ফানাহ্ 🖤 #পর্বসংখ্যা_২৮ #হুমাইরা_হাসান

#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_২৮
#হুমাইরা_হাসান

– এসব থাক না। কি দরকার শুধু শুধু এসব ঝামেলা করার

– কিসের ঝামেলা। কোনো ঝামেলা নাহ। তুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো তো।

বলে মোহরকে দাঁড় করিয়ে এগিয়ে গিয়ে খাটের উপর থেকে হালকা বাদামি রঙের একটা জামদানী শাড়ি তুলে আনলো সাঞ্জে৷ মোহরের গায়ের সাথে ধরে বলল

– বাহহ, দারুণ মানিয়েছে তো। তোমার গায়ের সাথে একদম মিশে যাচ্ছে ভাবী৷

বলে শাড়িটার ভাঁজ খুলে টান করলো। হালকা বাদামি রঙের উপর গোলাপি রঙের ছোট ছোট ফুলের ডিজাইনের শাড়ি টা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। সাঞ্জে শাড়িটার ভাঁজ ভেঙে মোহরের গায়ে পেঁচিয়ে পড়িয়ে দিতে লাগলো

সবেমাত্র গোসল করে বেড়িয়েছিল, সাঞ্জে ওকে ঘর থেকে ধরে এনেছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই শাড়ি পরানোর জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছিল। আজ যখন মোহরকে বাড়ি পেয়েছে এই মোক্ষম সুযোগ টা আর হাতছাড়া করেনি।
বেশ খানিক সময় নিয়ে শাড়িটা পড়িয়ে দিল মোহরকে, শাড়িটা ঠিকঠাক পড়ালেও কুঁচির ভাঁজ ধরতে পারছে না। কাঁচা হাতে পাতলা শাড়িটার কুঁচি ধরতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে।

– উফ শাড়িটা কুঁচিটা তো কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না

বিরক্তিতে চ্ জাতীয় শব্দ করে আবারও কুঁচিগুলো সাজানোর প্রয়াস করলো। কিন্তু কোনো ভাবে পেরে উঠছিল নাহ

– দেখি সর আমাকে দেখতে দে

পেছন থেকে তাথই এর গলা শুনে সাঞ্জে ঘুরে তাকালো। বিরক্তি ভরা মুখে হাসির ছাপ ফেলে সরে দাঁড়ালো। তাথই এগিয়ে এসে ঝুঁকে বসে আঙুলের ভাঁজে শাড়ি এঁটে খুব দক্ষ হাতে কয়েক মুহুর্তেই কুঁচি সাজিয়ে ফেললো। উঠে দাঁড়িয়ে মোহরের বুকের কাছের আঁচল টাও ঠিক করে দিল।

– ওয়াহহ,৷ মাশা-আল্লাহ কি দারুণ লাগছে ভাবীইই। ইশ আমিই তো তোমাকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছি দাভাই নিশ্চয় আজ পলকটাও ফেলতে পারবে না

বলে টেবিলের উপর থেকে ফোন তুলে খটখট করে কতগুলো ছবি তুলে নিল। মোহর বিব্রত মুখে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।
তাথই গিয়ে আবারও বসলো খাটের উপর, তোয়া বিছানাতে শুয়ে পাপ্ পাপ্ শব্দ করে হাত পা নাচাচ্ছে। সেদিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে, যেন এদিকের কোনো কিছু ওর কানেও যাচ্ছে নাহ।

– ভাবী এদিকে তাকাও দেখি

সাঞ্জে মোহরকে ধরে নিয়ে আয়নার সামনে বসিয়ে ছোট্ট একটা ইয়ারিং আর ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দিয়ে দিতে গেলে মোহর বলল

– এসব দিও না সাঞ্জে, আমার লিপস্টিক ভালো লাগেনা না

– বলছো? আচ্ছা তাহলে থাক এমনিতেও তোমাকে আজ পুরাই আগুন লাগছে ভাবী

– এসব কথা বার্তা কোত্থেকে শিখিস বল তো? কথারা ছিরিছাঁদ দেখলে গা জ্বলে

তাথইয়ের বিরক্তিভরা গলায় বলা কথাটুকু সাঞ্জে কানেও নিল নাহ। মোহর কে ধরে বলল

– ভাবী চলো তোমাকে দাভাইয়ের কাছে দিয়ে আসি। তোমাকে দেখে ভাইয়ার রিয়েকশন কেমন হবে আমিতো ভাবতেই পারছি না।

– তোর ভাবা লাগবে না, বেশি পাকনামি করবি না। মায়ের কানে গেলে তোকে কি করবে সেটাও ভাবতে পারবি না

তাথই বাচ্চার মুখে ফিডার ধরে বলল কথাগুলো। সাঞ্জের মুখটা যেন খানিক চুপসে গেল৷ মায়ের দস্যিপনা নিয়ে সবাই জানে৷ কাকলি বেগম কেন যে মোহরকে অপছন্দ করে এটা সাঞ্জে বুঝে পাইনা। কি মিষ্টি একটা মেয়ে, একে রেখে ওই তিয়াসাকে নিয়ে আহ্লাদ করে কিভাবে ভেবে পাই নাহ

– উফ মায়ের কথা ছাড় তো। মা ওমনি দেখ গিয়ে বসে আছে নিশ্চয় ওই তিয়াসা ফিয়াসা পেত্নীটার সাথে। ওর ন্যাকা দেখলে আমার পিত্তি জ্বলে ওঠে

হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো ভঙ্গিমায় সাঞ্জে তাথই কে এসব বলেই মোহরের হাত ধরে বেরোতে গেলে পেছন থেকে তাথই আবারও ডেকে বলল

– সাঞ্জে তোকে এখানে ডেকেছিলাম না আমি? বোস এখানে কাজ আছে। মোহর তুমি যাও, ভাই মনে হয় নামাজ পরে ফিরেছে

মোহর কে যেতে বললেও সাঞ্জের দিকে কড়া নজরে তাকালো। আপির এরূপ শাসনবোধক দৃষ্টিতে কিছু একটার ইশারা পেয়ে সাঞ্জে চুপসে মুখেই দাঁড়িয়ে গেল। মোহর আর কি করবে অগত্যা একাই বেরিয়ে গেল ঘর থেকে

– তুই আসলেই গাধা, মাথামোটা। এমনেই তো দুটো দুমেরুতে চলে বেড়ায়। এখন আবার সাজিয়ে দিচ্ছিস ইমপ্রেস করার জন্যে, তে বউয়ের সাথে বোন ও গিয়ে বসে থাকলে বউয়ের দিকে তাকাবে কি করে।

তাথই দাঁত খিঁচিয়ে কথাগুলো বলতেই সাঞ্জে মুখটা হতবুদ্ধির মতো করে ঘাড় দুলিয়ে বলল

– হ্যাঁ তাই তো। এটা তো ভাবিনি আমি

এগিয়ে এসে খাটের উপর বসতে বসতে বললে তাথই কটাক্ষের ন্যায় বলল

– তা বুঝবি ক্যান। শুধু তো লাফাতে পারিস।

– আমি আরও অনেক কিছুই পারি হ্যাঁ, শাড়িটা তো আমিই পড়ালাম তুই শুধু কুঁচি ধরেছিস।

বলে মুখ ভেংচে বসে রইলো। তাথই অযথা ঝগড়াতে কান দিল নাহ বরং নিজের কাজেই ব্যস্ত রইলো।

মোহর গুটি গুটি পা ফেলে এগিয়ে গেল ঘরের দিকে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। মেহরাজ ঘরে নেই, হয়তো বারান্দায়। এগিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনি হাতে তুলে চুল আঁচড়াতে লাগলো।

– তুমি কি সব সাইট গুলো ভিজিট করে এসেছো?

– হ্যাঁ স্যার। আমি সব দেখে এসেছি আমি এখন এ্যাপয়েন্ট করলেই কাজ শুরু হবে।

চোখ দু’টো সোজাসুজি পশ্চিমের দিকে আবদ্ধ রেখেই মেহরাজ আবারও বলল

– আমার হয়তো সামনের সপ্তাহেই যাওয়া লাগতে পারে অভি, তুমি সব রেডি করো।

– জ্বি স্যার।

– আর তোমার শরীরের অবস্থা কেমন? হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়লে যে?

ওপাশ থেকে কিয়ৎকাল কোনো প্রত্যুত্তর এলো নাহ। অবশেষে অভিমন্যু ভীষণ অসহায় গলায় বলে উঠলো

– আর অসুস্থ, সব দোষ ওই মেয়ের। ওর জন্যেই আজ আমার এই অবস্থা

মেয়ের কথা শুনে ভ্রু কুচকে এলো মেহরাজের। কৌতূহলী হয়ে বলল

– মেয়ে? কিসের মেয়ে?

– এই পরশুই একটা মেয়ের সাথে রাস্তায় ধাক্কা লেগেছিল। ওর হাতে একটা কেক ছিল ওটা ধপ করে পড়ে গেছে বলে ভরা রাস্তায় চিল্লাচিল্লি করে লোক জড়ো করে ফেলেছিল। তাই আমি সম্মান রক্ষার্থে ওকে দাঁড়াতে বলে আরেকটা কেক আনতে গেছিলাম, আর এসে দেখি মেয়েটাই নেই।

মেহরাজ নির্লিপ্ত গলায় পূর্বোগতের ন্যায় বলল

– তাই কেক টা বাড়ি এনে তুমি একাই সব খেয়েছো তাই তো?

– না মানে জ্বি স্যার

– মেয়েটার তো তোমাকে বলেনি পুরো কেক টা একবারে সাবার করে ফেলো তাহলে ওর দোষ দিচ্ছো কেন?

– ওরই তো দোষ। ও কেক না নিয়ে চলে গেল কেন? এখন কিনেছি যখন ফেলে তো দিতে পারিনা তাই তো একাই খেয়ে ফেললাম। আমি কি জানতাম পেট খারাপ হয়ে আমার বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে

– তোমার বাসায় কি ফ্রিজ ছিল না অভি? সেখানেও রাখা যেত?

– ওহ হ্যাঁ তাই তো? আসলে আমার মনেই ছিল না স্যার

– মনে ছিল না,নাকি কেক দেখে লোভ সামলাতে পারোনি

এবার অপরপক্ষ থেকে জবাব এলো নাহ। অভিমন্যু ধরা পড়া আসামীর ন্যায় চুপসে গেল।ওর ই বা কি দোষ কেক টা ওর ফেভারিট, ওটার লোভ কি সামলানো যায় নাকি!

– সুস্থ না হওয়া অব্দি অফিসে আসার দরকার নেই

বলেই ফোনটা কান থেকে নামিয়ে লাইনচ্যুত করে দিল। পকেটের ভেতর ফোনটা রাখতে রাখতে ঘরের ভেতর পা বাড়ালেও কেমন ধক করে উঠলো বুকের ভেতরটা, আচানক যেন শরীরের সমস্ত শক্তি খুইয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
নিশ্চিন্ত মনে রাখা পা টাও আকস্মিকভাবে স্থির হয়ে গেল। বুকের ভেতরের অবাধ্য যন্ত্রটা ভয়ংকর ক্ষিপ্রতায় ছুটতে লাগলো। চোখদুটো সেঁটে গেল সামনের দৃশ্যে।
চুল গুলো একপাশে রাখতে গিয়ে আয়নাতে এক পাশে সুস্পষ্টরূপে ভেসে ওঠা প্রতিবিম্বটা দেখে থমকে গেল মোহর খানিকের জন্য, পরমুহূর্তেই আয়না থেকে ঘুরে সামনাসামনি ফিরে দাঁড়ালো। যেন একটা আস্তো ধারালো তীর এসে বিঁধ’লো বুকের মাঝে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শাড়ি পরিহিতা নারীমূর্তিটির এহেন নিতান্তই স্বাভাবিক রূপও যেন মেরজারের বুকে অশান্ত প্রলয় জ্বেলে দিল। গায়ের পশম গুলো কাটা ফোঁ’টার ন্যায় তিরতির করে উঠল। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় অপলক, স্থির, অনড় দাঁড়িয়ে রইলো।

মেহরাজের এহেন বেহায়া, বেপরোয়া অস্থির করা নজরে মোহর একেবারে মিইয়ে গেল। লোকটা এভাবে কেন তাকিয়ে আছে? তাকে কি দেখতে খুব কুৎসিত লাগছে? কুণ্ঠা, সংকোচ তড়বড় করে ঘিরে ধরলো মোহরকে।
মোহরের অস্থৈর্য অনাবস্থাকে তরতর করে বাড়িয়ে দিয়ে মেহরাজ এক পা দু’পা করে এগিয়ে এলো। এ জীবনে বহু সুশ্রী,যুবতী, সুন্দরী, আকর্ষণীয় নারী দেখেছে। কিন্তু এমন বৈরী, যোগিনী সম রূপ কি কোথাও দেখেছে? যেই রূপ অতীব সামান্য, চাকচিক্যহীন তবুও এই রূপের কাছে যেন দৃষ্টি আঁটকে যায়, যার দিকে তাকিয়ে দিকবিদিকের খেঁই হারিয়ে ফেলে।
অস্থির দৃষ্টির বিরামহীন নজরে নিষ্পলক চেয়ে এগিয়ে এসে মোহরের সামনাসামনি দাঁড়ালো মেহরাজ। যেন বুকভর্তি নিঃশ্বাস এসে জড়ো হয়েছে। শুকনো ঢক গিলে টকটকে চোখে তাকিয়ে ভরাট গলায় বলল

– মোহ? শাড়ি পরেছেন যে?

কুণ্ঠিত চোখের প্রসারিত দৃষ্টি মেলে তাকালো মোহর। মুহুর্তেই নামিয়ে নিল আবার চোখ খানা। কম্পমান ওষ্ঠের ভাঁজ থেকে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল

– আম.. সসাঞ্জে পরিয়ে দিয়েছে

– আমার জন্যে?

মেহরাজের এই একখানা কথা যেন সমস্ত কুণ্ঠাকে চুড়বুড় করে দিল। লজ্জা,অস্বস্তিতে সমস্ত কায়াতে ভ্রম ধরে গেল। ওর সমস্ত জড়তাকে পুরোদমে অগ্রাহ্য করে মেহরাজ দুহাত পকেটে গুঁজে ঘাড় নামিয়ে আনলো। ঝুকে এসে মোহরের কপাল বরাবর মুখ নামিয়ে বলল

– আমার জন্যে শাড়ি পড়েছেন মোহ?

মোহর বারংবার চোখের পলক ফেলে শুকনো মুখ তুলে তাকালো মেহরাজের অনিমেষ চোখের দিকে। চেয়ে ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে না বোধক জবাব দিল। মেহরাজ হাসলো। স্মিত শব্দ হলো সে হাসিতে, অধর বাঁকিয়ে দুষ্টু গলায় বলল

– আর কি কেও আছে যাকে দেখাবেন?

মোহর অস্বস্তিতে ঘাড় নামিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু তা সম্ভবপর হয়ে উঠলো না। কিভাবে সরিয়ে নিবে নজরটা? মেহরাজের ওই হাসি মাখা মুখটা যে মোহরের ভুবন ভুলিয়ে দেয়। একটা পুরুষ মানুষের হাসিতেও কি এতটা স্নিগ্ধতা থাকতে পারে? এতটা মোহনীয় হাসি কোনো পুরুষের আদও হয়? নাকি এ মোহরের চোখের ভ্রম! মেহরাজ কি মোহরের চোখে ভ্রম ধরিয়ে দেয়? কিভাবে এতটা অস্থির হয়ে ওঠে ও! এই যে বুকের মাঝে বেগতিক হারে ঝড় উঠেছ, কেন হয় এমন?

– অদ্বিতীয়া লাগছেন মোহ! একদম মোহমায়ার মতনই

মোহর চোখ তুলে তাকানোর আগেই কথাগুলো নিঃসৃত হওয়া মুখটা হারিয়ে গেল। নিজেকে সুস্থির করে তাকানোর সময়টা নেওয়ার আগেই মেহরাজ বেরিয়ে গেছে দরজা ফাঁক করে। শুধু শুভ্র রঙের
শার্টে আবৃত পিঠটাই খানিকের জন্য দৃষ্টিগোচর হলো। মেহরাজ যেতেই বিছানার উপরে ধপ করে বসে পড়লো মোহর, ঘাড় কাৎ করে আয়নাতে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। অস্ফুটস্বরে ভেতর থেকে নিজের লুকায়িত সত্তাটিই যেন বলে উঠলো।

” কি হচ্ছে নিজের সাথে? কোথায় গুম হয়ে যাচ্ছে ? এ কোন মায়া আচ্ছন্ন করছে ওকে? ওই চোখ দুটিতে তাকিয়ে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যায় মোহর, যেন সম্মোহিত করে ফেলে ওকে! এতটা মায়া, মুগ্ধতা কেন বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে! মাত্র কয়েকদিনের সঙ্গ পেয়ে মোহর কোন ঘোরে ডুবে গেল, কেন গেল? স্বামী হয় বলেই কি নাকি অন্য কোনো কারণ?

বাইরে বেরিয়ে এসেই ঝড়ের বেগে বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে নিল মেহরাজ। এতটা দূর্বল,উন্মত্ততা সামলানো ওর পক্ষে ভীষণ দায় হয়ে পড়ছিল। তাই তো এড়িয়ে এলো,এক প্রকার পালিয়ে এলো।
মেহরাজ কি করেই বা নিজেকে শান্ত রাখতো! পদ্মলোচন আঁখিদুটি ওকে বারবার সম্মোহন করে ফেলে। মনের ভেতর তীব্র ইচ্ছে জাগে ওই নেত্রপল্লবে একবার, দুইবার, হাজারবার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে। কপালের মাঝের ছোট্ট ওই কালো দাগটিতে একটু কপাল টা ঠেকাতে, অশান্ত অস্থির হয়ে ওঠা পাতলা মুখটাকে বুকের ভেতর চেপে ধরতে, বাহুদ্বয়ের কারাগারে আবদ্ধ করার অবাধ্য ইচ্ছের তীব্রতা তীব্র থেকেও তীব্রতর হয়ে ওঠে, কি করে সামলাতো ও?
ওর স্পর্শ যদি মোহরের অনাকাঙ্ক্ষিত, অসহ্য লাগে? যদি সুবিধাভোগী মনে করে? যদি ভয়ে সিটিয়ে যায়,গুটিয়ে যায়? যদি মনে করে আর পাঁচটা স্বামীর মতো অধিকার ফলাতে চাই সে! মেহরাজ তো মোটেও চাইনা মোহরের ভয় জড়তা,বা অসহায়ত্বের কারণ হতে তার চেয়ে নাহয় এক যুগ অপেক্ষা করাও শ্রেয়!
______________________

অর্ধেক দিনটা নিজের মনের উচাটন সামলাতেই কে’টে গেল মোহরের । দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেলের সময়। খাওয়ার পরে মেহরাজ বেরিয়ে গেছিল কোনো এক কাজে, মোহর ঘরেই ছিল, বিকেল হতে চলল শুয়ে বসে থাকতে ভালোও লাগছে না আর, ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে এসে অন্যদিকে যাওয়ার আগেই একটা কণ্ঠে পা থেমে গেল

– এখন মেহরাজকে বশ করতে বউ সেজে শাড়ি পরে ঘুরছো, সো পিটি!

ঘাড় কাৎ করে তাকিয়ে তিয়াসার মুখটা দেখে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ালো মোহর। তিয়াসা এগিয়ে এসে মোহরের আপাদমস্তক দেখে তাচ্ছিল্য হেসে বলল

– এসব করে তুমি রাস্তার ছেলেদের পটাতে পারবে, মেহরাজকে নাহ

– আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি মেহরাজকে পটাতে চাচ্ছি?

ভ্রু নাচিয়ে বাকা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো মোহর। তিয়াসা খিটমিটে গলায় বলল

– এতে মনে হওয়ার কি আছে এটাই তো সত্য। তোমার মতো মেয়েদের কাজই তো এটা। তবে মনে কোরো না তোমার এই ইচ্ছে আমি পূরণ হতে দেব। মেহরাজ আমার, ওকে আমার থেকে কেও ছি/নিয়ে নিতে পারবে নাহ। তোমাকে খুব শীঘ্রই এখান থেকে দূর করবো আমি

মোহর মোটেও রাগলো না তিয়াসার এরূপ কথায়। বরং স্মিত হেসে বলল

– আচ্ছা? করুন দেখি কি করতে পারেন। আপনার জিনিসকে ফিরিয়ে নিন নিজের কাছে, আমিতো আটকাইনি একবার ও, আটকাবোও নাহ। কারণ আমি যানি যা কিছু আমার হয়ে থাকতে চাই তা কেও হাজারটা হাত আনলেও ছি’নিয়ে নিতে পারবে না। তবে আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন, দেখেন নিতে পারেন কি না।

বলে আর এক মুহুর্ত ও দাঁড়ালো নাহ। দ্রুত পায়ে হেঁটে শাহারা বেগমের ঘরের দিকে গেল। তিয়াসা ওর যাওয়ার দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে দাঁত কামড়ে বলল

– এতো দেমাগ তাই নাহ? সব ছুটিয়ে দেব। আমি তোমার কি হাল করতে পারি তুমি কল্পনাও করতে পারবে না মোহর, শুধু একবার আমাকে সুযোগ টা পেতে দাও।

বলে গটগট করে হেঁটে কাকলি বেগমের ঘরে ঢুকলো। উনি বসে টিভি দেখছিলেন তিয়াসাকে এভাবে রণচণ্ডী রূপে আসতে দেখে কাকলি বেগম বললেন

– কি হয়েছে রেগে আছো যে?

– খুশিই বা হবো কি করে। চোখের সামনে বউ সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখতে আমার মাথায় আগুন জ্বলে যাচ্ছে। ওকে আমি আর সহ্য করতে পারছিনা আন্টি। ওকে আমার পথ থেকে যে করেই হোক সরাতে হবে। মেহরাজ আমার,শুধুই আমার। ওকে আমি অন্য কারো হতে দিতে পারি না।

কাকলি বেগম তিয়াসাকে হাত ধরে পাশে বসিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল

– শান্ত হও, আগেই মাথা গরম করে ফেললে কি করে হবে। শুধু দেখে যাও মোক্ষম সুযোগ আসা পর্যন্ত।

তিয়াসা কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনা। এতদিন এতগুলো বছর যাকে পাওয়ার জন্য মনে প্রাণে তপস্যা করেছে এতসব কারসাজি করেছে শেষ মেষ তাকে অন্য একটা মেয়ে নিজের করে নেবে এটা ও কিছুতেই নিজের চোখের দেখতে পারে নাহ। মেহরাজকে তো ওর চাই, যেকোনো ভাবে যেকোনো মূল্যে, তিয়াসা চৌধুরী কখনো নিজের পছন্দের জিনিসকে দান করবে নাহ।

____________________

প্রকাণ্ড নিশুতি রাত। নভোমণ্ডলে তারার ছড়াছড়ির মাঝে একখানা রূপোর থালা বসানো। ইদানীং চাঁদটা যেন একটু বেশিই উজ্জ্বল লাগে! পূর্ণিমা বাদেই উপচানো রূপোর রঙের তরঙ্গ ছড়িয়ে দেয় ধরণী জুড়ে।
দূর থেকে একটা কুকুরে ডাক ভেসে আসলো, গভীর নির্জনে কুকুরের এই আর্তনাদ টা ভীষণ বিদঘুটে, মৃতবতের ন্যায় শোনালো।
পাশ ফিরতেই চোখ কুচকে এলো, ঘাড়ের পেছন দিকে প্রবল পীড়া অনুভূত হচ্ছে। অস্বস্তি আর যন্ত্রণাভূত হতেই ঘুমে বুদ হওয়া চোখ খানা ধীরে ধীরে সজাগ হলো। লম্বা হাই তুলে উঠে বসল মোহর।

পরনের শাড়িটা কুচকে গেছে, সন্ধ্যার পরে এসে শুয়েছিল, এতক্ষণ ঘুমিয়েছে? কেও একটু ডাকেও নি? অবশ্য কেই বা ডাকবে, এ ঘরের দিকে কেও খুব প্রয়োজন ছাড়া পাও মাড়ায় না।
বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোলো। এতক্ষণে চকিত হলো নজর, ঘড়িতে সময় প্রায় একটা অথচ মেহরাজ ঘরে নেই?
ছোট ছোট পা ফেলে বারান্দার স্লাইডিং ডোর সরিয়ে উঁকি দিল, অদ্ভুতভাবে সেখানেও নেই মেহরাজ। এতো রাতে তবে কোথায় গেল লোকটা? দ্বিধাদ্বন্দে ভরা মস্তিষ্কে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো মোহর, প্রচণ্ড কৌতূহল কাজ করছে ভেতরে, এতো রাতে তো এর আগে কোথায় যেতে দেখেনি মোহর। দরজার নবে হাত রাখবে ঠিক তখনি অন্যরকম একটা শব্দ এসে আ’ঘাত করলো কানের নরম পর্দায়, শব্দের উৎসটা খেয়াল করে দরজা খুললে
.
.
.
চলমান।

©Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here