প্রেম_প্রেম_খেলা #পর্ব_০৪(বোনাস পর্ব),০৫

#প্রেম_প্রেম_খেলা
#পর্ব_০৪(বোনাস পর্ব),০৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
০৪

Hum tere bin ab rehe nehi sakte ..
Tere bina kiya wajud mera
Tujse judagar ho jayenge
So Khudse Hi Ho Jayenke Juda

Kiuki tum hi ho
Ab tum hi ho
Zindegi ab tum hi ho

Chan V … Mera Dard V.
Mary Ashiki Ab Tum Hi Ho ……..

আদ্রিয়ানের গান শুনে সবাই মুগ্ধ।এ যেনো এক সুরের যাদুকর।সবাই আদ্রিয়ানের সাথে সাথে গাইতে গাইলো।

Tera mera rista he casa
Ek pal dur gawara nehi
Tere liye har rose he jite
Tusco diya mera wakt sabhi
Koi lamha mera na ho tere bina
Har sas pe naam tera
Kiuki tum hi ho
Ab tum hi ho……..

গান শেষ হওয়া মাত্র আদ্রিয়ান স্টেজ থেকে নেমে গেলো।আর সাথে সাথে সবাই অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য ঘিরে ধরলো তাকে।অহনা নিজেও চলে গেলো।কিন্তু আদ্রিয়ান নিচমুখ হয়ে যেভাবে সবাইকে অটোগ্রাফ দিচ্ছে মনে তো হয় না সে অহনাকে আজ দেখতে পাবে।সেজন্য অহনা নিজেই চিৎকার করে বললো,
এই যে আদ্রিয়ান!আমাকে একটা অটোগ্রাফ দেওয়া যাবে?

আদ্রিয়ান অহনার কন্ঠ শুনে উপর দিকে তাকালো।

অহনা আদ্রিয়ান কে তাকানো দেখে ভীড় ঠেলে আদ্রিয়ানের কাছে চলে যেতেই আদ্রিয়ান আর এক মুহুর্ত থাকলো না।

অহনা তখন বললো, এই যে,যাচ্ছেন কেনো?একটা অটোগ্রাফ দিয়ে যান প্লিজ।
আদ্রিয়ান কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা তার গাড়িতে উঠে চলে গেলো।

আদ্রিয়ানের এমন ব্যবহারে অহনার ভীষণ খারাপ লাগলো।সে আদ্রিয়ানের এতো বড় ফ্যান তবুও আদ্রিয়ান তাকে অটোগ্রাফ দিলো না।এইভাবে তাকে অপমান করলো?
সেজন্য অহনার জিদ আরো বেড়ে গেলো।সে নিজেও আদ্রিয়ানের হোটেলের দিকে চলে গেলো।যে করেই হোক আদ্রিয়ানের অটোগ্রাফ সে নেবেই নেবে।

আদ্রিয়ান যে হোটেলে উঠেছে অহনাও সেই হোটেলে চলে গেলো।তবে রিসেপশনে গিয়ে তার মন টা খারাপ হয়ে গেলো।কারণ কোনো রুম ফাঁকা ছিলো না।সেজন্য অহনা রাগ করে হোটেল থেকে বের হয়ে এলো।আর হোটেলের বাহিরে এসে কয়েকটা ছবি তুলে ক্যাপশন দিলো,
হোয়াইট হাউজ ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে আছি এখন।অনেক এনজয় করছি।

আদ্রিয়ান একা উঠেছে এই হোটেলে।কারন তার কাল একটা প্রোগ্রাম আছে এখানে।আদ্রিয়ান একটু রেস্ট নিচ্ছিলো হঠাৎ তানহা কল দিয়ে বললো দোস্ত, এসব হচ্ছে টা কি?

–কি হচ্ছে?

–তুই যে হোটেলে আছিস মেয়েটাও সেই হোটেলে আছে।

–কোন মেয়ে?

–তুই এখনো জানিস না কোন মেয়ে?

আদ্রিয়ান এবার একটু রাগ দেখিয়ে বললো যা বলার ক্লিয়ার করে বলবি একটু?

তানহা তখন বললো অহনা মেয়েটাও তোরই হোটেলে আছে এখন।

আদ্রিয়ান এবার বেশ অবাক হয়ে গেলো।সে তখন বললো তুই কিভাবে জানলি?

–মেয়েটার টাইমলাইন থেকে।তুই ও চেক করে দেখতে পারিস।মেয়েটা যেসব কান্ড করতেছে সত্যি এবার সে তার সীমা ছেড়ে যাচ্ছে।তুই কিছু বলছিস না কেনো?পরে কিন্তু এ নিয়ে কেলেংকারী বেঁধে যাবে দেখিস।যদি সাংবাদিকরা জানতে পারে তাহলে তো আর রেহাই নাই।

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে কল কেটে দিলো।আর অহনা নাম সার্চ দিতেই চলে আসলো মেয়েটার ছবি।
আদ্রিয়ান অহনার এমন পাগলামি দেখে সত্যি অবাক হয়ে গেলো।সে সবচেয়ে বেশি অবাক হলো অহনার সাথে তার বিভিন্ন রকম এটাচ ছবি দেখে।আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না অহনা কেনো এমন করছে তার সাথে।যেখানেই সে যাচ্ছে সেখানেই এই মেয়েটা পৌঁছে যাচ্ছে।
আদ্রিয়ান অহনার আইডি চেকড করে পুরাই অবাক হয়ে গেলো।কারন অহনার পুরো আইডি জুড়ে শুধু তারই ছবি।

আদ্রিয়ান সেজন্য নিজেই অহনাকে মেসেজ দিলো।

–হ্যালো।

অহনার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না এটা আদ্রিয়ান। সে ভালো করে চেক করে দেখে হ্যাঁ এটা আদ্রিয়ানই।সে তো আদ্রিয়ানের মেসেজ দেখে একদম পাগল হয়ে গেলো।

সে তখন বললো আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি নিজে আমাকে মেসেজ দিয়েছেন।কি যে খুশি লাগছে বলে বোঝতো পারবো না।আমি না আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।আপনিও নিশ্চয় আমাকে পছন্দ করেছেন।

আদ্রিয়ান তখন বললো, আমি তোমাকে ভালোবাসার কথা বলার জন্য মেসেজ দেই নি।আমি তোমাকে সতর্ক করার জন্য মেসেজ দিয়েছি।তুমি কিন্তু এবার তোমার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো।মেয়ে মানুষ যে এতো নির্লজ্জ হয় তা তোমাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।এরকম পাগলামি করলেই যে আমি তোমাকে ভালোবাসবো সেটা ভাবলে কি করে?আমি তোমাকে জীবনেও ভালোবাসবো না।তোমার মতো এরকম হাজার হাজার মেয়ে আমার পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায়।
আচ্ছা বাদ দাও।কাজের কথা শোনো।যদি আমার মানসম্মান নষ্ট করতে না চাও তাহলে তোমার আইডিতে কিছুক্ষন আগে হোয়াইট হাউজ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল নিয়ে যে ছবি পোস্ট করেছো সেগুলো ডিলিট করে দাও।
আর যদি মনে করো আমার মানসম্মান নষ্ট করাই তোমার মূল উদ্দেশ্য তাহলে রেখে দিতে পারো।

অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে এবার কেঁদে ফেললো।আদ্রিয়ান এভাবে তাকে অপমান করবে সত্যি সে বুঝতে পারে নি।সেজন্য সে তাড়াতাড়ি করে সবগুলো পোস্ট ডিলিট করে দিলো।আর অহনা আদ্রিয়ান কে নিয়ে কোনো পোস্ট করে না।

এদিকে এই ঘটনার পর থেকে আদ্রিয়ান রেগুলার অহনার আইডি চেক করতে থাকে।সে নিজেও ভীষণ অবাক হলো।অহনা এইভাবে তার কথা শুনে সবগুলো পোস্ট ডিলিট করে দিলো।সত্যি কি মেয়েটা তাকে ভালোবাসে।মেয়েটার মনে হয় তাকে অসম্মান করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই।

এক মাস পরের ঘটনা।
আদ্রিয়ানের মিউজিক ভিডিওর জন্য মডেল খোঁজা হচ্ছে।যেখানে মেল ক্যারেক্টারে আদ্রিয়ান নিজেই থাকবে কিন্তু ফিমেল ক্যারেক্টারের জন্য নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছিলো।এইভাবে অনেক খোঁজাখুঁজির পর টপ দশ জন কে বেছে নেওয়া হলো।এই দশজনের ভিতর যাকে আদ্রিয়ান পছন্দ করবে সেই হবে আদ্রিয়ানের পার্টনার।

মেয়ে দশজন সুন্দর প্রিপেরেশন নিয়ে এসেছে।একেক জনকে ঝাক্কাস পরীর মতো লাগছিলো।আদ্রিয়ানের বন্ধু সানি আর উল্লাস তো ভীষণ এক্সসাইটেড। এই দশজনের ভিতর একটারে তারা পটিয়ে নেওয়ার ধান্দায় আছে।অন্যদিকে আদ্রিয়ান, তানহা আর লিথি খুব মনোযোগ দিয়ে একজন একজন করে দেখতে লাগলো।আর নাম্বার দিতে লাগলো।এইভাবে দেখতে দেখতে দশম মেয়ের পালা এসে গেলো।দশম মেয়ে আর অন্য কেউ নয়, অহনা ছিলো।

অহনাকে দেখামাত্র তো সবার চোখ কপালে উঠে গেলো।এ মেয়ে এখানে কিভাবে এলো?
অহনা সবাইকে দেখে বললো আসসালামু আলাইকুম। মে আই কাম ইন?

তিনজনের একজনও তাকে ইয়েস বললো না।অহনা তখন নিজেই চলে এলো ভিতরে।তানহা অহনাকে দেখামাত্র বললো,ইউ?

–হ্যাঁ আমি।

আদ্রিয়ান তখন তানহাকে থামিয়ে দিয়ে বললো চুপ কর তুই।ভালো করে নাম দেখ।ও নিজেও একজন প্রতিযোগি।

তানহা তখন বললো তাই বলে এই মেয়ে তোর মডেল হবে?

আদ্রিয়ান তখন বললো এখনো হয় নি তো।ভালো করে যাচাই করে নাম্বার দে।
তানহা সেই কথা শুনে মনে মনে বললো দেওয়াচ্ছি নাম্বার।এই অভদ্র মেয়েকে আমি জিরো দেবো।

আদ্রিয়ান এই প্রথমবার অহনাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।উচ্চতা ৫” ৫।গায়ের রঙ ফর্সা।মুখের আকৃতি গোল।স্লিম বডি।কথা বলার ধরন সুন্দর।হাঁটার স্টাইল সুন্দর।আদ্রিয়ানের কাছে অহনাকে সব দিক দিয়েই পারফেক্ট মনে হলো।সেজন্য সে দশের মধ্যে দশ দিলো অহনাকে।এর আগে একজন মেয়েকেও সে দশ দেয় নি।লিথিও দশ দিলো।কারণ তার কাছেও অহনাকে পারফেক্ট মনে হয়েছে।কিন্তু তানহা রাগ করে জিরো দিলো।

কিছুক্ষন পরেই রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে। সকল মেয়েই অধীর আগ্রহে বসে আছে।অহনা তো শুধু চোখ বন্ধ করে তার সৃষ্টি কর্তাকে ডাকতে লাগলো।এবারের মতো তাকে জিতিয়ে দাও খোদা।কারন তার মডেল হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নাই।শুধুমাত্র আদ্রিয়ানের কাছাকাছি থাকার জন্য এই প্রতিযোগিতায় তাকে টিকতেই হবে।

তানহা অহনার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,কোনো লাভ নাই সোনা।আমি জিরো দিয়েছি।ওরা দুইজন দশ দিলেও মোট ২০ হয়।কিন্তু অন্য মেয়েরা কমপক্ষে ২৪ না হয় ২৭ তো পেয়েছেই।

বিজয়ীর নাম ঘোষণা তানহাই করবে।কারণ সে বেশি আগ্রহী বিজয়ীর নাম ঘোষনা করার জন্য।আদ্রিয়ান সেজন্য ওর হাতেই পেপার টা দিলো।

তানহা খুশি মনে পেপার হাতে নিয়ে এনাউন্স করলো,যে আজকের বিজয়ী অ,,,।তানহা অহনার নাম দেখে চমকে উঠলো। এটা কি করে সম্ভব?অহনা কিভাবে হতে পারে?
সেজন্য তানহা আদ্রিয়ানে দিকে তাকালো।আদ্রিয়ান তখন বললো, কি হলো বল?
তানহা সেই কথা শুনে পেপার টা আদ্রিয়ানের হাতে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।আদ্রিয়ান তখন নিজেই অহনার নাম ঘোষণা করলো।

অহনা তার নাম শোনামাত্র একদম কেঁদেই ফেললো।সে সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিলো না।অহনার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এটা।সে আবার স্বপ্ন দেখছে না তো?এইজন্য পাশের মেয়েটাকে বললো, কিছু মনে না করলে আমাকে একটু চিমটি কাটবেন প্লিজ।মেয়েটি সেই কথা শুনে মুখ ভেংচিয়ে চলে গেলো।

আদ্রিয়ান তখন নিজেই অহনার কাছে চলে এলো।আর বললো কাল ঠিক দশটায় নাজ গার্ডেনে চলে আসবে।আর হ্যাঁ, অবশ্যই দশটায়।

অহনা মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো হুম।কারণ সে তার খুশি ধরে রাখতে পারছিলো না।

পরের দিন খুশির ঠেলায় ঠিক আট টায় অহনা নাজ গার্ডেনে চলে গেলো।কিন্তু নাজ গার্ডেনের গেটই খোলে নয় টায়।এখন এ এক ঘন্টা সে কি করে?সেজন্য কয়েকটা সেলফি তুলে সে ফেসবুকে পোস্ট করে।তারপর তার বান্ধুবীদের সাথে কথা বলে তবুও আর এক ঘন্টা শেষ হয় না।হঠাৎ অহনার মনে হয় সে তো কিছু খেয়ে আসে নি।সেজন্য খাওয়ার জন্য সামনের এক রেস্তোরায় চলে যায়।কিন্তু সেখানে যে ভীড় অহনা সেজন্য ভীড় ঠেলেই প্রবেশ করলো ভিতরে।আর এদিকে যে দশটা পার হয়ে গেছে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই সেদিকে।

হঠাৎ অহনা রেস্তোরাঁর দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বেজে দশ মিনিট বাজে।সে আর কই থাকে?তাড়াতাড়ি করে খাওয়া বাদ দিয়েই দিলো এক দৌঁড়।এদিকে পিছন দিক থেকে এক ছেলে চিল্লাতে চিল্লাতে বললো ম্যাডাম খাবারের বিল দিলেন না?
অহনা সেই কথা শুনে আবার ফিরে আসলো বিল দেওয়ার জন্য।এদিকে টাকাও খুচরা নাই।সেজন্য টাকার নোটটা ছেলেটার হাতে দিয়ে বললো বাকি টাকা পরে এসে নিয়ে যাবো।

#চলবে,

#প্রেম_প্রেম_খেলা
#পর্ব_০৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

অহনা শুটিং স্পটে যেতেই আদ্রিয়ান তাকে ধমক দিয়ে বললো,এতো দেরি হলো কেনো?ঠিক দশ টায় আসতে বলেছি না?
অহনা সেই কথা শুনে বললো, আপনি দশটাই আসতে বলেছেন কিন্তু আমি তো খুশির ঠেলায় সকাল আটটায় এসেছি।কিন্তু গেট খোলা না পেয়ে একটু খেতে গিয়েছিলাম।

আদ্রিয়ান অহনার এমন কথাবার্তা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগলো,এই পাগল মেয়েকে তার মিউজিক ভিডিও তে নিয়ে সে আবার ভুল করলো না তো?

হঠাৎ মেকাপ ম্যান আদ্রিয়ানের কাছে এসে বললো,স্যার এদিকে আসুন।আপনাকে রেডি করাতে হবে।আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে চলে গেলো।

অন্যদিকে অহনাকেও অন্য আরেকজন মেকাপ ম্যান নিয়ে গেলো।

অহনাকে পড়ানো হলো পিংক কালারের লেহেঙ্গা আর আদ্রিয়ান কে পড়ানো হলো ব্লাক কালারের শার্ট।দুইজন কে একসাথে দেখতে সেই সুন্দর লাগছিলো।চোখ ফেরানোই যাচ্ছিলো না।আদ্রিয়ান নিজেও বেশ অবাক হলো অহনাকে দেখে।এই কিছুক্ষন আগে যে মেয়েকে সে দেখলো এটা কি সেই মেয়েই?একদম চেনা যাচ্ছিলো না অহনাকে।

অহনা তো আদ্রিয়ানকে দেখে একদম ফিদা হয়ে গেলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো ইসঃ ইনিই কি তার পছন্দের সেই মানুষ। যাকে সে একদম সরাসরি দেখতে পারছে।সে আর দেরী না করে আদ্রিয়ানের কাছে দৌঁড়ে গিয়ে বললো, একটা সেলফি প্লিজ।

আদ্রিয়ান অহনার এমন কান্ড দেখে ওর হাত থেকে মোবাইল টা কেড়ে নিয়ে বললো,তুমি কি পাগল?না মানে তুমি এমন ছেলেমানুষী করো কেনো সবসময়?এখন কি সেলফি তোলার সময়?

অহনা সেই কথা শুনে বললো সরি,আর তুলতে চাইবো না।এই বলে অহনা মন খারাপ করে থাকলো।

আদ্রিয়ান অহনার গোমড়া মুখ দেখে ফোন টা ওকে দিয়ে দিলো।আর বললো,তাড়াতাড়ি ওঠাও।বেশি সময় নেই কিন্তু।

অহনা সেই কথা শোনা মাত্র সাথে সাথে ক্লিক ক্লিক করে কয়েক টা সেলফি উঠতে লাগলো।

শুটিং শুরু হয়ে গেলো।
আজ নাজ গার্ডেনে হচ্ছে।কাল হবে ঝরনার পাশে।পরশু হবে পাহাড়ে।এইভাবে মোট পাঁচ জায়গায় যেতে হবে তাদের।একেক দিন একেক জায়গায় যেতে হবে সেজন্য।

সবগুলো সিনে অহনা আর আদ্রিয়ান কে দূরে দূরেই দেখা যাবে।শুধু তারা ঠোঁট নাড়াবে।তবে শেষের দুইটি সিনে শুধু তারা একটু কাছাকাছি থাকবে।সেই সিন টি শেষের দিকে থাকবে।এই সিনটি করার জন্য আদ্রিয়ান আর অহনাকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হলো।

কিন্তু সিন দুইটি করতে আদ্রিয়ান রাজি ছিলো না।তখন ডিরেক্টর বললো একটু ঘনিষ্ঠ না হলে কেউ দেখবে না আপনার ভিডিও।ভিডিও তে এরকম দৃশ্য এখন অহঃরহঃ দেখা যায়।

আদ্রিয়ান ডিরেক্টরের কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো।প্রথম সিনটি ছিলো অহনার হাত ধরে টেনে তাকে তার কাছে আনতে হবে আর তার মুখ টা আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে ঠোঁট স্পর্শ করতে হবে।অহনা তখন লজ্জা পেয়ে চলে যাবে। কিন্তু আদ্রিয়ান আবার অহনাকে তার কাছে টেনে এনে এক ঝটকায় কোলে ওঠাবে।

আদ্রিয়ানের কাছে বেশ ডিফিকাল্ট লাগলো ব্যাপার টা।যেহেতু তার এটা প্রথম কাজ সেজন্য সে ভীষণ নার্ভাস ছিলো।এর আগের ভিডিওতে মেল ক্যারেক্টারে সানি আর উল্লাস ছিলো।কিন্তু এবার আদ্রিয়ানের বন্ধুরা আদ্রিয়ানকেই থাকতে বললো।তাহলে তার মিউজিক ভিডিও আরো বেশি হিট হবে বলে ধারণা করা হলো।

আদ্রিয়ান কে এভাবে ভাবতে দেখে সানি সাহস যোগাতে লাগলো আদ্রিয়ান কে।সে বললো,দোস্ত,এ আর কঠিন কি কাজ?দুই একদিন ট্রাই করলেই পেয়ে যাবি।
উল্লাস তখন বললো,ভাগ্যের কি পরিহাস?মেয়েটা জাস্ট তোর সাথে ছবি তুলতে চাইছিলো।আর আজ সে তোর পার্টনার।একসাথে তোর ভিডিও তে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে।
তানহা চুপচাপ। সে কিছু বলছে না।কারণ সে কিছুতেই আদ্রিয়ান কে অহনার পাশে দেখতে পারছে না।তার কেনো এতো হিংসা হচ্ছে সত্যি সে বুঝতে পারছে না।

হঠাৎ তানহা সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললো, আদি!তোর সাথে আমার একটা কথা আছে।

আদ্রিয়ান হেসে বললো, কি কথা?

তানহা তখন বললো আমি আলাদা ভাবে বলতে চাই কথাটা।

উল্লাস সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,তুই আবার আলাদা ভাবে কিসের কথা বলবি?মানুষ তো প্রেম ভালোবাসার কথা আলাদা ভাবে বলে।

উল্লাসের কথা শুনে সবাই অবাক হলো।এদিকে তানহা উল্লাসের কথা শুনে রাগ করে সেখান থেকে চলে গেলো।

আদ্রিয়ান তখন বললো, তানহা শোন!কি বলতে চাইছিলি?আমি শুনবো।
কিন্তু তানহা আর দাঁড়ালো না।

আদ্রিয়ান তখন উল্লাস কে বললো,দোস্ত এভাবে ওর মন টা খারাপ করে দিলি কেনো?

–আমি কি এমন বললাম?

হঠাৎ অহনা দরজায় দাঁড়িয়ে বললো মে আই কাম ইন?

অহনাকে দেখে সবাই ওর দিকে তাকাতে লাগলো।অহনাকে আদ্রিয়ান নিজেই ডেকেছে।কারণ আজ তাদের প্রাকটিস করতে হবে।

সানি অহনাকে দেখে বললো, কেমন আছো অহনা?

–জ্বি ভালো।

;আদ্রিয়ানের কাছাকাছি এসে কেমন লাগছে তোমার?

অহনা সেই কথা শুনে বললো কি বলছেন এসব?

সানি তখন বললো তুমি তো এটাই চাইছিলে।আদ্রিয়ানের সাথে তোমার একদিন দেখা হবে,তার সাথে এক গাদা সেলফি উঠবে,তাকে তোমার বয়ফ্রেন্ড বানাবে।

আদ্রিয়ান সানির কথা শুনে বললো, স্টপ! কি বলছিস সানি?

–কিছু না।তোরা তোদের কাজ চালিয়ে যা।
চল উল্লাস।এই বলে সানি উল্লাসের হাত ধরে বেড়িয়ে গেলো।

আদ্রিয়ান তখন অহনার কাছে এসে তাকে ধমক দিয়ে বললো, তুমি সত্যি এই কথা বলেছো?

অহনা তখন তোতলাতে তোতলাতে বললো কোন কথা?

–তুমি নাকি আমাকে তোমার বয়ফ্রেন্ড বানাতে চাও?

অহনা আদ্রিয়ানের প্রশ্ন শুনে চুপ করে রইলো।

আদ্রিয়ান তখন আবার জোরে করে একটা ধমক দিয়ে বললো, কি হলো?চুপ করে আছো কেনো?

অহনা তখন বললো হুম বলেছি।কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি।

আদ্রিয়ান অহনার কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলো।সে তখন অহনার একদম কাছে গিয়ে বললো, তুমি আমার মিউজিক ভিডিওর জাস্ট একজন পার্টনার।তোমাকে চুজ করেছি কারণ তুমি সবদিক দিয়ে মোটামুটি পারফেক্ট আছো।তাই বলে এটা ভেবো না আমি তোমাকে পছন্দ করি,আর তোমাকে ভালোবাসি বিধায় এই মিউজিক ভিডিও তে সুযোগ দিয়েছি।তাছাড়া তোমাকে আমার পার্টনার করার আরো একটা কারন আছে।

তোমার পাগলামির কারনে ইতোমধ্যে তুমি ভাইরাল।অনেকেই মনে করে আমাদের দুইজনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে।এই সুযোগ টা আমি কাজে লাগাতে চাই।যাতে করে আমার ফাস্ট মিউজিক ভিডিও টা হিট হয়।বুঝেছো?

অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে একদম কেঁদে ফেললো। সে তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো আমি করবো না কোনো কাজ।আমি চললাম।

আদ্রিয়ান তখন অহনার হাত ধরে তার কাছে টেনে এনে বললো, সেটা সাইন দেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিলো।তুমি পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিতে সাইন করেছো।এখন চাইলেও তুমি এখান থেকে বের হতে পারবে না।এই পাঁচ বছর তোমাকে আমার মিউজিকেই কাজ করতে হবে।তবে আমি আর থাকবো না।নেক্সট টাইম তোমার শুটিং সানির সাথে হবে।তারপর উল্লাসের সাথেও একটা ভিডিও হবে।

অহনা সেই কথা শুনে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। কারণ সে আদ্রিয়ান ছাড়া আর কারো সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক নয়।আদ্রিয়ান এইভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দেবে সত্যি ওর মাথাতেই ঢোকে নি এটা।

আদ্রিয়ান আর অহনা প্রাকটিস করতে লাগলো।

আদ্রিয়ান অহনার হাত ধরে টেনে তার কাছে এনে তার মুখ মন্ডল স্পর্শ করতে লাগলো।তারপর অহনার ঠোঁট স্পর্শ করতে লাগলো।
কিন্তু অহনা তার কাজে মনোযোগী ছিলো না।সে তার জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
আদ্রিয়ান তখন বললো কি হলো অহনা?
কাজে মনোযোগ দাও।
অহনা সেই কথা শুনে সরে গেলো।তারপর আদ্রিয়ান অহনার হাত ধরে টেনে তাকে কোলে তুলে নিলো।কিন্তু বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারলো না।সাথে সাথে ছেড়ে দিলো।
প্রায় দুই ঘন্টা ধরে তারা এটা প্রাকটিস করতে লাগলো।

তবে অহনার ভীষণ মন খারাপ ছিলো।আদ্রিয়ান তার এতো কাছাকাছি থেকেও সে আনন্দ পাচ্ছে না মোটেও।কারন যে জন্য সে আদ্রিয়ানের সাথে মিউজিক ভিডিও তে কাজ করছে তার তো সে ইচ্ছা কখনোই পূরন হবে না।কারণ আদ্রিয়ান তো তাকে পছন্দই করে না।শুধু মাত্র তার মিউজিক হিট হওয়ার জন্য তাকে নিয়েছে এই ভিডিও তে।কিন্তু অহনা ভেবেছিলো হয় তো আদ্রিয়ান ও তাকে পছন্দ করে।এজন্যই তো তাকে সুযোগ দিয়েছে তার পার্টনার হওয়ার।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

অবশেষে আদ্রিয়ানের মিউজিক ভিডিও টা রিলিজ হয়ে গেলো।ভিডিওর প্রধান আকর্ষন আদ্রিয়ান আর তার গান।তবে তার চেয়েও বেশি আকর্ষন ছিলো অহনা।কারণ ইতোমধ্যে অহনা কে নিয়ে রোজ রোজ নিউজ হচ্ছে।
কেনো আদ্রিয়ান অহনাকেই তার পার্টনার করলো।তাহলে কি আদ্রিয়ান আর অহনার মধ্যে রিলেশন আছে?কেউ কেউ বলছে বাহঃ বেশ মানিয়েছে তাদের।আবার অনেক মেয়ের হৃদয় ভেংগে চুরমারও হয়ে গিয়েছে।কেউ আবার মেনে নিতে পারছে না আদ্রিয়ানের গার্লফ্রেন্ড কে।

এ বছরে যতগুলো মিউজিক ভিডিও রিলিজ হয়েছে তার মধ্যে আদ্রিয়ানের মিউজিক ভিডিও টা সবচেয়ে বেশি হিট হলো।এর আগে সে অনেক মিউজিক ভিডিও বানিয়েছে।কিন্তু এবার সবচেয়ে বেশি হিট হলো।

এবার আদ্রিয়ানের মুখে মিউজিক টার ব্যাপারে জানার জন্য মিডিয়ার লোকেরা এসে ভীড় ধরলো।আর তাকে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।

–যেহেতু এটা আপনার প্রথম কাজ, কেমন লেগেছে?

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো, অসম্ভব ভালো লেগেছে।নায়ক হওয়া যে কত টা কঠিন তা এই কাজটা না করলে আমি জানতেই পারতাম না।খুব এনজয় করেছি কাজ টা।

কথায় কথায় মিডিয়ার লোকেরা অহনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো।তার সাথে কোনো রিলেশন আছে কিনা?সেটাও জানতে চাইলো।

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, এটা সম্পূর্ণ একটা গুজব।তবে মেয়েটা আমার একজন পাগল ফ্যান।সেজন্যই তাকে চুজ করা হয়েছে।তার সাথে আমার কোনো রিলেশন নাই।এই বলে আদ্রিয়ান চলে গেলো।

অন্যদিকে অহনা তার বাসায় বসে কাঁদতে লাগলো।তার মিউজিক ভিডিও হিট হওয়ার কারনেও তার মনে একটুও আনন্দ নেই।কারণ পরবর্তী কাজ তার সানির সাথে আছে।সে এখন কি করবে? আর কিভাবে এই কাজটা আটকাবে সেটাই ভাবতে লাগলো।তবে আদ্রিয়ান যে কত বড় একজন স্বার্থপর ছেলে তার সেটা জানা হয়ে গেলো

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here