প্রেম_ফাল্গুন #পর্ব_৪

#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_৪
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

“আমি তো বাড়তি কোনো জামা আনি নি চাচী। শাড়ি পাল্টে কি পড়ব?”

“মানে? এক কাপড়ে তুই এক সপ্তাহের জন্য চাচার শ্বশুড় বাড়িতে বেড়াতে চলে এলি?”

লিলি আমতা আমতা করে বলল,,

“হুম। ঐ আর কি!”

সোনিয়া আহমেদ রাগান্বিত হয়ে জুবায়ের আহমেদের কানের কাছে ছোট আওয়াজে বললেন,,

“দেখছ, তোমার ভাইয়ের বৌয়ের চালাকি? কি সুন্দর মেয়েকে এক কাপড়ে এক সপ্তাহের জন্য এখানে বেড়াতে পাঠিয়ে দিলেন? তোমার থেকে নতুন জামা, কাপড় আদায় করবে বলেই এই চালাকিটা করেছে বুঝেছ?”

জুবায়ের আহমেদ ইতস্তত বোধ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লিলির দিকে এক পলক তাকিয়ে সোনিয়া আহমেদের কানে ফিসফিসিয়ে বিরক্তির স্বরে বললেন,,

“আহ্ সোনিয়া। না জেনেই কু মন্তব্য করো না তো। লিলি শুনলে কষ্ট পাবে।”

লিলি সব শুনে ও নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু করে চোখের জল ছাড়ছে। সোনিয়া আহমেদ মুখটা বাঁকা করে মিনমিন করে বললেন,,

“শুনলে তো কষ্ট পাবে। তাছাড়া শুনতে পেলেই ভালো, সাত দিনের বেশি এ বাড়িতে থাকার ইচ্ছে পোষণ করবে না।”

জুবায়ের আহমেদ কঠিন দৃষ্টিতে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকালেন। জুবায়ের আহমেদের দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করে সোনিয়া আহমেদ লিলির সম্মুখীন হয়ে বললেন,,

“ঠিকাছে ঠিকাছে। রেশমির একটা জামা দিবো, পড়ে নিস। পরে না হয় গ্রামে যাওয়ার আগে তোকে আরো একটা ভালো জামা কিনে দেবো।”

লিলি শুকনো মুখে মলিন হাসি ফুটিয়ে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“নতুন জামা আমার লাগবে না চাচী। রেশমির কোনো পুরাতন জামা হলে ও হবে।”

“এতো বছর পর চাচা, চাচীর কাছে বেড়াতে এসেছিস, সৌজন্যতার খাতিরে হলে ও তো একটা জামা দেওয়া দরকার।”

জুবায়ের আহমেদ অতি বিস্ময়ভরা চোখে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সোনিয়া আহমেদ কপাল কুঁচকে জুবায়ের আহমেদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন,,

“কি হলো? এতো বিস্মিত হচ্ছ কেনো? হাজার খানিকের ই তো ব্যাপার। জামা একটা কিনে দিলে কিছু হবে না। চলেই তো যাবে এক সপ্তাহ পর। ফের কবে না কবে আসে।”

জুবায়ের আহমেদ এক গালে হেসে লিলির কাঁধে হাত রেখে বললেন,,

“তোর চাচী যখন খুশি হয়ে দিতে চাইছে, তাহলে বারণ করছিস কেনো? বড়রা কিছু দিতে চাইলে না করতে নেই। বেয়াদবি বুঝায়।”

লিলি ক্ষীণ হেসে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ঠিকাছে চাচী। তোমার যা ইচ্ছে।”

অকস্মাৎ সোনিয়া আহমেদের নজর গেলো লিলির হাতে থাকা ছোট্ট ব্যাগটার দিকে। ভ্রু যুগল খড়তড় ভাবে কুঁচকে সোনিয়া আহমেদ ব্যাগটার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন,,

“তোর হাতে এটা কিসের ব্যাগ লিলি?”

ঘটনার আকস্মিকতায় লিলি শুকনো ঢোক গিলে জুবায়ের আহমেদের দিকে তাকালো। জুবায়ের আহমেদ আমতা আমতা করে ক্ষীণ আওয়াজে সোনিয়া আহমেদকে বললেন,,

“ওওওটা কিছু না। আআসলে লিলি ব্যাগ ভর্তি চিড়ে, মুড়ি, গুড় এনেছিলো। অনেকটা রাস্তা তো, ক্ষিদে পেয়ে যায়। তাই এই ব্যাগটাতে করে শুকনো খাবার গুলো এনেছিলো। খাওয়া শেষ, ব্যাগ এখন খালি।”

লিলি হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ালো৷ সেনিয়া আহমেদ কৌতুহলী দৃষ্টিতে ঐ ব্যাগটার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,,

“দেখি কি আছে ব্যাগটাতে।”

তৎক্ষনাৎ জুবায়ের আহমেদ লিলির হাত থেকে ব্যাগটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“আআরে এটাতে কিকি দেখবে তুমি? দেদেদেখার মতো তো কিছু নেই। ব্যাগটা বরং আমি আমার কাছেই থাকুক। মুদি খরচ আনতে সুবিধে হবে।”

সোনিয়া আহমেদ মুখ ভঙ্গি স্বাভাবিক করে বললেন,,

“ঠিক আছে রেখে দাও। ব্যাগটা আসলেই মুদি খরচের জন্য ভালো।”

লিলির সামনে থেকে সোনিয়া আহমেদকে কিছুটা দূরে টেনে এনে জুবায়ের আহমেদ মিনতি ভরা স্বরে সোনিয়া আহমেদকে ছোট আওয়াজে বললেন,,

“দয়া করে একটা সপ্তাহ লিলির সাথে ভালো ব্যবহার করো প্লিজ। আমার এই অনুরোধটা রাখো।”

“আমি এতোটা ও মন্যুষত্বহীন না জুবায়ের। লিলি এক সপ্তাহের জন্য বেড়াতে এসেছে। আমি আমার সাধ্য মতো চাইব ওর সাথে ভালো ব্যবহার করতে। আর যদি খারাপ ব্যবহারের শিকার হয় লিলি তাহলে ভাববে এই খারাপ ব্যবহারের পেছনে আমার কোনো স্বার্থ জড়িয়ে আছে।”

লিলির হাত ধরে সোনিয়া আহমেদ রুম থেকে প্রস্থান নিচ্ছেন আর লিলিকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,,

“রেশমীর রুমে চল। তোর জামার ব্যবস্থা করছি।”

“ঠিকাছে চাচী।”

রেশমীর রুমের ভেজানো দরজাটা খুলে সোনিয়া আহমেদ লিলিকে নিয়ে রেশমীর রুমে প্রবেশ করলেন। তমসায় ঘেরা রুমটায় লাইট জ্বালিয়ে সোনিয়া আহমেদ লিলির হাতটা ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকা রেশমী আর রনককে ডেকে বললেন,,

“রেশমী, রনক উঠ। দেখ কে এসেছে।”

রেশমী, রনক নাক, মুখ কুঁচকে চোখ বুজেই বিরক্তি ভরা স্বরে বলল,,

“উফফ আম্মু। ডাকছ কেনো? কে এসেছে?”

“গ্রাম থেকে লিলি এসেছে। তোদের জেঠাতো বোন।”

রেশমী, রনক দুজনই তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে পিটপিট চোখে সম্মুখে তাকালো। লিলির মৃদ্যু হাসি ভরা মুখটা দেখে দুজনই লাফিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে লিলিকে ঝাপটে ধরে বলল,,,

“আপু তুমি এসেছ? কতো বছর পর তোমাকে দেখলাম বলো।”

লিলি উচ্ছ্বাসিত হয়ে তাদের দুজনকে ঝাপটে ধরে বলল,,

“হুমম। পাঁচ বছর তো হবেই। লাস্ট তোমরা কোরবানী ঈদের ছুটিতে আমাদের গ্রামে গিয়েছিলে। তারপর তো আমার দেখা ই হয় নি।”

সোনিয়া আহমেদ হুট করে নাক ছিটকে বলে উঠলেন,,

“বাধ্য হয়ে গিয়েছিলাম বুঝলি? তোর চাচার জন্য। গ্রামে আবার মানুষ থাকে নাকি। চড়ুই পাখির মতো দুটো রুম, ঘিনঘিনে পরিবেশ, সৌর বিদ্যুৎ, মাটির চুলো, স্যাঁতস্যাঁতে কল, টয়লেট।”

লিলি মাথা নিচু করে শুকনো মুখে বলল,,

“আমরা এখন সিলিন্ডারে রান্না করি চাচী। স্যাঁতস্যাঁতে কল, টয়লেট আর নেই। তোমাদের শহরের ওয়াশরুম গুলোর মতোই আমাদের পাকা ওয়াশরুম আছে, তবে বিদ্যুতের ব্যবস্থা এখনো হয় নি। গ্রামের লোকজন আশাবাদী। খুব শীঘ্রই বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”

“নিজের ভাগের অর্ধেক জমি তো তোর বাবা বেঁচেই দিয়েছেন। আর সেই জমি বিক্রির টাকা দিয়েই খুব ফুটানি চলছে তাই না? দেখিস আবার, তোর চাচার ভাগের জমিটা ও না তোর বাবা আবার বেচে দেন।”

“না চাচী। বাবা কেনো? পৃথিবীর কেউই পারবে না, চাচাকে ছাড়া চাচার জমি বিক্রি করতে। দলিল অনুযায়ী চাচাই ঐ জমির মালিক। তুমি অহেতুক টেনশান করো না।”

সোনিয়া আহমেদ প্রসঙ্গ ঘুড়িয়ে রেশমী, রনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“শুন। লিলি এক সপ্তাহের জন্য এ বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। বোনকে পেয়ে আবার স্কুল, প্রাইভেট, পড়ালেখা চাঙ্গে তুলে বসো না। রুটিন অনুযায়ী চলতে হবে।”

দুজনই হাসি মাখা মুখে মাথা নাঁড়ালো। রেশমীকে উদ্দেশ্য করে সোনিয়া আহমেদ ব্যস্ত হয়ে বললেন,,

“তোর একটা জামা দে লিলিকে। দুজনেরই তো শরীরের গঠন এক। তুই শুধু লিলির থেকে এক বছরের ছোট। আশা করছি তোর জামা লিলির গাঁয়ে ফিট হবে।”

রেশমী আলমারীর দিকে এগিয়ে এক গাল হেসে বলল,,

“দিচ্ছি দাঁড়াও।”

রনক পেটে হাত চেঁপে হম্বিতম্বি হয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। হয়তো প্রাকৃতিক ডাক এসেছে। রনক মাএ ক্লাস ফাইভে উঠল। আর রেশমী নিউ টেনে উঠেছে সবে। লিলি রনকের যাওয়ার পথে তাকিয়ে খানিক হাসল। সোনিয়া আহমেদ লিলির সম্মুখে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললেন,,

“তোর বড় বোন ঝুলি কেমন আছে?”

লিলি শুকনো হেসে বলল,,

“কোনো রকম। দুলাভাই তো আপুকে আমাদের বাড়িতে আসতেই দেন না। আমাদের ও ঐ বাড়িতে তেমন যাওয়া হয় না।”

“সুখে আছে তো স্বামীর সাথে?”

“আছে। ঐ আর কি!”

“ঠিক আছে। জামা পাল্টে নে।”

সোনিয়া আহমেদ হনহনিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে সোজা উনার রুমে প্রবেশ করলেন। জুবায়ের আহমেদ তন্মধ্যে লিলির সমস্ত সার্টিফিকেট গুলো নিরাপদ জায়গায় লুকিয়ে ফেলেছেন। সোনিয়া আহমেদ পেছন থেকে জুবায়ের আহমেদের কাঁধে হাত রেখে এক নিশ্বাসে গড়গড় করে বললেন,,

“শুনো জুবায়ের। বাড়িতে মা-বাবা নেই বলেই কিন্তু আমি লিলিকে এক সপ্তাহ এ বাড়িতে থাকতে বলেছি। ফিরে এসে বাড়িতে বাড়তি লোক দেখলে কিন্তু মা-বাবা ভীষণ রেগে যাবেন। তোমার ভাইয়ের মেয়েকে বলে দিও এক সপ্তাহ পরেই যেনো সে এ বাড়ি থেকে বিদেয় নেয়। এই এক সপ্তাহে আমি চেষ্টা করব ওর সাথে ভালোভাবে ব্যবহার করতে। কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে কিন্তু আমি আমার খারাপ ব্যবহারকে আটকে রাখতে পারব না। এই বলে রাখলাম।”

জুবায়ের আহমেদ পিছু ফিরে তিক্ত স্বরে বললেন,,

“আহ্ সোনিয়া। এতো ব্যস্ত হচ্ছ কেনো? দয়া করে চুপ করো। এক সপ্তাহ পর দেখা যাবে কি হয়!”

“এক সপ্তাহ পর দেখা যাবে মানে? কি বলতে চাইছ তুমি?”

জুবায়ের আহমেদ উদাসী ভাব নিয়ে বললেন,,

“কিছু না। লিলির হয়তো ক্ষিদে পেয়েছে। যাও নাশতা বানাও।”

সোনিয়া আহমেদ রাগে গজগজ করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াচ্ছেন আর বলছেন,,

“যতো জ্বালা আমার। গ্রাম থেকে এজন আসবে সেজন আসবে, সবার থাকার জায়গা আমার মা-বাবাকেই করতে হবে, তাদের আপ্যায়ন ও আমারই খেঁটে খুঁটে করতে হবে।”

জুবায়ের আহমেদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে মাথা নিচু করে হতাশাগ্রস্থ হয়ে বললেন,,

“এতো সহজ হবে না রে লিলি। তোকে এই বাড়িতে রাখা। তোর স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করা। তোর চাচা হয়তো হেরে যাবে লিলি। বাস্তবতা তোর চাচাকে হারিয়ে দিবে। সাথে তোকে ও বাস্তবতা শিখিয়ে দিবে!”

,
,

লিলি জামা পাল্টে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে আছে। গাউন কখনো পড়ে নি লিলি৷ চুড়িদারে অভ্যস্ত সে। রেশমীর ড্রেসটা একদম ফিটফাট ভাবে লিলির গাঁয়ে লেগেছে। রেশমী ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে প্রবেশ করে মুগ্ধ দৃষ্টিতে লিলির প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ওয়াও আপু। ব্ল্যাক গাউনে তোমাকে জাস্ট ফাটাফাটি লাগছে। শুভ্র শরীরে কৃষ্ণ রঙ্গ। এবার বুঝো কতো ভালো কম্বিনেশন।”

লিলি লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মাথাটা নিচু করে বলল,,

“ধ্যাত। কি যে বলো রেশমী। এ জামাটায় আমার থেকে বেশি তোমাকে ভালো মানাবে। তুমি ও তো শুভ্র পরী।”

রেশমী তোয়ালে হাতে নিয়ে পেছন থেকে লিলির কাঁধে মাথা রেখে লিলির প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল,,

“ঠিকাছে। বাট আমার মনে হচ্ছে, আমার চেয়ে এ ড্রেসটাতে তোমাকে ভালো মানাচ্ছে।”

লিলি চোখ তুলে দুজনের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হাসল। তন্মধ্যেই, সোনিয়া আহমেদ রেশমীর রুমে প্রবেশ করে জোর পূর্বক হেসে লিলিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“লিলি শুনছিস?”

লিলি তড়িঘড়ি করে সোনিয়া আহমেদের দিকে এগিয়ে এলো। সোনিয়া আহমেদ লিলির কাঁধে হাত রেখে ইতস্তত ভঙ্গিতে বললেন,,

“একটু রান্না ঘরে আসবি? পরোটা বানাতে হবে। আসলে আমি একা হাতে পারছি না। তার মধ্যে মা ও বাড়িতে নেই।”

“তুমি এতো ইতস্তত বোধ করছ কেনো চাচী? বাড়িতে তো আমি রোজই কতো কাজ করতাম। এখানে না হয় তোমাকে একটু সাহায্য করলাম। এতে এতো ইতস্তত বোধ করার কি আছে?”

“উফফ বাঁচালি। চল তাহলে রান্নাঘরে।”

রেশমী উনাদের পিছু পিছু রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হতেই সোনিয়া আহমেদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রেশমীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

“এই, তুই কোথায় যাচ্ছিস? রনক কে নিয়ে পড়তে বস। আজ ও যদি ববি তোদের পড়া নিয়ে আমার কাছে কোনো কমপ্লেন করে না? তখন বুঝবি মজা।”

রেশমী ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। লিলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সোনিয়া আহমেদকে বলল,,

“ববি?”

“হুম। ববি ওদের প্রাইভেট টিউটর৷ তুই চিনবি না।”

,
,

আধঘন্টার মধ্যে গরম গরম পরোটা বানিয়ে লিলি খাবার টেবিলে পরিবেশন করে দিলো। সাথে ওমলেট ও আছে। রেশমী, রনক পড়ার টেবিল ছেড়ে খাবার টেবিলে চলে এলো। জুবায়ের আহমেদ পএিকা পড়া ছেড়ে খাবার টেবিলে চলে এলেন। লিলি রান্নাঘরে সোনিয়া আহমেদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ফুটন্ত পানিতে চাপাতা ছেড়ে সোনিয়া আহমেদ ব্যস্ত ভঙ্গিতে লিলিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“তুই গিয়ে খেতে বস। আমি চা টা নিয়ে আসছি।”

“থাক না চাচী। তুমি এলেই একসাথে খাবো।”

তক্ষনি জুবায়ের আহমেদ লিলিকে ডেকে বললেন,,

“লিলি, আয়। খেতে বস।”

লিলি তড়িঘড়ি করে খাবার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। জুবায়ের আহমেদ উনার পাশের চেয়ারটা টেনে মৃদ্যু হেসে লিলিকে বললেন,,

“বস।”

লিলি চেয়ারটা টেনে বসতেই কেউ সদর দরজার কলিং বেলটা বাজালো। রান্নাঘর থেকে সোনিয়া আহমেদ লিলিকে ডেকে বললেন,,

“লিলি দেখ তো কে এসেছে। তুই তো এখনো খেতে বসিস নি।”

“যাচ্ছি চাচী।”

লিলি দ্রুত পায়ে হেঁটে সদর দরজাটা খুলে দিতেই ববির গৌড়বর্ণের আদলে শান্ত মুখটা লিলির দু চোখের মনিতে স্পষ্ট হলো। ববি অপলক দৃষ্টিতে লিলির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। লিলির নজর কাড়া রূপ ববিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতোন টানছে। মৌণতা কাটিয়ে লিলি বিস্মিত চোখে বেশ উচ্ছ্বাসিত হয়ে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ববি ভাই?”

ববি ধ্যান কাটিয়ে ব্যতিব্যস্ত স্বরে লিলিকে বলল,,

“কি অবস্থা আপনার? সোনিয়া আন্টি আপনাকে মেনে নিয়েছেন তো?”

লিলি চোখ ঘুড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে দেখল সোনিয়া আহমেদ খুব মনযোগ দিয়ে চা বানাচ্ছেন। তাড়াহুড়ো করে লিলি ববির কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,

“চাচা বলেছে আমি এক সপ্তাহের জন্য বেড়াতে এসেছি। বেড়ানো হলেই আমি চলে যাবো, তাই চাচী আমাকে এতো জলদি মেনে নিয়েছেন।”

“মানে? তাহলে আপনার সব স্বপ্ন শেষ?”

“না। চাচা বলেছে আস্তে ধীরে চাচীকে ম্যানেজ করে নিবেন।”

ববি আরো কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই খাবার টেবিল থেকে রেশমী, রনক ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠল,,

“স্যার এসেছে স্যার।”

রান্নাঘর থেকে সোনিয়া আহমেদ হম্বিতম্বি হয়ে সদর দরজার কাছে ছুটে এসে ববির দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ হেসে বললেন,,

“কি ব্যাপার ববি? তুমি হঠাৎ এ সময়?”

ববি থতমত খেয়ে পেছনের চুল গুলো টেনে মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে বলল,,

“শেট। কিভাবে বলি আন্টিকে, আমি কেনো এসেছি! আমি তো আসলে লিলির অবস্থা জানতে এসেছি!”

অল্প সময় চুপ করে ববি আবার বলল,,

“দেখি, মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে কি হয়!”

জোর পূর্বক হেসে ববি সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বেশ স্বাভাবিক স্বরেই বলল,,,

“আসলে আন্টি। গতকাল রেশমী, রনককে পড়াতে এসে হয়তো ভার্সিটির ফর্মফিলাপের রিসিট টা ভুল বশত ফেলে গেছি। সেটাই খুঁজতে এলাম। ভার্সিটিতে শো করাতে হবে।”

“ওহ্ আচ্ছা এ ব্যাপার। এসো ভেতরে এসো। স্টাডি রুমে বসো। আমি খুঁজে দেখছি রিসিট টা।”

লিলিকে ববির সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোনিয়া আহমেদ রাগান্বিত হয়ে লিলির কানে ফিসফিসিয়ে বললেন,,

“তুই এখানে কি করছিস? খেতে বস। যা।”

লিলি মাথা নিচু করে দ্রুত পায়ে হেঁটে খাবার টেবিলে বসে গেলো। সোনিয়া আহমেদ রান্নাঘরে যেতেই জুবায়ের আহমেদ হুড়মুড়িয়ে বসা থেকে উঠে ব্যাকুল হয়ে ববির সম্মুখীন হয়ে বললেন,,

“ববি। তুমি যে আগে থেকেই লিলিকে চিনো, লিলির কোন উদ্দেশ্যে এখানে আসা সবই জানো। এই ব্যাপার গুলো সোনিয়াকে ভুল ক্রমে ও জানতে দিও না প্লিজ। আমি চেষ্টা করব আস্তে, ধীরে সবকিছু সামনে আনার। আপাতত মেয়েটা নিরাপদে কয়েকটা দিন এ বাড়িতে থাক।”

“আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আঙ্কেল। ভুল ক্রমে ও আন্টিকে আমি এসব শেয়ার করব না।”

সোনিয়া আহমেদকে চা নিয়ে আসতে দেখে জুবায়ের আহমেদ গলা খাঁকিয়ে ববিকে বললেন,,

“ববি এসো। খেতে বসো। একদম সঠিক সময়ে এসেছ তুমি।”

“আসলে আঙ্কেল, আমি একটা দরকারে এই অসময়ে এসেছি। তাছাড়া আমি বাড়ি থেকে নাশতা করেই বের হয়েছি।”

সোনিয়া আহমেদ কাপে চা ঢেলে ববির হাতে কাপটা ধরিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন,,

“নাও। চা টা খাও৷ বসো আগে।”

ববি অপারগ হয়ে চা নিয়ে খাবার টেবিলে বসতেই রেশমী, রনক খাবার ছেড়ে উঠে নতজানু হয়ে ববিকে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম। খাবার ছেড়ে উঠলে কেনো? বসো, খাও।”

দুজনই আবার খাবার টেবিলে বসে পড়ল। লিলি পরোটা মুখে দিয়ে ববিকে ইশারা করে কিছু বলছে। ববি বুঝতে না পেরে বার বার কৌতুহলী দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকাচ্ছে। সোনিয়া আহমেদ স্টাডি রুমের দিকে যেতেই লিলি বসা থেকে উঠে ববির চেয়ারের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছোট আওয়াজে বলল,,

“শার্টের বোতম গুলো এলোমেলো ভাবে লাগিয়েছেন আপনি। ঠিক ভাবে লাগান। বিশ্রী লাগছে দেখতে।”

ববি শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখল আসলেই বোতম গুলো ঠিকভাবে লাগানো হয় নি। তাড়াহুড়ো করে ববি পিছু ফিরে শার্টের বোতম গুলো ঠিকভাবে লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আর অনমনেই বলে উঠল,,

“আসলে আপনার খবর জানার জন্য আমি এতোটাই ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলাম যে শার্টের বোতম গুলো ঠিকভাবে লাগানোই হয় নি। তন্মধ্যে এ ও ভুলে গেছিলাম আজ ফ্রাইডে। ভার্সিটি বন্ধ।”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here