প্রেম_প্রেম_খেলা,১১,১২

#প্রেম_প্রেম_খেলা,১১,১২
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
১১

তানহা যে আদ্রিয়ান কে ভালোবাসে সেটা আমি শিওর না।তবে ওর ভাবসাব দেখে বোঝা যায় সে আদ্রিয়ান কে ভালোবাসে তবে এখনো প্রকাশ করে নি সেটা।সানি ছেলেটা উপরে উপরে ভালো হলেও পুরাই ক্যারেক্টারলেস ছেলে একটা।ওর সাথে শুটিং করার সময় ওর অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শতেই আমি বুঝেছি সেটা।তাছাড়া তার সাথে যখন আমি চ্যাটিং করি সে এক দিনেই পটে গিয়েছিলো আর আমার সাথে মিট করতে চাইছিলো।উল্লাস আর লিথিকে সন্দেহের বাহিরেই রাখলাম।কারণ এরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে।তাছাড়া যথেষ্ট ভালোও আছে। এদের কোনো খারাপ দিক এখনো আমার চোখে পড়ে নি।আর টিনার ব্যাপারে এখনো কিছু বুঝতে পারছি না।সে এদের সাথে বেশি একটা ঘনিষ্ঠ না।মাঝেমধ্যে দেখা যায় তাকে।

—আদ্রিয়ান?ওর ব্যাপারে কি জানলে?

অহনা এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আর বললো এই বেটার চরিত্র পুরোপুরিই ভালো আছে।তাকে অনেকভাবে পটানোর ট্রাই করেছি বাট সে পটে নি।তবে সে খুব স্বার্থপর একটা ছেলে।স্বার্থের জন্য যে কাউকে ব্যবহার করতে পারে আবার স্বার্থ শেষ হলে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতেও পারে।

–মিঃ আতিক হাসান আর তমালিকা খন্দকার কে দেখে কি মনে হলো?

;ওনারা ভীষণ ভালো মানুষ। আমাকে তো একদম নিজের মেয়ের মতো দেখেছে।এখন অবশ্য আর মেয়ে ভাবে না।যেই শুনেছে আমি মোহনার বোন তখনি তাদের মুখচোখ কেমন যেনো অমাবস্যার চাঁদের ন্যায় অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।মনে হয় ওনারা মোহনা আপুকে পছন্দ করতেন না।

ইন্সপেক্টর অনিল অহনার মুখে সবার সম্পর্কে এসব বিস্তারিত শুনে বললো,আগেই তোমার পরিচয় দেওয়া উচিত হয় নি তাদের।আরো কিছুদিন অভিনয় টা চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো।

অহনা তখন বললো আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না অনিল।কারণ আদ্রিয়ান মোহনা আপুর প্রতি এতোবেশি ভালোবাসা দেখাচ্ছিলো যে তখন আমার পক্ষে চুপ থাকা সম্ভব হয় নি।

অনিল তখন বললো দেখো অহনা তুমি আদ্রিয়ান কে নিয়ে সন্দেহ করছো তো কিন্তু আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান সত্যি মোহনাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো।তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে দূরে রাখো।ও বেচারা মোহনাকে এখনো ভালোবাসে তা না হলে তোমার মতো মেয়েকে সে পাত্তা না দিয়ে কিভাবে ছিলো?তুমি বরং ওর বন্ধুদের দিকে নজর দাও ভালো করে।কারণ এরা সবাই মোহনার সাথে একই ভার্সিটিতে পড়েছে।হয় তো হিংসার বশে এরাই কিছু করেছে।

অহনা তখন বললো কিন্তু আদ্রিয়ান যে তার স্বার্থের জন্য আমাকে ইউজ করতে চাইছিলো।আমার সাথে সেও এতোদিন প্রেম প্রেম খেলা খেললো তার কি হবে?

অনিল তখন বললো মোহনাকে ভালোবাসার পিছনে আদ্রিয়ানের কি স্বার্থ থাকতে পারে?

“সেটা তো আমিও ভাবছি।জানলে কি আর তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম?

অনিল হলো অহনার মামাতো ভাই।সে একজন পুলিশ অফিসার।কিছুদিন হলো জয়েন করেছে সে।এই অনিলের সাহায্য নিয়েই অহনা তার বোনের অপরাধী কে খুঁজে বেড়াচ্ছে।যে তমালের সাথে মোহনা হোটেলে ধরা পড়েছে সে কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে।তমাল থাকলে এতোদিন আসল অপরাধী কে তারা ধরে ফেলতো।

এক মাস পরের ঘটনা,

অহনা তার বান্ধুবীদের নিয়ে শপিং করতে গিয়েছে।হঠাৎ অহনা খেয়াল করলো সকল মেয়ে জটলা পাকিয়ে কি যেনো করছে।অহনা আর তার বান্ধুবীরা তাড়াতাড়ি করে সেখানে এগিয়ে গেলো।
কিন্তু টুশু হঠাৎ দুলাভাই দুলাভাই বলে চিৎকার করে উঠলো।
কারণ ওখানে আদ্রিয়ান ছিলো।সেজন্য মেয়েরা তার সাথে সেলফি ওঠার জন্য ভীড় জমিয়েছে।

টুশুর চিৎকার শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো।এবার মেয়েগুলো অহনাকে দেখতে পেয়েও তার সাথে ছবি উঠতে চাইলো।
কারন এখন সবাই জানে অহনা আর আদ্রিয়ান রিলেশনে আছে।

হঠাৎ এক মেয়ে জিজ্ঞেস করলো স্যার ম্যাম কে আবার আপনার সাথে কবে দেখবো?

আদ্রিয়ান আর অহনা সেই কথা শুনে চুপ করে রইলো।কারণ দুইজনই জানে এটা আর কখনোই সম্ভব না।
কিন্তু টুশু তখন বললো এখন ভিডিও তে না দেখা গেলেও কিছুদিন পর তাদের সরাসরি হাজব্যান্ড ওয়াইফ হিসেবেই দেখা যাবে।

টুশুর কথা শোনামাত্র অহনা তাকে সরে নিয়ে এলো আর বললো টুশু,সবার সামনে কি সব বলছিস?জানিস না তুই যেখানে সেখানে এসব বলা ঠিক না।কারণ আদ্রিয়ান আর আমাকে কে নিয়ে যেটাই বলবি সেটাই নিউজ হয়ে যাবে।

টুশু সেই কথা শুনে বললো, নিউজ হলে কি হবে?তোরা যে রিলেশনে আছিস সেটা তো সবাই জানে।

এদিকে সনিয়া আর অর্পা আদ্রিয়ান কে দেখে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে।তারা তো জিজু জিজু বলতে বলতে পাগলরের মতো অবস্থা।
আদ্রিয়ান সবার সামনে কিছু বলতেও পারছে না।সেজন্য সে এড়িয়ে গেলো সবাইকে।আর তার গাড়িতে গিয়ে বসলো।

সনিয়া আর অর্পা আদ্রিয়ান কে এভাবে চলে যাওয়া দেখে অহনা কে বললো, জিজু আমাদের সাথে কথা বললো না কেনো?
টুশু তখন বললো, উনি পাবলিক প্লেসে আমাদের সাথে কথা বলবেন না।দেখলি না অহনার সাথেই কথা বললো না।
অহনা সবার কথা শুনে এবার ভীষণ রেগে গেলো।সে তখন টুশু অর্পা আর সনিয়াকে সব সত্য কথা বলে দিলো।আর বললো কখনোই আদ্রিয়ান কে নিয়ে আর কিছু বলবি না তোরা।না আমি ওনাকে ভালোবাসি, না উনি আমাকে ভালোবাসে।সবটাই একটা গেম ছিলো।এই বলে অহনাও চলে গেলো।

টুশু অর্পা আর সনিয়া তো অবাক।তাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না অহনার কথা।এটা কি করে সম্ভব?যে অহনা রাতের পর রাত আর দিনের পর দিন আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান বলে পাগলামি করতো সেটা নাকি সম্পূর্ণ টাই তার নাটক ছিলো।

আদ্রিয়ান ডাইরেক্ট তার বাসায় চলে গেলো।কিন্তু বাসাই যেতেই দেখে তানহার বাবা মা এসেছে।আদ্রিয়ান সবাইকে সালাম দিয়ে আর তাদের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে নিজের রুমে চলে গেলো।তার কেনো জানি ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে।

এদিকে তমালিকা খন্দকার আদ্রিয়ান কে রুমে যাওয়া দেখে নিজেও পিছু পিছু এলেন।আর বললেন, বাবা তুই কি ফ্রি আছি?
আদ্রিয়ান কোনো উত্তর দিলো না।সে আনমনে বাহিরের দিকেই তাকিয়ে থাকলো।তমালিকা আদ্রিয়ান কে চুপচাপ থাকা দেখে বললো,
তানহার বাবা মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,বিয়ে?কার বিয়ে?

তমালিকা তখন বললো কার আবার?তোর বিয়ে।তানহা নাকি তোকে পছন্দ করে।কিন্তু বলার সাহস পায় নি।সেজন্য সে তার বোনকে বলে।তখন তার বোন তানহার বাবা মাকে বললে ওনারা সোজা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন।

আদ্রিয়ান তানহার সাথে তার বিয়ের কথা শুনে হা হা করে হেসে উঠলো। আর বললো মা ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড হয়।ফ্রেন্ড কে আবার কেউ বিয়ে করে নাকি?

–কিন্তু তানহা তো তোকে শুধু ফ্রেন্ড ভাবে না।ও তোকে লাভ করে।আমার মনে হয় ওর ভালোবাসাকে তোর অবমাননা করা ঠিক হবে না।তাহলে ও ভীষণ কষ্ট পাবে।

আদ্রিয়ান তার মায়ের কথা শুনে তানহাকে কল দিলো।আর বললো, এসব কি শুনছি তানহা?তুই নাকি আমাকে লাভ করিস?
তানহা আদ্রিয়ানের কথা শুনে বললো, হ্যাঁ করি।কিন্তু তোকে বলার সাহস আমার হয় নি।

আদ্রিয়ান তখন বললো, দেখ তানহা তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হস।তোকে আমি কি করে বিয়ে করতে পারি?

তানহা তখন বললো মোহনাও তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।তাহলে ওকে কেনো বিয়ে করতে চাইছিলি?,

আদ্রিয়ান এবার আর কোনো উত্তর দিলো না।

তানহা তখন বললো, তুই আমাকে পছন্দ করিস না সেটা বললেই তো হয়,এতো অজুহাত দেওয়ার কি আছে?আমি মনে হয় বুঝি না কিছু?তুই মোহনার বোন অহনার প্রেমে পড়েছিস তাই না?
এই বলে তানহা কল কেটে দিলো।

আদ্রিয়ান সেজন্য আবার কল দিলো।কিন্তু তানহা রিসিভ করলো না কল।

আদ্রিয়ান তখন সানিকে কল দিলো।আর বললো দেখ তো দোস্ত তানহা কি রকম ছেলেমানুষী শুরু করেছে।ও নাকি আমাকে ভালোবাসে।আর বিয়ের জন্য আমার বাসায় ওর বাবা মাকে পাঠায়ছে।

সানি সেই কথা শুনে বললো, সত্যি বলতে কি দোস্ত,তানহা তোকে অনেক আগে থেকেই লাভ করে।আমাদের ও বলেছে।

–তোরাও জানতিস?

“হ্যাঁ জানতাম।আমরা তোকে বলতেও চাইছিলাম।কিন্তু তানহা বলতে বারণ করে দিয়েছে।কারণ তানহা তোর বলার অপেক্ষাতেই ছিলো এতোদিন।সে ভেবেছে তুই নিজে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিবি।

আদ্রিয়ান তখন বললো কিন্তু তানহাকে তো আমি শুধু ফ্রেন্ডই ভাবি।ওকে আমি স্বপ্নেও প্রেমিকা হিসেবে ভাবতে পারি না।

সানি তখন বললো, দেখ দোস্ত,তানহা আমাদের অনেক দিনের ফ্রেন্ড।তুই তো ওর ব্যাপারে সব জানিস।আর ও তোর ব্যাপারে সব জানে।তুই যদি তানহার সাথে তোর বাকি জীবন টা কাটাস মনে হয় না খুব বেশি খারাপ হবে।এটা আমি আমার নিজস্ব মতামত দিলাম।এখন তোর লাইফ, তুই কাকে তোর জীবনের সাথে জড়াবি সেটা তোর ব্যাপার।

আদ্রিয়ান সানির প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে কল টা কেটে দিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।কেনো জানি তার জীবন টা খুব এলোমেলো লাগছে।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

রাত তিনটার সময় ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখে আদ্রিয়ানের ঘুম ভেংগে গেলো।সে দেখতে পেলো মোহনা তার বুকে ছুড়ি বসিয়ে দিচ্ছে।স্বপ্ন টা দেখামাত্র আদ্রিয়ান লাফ দিয়ে উঠলো বিছানা থেকে।তারপর সে এক গ্লাস পানি পুরোটাই খেয়ে ঘরের লাইট অন করে দিলো।আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো না সে কেনো মোহনাকে দেখলো?মোহনা মারা যাওয়ার পর একদিনও সে মোহনাকে স্বপ্নে দেখে নি।আজ হঠাৎ করে মোহনাকে সে দেখলো সেটাও আবার এই ভয়ংকর রুপে?

আদ্রিয়ান তখন তার পুরাতন ডায়রি টা বের করলো।আর মোহনার একটা ছবি হাতে নিয়ে অপলক ভাবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।আর বললো,
আমাকে একা রেখে কোথায় হারিয়ে গেলে এভাবে?আমি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই মোহনা।ফিরে এসো মোহনা।না হলে আমাকেই নিয়ে যাও তোমার কাছে।
এই বলে আদ্রিয়ান কাঁদতে লাগলো।আদ্রিয়ানের চোখের পানি টপটপ করে মোহনার ছবির উপর পড়লো।

চলবে,

#প্রেম_প্রেম_খেলা(১২)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

দোস্ত,আমি বলি কি তুই রাজি হয়ে যা।তা না হলে তানহা কিন্তু আবার খারাপ কিছু করে বসবে।কেউ ভালোবাসলে তার মূল্য দিতে হয়।তাছাড়া তানহা তো বাহিরের কোনো মেয়ে নয়।তোরই তো বেস্ট ফ্রেন্ড সে।

উল্লাস আর লিথি এইভাবে বোঝাতে লাগলো আদ্রিয়ান কে।আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না তার এখন কি করা উচিত।কিন্তু সে তো তানহাকে বউ হিসেবে মানতেই পারছে না।

এদিকে আদ্রিয়ানের বাবা মাও তানহার বাবা মাকে আশ্বাস দিয়েছে যে করেই হোক এই বিয়েতে তারা আদ্রিয়ান কে রাজি করাবেই।আর তারা আদ্রিয়ান কে এভাবে একা থাকতে দেবে না।

তানহার বাবা মা সেই কথা শুনে ভীষণ খুশি হলেও তানহা খুশি হতে পারলো না।কারণ আদ্রিয়ান যে তাকে পছন্দ করে না।এইভাবে জোর করে কি আদ্রিয়ান কে বিয়ে করা ঠিক হবে তার?তবুও সে লেগেই থাকবে যতদিন না আদ্রিয়ান তাকে গ্রহন করছে।কারণ আদ্রিয়ানের বউ হওয়ার অধিকার একমাত্র তারই আছে।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

আদ্রিয়ান তার নেক্সট মিউজিক নিয়ে ব্যস্ত আছে। সানি আর উল্লাস তাদের নেক্সট মডেল কে ইতোমধ্যে সিলেক্ট করেও ফেলছে।তার মধ্যে বাসার সবাই আদ্রিয়ানের বিয়ে নিয়ে পড়ে আছে।শুধু বাসা নয় তার ফ্রেন্ডরাও ইতোমধ্যে আদ্রিয়ানের বিয়ে নিয়ে উঠেপড়ে লাগছে।কেউ আর আদ্রিয়ান কে সিংগেল দেখতে চাচ্ছে না।কিন্তু আদ্রিয়ান বিয়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।তার বিয়ে নিয়ে সবার মাথা ব্যাথা থাকলেও আদ্রিয়ানের সেদিকে কোনো মাথাব্যথা নেই।কথায় আছে না যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া-প্রতিবেশীদের ঘুম নাই।সেইরকম অবস্থা হয়েছে আদ্রিয়ানের ক্ষেত্রে।

হঠাৎ শুটিং স্পটে অহনা আসলো।অহনাকে দেখে সবাই বেশ অবাক হলো।কারণ সবাই এখন অহনার পরিচয় জানে।সেজন্য অহনাকে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।

অহনাকে দেখামাত্র আদ্রিয়ান এগিয়ে আসলো।আর বললো তুমি এখানে?

অহনা তখন বললো আপনি বোধ হয় ভুলে গেছেন আদ্রিয়ান সাহেব।আপনার মিউজিক ভিডিও তে কাজ করার জন্য আমাকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে সাইন করেছেন আপনি?কিন্তু আপনি তো সে আইন ভঙ্গ করে নিউ মডেল দিয়ে কাজ করছেন।

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো কিন্তু তুমি তো সানি বা উল্লাস কারো সাথে কাজ করবে না বলে জানিয়েছো।সেজন্য আমরা নিউ মডেল খুঁজে নিয়েছি।

অহনা তখন বললো আমি রাজি আছি।আপনার যার সাথে মন চায় তাকে আমার অপোজিটে রাখতে পারেন।

আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না হঠাৎ অহনা তার সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করছে কেনো?এ আবার কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আসলো?

আদ্রিয়ান তখন মেকাপ ম্যানকে বললো উল্লাস আর অহনাকে কুইকলি রেডি করে আনো।

উল্লাস তখন বললো দোস্ত এই কাজ টা তো সানির করার কথা।তুই আমাকে করতে বলছিস কেনো?

আদ্রিয়ান তখন বললো সানিকে দিয়ে নেক্সট মিউজিক টাতে কাজ করাবো।

উল্লাস সেই কথা শুনে বললো সানি কিন্তু রেগে যাবে শুনে।সে তো ইতোমধ্যে রেডিও হয়েছে।

আদ্রিয়ান তখন বললো আমি তোকে যা বললাম সেটাই কর। আমার কাজ আমি কাকে দিয়ে করাবো সেটা আমার ব্যাপার।

উল্লাস সেই কথা শুনে আর কোনো কথা বললো না।সে চলে গেলো রেডি হতে।

এদিকে আদ্রিয়ান সানির কাছে চলে গিয়ে বললো দোস্ত এই মিউজিক ভিডিও টা উল্লাস কে দিয়ে করাতে চাচ্ছি তুই কি বলিস?

সানি সেই কথা শুনে বললো, আমি রেডি হইছি।আর তুই এতোক্ষন দিয়ে সেই কথা বলছিস?

আদ্রিয়ান তখন বললো দোস্ত রাগ করিস না প্লিজ।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে অহনার সাথে উল্লাসের জুটিটা বেশ মানাবে।

–অহনা?অহনা আবার এলো কোথা থেকে?

আদ্রিয়ান তখন বললো অহনাকে তো পাঁচ বছরের চুক্তিতে সাইন করা হয়েছিলো।সেজন্য অহনা সেই দাবি নিয়ে এসেছে।

সানি তখন বললো হ্যাঁ তা তো আসবেই।কিন্তু আমাকে বাদ দিচ্ছিস কেনো?

আদ্রিয়ান সানির প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারলো না।

সানি তখন বললো কি রে কথা বলছিস না কেনো?আমি অহনার সাথে ভিডিওতে থাকলে প্রবলেম টা কোথায়?

আদ্রিয়ান তখন বললো অহনা তোকে পছন্দ করে না সেজন্য।

আদ্রিয়ানের কথা শুনে সানির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।সে চিৎকার করে বললো, এখন কি অহনার কথামতো আমাদের চলতে হবে?না আমরা যেটা ডিসাইড করবো সেটা হবে?

আদ্রিয়ান তখন সানির হাত ধরে বললো দোস্ত,সামন্য বিষয় নিয়ে এতো রাগারাগি করছিস কেনো?

সানি তখন আদ্রিয়ানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, এটা তোর কাছে সামান্য বিষয় মনে হচ্ছে?কিন্তু এটা আমার মানসম্মানের বিষয়।তুই কিন্তু আমাকে ছোট করতে চাচ্ছিস আদ্রিয়ান।

আদ্রিয়ান সানির কথা শুনে আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে আবার শুটিং স্পটে চলে আসলো আর বললো আজ কোনো শুটিং হবে না।

আদ্রিয়ান কথা শুনে সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো হঠাৎ করে কেনো এই সিদ্ধান্ত?

আদ্রিয়ান তখন জানালো একসাথে তার দুইটা মিউজিক ভিডিও আসবে।সেজন্য এই শুটিং টা আপাতত স্থগিত করা হলো।এই বলে আদ্রিয়ান গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।

আদ্রিয়ানের এমন ডিসিশনে সবাই বেশ অবাক হলো।বিশেষ করে অহনা।অন্যদিকে সানিও রাগ করে শুটিং স্পট থেকে বের হয়ে গেলো।

উল্লাস তখন লিথিকে বললো,দেখিস দুই বন্ধুর মধ্যে আবার একটা ঝামেলা হবে।ঠিক যেমন মোহনাকে নিয়ে একবার হয়েছিলো।
লিথি তখন বললো সেটাই তো দেখতিছি।এখন মোহনা নাই কিন্তু অহনার কারনে ঝামেলা হচ্ছে।ব্যাপার টা খুব অদ্ভুত লাগছে তাই না?

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

আজও তানহার বাবা মা এসেছে।কিন্তু আজ ওনারা একাই আসে নি।সাথে তানহাও আছে।আদ্রিয়ান বাসায় প্রবেশ করতেই তমালিকা খন্দকার বললো, বাবা আদ্রিয়ান এদিকে আয়।

আদ্রিয়ান তার আম্মুর কথামতো এগিয়ে যেতেই আদ্রিয়ানের বাবা মিঃ আতিক বললো, তানহার বাবা মা চাচ্ছে আজকেই তোদের এনগেজমেন্ট টা সম্পূর্ণ করতে।তুই কি বলিস?

আদ্রিয়ান তার বাবাকে বললো,তোমাদের যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো।
মিঃ আতিক তখন বললো,বাবা এভাবে বলছিস কেনো?
আদ্রিয়ান তখন বললো আমাকে ছাড়াই যখন আমার পার্টনারকে নিজেরাই ঠিক করেছো তাহলে বাকি কাজও আমাকে ছাড়াই সম্পন্ন করো।
মিঃ আতিক তখন বললো, তাহলে তুই কি তানহা কে বিয়ে করতে চাচ্ছিস না?
আদ্রিয়ান তখন ডাইরেক্ট বলে দিলো,না।
–তাহলে কাকে বিয়ে করবি?
“” কাউকেই না।এই বলে আদ্রিয়ান তার রুমে চলে গেলো।

মিঃ আতিক আর মিসেস তমালিকা খন্দকার পড়ে গেলো মহা বিপদের মধ্যে।এদিকে তানহারাও এসেছে।ওনারা কি করবেন এখন বুঝতে পারলেন না।

তানহা আদ্রিয়ান কে আসা দেখে ওর রুমে প্রবেশ করলো। কিন্তু আদ্রিয়ান তার রুমে ছিলো না।তানহা তখন আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান বলে ডাক দিলে আদ্রিয়ান বেলকুনি থেকে চলে আসলো।

তানহাকে দেখামাত্র আদ্রিয়ান বললো,
তুই আমাদের এতো দিনের বন্ধুতের সম্পর্ক কি কারণে নষ্ট করতে চাচ্ছিস তানহা?এইভাবে কি কাউকে জোর করে ভালোবাসা যায়? না কাউকে জোর করে বিয়ে করা যায়?

তানহা আদ্রিয়ানের কথা শুনে প্রায় কেঁদেই ফেললো।

আদ্রিয়ান এবার শান্তস্বরে বললো,দেখ তানহা আমরা তো বন্ধু,তাহলে বন্ধুর মতো থাকি না কেনো?

তানহা আদ্রিয়ানের কথা শুনে বললো,কিন্তু আন্টি আর আংকেল যে বললো তুই নিজে রাজি হয়েছিস,সেজন্য ওনারাই আমাদের বাসায় আসতে বললো।

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,বাবা মা মনে হয় পাগল হয়ে গেছে।সেজন্য এভাবে বলেছে।আমি আবারও বলছি আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না।আর তোকে তো করবোই না।তুই তো জানিস তানহা জোর করে কখনো কোনো সম্পর্ক গড়ানো যায় না।মনের মিল টা সবার আগে প্রয়োজন।

তানহা আদ্রিয়ানের কথা শুনে আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।

তানহাকে চলে যাওয়া দেখে মিঃ আতিক হাসান আর তমালিকা খন্দকার একসাথে চিৎকার করে বললো কি বলেছিস তানহাকে?কেনো ও এভাবে চলে গেলো?

আদ্রিয়ান চুপ হয়ে রইলো।

তখন তমালিকা খন্দকার বললেন,তোর মতলব টা কি বলবি একটু?তুই আসলে কাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস?না আবার অহনাকে বিয়ে করার কথা ভাবছিস?যদি অহনাকে বউ করার কথা ভেবে থাকিস তাহলে সেটা তোর ভাবনাতেই রেখে দে।

আদ্রিয়ান তমালিকা খন্দকারের কথা শুনে বেশ অবাক হলো।সে তখন বললো, মাম্মি তুমি এভাবে বলছো কেনো?না মানে এতোদিন তো অহনাকে একদম ছেলের বউ এর মতোই দেখতে তা হঠাৎ অহনার উপর এতো রাগান্বিত কেনো?

তমালিকা খন্দকার এবার আর উত্তর দিতে পারলেন না।

তখন আতিক সাহেব বললো,বাবা এরকম জিদ করিস না।মাথাটা একটু ঠান্ডা কর।তানহাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা।তা না হলে আমাদের মানসম্মান একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে।আমরা যে তানহার বাবা মাকে কথা দিয়েছি।

আদ্রিয়ান তখন বললো বাবা তুমি বুঝতে পারছো না কেনো?বিয়ে টা কি ছেলে খেলা নাকি?যে চাইলেই যাকে তাকে জীবনসঙ্গী রুপে বেছে নেওয়া যায়?তানহা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,এই পর্যন্ত ঠিক আছে।কিন্তু ওকে আমি কখনোই বিয়ে করতে পারবো না।

মিঃ আতিক সাহেব তখন চিৎকার করে বললো তাহলে কি সত্যি সত্যি তুই অহনাকেই বিয়ে করতে চাচ্ছিস?শোন বাবা!অহনাকে বিয়ে করলে কিন্তু আমাদের বাপ ছেলের সম্পর্ক চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যাবে।আমি কখনোই ওই মেয়েকে তোর বউ হিসেবে দেখতে পারবো না।

আদ্রিয়ান তার মায়ের কথা শুনে যেমন অবাক হলো তেমনি তার বাবার কথা শুনেও সেইরকম অবাক হলো।তার বাবা মা হঠাৎ অহনাকে এতো অপছন্দ করছে কেনো?অহনার কথা কেনো তারা সহ্য করতেই পারছে না?অহনা মোহনার বোন দেখে না এর পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে।
আদ্রিয়ান তো স্বপ্নেও অহনাকে বিয়ের কথা ভাবে নি কখনো তাহলে তার বাবা মা কেনো এতো অহনা অহনা করছে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here