প্রেম_প্রেম_খেলা,১৩,১৪

#প্রেম_প্রেম_খেলা,১৩,১৪
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
১৩

অহনাকে হঠাৎ করে মিঃ আতিক হাসান আর মিসেস তমালিকা খন্দকার কেনো এতো অপছন্দ করছে সেই রহস্য উদঘাটন করার আগেই আদ্রিয়ান কে বিয়ে করতে হচ্ছে তানহাকে।
কারণ তানহাকে বিয়ে না করলে সে নাকি আত্নহত্যা করবে।তানহার এই হুমকি শুনেও আদ্রিয়ান বিয়েতে মোটেও রাজি ছিলো না।
কিন্তু আদ্রিয়ানের বাবা মা খুব বেশি জোরাজোরি করছিলো তাকে।শেষ পর্যন্ত তারা এমন একটা কথা বললো যে আদ্রিয়ান হ্যাঁ বলে দিলো।আদ্রিয়ানের বাবা মা বললো,
যদি তুই আমাদের আপনজন ভেবে থাকিস বা আমাদের কে যদি তোর বাবা মা মনে করিস তাহলে আশা করি আমাদের সিদ্ধান্তে না বলবি না।আমরা তোর বাবা মা হই।সেজন্য তোর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের।তোর জন্য তানহাই বেস্ট হবে।সে তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়। একজন বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো উত্তম জীবনসঙ্গিনী আর হয় না।

আদ্রিয়ান এজন্য রাজি না থাকা সত্ত্বেও হ্যাঁ বলে দিলো।সে তার বাবা মাকে বললো,
তোমাদের যা মন চায় করো গিয়ে।এই ভাঙ্গা মন টাকে যতখুশি টুকরো টুকরো করে ভেংগে ফেলো।এতো করে বলার পরও যখন তোমরা তোমাদের ডিসিশন চেঞ্জ করছো না তাহলে আর কিছু করার নাই আমার।
আদ্রিয়ান কিন্তু তানহাকে বন্ধু হিসেবে অনেক বেশি ভালোবাসে আর বিশ্বাসও করে।কিন্তু সে যে তার বউ হবে এটা আদ্রিয়ান ভাইতেই পারছে না।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪
আদ্রিয়ান তার ইন্সটাগ্রাম থেকে লাইভে আসলো।
আর প্রথমে সে নিজের গলায় একটা গান গাইলো আর গিটার বাজাতে লাগলো।
Janam janam janam sath chalna yunhi
Qasam tumhe qasam aake milna yahin
Ek jaan hai bhale do badan hon juda
Meri hoke humesha hi rehna
Kabhi na kehna alvida

Meri subha ho tumhi
Aur tumhi shaam ho
Tum dard ho tum hi aaram ho
Meri duaaon se aati hai bas yeh sadaa
Meri hoke humesha hi rehna
Kabhi na kehna alvida

Meri hoke humesha hi rehna
Kabhi na kehna alvida..

গানটি গাওয়ার সময় আদ্রিয়ানের চোখে পানি এসে গেলো।কারণ তার আজ খুব মোহনার কথা মনে পড়ছে।আদ্রিয়ান তার চোখের পানি মুছিয়ে নিয়ে
সবাইকে তার বিয়ের কথা জানিয়ে দিলো।আদ্রিয়ান আজ এজন্যই লাইভে এসেছিলো।

আদ্রিয়ান তানহাকে বিয়ে করছে শুনে অনেক মেয়ে ভক্তর মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।আবার অনেকেই অহনার কথা জিজ্ঞেস করলো।কিন্তু আদ্রিয়ান অহনাকে নিয়ে কিছু বললো না।কারণ অহনার প্রসঙ্গ আসলেই তার অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি হবে।সেজন্য আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি করে লাইভ টা শেষ করলো।

আদ্রিয়ান আর তানহার বিয়ের খবর ইতোমধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো।সকল গনমাধ্যমে তা প্রচার করতেও লাগলো।

টুশু অর্পা আর সনিয়াও আদ্রিয়ানের লাইভ দেখছিলো এতোক্ষন।তারা বিশ্বাসই করতে পারছিলো না এটা।আদ্রিয়ান তানহাকে কি করে বিয়ে করতে পারে?

অন্যদিকে অহনা মুভি দেখছে মোবাইলে।অথচ একসময় আদ্রিয়ান লাইভে আসলে সবার আগে অহনা জয়েন করে।
আর আজ অহনা আদ্রিয়ানের লাইভ না দেখে মুভি দেখছে।

সনিয়া তখন বললো অহনা আজকের নিউজ কিছু শুনছিস?
অহনার কানে ইয়ার ফোন থাকায় সে শুনতে পায় নি।
তখন সনিয়া নিজেই এগিয়ে গিয়ে ইয়ার ফোন টা কান থেকে খুলে দিয়ে বললো,
আদ্রিয়ান আর তানহার বিয়ে ঠিক হইছে।

অহনা সেই কথা শুনে বললো ভালো তো।বিয়ে না করে আর কত দিন থাকবে বেচারা?

অহনার কথা শুনে তিন বান্ধুবিই অবাক।তারা মনে মনে ভাবতে লাগলো,আদ্রিয়ানের বিয়ের কথা শুনেও অহনার মধ্যে কোনো শোক বা কোনো অনুশোচনা নেই।অহনা কি করে এভাবে পালটে গেলো?ধরে নিলাম এতোদিন সে অভিনয় করেছে,কিন্তু আদ্রিয়ান কে নিয়ে তার যে পাগলামি গুলো সেগুলো কি করে অভিনয় হতে পারে?

অহনা ইউটিউবে হাসির একটা মুভি দেখছে।হঠাৎ সে হা হা করে হাসতে লাগলো।
টুশু তখন অহনার পাশে গিয়ে বসলো আর বললো দোস্ত,সত্যি কি তুই আদ্রিয়ান কে পছন্দ করিস না?এটা কি করে হতে পারে?
অহনা তখন তার কান থেকে ইয়ার ফোন টা খুলে বললো, কি বললি শুনতে পাই নি?

টুশু তখন বললো, আদ্রিয়ানের বিয়ে তে কি তোকে দাওয়াত দিয়েছে?

অহনা তখন হাসতে হাসতে বললো উনি কে আমার যে আমাকে ওনার বিয়েতে দাওয়াত দিবে?এই বলে অহনা আবার তার কানে ইয়ার ফোন টা লাগালো।

টুশু তখন নিজেই ওর কান থেকে ইয়ার ফোন টা সরিয়ে দিয়ে বললো, এতো নিঁখুত অভিনয় কি করে করেছিস তোরা?সত্যি আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না।সেদিন আদ্রিয়ান তোকে যেভাবে প্রপোজ করলো, আর তোর হাত ধরে যেভাবে ডান্স করলো এটা কি করে একটা নাটক হতে পারে?

অহনা তখন বললো অভিনয় তো অভিনয়ই।এতে তোরা এতো অবাক হচ্ছিস কেনো?

এবার অর্পা এসে বললো,শুধুমাত্র আদ্রিয়ান কে যাচাই করার জন্য তুই ওর জন্য এরকম পাগলামি টা করেছিলি?সত্যি এর বাইরে আর কিছুই নেই তোর মনে?

অহনা এবার একটু রাগ হলো।সে তখন ভিডিও অফ করে বললো,কি শুরু করলি তোরা বল তো?যখন আদ্রিয়ানের জন্য পাগলামি করেছি তখন আমাকে বলতিস আমি নাকি একজন সাইকো মেয়ে।আর এখন যখন বলছি আমি আদ্রিয়ান কে ভালোবাসি না তখন আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করছিস।তোদের তো বলেছিই মোহনা আপুর প্রেমিক ছিলো সে।আপুর নামে হঠাৎ করে কে বদনাম বের করলো আবার আপু হঠাৎ করে কেনো নিজের জীবন শেষ করলো এগুলো যাচাই করার জন্যই আমি আদ্রিয়ানের টিমে ঢুকেছিলাম।কারণ এরা সবাই আপুর সাথে একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে।এখন আমার যাচাই করা শেষ হয়েছে সেজন্য পাগলামি টাও বন্ধ হয়েছে।এখন আমি কি জন্য আদ্রিয়ান কে ভালোবাসতে যাবো।ওনার যাকে মন চায় তাকে তিনি বিয়ে করতে পারে।তোরা খবরদার ওনার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করবি না আমাকে।

হঠাৎ অনিল ফোন দিলো অহনাকে।অহনা তখন সাথে সাথে ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকুনির দিকে চলে গেলো।আর ফোন রিসিভ করতেই অনিল বললো,
কই আছো তুমি?তাড়াতাড়ি আমার সাথে এক্ষুনি এই মুহুর্তে দেখা করো।অনেক কথা আছে তোমার সাথে।

অহনা তখন বললো ওকে।এই বলে অহনা আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে হোষ্টেল থেকে বের হয়ে গেলো।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
অনিল অহনাকে এমন একটা নিউজ দিলো যে অহনা ভাবতেই পারছে না কি বলে সে অনিল কে ধন্যবাদ দিবে?
অনিল তখন বললো কোনো ধন্যবাদের প্রয়োজন নাই অহনা।যেদিন আমাদের দুইজনের উদ্দেশ্যই পূরন হবে সেদিন যা মন চায় দিও।আর তার সাথে একটু ভালোবাসাও।

অহনা অনিলের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।অনিল আবার তার প্রেমে টেমে পড়লো নাকি?হঠাৎ সে এভাবে ভালোবাসার কথা বলছে কেনো?

অহনাকে চুপ করে থাকা দেখে অনিল বললো, কি হলো?ভয় পেলে নাকি আবার?এখনি দিতে হবে না।বিয়ের পর দিয়ে দিও।এই বলে অনিল চলে গেলো।

অহনা আর অনিল অনেক দিন ধরে একসাথে মোহনার অপরাধীদের ব্যাপারে তদন্ত করায় তারা কাছাকাছি এসেছে অনেকটা।তবে অহনার মনে অনিল না থাকলেও অনিলের মনে যে অহনা আছে সেটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে।অনিল অহনাকে ভালোবেসে ফেলছে।সে তার বাবা মাকেও বলেছে কথাটা।অনিলের বাবা মা সাথে সাথে রাজি হয়ে গেছে।কারণ অহনার গার্ডিয়ান এখন অনিলের বাবা মাই।কারণ অহনার তো মা বাবা বোন কেউ নাই।সেজন্য তার এখন গার্ডিয়ান তার নানার বাড়ির লোকজন।অনিল অহনার আপন মামাতো ভাই হয়।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
আদ্রিয়ানের বিয়ের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে।সেজন্য তানহা ব্যস্ত বিয়ের কেনাকাটা নিয়ে।অন্যদিকে আদ্রিয়ান ঘর বন্দি হয়ে বসে আছে। তানহা তার সাথে আদ্রিয়ান কেও আসার জন্য বলেছিলো।কিন্তু আদ্রিয়ান যায় নি তানহার সাথে।আদ্রিয়ান তাকে তার পছন্দমতো কেনাকাটা করতে বলেছে।

সানি আদ্রিয়ানের উপর রেগে থাকায় সে বিয়ে তে থাকবে না বলে জানিয়েছে।আদ্রিয়ান তখন অনেক রিকুয়েষ্ট করে সানিকে ঠিক করেছে।সানি উল্লাস লিথি আর টিনা খুব খুশি হয়েছে আদ্রিয়ানের সাথে তানহার বিয়ের কথা শুনে।কারণ তারা শুরুর থেকেই এটাই চাই তো।কিন্তু আদ্রিয়ান কি ভাববে শুনলে সেজন্য এতোদিন কেউই প্রকাশ করে নি এটা।

হঠাৎ মিসেস তমালিকা খন্দকার আদ্রিয়ানের রুমে প্রবেশ করলো।আর বললো,
বাবা আমাদের চেনাজানা সবাইকে ইনভাইট করা হয়েছে।এখন তোর চেনাজানা কাকে কাকে ইনভাইট করবি তার একটা লিস্ট দিয়ে দে।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো, ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না তোমাকে।আমি নিজেই ইনভাইট করবো সবাইকে।
তমালিকা খন্দকার তখন আদ্রিয়ানের কাছে এসে বসলো।আর তার মাথার চুল বুলিয়ে দিয়ে বললো, বাবা তুই কি আমাদের উপর রাগ করে আছিস?

আদ্রিয়ান তখন তার মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো না তো।কেনো রাগ করবো?
তমালিকা খন্দকার তখন বললো,
আমার মনে হচ্ছে তোর উপর আমরা খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করছি।কিন্তু বাবা দেখিস বিয়ে হলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।তখন আর কিছু মনে হবে না।তোর এই একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গ জীবনে কাউকে না কাউকে অবশ্যই চাই।তা না হলে তুই আরো বেশি ভেঙে পড়বি।আমরা বাবা মা হয়ে সেটা কি করে সহ্য করবো?
আদ্রিয়ান তার মায়ের কথায় কোনো উত্তর দিলো না।
তখন তমালিকা খন্দকার বললো,
এখনকার কোন মেয়ের চরিত্র কেমন তা বাহিরে থেকে বোঝা বড় দায়।যেহেতু তানহা আমাদের সবার চেনাজানা সেজন্য কিন্তু আমি ওকে তোর বউ করে আনতে চাচ্ছি।

আদ্রিয়ান তখন বললো মাম্মি আমি এখন একটু একা থাকতে চাই।তুমি চলে যাও এখন।
এই বলে আদ্রিয়ান অন্য পাশ হয়ে শুয়ে পড়লো।
তমালিকা খন্দকার তখন চলে গেলো রুম থেকে।

আদ্রিয়ান এবার মোহনার ছবি টা বের করে হাত দিয়ে তা স্পর্শ করতে লাগলো।আর বললো,
তোমাকে ভুলে যাওয়ার সাহস নেই,
ধরে রাখার অধিকার নাই,
ছুঁয়ে দেখারও সাধ্য নাই,
তবুও যে তোমাকে ভালোবাসি মোহনা।
এই মনের মধ্যে শুধু যে তোমার ই বসবাস। কি করে সেখানে অন্যজনকে ঠাঁই দিবো?

আদ্রিয়ানের হঠাৎ মনে হলো অহনার কথা।আদ্রিয়ান মনে মনে ভাবলো অহনাকে তার ইনভাইট করা উচিত।তা না হলে ব্যাপার টা খারাপ দেখাবে।সবাই আবার আদ্রিয়ান আর অহনাকে নিয়ে হওয়া গুজব টাই সত্যি সত্যি ভাববে।

আদ্রিয়ান সেজন্য অহনাকে কল দিলো।অহনা আদ্রিয়ানের কল দেখে বেশ অবাকই হলো।সে আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করলো কলটা।
অহনা হ্যালো বলতেই আদ্রিয়ান বললো,
আমি তানহাকে বিয়ে করছি।সামনের শুক্রবার আমাদের বিয়ে।
তানহা সেই কথা শুনে বললো বেস্ট অফ লাক।
আদ্রিয়ান তখন বললো তোমার বান্ধুবিদের আর তোমাকে ইনভাইট করলাম বিয়েতে।আশা করছি আসবে তুমি।
অহনা সেই কথা শুনে বললো হ্যাঁ অবশ্যই আসবো।তবে আমার বান্ধুবীদের আপনি নিজের মুখে বললে ভালো হতো।এই বলে অহনা তার ফোনটা টুশুর হাতে দিলো।আর ওদের কে বললো আদ্রিয়ান কথা বলবে তোদের সাথে।

— আদ্রিয়ান আমাদের সাথে কথা বলবে?কেনো?

অহনা তখন বললো সেটা নিজের মুখেই শুনে নে।
এই বলে অহনা ফোনটা টুশুর হাতে দিয়ে বেলকুনির দিকে চলে গেলো।

এদিকে আদ্রিয়ান হ্যালো হ্যালো বলছে।সনিয়া তখন ফোন টা হাতে নিয়ে বললো, আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।আমি সনিয়া বলছি।
আদ্রিয়ান সালামের জবাব দিয়ে বললো, টুশু আর অর্পা কই?
–আমার কাছেই আছে ভাইয়া।
আদ্রিয়ান তখন বললো অহনার সাথে শুক্রবার সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টারে চলে এসো।
সনিয়া যদিও জানে সেদিন আদ্রিয়ানের সাথে তানহার বিয়ে তবুও সে বললো, কেনো ভাইয়া?
আদ্রিয়ান তখন বললো তুমি জানো না আমার বিয়ের কথা?
–হ্যাঁ জানি।
আদ্রিয়ান তখন বললো,আমার বিয়েতে ইনভাইট করলাম তোমাদের। তোমরা সবাই আসিও।এখন অহনাকে ফোন টা দাও।

টুশু সেই কথা শুনে নিজে নিলো ফোনটা আর বললো, ভাইয়া সত্যি করে বলবেন একটা কথা?

–কি কথা?

“আপনি কি মন থেকে করছেন বিয়ে টা?

–হ্যাঁ।

টুশু তখন বললো জীবনেও না।আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।

আদ্রিয়ান তখন বললো এখন সত্য আর মিথ্যা কথা বলে কি হবে?বিয়ে তো হচ্ছে তাই না?

টুশু তখন বললো কিন্তু ভাইয়া সেদিন যে আপনি আমাদের সামনে অহনাকে প্রপোজ করলেন।কেনো এই অভিনয় টা করলেন ভাইয়া?আমরা তো সত্যি সত্যি ধরে নিয়েছি আপনি অহনাকেই ভালোবাসেন।

আদ্রিয়ান তখন বললো,শুধু আমার অভিনয় টাই চোখে পড়লো তোমাদের? তোমার বান্ধুবিও তো এতোদিন আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করতেছিলো।সেটা কি বিশ্বাস হয়েছে?

আদ্রিয়ানের এমন কথা শুনে টুশু চুপ করে রইলো।

তখন আদ্রিয়ান বললো,
আমাকে নিয়ে অহনা যেমন প্রেম প্রেম খেলা খেলেছে ঠিক আমিও তেমনি প্রেম প্রেম খেলা খেলেছি।যেহেতু আমাদের দুইজনের অভিনয় ই ধরা পড়েছে সেহেতু ও বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা না করাই ভালো।
এই বলে আদ্রিয়ান কল কেটে দিলো।

চলবে,

#প্রেম_প্রেম_খেলা(১৪)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

মহা ধুমধামে আদ্রিয়ান আর তানহার বিয়ে হচ্ছে।একমাত্র ছেলের বিয়ে সেজন্য মিঃ আতিক হাসান কোনো কমতি রাখেন নি।মিসেস তমালিকা খন্দকার তো খুশিতে কথা বলতেই পারছেন না।যে ছেলে বিয়ে করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে আজ তিনি সেই ছেলেকে বিয়ের আসরে দেখতে পাচ্ছেন।

নবাবি নাগড়া, বাহারী পাগড়ি মাথায় দিয়ে রাজকীয় হালকা গোল্ডেন শেরওয়ানীতে রাজপুত্রের বেশে বর সেজে বসে আছে আদ্রিয়ান।
অন্যদিকে তানহা পড়েছে ম্যাজেন্টা কালারের পার্টি ল্যাহেঙ্গা যেটাতে বানেট বেইসের উপর চুমকি পুতির সিকোয়েন্সের কাজ। যা পড়ে তানহাকে বেশ গর্জিয়াস লাগছে।তানহার দিকে তাকিয়ে আর কিছুতেই চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।বিয়ের আয়োজনের মধ্যমণি হয়ে বসে আছে সে।

এদিকে একের পর এক ছবি তুলছে সবাই।প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার পুরো অনুষ্ঠানের ভিডিও করছে।আর মিডিয়ার লোকেরা তো আছেই।জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী আদ্রিয়ানের বিয়ে বলে কথা।
আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রবেশের পথ আর গেট তাজা গোলাপ, গাঁদা আর চন্দ্রমল্লিকা দিয়ে সাজানো হয়েছে।তার পাশাপাশি রয়েছে অর্কিড ফুলের সমারোহ।ফুলের সৌন্দর্য যেনো আলাদা মাত্রা যোগ করেছে কমিউনিটি সেন্টার টাকে।
বর-কনের বসার জায়গা টাও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। তাজা ফুল, সুন্দর রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো ষ্টেজ দেখে সত্যি মুগ্ধ সবাই।আর পুরো কমিউনিটি সেন্টারে লাগানো হয়েছে ইলেকট্রিক লাইট যা থেকে বিভিন্ন রঙের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
আজকের এই সুন্দর মুহূর্ত টাকে ক্যামেরা বন্দি করে রাখছে সবাই।
চারিদিকে লাল নীল আলোর ছড়াছড়ি।

হঠাৎ চার বান্ধুবি একসাথে আসলো আদ্রিয়ানের বিয়ের অনুষ্ঠানে। অহনাকে দেখামাত্র মিডিয়ার লোকেরা ঘিরে ধরলো তাকে।সবাই একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিতে লাগলো।সবচেয়ে কমন প্রশ্ন হলো আদ্রিয়ান আর আপনাকে নিয়ে একের পর এক নিউজ হয়েছে ইতোমধ্যে। আমরা সবাই জানি আপনারা রিলেশনে আছেন।কিন্তু আদ্রিয়ান আপনাকে বাদ দিয়ে তার বেস্ট ফ্রেন্ড তানহাকে বিয়ে করছে কেনো?

অহনা এমন আজগুবি প্রশ্ন শুনে হা হা করে হেসে উঠলো।আর বললো কে কাকে বিয়ে করবে সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।কিন্তু আমাকে আর আদ্রিয়ান কে নিয়ে যে নিউজ করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণটাই গুজব ছিলো।আমাদের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না।

অহনা পড়েছে সোনালি কালারের চুমকি বসানো একটা গাউন।যা পড়ে অহনাকে একদম অপ্সরাদের মতো লাগছিলো।শুধু অহনা নয়,টুশু অর্পা আর সনিয়াও তাদের পছন্দমতো কালারের গাউন পড়েছে।জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আদ্রিয়ানের বিয়ে বলে কথা।

অহনা আর তার বান্ধুবীরা সোজা বর আর কনের স্টেজের দিকে গেলো।আর তাদের কে ওয়েলকাম জানালো।তানহা আজ অহনার সাথে খুব মিষ্টি সুরে কথা বললো।কারণ তার যে আজ সবচেয়ে খুশির দিন।তানহার বিশ্বাসই হচ্ছে না সে আদ্রিয়ান কে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেতে যাচ্ছে।

তমালিকা খন্দকার অহনাকে দেখে আদ্রিয়ানের উপর ভীষণ রেগে গেলেন।তিনি আদ্রিয়ানের কানে কানে গিয়ে বললেন,
অহনাকে কেনো ইনভাইট করেছিস?
আদ্রিয়ান তখন বললো,এতে প্রবলেম কি?
–প্রবলেম কি মানে?আমি সিওর সে নিশ্চয় কোনো ঝামেলা বাধাবে।
আদ্রিয়ান তখন বললো মাম্মি, সবসময় অহনাকে নিয়ে এরকম নেগেটিভ চিন্তাভাবনা কেনো করো?এখন এসব কথা বাদ দাও।ও শুনলে মন খারাপ করবে।
আদ্রিয়ানের কথা শুনে তমালিকা খন্দকার সরে গেলেন।তবে তিনি একজন কে নিযুক্ত করলেন অহনার ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য।কারণ অহনাকে তার সুবিধার মনে হচ্ছে না।

তমালিকা খন্দকার এবার আতিক হাসান কে বললো, তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজ টা সেরে ফেলেন প্লিজ। বিয়ে টা হয়ে গেলে বাঁচি।
আতিক হাসান তখন বললো এতো তাড়াহুড়ো কেনো করছো?বিয়ে তো হবেই আজ।

আদ্রিয়ান বার বার শুধু অহনার দিকে দেখছে।আর অহনাও আদ্রিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু দুইজন দুইজনার যেই চোখাচোখি হলো তখন সাথে সাথে তারা তাদের চোখ ফিরিয়ে নিলো।অহনা এবার একটু দূরে সরে গেলো।আর ভাবতে লাগলো এটা কি ঠিক হচ্ছে?আদ্রিয়ানের তো কোনো দোষ নাই।তাহলে ও বেচারাকে কেনো সে কষ্ট দেওয়ার জন্য এভাবে উঠেপড়ে লাগছে।

পরে আবার অহনা নিজে নিজেই ভাবলো, না সে ঠিক কাজই করছে।তারা সবাই যেমন তার বোনকে অসম্মান করেছে আজ তাদেরকেও অসম্মান করার দিন এসে গেছে।তাদের অপকর্মের কথা আজ পুরো মিডিয়ার লোক জানবে।এক দুই মাস ধরে শুধু তাদের কে নিয়েই নিউজ হবে।এতেই মোহনার আত্না শান্তি পাবে।লুকোচুরি ভাবে তাদের কে শাস্তি দিয়ে কোনো লাভ নাই।

অহনাকে একা একা দাঁড়িয়ে থাকা দেখে টুশু অর্পা আর সনিয়া এগিয়ে আসলো।আর বললো, কি রে মন খারাপ নাকি?এখনো সময় আছে আদ্রিয়ান কে তোর মনের কথা জানিয়ে দে।

অহনা তখন বললো তোরা দুই লাইন একটু বেশি বুঝিস।আমি যে আদ্রিয়ান কে ভালোবাসি সেটা তোরা কি করে বুঝলি?

–তাহলে এভাবে একা একা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছিস?

অহনা তখন বললো, মন খারাপ না।আমি আজ খুশিতে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছি।কারণ কিছুক্ষন পর এমন একটা চমক দিবো সবাইকে যে সবাই তা শুনে শূন্যে ভাসতে থাকবে।

–মানে?

অহনা তখন বললো তোরা বুঝবি না এসব।যা আনন্দ কর গিয়ে।কারণ যা আনন্দ করার এখনি করতে হবে।পরে আর করতে পারবি না আনন্দ।এই বলে অহনা গানের তালে তালে হঠাৎ ডান্স দিতে লাগলো।তার যে আজ আনন্দের দিন।

অহনার এমন উরাধুরা নাচ দেখে সবাই অবাক।অহনা তখন এক এক করে তার বান্ধুবীদের ও নিয়ে আসলো ডান্স করার জন্য।

অহনা হঠাৎ নাচ থামিয়ে দিয়ে বললো,সবার আনন্দ করা শেষ হয়ে গেলে আমি কিছু কথা বলতে চাই।সবাই শুনবে কি আমার কথা?

তমালিকা অহনার এমন পাগলামি দেখে আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বললো, বলেছিলাম না এই মেয়ে কিছু একটা করবে।এখনো সময় আছে একে থামিয়ে দে।

আদ্রিয়ান এবার অহনার কাছে গিয়ে বললো, অহনা কি করতে চাচ্ছো তুমি?

অহনা তখন বললো আপনার কি ভয় লাগছে?

আদ্রিয়ান তখন বললো কেনো ভয় লাগবে কেনো?

–তাহলে চুপচাপ স্টেজে গিয়ে বসে থাকুন।

আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না কি হতে চলেছে।তবে অহনার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে মারাত্মক কিছু ঘটাতে যাচ্ছে আজ।

অহনা তখন সবার উদ্দেশ্যে বললো,আমি হলাম অহনা চৌধুরী। আমার বড় বোনের নাম হলো মোহনা চৌধুরী। কিন্তু আমার সেই বোনটাকে মেরে ফেলা হয়েছে।যে মেরে ফেলেছে তাদের নিজের হাতে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম আমি।কিন্তু আইনকে যথেষ্ট পরিমাণে শ্রদ্ধা করি আমি।সেজন্য আমি কাউকে নিজের হাতে শাস্তি দেই নি।তবে আজ তাদের আপনারাই শাস্তি দেবেন।

অহনার এমন কথাবার্তা শুনে সবাই ভাবলো এই মেয়েটা নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে।বিয়ের অনুষ্ঠানে কি বলছে এসব?

আদ্রিয়ান নিজেও এবার রাগান্বিত হলো অহনার উপর।অহনা কি হচ্ছে এসব?এরকম কেনো করছো?

অহনা তখন আদ্রিয়ান কে ধমক দিয়ে বললো আপনি চুপ থাকুন।একটা কথাও বলবেন না আজ।আজ আমি বলবো আর আপনারা সবাই শুনবেন।

এবার সাংবাদিকেরা এগিয়ে এলো অহনার সামনে।আর বললো ম্যাম আপনি কি বলতে চাচ্ছেন দয়া করে ক্লিয়ার করে বলুন।আমরা আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।

অহনা তখন বললো,আদ্রিয়ানের প্রথম ভালোবাসার নাম ছিলো মোহনা।যে আমার মায়ের পেটের বড় বোন।আদ্রিয়ান মোহনাকে ভালোবাসে বিধায় তার বন্ধুদের সেটা সহ্য হয় নি।তারা আমার নিষ্পাপ বোনের উপর কলঙ্গের দাগ লাগায়।এই আইডিয়া টা পুরো তানহার ছিলো।সে আদ্রিয়ানের ফোন থেকে মোহনাকে কল করে হোটেলে ডাকে।মোহনা আদ্রিয়ানের কল পেয়ে সেখানে চলে যায়।কিন্তু হোটেলের সেই রুমে তমাল নামের এক সন্ত্রাসী কে ভাড়া করে রাখা হয়।মোহনা রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে তমাল তার সাথে শারিরীক, মানসিক সব ধরনের নির্যাতন করে।শেষ মেষ আদ্রিয়ানের বন্ধুরাই আবার পুলিশকে খবর দেয়।আর পুলিশ মোহনা আর তমালকে ধরে ফেলে।
আমার নিষ্পাপ বোনটির নামে বাজে বাজে নিউজ করা হয়।সমাজে আমার বাবা মুখ দেখাতে পারছিলেন না।সেজন্য বাবা এসব নিউজ শোনার পর পরই হার্ট এটাক করে মারা যান।

অহনার কথা শুনে সানি, উল্লাস, লিথি আর টিনা পালিয়ে যেতে ধরলে অনিল তাদের ধরে ফেলে।কারণ অনিল পুরো কমিউনিটি সেন্টার টাকে আগেই পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখে।
তানহার পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।তবুও সে সাহস করে বললো,এই মেয়ে কি সব মনগড়া কথা বলছো?
অহনা তখন সবার সামনে আগে ইচ্ছামতো তানহাকে কয়েকটা চড় মারলো।তানহা অহনার চড় খেয়ে মাটিতে পরে গেলো।অহনা তখন বললো,
চুপ থাক তুই।একটা কথাও বলবি না।আদ্রিয়ান কে পাওয়ার জন্য তুই এইরকম একটা জঘন্য খেলা কি করে খেলতে পারলি?আমার বোনের নামে অপবাদ দিয়েও তো আদ্রিয়ানের ভালোবাসা পাস নি জীবনে।

এবার মিডিয়ার লোকেরা বললো ম্যাম আপনি সিওর এই কাজ তানহা করেছে?

অহনা তখন অনিল কে বললো,তমালকে নিয়ে এসো।অনিল তখন তমালকে ধরে নিয়ে এলো।অহনা তখন বললো এই হলো সেই তমাল।যাকে সানি আর উল্লাস ছুরিকাঘাতে নদীতে ফেলে দেয়।কিন্তু কোনো কারনে তমাল বেঁচে যায়।ওরা ভেবেছিলো তমালকে খুন করলে আর কোনো সাক্ষীই থাকবে না।কিন্তু অনিল খুঁজে বের করে তমালকে।

তমাল তখন এক এক করে সব সত্য কথা বলে দেয়।কিভাবে আদ্রিয়ানের বন্ধুরা তাকে হায়ার করেছে মোহনার নামে অপবাদ দেওয়ার জন্য।

আদ্রিয়ান তার জায়গাতেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।সে মনে হচ্ছে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।তার অজান্তে এতোকিছু ঘটে গেছে আর সে কিছুই জানে না।তার মতো অপদার্থ আর কে আছে?

এবার মিডিয়ার লোকেরা বললো,তারপর কি হলো ম্যাম?মোহনা মারা গেলো কিভাবে?

অহনা তখন বললো, মোহনা নিজের ইচ্ছায় মারা যায় নি।তাকে মেরে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে।

আদ্রিয়ান এবার এগিয়ে আসলো।আর বললো,কে মেরে ফেলেছে মোহনাকে?

অহনা তখন বললো যে মেরে ফেলেছে তাকে নিজের হাতে কি শাস্তি দিতে পারবেন?

আদ্রিয়ান তখন চিৎকার করে বললো,
নাম বলো তাদের?কে মেরে ফেলছে মোহনাকে।

অহনা তখন বললো আপনার বাবা মা।

অহনার কথা শুনে যেনো আদ্রিয়ানের পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।সে কি শুনছে এগুলো?

তমালিকা খন্দকার আর মিঃ আতিক হাসান এবার এগিয়ে এসে অহনাকে ধাক্কা দিয়ে বললো, এই মেয়ে?কি সব উল্টাপাল্টা বকছো?আমরা কখন মোহনাকে খুন করতে গেলাম?ও তো নিজেই গলাই ফাঁস দিয়েছে।

আদ্রিয়ান তখন তার বাবা মাকে সরিয়ে দিয়ে বললো আপনারা দূরে সরে যান।আর অহনা তাড়াতাড়ি ক্লিয়ার করে বলো।

অহনা তখন সবার উদ্দেশ্যে বললো,
আদ্রিয়ান আর মোহনার মধ্যকার ভালোবাসা অনেক বেশি স্ট্রং ছিলো।যার কারণে মোহনার নামে এমন অপবাদ শুনেও আদ্রিয়ান মোহনাকে গ্রহন করতে রাজি হয়ে যায়।যদিও প্রথম প্রথম আদ্রিয়ান ও মোহনাকে অনেক অনেক আজেবাজে কথা বলে।মোহনা সব কথা তার পার্সোনাল ডায়রি তে লিখে যায়।কিন্তু আদ্রিয়ান বেশিক্ষন মোহনার সাথে অভিমান করে থাকতে পারে নি।সে মোহনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।আদ্রিয়ান প্রথমে তার বাবা মাকে জানায়।কিন্তু ওনার বাবা মা রাজি হয় না।তারা আদ্রিয়ানের সামনে মোহনাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলতে থাকে।তারা জানিয়ে দেয় মোহনার মতো এমন নষ্টা মেয়েকে তারা তাদের বাড়িতে বউ করে কিছুতেই আনতে পারবে না।তখন আদ্রিয়ান একা একা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় মোহনাকে।সবকিছু ভালোভাবেই চলছিলো।মোহনা আদ্রিয়ান কে বিয়ে করবে বলে তার ব্যাগও গুছিয়ে নেয়।হঠাৎ বিয়ের আগের দিন মোহনার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।

তমালিকা অহনার কথা শুনে বললো, মোহনা নিজেই আত্নহত্যা করেছে।এতে আমাদের দোষ টা কোথায়?আর এটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে কারো ছেলে একজন দুশ্চরিত্র মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে তার বাবা মা রাজি থাকবে না।নানা ধরনের কথা শোনাবে।

অহনা এবার তমালিকার কাছে এসে বললো,আপনি আমার গুরুজন সেজন্য দু চারটা চড় মারতে পারলাম না।তা না হলে আজ এই ভরা মজলিস থেকে আপনাকে মারতে মারতে বের করে দিতাম।
আমার বোন কি আত্নহত্যা এমনি এমনি করেছে?সে তো সবকিছু ভুলে আদ্রিয়ান কে বিয়ে করবে বলে রাজিই হয়েছিলো।আপনি আর আপনার স্বামী আমার বোনকে এমন এমন কথা বলেছেন যা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে নি।এজন্যই তো আত্নহত্যা করেছে।আপনারা দুইজন হলেন আমার বোনের খুনি।

মিঃ আতিক হাসান তখন বললো আমরা যে তোমার বোনকে আজেবাজে কথা বলেছি তা তুমি কি করে জানলে?প্রমান কি তার?

অহনা তখন বললো কিছু কিছু জিনিসের প্রমান দেওয়া যায় না আংকেল।সেটা আন্দাজ করতে হয়।

আতিক সাহেব তখন বললো তুমি আন্দাজ করলেই হবে নাকি?আইন প্রমাণে বিশ্বাস করে।

অহনা তখন বললো আমি কি প্রমাণ জোগাড় না করেই এসব বলছি?এই বলে অহনা অনিল কে বললো,চাচা কে ডেকে আনো।
অনিল অহনার কথা শুনে আদ্রিয়ানের বাসার পুরাতন ড্রাইভার কে ডেকে আনলো।যখন তমালিকা আর আতিক সাহেব মোহনার বাড়িতে গিয়েছিলো তখন রতন চাচাই গাড়ি ড্রাইভ করেছে।কিন্তু রতন এখন আর আদ্রিয়ানের বাসায় থাকে না।তার বয়স হয়েছে দেখে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

রতন চাচা সবার সামনে সত্য টা প্রকাশ করলো।তিনি বললেন হ্যাঁ আমিও ছিলাম সেদিন।আতিক স্যার আর তমালিকা ম্যাডাম সেদিন মোহনাকে অনেক অপমান করেছিলো।তাকে বলেছিলো তোমার কি যোগ্যতা আছে আমার ছেলেকে বিয়ে করার?এরকম নষ্ট চরিত্রের মেয়েদের কারনে ভালো বংশের ছেলেরা দুশ্চরিত্র হয়ে যায়।আমার সহজ সরল ভালো ছেলেটা কি কারণে এরকম বেশ্যা মেয়েকে বিয়ে করতে যাবে?তোমার কি বিবেকেও বাঁধলো না একবার।যদি তুমি ভালো বংশের মেয়ে হয়ে থাকো আর এক বাপের জন্মা হয়ে থাকো খবরদার আমার ছেলের সামনে আর আসবা না।তোমার মতো মেয়েদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নাই।তোমরা হলে সমাজের অবর্জনা।
সেই দিনই মোহনার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।

সবকিছু প্রমাণ জোগাড় করেই অহনা আজ মাঠে নেমেছে।সে চাইছিলো তার বোনের সাথে হওয়া অন্যায় টা সবাই জানুক।আর সবার সামনে অপরাধীদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাক।সেজন্য অহনা আজ আদ্রিয়ানের বিয়ের দিনই সমস্ত সত্যি ফাঁস করে দিলো।কারণ আজ আদ্রিয়ানের বিয়ে উপলক্ষে সবাই এসেছে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here