রচন্ড ভীতিকর পরিস্থিতিতে সমস্ত চিত্ত চেতনা হারিয়ে জ্ঞানশূন্য হয়ে পরলো মেহরাজের বুকের উপর।
মেহরাজ উদ্বিগ্ন হলো না মোটেও। সদা সর্বদা শান্ত মুখাবয়ব বজায় রেখে আলতো ভাবে চাপ’ড়ালো মোহরের গালে। ওর চেতনাহীন অবস্থা টা সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত করে মুচকি হাসলো।
অবিলম্বেই কোলে তুলে নিলো মোহরের নিস্তেজ দেহটা। খুব যত্নে আগলে রাখলো খাটের উপরে। বালিশের উপর মাথাটা রেখে চিত করে শুইয়ে দিল। ঘামে ভিজে চুলগুলো মুখের সাথে লেপ্টে আছে। আস্তে আস্তে আঙ্গুলের তর্জনী উঠিয়ে সরিয়ে দিল এক এক করে। নিজের শার্টের হাতাটার কোণা দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে সারা মুখের ঘাম মুছে দিল।

হলদেটে লাইটের মৃদু আলোয় মাখামাখি সারা ঘর, সেই আলোতে জ্বলজ্বল করা দুটো ধারালো চোখের দৃষ্টিতে স্থবিব মুখটার দিকে অনড় তাকিয়ে থেকেই জলদগম্ভীর গলায় একরাশ মাদকতা মিশিয়ে বলল

– জানেন মোহমায়া নভমন্ডলের বুকের মধ্যিখানে অবস্থিত ওই চাঁদটার সাথে আপনার ভীষণ মিল। দুটোই মোহনীয়, অদ্ভুত উষসী। দুজনকেই দূর থেকে দেখতে হয়, ধরা ছোঁয়া যায়না। চাঁদকে নাহয় দূরেই থাকতে দিলাম,কিন্তু আপনি তো আমার স্পাইনাল কর্ডের চেয়েও নিকটে। আপনাকে কি করে দূরে রাখি বলুন ।
কিন্তু এভাবেই ভয় পেয়ে যাবেন বুঝতে পারিনি। তবে এমন ভয়ের জন্য যদি আপনাকে আমার দুচোখের সামনে পায় তাহলে তাতে খুব ক্ষতি নেই, তাইনা?

.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

©Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here