ফানাহ্ 🖤 #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান #পর্বসংখ্যা_২০

##ফানাহ্ 🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_২০

– দাভাই ওদিকটাই চলো না, আমার আরও কেনা বাদ আছে

– তিন জোড়া হাত ভরে ফেলেছিস সাঞ্জে, এবার কিন্তু মাথায় করে হাঁটা লাগবে

সাঞ্জে শপিং ব্যাগ গুলো দু’হাতে সামলাতে সামলাতে বলল

– দরকারে তাই নিতে হবে। কতদিন শপিং করি নাই বলো তো।

বলে কোনো দিকে না তাকিয়ে এস্কেলেটরে উঠে দাঁড়ালো। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে এটা ওটা কিনেই যাচ্ছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে তবুও থামাথামির নাম নেই ওর। এ দোকান ও দোকান ঘুরে একটা একটা করে জিনিস কিনছে আর মোহর সদা সর্বদা ওর শান্ত স্বভাবে পিছু পিছু হাঁটছে।
বেশ অনেকটা সময় হাঁটাহাঁটি করে ক্লান্ত হলেও সাঞ্জের এমন প্রাণোচ্ছলতা দেখে মুখ ফুটে কিছু বলেনি। তবে মোহরের মেদুর গালে ক্লান্তির বিন্দু বিন্দু ছাপ মেহরাজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াতে পারেনি, সাঞ্জে এগিয়ে গিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরের দোকান গুলোতে ঢুকে পড়েছে। মোহর ক্লান্ত চাহনিতে এস্কেলেটরের দিকে চেয়ে এগোতে গেলে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেহরাজ এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল

– ব্যাগগুলো আমার কাছে দিন

মোহর ঘাড় উঁচিয়ে একবার তাকিয়ে আবারও দৃষ্টি নামিয়ে নিল। নতজানু হয়ে ধীমি গলায় বলল

– আমি পারবো, থাক

মেহরাজ দ্বিতীয় শব্দটি ব্যয় না করে হাত বাড়িয়ে মোহরের হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে বলল

– আমি থাকতে আপনাকে পারতে হবে নাহ মোহমায়া, চলুন যাওয়া যাক

বলে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। এস্কেলেটরের সামনে আসলে মোহর পা ফেলতে গিয়েও থেমে গেল, সাঞ্জে আজ ওকে জোর করে স্টিলেটো হিল পরিয়েছে, এমনিতে বেশ লম্বা হওয়ার দরুন হাই হিল কখনো পড়ার প্রয়োজন হয়নি, আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাঞ্জের জোরাজুরিতে পড়েছে বটে কিন্তু চলন্ত সিড়ির এহেন দ্রুতগামী গতি দেখে চিকন পায়ার হিলটা দিয়ে পা রাখতে বেশ ঘাবড়ে গেল মোহর, কিন্তু জড়তাগ্রস্ত হয়ে ব্যাপারটা বলতেও পারছে নাহ। দ্বিধাদ্বন্দ্বিত মুখাবয়বে মুহূর্ত খানেক দাঁড়িয়ে থেকে সাহস জুগিয়ে পা এগোতে গেলে রাশভারি গলার নরম স্বরটা পাশ থেকে বলে উঠলো

– আমার হাতটা ধরুন

সচকিত হয়ে পাশ ফিরে তাকালে শপিং মলের চিকচিকে আলোতে মেহরাজের শুভ্র শান্ত মুখটা বেশ স্নিগ্ধ দেখালো মোহরের নিকট। স্বাভাবিক গলায় বলল

– আমি একাই যেতে পারবো।

– আমার দু’হাতে ব্যাগ না থাকলে বলার অপেক্ষা করতাম না, আমার হাতটা ধরুন

ভারি গলার কথাগুলো বেশ দাপটধারী শোনালো মোহরের কানে। মনে হলো যেন ছোট বাচ্চাকে হাত ধরে হাঁটার জন্যে শাসন করলো মেহরাজ। এক মুহুর্তের জন্যে মোহরের মনটা বাধ্য শিশু হয়ে উঠলো। জড়তা, বিজড়তা কাটিয়ে মনের অদ্ভুত ইচ্ছাতে সায় দিয়ে আলতো স্পর্শে মেহরাজের নেভি ব্লু শার্টে আবৃত বাহুখানা ধরলো, মেহরাজ চোখ দু’টোয় সামনে ইশারা করে এগোতে বললে মেহরাজের সাথেই পা ফেলল। কিন্তু চলন্ত সিড়ির খাঁজকাটা ভাঁজে স্টিলেটোর সরু মাথা টা ঢুকতেই পদক্ষেপ নড়বড়ে হয়ে উঠলো মোহরের, গোড়ালি বাঁকিয়ে পড়তে নিলে মেহরাজের বাহু দু’হাতে সপাটে ঝাপটে ধরলো।
অসন্ন বিপদের কথাটায় আগে থেকেই অবগত থাকলেও অপ্রস্তুত হয়ে গেল মোহর, মেহরাজের হাতটা ধরা না থাকলে নিশ্চিত পা উলটে পড়তো সবার সামনে, কি একটা লজ্জার ব্যাপার হলো ছি ছি! লজ্জিত নজরে কিঞ্চিৎ ঘাড় বাকিয়ে মেহরাজের দিকে তাকালো মোহর, গম্ভীর মুখাবয়বের দায়সারা দৃষ্টি সরলভাবে নিবন্ধিত। মোহর দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়ালো। তবে এবার আর মেহরাজের হাত ছাড়লো না, ফিট্ খানেক দূরত্ব ঘুচিয়ে যান্ত্রিক সিড়িটা এসে থামলো দোতালায়। আলতো ভাবে হাত সরিয়ে নিয়ে হাঁটতে থাকলো দুজন, তন্মধ্যে একটা সুহাস্য কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো অদূর থেকে, মেহরাজের সঙ্গে মোহরও পিছু ঘুরে দাঁড়ালো

– গুড ইভিনিং স্যার।

– গুড ইভিনিং

হাস্যজ্বল চেহারার যুবকটির সম্ভাষণে কিঞ্চিৎ ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিলো মেহরাজ। ছেলেটি দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মেহরাজের সাথে কিছু একটা চোখের ইশারায় বলেই তার সানন্দিত চেহারা টা মোহরের দিকে ফিরিয়ে বলল

– আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।

অচেনা ব্যক্তিটির অভিবাদনে কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুততায় বিব্রতবোধ করলেও সহবত সুলভ গলায় সালামের জবাব দিল মোহর

– ওয়ালাইকুমুস সালাম

– ম্যাডাম আমি অভিমন্যু। সারের পিএ

মোহর সৌজন্যবোধক হেসে ‘ও’ বলল। অভিমন্যু নামক ছেলেটা মেহরাজের সাথে কিয়ৎকাল কথা বলল, তাদের সংলাপের হেতু হলো অভিমন্যু নামক ছেলেটাও শপিং করতেই এসেছিল। অত্যন্ত বাধ্যগত ভৃত্যের মতো মেহরাজ দিতে না চাইলেও জোর করে ব্যাগগুলো নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল

– স্যার আমি এগুলো গাড়িতে রেখে দিচ্ছি। আসি ম্যাডাম

বলেই প্রস্থান করলো। যেন বাতাসের মতো এসে অনিলের মতই গমন করলো। মোহর ওর যাওয়ার পানে চেয়ে থাকা অবস্থায় মেহরাজ বলল

– আমার সবচেয়ে ট্রাস্টেড স্টাফ অভিমন্যু মুখার্জি, হি ইজ লাইক মাই ইয়ংগার ব্রাদার।

মোহর শুধু মুখ গোল করে ও বললে আবারও হাঁটা শুরু করলো দুজনে।
প্রায় আধ ঘন্টা পর সব কেনা কাটা করে ক্ষান্ত হলো সাঞ্জে, মোহরের সাথে গল্প করতে করতে শপিং মল থেকে বেরিয়ে এলো একসাথে তিনজনে। মল থেকে মিটার খানেকের দূরত্বে পার্কিং প্লেস, সেই উদ্দেশেই অগ্রসর হতে লাগলে
হাঁটার মাঝেই হুট করে পেছন ফিরে তাকালে মেহরাজকে না দেখতে পেয়ে মোহরের ললাটে সূক্ষ্ম ভাঁজ পরলো, জিজ্ঞাংসুক গলায় বলল

– সাঞ্জে, উনি কোথায় গেল?

সাঞ্জে মোহরের দৃষ্টি লক্ষ্য করে পেছনে এদিক সেদিক তাকালে মেহরাজকে দেখতে না পেলেও চিন্তিত হলো না, উলটে স্বাচ্ছন্দিত গলায় বলল

– আরে কোত্থাও যাইনি দাভাই। হয়তো ফোন এসেছিল তাই কথা বলতে গেছে, এসে যাবে এক্ষুনি

বলে আবারও হাঁটতে হাঁটতে গল্প শুরু করলো। মোহর সাঞ্জের গল্প শুনতে থাকলেও মুহূর্ত কয়েক বাদে বাদেই পিছু ঘুরে তাকালেও মেহরাজকে কোথাও দেখতে পেল না। হুট করেই কোথায় চলে গেল মানুষটা! নিজের অজান্তেই মোহরের মনের ভেতর ব্যকুলতার সূক্ষ্ম ঢেউ উঠলো, মিনিট কয়েকের অনুপস্থিতিতে কেমন চিন্তার ভাঁজ খাটলো অন্তরে।

– ভাবী, আইসক্রিম খাবে? চলো খাই

বলে সামনের দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। মোহর পা বাড়াতে গেলেও আটকে গেল, ব্যথায় চোখ মুখ খিঁচিয়ে এলো ওর।
হাঁটতে হাঁটতে মোহরের পা টলমলে হয়ে যাচ্ছে, স্টিলেটো পরার অভ্যাস না থাকায় পায়ের গোড়ালি আর কনিষ্ঠ আঙ্গুলের দিকে চামড়া ছিলে গেছে হয়তো,হিলের ঘর্ষণ আর জ্বলনে পা টলে আসছে। ছিলে যাওয়া স্থানের পীড়ন আর অবিন্যস্ত পদক্ষেপের তাল সামলাতে না পেরে হুট করেই পড়ে যেতে নিলে পাশ থেকেই হাতটা কেও ঝাপটে ধরলো,আকস্মিৎ ঘটনায় অপ্রস্তুত হয়ে তাল হারিয়ে ফেললো মোহর। তৎক্ষনাৎ শক্ত হাতে ঝাপটে ধরে রাখা মানুষটা বলে উঠলো

– মোহ, সামলে হাঁটবেন তো। এক্ষুনি পড়ে যাচ্ছিলেন

মোহর ব্যথাতুর দৃষ্টিতে মেহরাজের দিকে তাকালে মেহরাজ ভ্রুকুটি করা উৎকণ্ঠিত গলায় বলল

– কি হয়েছে? ঠিক আছেন মোহ?

– প্ আমার পা

ততক্ষণে সাঞ্জে দৌড়ে এগিয়ে আসলো। মোহরকে দু’হাতে ধরে রাখতে দেখে বলল

– ভাবী কি হয়েছে তোমার?

মেহরাজ হাতের আইসক্রিমের প্যাকেট টা সাঞ্জের হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসলো রাস্তার মাঝে। ইঞ্চিখানেক উচ্চতার উঁচু স্টিলেটো টা আলতো ভাবে সযত্নে মোহরের পা থেকে খুলে দিতেই রক্তের বিন্দু মাখা পা টা স্পষ্ট হলো।

– ভাবী তোমার পা তো অনেকখানি ছিলে গেছে, রক্তও তো বেরোচ্ছে

মেহরাজ সুগভীর চোখের অসন্তোষ জনক চাহনি দিয়ে তাকালো মোহরের দিকে, রসহীন স্বরে বলল

– আপনি এতটা বেখেয়ালি কি করে হলেন, পা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে অথচ আপনি এটা পড়েই হাঁটছিলেন

– আমি আসলে বুঝতে পারিনি

মুখ খানা ফ্যাকাসে করে বলল মোহর। মেহরাজ ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল

– গাড়ি পর্যন্ত যেতে পারবেন?

মোহর ঘনঘন মাথা ওঠানামা করে সম্মতি দিল। বউ যে যথেষ্ট গড়িমা পূর্ণ জেদি স্বভাবের এটা মেহরাজ বেশ জানে। তাই আর কিছু বলল না। এমনিতেও গাড়িটা সামনেই ফিট্ কয়েক দূরত্বে। মোহরের হিল টা হাতে নিয়েই এগিয়ে গিয়ে দরজা টা খুলে দিল মেহরাজ, মোহর সাঞ্জে দুজনেই উঠে বসলে গাড়িতে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটা এসে থামলো আব্রাহাম ম্যানসনের সামনে, গাড়ি পার্ক করে বাড়ির ফটক পেরিয়ে ঢুকলো তিনজন। ড্রয়িং রুমে তখন আজহার,আরহাম মুর্তজা সহ আম্বি আর কাকলি বেগম ও উপস্থিত। রাতের খাবার খাচ্ছিল সবাই, এই মুহুর্তেই তিনজন ঢুকলে সকলের দৃষ্টি তৎক্ষনাৎ ওর দিকে গেল। আজহার মুর্তজা বললেন

– কি সাঞ্জে, হলো শপিং?

– হ্যাঁ চাচ্চু, অনেক শপিং করেছি আজ, মনটা ভরে গেছে একদম।

সাঞ্জে হাসি হাসি মুখে বলে এগিয়ে গেল টেবিলের দিকে। আরহাম মুর্তজা খেতে খেতে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– ছয় মাসের জন্য তোমার শপিং শেষ। অনেক বেশি অপচয় করো তুমি, এটা কিন্তু মোটেও উচিত নাহ।

সাঞ্জে বাবার কথা কানে নিলো নাহ। সোফাতে বসে এক এক করে সব কিছু বের করে দেখাতে লাগলো। ঠিক তখনি কাকলি বেগম মেহরাজকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– মেহরাজ তুমি কার হিল হাতে করে রেখেছো?

– ওটা ভাবীর, স্টিলেটো পড়ে পা ছিলে গেছে ভাবীর তাই ওটা খুলে ফেলেছে

মেহরাজের আগেই সাঞ্জে নিজেই উত্তর দিল তার মায়ের প্রশ্নের। কাকলি মোহরের ক্ষত হওয়া পায়ের দিকে তাকালো সেটা পুরোদমে অগ্রাহ্য করে বেশ তাচ্ছিল্য ভরা গলায় বললেন

– এখন কি না মেহরাজ বউয়ের জুতা,স্যান্ডেল ও হাতে নিয়ে ঘুরছে। ভালই উন্নতি করিয়েছে মেয়েটা তোমার।

আম্বি বেগম আড়চোখে তাকালো শুধু মোহরের মুখের দিকে। মেয়েটা বরাবরের মতোই এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, তবে মেহরাজ চুপ রইলো নাহ, হাতের হাই হিলটা নিয়েই এগিয়ে এসে স্বাভাবিক ভঙ্গিমাতেই বলল

– নিজের জুতা,স্যান্ডেল হাতে নিয়ে ঘুরতে যখন অসুবিধা হয়না বউয়ের টা নিয়ে ঘুরলে আপত্তি কোথায়, বউ তো আমারই।

মেহরাজের কথায় উপস্থিত সকলেই আড়চোখে তাকালো, তবে উত্তর দিলো নাহ। নাজমা রান্নাঘরে আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছে আর মিটমিটিয়ে হেসে বলছে

– মোক্ষম জবাব দিয়েছে কাকলি বেগমকে। আরও লাগো পেছনে, ইশ আম্মা থাকলে ভালো হতো।

কাকলি বেগম মেহরাজের এরূপ কথার জবাব খুঁজে পেলো নাহ। তবে টিটকারি দিতে তার বাদ গেল না, ফিচেল গলায় বললেন

– দুইদিন বিয়ে করেই বউ বউ করছো, কদিন বাদে তো বউ বাদে কাওকে চিনবেই না তুমি।

– আগে কদিন যাক, তখন দেখা যাবে নাহয়।

বলেই মোহরের এক হাত ধরে এগোতে লাগলে এতক্ষণে আম্বি বেগম মুখ খুলে বললেন

– তোর খাবার কী ঘরেই পাঠিয়ে দেব বাবু।

– আমরা তিনজনেই বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি মা, তোমরা খাও

আম্বি বেগম প্রত্যুত্তরে আর কিছু বললেন না। বলার মতো কিছু খুঁজেও পেলেন নাহ। ইদানীং চুপচাপ থাকেন সচরাচর, ঘর থেকেও প্রয়োজন বাদে কমই বের হন, শুধু ছেলের খাওয়া দাওয়ার আর সবকিছুর খোঁজ রাখা টাই তার নিয়ম মাফিক হয়। বিয়ে করে যে ছেলে পালটে গেছে এই ধারণা টা তার বুকে আঠার মতো বিঁধে যাচ্ছে দিন দিন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিজ স্ত্রীর প্রতি রক্ষণশীলতাও তার কাছে মনে হচ্ছে ছেলে পর হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত।

মেহরাজ না নিজে আর এক লহমা সেখানে দাঁড়ালো আর নাইবা মোহরকে দাঁড়াতে দিল। সোজা নিজ ঘরে এসে মোহরের হাত ছেড়ে দিয়ে কাবার্ডের দিকে গিয়ে বিশাল পাল্লা টা খুললো। ভেতরে কিছু একটা খুঁজতে লাগলে মোহর ভরা গলায় বলে

– আপনি আমার জন্যে বাড়ির সবার সাথে এভাবে কথা বলবেন না প্লিজ।

মেহরাজ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মোহরের দিকে, মোহর খাটের উপর বসেছে পা ঝুলিয়ে, সেদিকে তাকিয়েই বিশালাকৃতির কাবার্ডের সাথে হেলান দিল মেহরাজ, সকৌতুক গলাতে জিজ্ঞাসা করলো

– কিভাবে বলবো না

-, এই যে এভাবে প্রতিবাদ করে। এতে সকলে অসন্তুষ্ট হয়, ভাবে আমি আপনাকে উসকাই এসব কথা বলতে

তৎক্ষনাৎ জবাব দিল না মেহরাজ। আবারও কাবার্ডের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বের করলো
এগিয়ে এসে মোহরের সামনেই বসলো হাঁটু গেড়ে, মোহরের বা পায়ের গোড়ালিটা নিজের ভাঁজ করে রাখা হাঁটুর উপরে তুলতে তুলতে বলল

– আমার বউকে কেও কথা শোনালে আমি উত্তর করবো এমনটাই কি সঠিক না? আর নাতো আমি ঝগড়া করেছি নাইবা অযৌক্তিক কথা বলেছি, আ’ভ যাস্ট এক্সপ্লেইনড হোয়াই আ’ম রাইট।

কথাগুলো ঠিক মোহরের বোধগম্যতায় পৌঁছাতে পারলো কি না স্পষ্ট নয় তবে মেহরাজের এরূপ কাজে মোহর দুরন্তরভাবে হতবাক হয়ে সরে আসতে গেলে মেহরাজ ওর পায়ের গোড়ালি চেপে ধরে বলল

– নড়বেন না একদম

– আ আপনি আমার পায়ে হাত কেন দিচ্ছেন ছাড়ুন

মোহর ভীষণ অস্বস্তিপূর্ণ গলায় বলল। ও যে এভাবে হুট করে পায়ে হাত দিয়ে বসবে এটা ঘুনাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারেনি মোহর, বিহ্বলচিত্তে বৈক্লব্য স্বরে বলল

– আমি নিজেই ওষুধ লাগিয়ে নিতে পারবো, ছাড়ুন আপনি

– আমাকে নিজের কাজ করতে দিন মোহমায়া, কাজে ব্যাঘাত একেবারেই অপছন্দ আমার।

আপতিতভাবে মেহরাজের কণ্ঠস্বরটা তুলনামূলক গম্ভীর হয়ে উঠলো। ভারি গলার শাসন সুলভ বাক্য গুলো কর্ণকুহরে সাময়িক প্রভাব বিস্তার করলো। দমে গেল মোহর, কিন্তু তার শরীর, মন,চিত্ত, অভিলাষ কোনো টাই স্থির রইলো নাহ। মেহরাজের পুরুষালী স্পর্শের শীতলতা কেমিক্যালের শৈথিল্যকে ছাড়িয়ে তরতর করে ঠান্ডা করে দিল মোহরের কায়া।
চামড়া সরে যাওয়া স্থানটাতে স্যাভলনে ভেজানো তুলাটা স্পর্শ হতেই দপদপ করে জ্বলে উঠলো, শ জাতীয় শব্দ করে কিঞ্চিৎ কেঁপে চোখ খিঁচিয়ে নিল মোহর। কিন্তু পা সরিয়ে নিতে গেলেও শক্তপোক্ত হাতের থাবা টা আলগা করতে পারলো নাহ। লহমা খানিক পার না হতেই জ্বলন ধরা স্থানে শীতল হাওয়া লাগলে চোখ দু’টো প্রসারিত হলো মোহরের, নিজের পায়ের কাছে মুখ নিয়ে মেহরাজকে ফুঁ দিতে দেখে গলা ঘাড়ের রজ্জু গুলোতে শিরশিরানি বয়ে গেল, ভাঙা ভাঙা গলায় বলল

– ঠিক আছি, ফুঁ দিতে হবে নাহ

মেহরাজ শান্ত নজরে চোখ বুলালো মোহরের অবিন্যস্ত, অস্থির চেহারা পানে। নিজের কাজটা সম্পূর্ণ করে তবেই উঠে দাঁড়ালো।
বক্স টা জায়গা মতো রেখে দিয়ে একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ঢুকলো। মোহর হতভম্বিত রূপে তাকিয়ে রইলো তার সামনে থেকে সরে যাওয়া সুপুরুষটির পানে, বন্ধ ওয়াশরুমের দরজার দিকে ঠিক কতক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো সেই সময় টাও বেহিসেবীর কোটায়।

অদ্ভুত রোমঞ্চিত ভাবে নয়নের দৃশ্যপটে ভাসতে থাকলো অত্যন্ত সুদর্শন এক পুরুষ যে কি না সময় সাপেক্ষে একবার তার সম্মান বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, কখনো প্রতিবাদের শেকরে আঁকড়ে রাখে, কখনো দ্বায়িত্বের বেড়াজালে আচ্ছন্ন করে ফেলে আবার কখনো বা যত্নের স্পর্শে শরীর না ছুঁয়েই সবটা ছুঁয়ে দেয়। অদ্ভুত সম্মোহনীর মতো তাকিয়েই রইলো মোহর। সবটা,সবকিছু কেমন স্বপ্ন, কল্পনা, বানোয়াট মনে হতে থাকলো। চিরচিত্তে এক মানুষের মোহ তাকে যেন গ্রাস করে ফেলছে। উদ্বেগ, যত্ন, ব্যবহারে ক্রমেই মানুষটা মোহরকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশের মধ্যে গ্রাস করে নিচ্ছে৷ সবহারা জীবনে মৃত অনুভূতি গুলোর পরিশিষ্টাংশ একটা মানুষ যে অচিরেই অর্জন করে নিচ্ছে এটা মোহর সজাগ মস্তিষ্ক ধরতে না পারলেও অচেতন মন, অন্তঃস্থল প্রবল ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে।

বেশ দীর্ঘ একটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোলো মেহরাজ। দরজা খোলার খট করা শব্দে মোহর ঘাড় ঘুরিয়ে নিল ফট করে। মেহরাজ মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে বসলো ডিভানে। ল্যাপটপের সাটার তুলে অবিলম্বেই দু’হাতের তর্জনী খাটিয়ে মনোনিবেশ করলো জ্বলজ্বল করা স্ক্রিনে।

মোহর আড়চোখে চাইলো বার দুয়েক, মোহরকে ঠাঁই বসে থাকতে দেখে মেহরাজ চোখ দু’টো স্ক্রিনে রেখেই বলল

-, ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ুন।

মোহর বার কয়েক পলক ফেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সুতির একটা জামা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের ঢুকে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বেরোলো। মেহরাজ তখনও নিজ কাজে ব্যস্ত। মোহর কোনো শব্দহীনায় বিছানাতে গা এলিয়ে দিল।
অনেকটা ক্লান্ত লাগছে শরীর টা, কিন্তু বিছানাতে শুয়ে খানিক এপাশ ওপাশ করেও ঘুম না আসার কারণ টা বোধগম্য হলো না, চোখ বন্ধ অবস্থায় ই কুচকে নিলে হুট করে সুইচ চাপার খট করা শব্দ টা হতেই চোখ খুলে দেখলো মেহরাজ লাইট টা বন্ধ করে জিরো বাল্ব জ্বেলে দিয়েছে। ঘরের লাইটের তীব্র আলোতে যে ঘুম ধরা দিয়েও দিতে চাচ্ছিল না এটা মোহর নিজেও বুঝতে পারেনি। মানুষটা কি করে না বলতেই সবটা বুঝে যায়! কি করে মোহরের সকল সুবিধা অসুবিধা টাকে ম্যাজিশিয়ানের মতো ধরে ফেলে!
আধ-অন্ধকার ঘরেও মৃদু আলোতে ল্যাপটপ অপারেট করতে থাকলো মেহরাজ। অদ্ভুত কৌতুহলবশত মোহর সামান্য ঘাড় উঁচিয়ে তাকালো মেহরাজের দিকে, ল্যাপটপের সফেদ আলোতে ধূসর বর্ণা চোখটা আরও চিকচিক করছে, এক হাত মাথার নিচে দিয়ে হেলান দিয়ে তাকালো মোহর, দূর থেকেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলো টকটকে পুরু ঠোঁট, খারা নাক, ঘন ভ্রু। আচ্ছা লোকটা কি সত্যিই এমন নিখুঁত সুন্দর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করেছে? বড়োলোক মানুষের ব্যাপার,করতেও তো পারে! পরমুহূর্তেই মোহরের নিজের কপালে দুটো চাপড় বসাতে ইচ্ছে হলো এহেন অযৌক্তিক ভাবনার জন্যে। নিজের উপর নিজেই প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে, চ জাতীয় শব্দ করে আবারও মেহরাজের দিকে তাকালেই চোখাচোখি হলে ভড়কে গেল মোহর। মেহরাজ কৌতূহল ভরা চোখে মোহরের এমন উদ্ভট নজরের দিকেই তাকিয়ে আছে, নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত হলো মোহর, তৎক্ষনাৎ মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

©Humu_❤️

– দাভাই ওদিকটাই চলো না, আমার আরও কেনা বাদ আছে

– তিন জোড়া হাত ভরে ফেলেছিস সাঞ্জে, এবার কিন্তু মাথায় করে হাঁটা লাগবে

সাঞ্জে শপিং ব্যাগ গুলো দু’হাতে সামলাতে সামলাতে বলল

– দরকারে তাই নিতে হবে। কতদিন শপিং করি নাই বলো তো।

বলে কোনো দিকে না তাকিয়ে এস্কেলেটরে উঠে দাঁড়ালো। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে এটা ওটা কিনেই যাচ্ছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে তবুও থামাথামির নাম নেই ওর। এ দোকান ও দোকান ঘুরে একটা একটা করে জিনিস কিনছে আর মোহর সদা সর্বদা ওর শান্ত স্বভাবে পিছু পিছু হাঁটছে।
বেশ অনেকটা সময় হাঁটাহাঁটি করে ক্লান্ত হলেও সাঞ্জের এমন প্রাণোচ্ছলতা দেখে মুখ ফুটে কিছু বলেনি। তবে মোহরের মেদুর গালে ক্লান্তির বিন্দু বিন্দু ছাপ মেহরাজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াতে পারেনি, সাঞ্জে এগিয়ে গিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরের দোকান গুলোতে ঢুকে পড়েছে। মোহর ক্লান্ত চাহনিতে এস্কেলেটরের দিকে চেয়ে এগোতে গেলে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেহরাজ এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল

– ব্যাগগুলো আমার কাছে দিন

মোহর ঘাড় উঁচিয়ে একবার তাকিয়ে আবারও দৃষ্টি নামিয়ে নিল। নতজানু হয়ে ধীমি গলায় বলল

– আমি পারবো, থাক

মেহরাজ দ্বিতীয় শব্দটি ব্যয় না করে হাত বাড়িয়ে মোহরের হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে বলল

– আমি থাকতে আপনাকে পারতে হবে নাহ মোহমায়া, চলুন যাওয়া যাক

বলে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। এস্কেলেটরের সামনে আসলে মোহর পা ফেলতে গিয়েও থেমে গেল, সাঞ্জে আজ ওকে জোর করে স্টিলেটো হিল পরিয়েছে, এমনিতে বেশ লম্বা হওয়ার দরুন হাই হিল কখনো পড়ার প্রয়োজন হয়নি, আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাঞ্জের জোরাজুরিতে পড়েছে বটে কিন্তু চলন্ত সিড়ির এহেন দ্রুতগামী গতি দেখে চিকন পায়ার হিলটা দিয়ে পা রাখতে বেশ ঘাবড়ে গেল মোহর, কিন্তু জড়তাগ্রস্ত হয়ে ব্যাপারটা বলতেও পারছে নাহ। দ্বিধাদ্বন্দ্বিত মুখাবয়বে মুহূর্ত খানেক দাঁড়িয়ে থেকে সাহস জুগিয়ে পা এগোতে গেলে রাশভারি গলার নরম স্বরটা পাশ থেকে বলে উঠলো

– আমার হাতটা ধরুন

সচকিত হয়ে পাশ ফিরে তাকালে শপিং মলের চিকচিকে আলোতে মেহরাজের শুভ্র শান্ত মুখটা বেশ স্নিগ্ধ দেখালো মোহরের নিকট। স্বাভাবিক গলায় বলল

– আমি একাই যেতে পারবো।

– আমার দু’হাতে ব্যাগ না থাকলে বলার অপেক্ষা করতাম না, আমার হাতটা ধরুন

ভারি গলার কথাগুলো বেশ দাপটধারী শোনালো মোহরের কানে। মনে হলো যেন ছোট বাচ্চাকে হাত ধরে হাঁটার জন্যে শাসন করলো মেহরাজ। এক মুহুর্তের জন্যে মোহরের মনটা বাধ্য শিশু হয়ে উঠলো। জড়তা, বিজড়তা কাটিয়ে মনের অদ্ভুত ইচ্ছাতে সায় দিয়ে আলতো স্পর্শে মেহরাজের নেভি ব্লু শার্টে আবৃত বাহুখানা ধরলো, মেহরাজ চোখ দু’টোয় সামনে ইশারা করে এগোতে বললে মেহরাজের সাথেই পা ফেলল। কিন্তু চলন্ত সিড়ির খাঁজকাটা ভাঁজে স্টিলেটোর সরু মাথা টা ঢুকতেই পদক্ষেপ নড়বড়ে হয়ে উঠলো মোহরের, গোড়ালি বাঁকিয়ে পড়তে নিলে মেহরাজের বাহু দু’হাতে সপাটে ঝাপটে ধরলো।
অসন্ন বিপদের কথাটায় আগে থেকেই অবগত থাকলেও অপ্রস্তুত হয়ে গেল মোহর, মেহরাজের হাতটা ধরা না থাকলে নিশ্চিত পা উলটে পড়তো সবার সামনে, কি একটা লজ্জার ব্যাপার হলো ছি ছি! লজ্জিত নজরে কিঞ্চিৎ ঘাড় বাকিয়ে মেহরাজের দিকে তাকালো মোহর, গম্ভীর মুখাবয়বের দায়সারা দৃষ্টি সরলভাবে নিবন্ধিত। মোহর দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়ালো। তবে এবার আর মেহরাজের হাত ছাড়লো না, ফিট্ খানেক দূরত্ব ঘুচিয়ে যান্ত্রিক সিড়িটা এসে থামলো দোতালায়। আলতো ভাবে হাত সরিয়ে নিয়ে হাঁটতে থাকলো দুজন, তন্মধ্যে একটা সুহাস্য কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো অদূর থেকে, মেহরাজের সঙ্গে মোহরও পিছু ঘুরে দাঁড়ালো

– গুড ইভিনিং স্যার।

– গুড ইভিনিং

হাস্যজ্বল চেহারার যুবকটির সম্ভাষণে কিঞ্চিৎ ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিলো মেহরাজ। ছেলেটি দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মেহরাজের সাথে কিছু একটা চোখের ইশারায় বলেই তার সানন্দিত চেহারা টা মোহরের দিকে ফিরিয়ে বলল

– আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।

অচেনা ব্যক্তিটির অভিবাদনে কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুততায় বিব্রতবোধ করলেও সহবত সুলভ গলায় সালামের জবাব দিল মোহর

– ওয়ালাইকুমুস সালাম

– ম্যাডাম আমি অভিমন্যু। সারের পিএ

মোহর সৌজন্যবোধক হেসে ‘ও’ বলল। অভিমন্যু নামক ছেলেটা মেহরাজের সাথে কিয়ৎকাল কথা বলল, তাদের সংলাপের হেতু হলো অভিমন্যু নামক ছেলেটাও শপিং করতেই এসেছিল। অত্যন্ত বাধ্যগত ভৃত্যের মতো মেহরাজ দিতে না চাইলেও জোর করে ব্যাগগুলো নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল

– স্যার আমি এগুলো গাড়িতে রেখে দিচ্ছি। আসি ম্যাডাম

বলেই প্রস্থান করলো। যেন বাতাসের মতো এসে অনিলের মতই গমন করলো। মোহর ওর যাওয়ার পানে চেয়ে থাকা অবস্থায় মেহরাজ বলল

– আমার সবচেয়ে ট্রাস্টেড স্টাফ অভিমন্যু মুখার্জি, হি ইজ লাইক মাই ইয়ংগার ব্রাদার।

মোহর শুধু মুখ গোল করে ও বললে আবারও হাঁটা শুরু করলো দুজনে।
প্রায় আধ ঘন্টা পর সব কেনা কাটা করে ক্ষান্ত হলো সাঞ্জে, মোহরের সাথে গল্প করতে করতে শপিং মল থেকে বেরিয়ে এলো একসাথে তিনজনে। মল থেকে মিটার খানেকের দূরত্বে পার্কিং প্লেস, সেই উদ্দেশেই অগ্রসর হতে লাগলে
হাঁটার মাঝেই হুট করে পেছন ফিরে তাকালে মেহরাজকে না দেখতে পেয়ে মোহরের ললাটে সূক্ষ্ম ভাঁজ পরলো, জিজ্ঞাংসুক গলায় বলল

– সাঞ্জে, উনি কোথায় গেল?

সাঞ্জে মোহরের দৃষ্টি লক্ষ্য করে পেছনে এদিক সেদিক তাকালে মেহরাজকে দেখতে না পেলেও চিন্তিত হলো না, উলটে স্বাচ্ছন্দিত গলায় বলল

– আরে কোত্থাও যাইনি দাভাই। হয়তো ফোন এসেছিল তাই কথা বলতে গেছে, এসে যাবে এক্ষুনি

বলে আবারও হাঁটতে হাঁটতে গল্প শুরু করলো। মোহর সাঞ্জের গল্প শুনতে থাকলেও মুহূর্ত কয়েক বাদে বাদেই পিছু ঘুরে তাকালেও মেহরাজকে কোথাও দেখতে পেল না। হুট করেই কোথায় চলে গেল মানুষটা! নিজের অজান্তেই মোহরের মনের ভেতর ব্যকুলতার সূক্ষ্ম ঢেউ উঠলো, মিনিট কয়েকের অনুপস্থিতিতে কেমন চিন্তার ভাঁজ খাটলো অন্তরে।

– ভাবী, আইসক্রিম খাবে? চলো খাই

বলে সামনের দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। মোহর পা বাড়াতে গেলেও আটকে গেল, ব্যথায় চোখ মুখ খিঁচিয়ে এলো ওর।
হাঁটতে হাঁটতে মোহরের পা টলমলে হয়ে যাচ্ছে, স্টিলেটো পরার অভ্যাস না থাকায় পায়ের গোড়ালি আর কনিষ্ঠ আঙ্গুলের দিকে চামড়া ছিলে গেছে হয়তো,হিলের ঘর্ষণ আর জ্বলনে পা টলে আসছে। ছিলে যাওয়া স্থানের পীড়ন আর অবিন্যস্ত পদক্ষেপের তাল সামলাতে না পেরে হুট করেই পড়ে যেতে নিলে পাশ থেকেই হাতটা কেও ঝাপটে ধরলো,আকস্মিৎ ঘটনায় অপ্রস্তুত হয়ে তাল হারিয়ে ফেললো মোহর। তৎক্ষনাৎ শক্ত হাতে ঝাপটে ধরে রাখা মানুষটা বলে উঠলো

– মোহ, সামলে হাঁটবেন তো। এক্ষুনি পড়ে যাচ্ছিলেন

মোহর ব্যথাতুর দৃষ্টিতে মেহরাজের দিকে তাকালে মেহরাজ ভ্রুকুটি করা উৎকণ্ঠিত গলায় বলল

– কি হয়েছে? ঠিক আছেন মোহ?

– প্ আমার পা

ততক্ষণে সাঞ্জে দৌড়ে এগিয়ে আসলো। মোহরকে দু’হাতে ধরে রাখতে দেখে বলল

– ভাবী কি হয়েছে তোমার?

মেহরাজ হাতের আইসক্রিমের প্যাকেট টা সাঞ্জের হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসলো রাস্তার মাঝে। ইঞ্চিখানেক উচ্চতার উঁচু স্টিলেটো টা আলতো ভাবে সযত্নে মোহরের পা থেকে খুলে দিতেই রক্তের বিন্দু মাখা পা টা স্পষ্ট হলো।

– ভাবী তোমার পা তো অনেকখানি ছিলে গেছে, রক্তও তো বেরোচ্ছে

মেহরাজ সুগভীর চোখের অসন্তোষ জনক চাহনি দিয়ে তাকালো মোহরের দিকে, রসহীন স্বরে বলল

– আপনি এতটা বেখেয়ালি কি করে হলেন, পা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে অথচ আপনি এটা পড়েই হাঁটছিলেন

– আমি আসলে বুঝতে পারিনি

মুখ খানা ফ্যাকাসে করে বলল মোহর। মেহরাজ ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল

– গাড়ি পর্যন্ত যেতে পারবেন?

মোহর ঘনঘন মাথা ওঠানামা করে সম্মতি দিল। বউ যে যথেষ্ট গড়িমা পূর্ণ জেদি স্বভাবের এটা মেহরাজ বেশ জানে। তাই আর কিছু বলল না। এমনিতেও গাড়িটা সামনেই ফিট্ কয়েক দূরত্বে। মোহরের হিল টা হাতে নিয়েই এগিয়ে গিয়ে দরজা টা খুলে দিল মেহরাজ, মোহর সাঞ্জে দুজনেই উঠে বসলে গাড়িতে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটা এসে থামলো আব্রাহাম ম্যানসনের সামনে, গাড়ি পার্ক করে বাড়ির ফটক পেরিয়ে ঢুকলো তিনজন। ড্রয়িং রুমে তখন আজহার,আরহাম মুর্তজা সহ আম্বি আর কাকলি বেগম ও উপস্থিত। রাতের খাবার খাচ্ছিল সবাই, এই মুহুর্তেই তিনজন ঢুকলে সকলের দৃষ্টি তৎক্ষনাৎ ওর দিকে গেল। আজহার মুর্তজা বললেন

– কি সাঞ্জে, হলো শপিং?

– হ্যাঁ চাচ্চু, অনেক শপিং করেছি আজ, মনটা ভরে গেছে একদম।

সাঞ্জে হাসি হাসি মুখে বলে এগিয়ে গেল টেবিলের দিকে। আরহাম মুর্তজা খেতে খেতে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– ছয় মাসের জন্য তোমার শপিং শেষ। অনেক বেশি অপচয় করো তুমি, এটা কিন্তু মোটেও উচিত নাহ।

সাঞ্জে বাবার কথা কানে নিলো নাহ। সোফাতে বসে এক এক করে সব কিছু বের করে দেখাতে লাগলো। ঠিক তখনি কাকলি বেগম মেহরাজকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– মেহরাজ তুমি কার হিল হাতে করে রেখেছো?

– ওটা ভাবীর, স্টিলেটো পড়ে পা ছিলে গেছে ভাবীর তাই ওটা খুলে ফেলেছে

মেহরাজের আগেই সাঞ্জে নিজেই উত্তর দিল তার মায়ের প্রশ্নের। কাকলি মোহরের ক্ষত হওয়া পায়ের দিকে তাকালো সেটা পুরোদমে অগ্রাহ্য করে বেশ তাচ্ছিল্য ভরা গলায় বললেন

– এখন কি না মেহরাজ বউয়ের জুতা,স্যান্ডেল ও হাতে নিয়ে ঘুরছে। ভালই উন্নতি করিয়েছে মেয়েটা তোমার।

আম্বি বেগম আড়চোখে তাকালো শুধু মোহরের মুখের দিকে। মেয়েটা বরাবরের মতোই এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, তবে মেহরাজ চুপ রইলো নাহ, হাতের হাই হিলটা নিয়েই এগিয়ে এসে স্বাভাবিক ভঙ্গিমাতেই বলল

– নিজের জুতা,স্যান্ডেল হাতে নিয়ে ঘুরতে যখন অসুবিধা হয়না বউয়ের টা নিয়ে ঘুরলে আপত্তি কোথায়, বউ তো আমারই।

মেহরাজের কথায় উপস্থিত সকলেই আড়চোখে তাকালো, তবে উত্তর দিলো নাহ। নাজমা রান্নাঘরে আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছে আর মিটমিটিয়ে হেসে বলছে

– মোক্ষম জবাব দিয়েছে কাকলি বেগমকে। আরও লাগো পেছনে, ইশ আম্মা থাকলে ভালো হতো।

কাকলি বেগম মেহরাজের এরূপ কথার জবাব খুঁজে পেলো নাহ। তবে টিটকারি দিতে তার বাদ গেল না, ফিচেল গলায় বললেন

– দুইদিন বিয়ে করেই বউ বউ করছো, কদিন বাদে তো বউ বাদে কাওকে চিনবেই না তুমি।

– আগে কদিন যাক, তখন দেখা যাবে নাহয়।

বলেই মোহরের এক হাত ধরে এগোতে লাগলে এতক্ষণে আম্বি বেগম মুখ খুলে বললেন

– তোর খাবার কী ঘরেই পাঠিয়ে দেব বাবু।

– আমরা তিনজনেই বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি মা, তোমরা খাও

আম্বি বেগম প্রত্যুত্তরে আর কিছু বললেন না। বলার মতো কিছু খুঁজেও পেলেন নাহ। ইদানীং চুপচাপ থাকেন সচরাচর, ঘর থেকেও প্রয়োজন বাদে কমই বের হন, শুধু ছেলের খাওয়া দাওয়ার আর সবকিছুর খোঁজ রাখা টাই তার নিয়ম মাফিক হয়। বিয়ে করে যে ছেলে পালটে গেছে এই ধারণা টা তার বুকে আঠার মতো বিঁধে যাচ্ছে দিন দিন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিজ স্ত্রীর প্রতি রক্ষণশীলতাও তার কাছে মনে হচ্ছে ছেলে পর হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত।

মেহরাজ না নিজে আর এক লহমা সেখানে দাঁড়ালো আর নাইবা মোহরকে দাঁড়াতে দিল। সোজা নিজ ঘরে এসে মোহরের হাত ছেড়ে দিয়ে কাবার্ডের দিকে গিয়ে বিশাল পাল্লা টা খুললো। ভেতরে কিছু একটা খুঁজতে লাগলে মোহর ভরা গলায় বলে

– আপনি আমার জন্যে বাড়ির সবার সাথে এভাবে কথা বলবেন না প্লিজ।

মেহরাজ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মোহরের দিকে, মোহর খাটের উপর বসেছে পা ঝুলিয়ে, সেদিকে তাকিয়েই বিশালাকৃতির কাবার্ডের সাথে হেলান দিল মেহরাজ, সকৌতুক গলাতে জিজ্ঞাসা করলো

– কিভাবে বলবো না

-, এই যে এভাবে প্রতিবাদ করে। এতে সকলে অসন্তুষ্ট হয়, ভাবে আমি আপনাকে উসকাই এসব কথা বলতে

তৎক্ষনাৎ জবাব দিল না মেহরাজ। আবারও কাবার্ডের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বের করলো
এগিয়ে এসে মোহরের সামনেই বসলো হাঁটু গেড়ে, মোহরের বা পায়ের গোড়ালিটা নিজের ভাঁজ করে রাখা হাঁটুর উপরে তুলতে তুলতে বলল

– আমার বউকে কেও কথা শোনালে আমি উত্তর করবো এমনটাই কি সঠিক না? আর নাতো আমি ঝগড়া করেছি নাইবা অযৌক্তিক কথা বলেছি, আ’ভ যাস্ট এক্সপ্লেইনড হোয়াই আ’ম রাইট।

কথাগুলো ঠিক মোহরের বোধগম্যতায় পৌঁছাতে পারলো কি না স্পষ্ট নয় তবে মেহরাজের এরূপ কাজে মোহর দুরন্তরভাবে হতবাক হয়ে সরে আসতে গেলে মেহরাজ ওর পায়ের গোড়ালি চেপে ধরে বলল

– নড়বেন না একদম

– আ আপনি আমার পায়ে হাত কেন দিচ্ছেন ছাড়ুন

মোহর ভীষণ অস্বস্তিপূর্ণ গলায় বলল। ও যে এভাবে হুট করে পায়ে হাত দিয়ে বসবে এটা ঘুনাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারেনি মোহর, বিহ্বলচিত্তে বৈক্লব্য স্বরে বলল

– আমি নিজেই ওষুধ লাগিয়ে নিতে পারবো, ছাড়ুন আপনি

– আমাকে নিজের কাজ করতে দিন মোহমায়া, কাজে ব্যাঘাত একেবারেই অপছন্দ আমার।

আপতিতভাবে মেহরাজের কণ্ঠস্বরটা তুলনামূলক গম্ভীর হয়ে উঠলো। ভারি গলার শাসন সুলভ বাক্য গুলো কর্ণকুহরে সাময়িক প্রভাব বিস্তার করলো। দমে গেল মোহর, কিন্তু তার শরীর, মন,চিত্ত, অভিলাষ কোনো টাই স্থির রইলো নাহ। মেহরাজের পুরুষালী স্পর্শের শীতলতা কেমিক্যালের শৈথিল্যকে ছাড়িয়ে তরতর করে ঠান্ডা করে দিল মোহরের কায়া।
চামড়া সরে যাওয়া স্থানটাতে স্যাভলনে ভেজানো তুলাটা স্পর্শ হতেই দপদপ করে জ্বলে উঠলো, শ জাতীয় শব্দ করে কিঞ্চিৎ কেঁপে চোখ খিঁচিয়ে নিল মোহর। কিন্তু পা সরিয়ে নিতে গেলেও শক্তপোক্ত হাতের থাবা টা আলগা করতে পারলো নাহ। লহমা খানিক পার না হতেই জ্বলন ধরা স্থানে শীতল হাওয়া লাগলে চোখ দু’টো প্রসারিত হলো মোহরের, নিজের পায়ের কাছে মুখ নিয়ে মেহরাজকে ফুঁ দিতে দেখে গলা ঘাড়ের রজ্জু গুলোতে শিরশিরানি বয়ে গেল, ভাঙা ভাঙা গলায় বলল

– ঠিক আছি, ফুঁ দিতে হবে নাহ

মেহরাজ শান্ত নজরে চোখ বুলালো মোহরের অবিন্যস্ত, অস্থির চেহারা পানে। নিজের কাজটা সম্পূর্ণ করে তবেই উঠে দাঁড়ালো।
বক্স টা জায়গা মতো রেখে দিয়ে একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ঢুকলো। মোহর হতভম্বিত রূপে তাকিয়ে রইলো তার সামনে থেকে সরে যাওয়া সুপুরুষটির পানে, বন্ধ ওয়াশরুমের দরজার দিকে ঠিক কতক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো সেই সময় টাও বেহিসেবীর কোটায়।

অদ্ভুত রোমঞ্চিত ভাবে নয়নের দৃশ্যপটে ভাসতে থাকলো অত্যন্ত সুদর্শন এক পুরুষ যে কি না সময় সাপেক্ষে একবার তার সম্মান বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, কখনো প্রতিবাদের শেকরে আঁকড়ে রাখে, কখনো দ্বায়িত্বের বেড়াজালে আচ্ছন্ন করে ফেলে আবার কখনো বা যত্নের স্পর্শে শরীর না ছুঁয়েই সবটা ছুঁয়ে দেয়। অদ্ভুত সম্মোহনীর মতো তাকিয়েই রইলো মোহর। সবটা,সবকিছু কেমন স্বপ্ন, কল্পনা, বানোয়াট মনে হতে থাকলো। চিরচিত্তে এক মানুষের মোহ তাকে যেন গ্রাস করে ফেলছে। উদ্বেগ, যত্ন, ব্যবহারে ক্রমেই মানুষটা মোহরকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশের মধ্যে গ্রাস করে নিচ্ছে৷ সবহারা জীবনে মৃত অনুভূতি গুলোর পরিশিষ্টাংশ একটা মানুষ যে অচিরেই অর্জন করে নিচ্ছে এটা মোহর সজাগ মস্তিষ্ক ধরতে না পারলেও অচেতন মন, অন্তঃস্থল প্রবল ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে।

বেশ দীর্ঘ একটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোলো মেহরাজ। দরজা খোলার খট করা শব্দে মোহর ঘাড় ঘুরিয়ে নিল ফট করে। মেহরাজ মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে বসলো ডিভানে। ল্যাপটপের সাটার তুলে অবিলম্বেই দু’হাতের তর্জনী খাটিয়ে মনোনিবেশ করলো জ্বলজ্বল করা স্ক্রিনে।

মোহর আড়চোখে চাইলো বার দুয়েক, মোহরকে ঠাঁই বসে থাকতে দেখে মেহরাজ চোখ দু’টো স্ক্রিনে রেখেই বলল

-, ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ুন।

মোহর বার কয়েক পলক ফেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সুতির একটা জামা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের ঢুকে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বেরোলো। মেহরাজ তখনও নিজ কাজে ব্যস্ত। মোহর কোনো শব্দহীনায় বিছানাতে গা এলিয়ে দিল।
অনেকটা ক্লান্ত লাগছে শরীর টা, কিন্তু বিছানাতে শুয়ে খানিক এপাশ ওপাশ করেও ঘুম না আসার কারণ টা বোধগম্য হলো না, চোখ বন্ধ অবস্থায় ই কুচকে নিলে হুট করে সুইচ চাপার খট করা শব্দ টা হতেই চোখ খুলে দেখলো মেহরাজ লাইট টা বন্ধ করে জিরো বাল্ব জ্বেলে দিয়েছে। ঘরের লাইটের তীব্র আলোতে যে ঘুম ধরা দিয়েও দিতে চাচ্ছিল না এটা মোহর নিজেও বুঝতে পারেনি। মানুষটা কি করে না বলতেই সবটা বুঝে যায়! কি করে মোহরের সকল সুবিধা অসুবিধা টাকে ম্যাজিশিয়ানের মতো ধরে ফেলে!
আধ-অন্ধকার ঘরেও মৃদু আলোতে ল্যাপটপ অপারেট করতে থাকলো মেহরাজ। অদ্ভুত কৌতুহলবশত মোহর সামান্য ঘাড় উঁচিয়ে তাকালো মেহরাজের দিকে, ল্যাপটপের সফেদ আলোতে ধূসর বর্ণা চোখটা আরও চিকচিক করছে, এক হাত মাথার নিচে দিয়ে হেলান দিয়ে তাকালো মোহর, দূর থেকেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলো টকটকে পুরু ঠোঁট, খারা নাক, ঘন ভ্রু। আচ্ছা লোকটা কি সত্যিই এমন নিখুঁত সুন্দর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করেছে? বড়োলোক মানুষের ব্যাপার,করতেও তো পারে! পরমুহূর্তেই মোহরের নিজের কপালে দুটো চাপড় বসাতে ইচ্ছে হলো এহেন অযৌক্তিক ভাবনার জন্যে। নিজের উপর নিজেই প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে, চ জাতীয় শব্দ করে আবারও মেহরাজের দিকে তাকালেই চোখাচোখি হলে ভড়কে গেল মোহর। মেহরাজ কৌতূহল ভরা চোখে মোহরের এমন উদ্ভট নজরের দিকেই তাকিয়ে আছে, নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত হলো মোহর, তৎক্ষনাৎ মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

©Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here