ফানাহ্ 🖤 #পর্বসংখ্যা_২৯(প্রথমাংশ) #হুমাইরা_হাসান

#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_২৯(প্রথমাংশ)
#হুমাইরা_হাসান

ভীষণ ধীর পায়ে ছোট ছোট পদক্ষেপে এগোচ্ছে মোহর। টুং টাং একটা শব্দ কানে আসছে,আর তা খুব স্পষ্টভাবে। খুব ক্ষীণ গতিতে পা ফেলে এগিয়ে দাঁড়ালো দোতালার একদম কোণার দিকের ঘরটার কাছাকাছি ।
মেহরাজের ঘরের পরেই এই ঘরটি, এতদিনেও এদিকে আসা হয়নি এমনকি আসার প্রয়োজনটুকু বোধ করেনি মোহর। ঘরটার দরজা আজ অব্দি খোলা দেখেছে বলে মনে হয়না। দরজাটা আধখোলা অবস্থায় ভিড়িয়ে রাখা, ক্ষীণ একটা আলোর রেখা দরজার চৌকাঠ মাড়িয়ে বাইরে উপচে পড়েছে।
মোহর ধুকপুক করা বক্ষের উথাল-পাতাল ছন্দে তটস্থ মনটা শান্ত করার প্রয়াসে অধর ফাঁক করে বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে নিল
যান্ত্রিক শব্দটা থেকে থেকে বেজে উঠছে ছন্দহীন ভাবে, মোহর আরেকটু এগিয়ে এসে একদম দরজা ঘেঁষে দাঁড়ালে ভেতর থেকে বহুকাঙ্ক্ষিত
কণ্ঠের গম্ভীর ধ্বণি ভেসে আসলো

– ভেতরে আসুন মোহ

ধক্ করে উঠলো মোহরের বুকটা, লোকটা কি করে বুঝলো ও এসেছে? ও তো দরজার সামনে যাইনি,আর নাইবা ওকে ভেতর থেকে কোনো ভাবে দেখতে পারার সুযোগ আছে। তাইলে কিভাবে বুঝলো লোকটা? এই লোকটা কি মানুষ, নাকি অন্যকিছু? প্রতিটা সময় মোহরের ভেতর টাকে এভাবে পড়ে ফেলে যেন একটা উন্মুক্ত প্রতিলিপি। যার প্রতিটি লাইনের ভাঁজ সে সযত্নে নজর আওড়ে নেয়, প্রতিটি দাড়ি কমার অবস্থান ও তার ঠোঁটস্থ। যেসবের অবস্থান গুলো মেহরাজ দেদারসে বলে দিতে পারে না দেখেই।

মোহর দ্বৈধীভাব আর সঙ্কোচ নিয়েই দুকদম এগিয়ে দাঁড়ালো দরজার সামনে, হাতটা এগিয়ে পুরোপুরি খুলে দিলো কাঠের ভারী দুয়ারখানা।
তৎক্ষনাৎ উন্মোচন হলো প্রতীক্ষিত চেহারাটা, যাকে একবার দর্শন করার দায়ে অবাধ্য বেহায়া মনটা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।

– আসুন।

ছোট্ট শব্দের ব্যবহারে অনুমতি টুকু দিয়ে এক পলক দরজার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় মুখ ফিরিয়ে নিলেও ওই স্বল্প সময়ের দর্শনে আশ্চর্য কিছু দেখায় ন্যায় আবারও মেহরাজ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ডান দিকে।
ততক্ষণে মোহর অনেকটা কাছাকাছি এগিয়ে এসেছে।

চোখ দু’টো স্থির,অনড় হয়ে গেল মেহরাজের। বুকের ভেতর ঝোড়ো হাওয়ার প্রকপে নিজেকে স্থির রাখাটাও দায় হয়ে যাচ্ছে। উথাল-পাতাল জলোচ্ছ্বাসও হয়তো হার মানবে বক্ষস্থলের এই ছোট্ট নরম জায়গাটুকুর উচাটন ঢেউয়ের কাছে। পলক ফেলা দূর ওমনেই চোখ দু’টো নিশ্চল করে দাঁড়িয়ে রইলো মোহরের দিকে।
এ কোন সাজ,কোন রূপে এসেছে ওর সামনে মোহর! মেয়েটা কি ওকে মে’রেই ফেলতে চাই!

মোহর অনেকটা এগিয়ে এলেও মেহরাজের এরূপ অগাধ দৃষ্টিতে চেয়ে ওউ থমকে গেলো। দুজনের অবস্থা থমকে যাওয়া ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো আঁটকে গেল। বহু কষ্টে যেই জড়তা টুকু সাগ্রহে সামলে উঠছিল সে আত্মবিশ্বাস আর স্বাভাবিকতার ভীত কে চুরচুর করে গুড়িয়ে দিচ্ছে মেহরাজের এই নির্লজ্জের ন্যায় উদ্ধত চাহনি। আবারও সেই তীব্র অস্বস্তিটা জোঁকের মতো চি’মটে ধরলো।
মেহরাজের চোখ, চাহনি..ওই নিষ্পলক নেত্র কোনোটাই স্বাভাবিক লাগছে নাহ। লোকটাকে এমন কেন লাগছে? দুপুরের সেই শার্টটাই এখনো গায়ে জড়ানো অথচ মেহরাজ কখনও দিনের পোশাক টা রাতে গায়ে রাখে না। এলোমেলো চুলগুলো অবিন্যস্ত ভাবে পড়ে আছে প্রসস্থ ললাটের মাঝে। শুভ্র শার্টটার স্লিভ গুটিয়ে রেখেছে কনুই অবদি, বুকের কাছে অনেকটা অংশ উন্মুক্ত,সেই ফাঁকে ফর্সা বুকটা চোখ ধাধানোর মতো উঁকি দিচ্ছে মোহরের চোখে৷ কালো প্যান্টের সাথে ঝকঝকে সাদা শার্টে যেন মেহরাজকে আরও, আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।

ফট করে চোখ নামিয়ে নিল মোহর, শাড়ির
আঁচলটার উপরে সমস্ত অস্বস্তি ঢেলে দিয়ে নির্দয়ভাবে মোচড়াতে লাগলো আঙ্গুলের ভাঁজে।
ঘরের টিমটিমে হলদেটে আলোটা সম্পূর্ণরূপে মোহরের মুখের উপর উপচে পড়ছে। গায়ের রঙটা অদ্ভুতভাবে চোখ ধাধাচ্ছে মেহরাজের। অবিন্যস্ত শাড়ির ভাঁজ খুলে খুলে গেছে, আধখোপা করা চুলটা ঘাড়ের কাছে নেতিয়ে পড়ে আছে, ছোট ছোট চুলের গোছাটা কানের পেছনে গুঁজে রেখেছে। ঘুম থেকে উঠার দরুন চোখ আর ঠোঁট দুটো ফোলা ফোলা, শাড়ির কুচিটা খুলে মেঝে পর্যন্ত ছুঁয়েছে। আঁচল টা ভাঁজ করে কাঁধে ফেলে রাখায় যে পাতলা, সরু, বাঁকানো পেট আর নাভীর অর্ধেকাংশ উন্মুক্ত হয়ে মেহরাজের চোখদুটো চুম্বকের মতো আঁটকে ফেলেছে সেখেয়াল হয়তো মোহরের নূন্যতম নেই।
মোহরের দুরুদুরু কম্পিত বুকের ওঠানামা, আর কামড়ে রাখা ঠোঁটে নতজানু মুখটা মেহরাজকে ঘায়েল করার জন্যে একটু বেশিই যথেষ্ট যেন!

মেহরাজ কামড়ে ধরা ঠোঁটের ওই দৃশ্যটুকু দেখে তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে নিল। মাথাটা নিচু করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস করলো। তুমুল অস্থিরতাকে উৎস করে যে ঝড়টা উঠেছিল তাকে আস্তেধীরে সন্তপর্ণে সামলে নিল। শুকনো ঢোক গিলে স্বাভাবিক গলায় বলল

– এখানে বসুন

বলে হাতের যন্ত্রটা পাশে রাখলো। মোহর লক্ষী মেয়েটির মতো এসে বসলো সোফার মতো নরম গদিটিতে। ড্যাবড্যাব করে কৌতূহলী চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলো পুরো ঘরটা।
এই বাড়িতে এমন একটা ঘর ও থাকতে পারে এই ধারণা টুকুর নিম্নভাগও ছিল না মোহরের। ছোটো খাটো একটা ঘর। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতার বুকে ছোট ছোট নানান সৌপিচ আর আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। আর খুব অদ্ভুতভাবে সবগুলো বস্তুই যে অনেক পুরাতন তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
হলদেটে টিমটিমে একটা আলো জ্বলছে ঘরের মাঝে,সামনেই ফুলদানিতে কতগুলো আর্টিফিশিয়াল হলুদ গোলাপ দিয়ে সাজানো। সমস্ত ঘর জুড়ে আগ্রহী, কৌতূহলী নজর বুলিয়ে এবার মোহরের নির্মল চোখ দু’টো স্থির হলো মেহরাজের কোলের কাছে রাখা বস্তুটাতে। সেদিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায়ই মেহরাজ বলল

– এতো রাত করে ঘুম থেকে উঠলেন যে?

– আপনি ছিলেন না ঘরে

মেহরাজ পিছিয়ে গেল, হেলান দিল নরম তুলোর হেডসাইডের দিকে। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল

– আমি নেই বলে ঘুম ভেঙেছে? ঘুমিয়ে থাকতে কি আমাকে প্রয়োজন?

মোহর একথার প্রেক্ষিতে উত্তর খুঁজে পেল নাহ। আবারও ঘরের দিকে নজর বুলাতে বুলাতে বলল

– সন্ধ্যায় ঘুমিয়েছিলাম তাই ভেঙে গেছে। ঘুম ভেঙে দেখি আপনি ঘরে নেই, তাই কৌতূহল বশত এদিকটায় এসেছিলাম

মেহরাজ ঘাড় কাৎ করে তাকিয়েই রইলো মোহরের দিকে। কি করে এই বেহায়া চোখ দু’টো ফেরাবে আবার! নির্মল আঁখি দুটি তো আঁটকে গেছে কাজলের সরু রেখা লেপ্টানো মোহরের চোখ দু’টোয়। মেহরাজের ভীষণ ইচ্ছে হলো ওই চোখের কাজল টা আরেকটু লেপ্টে দিতে। ঠোঁট দুটো? ঠোঁটে কি লিপস্টিক লাগিয়েছিল নাকি এতক্ষণ কামড়ে ধরেছিল বলে এমন টকটকে লাগছে তা মেহরাজ ঠাওর করতে পারলো না, তবে বেহায়া মনটা ঠোঁট দুটিকেও ছাড় দিতে চাইলো না। বুকের মাঝে চলন্ত তান্ডবলীলায় বারবার খায়েশ জাগলো ওই টকটক করা ভেঁজা ঠোঁট দুটো কামড়ে ধরতে, ওষ্ঠাধরের রঙ টা লেপ্টে দিতে৷ চুলগুলো একটানে খোপা ছাড়া করে দিতে

– এই গিটার টা কি আপনার?

মেহরাজের অবাধ্য অনুভূতির ফুলকিতে লাগাম দিল মোহরের ঘুম জড়ানো পাতলা কণ্ঠস্বর। মেহরাজ ঘাড় নাড়িয়ে বলল

– জ্বি আমার।

মোহরের কৌতূহলী নজরটা তীব্র আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে কালচে ধূসর রঙের গিটারটার দিকে। একোস্টিক গিটারটির গায়ে খোদাই করে কিছু একটা লিখা হয়তো। মেহরাজ মোহরের এতো আগ্রহ চাহনি দেখে গিটার টা এগিয়ে দিয়ে বলল

– দেখতে চান?

মোহর মাথা উঁচু নিচু করে সম্মতি দিয়েই গিটার টা খপ করে হাতে নিল। কলের উপর রেখে খুব যত্নে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।
ওর ভীষণ ইচ্ছে ছিল গিটার বাজানো শেখার, কিন্তু কোনো ভাবে সুযোগ হয়নি, বা সময় পাইনি। বাবা বলেছিল একটা গিটার খুব তাড়াতাড়িই কিনে দেবে মোহরকে, কিন্তু তার আগেই তো সে না ফেরার দেশে পারি দিল। মোহরের আর গিটার কেনাও হয়নি, বাজানো শেখাও হয়নি।
গিটারের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে সেই ছোট লেখাটাই হাত থেমে গেল, ইংরেজি পেঁচানো শব্দের ন্যায় ছয়টি লেটারে লেখা ‘ Ruddho ‘
খুব আস্তেধীরে ঠোঁট নাড়িয়ে বার দুই আওড়ালো নামটা মোহর, রুদ্ধ! এই নামটা তো মেহরাজেরই

– এইখানে রুদ্ধ লেখা কেন?

মেহরাজ হাসলো মুচকি, ভীষণ আদুরে দৃষ্টিতে গিটারের দিকে তাকিয়ে বলল

– আমার আটতম জন্মদিনে আমার আম্মা এই গিটারটা আমায় গিফট করেছিলেন, সাথে তার দেওয়া নামটি।

মোহর ললাটে ভাঁজ ফেলে তাকালে মেহরাজ নিজেই বলল

– রুদ্ধ নামটা আম্মা দিয়েছিলেন। এই নামটাতে উনিই সবচেয়ে বেশি ডাকতেন। আর গিটার বাজানো আমার ছোট থেকেই অবসেশন ছিল, তাই মা নিজে এটা বানিয়ে এনে দিয়েছিলেন আমায়।

মোহর স্মিত হেসে তাকিয়ে রইলো গিটারটির দিকে। মেহরাজ ওর হাত থেকে নিয়ে, নিজের কোলের উপর রেখে বলল

– গান শুনবেন মোহ?

মোহর যেন অপ্রস্তুত হলো। মনের ভেতর এই ইচ্ছে টুকু কখন থেকে আকুপাকু করছিল। শুধু জড়তার খাতিরে মুখ আব্দি আনতে পারেনি।
তবে না চাইতেই যখন মেহরাজ নিজেই সুযোগ দিয়ে বসলো ওটা আর হাতছাড়া করলো না, মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলে।
মেহরাজ গিটারের সিলভার রঙের তারে আঙুল টুকে টুং করে একটা শব্দ তুলল। সেই শব্দে মোহর প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে ঘুরেসুরে বসলো। মাথা ঝুকিয়ে মেহরাজ গিটারে ব্যস্ত হাত বুলালো। বহুদিন এই গিটারে সুর তোলা হয়না, আদও ঠিকঠাক হবে কি না জানা নেই। গিটারের টুংটাং শব্দ টা বার কয়েক বাজিয়ে আসল সুরটা তুলে ফেলল, নিস্তব্ধ পরিবেশ টা মুহুর্তেই রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো মেহরাজের কণ্ঠে। আস্তে আস্তে গহিন কণ্ঠে গাইতে থাকলো

” কি যায় আসে মন খারাপে,সব হারা রা আর কি হারাবে!আচমকা ভাঙা মন, পেলে ছোঁয়া নরম এতো ভাববে নাকি তুমি ভাবো! অবশেষে ভালোবেসে চলে যাবো,, অবশেষে ভালোবেসে চলে যাবো। ”

এটুকু বলে থামলো মেহরাজ, হাতের আঙুলে তখনো গানের সুর বাজছে, ঘাড় বাঁকিয়ে মেহরাজ ঝুকে এসে ফুঁ দিয়ে মোহরের মুখের উপর উপচে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিল।
মোহর বিমোহিত, গাঢ়, অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেহরাজের আদুরে চোখ দু’টো যেন ওকে বারবার বোঝাচ্ছে গানের প্রতিটি লাইন যেন শুধু মোহরকেই উৎসর্গকৃত। মেহরাজ আবারও গাইতে শুরু করলো

” মিলছে পায়ে পা, চোখ যায় জুড়িয়ে। ভাগাভাগি করে নেবো পাবো যা কুড়িয়ে। তুমি দেখো আমি আমার ভাগটাও দিয়ে দেবো,শুধু দেওয়ার ফাঁকে তোমার হাতটা ছুঁয়ে নেবো,,অবশেষে ভালোবেসে চলে যাবো। অবশেষে ভালোবেসে চলে যাবো। ”

মোহর নিষ্পলক চেয়ে আছে, শুধু দেখেই যাচ্ছে মেহরাজকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যেন আপাদমস্তক মেহরাজকেও মুখস্থ করে নিচ্ছে। স্নিগ্ধ চোখ যাতে এক আকাশ তৃষ্ণা, ঠোঁটের কোণঘেঁষা মুগ্ধ করা বাঁকা হাসি, কণ্ঠে মাদকতা। পাতলা চুলগুলো জানালার ঠান্ডা বাতাসে একটু একটু উড়ছে। কতই না মোহিত লাগছে মানুষটাকে! মোহরের খুব স্বাধ জাগলো একটা বার, ইশ শুধু একটা বার যদি ওই মুখটা ছুঁয়ে দেখতে পারতো!
মোহরের ভাবনার মাঝেই চোখ প্রসারিত করে তাকালো মেহরাজ। মোহর সম্মোহনী চোখে চেয়েই বলল

– এত সুন্দর গান করেন আপনি!

– পছন্দ হয়েছে আপনার মোহ?

মোহর যেন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো। চোখে মুখে অদ্ভুত এক ঝিলিক, চঞ্চলতা দেখতে পেলো মেহরাজ। সেই চাঞ্চল্য কণ্ঠে মিশিয়ে মোহর বলল

– খুউউব। জানেন আমার খুব শখ ছিল গিটার বাজানো শেখার কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে হয়ে ওঠেনি।

– এখনও শিখতে ইচ্ছে করে? আপনি চাইলেই আমি শেখাতে পারি।

মোহরের উচ্ছ্বাস যেন দ্বিগুণ হলো। খুশিয়াল গলায় বলল

– সত্যিই? আপনি শেখাবেন?

মেহরাজ মুচকি হাসলো। বাঁকা অধরে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।

– শেখাবো তবে একটা শর্তে

মোহরের ভুদ্বয় কুঞ্চিত হলো। আধো হাসি মুখের বুলিতে জিজ্ঞাসা করলো

– কি শর্ত?

– এই যে আমি এখন গান শোনালাম। এর পরিবর্তে আমার উপহার চাই। যদি দিতে পারেন তাহলে গিটার বাজানোও শেখাবো।

মোহর বিব্রত হলো। মেহরাজকে সে কি উপহার দেবে? সে নিজেই তো মেহরাজের উপহারেই চলে। কুণ্ঠিত মুখে বলল

– আমি? আমার কাছে তো উপহার দেওয়ার মতো কিছুই নেই।

– আছে।

মোহর কৌতূহলী হয়ে বলল। কি আছে? বলুন, থাকলে নিশ্চয় দেবো।

– সত্যিই দিবেন তো?

– হ্যাঁ সত্যিই দেবো।

মোহরের অকপট সম্মতির পর খানিক নীরবতা বইলো স্তব্ধ ঘরটা জুড়ে। সেই নীরবতা চিরে মেহরাজ অদ্ভুত নে’শাক্ত কণ্ঠে বলল

– আপনার হাতটা ছুঁয়ে দিতে দিবেন মোহমায়া?

ধক্ করে উঠলো বলাটাও হয়তো কম হবে মোহরের বুকে আচঁড়ে পড়া আচানক ঝড়টার সংজ্ঞাতে। যেন কেঁপে উঠলো সমস্ত দেহ। অবলীলায় বলে দেওয়া মেহরাজের অকপট আবদারটি মোহরের কানের নরম পর্দা ভেদ করে মন মস্তিষ্কে প্রবল জোয়ার তুলে দিল।
আড়ষ্ট নজরে মেহরাজের দিকে তাকালে মেহরাজ বলল

– আপনি কিন্তু বলেছিলেন অবশ্যই দিবেন, দিবেন না মোহ? হাতটা একটু ছুঁয়ে দিতে দিবেন না?

মোহরের মনেও যে বাধ ভাঙা অনুভূতিরা মেহরাজের সঙ্গ বা স্পর্শ চাইনা তা একেবারেও না। কিন্তু মুখ ফুঁটে নিজেকে স্পর্শ করার কথা কিভাবে বলবে ও। কম্পিত চাহনি নিচে ঝুকিয়েই রাখলো। তবে মেহরাজ মোহরের নিস্তব্ধতায়ই যেন সম্মতি খুঁজে পেল।
গিটার টা নামিয়ে রেখে এগিয়ে এলো মোহরের সন্নিকটে। নিজের পুরুষালী হাতটার আঙ্গুল গলিয়ে দিল মোহরের হাতের ভাঁজে, আস্তে আস্তে কঠোর হলো হাতের বন্ধন, শক্ত হলো করপুট। মোহরের চিকন হাতটা সজোরে চেপে ধরলো যেনে একটু ছাড়া পেলেই হাতের ফাঁক দিয়ে পালিয়ে যাবে।
মোহর প্রবল বিতৃষ্ণা ভরা অস্থিরতা সামলাতে না পেরে চোখ বুজে নিল। ঠকঠক করে কাঁপতে রইলো সম্পূর্ণ সত্তা। মেহরাজ নিজের সমস্ত অনুভূতি টা যেন ওই দুহাতের বন্ধনের মাঝে ঢেলে দিল। যতটা আদর,অনুভূতি, ভালোবাসা যায় সম্পুর্ণ মিশিয়ে দিল ওর স্পর্শে।
তবে মহাসমুদ্রের ন্যায় প্রবল জোয়ার এই ছোট্ট বাধটাও মানলো নাহ। ঘনঘন হলো তপ্ত উষ্ণশ্বাস। হাতের মাঝের চিকন হাতটা তুলে মুখের কাছে আনলো। মোহরের হাতটা টান করে তালুতে নিজের প্রচণ্ড উষ্ণশীতল মিশ্রিত ওষ্ঠাধর গাঢ় ভাবে ছুঁইয়ে দিল। নাক টেনে ভরে নিল বুক ভরা শ্বাস। দীর্ঘ..দীর্ঘক্ষন ওই অধরজোরা শোষোক্তের ন্যায় গরম হাতের তালুতে ঠোঁট চেপে গভীর চুমুতে ভরিয়ে দিল।

মোহরের সমস্ত দুনিয়াটা ওই একটা স্পর্শে থমকে গেল যেন। দিন দুনিয়ার সবকিছু মূর্ছা গেল মুহুর্তেই। কোনো কিছুই মস্তিষ্কে ঠাওর পাচ্ছে না। শুধু ওর আশপাশ জুড়ে আছে মেহরাজের শরীরে মিষ্টি সুবাসটা। আচ্ছা অনুভূতির ও কি সুবাস হয়? নাহলে এখন কেন এতো গাঢ় ভাবে লাগছে সুগন্ধি টা? যেন নাসারন্ধ্র ছেড়ে মস্তিষ্ক ভেদ করে ঢুকছে এই মাদ’কতার ন্যায় সুবাসটা।
মাথাটা ঝিমঝিম করছে, তৃষ্ণায় বুক গলা কাঠকাঠ হয়ে আসছে।
যেন দুজনের মধ্যবর্তী এই দূরত্ব টুকু ঘুচিয়ে শরীরটা ঢলে পড়তে চাইছে মেহরাজের প্রশস্ত বুকে।

চোখ দু’টো এখনো আটকে ধরে রেখেছে মোহর। মেহরাজ লম্বা একটা সময় নিয়ে হাতের তালুতে অসংখ্য উষ্ণ অধরের স্পর্শ মাখিয়ে মুখ তুললো। ঘোর লাগা নজরে তাকালো রক্তিম মুখখানায়। অজস্র বিব্রতকে ঠেলে আরও গাঢ় করে দিতে নিজের মুখখানা এগিয়ে আনলো, একদম মোহরের কানের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে বলল

– কাঁপছেন কেন মোহ? শীত করছে? উষ্ণতা চাই?

ভ্রম ধরানো শরীরের অচেতনতা, আর পায়েল তালুর জ্বলনে অস্থির হয়ে পড়লো মোহর। দিকবিদিক ভুলে দূর্বল শরীর টা ঢলে পড়লো মেহরাজের প্রসস্থ বুকের মধ্যিখানে। একটা হাত তো এখনো মেহরাজের আঙুলের ভাঁজে, আরেকটা হাতের দূর্বল স্পর্শে চেপে ধরলো বুকের অংশের শার্টটা।
বিদ্যুতের ঝলকানির ন্যায় ঝাঝরে উঠলো মেহরাজের চোখ দু’টো। খিঁচিয়ে বন্ধ করে নিল। বুকের মাঝে মিশে যাওয়া শরীরটাকে এখনো দু’হাতে জড়িয়ে ধরেনি। ভয় হচ্ছে, স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আসলেই ওর স্বপ্নচারিনী ওর অদ্বিতীয়া ওর দূরত্বমা ওকে জড়িয়ে ধরলো! বুকের মধ্যিখানে কি ওর মোহমায়া টা-ই?
অসম্ভব দুর্ভেদ্য ঝড়টাতে বারংবার নিঃশ্বাস টেনে নিপাত করার ব্যর্থ প্রয়াসে অস্ফুটস্বরে বলল

– মোহ?

এই ডাক টুকু যেন মোহরের অস্থি তরুনাস্থি গুলোকেও চুরচুর করে দিল। ফলাফল স্বরূপ আরও তীব্র হলো খা’মচির দাপট। মেহরাজের ও যেন আর সহ্য হলো না, প্রচণ্ডভাবে জড়িয়ে ধরলো মোহরকে দু’হাতে। বুকের মধ্যিখানে যেন পি’ষে ফেলতে চাইলো পাতলা শরীর টা। এতদিন, আদও কতদিন তা বেহিসেবী, এতদিনের অগাধ প্রচণ্ড অব্যক্ত ইচ্ছেটাকে বুকের মাঝে পেয়ে আর সহ্য হলো না মেহরাজের। ঝাপটে ধরে, উষ্ণ মুখটা চেপে ধরলো বুকের মাঝে।
.
.
.
চলমান

©Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here